শিমুল ফুল পর্ব ৩৬

শিমুল ফুল পর্ব ৩৬
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

সকাল থেকেই পুষ্প খুবই খুশী।খুশীর মূল কারণ হলো আজকে পলাশ আর নিধি আসছে।তারই কলেজের শিক্ষিকা তার জা এটা ভাবতেই খুশীতে নাচতে ইচ্ছে করে।বারোটার দিকে পলাশ আর নিধি আসে।রাবেয়াকে দেখে নিধি মা বলে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে,নিধির মনে হয় রাবেয়ার শরীর থেকে কেমন মা মা ঘ্রান আসছে,

রাবেয়াকে দেখে বুঝতে পারলো পলাশ তার মায়ের মতোই হয়েছে শান্ত,স্নিগ্ধ।রাবেয়াও পরম স্নেহে নিধিকে কপালে চুমু দেয় সবার সাথে আলাপচারিতা করার পরে গম্ভীর মুখে শওকত হাওলাদার আসে।উনাকে দেখে নিধির চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে,এই সেই লোক যে নিধির জীবনটা দুর্বি/ষহ করে দিয়েছে,চরিত্রে দাগ লাগাতে দু’বার ভাবেনি,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তাকে মে/রে ফেলতে লোক পাঠিয়েছিলো।উনাকে দেখে নতুন করে আবার সব কালো স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে উঠে।এমন মানুষকে বাবার জায়গায় স্থান দিতে মন টানে না।তারপরেও উনি পলাশের বাবা সেই সম্মান থেকেই আলতো গলায় সালাম দেয়।শওকত হাওলাদার নিধির দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকায় মেয়েটা তো ফর্সা না,দে

খতেও আহামরি সুন্দরী না এই মেয়ে কিভাবে তার রাজপুত্রের মতো ছেলেকে কাবু করলো?উনি সালামের উত্তর দিয়ে চুপচাপ গম্ভীর মুখে বসে থাকে।পলাশ তার মায়ের কাছে গেলে নিধি আড়ষ্ট হয়ে যায়।উনার সামনে এভাবে বসার মানে হয় না।উঠে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই শওকত হাওলাদার গমগমে গলায় বললো,

“পরিকল্পনা তো সফল।”
নিধি অবাক হয়ে বললো,
“কিসের পরিকল্পনা?”
“আমার আলাভুলা ছেলেকে যে পটালে আর বিয়েও করে ফেললে।”
নিধি হালকা করে ঠোঁট বাকিয়ে জিতে যাওয়া হাসি হাসে।
শওকত হাওলাদার সেদিকে তাকিয়ে বললো,

“কি মনে করেছো জিতে গিয়েছো?”
“কি জানি।”
শওকত হাওলাদার গা জ্বা/লানো হাসি দিয়ে বললো,
“চেয়ারম্যানের সাথে টক্কর দেওয়া এতো সহজ না।”
নিধি নির্লিপ্ত গলায় বললো,
“আচ্ছা।”

“আচ্ছা!সামনে যা হবে মুখ দিয়ে আর আচ্ছা বেরুবে না।”
নিধি চমকে শওকত হাওলাদারের দিকে তাকায়।এই লোক আবার কি ষ/ড়য/ন্ত্র করতে চায়?
“আপনি আর কিছু করতে চাইলে খা/রাপ হবে কিন্তু।”
“কি করবে?”

উনার এতো ভাবলেশহীন ভাবে কথার ভঙ্গি দেখে নিধির বুকটা ভ/য়ে মুচ/ড়ে উঠে।এই জ/ল্লা/দ ধরনের মানুষটা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে।শওকত গম্ভীর গলায় বললো,
“পলাশের থেকে তোমাকে আলাদা করার দায়িত্ব আমার।”

নিধির গলায় কথা আটকে যায়।এই লোক এতো সহজে সব মেনে তাদের বাড়িতে আসতে বলবে এটা নিধি আর পলাশের বিশ্বাস হয়নি।এতো সহজে হারার পাত্র উনি না।তাহলে উনি কি করতে চাইছেন?দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
“এমন কিছু করবেন না।”

“তোমাকে কুড়িগ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি।তারপর দেখা যাবে তোমার পাশে পালাশ কই থেকে আসে।”
উনার কথার অর্থ নিধির বোধগম্য হয় না।
“মানে?”
শওকত হাওলাদার এর উত্তর দিলেন না।তিনি নিজের মতো করে বললো,

“কিভাবে ছেলেদের মাথা নষ্ট করতে হয় এগুলো তোমার বাবা মা’ই শিক্ষা দিয়ে গেছে নাকি?না মানে কতো নিখুঁতভাবে কাজটা করলে।”
মৃ//ত্যু বাবা মায়ের নিয়ে এমন কথা শুনে নিধির চোখে পানি টলটল করে উঠে।নিধির চোখের পানি দেখে শওকত হাওলাদার বললো,
“আসলেই বাবা মায়ের থেকেই….”

উনার কথা শেষ হবার আগে নিধি ভাঙা গলায় বললো,
“আপনি একটা ছোট/লোক,নি//লজ্জ অ//মানুষ।”
ছেলের বউয়ের মুখে এমন কথা শুনে শওকত হাওলাদারের চোখ রা/গে লাল বর্ণ হয়,চোখের আকৃতি দেখে মনে হচ্ছে বেরিয়ে আসবে।সটান দাঁড়িয়ে গেলো।কখন যে মজিব হাওলাদার এসে দাড়িয়েছেন তা কেউ খেয়াল করলো না।নিধি কিছু বুঝে উঠার আগেই মজিব হাওলাদার তার মুখে চে/পে ধরে বললো

“আমার বাড়িতে এসে আমার ছেলেকে উল্টাপাল্টা বলার সাহস কই থেকে পাও?এখন মুখটা ভে/ঙে দেই?”
এতোক্ষণ আড়াল থেকে পলাশ সব শুনছিলো এখন মজিব হাওলাদারের কাজ দেখে হনহন করে বেরিয়ে আসে।দাদার গায়ে সর্বশক্তি দিয়ে ধা/ক্কা দিয়ে বললো,
“আমার বউয়ের গায়ে হাত দেয়ার আপনি কে?আমি এখন আপনার হাত ভে/ঙে দেই?”
মজিব হাওলাদার বললো,

“তোর বউ তোর আব্বাকে কি বলছে শুনেছিস?”
“শুনেছি।তাই বলে আপনি গায়ে হাত দিবেন।অ//সভ্য।”
শওকত হাওলাদার তেড়ে আসে।
“কার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস ভুলে গেলি নাকি?মুখ সামলে কথা বল।”

পলাশ তার আব্বার দিকে তাকায়।এই লোকটাকে আব্বা বলে পরিচয় দিতে ঘৃ/ণা হয়।কিছুক্ষণ আগে কলেজের প্রিন্সিপাল ফোন করে পলাশকে জানালো নিধির ট্রান্সফার প্রায় হয়ে গেছে কুমিল্লা কুড়িগ্রামে সরকারি কলেজে।পলাশ অবাক হয়ে বললো,

“কিন্তু আমরা তো এপ্লিকেশন করিনি।”
“তোমার আব্বা উর্ধতন কর্মকর্তাকে দিয়ে বদলি করাচ্ছেন,আমিও কিছুক্ষণ আগে জেনেছি।”
পলাশের চোয়াল শক্ত হয়ে যায়।এর জন্যই আজকে বাড়িতে ডেকে আনা?তিনি আবারো নিধি আর পলাশকে আলাদা করতে চাইছেন!পলাশ দ্রুত পায়ে এগিয়ে থমকে যায়।আড়ালে দাঁড়িয়ে শওকত আর নিধির কথোপকথন শুনে।পলাশ চিৎ/কার করে বললো,

“আপনি এতো বড়ো মাপের খেলোয়াড় জানা ছিলনা তো।”
শওকত হাওলাদার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।পলাশ কখনোই এমন জোড়ে কথা বলেনা।পলাশের চিৎ/কার শুনে বাড়ির সবাই ছুটে আসে।
শওকত হাওলাদার অপ্রস্তুত হয়ে বললো,

“এভাবে চেচা/চ্ছো কেন?”
পলাশ মাথা নেড়ে বললো,
“বছরখানেক আগে যদি এভাবে চেচা/তে পারতাম,প্রতি/বাদ করতে পারতাম তাহলে আজকে এই দিন আসতো না।”
শিমুল পলাশের কাছে এসে দাঁড়ায়।
“ভাই কি হয়েছে?”

পলাশ শিমুলের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে উঠে।শওকত হাওলাদারের দিকে আঙুল তুলে বললো,
“উনি এতো নি/ষ্ঠু/র কেন শিমুল?উনার মতো পা/ষা/ণ মানুষ তো আমাদের বাবা হওয়ার কথা ছিলো না।”
শওকত হাওলাদার বললো,

“উল্টাপাল্টা কথা বলবি না।কি করেছি আমি?”
পলাশ শওকত হাওলাদারের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আপনি জানেন না কি করেছেন?বাহ বাহ।নিধির বদলি করতে চাইছেন কেন?আমার বউ আমার কাছে থাকলে আপনার সমস্যা কি?আমাকে সুখী দেখতে ভালো লাগেনা?”

শওকত হাওলাদার ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে।উনার নিশ্চুপতা দেখে সবাই যা বুঝার বুঝে নিলো।পলাশ বললো,
“নিধিকে দূরে সরিয়ে ওর ক্ষ/তি করবেন।তারপর আপনার ছেলে আবার আপনার কোলে ফিরে আসবে এটাই ভাবেন?তাহলে আপনি ভু/ল।এই জন্যই বাড়িতে ডেকে এনেছেন?”

শওকত হাওলাদারের মুখের কাছে গিয়ে পলাশ কেটেকেটে বললো,
“আজকে থেকে আপনি আমার আব্বা না।আর কখনো জন্মদাতার দাবী দেখাতে আসবেন না।”
পেশকারা বেগম এতোক্ষণ সব দেখে গেছে।নিধিকে তার একদম পছন্দ না।এই মেয়ের জন্য কিনা পলাশ তার ছেলের সাথে বেয়া/দবি করছে!উনি নিধির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে নিধির মাথায় একটা খোঁচা দেয় তারপর গালে খোঁচা দিয়ে বলে,

“পলাশ এই মেয়ে তো কালিনি।কি দেখে পা/গল হয়েছিস?আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করাবো এরে তা//লাক দিয়ে দে।”
উনার কথায় নিধি আৎকে উঠে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে।পেশকারার এমন আচরণে পলাশ এগিয়ে আসে।
“তুমি ওর গায়ে হাত দিলেন কেন?তোমাকে আমি খোঁচা দেই?অ//সভ্য মহিলা।সারাজীবন আমার আম্মাকে জ্বা//লিয়ে পু//ড়িয়ে শেষ করে ফেলেছে এখন আবার নাতী-বউদের উপরেও কৃতিত্ব ফলাতে চায়।ম//রার সময় হয়েছে মনে কিছু ভয় ডুকাও।

আমার বউ আমি ছাড়ি না রাখি এটা বলার তুমি কে?কোন চ্য/টের বা/ল। তোমারে গনায় ধরে কে?কিছু বলিনা দেখে মাথায় উঠে নাচবা?আমার সামনে আরেকবার এমন চটরপটর করতে আসলে ম//রার আগে ক//বরে রেখে আসবো।”
পলাশের এমন তেতে উঠা কথায় সবাই অবাক।যেনো সমুদ্রের পানি থেকে আ/গ্নে/য়গি/রি লা/ভা হলকা দিয়ে বেরোচ্ছে।শিমুল হাসে তার ভাইকে এমন শক্তই তো দেখতে চেয়েছিলো।কুকুরের ঘাড়ে মুগুর না তুললে আজকাল হয় না,নীতিবাক্য মেনে চলতে গেলে জীবনের স্বাধ পাওয়া সম্ভব না।

পলাশ শওকত হাওলাদারের দিকে ফিরে বললো,
“অপমান করার জন্য বাড়িতে ডেকে এনেছেন?”
“এই মেয়ের জন্য তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলতে পারিসনা।”
“আপনি আপনার অ/হং/কার বাড়ানোর জন্য আমার সাথে নিধির সাথে কি করছেন এগুলো?আপনি কি মানুষ?মেয়েদের সম্মান দিতে পারেন না বিধায়ই আপনাকে আল্লাহ মেয়ে দেয়নি।”

পলাশ রাবেয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
“আম্মা তোমার ছেলে সবসময় তোমার।আর কখনো এই বাড়িতে আসতে বলবেনা।আমি ফোন দেবো।”
“আব্বা কোথাও যাবিনা।যাবিনা।”
“আম্মা যেখানে আমার নিধির সম্মান নেই সেখানে আমি কিভাবে থাকি বলো?নিধির ভালো রাখার দায়িত্ব যে আমি নিয়েছি।”
শওকত হাওলাদারের দিকে তাকিয়ে বললো,

“একদিন আমাদেরকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে আপনি চোখের পানি ফেলবেন মনে রাখবেন।”
শওকত হাওলাদার অবহেলার চোখে নিধির দিকে তাকায়।রাবেয়া মুখে হাত চেপে ডু/কড়ে কেঁ/দে উঠে।রাবেয়ার কপালে মায়ার চুম্বন এঁকে পলাশ নিধির হাত ধরে বেড়িয়ে যায়

।যেখানের বি/ষা/ক্ত বাতাসে তার সুখের চোখে পানি আসে সেখানে না থাকলে পলাশের কিচ্ছু হবে না।বাইকে উঠে নিধি শক্ত করে পলাশকে জড়িয়ে ধরে।পলাশ বাইক চালানো অবস্থায়ও নিধির শরীরের কাঁপন বেশ বুঝতে পারছে।পলাশ বাইক থামিয়ে ঘাড় পিছনে ফিরিয়ে বললো,

“এতো ভ/য় পাও কেন?আমি আছি না?আমি থাকতে তোমার কোনো ভ/য় নেই।আমি ঠিক সব সামলে নেবো।”
নিধি কান্নাভেজা মুখে হালকা হাসে।মুগ্ধ হয়ে পলাশকে দেখে।

শিমুল ফুল পর্ব ৩৫

এই ভরসাটুকুইবা কয়জনে দেয়?পলাশ যে তার জন্য এতো কাতর এটা আজকে নিজ চোখে দেখে পলাশের প্রতি শ্রদ্ধা আরো বেড়ে যায়।এমন স্বামী পাওয়ার ভাগ্য কয়জনের হয়?নিধির হয়েছে নিধি নিঃসন্দেহে ভাগ্যবতী।সুখে আবার ঠোঁট উল্টে কেঁদে দেয়।পলাশ কি বলবে বুঝতে না পেরে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে।

শিমুল ফুল পর্ব ৩৭