শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৪৩
তাসনিম জাহান রিয়া
ব্লাউজের ফিতা বেঁধে দিয়েই অনুপম হালকা ধাক্কা দিয়ে শ্রেয়সীকে সরিয়ে বারান্দায় চলে যায়। অনুপমের আচারণে কষ্ট পায শ্রেয়সী। সে নাহয় একটা ভুল করে ফেলেছে। ভুলটা তো সে ইচ্ছে করে করে নাই। এমনটা করতে সবাই মিলে বাধ্য করেছে। এখন সব দোষ তার একার। শ্রেয়সী বারান্দায় যায় অনুপমের কাছে। অনুপম বারান্দা সরে যেতে চাইলে শ্রেয়সী অনুপমের কলার চেপে ধরে মৃদু চিৎকার করে বলে,
এই আপনাদের আমাকে মানুষ মনে হয় না? কেউ আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলছেন না। আমি কী ইচ্ছে করে করেছি। আপনারা বাধ্য করেছেন সুইসাইড করতে। আমি বাবা-মাকে বুঝাতে পারছিলাম না। আপনি মাঝপথে হাত ছেড়ে দেওয়ার নাটক করলেন। আমার মানসিক অবস্থার কথা একটু ভাবলেন। আমি আপনাকে ছাড়া অন্য কারো হওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারি না। আপনি আমার পাশে নেই এই কথা চিন্তা করলেও আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। তখন আমার নিজেকে শেষ করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো কথা মাথায় আসেনি। তখন শুধু একটা কথাই মাথায় আসছিল আমার মৃত্যুই সবকিছুর সমাধান।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কেনো অন্য কিছু মাথায় আসবে না? নিজের প্রতি একটু ভালোবাসা নাই। কে তোমাকে ছেড়ে গেলো কে তোমার কাছে থাকলো তার জন্য নিজেকে শেষ করে দিবা? কেনো? নিজের জীবনের দাম নেই? যে নিজেকে ভালোবাসতে পারে না সে অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে না। তোমাকে এই অবস্থায় দেখে আমার অবস্থা কেমন হয়েছিল একবার চিন্তা করো তো? দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছিল। নিজের ভালোবাসার প্রতি একটু বিশ্বাস নাই? আমি মুখে কী বলেছি সেটাই বিশ্বাস করে নিলে। আমার জন্য একটু অপেক্ষা করা যেত না? আমার……….
অনুপম আর কিছু বলতে পারে না। শ্রেয়সী কাঁদতে কাঁদতে অনুপমকে জড়িয়ে ধরে। ক্রন্দনরত গলায় বলে,
আমি ভুল করে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দেন আর এরকম হবে না।
সকালে ঘুম থেকে ওঠে শ্রেয়সী অনুপমকে আর নিজের পাশে পায় না। রুমে অনুপমের কোনো জিনিস অবশিষ্ট নেই। শ্রেয়সী গোসল করে নিজের রুম থেকে বের হয়ে দেখে ড্রয়িংরুম জুড়ে ওল্টা পাল্টা হয়ে শুয়ে আছে তার বন্ধুরা আর কাজিনরা। শ্রেয়সীকে দেখতে হসপিটালে যায় তার পর কাজি অফিসে। কাজি অফিস থেকে ডিরেক্ট শ্রেয়সীদের বাসায় এসে সারা রাত আড্ডা দিয়েছে। শ্রেয়সী সবার রুমে উঁকি-ঝুঁকি দিতে গিয়ে নাহিনের সামনে পরে যায়।
যাকে খুজচ্ছিস সে অনেক আগে বাসায় চলে গেছে।
নাহিন বুঝতে পারে শ্রেয়সীর মন খারাপ হয়ে গেছে। নাহিন বুঝানোর স্বরে বলে,
অনুপদের নাকি একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। তোর শ্বশুর বাড়ির লোকজন তো কেউ রাতে থাকেননি। আর আজকে সকালে আংকেল-আন্টি গ্রামে চলে যাবেন তাই অনুপম উনাদের স্টেশন পর্যন্ত ছেড়ে দিতে গিয়েছে। মন খারাপ করিস না।
নাহিনের ফোন বেজে উঠায় নাহিন ফোনে কথা বলতে বলতে চলে যায়। শ্রেয়সী মন খারাপ করে রুমে এসে বসে থাকে। আটটা বাজতেই শ্রেয়া বেগম খাওয়ার জন্য শ্রেয়সী ডেকে যান। শ্রেয়সী ভেবেছিল রুমেই নাস্তাটা করবে কারণ তার বন্ধুরা যে তাকে ক্ষেপাতে ছাড়বে না সে জানে। রুমে নাস্তা খাওয়ার কথা বলতেই শ্রেয়া বেগম চোখ রাঙিয়ে তাকায়। অগ্যতা শ্রেয়সী বাধ্য ডাইনিং রুমে যায়। গিয়ে দেখে আগে থেকেই সয়তানে হাড্ডিগুলো টেবিলে বসে আছে। শ্রেয়সী গিয়ে হেলাল সরকারের পাশে বসে যাতে তাকে কেউ কিছু বলতে না পারে। শ্রেয়সী টেবিলে বসতে না বসতেই তার ফোনটা বেজে ওঠে। কলটা আর কেউ না অনুপমই করেছে। সবার দৃষ্টি এখন শ্রেয়সীর দিকে। শ্রেয়সী আস্তে করে ফোনটা নিয়ে না খেয়েই রুমে চলে যায়। ফোনটা রিসিভ করে কিন্তু কোনো কথা বলে না।
রাগ করছো? আমি নিরুপায় হয়ে তোমাকে না বলে এসেছি। আম্মু সকাল ফোন দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি আসতে আজকেই নাকি চলে যাবে। এক মাসের মাঝেই অনুষ্ঠান করে তোমাকে ঘরে তুলতে চাচ্ছে সেই বিষয়ে আলোচনা করবে। তোমার সুন্দর ঘুমটা নষ্ট করতে ইচ্ছে করছিল না। তাই তোমাকে না বলে আসা। সরি বউ রাগ করো না।
আমি রাগ করি নাই। অনেক মন খারাপ হয়েছিল। আমি ভেবেছিলাম আপনি এখনো রেগে আছেন।
এসব কথা বাদ দাও। খাওয়া হয়ছে?
না। খেতেই বসেছিলাম তখনি আপনি কল দিলেন তাই রুমে চলে এলাম।
তোমাকে ডিস্টার্ব করে ফেললাম। যাও খেয়ে আসো তারপর কথা হবে।
অনুপম শ্রেয়সীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কল কেটে দিয়েছে। শ্রেয়সী ফোন রেখে রুম থেকে বের হতে নিলেই সামনে এসে হাজির হয় তার বন্ধুমহল। একেক জন দুষ্টু নজরে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শ্রেয়সী তাদের মতলব ভালো করেই বুঝতে পারছে। তাদের উদ্দেশ্য যে সৎ না তাকে জ্বালাতে আসাই মূল উদ্দেশ্য। সবাই মিলে এক সাথে শ্রেয়সীকে চেপে ধরে। শ্রেয়সীর ধম বন্ধ হবার জোগাড়। একেক জন এমন এমন প্রশ্ন করা শুরু করছে যে শ্রেয়সীর কান গরম হয়ে যাচ্ছে। শ্রেয়সীর মনে হচ্ছে এদের মাঝে আল্লাহ শালীনতার ‘শ’ দেয় নাই। সুযোগ বুঝে শ্রেয়সী এদের মাঝখান থেকে পালিয়ে হেলাল সরকারের রুমে চলে যায়।
শহর জুড়ে সন্ধ্যা নামুক পর্ব ৪২ (২)
হাসি আনন্দে কেটে গেছে দুইটা সপ্তাহ। আর দুই সপ্তাহ পরে ঢাক ঢুল পিটিয়ে শ্রেয়সী আর অনুপমের পুনরায় বিয়ে হবে। শ্রেয়সী আর নাহিনের সম্পর্কটার মোটামুটি উন্নতি হয়েছে। দুজন আগের মতো দুষ্টুমি করে। মিহান সেই ষোড়শী কন্যার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে বাসা পাল্টে ফেলছে। প্রিয়ন্তি নিজের মতো করে নিজের জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার বুঝা হয়ে গেছে এই জীবনে তার মিহানকে পাওয়া হবে না। আর নাহিনকে তো পেয়েও পেল না। তার জীবনে এমন দুইটা পুরুষ এসেছে যাদের জীবনে অন্য একজনের বসবাস। তার ভালোবাসা বা ভালো লাগা দুইটাই এক তরফা। এদিকে আবার মুহিব আর মিতুর মাঝে অন্য রকম একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দুজন দুজনের প্রতি টান অনুভব করে। দুজন দুজনকে চোখে হারায়।