শিমুল ফুল পর্ব ৪৭

শিমুল ফুল পর্ব ৪৭
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

ফুটফুটে মেয়েটা ছোট হাতে তার বাবার বৃদ্ধাঙ্গুলী চেপে ধরে রেখেছে সে হয়তো জানেও না এটা তার বাবা।পিটপিট করে সে আশেপাশে তাকাচ্ছে।পলাশ মুগ্ধ চোখে তার সদ্য জন্মানো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।তার চোখে যে কখন পানি জমলো সে বুঝতে পারলোনা,বাবা হওয়া এতো সুখের কেনো?বুকটা কেমন ভারী ভারী লাগছে।আল্লাহর দেয়া বড়ো নিয়ামত পেয়ে পলাশ মনে মনে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে।তারপর সে আস্তে করে বলে,

“আসসালামু আলাইকুম আম্মু।আব্বুর রাজ্যে আপনাকে স্বাগতম।”
নিধি পলাশের হাজারো খুশীর ফোয়ারা বয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাবুর কানে আজান দাও।”
পলাশ আজান দেয়।প্রথম নাতনী বলেই কিনা আনন্দে রাবেয়ার চোখ ভারী হয়ে আসে।ছোট মুখটাতে চুমুতে ভরিয়ে দেয়।নিধি মুগ্ধ হয়ে বাবুটাকে দেখে।ষোল ঘন্টার ক/ষ্ট নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো।এই বাবুটাই এতোদিন তার পেটে ছিলো, সারাক্ষণ খেলা করে জানান দিতো মা আমি সুস্থ আছি।পলাশ তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আম্মা!আমার কোলে দাও না।”
রাবেয়া নকশি কাঁথায় পেচানো মেয়েটাকে পলাশের কোলে তুলে দেয়।পলাশ সোনার হার দিয়ে মেয়েকে কুলে নেয়।বলিষ্ঠ হাতে বাচ্চাটা খুবই ছোট।পলাশ এই প্রথম কোনো ছোট বাবু কোলে নেয় তার মনে হচ্ছে যে কোনো মূহুর্তে পড়ে যেতে পারে।বাবুটার গালে আস্তে করে একটা চুমু খেয়ে বলে,
“আম্মা নাও।আর একটু থাকলে পরে যাবে।”

রাবেয়া কোলে নিয়ে বলে নাতনীর নামটা সেই রাখতে চায়।সোহা রাখবে বলে ঠিক করে।পলাশ বা নিধি কেউই আপত্তি করেনা।রাবেয়া সোহাকে নিধির পাশে শুয়িয়ে দিয়ে বাহিরে চলে যায়।পলাশ শুয়ে থাকা নিধির কপালে,গালে চুমুতে ভরিয়ে দেয়।
“আমাকে আরেকটা মা এনে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ নিধি।বাবা হওয়ার মতো সুন্দর অনুভূতি অনুভব করানোর জন্যও ধন্যবাদ।”

নিধি মিষ্টি করে হাসে।দুর্বল হাতে পলাশের গালে হাত রাখে।পলাশ নিধির হাতে চুমু দেয়।সে আস্তে করে বললো,
“আমাকে মা হবার স্বাধ অনুভব করানোর জন্য তোমাকেও ধন্যবাদ।আমার যে কি অনুভূতি হচ্ছে বুঝাতে পারবো না।”
পলাশ আর নিধি বাবুর দিকে তাকিয়ে ভবিষ্যত ভাবে।নিধির চোখে ভেসে উঠে তাদের ছোট ফ্লাটে বাচ্চার হইচই।আহা!নিধি আর পলাশ বুঝি পরিপূর্ণ।ভালোবাসার সাক্ষী দুনিয়াতে চলে এসেছে।

শওকত হাওলাদার খবরটা শুনে খুব খুশী হয় কিন্তু কাউকে বুঝতে দেয় না।চুপিচুপি মসজিদে গিয়ে পাঁচহাজার টাকা দানবক্সে ফেলে দেয়।আর মনে মনে প্রার্থনা করে সব যেনো ভালো হয়,হাসপাতালে যাবেনা যাবেনা করেও নিজেকে আটকাতে পারে না সন্ধার দিকে হাসপাতালে চলে যায়।উনাকে হাসপাতালে কেউই আশা করেনি তাই উনাকে দেখে সবাই চমকে যায় কিন্তু সবাই খুশী হয়।রাবেয়া বাবুকে শওকত হাওলাদারের কোলে দেয়।শওকত হাওলাদার খেয়াল করে দেখে বাবুটা পলাশের মতোই দেখতে।ছোট ছোট হাত পা নেড়ে চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে।শওকত হাওলাদার রাবেয়াকে আস্তে করে বললো,

“পলাশের মতোই হয়েছে।তাইনা?”
রাবেয়াও ব্যাপারটা খেয়াল করেছিলো।স্বামীর কথা শুনে বললো,
“হ্যাঁ।”

শওকত হাওলাদার পকেট থেকে পাঁচ হাজার টাকা নাতনীর হাতে দেয়।শওকত হাওলাদার আসাতে উনারা সব অপরাধের কথা সবাই ভুলে যায় বিশেষ করে নিধি।উনার চোখে কেমন বাবার ছায়া খুঁজে বেড়ায়।সে হঠাৎ ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।তার আব্বা আম্মা বেঁচে থাকলে কতো খুশী যে হতো।রাবেয়া ব্যাকুল হয়ে জানতে চায় কি হয়েছে নিধি মা বাবার কথা বলে।পলাশ আর রাবেয়া নিধিকে সান্ত্বনা দেয় কিন্তু নিধি কেঁদেই যাচ্ছে।এমন সুখের মুহূর্তে মা বাবাকে ভুলে থাকা যায়?শওকত হাওলাদারের কেনো জানি নিধির কান্না ভালো লাগে না।আস্তে করে বললো,

“কেঁদো না নিধি।”
উনার এতোটুকু কথায়ই নিধির কা/ন্না থেমে যায়।যেনো মা-বাবাহীন মেয়েটা বাবার আশ্রয় খুঁজছে।শওকত হাওলাদার কি বাবার আশ্রয় দেয়ার মতো মানুষ?

পুষ্প আর শিমুল বাবু হওয়ার খবরটা শুনে অনেক খুশী হয়।পুষ্প অবশ্য গাল ফুলিয়ে বলেছিলো,
“দেখেছো!আমার বিয়ের পরে ভাবীর বিয়ে হয়েছে তারপরেও তাদের বাবু হয়ে গেলো।”
পুষ্পর মনোভাব বুঝতে পেরে শিমুল হাসে।

“তো?”
“মানে আমরা বাবু নিবোনা?”
“ভাবীর বয়স আর তোমার বয়স দেখেছো?”
“আরে বয়স কোনো ব্যাপার না।”
“তাই নাকি?”

“হ্যাঁ।তাছাড়া এতো দেরীতে বাবু নিলে বাবু বড়ো হতে হতে আমি আর তুমিই তো বুড়ো হয়ে যাবো।”
“বেশী পেঁকে গেছেন মনে হয়?এখন এসব মাথা থেকে সরিয়ে ভার্সিটির পড়াগুলো সম্পূর্ণ করো।”
পুষ্প মুখ বাকিয়ে পড়ায় মনোযোগ দেয়।শিমুল কতো বই যে কিনে আনে।পড়তে পড়তে পুষ্পর অবস্থা করুন।তবে শিমুলের সানিধ্যে এসেই কিনা পুষ্পর এইচএসসি রেজাল্ট খুব ভালো এসেছে।হয়তো প্লাস আসেনি কিন্তু মানানসই এসেছে।পুষ্প আর শিমুল যে পরিস্থিতিতে দিন কাটিয়েছে সেই পরিস্থিতেতে পড়ালেখা করেই এই রেজাল্ট আসলেই ভালো।পুষ্প আজকাল পড়তে চায় না তখনি অতীতে করা অপমানের দাগটা শিমুল খুচিয়ে দেয়।মনে করিয়ে দেয় পুষ্পর বড়ো কিছু করতে হবে।নিজের অবস্থান সবাইকে বুঝিয়ে দিতে হবে।পুষ্প রাতদিন পড়ে।

সুইটির বিয়ে হয়েছে।তার হাজবেন্ড ডাক্তার।স্বামী নিয়ে তার মা নানীর কাছে প্রশংসার শেষ নেই।তার স্বামী তার কথায় উঠে বসে।বউকে কেউ কিছু বলতে পারে না,সুইটি সবার উপরে ছুড়ি ঘুরিয়ে চলে।হুটহাট বেড়াতে চলে যায়,যা ইচ্ছা তাই খায়।শশুড় শাশুড়ীকে দুই পয়সার দামও দেয় না।পেশকারা আর আসমা রাবেয়াকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,
“আমার সুইটি কপালগুনে একটা বর পেয়েছে।সুইটিকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝেনা।”
রাবেয়া মুচকি হেসে বললো,

“ভালো তো।”
আসমা সুখীমুখে বললো,
“সুইটি যা বলে তাই শুনে।সেদিন কক্সবাজার থেকে ঘুরে এলো।”
রাবেয়া বললো,
“হ্যাঁ আম্মা বলেছিলো।কয়দিন পরে পরেই শুনি এখানে ওখানে বেড়াতে যায় ওর শশুড় শাশুড়ী কিছু বলেনা?”
রাবেয়া মুখ বাকিয়ে বললো,
“কি বলবে আবার?আমার মেয়ের নতুন বিয়ে হয়েছে।এখনি তো সময় জীবন উপভোগ করার,এখন শখ আহ্লাদ পুরুণ না করলে কবে করবে?তাছাড়া আমার মেয়ে জামাইটা খুব ভালো সুইটিকে কেউ কিছু বললে সাথে সাথে মুখে গরম শি/শা ঢেলে দেয়।”

পুষ্পর সাথে করা অন্যা/য়ের কথা রাবেয়ার মনে পড়ে।উনারা যা ক/ষ্ট দিয়েছে তা তো রাবেয়ার চোখের সামনেই।আর এখন একি কাজ নিজের মেয়ে করছে বলে কি খুশী।সে বললো,
“তারপরেও শশুড় বাড়িতে শুশুড় শাশুড়ির মতামতের দরকার আছেনা?”
পেশকারা খেকিয়ে বললো,
“বা*লের দরকার।বুড়া-বুড়ি বললেই শুনতে হবে নাকি?জামাই কথায় থাকলে দুনিয়া জাহান্নামে যাক।তাছাড়া আজকাল-কার মেয়ে এতো কথা শুনতে বসে নেই।”

রাবেয়া মুচকি হেসে বললো,
“তা ঠিক।”
আসলা পেশকারার দিলে তাকিয়ে বললো,
“আম্মা সুইটির শরীরটা কি সুন্দর হয়েছে।মন যা চায় সব খায়।বললো জামাই নাকি পছন্দের খাবার রুমেও এনে রাখে সুইটির যখন ইচ্ছা খায়।”
পেশকারা এসব শুনে খুব খুশী হয়।
“কয়দিনের মাইয়া রাত-বিরাতে ক্ষিধা তো লাগবেই।আমার বোনটার খুশীর কথাগুলো শুনলে পরানটা ভরে যায়।”
রাবেয়া কাঠকাঠ গলায় বললো,

“নিজের মেয়ের বেলায় এসব সুখের কথা অন্যের মেয়ের বেলায় জ্বালাপোড়া।কেনো বলুন তো?”
আসমা আর পেশকারা শক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।আসমা বলে,
“এসব কী কথা ভাবী?”
“কি কথা আবার?সুইটির জায়গায় আমাকে কিংবা পুষ্পকে ভেবে দেখেন আপনাদের এমন সুখী লাগে কিনা,মুখে এমন হাসি ফুটে কিনা।আমি জানি লাগবে না।কারন আমরা তো পরের মেয়ে।নিজের মেয়ের সাথে কি পরের মেয়ের তুলনা সাজে?”
পেশকারা মুখ ভেঙচিয়ে বলে,

“আমার সুইটির সাথে তোমাদের তুলনা করবো কোন দুঃ/খে?তোমার কই আর আমার সুইটি কই?রানী আর দাসীয়ে কখনো তুলনা সাজে না।”
“সুইটি যেমন রানী আমরাও আমাদের বাবার বাড়িতে রানীই ছিলাম।কিন্তু বিয়ের পরে আপনারা ভুলে যান যে আমরাও কারো মেয়ে আপনারা আমাদের কাজের মেয়ে ছাড়া কিছুই ভাবেন না,মনে হয় বউ না কাজের মেয়ে এনেছেন।”
পেশকারা মুখ তেতো করে বললো,

“চুপ যাও।এতো বয়স হলো মুখে মুখে তর্ক করা গেলো না।”
“একবার ভাবেন তো আপনার ছেলে যদি সুইটির জামাই হতো তাহলে কি আপনি এমন করতে পারতেন?এতো খুশী কি হতেন?”

“আমার শওকত এমন না।”
“সেটাই তো!আমার আর পুষ্পর উপর আপনারা যে অন্যা/য়টা করেছেন তা কখনো ভুলে থাকার না।এতোটুকুন একটা বাচ্চার সাথে কি ব্যবহার করেছেন।মেয়েটাকে একটা দিনও শান্তিতে থাকতে দেননি।আপনাদের জ্বালায় আমার ছেলেরা আমার চোখের সামনে নেই।আপনার ম/রার সময় হয়ে আসছে তাও শয়তানী কমেনি।সারাজীবন আমাকে জ্বা/লিয়েছেন এখন আমার ছেলের বউকে।”

শওকত সোফায় বসে ছিলো।পেশকারা রাবেয়ার কথা শুনে চোখ পাকিয়ে তাকায়।তারপর শওকতকে বললো,
“এমনে খামুস খাইয়া কি দেখোস?আমাকে কি বলে তোর বউ?কিছু বলবি না?”
শওকত হাওলাদার ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে।তার আম্মা যে রা/গী এটা তার জানা।রাবেয়া আসার আগে থেকেই সে তার মাকে চিনে সুতরাং রাবেয়ার থেকে তার আম্মাকে তারই বেশী চিনা।এতোদিন মায়ের কথামতোই সব করেছে কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে ভুল ছিলো।সংসারে এই ঝামেলা আর ভালো লাগে না।পেশকারার কথায় উনি বি/রক্ত হয় চোখ থেকে চশমা খুলে রুমে চলে যায়।পেশকারা হাহাকার করে বলে,

“আরে আমার পুলা তো এমন ছিলো না!এই কাল/না/গিনী আমার পুলারে তা/বিজ করছে।আল্লাহ গো আল্লাহ।”
“হ্যাঁ আপনার ছেলে পরের মেয়ের পক্ষ নিলেই তা/বিজ করছে আর অন্যের ছেলে নিজের মেয়ের পা চাটলে জামাই লক্ষী,ভালো জামাই।স্বার্থপর মহিলা।”

এটা বলে রাবেয়া রান্নাঘরে চলে যায়।সুইটির মতো অ/সভ্য,বে/হায়া, খা/রাপ মেয়ের ভাগ্য কেনো এতো ভালো হবে?কেনো এতো সুখে থাকবে?আসলে খা/রাপ মানুষেরা এই দুনিয়াই ভালো থাকে,সুখে থাকে।সুইটিও তাই।এরা অন্যের উপর যন্ত্রণা চাপিয়ে নিজে সেই যন্ত্রনা পায় না আসলে আল্লাহ এদের যন্ত্রণা দেয় না।সুখে থাকতে দেয়।রাবেয়া রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নেয়।চিন্তাভাবনা কয়দিন পলাশের কাছে থাকবে এই ঘরটা তার বি/ষের মতো লাগে।শওকত হাওলাদার বিছানায় আধশোয়া হয়ে সব দেখে।রাবেয়া একবারও বলার প্রয়োজনবোধ করেনা।আসলে মানুষ নিজের সম্মান নিজেই হারায়।যে মন থেকে একবার উঠে যায় পরে শতো চেষ্টা করেও আর মনে জায়গা পাওয়া যায় না।

রাবেয়া চলে যাওয়ার পরে সন্ধ্যায় শওকত হাওলাদার নিজেও পলাশের বাসায় চলে যায়।আজকে নিয়ে তৃতীয় বার যাওয়া।প্রতিবারই নাতনীর টানে।নাতনীর নাম সুহা।এই নামটা তার ঠিক করা।অনেকবছর আগে তার স্ত্রীকে বলেছিলো তাদের মেয়ে হলে নাম সোহা রাখবে মেয়ে তো আর হয়নি কিন্তু সেই কথাটা মনে রেখে রাবেয়া এই নামটাই রেখেছে।সুহার দুইটা দাত উঠেছে।দুই দাত নিয়ে কেমন খিলখিল করে হাসে।

শওকত হাওলাদারের ইচ্ছে করে সারাক্ষণ খেলতে কিন্তু নিজের আত্মসম্মানের দোহাই দিয়ে কাছে যাওয়া হয় না আর না নিজেদের বাড়িতে আনা হয়।আজকে গিয়ে সুহাকে কোলে নেয়ার পরে সুহা দাদা দাদা বলতে বলতে মুখে লালা ছুটিয়ে ফেলে।সোহার মুখে দাদা ডাক শুনে শওকত হাওলাদার নিজের আত্মসম্মান ভুলে নাতনীর সাথে তাল মিলিয়ে আহ্লাদী গলায় কয়েকবার দাদা দাদা বলে খিলখিল করে হেসে উঠে।সবাই উনার উচ্ছ্বাস দেখে অবাক হয়।রাবেয়া মুগ্ধ চোখে স্বামীকে দেখে শেষ কবে এভাবে হাসতে দেখেছে মনে নেই।আজকে দেখে খুব ভালো লাগছে।শওকত হাওলাদার গম্ভীর মুখে নিধি আর পলাশকে বলে,

“আমি সোহাকে তার দাদার বাড়িতে নিয়ে যাবো।তোমাদের ইচ্ছে হলে তোমরা আসতে পারো কিন্তু আমি সোহাকে এখানে রেখে যাবো না।”

পুষ্প অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে সবে ভর্তি হয়েছে।সে খেয়াল করে আজকাল সারাক্ষণ গায়ে গায়ে জ্বর থাকে।নাপা খেলে জ্বর থেমে যায় কিছুক্ষণ পরে শীত অনুভব করে আবার জ্বর আসে।সে এটাকে তেমন গুরুত্ব দিলো না।শিমুলও রাতে খেয়াল করে পুষ্পর রাতে থেমে থেমে জ্ব/র আসে।ফার্মেসী থেকে জ্ব/রের ওষুধ এনে খাইয়েছে।এভাবে দশ পনেরো দিন যাওয়ার পরে জ্ব/র প্রচন্ড আকার ধারন করে।

কাপুনি দিয়ে জ্ব/র এসে পুষ্পকে বেহুশ করে যায়।শিমুল দিশেহারা হয়ে ডাক্তারের কাছে ছুটে।র/ক্ত পরিক্ষা করে জানা যায় পুষ্পর টা/ইফয়েড জ্ব/র হয়েছে।পনেরোটা ইঞ্জেকশন দেয়া হলো সাথে তো ওষুধ আছেই।পুষ্পর হাতে ক্যানোলা ফিট করে দেয়া হয়।শিমুল ভার্সিটি থেকে ছুটি নেয়।পুষ্পর খেয়াল রাখার কেউ নেই।রোকসানা ফোন করে গ্রামে চলে যেতে বলেছে কিন্তু পুষ্প যেতে রাজি না।

তার ভাষ্যমতে শিমুলের পাশে থাকলেই যে তাড়তাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে।শিমুলের কাছে থাকলেও নাকি তার শান্তি লাগে।রান্নাবান্না পুষ্পর যত্ন নেয়া সব মিলিয়ে শিমুল বেশ ব্যস্ত।পুষ্পকে খাবার খাওয়ানোর,ঠিকমতো ওষুধ খাওয়ানো,ই/ঞ্জেকশন দেয়া সব ঠিকঠাক করে।

শিমুলের যত্ন দেখে পুষ্প নিজেকে খুব সুখী ভাবে।এই ছেলেটাকে বিয়ে করাতে সবাই কতো কি বলেছে কিন্তু পুষ্প জানে এই পাগল ছেলেটা তাকে কতো ভালোবাসে।আজকাল তার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে শুনছো পৃথিবী আমি ঠ/কিনি আমি খুব বেশীই জিতে গেছি।এই ছেলেটা আমার সুখের জন্য আমার সামনে পুরো পৃথিবী দাঁড় করাতেও দ্বীধা করেনা।শুনছো পৃথিবী মানুষ শিমুল আমাকে তার রানী করেই রাখে।পুষ্প জ্ব/রের পরিমান বাড়ে।আচ্ছা সে যদি ম/রে যায় তাহলে?শিমুল কি আবার বিয়ে করবে?এসব উল্টাপাল্টা ভেবে পুষ্প ঝরঝর করে কেঁ/দে দেয়।শিমুল ব্যস্ত হয়ে জানতে চায় কি হয়েছে,বেশী খারাপ লাগছে কিনা।

“এই জ্ব/রে আমি বোধহয় ম/রে যাবো।”
শিমুল পুষ্পর মাথায় জলপট্টি দিয়ে বলে,
“কিছু হবেনা পুষ্প।তুমি এসব কেনো ভাবছো বলতো?জ্ব/র হলে কেউ ম//রে না।”
পুষ্প শিমুলের কথা বুঝতে চায় না।জ্বরে ঠোঁট কাঁপে।সে বলে,
“আমার মনে হয় আমি ম/রে যাবো।”
পুষ্প আসলেই বেশী অ/সুস্থ।প্রিয়তমার মুখে এসব কথা শুনে তার বুকেও অজানা আ/তংক ঝলকে উঠে।পাত্তা না দেয়ার ভংঙিতে বলে,

“আরে কিছু হবেনা।”
“আমি ম/রে গেলে কি তুমি আবার বিয়ে করবে?”
“তোমার কিছু হবেনা।আর বিয়ের কথা আসছে কেনো?”
“বলনা।”
“না বিয়ে করবোনা।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ।”
পুষ্প মানে না।কেঁদে কেঁদে বললো,

“তোমার আর কতো বয়স?মাত্র তো একত্রিশ।এই বয়সে একা থাকবে কি করে?সবাই মিলে বিয়ে করিয়ে দিবে।”
পুষ্প অ-সুস্থ বলেই কিনা এসব ভাবছে।শিমুল কথা বলেনা।পুষ্প ম/রে যাবে আর যে আবার অন্য নারীতে মজে যাবে এসব ভাবতেই মাথা ঘুরে উঠে।
পুষ্প আবার বলে,

“শোন।যাকে বিয়ে করবে তাকে একটু কম ভালোবাসবে।বুকে কম নিবে।বুকের পশমে নাক ডুবাতে দিবে না।মনে থাকবে?”
পুষ্পর উল্টাপাল্টা কথায় শিমুলের চোখেও পানি জমে যায়।পুষ্পকে বুকে জড়িয়ে বলে,
“এমন কিছু হবেনা পুষ্প।”
“আমি যখন ভাবি আমি ম/রার পরে তুমি আবারো বিয়ে করে অন্য কাউকে ভালোবাসছো তখন আমার দম আটকে যায়।শরীর জ্বা/লা পো/ড়া করে।”

“তুমি ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসা সম্ভব না।আল্লাহ যদি তোমার কিছু করেও দেয় আমি সারাজীবন একা কাটিয়ে দেবো।”
“আমার কষ্ট হচ্ছে।”
শিমুল শক্ত করে পুষ্পকে বুকে ধরে রাখে।মেয়েরা এমন কেনো?সব কিছু ছাড়তে পারলেও যাকে একবার মনের গহীনে জায়গা দেয় তাকে ছাড়তে পারে না।স্বামীর ভাগ কেনো কাউকে দেয়া যায় না?

পুষ্প জ্ব/র ভালো হয় কিন্তু এখন সমস্যা হচ্ছে সে কোনো কিছুর গন্ধ শুনতে পারছে না,কিছু খেতে গেলেই নাক কুচকে ফেলছে।সারাদিন শুয়ে থাকে চোখ খুললেই বলে সব কিছু নাকি ঘুরছে,সারাক্ষণ রুম অন্ধকার করে রাখে।শিমুল ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।আবারো র/ক্ত পরিক্ষা,ইউরিন পরিক্ষা করা হয়।তারপর যা বললো তা তাদের দুজনের ভাবনার বাহিরে ছিলো।পুষ্প ছয় সাপ্তাহের গর্ভবতী।

শিমুল স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।পুষ্পর জ্ব/রের ঘোরে হয়তো ঠিকঠাক জন্ম-নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসরন করা হয়নি।তাই এর ফলাফল এখন সামনে দাঁড়িয়ে।শিমুল এতোটা বেখেয়ালি কি করে হলো?জ্ব/রের কারনেই কিনা পিরিয়ডের কথা পুষ্প ভুলেই বসেছে।মান্থলি ডেট যে পেরিয়ে এসেছে সে খেয়াল নেই।

এখন বাচ্চা কোনোভাবেই সম্ভব না।পুষ্প খুশী নাকি বেজার তা বলা যাচ্ছে না।সে একটু পরে পরে শিমুলের দিকে তাকাচ্ছে।হয়তো শিমুলের মনোভাব বুঝার চেষ্টা করছে।হাসপাতালের করিডোরে বসে শিমুল জীবনের বড়ো সিদ্ধান্তটা নিয়ে নেয়।পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বলে,

“এই বাচ্চাটা পৃথিবীতে আনা সম্ভব না।একটা নার্স বললো এমআই কিট নামে একটা মেডিসিন আছে।চলো নেডিসিনটা নিয়ে বাসায় যাই।খেলে এমনিতেই ব্লি/ডিং হয়ে ন/ষ্ট হয়ে যাবে।”
পুষ্পর বুকটা মুচরে উঠে।অবিশ্বাস্য চোখে শিমুলের দিকে তাকায়।বাবুটাকে মে/রে ফেলতে বলছে!এটা কি তার শিমুল!
“আমি পারবো…..”

শিমুল ফুল পর্ব ৪৬

পুষ্পর কথা শেষ হওয়ার আগে শিমুল চোখ রা/ঙিয়ে বলে,
“না করেছি সুতরাং বাচ্চা চাই না।বুঝেছো?”

শিমুল ফুল পর্ব ৪৮