শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৫

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৫
সুমাইয়া সুলতানা

ইতোমধ্যে সূর্য তার তীর্যক রশ্মি প্রকৃতির আড়ালে লুকিয়ে ফেলেছে। পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। আকাশে তার রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে। মনে হচ্ছে আকাশ লাল রঙের। চুলায় গরম পানি টগবগ করে ফুটছে। তাতে আদা, লবঙ্গ, লবন দিচ্ছে মিনা। চা-পাতা দিয়ে কিছুক্ষণ পড়ে ক্যাটলিতে ঢেলে নিলেন। পরপর তিনটা কাপ ট্রেতে সাজিয়ে দুটো কাপে ক্যাটলি থেকে চা ঢেলে পরিমান মতো চিনি, দুধ দিয়ে মিক্স করলেন। অপর কাপটিতে শুধু অল্প একটু চিনি দিলেন। এই কাপটি রাশেদের জন্য।

সুগার মেইনটেন করেন তিনি। ট্রে নিয়ে আয়মানের ঘরে এক কাপ দিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে গেলেন। রাশেদ সোফায় বসে আছেন। খবরের কাগজ পড়ছেন। ছোট্ট টি-টেবিলে ট্রে টা রেখে মিনা স্বামীর পাশে গিয়ে বসেন। এক কাপ উঠিয়ে তার নিকট এগিয়ে দেন। রাশেদ চোখের চশমা ঠিক করে চা’য়ের কাপটি হাতে তুলে নেন। মিনা তার জন্য বরাদ্ধকৃত কাপটি তুলে এক চুমুক দিয়ে স্বামীর উদ্দেশ্যে বললেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” কালকে তো মনে হয় আগুন তার ফ্ল্যাটে চলে যাবে। মোমকেও তার সাথে নিয়ে যাবে। বলছিলাম কি, মেয়েটার জন্য এই শহর নতুন। অপরিচি একটা পরিবেশ। ঠিকমতো খাপ খাওয়াতে পারবে না। ছোট মানুষ সে। আগুন কলেজে চলে গেলে পুরো বাড়িতে মেয়েটা একা থাকবে কি করে? যদি ভয় পায়? মুখ ফুটে কিছুই বলবে না। আড়ালে ঠিকি কান্না করবে। তার থেকে বরং আমি আগুনকে বলবো আমাদের বাড়ির আশেপাশে কোনো কলেজে ট্রান্সফার নিয়ে চলে আসতে। ততদিন মোম আমাদের সাথেই থাকুক। সবকিছু বুঝে শুনে নিক। কিছুটা সাংসারিক হয়ে উঠুক। ”
ভ্রু কুঁচকে মিনার দিকে তাকালেন, রাশেদ। চায়ের কাপ হাত থেকে টেবিলে রেখে গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

” বোকার মতো কথা বলো না। চাইলেই কি হুট করে ট্রান্সফার করানো যায় নাকি? আগুন সবে কয়েক মাস হয়েছে চাকরিতে জয়েন করেছে। এখনো এক বছরও হয়নি। এরই মধ্যে ট্রান্সফার করা সম্ভব নয়। তাছাড়া আজ না হয় কাল মোমকে সবকিছু বুঝে নিতে হবে। সব সময় আমরা থাকবো না। চাকরির সূত্রে অনেক জায়গায়ই যেতে হতে পারে। সেজন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। তার জন্য প্রথম পদক্ষেপ গ্রহন করা লাগবে। প্রথম ধাপেই ভয় পেয়ে পিছিয়ে গেলে তো হবে না। ”

” কিন্তু….”
মিনার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে রাশেদ নিজ সিদ্ধান্তে অঢেল থেকে দৃঢ় কন্ঠে বললেন,
” কোনো কিন্তু না। আমি যা বলছি সেটাই হবে। এমনিতেই তোমার ছেলে বিয়েতে রাজি ছিল না। তারউপর দুজন যদি আলাদা থাকে দূরত্ব বাড়বে। সেজন্য দুজনের এক সাথে থাকাটা জরুরী। একটা কথা কতবার বলা লাগবে? দরকার হলে ময়ূরীকে ওদের সাথে পাঠিয়ে দিও। কয়েকদিন থেকে আসবে। মেয়েটারও মন খারাপ হবে না। চাইলে তুমিও যেতে পারো। ”

মিনা খুশি হলেন। কথাটা মন্দ বলেনি সে। তিনি গেলে মেয়েটাকে যতটা সম্ভব শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়ে আসতে পারবেন। মোমের আর একাকিত্ব অনুভব হবে না। কিছুদিন থাকতে থাকতে সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে।
” হ্যাঁ। সেটাই ভালো হবে। সেলিনা তো আছে। রান্না নিয়ে ভাবতে হবে না। তেমন অসুবিধাও হবে না, তাই না? ”
আধ খাওয়া চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে রাশেদ ছোট করে উত্তর দিলেন,
” হুম। ”

বিকেলে ঘুম থেকে ওঠার পর মোম শ্বাশুরী ননদের সাথে বসে গল্প করছে। মিনা পাকোড়া বানিয়েছেন। পাকোড়া খেতে মোম পছন্দ করে। ময়ূরী বলেছে আগুন বাইরে গিয়েছে। প্রায়ই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে যায় সে। মোম জিজ্ঞাসা করেনি। ময়ূরী নিজেই বলেছে। মোম ভেবে নিয়েছিল হয়তো কোনো কাজে গিয়েছে। আয়মান কিছুক্ষণ ল্যাপটপে গ্যামস খেলে সেও বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য বাইরে চলে গিয়েছে। বাড়িতে শ্বশুর, শ্বাশুরী, ননদ, সেলিনা আর মোম। রাশেদ নিজের কক্ষে বসে শপিং মলের ম্যানেজারের সাথে কথা বলছেন। ড্রয়িংরুমে বসে তারা তিনজন গল্পের আসর জমিয়ে দিয়েছে।

সেলিনা আপা রাতের রান্নার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মোম এখন তাদের সাথে অনেকটাই ফ্রি হয়ে গিয়েছে। তবুও বেশি কোনো কথা বলছে না। তোতাপাখির মতো বুলি আওড়ালে যদি কিছু ভুল হয়ে যায়? তখন সবাই কি না কি বলে বসবে! তাই যা বলার তারাই বলছে। মোম মনোযোগ দিয়ে শুনছে। মাঝে মাঝে মাথা নেড়ে উত্তর দিচ্ছে। শুধু আগুনের সাথে এখনো নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেনি। এরকম গম্ভীর লোকের সাথে ভাব জমানো যায় নাকি? ব’দ লোক একটা। ময়ূরী গল্প করার সময় রাজ্যের সকল কথা জুড়ে দেয়। তার চৌদ্দ গোষ্ঠীর কথা মোমকে জানিয়ে দেয়। মেয়েটা অনেক চঞ্চল। ভীষন মিশুকও। কথা বলার ভঙ্গীও সুন্দর। মুখে হাসি বজায় রেখে কথা বলে। মোম কোনো বিরক্ত হচ্ছে না। বরং তার ভালোই লাগছে। মোম মনে করে যারা বেশি কথা বলে তাদের মাইন্ড অনেক ফ্রেস হয়। মোম শুনেছে ননদরা নাকি ভাইয়ের বউয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে। কিন্তু তার ননদটা কত ভালো। মোমের কাছে ময়ূরীকে বড় বোন মনে হয়। কতটা বন্ধু-সূলভ সে। তার কথাতেই সেই আচরন প্রকাশ পায়।

রাত তেমন বেশি না। নয়টা কি সারে নয়টা হবে। আগুন, আয়মান এখনো বাড়িতে ফিরে নি। মিনা ময়ূরীকে ডেকে বললেন, তারা যেনো খেয়ে নেয়। ওদের জন্য বসে থেকে লাভ নেই। কখন আসবে ঠিক নেই। রাশেদ রাতে খাবেন না বলে জানান। ময়ূরী মোমকে নিয়ে খাবার খেয়ে ফেলেছে। আয়মানও ততক্ষণে চলে এসেছে। ময়ূরী আয়মানকে খাবার খেতে সাধলে সে না করে দেয়। জানায় বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে। সবকিছু গুছিয়ে ময়ূরী চলে যায় নিজের রুমে। অনেক গুলো পড়া জমে আছে। পড়া গুলো কমপ্লিট করতে হবে। খাবার খেয়ে মোম চলে আসে আগুনের রুমে। তার এখন একাএকা ভালো লাগছে না। দুপুরে খাবার খাওয়ার পর ঘুমানোর জন্য এখন চোখে ঘুম ধরা দিচ্ছে না। অন্য সময় হলে এতোক্ষণে সে গভীর ঘুমে ডুবে থাকতো।

গ্রামে সন্ধা হওয়ার সাথে সাথে মাগরীবের আযান দিলে নামাজ পড়ে পড়তে বসে যেতে। আবার নয়টার দিকেই ঘুমিয়ে যেত। মোম কি করবে কিছুই ভালো লাগছে না। ময়ূরীকে বলতে ইচ্ছে করছিল, আপু চলে গল্প করি। কিন্তু কিভাবে বলবে? মেয়েটার সামনে পরিক্ষা। প্রচুর পড়াশুনা করতে হবে। মেডিক্যালের স্টুডেন্ট বলে কথা। মোম বিছানায় গিয়ে হাঁটু মুড়ে গোল হয়ে বসে। হাত বাড়িয়ে একটা বালিশ নিয়ে বুকের সাথে ঠেস দিয়ে তাঁতে থুতনি ঠেকিয়ে মুখ গোমড়া করে বসে থাকে।

বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে কাঙ্জ্ঞিত মানুষটির আসায়। কোথায় লাপাত্তা হয়ে গিয়েছে কে জানে। ড্রেসিং টেবিলের রাখা আগুনের সেই গম্ভীর মুখের আড়ালে হালকা মুচকি হাসি দেওয়া ছবিটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে আগুন তার দিকেই তাকিয়ে আছে আর মিটিমিটি হাসছে। মোমের কিছুটা লজ্জা লজ্জা লাগছে। নজর ফিরে পুনরায় তাকায়। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ঘড়ির কা’টা টিকটিক করছে। আস্তে আস্তে ঘুম বাবা’জি এসে ধরা দেয় মোমের চোখে। মোম বসে না থেকে বিছানায় নিজের জায়গায় ঠিকঠাক ভাবে শুয়ে পড়ে।

রাত এগারো’টার দিকে আগুন বাসায় ফিরে। সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠার সময় মিনা ছেলেকে ডেকে বলেন, যেন সে ফ্রেস হয়ে তাড়াতাড়ি আসে। আগুন মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। মিনা খাবার খান নি। এতক্ষণ ছেলের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। চট জলদি চুলায় খাবার গুলো গরম করে নিলেন। মিনা উদারময়ী একজন নারী। তিনি পারতেন ঘুমন্ত সেলিনাকে ডেকে বলতে খাবার গুলো গরম করে দেওয়ার জন্য। তবে তিনি সেটা করবেন না। বাসায় কাজ করে বলে এক-দুইজন না খেয়ে থাকবে আর মেয়েটা রাত জেগে বসে থাকবে? বিষয়টা দৃষ্টিকোটর লাগে তার কাছে। এরকম ছোট ছোট বিষয় গুলোতে মায়ের প্রতি অনেকটা সম্মান বাড়ে যায় আগুনের। প্লেটে ভাত বেড়ে বসে আছেন মিনা।
দরজা ভিড়ানো ছিল। আগুন রুমে এসে দেখে মোম ঘুমিয়ে গিয়েছে। তার নিজ স্টাইল মতো কাত হয়ে দুই হাত এক সাথে করে গালের নিচে দিয়ে। হাতে ঘড়িটা খুলে ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখতে রাখতে বিরবির করে বলল,
” এত ঘুম কোথা থেকে আসে? মেয়েটা কি সারাদিন শুধু ঘুমায় নাকি? কমনসেন্স নেই! আমি তো জানি স্ত্রীরা স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে। তাহলে মোম কেন করেনি? ”

নিজের ভাবনায় নিজেই অবাক হয় আগুন। কি সব ভাবছে সে? পুরোনো, আগের দিনের কথা কি এ যুগে মানায়? তাছাড়া সে রাত বিরাতে নতুন বউ রেখে বাইরে বাইরে ঘুরবে আর বাচ্চা মেয়েটি তার জন্য রাত জেগে বসে থাকবে? হাস্যকর! নিজের ভাবনার প্রতি বিরক্ত লাগছে আগুনের।

আগুন এসে মায়ের পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ে। খাবার খেয়ে রুমে চলে আসে। এখন সে ঘুমাবে না। তার দেরিতে করে ঘুমানোর অভ্যাস আছে। দরজা আটকে বিছানায় এক পাশে বসে ল্যাপটপ অন করে কিছু দেখতে থাকে। অপর পাশে মোম শুয়ে আছে। আগুনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার দিকে তাকাচ্ছে না। খোলা জানালার পর্দা গুলো বাতাসের প্রকোপে উড়ছে। বেলকনির দরজাটাও খোলা। বাহিরের অন্ধকারচ্ছন্ন পরিবেশে কেমন লাইটের মতো থোকা থোকা আলো ঝলমলিয়ে উঠছে। ল্যাপটপটাকে কোল থেকে সরিয়ে সাইডে রাখে। উঠে দাঁড়িয়ে বেলকনিতে চলে যায়। হঠাৎ এত বাতাস শুরু হলো কেন? বৃষ্টি আসবে কি? আসলেও মন্দ হয় না। কয়েকদিন যাবত ভ্যাবসা গরম পড়ছে। তবে বিকালের দিকে তো আকাশ বেশ স্বচ্ছ ছিল। বৃষ্টি আসতে পারে এমন কোনো ইঙ্গিত সে পায় নি। বাড়িতে আসার সময়ও কিছু সংখ্যক তারার দেখা মিলে ছিল। ঠান্ডা বাতাসে আগুনের বেশ ভালো লাগছে। গা’টা শীতল করে দিচ্ছে। বৃষ্টি আগুনের পছন্দ। ছোট বেলায় স্কুল থেকে আসার সময় বাড়ির গাড়ি থাকা সত্বেও ভিজে ভিজে বাড়ি ফিরেছে সে। এতে অবশ্য মায়ের বোকুনিও খেতে হয়েছে।

বাতাসের তান্ডপের সাথে আকাশে বিদ্যুৎ চমকানো শুরু হয়ে গিয়েছে। মেঘ ডাকছে তার নিজ শব্দে ঘুরুম ঘুরুম করে। মেঘের আওয়াজ কানে আসতেই ঘুম ছুটে গেল মোমের। লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসে। বাইরে বিদ্যুৎ চমকানো, মেঘের আওয়াজে বুঝতে পারলে সে নিশ্চই বৃষ্টি আসবে। আসুক বৃষ্টি। কোনো সমস্যা নেই। কথা হলো ব’জ্রধ্বনির শব্দে মোম ভয় পাচ্ছে। গ্রামে থাকতে বৃষ্টির সময় এমন ব’জ্রধ্বনি হলে সে মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে থাকতো। মোমের ছোট বোন মুনিয়া আবার এসবে ভয় পায় না। সাহসী রমণী, বিচ্ছু কি না! মোমের বুক কাঁপছে অস্বাভাবিক ভাবে। এখন কি করবে সে? শুষ্ক ঢোক গিলছে বারবার।

আর একটু হলে কেঁদে ফেলবে মেয়েটা। তক্ষুণি বারান্দায় নজর পড়ে। আগুন দাঁড়িয়ে আছে। তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে আগুনের কাছা চলে যায়। পাশে দাঁড়িয়ে উঁকি দিয়ে আগুনের মুখভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করে। কিছুই বুঝতে না পেরে চুপ করে আগুনে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকে। আগুনের সম্পূর্ণ নজর ঘনকালো মেঘের আড়ালে ঢেকে থাকা আকাশ পানে। মোমের উপস্থিতি সে এখনো বুঝতে পারে নি। পুনরায় বিকট শব্দে মেঘের ভয়ংকর আওয়াজ শোনা গেল। মোম চোখ, মুখ কুঁচকে আগুনের টি শার্টের পেছনের অংশ শক্ত করে ধরে। চমকে উঠে আগুন। তড়িৎ গতিতে পেছনে ফিরে তাকালো। মোম তার শরীর ঘেঁষে গুটিশুটি মে’রে দাঁড়িয়ে আছে। ললাটে ভাঁজ পড়ল আগুনের। মোম তো ঘুমাচ্ছিল। উঠে এসেছে কেন? কিছু মনে পড়তেই ললাটের ভাঁজ প্রগাঢ় হলো। সহসা মোমের হাত টেনে পাশাপাশি দাঁড় করালো। প্রশ্ন ছুড়লো ভয়ে কাচুমাচু হয়ে থাকা সম্মুখের রমণীটির উদ্দেশ্যে,

” মেঘের ডাকে ভয় পাও? ”
মোম মিনমিন করে বলল,
” জ্বি। ভীষন ভয় পাই। ”
” ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি আছি তো তোমার সাথে। ”
আমি আছি তো, এই বাক্য টিতে মোম যতটা ভরসা পেয়েছে তার থেকেও বেশি তার মধ্যে থাকা এতোক্ষণের ভয়টা কমে এসেছে। মোমের ঠোঁটে আপনা আপনি হাসির দেখা মেলে। আগুন তাকিয়ে রয় তার দিকে। কি মিষ্টি করে হাসে মেয়েটে। আবারও উচ্চ আওয়াজে মেঘ ডেকে উঠল। মোম নেত্র দুটি খিঁচে বন্ধ করে আগুনের বুকের কাছের টি শার্ট খা’মছে ধরে। আগুন ভ্রু কুঁচকে মোমের খা’মছে ধরা হাতের দিকে তাকায়।শান্ত কন্ঠে বলল,
” বেশি ভয় করছে? আমি কি তোমায় জড়িয়ে রাখবো নিজের সাথে? ”

মোম কি বুঝতে পারলো আগুনের কথা? আজও শুনতে পেয়েছে তার কথা? কি জানি? আকাশের বুক চীড়ে বৃষ্টি পড়ছে টাপুর টুপুর শব্দ করে। তবে আকাশ এখনো অন্ধকার হয়ে আছে। বৃষ্টির জন্য চারপাশের সবকিছু নির্জর মনে হচ্ছে। শীতল আবহাওয়ায় মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। ঠান্ডা হাওয়ায় মোম কেঁপে কেঁপে উঠছে। আগুন খেয়াল করল মোম কাঁপছে। পিচ্চি বউয়ের কেঁপে উঠা দেখে নিঃশব্দে হাসে আগুন। বৃষ্টির সাথে জোড়ে জোড়ে বা*জ পড়ছে। এবার বড়সড় একটা বা*জ পড়তেই মোম চোখ বন্ধ করা অবস্থাই ক্ষীণ স্বরে বলল,
” হ্যাঁ। করছে। অনেক ভয় করছে। ”

কথাটা বলেই আগুনের বুকে মাথা রেখে দু হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছে। আগুন তার বলিষ্ঠ একটা হাত বাড়িয়ে মোমের ছোট্ট নরম শরীরটা নিজের সাথে আঁকড়ে ধরে। আগুন খুব হালকা ভাবেই ধরেছে। কিন্তু মোম নিজের সর্বোচ্চ শক্তি খাটিয়ে জড়োসড়ো হয়ে জড়িয়ে ধরেছে তাকে। আগুনের বুকে কিছু একটা হচ্ছে টের পায় সে। কিন্তু কি হচ্ছে বুঝতে পারছে না। জীবনে কখনো কোনো নারীর প্রতি আগ্রহ না থাকা আগুন, বাচ্চা একটা মেয়ের সংস্পর্শে এসে তার কেমন অদ্ভুদ ফিল হচ্ছে। আগুনের এই পিচ্চি বউটাই তার জীবনের প্রথম নারী।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪

আকাশের অবস্থা স্বাভাবিক হওয়াতে বেশ কিছুক্ষণ পর আগুন মোমকে ছেড়ে দেয়। মোম হকচকিয়ে যায়। লজ্জা লাগছে তার। তখন কিভাবে লোকটাকে জড়িয়ে রেখে ছিল সে।ইসস! ভাবতেই কেমন লাগছে। দৌঁড় আগুনের সামনে থেকে চলে যায় রুমে। মোমের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে আগুন। নজর ফিরিয়ে বেলকনির গ্রীলে হাত রাখে। দৃষ্টি রাখে বাইরের গাছপালার দিকে। এক হাতে কপালে স্লাইড করতে করতে নিঃশব্দে ঠোঁট কা’মড়ে হেসে উঠে।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৬