শাহজাহান তন্ময় পর্ব ১+২
Nabila Ishq
জানালাটা খোলা। সাদাটে রঙের পর্দা গুলো দুলছে। বাতাস আসছে ধেয়ে। মিষ্টি ভোরের সূর্যের প্রতিফলন ঘটছে যেন বিছানা জুড়ে। উবুড় হয়ে তন্দ্রাঘোরে আবদ্ধ তন্ময়ের কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে মেয়েলী গলার স্বর। সেই মেয়ের কান্নাকাটি আহাজারিতে শব্দদূষণ তৈরি হচ্ছে। যেমনটা প্রত্যেক সকালেই হয়।
মাথাটা তন্ময়ের ভেতর থেকে চিনচিন করে ওঠে। ভ্রু দুয়ের মাঝে সূক্ষ্ম ভাজ পড়ে। ডান হাত অনায়াসে কপালে চলে যায়। নড়েচড়ে ওঠে সে। ঘুম ছুটে যায়। পিটপিট করে নয়ন জোড়া মেলে তাকায়। চক্ষুদ্বয় সূর্যের আলো মানিয়ে নিতে সময় নেয়। বিছানার হেডবোর্ড ঘেঁষে বসে ধীরেসুস্থে। শরীরে থাকা পাতলা কম্বলটি হাঁটুতে এসে থামে। প্রসস্থ বুক দৃশ্যমান হয়। পেটানো কোমরে দু’এক ভাজ পড়ে। বালিশের পাশ হাতড়ে সেলফোনটা হাতে নেয়। নোটিফিকেশন জুড়ে মিসডকলস। সাইলেন্ট মুড খুলে সেলফোনটা ড্রয়ার টেবিলের ওপর রাখে। কম্বল সরিয়ে মার্বেল ফ্লোরে পা’জোড়া রেখে দাঁড়ায়।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
অভ্যস্ত ভঙ্গিতে বিছানার বালিশ দুটো গুছিয়ে নেয়। কম্বলটা পরিপাটি করে ভাঁজ করে । বিছানা টানটান করে গুঁছিয়ে দেয়। মাথার চুলগুলো হাতড়ে জানালার সামনে দাঁড়ায়। পর্দাগুলো টেনে সরিয়ে দেয়। কতগুলো নিশ্বাস নিয়ে বাথরুমের দিক পা বাড়ায়। দাঁত ব্রাশ করে, গোসল নিয়ে বেরোয়। শরীরের ওপরটা উদোম। নিচে সাদা রঙের প্যান্ট পরে সে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সবে। কর্ণকুহরে প্রবেশ করছে বাহির থেকে ধুপধাপ পায়ের শব্দের প্রতিধ্বনি। চেনাপরিচিত পদচারণের ভারী শব্দগুলো তার রুমের সামনে এসে থামে। পরপর দরজায় দু-এক কষাঘাতের শব্দ। এবং অনুমতি বিহীন তক্ষুনি একটি ছোটো মাথা দরজা সামান্য ফাঁকা করে ঢুকে। তন্ময়কে দেখে মাথাটা দ্রতগতিতে বাইরে চলে যায়। একটুপর পুনরায় করাঘাত হয়। অরুর বাচ্চামতো গলার স্বর শোনা যায় ‘তন্ময় ভাই! কফি। কফি এনেছি। আসতেছি ভেতরে।’
তন্ময় স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কাবার্ড খুলে। একটা সাদা শার্ট পরে নেয় নিজ গতিতে। তার গলার স্বর তার বাবার মতো গুরুগম্ভীর। ভীষণ ভারী স্বর। মাত্র ঘুম থেকে ওঠায় সেই পুরুষালি কন্ঠ খানা এখন মারাত্মক গম্ভীর,
‘উম.. আয়।’
তড়িঘড়ি করে ঢুকতে চায় অরু। পা’জোড়া গিয়ে ঠেকে দরজার কোণে। ব্যথা পেয়ে হাত ফসকে কফির মগটা ফ্লোরে পড়ে যায়। কাঁচ ভাঙার শব্দ তুলে। চিৎকার করে ওঠে ভয়ে। হাসফাস করে মাথা তুলে তাকায়। নয়ন জোড়া চিকচিক করছে। এইতো কেঁদে দেবে দেবে ভাব।
হাতা ফোল্ড করতে নিয়ে তন্ময় মাথা ঘুরিয়ে দেখে নেয়। এসব কীর্তি দেখে যেন সে অভ্যস্ত এমন ভঙ্গিতে এগিয়ে আসে অরুর দিক। ওকে আগাগোড়া দেখে নেয়। লম্বা কালো চুলগুলো ছড়িয়ে আছে অঙ্গ জুড়ে। এখনো বাঁধা হয়নি। ওর চুল বেঁধে দেয় জবেদা বেগম। স্কুলে যাবার সময় বেঁধে দেবে। ঘুম থেকে ওঠে একচোট কেঁদেছে। তাই মুখমণ্ডল ফুলে। হয়তো কোনোকিছুর বায়না ধরেছে। কালো হাঁটু সমান ফ্রোক খানা উড়ছে। নাক লাল। গরম কফি ওর গায়ে লেগেছে নাকি সেটা খেয়াল করে নিল তন্ময়। নাহ, লাগেনি। নিশ্চিন্ত হয়ে পুনরায় ফিরে আসে। টেবিল থেকে একটা খাতা হাতে নেয়। অরুর উদ্দেশ্যে বলে, ‘রূপালি আন্টিকে পাঠিয়ে দে। পরিষ্কার করে দেবে।’
অরু হেঁচকি তুলছে। হেঁচকি তুলতে তুলতে বলল, ‘স্যরি!’
‘উম..ওকে।’
‘আমি দেখিনি। এতো খেয়াল করে আসলাম তাও এমন হলো। দরজাটা ভালো না। পাল্টিয়ে ফেলা উচিৎ।’
‘আচ্ছা।’
‘তন্ময় ভাই….’
‘উম!’
‘আমার না একটা জিনিস লাগবে।’
‘কী!’
‘মারজি লেটেস্ট মডেলের প্যান্সিল বক্স নিয়েছে। আমাকে নিয়ে দিতে বলেন না!’
‘আচ্ছা।’
অরু ভেতরে ঢুকে একটু ঘুরঘুর করে বেড়িয়ে গেল। তন্ময় ব্যাগে একটা বই, দুটো খাতা ঢুকিয়ে নিল। হাতে ঘড়ি পরতে নিতেই, দুয়ারে এসে দাঁড়ায় মধ্যবয়সী রূপালি। পান খাওয়া লাল দাঁতগুলো দেখিয়ে হাসে। অনুমতি চাইতে বলে, ‘তন্ময় আব্বা আমু?’
‘জি আসুন আন্টি।’
ফ্লোরে পড়ে থাকা কাঁচের টুকরো ডিঙিয়ে রুপালি ভেতরে ঢোকে। হাতের কফির মগ এগিয়ে ধরে। তন্ময় সেটি নিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে কিছুটা পান করে। রুপালি দুয়ারের সামনে পড়ে থাকা কাঁচগুলো পরিষ্কার করতে বসে, ‘অরু মামণিরে কত করে কইলাম আমি নিয়া যাই। কথা শুনল না। নিজেই আইল। আইয়া কী কামডা করল? যদি পায়ে পড়ত কেমন হইত কউ?’
ডাইনিংয়ে বসে মোস্তফা সাহেব। হাতে নিউজপেপার। সেটা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখছেন তিনি। খুবই মনোযোগী। তন্ময় কিছুক্ষণের মধ্যেই এলো ব্যাগ কাঁধে। সে এসে বাবার পাশের চেয়ার টেনে বসল৷ মোস্তফা সাহেব নিউজপেপার ভাঁজ করে রেখে দিলেন। তাড়াহুড়ো অবস্থায় একেক করে সকলে উপস্থিত হচ্ছে৷ অরু এসে বসেছে তন্ময়ের পাশের চেয়ারটায়। সঙ্গে সঙ্গে তন্ময়ের নাকে বেবিপাউডার, বেবিলোশনের গন্ধ এসে লেপ্টে যায়। চোখ বুঁজে শুঁকে নেয়৷ শরীর নাড়িয়ে অরু নাক টানছে। কফির মগ ভেঙেছে বিধায় একটু কেঁদেছিল। কাঁদলেই মেয়েটার ঠান্ডা লেগে যায়। এই এক গুণ তার মধ্যে চমৎকার ভাবে জ্বলে বেড়ায়। তন্ময় কাঁচের প্লেট উল্টিয়ে একটা ব্রেড নেয়৷ ডিমপোজ দিয়ে দু-ব্রেড মিলিয়ে কামড় বসায়। অরু পুনরায় নাক টানে। ওপর পাশ থেকে আকাশ ধমকে ওঠে, ‘অরু! খেতে দিবি তুই? নাক টানাটানি আল্লাহর ওয়াস্তে পড়ে কর।’
অরু কষ্ট পায়। টলমলে চোখে তাকায়। টিস্যু দিয়ে নাক চেপে বলে, ‘আমি কী ইচ্ছে করে টানি? এভাবে কেন বলেন ভাইয়া!’
অগোচরে তন্ময়ের ঠোঁটের কোণ ঘেঁষে হাসি লেপ্টে এসে বিলীন হয়ে যায়। আকাশের গলায় অসহায়ত্বতা লেপ্টে, ‘তুই ইচ্ছে করে টান নাহলে অনিচ্ছায় টান আমার মাথা ব্যথা নেই। তুই এখন টানিস না প্লিজ! খেতে পারব না নাহলে। তন্ময় যে কীভাবে তোর পাশে বসে নির্বিকার থাকে, আমার বুঝে আসে না।’
মোস্তফা সাহেব গম্ভীর স্বরে বলেন, ‘আহ চুপ থাকো আকাশ। খেতে দাও ওকে।’
চুপচাপ খেতে থাকা তন্ময়ের প্লেটে উড়ে এসে পড়ে ডিমপোজ। অরু আর্তনাদ করে ডিমটা নিতে আসে। নিতে গিয়ে ডিমটা ভাগ হয়ে তন্ময়ের হাতায় পড়ে তারপর টেবিলে। তন্ময় নিজের সাদা শার্টের হাতার দিক তাকায়। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে টিস্যু নেয়। জায়গাটুকু মুছে পুনরায় খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। যেন সে কিছু দেখেও দেখে না। ব্রেডের লাস্টটুকু খেয়ে ওঠে দাঁড়ায়। কাঁধে ব্যাগ চেপে বেড়িয়ে পড়ে। দুপাশে অবিশ্বাস্য ভঙ্গিতে মাথা নাড়ায় আকাশ। অসহায় চোখে দেখে নেয় তাদের বাড়ির গাধাটাকে। আচ্ছা এই গাধাটাকে তন্ময় এতো সহ্য কীভাবে করে? কীভাবে এটাকে এতো ঠান্ডা মাথায় হ্যান্ডেল করে? আকাশ এই গাঁধাটার সঙ্গে একঘন্টা থাকলে ব্লাস্ট হয়ে যাবে।
ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চলছে। শিক্ষার্থীগণ ভাগে-ভাগে দলবেঁধে মিলে-মিশে গাছ লাগাচ্ছে। খুবই মনোযোগ সহকারে। তাদের সাহায্য করছে স্বয়ং প্রিন্সিপাল।
পূর্বদিকের দেয়ালের সর্বত্র জুড়ে একটি দল হাঁটু গেড়ে বসে। দলের মধ্যে মোট সাতজন তারা। প্রত্যেকের হাত জোড়া কাদা মাটিতে একাকার অবস্থা। সে-সময় তন্ময়ের উরুতে একটি হাত এসে বসে। হাতটা কাদায় মাখোমাখো পর্যায়ে। সাদা প্যান্টে বড়সড় ছাপ বসিয়ে দেয় মূহুর্তে। চমকে ওঠে ইব্রাহীম। মুখে হাত চেপে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকায় ভিক্টিমে দিক। ভিক্টিম তন্ময় তখন নির্বিকার। তারপর তাকায় মাহিনের দিক। এতো বড়ো তাণ্ডব করে মাহিন তখন দাঁত বের করে হাসছে। পরমুহূর্তে সামনের মাটির বালতিটা উঠিয়ে নেয় তন্ময়। সবটুকু মাটি উবুড় করে ঢেলে দেয় মাহিনের মাথায়। এভাবেই শুরু হয় কাদায়-কাদায় গোসল করা। তাদের বন্ধুদের এই কাদামাটি খেলা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্যসন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যেও এই খেলা জমে ওঠে।
নির্বিকার হয়ে দেখতে থাকে শিক্ষকগণ। দূর থেকেই নির্দেশনা দিচ্ছে এসব বাচ্চামো বন্ধ করার। কাজ হলো না। সকলেই তখন তুখোড় মেজাজে রয়েছে।
কাদায় লেপ্টে থাকা তন্ময় ক্যাম্পাসের পশ্চিমে বসে। মাথা এবং মুখশ্রী বাদ রেখে সম্পূর্ণ সে কাদায় মেখে। হাতে চেপে রাখা সিগারেটের নিচের অংশটুকু কাদায় ভেজা। গরম চোখে তাকাচ্ছে মাহিনের দিক। মাহিন তখন বুক ফুলিয়ে হাসছে। সেও সম্পূর্ণ কাদায় মেখে। তার মাথাটাও বাদ রয়নি। বেচারা ইব্রাহীম থেকে ধরে বাকি সদস্য গুলো ছাড় পাইনি। সবাই কাদায় ভেজা। রিহান বিরক্ত গলা বলল, ‘ওরে মাইর দিচ্ছস না কেন? এই ছোটো মাহিন মজুমদার শুরু করছে বালের খেলা! আমি কোন মুখ নিয়া বাসায় যামু? রাস্তায় গেলে আমারে জোকার কইব.. জোকার!’
মাহিন চুইংগাম চিবুচ্ছে। মূলত সিগারেটের সাথে মাটিও একটু মুখে ঢুকেছিল কিছুক্ষণ আগে। তাই বাধ্যতামূলক একটা চুইংগাম মুখে নিয়েছে। মুখটা ফ্রেশ করা দরকার ছিল। সেই চুইংগাম মুখ থেকে বের করে আঙুলে নিয়ে রিহানকে দেখিয়ে প্রশ্ন করে, ‘খাবি?’
রিহানের নাক ফুঁসে ওঠে। তেড়েমেরে যায় মাহিনের দিক। মাহিন ও পেছায় না। দুজন সমানে বুক ফুলিয়ে আসে একচোট যুদ্ধ করতে। একপর্যায়ে করেও। তাদের এই মারামারি আর ছেলেমানুষী একই কথা। ঘাসের মাটিতে পড়ে দুজন একে-ওপরের ওপর উঠে কিল-ঘুষি দিতে ব্যস্ত। এই দু-পাগলকে থামানোর চেষ্টা করেনি কেউই। তন্ময় সিগারেট ফেলে দেয় দারোয়ানকে আসতে দেখে। ব্যাগ কাঁধে তুলে যেতে নিয়ে বলে, ‘আমি গেলাম।’
এ-পর্যায়ে মাহিন আর রিহান ও উঠে দাঁড়ায়। বিরক্ত মুখে রিহান এগিয়ে গিয়ে মাহিনের পিঠের ময়লা ঝেড়ে দেয়। একই বিষয় মাহিন ও করে। চোখ রাঙিয়ে দুজনেই আলাদা পথে হাঁটা ধরে। ইব্রাহীম ছুটেছে তন্ময়ের পিছু। সৈয়দ ও তাদের সঙ্গে। তাদের বাসা আবার একই দিকে। যাতায়াত করতে সুবিধা।
সদরদরজা ঠেলে মাত্রই ঢুকেছে তন্ময়। কিছুটা সামনে এগোতেই ওপর থেকে একঝাঁক পানি এসে ঠিক তার মাথায় পড়ল। ঠান্ডা কনকনে পানি। জবজবে ভিজে তন্ময় মাথা তুলে তাকায়। বারান্দায় অরু দাঁড়িয়ে। হাতে বালতি। সে মনেহয় গাছে পানি দিচ্ছিল। বেচে ফেরা পানিটুকু নিঃসন্দেহে এখানে ঢেলেছে। অরু তখন ভ্যাবাচেকা খেয়ে চেঁচাল। মাবুদ-আল্লাহ বিড়বিড় করে ছুটে ভেতরে গেল। তন্ময় নির্বিকার মুখে থমকে রইল কিছুক্ষণ। শরীরে পানি ছুঁয়ে দিতেই শুকিয়ে যাওয়া কাদা গুলো নরম হয়েছে। শরীরে বেয়ে চলেছে সেগুলো। এক্ষুনি গোসল করা প্রয়োজন। নাহলে আজ সে নির্ঘাত অরুকে থাপ্পড় মেরে গাল লাল করে ফেলবে। নাক ফুঁসিয়ে ভেতরে ঢোকে। চেঁচিয়ে ডাকে জবেদা বেগমকে। ছুটে আসেন জবেদা বেগম। ছেলের এ-অবস্থা দেখে বাকরুদ্ধ তিনি, ‘কী হইল? এই অবস্থা কেন?’
‘একটা তোয়ালে দাও।’
সুমিতা বেগম তোয়ালে এনে দিলেন। চিন্তিত গলায় বললেন, ‘অরু পানি ফেলছে? ওরে পাঠাইছি গাছে একটু পানি দিতে। মাইয়াডা একটা কাজ যদি ভালোমতো করে!
তন্ময় দ্রুত গতিতে দুয়ারে দাঁড়িয়ে শার্ট খুলে ফেলল। কোমরে তোয়ালে পেঁচিয়ে প্যান্ট খুলে, সোজা ওপরে উঠে গেল। কাপড়চোপড় গুলো তুলে নিলেন জবেদা বেগম। সুমিতা বেগম তখন নিজের মেয়েটাকে ইচ্ছেমতো বকছে। বকতে বকতে ওপরে উঠছেন। অরুর নরম পিঠে নির্ঘাত দুটো চড় পড়বে।
তন্ময় সন্ধ্যায় পড়ছিল। সে-মুহুর্তে দীপ্ত আর অরু আসে পড়তে। ছোটো দীপ্ত হৈচৈ করে এলেও অরু ছিল নিরব। যেটা সচরাচর সে থাকে না। তন্ময় অগোচরে কয়েকবার দেখে নিল মুখ গোমড়া করে থাকা অরুকে। ফুলোফুলো গোল-গাল মুখটা অসহায় হয়ে আছে। নিশ্চয়ই বকুনি খেয়েছে। মাথা দুলিয়ে বলল, ‘বোস। হোমওয়ার্ক করে নে। তারপর কোন চ্যাপ্টারে সমস্যা দেখা আমায়।’
দীপ্ত ছোটো হাত-পায়ে বিছানায় ওঠে বসে। ব্যাগ এগিয়ে ধরে তন্ময়ের দিক। তন্ময় খাতা, পেনসিল এবং রাবার বের করে দেয়। দীপ্ত নিজের নার্সারির হোম-ওয়ার্ক করতে বসে মনোযোগ দিয়ে। মাঝেমধ্যে তন্ময় দেখিয়ে দিচ্ছে। সমস্যা হলো অরুকে নিয়ে। নাক-মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। তন্ময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সবকিছুতেই সে নির্বিকার থাকতে পারে। সবকিছু এভোয়েড করতে পারে, হ্যান্ডেল করতে পারে। শুধু তার সামনে বসা এই আবেগী মেয়েটির সামনেই সে অসহায়। বড্ড অসহায়!
