শাহজাহান তন্ময় পর্ব ৪৫+৪৬
Nabila Ishq
রাগেগরগর করছেন মোস্তফা সাহেব। বাড়ির লোকদের হাবভাবে রাগ-টা আরও বেশি করে মাথায় চড়ে বসেছে। বাড়ির একটা মানুষেরও মাথাব্যথা নেই। সবাই এই বিয়েতে সম্মতি দিয়ে বসে আছে! আশ্চর্য! তাদের এমন পজিটিভ রিয়েকশন কেন হবে? নির্বাক না হয়ে একেকজন ঢাকঢোল পেটাতে তৈরি। তার ছোটো ভাই আনোয়ার সাহেবের কথাই বলা যাক। সে দিব্যি ধেইধেই করে নেঁচেকুদে রাজি তন্ময়-অরুর বিয়েতে। উল্টো তিনি পারলে এখনই তন্ময়কে কোলে তুলে নাচতে শুরু করে দেন।
হয়তো পারলে এলাকাজুড়ে মাইকিং করতে ছুটতেন। ছেলের সাথে এত-এত বোঝাপড়া এতকিছু – এত ঝগড়াঝাঁটি মোস্তফা সাহেব তাহলে কার জন্য করলেন? দিনশেষে যার জন্যে তিনি করেছিলেন চুরি সেই এখন বলছে সে চোর। সবাই ভালো মধ্যে মোস্তফা সাহেব হলেন কালো। ভিলেন সেজে বসে আছেন। এসব ভেবেই সিংহের মতন গর্জন দিয়ে উঠছেন। তাকে দেখেই দুরুদুরু কাঁপছে জবেদা বেগমের অন্তরাত্মা। ভয়ে তিনি জুবুথুবু হয়ে আছেন। চাচ্ছেন কোনোরকমে ল্যাটা মেরে শুয়ে পড়তে। চোখবুজে ঘুমের দেশে পাড়ি দেবার ঢপ ধরবেন। ঘুমিয়ে পড়েছে দেখলে কি আর ডেকে তুলে চেঁচাবে? কখনোই না। সেইসূত্র ধরে তিনি বিছানার কাছটায় মাত্রই গিয়েছেন। ওম্নেই রাগিত সুরে মোস্তফা সাহেব স্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলে বসেন,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
‘এই কী ছেলে তুমি আমায় দিলে? এর থেকে আমার কলিজা ছিঁড়ে খেতে। খেয়ে ঢেকুর তুলতে।’
জবেদা বেগমের চোখজোড়া ছোটোছোটো হয়ে এলো ততক্ষণাৎ। অগোচরে মুখ বেঁকিয়ে ভেঙচি কাঁটলেন। যে মানুষটা ছেলেকে একদিন না দেখলে ঘুমোতে পারে না। ছটফট করে বেড়ায়। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দেয়। তার মুখে এসব মানায়? নেহাতপক্ষে রেগেমেগে বলছে। সাতসকালে ঠিকই সব ভুলে বসবে। জবেদা বেগম বোঝানোর তাগিদে বলতে নিচ্ছিলেন,
‘রাগ ঝেড়েমুছে শুয়ে পড়েন। রাত অনেক হয়ে—’
মোস্তফা সাহেব হঠাৎ করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। লিভিংরুমে পৌঁছে বাড়ির প্রত্যেকটি সদস্যকে চেঁচিয়ে ডেকে আনলেন। ঘোষণা দিলেন–অরু আর দোতলায় থাকতে পারবে না। ওকে নিচতলার একটি ফাঁকা রুমে ট্রান্সফার হতে হবে। আজ এবং এখনই। মোস্তফা সাহেবের কথা অমান্য করবার স্পর্ধা কার আছে? সে মুহূর্তেই আকাশ-শাবিহা-রুবি লেগে পড়েছে অরুর রুমের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র ট্রান্সফার করতে। নিচতলার বাঁদিকের রুমে রাতারাতি ট্রান্সফার করা হলো বেশকিছু জিনিসপাতি। মোস্তফা সাহেব সিঁড়িপথে দাঁড়িয়ে থেকে, বিচক্ষণ নজরে নিজ চোখে–জিনিসপাতি ট্রান্সফারের কার্যক্রম দেখেছেন।
আনোয়ার সাহেব একটিবার অবশ্য মুখ খুলতে নিয়েছিলেন। বড়ো ভাইয়ের কঠিন চোখের চাহনি দেখে চুপ করে গিয়েছিলেন পরমুহূর্তেই। একই ব্যাপারটা ঘটেছে তন্ময়ের সঙ্গে। সেও দোতলায় দাঁড়িয়ে অসহায় চোখে দেখছে এসব কাণ্ডকারখানা। কিছু যে বলবে সম্ভব নয়। এখন মুখ খুলে কিছু বললেই সর্বনাশ হবে। এভাবেই বাবাকে দেয়া ওয়াদা সে ভঙ্গ করেছে। সেই বিষয়ে মোস্তফা সাহেব আপসেট ভীষণ। তন্ময় বুঝতে পেরেছে বলেই আর ঝামেলা করল না। একচিত্তে দেখল অরুর ছোটোখাটো দেহটা পুতুল হাতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। আড়চোখে ফিরেফিরে বারংবার কেমন করে চাইছে। মুখটা এইটুকুন হয়ে আছে। ওর মুখশ্রীতেই লেপ্টে আছে, ও যেতে চাচ্ছে না। তন্ময়ের ভারী মায়া লাগল। ইচ্ছে করল দৌড়ে গিয়ে ওকে বুকে পিষে নিতে। যত প্রকার আদর এই পৃথিবীতে এক্সিস্ট করে সব ওর ওপর ঢেলে দিতে।
অরুকে নিচতলার রুমে ঢুকতে দেখে কিছুটা শান্ত হলেন মোস্তফা সাহেব। স্থিরচিত্তে উপস্থিত সকলের মুখমণ্ডলে চোখ বুলিয়ে বললেন,
‘নিজেদের মধ্যে কোনো বিয়ে হয় না। পরিবার ছাড়া কীসের বিয়ে? পারিবারিক ভাবে বিয়েটা না হওয়া অবদি অরু এখানেই থাকবে। তোর কী মতামত আনোয়ার? আপত্তি আছে?’
আনোয়ার সাহেব বড়ো ভাইয়ের তালে-তাল মিলিয়ে; সঙ্গে সঙ্গেই মাথাটা দুলিয়ে বোঝালেন, না। আপত্তি নেই, থাকতে পারে না। মোস্তফা সাহেব শেষবারের মতন ছেলেকে তেরছাভাবে একমুহূর্ত দেখলেন। তন্ময়ও সমানভাবেই তাকিয়ে রইল। জন্মদাতা পিতাকে আরেকদফায় রাগাতে ভ্রু তুলল। দু-ভ্রু নাচিয়ে যেমন শুধাচ্ছে, কী ব্যাপারস্যাপার! মোস্তফা সাহেবের মেজাজ মুহূর্তেই তুঙ্গে উঠল। তিনি আঙুল তুলে উচ্চকণ্ঠে বকাঝকা করে, চলে যেতে উদ্যত হলেন। জবেদা বেগমও স্বামীর পেছনে চলে গেলেন। আনোয়ার সাহেব মৃদু মৃদু হাসছেন। মুচকি হেসেই চোখ তুলে দোতলায় দৃষ্টি ফেলেন। তন্ময়কে একপল দেখে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠে এলেন। তন্ময় এগিয়ে এসে সামনাসামনি দাঁড়াল। দৃষ্টি তার নত। ভদ্রসভ্য তার ভাবভঙ্গি। আনোয়ার সাহেব হাত উঠিয়ে তন্ময়ের কাঁধে রাখলেন। তন্ময় দৃষ্টি নত রেখে বলল,
‘অরুকে বোনের মত আমি কখনো দেখিনি। মাফ চাচ্ছি, চাচ্চু। তোমার ভরসা, আস্থা ভেঙেছি। তোমাকে ঠকিয়েছি।’
আনোয়ার সাহেবের ঠোঁটের রেখা প্রসারিত হলো। তিনি মোলায়েম পিতৃত্ব সুরে শুধালেন,
‘বাবা, তোর কী অরুকে পছন্দ ছিলো?’
তন্ময় মাথা ওঠাল। তার নিগূঢ়তম চোখ জোড়ার দৃষ্টি সম্মুখে দাঁড়ানো আনোয়ার সাহেবের চোখের মধ্যিখানে। সে গভীর কণ্ঠে ঝরঝরে ভঙ্গিতে নির্দ্বিধায় বলল,
‘পছন্দ প্রচণ্ড ছোটো শব্দ হয়ে যায়। বড়ো সাধারণ শোনায়। আমি ওকে ভালোবাসি। ভীষণ রকমের ভালোবাসি, চাচ্চু।’
আনোয়ার সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। বোঝবার ন্যায় মাথা দোলালেন। ফিচেল হেসে বলেন,
‘যতটুকু বুঝলাম অরুও তোকে ভালোবাসে। মিয়াঁ-বিবি রাজি তো ক্যায়া কারেগা কাজি, হুঁ?’
তন্ময়ও এযাত্রায় ঠোঁটে ঠোঁট টিপে হেসে ফেলে। আনোয়ার সাহেব নিভুনিভু গলায় বলেন,
‘একটামাত্র সন্তান আমার। তাও মেয়ে। সবসময় ভেবে রেখেছি একটা সময় আসবে, যখন আমার এই আদরের টুকরোটাকে বিয়ে দিতে হবে। আমাদের ফেলে ওকে ওর শ্বশুরবাড়ি যেতে হবে। তাদের মানিয়ে চলতে হবে। কেমন হবে তারা? আমাদের মত কী আগলে রাখবে ওকে? ভালোবাসবে? পত্রিকা পড়তে বসলেই কতরকম নিউজ পড়ি আর আঁতকে উঠি। ভয় পাই। আমার মেয়েটা সুখে থাকবে তো?’
এতটুকু বলে একটু থামলেন আনোয়ার সাহেব। তার চোখজোড়া তার লাল হয়ে এসেছে। ভেজা চোখ নিয়ে হেসে স্বতঃস্ফূর্ত ভঙ্গিতে বলে ওঠেন,
‘এখন আর সেসব চিন্তাভাবনা নেই রে, বাবা। খাঁটি রত্ন তুই। হাতের তলায় বড়ো হওয়া ছেলে আমাদের। তোকে চিনি- জানি। আমার মেয়ের জীবনসঙ্গী হিসেবে তোর থেকে ভালো কেউ হতে পারে না। সম্ভব না। আমি ওকে তোর হাতে তুলে দিতে পেরে চিন্তামুক্ত থাকব। সারাজীবন মেয়েটা চোখের সামনে থাকবে। একই বাড়িতে। এইতো আমার শান্তি।’
তন্ময় প্রতিজ্ঞা দেবার মতন দৃঢ় কণ্ঠে জানায়,
‘আমি অরুকে সুখে রাখব—দেখে রাখব; সারাজীবন।’
পরদিন শাহজাহান বাড়ি শান্ত। বড়ো স্থির। যে যার মতন নিত্যকারের হাবভাবেই রয়েছে। তন্ময় নিজেও নির্বিকার আগেকার ন্যায়। সদ্যবিবাহিত পুরুষ তাকে কোনোদিক দিয়ে লাগছে না। সে সকাল-সকাল রোজকারের মত অফিস ব্যাগ হাতে নিচে নেমে এসেছে। ব্রেকফাস্ট করে অফিস যাবে। অরু ইতোমধ্যে পরিপাটি ভাবে উপস্থিত। উৎসুক নয়নে রান্নাঘরে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। কী করতে চাচ্ছে ও আর এক আল্লাহ ছাড়া কেউ হয়তো বুঝবে না। তন্ময় গোপনভাবে একপল দেখল। খেয়াল করল সুন্দর একটি ড্রেস পরেছে। সাদা আনারকলি। দু’চোখে গাঢ় করে কাজল পরেছে। দু’হাত জুড়ে সাদা কাঁচের চুরি। তন্ময় মুগ্ধ হলো। বেহায়ার মত চেয়ে থাকতে চেয়েও, নিজের দৃষ্টি অস্বাভাবিক ধৈর্যসহ নিয়ন্ত্রণে নিলো।
একই গতিতে হেঁটে এসে চেয়ার টেনে বসল। অরু শব্দ শুনে তরিৎ ফিরে তাকাল। তন্ময়কে দেখে জড়সড়ভাবে দাঁড়াল। লাজুক ওর হাবভাব। কী সুন্দর নতুন বউয়ের মত লজ্জা পাচ্ছে। আফসোস! তাদের অবস্থান অন্যদের থেকে ভিন্ন। নাহলে হয়তো তারা এখন নিউলি ম্যারিড কাপল হতো। সুন্দর একটি দেশে হানিমুনে ছুটত।
খেতে বসে সকলেই ঘুরেফিরে তন্ময়-অরুকে আড়চোখে, কোণচোখে দেখছে। নির্বিকার থাকতে চেয়েও পারছে না কেউই। এইযে জবেদা বেগম বারংবার ওদের দেখছেন আর মিটিমিটি হাসছেন। একই অবস্থা শাবিহা-রুবি-দীপ্তর। সুমিতা বেগম আবার অন্যদিকে আগের চেয়ে তন্ময়ের পানে নজর বেশি দিচ্ছেন। চারবার তিনি তন্ময়ের সামনে গিয়ে ওর পাতে রুটি তুলে দিলেন। এযাত্রায় মুখ খুলে জিজ্ঞেস করে বসলেন,
‘বাবা, আর কিছু লাগব তোর?’
মুখে পরোটা গিলতে নিয়ে তন্ময় কেশে উঠল। বাড়ির ছেলে সে। সারাজীবন ডাইনিং থেকে নিজ হাতে নিয়ে খেয়েছে। কখনো এহেন প্রশ্ন করেননি সুমিতা বেগম। তাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছে একমুহূর্তের জন্য। জবেদা বেগম ঠোঁটে ঠোঁট টিপে হাসি আটকে রেখেছেন। অরু ইতোমধ্যে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। তড়িঘড়ি করে ব্যগ্র ভঙ্গিতে একগ্লাস পানি এগিয়ে ধরে। এতে করে পরিস্থিতি আরও হাস্যকর হয়ে ওঠে। শব্দ করে হেসে ফেলে শাবিহা। মোস্তফা সাহেব গম্ভীরের চূড়ান্তে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। গটগট পায়ে বেরিয়ে যান। সে যেতেই সবাই স্বতঃস্ফূর্ততায় হেসে কুটিকুটি। সকলে কেন হাসছে তা তন্ময় বুঝলেও অরু বুঝল না বোধহয়। বোকাবোকা চোখে দেখছে সবাইকে। তন্ময়ের চোখে চোখ পড়ে এবারে। নিগূঢ়ভাবে চেয়ে থেকে– ধীর গলায় তন্ময় নিজ অজান্তেই বলে বসে,
‘অফিস যাচ্ছি। আসি।’
কান সকলের খাড়া হয়েছিল। কথাটি কমবেশ সবার কর্ণগোচর হলো। দ্বিতীয় দফায় উচ্চস্বরে হেসে উঠল সকলে। তন্ময় অনির্মিত ভাবে ব্যাগ হাতে বেরিয়ে এলো দ্রুত পদচারণে। বাগানে পৌঁছে আটকে রাখা দীর্ঘশ্বাসটুকু ফেলবে; তখনই খেয়াল করল সম্মুখে মোস্তফা সাহেব দাঁড়িয়ে। যেন তারজন্যই অপেক্ষা করছে ভদ্রলোক। শবাবা-ছেলের মধ্যে সেখানেই, সেমুহূর্তে দাঁড়িয়ে কিছু মুহূর্ত তর্কবিতর্ক চলল। সেই তর্কবিতর্ক থামল আনোয়ার সাহেবের উপস্থিতিতে। মোস্তফা সাহেব এবং আনোয়ার সাহেব একসঙ্গে বেরিয়ে পড়েছেন। তন্ময় নিজের গাড়িতে উঠে বসেছে। গাড়ি স্টার্ট করেই বাঁদিক চাইল। অরু এগিয়ে আসছে। সঙ্গে শাবিহাও আছে। ওদের আসতে দেখে কাঁচ নামিয়ে দিলো। শাবিহা মিটমিট করে হেসে শুধাল,
‘আমাদের সামনের পার্লারে নামিয়ে দিবা?’
তন্ময় ভ্রু তুলে জিজ্ঞাসু ভঙ্গিতে,
‘এত সকালে পার্লারে কী?’
শাবিহা ডান চোখ টিপে রহস্যময় ভাবে বলল,
‘অরু নাক ফুঁড়াবে।’
আশ্চর্য হলো তন্ময়। নাক ফুটো করবে? হঠাৎ সেটা কেনো? তাও বিয়ের পরদিনই? সে খানিক ভেবে দেখল দেশের মেয়েরা সাধারণত বিয়ের পরপর নাক ফুঁড়িয়ে নেয়। এযাত্রায় তার চকিত দৃষ্টি অরুতে পড়ে। অরুর কান দুটো রক্তিম। ও অন্যদিক চেয়ে আছে। তন্ময় নিজেও কল্পনাজল্পনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অরুকে নাকফুলে কেমন লাগবে? পরপর নিজের ভাবনায় মাটি চাপিয়ে গম্ভীরকণ্ঠে ধমকের সুরে বলে,
‘নাক ফুঁড়াতে হবে কেনো? তাও এসময়। এসবের দরকার নেই। যা ভেতরে।’
এতটুকু বলে সে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। রাতে ফিরে লক্ষ্য করে অরু নাক ফুঁড়িয়েছে। খুব সুন্দর একটি ডায়মন্ডের নাকফুল পরে আছে। এই সাধারণ বিষয়টা ঝড় তুলল তার বুকে। ইচ্ছে করল ছুঁয়ে দেখতে। চুমু খেতে। দারুণ সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়াল ওই নাকফুল ওর মুখজুড়ে। একদিন সুযোগ পেয়ে সে চুমুও বসিয়েছিল। তারপর- তারপর একেকটি দিন
একই গতিতে, একই নিয়মে চলতে লাগল। মনমতন অরুর সঙ্গে সময় কাটানো দুষ্কর হয়ে দাঁড়াল বটে। বাড়ির সবাই তাদের চোখে চোখে রাখে। একা ওকে পাওয়াটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দূর হতে একপল দেখা। ব্যস! মাঝেমধ্যে অবশ্য সঙ্গ পাওয়া যায়। গেলেও সময় যেন কীভাবে চলে যেত। এভাবেই তো কেঁটে গেল তিনটা বছর। কতগুলো বসন্ত।
ফেব্রুয়ারি মাস। বসন্তকাল। বাংলায় ফাল্গুনমাস। আজ চৌদ্দ তারিখ। ভালোবাসা দিবস। এই দিনে ঢাকাশহরের পথঘাটে ধর্মঘট পড়ে। ভালোবাসার ধর্মঘট। আকাশে-বাতাসে, আয়ুতে-বায়ুতে উড়েবেড়ায় ভালোবাসারা। ডানে-বামে, ওপরে-নিচে সবাখানেই– বিভিন্নভাবে উপস্থিতি থাকে কপোত-কপোতিদের। এহেন দিনের সাতসকালে তন্ময় ধানমণ্ডির ‘লাভোনা’ রেস্টুরেন্টে নির্বিকার মুখে বসে। পরনে সাদা রঙের পলো শার্ট সাথে কালো কার্গো প্যান্টস। চুলগুলো অপরিপাটি ভাবে কপালে পড়ে। শূন্যে চেয়ে থেকে; হাতের গরম কফিটায় হুটহাট চুমুক বসাচ্ছে। এযাত্রায় মাথা না ঘুরিয়ে, শুধু চোখের মণি ঘুরিয়ে আড়চোখে একটিবার দেখে নিলো, পাশাপাশি একদম মুখোমুখি বসা দুজন ব্যক্তির ছলাকলা।
অয়নের সঙ্গে খুব একটা প্রীতিপূর্ণ সম্পর্ক নেই মোস্তাফা সাহেবের। বিশেষ একটি কারণে অয়নকে দু’চোখে দেখতে পারেন না ভদ্রলোক। মুখচোখ গম্ভীর করে রাখেন চূড়ান্ত পর্যায়ে। যেন অয়ন কোটি টাকা তার থেকে চু রি করে নিয়েছে। অবশ্য কোটি টাকা না নিলেও, একমাত্র মেয়ে তো চু রি করেছে? ধুরন্ধর ছেলেমানুষ একটা! নাক টিপলে এক্ষুনি দুধ বেরোবে। এমন ছেলের ভেতর মেয়েটা তার দেখল কী? কথায় আছে প্রেম অন্ধ। মেয়েটা নিশ্চিত অন্ধ হয়ে গেছে। মোস্তফা সাহেবের কপালে গুনেগুনে চারটা ভাঁজ পড়েছে। হাতের কফিটা পানির মতন ঠাণ্ডা হতে চলেছে। চুমুক দেবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। এই বিচ্ছু ছেলেকে দেখলে তার খাওয়া-দাওয়া হাওয়াতে মিলিয়ে যায়। বেলুনের মতন চুপসে আসে মুখশ্রী। আর এদিকে আরেকটা আছে তার ছেলে!
চুপচাপ মুখে কুঁলুপ এঁটে বসে। ওকে কী তিনি বসে থাকতে এনেছেন? কিছু বলবে তা না! একটিমাত্র আপন ছোটো বোন ওর। সেই বোনের জন্য কী চিন্তা নেই? মোস্তফা সাহেব দুবার চোখ উঠিয়ে তাকালেন তন্ময়ের দিকে। ইশারা-ইঙ্গিতে তিনি কথাবার্তা আগাতে বলবেন। কিন্তু ছেলে তাকে সেই সুযোগ দিলে তো? দিচ্ছেই না। উদাস ভঙ্গিতে অন্যদিক ফিরে বসে। উপায়ন্তর না পেয়ে গলা খাঁকারি দিলেন। তন্ময় ডান ভ্রু তুলে তাকায়। জুবুথুবু হয়ে বসা অয়নও চায়। ছেলেটা প্রচণ্ড নার্ভাস। বুকের ভেতরটা ধুকপুক করছে। করবে না? বয়সে বড়ো প্রেমিকার পিতা-ভ্রাতা তার সম্মুখে গম্ভীরমুখে বসে। আড়ে-আড়ে গম্ভীর, নিগূঢ়ভাবে চাইছে। তাকে শক্তপোক্ত ভঙ্গিতে দেখছে। আর সে আসামির ন্যায় মাথা ঝুঁকিয়ে আছে। এছাড়া আর করার কিছু কী আছে? নেই। সখ্যতা করতে হবে। ভবিষ্যৎ শ্বশুরকে পটাতে না পারলে কেমন পুরুষ সে? নিজেকে ধাতস্থ করল অয়ন। উৎসুক চোখে চেয়ে সে ভদ্রভাবে একগ্লাস পানি এগিয়ে ধরল। অন্য হাতে একটু টিস্যু বাড়িয়ে বলল,
‘আঙ্কেল, একটু গলাটা ভিজিয়ে নিন। ভালো লাগবে।’
মোস্তফা সাহেব কঠিনমুখে, শক্ত চোখে চেয়ে গম্ভীরকণ্ঠে শুধালেন,
‘আসল বয়স কত তোমার? স্মার্ট কার্ড কোথায়? এনেছ তো? আর পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি আর অনার্সের সার্টিফিকেট কোথায়?’
অয়ন শুকনো ঢোক গিলল। একপল অসহায় ভাবে তন্ময়ের দিক তাকাল। আমতাআমতা করে বলল, ‘এসব তো আনতে বলেননি, আঙ্কেল!’
মোস্তফা সাহেব চোখদুটো বড়ো করে ফেললেন। চোখ রাঙিয়ে শাসালেন, ‘বলতে হবে কেন? এসব ইম্পর্ট্যান্ট তুমি জানো না? এতটুকু জানো না কিন্তু প্রেম তো ঠিকই করতে জানো। অভদ্র ছেলে!’
অয়ন মিনমিনে ভঙ্গিতে জানাল, ‘প্রেম তো রক্তে মিশে। এম্নিতেই এসে যায়। কিন্তু ভবিষ্যৎ শ্বশুর ঠিক কী দেখে পরিক্ষা নেয়, তা তো জানতাম না!’
নির্বাক মোস্তফা সাহেব নিজের জবান হারিয়ে বসলেন। কিংকর্তব্যবিমূঢ় তাকে একপলক দেখে–তন্ময় আড়ালে আবডালে সেকেন্ডের জন্য ঠোঁট টিপল। মোস্তফা সাহেব রাগিত গলায় বলে উঠলেন,
‘এই ছেলে, ভবিষ্যৎ শ্বশুর কে তোমার? মুখ সামলে কথা বলো, ভালোয় ভালোয় বলছি। আমার মেয়ে তোমার হাতে আমি দিচ্ছি না। শুনেছ, বুঝেছ? কান খুলে; মন দিয়ে শোনো।
আমার মেয়েকে তোমার হাতে দেব না।’
অয়ন আশ্চর্য না হয়ে পারল না। এখানে তাহলে তাকে ডাকা হয়েছে কেন? প্রশ্নবোধক চোখে তন্ময়কে দেখল। তারপর মোস্তফা সাহেবকে। হতবাক গলায় শুধাল,
‘এই কথা কী আমি শাবিহাকে কল করে জানাব?’
মোস্তফা সাহেবের তাজ্জব বনে গেলেন। চোখের পলক পড়া বন্ধ হয়ে গেল। মেয়ের নাম বলে তাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে? তাকে; শাহজাহান মোস্তফাকে? ধমকে উঠলেন ততক্ষণাৎ,
‘বলে দেবে মানে? তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছ? সাহস তো কম না তোমার! দেখছিস তন্ময়? দেখ এই ছেলের আসল রূপ।’
অয়ন স্বাভাবিক। শান্ত গলায় বলল, ‘আমাকে শাবিহা বলেছে, আপনি আমাদের মেনে নিয়েছেন। ভবিষ্যৎ নিয়ে কথাবার্তা বলতে এসেছেন। আমি সেভাবেই তৈরি হয়ে এসেছি।’
মোস্তফা সাহেব কী ইচ্ছে করে এসেছে? সখে এসেছে নাকি? নেহাতি মেয়ের মুখপানে চেয়ে এসেছে। মেয়ের কান্নাকাটি তিনি বাবা হয়ে মেনে নিতে পারছিলেন না বলেই বাধ্য হয়েছেন মেনে নিতে। অয়ন সিরিয়াস হলো। চোখমুখ শান্ত স্থির করে তাকাল। কণ্ঠে দৃঢ়তা এনে বলল,
‘আপনি আমাকে বলেছিলেন শাবিহাকে পেতে আমায় যোগ্য হতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। আমি দুবছর সময় নিয়েছিলাম। বলেছিলাম দুবছরে নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে দেখাব। নিজের ইনকাম সোর্স দেখাব। তিন বছর হতে চলল। আপনাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি আমি রেখেছি। কথামত আমি নিজের ব্যবসা শুরু করেছি। বেশ কিছু কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেছি। ইনভেস্ট শতগুণে বেড়েছে। মার্কেট স্টক কিনেছি। শাবিহাকে সুখে রাখার মতন অবস্থা হয়েছে আমার। এখন আপনার প্রতিশ্রুতি রাখার পালা, আঙ্কেল।’
মোস্তফা সাহেব অন্যদিক ফিরে রইলেন। মুখে রা নেই তার। তন্ময় কফিটা টেবিলে রাখল। অয়নের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করল,
‘আন্টি-আঙ্কেল, মেনেছেন? তাদের কোনোরকমের আপত্তি নেই তো?’
অয়ন মাথা দুলিয়ে বলল, ‘নেই, ভাই। তারা মেনেছেন। আর বাদবাকি কে মানল না মানল–আই ডোন্ট কেয়ার!’
মোস্তফা সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। তন্ময়-অয়নও উঠে দাঁড়াল। মোস্তফা সাহেব এযাত্রায় পরিপূর্ণ দৃষ্টি অয়নের দিকে রেখে বললেন,
‘তোমার মা-বাবাকে বাসায় আসতে বলো। বাকিটা তাদের সাথেই বলব।’
কথাটুকু শেষ করে তিনি দরজার দিক হাঁটা ধরলেন। তন্ময় অয়নের কাঁধ চাপড়াল আশ্বস্ত করবার ভঙ্গিতে। অয়নের চোখ উজ্জ্বল হয়ে আছে নক্ষত্রের মত। খুশিতে আত্মহারা হয়ে, প্রফুল্ল গলায় বলে,
‘ধন্যবাদ, ভাই। আমি নিরাশ করব না। শাবিহাকে সুখে রাখব। ভালো রাখব।’
তন্ময় হেসে ফেলে, ‘আই ট্রাস্ট ইউ। ওল দ্য বেস্ট।’
তন্ময় বেরিয়ে এলো রেস্টুরেন্ট থেকে। গাড়ির সামনে মোস্তফা সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন সটানভাবে। তন্ময় পকেট থেকে চাবি বের করল।
চাবি চাপ দিয়ে গাড়ি আনলক করল। মোস্তফা সাহেব উঠে বসলেন। ওপরপাশ দিয়ে ড্রাইভিংয়ে বসল তন্ময়। সিটবেল্ট বাঁধতে-বাঁধতে বলল,
‘সিটবেল্ট বেঁধে নাও, বাবা।’ ছেলের কথামতন মোস্তফা সাহেব সিটবেল্ট বাঁধলেন। তবে তিনি অন্যমনস্ক। চিন্তিত বড়ো। বাবার মুখ দেখেই বুঝে নিলো তন্ময়। নরম গলায় বলতে লাগল,
‘যা হয়নি তা নিয়ে এত উলটপালট চিন্তাভাবনা কেন করছ, বলো তো?’
মোস্তফা সাহেবের কণ্ঠে পিতৃসম দুশ্চিন্তা,
‘বাবা হয়ে নে তারপর বুঝবি।’
তন্ময় কুটিল হাসল। গাড়ি স্টার্ট করল। বিচিত্র গলায় বলে ফেলল, ‘সুযোগ কই দিচ্ছো?’
মুহূর্তেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন মোস্তফা সাহেব। চোখ গরম করে তাকান। শাসাতে শুরু করেন ছেলেকে, ‘লজ্জা করে না তোর এসব বলতে? বিবেক নেই তোর? এতটুকু মেয়েটা! একসময় বোনও তো হতো।’
তন্ময় নির্বিকার গলায় বলে বসল, ‘বিবেক আছে বলেই এখনো বাবা হইনি। লজ্জাশরম আমার এভাবেও একটু কম। জানোই তো।’
মোস্তফা সাহেব এই দামড়া ছেলের সঙ্গে আর একটি কথাও বলবেন না।
বাসায় ফিরতেই তন্ময়কে সবাই ঘিরে ধরল। সবাই বলতে শাবিহা-রুবি-দীপ্ত আর আকাশ। তাদের উৎসুক হাবভাব দেখে তন্ময় ভ্রু তুলল। আকাশের ইশারায় চোখ তুলে লিভিংরুমে চাইতেই স্তম্ভিত হলো। একটি বড়ো গোলাপ ফুলের তোড়া। আঙুল তুলে সেটা দেখিয়ে শুধাল,
‘কার এটা?’
শাবিহা মুখ খুলেছিল জবাব দেবার জন্য। তবে দিতে পারল না। তার পূর্বেই দোতলা হতে একটি রিনরিনে পাতলা মেয়েলি কণ্ঠ তেড়ছা ভঙ্গিতে বলে উঠল,
‘ডিরেক্টর, হ্যাপি ভেলেনটাইন্স ডেই। ফ্রম সামিয়া।’
তন্ময় ভ্যাবাচেকা খেয়ে ওপরে তাকাল। তবে কণ্ঠের মালিকের দেখা পেলো না। পাশ থেকে রুবি ফিসফিসিয়ে জানাল,
‘ভাইয়া, তুমি যাওয়ার পরপর এই ফুলের তোড়া আসে। সেন্ডার সামিয়া। আর ছোটো নোট আছে সঙ্গে। সেখানে লেখা, ডিরেক্টর হ্যাপি ভেলেনটাইন্স ডেই।’
তন্ময় বিরক্ত হলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলল। সামিয়া তার অফিসের। ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেনন্টে নতুন জয়েন করেছে। তাই অজান্তেই এমন দুঃসাহস দেখাতে পেরেছে। মাসখানেক তো হলো জয়েন হয়েছে। এই মেয়ে কী জানে না সে ম্যারিড? এতদিনে তো জানার কথা। আশ্চর্য! লিভিংরুমের দিক আর এগিয়ে গেল না। বরঞ্চ আকাশের উদ্দেশ্যে বলল,
‘এটাকে আপাতত বাইরে রেখে আয়।’
আকাশ মিনমিনে কণ্ঠে শুধাল, ‘মৌমাছি কী সব তোকেই দেখে? কোথা থেকে আসে এরা?’
তন্ময় অসহায় এই বিষয়ে। সে কী এসব মৌমাছি চায়? চায় না। বরং দূরে-দূরেই থাকে। তার এই জীবনে সে শুধু একটা মৌমাছিই চেয়েছে। সেই মৌমাছি নিয়েই তার জগৎ-সংসার। তন্ময় সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে আসে। অরুর ঘরের দরজা বন্ধ। ধীরেসুস্থে দুটো করাঘাত করে। তবে জবাব নেই। কণ্ঠ খাদে নামিয়ে ডাকে,
‘অরু?’
ভেতর থেকে মেঘের মতন শান্ত কণ্ঠ শোনা গেল,
‘কেউ নেই ভেতরে। দূর হোন।’
ছাঁদ থেকে নামছিলেন জবেদা বেগম। তাকে দেখে তন্ময় সরে যায়। নিজের রুমে ফিরে এসে অরুকে কল করে। মেয়েটা সঙ্গে সঙ্গে কল কেঁটে দেয়। যেন কল কাঁটার জন্য ফোন হাতে নিয়েই বসেছিল। তন্ময়ের মনে পড়ে গতকাল রাতের কথা। অরু বিড়ালছানার মতন তার চারিপাশে ঘুরঘুর করেছিল আজ বেরোবে বলে। ভেবেচিন্তে ম্যাসেজ পাঠায়,
‘ঘুরতে যেতে চাচ্ছিলি না? রেডি হয়ে নাম।’
অরুর ভেঙানো ধরনের শর্টকাট জবাব এলো,
‘হ্যাপি ভেলেনটাইন্স ডেই, ডিরেক্টর।’
তন্ময় দুসেকেন্ড সময় নিয়ে লিখল, ‘রেডি হয়ে নাম। অপেক্ষা করছি।’
‘যাব না।’
তন্ময় ম্যাসেজটি দেখে হাসল। জবাব না দিয়ে রুম ছেড়ে বেরোল। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামল। মোস্তফা সাহেব লিভিংরুমে শান্ত মস্তিষ্কে বসে চা খাচ্ছেন। পাশেই জবেদা বেগম বসে। তন্ময় বেরোতে-বেরোতে বলল,
‘অরুকে নিয়ে একটু বেরোচ্ছি। সন্ধ্যার আগেই ফিরে আসব।’
মোস্তফা সাহেব বাঁকাচোখে একপল ছেলেকে দেখলেন তবে মুখে কিছু বললেন না। চা খাওয়াতে মনোযোগী হয়ে রইলেন। অপরদিক জবেদা বেগম বোঝার ন্যায় হাসলেন।
বেরিয়ে এসে তন্ময় ড্রাইভিংয়ে উঠে বসল। সূর্যের রশ্মি চোখে লাগায়–সানগ্লাস পরে নিলো। অপেক্ষারত সে কয়েকবার সদরদরজার দিক তাকাল। অরু বেরোল বিশ মিনিট পর। অঙ্গপ্রত্যঙ্গে লেপ্টানো র ক্ত লাল রঙের কামিজ। লম্বা চুলগুলো ছাড়া। যা কোমর ছুঁয়ে আছে। কপালে ছোটো কালো টিপ। ছোটোখাটো হাস্যজ্জ্বল মুখটা গম্ভীর করে রেখেছে। সূর্যের আলোতে ওকে রাগিত অপ্সরী লাগছে। তন্ময়ের রাগান্বিত অপ্সরী! অরু তড়তড়িয়ে পাশে এসে বসল। দরজা লাগিয়ে অন্যদিক ফিরে থাকল। তন্ময় আড়চোখে একবার চেয়ে গাড়ি স্টার্ট করল। বাড়ি থেকে গাড়িটা বেরোতেই শুধাল,
শাহজাহান তন্ময় পর্ব ৪৩+৪৪
‘কোথায় যাবি?’
অরুর জবাব নেই। সে একচিত্তে বাইরেটা দেখছে।
গাড়ির কাঁচও আজ নামাতে বলছে না। ভালোরকম রেগেছে মনে হচ্ছে। তন্ময় চিন্তিত হয়। মস্তিষ্ক খুঁজতে শুরু করে, প্রেয়সীর রাগ ভাঙানোর রাস্তা।
