শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৮

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৮
সুমাইয়া সুলতানা

বিরক্তিকর জ্যাম কাটিয়ে আগুনের ফ্ল্যাটে ফিরতে ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেল। এক ঘন্টার রাস্তা তিন ঘন্টায় পাড়ি দিয়ে এসেছে। জ্যাম না থাকলে দিনের আলো থাকতে’ই চলে আসতে পারতো। বাসায় এসে মিনা, আয়মান যেই রুমটাতে থাকতো সেই রুমে চলে গেলেন রেস্ট নিতে। ক্লান্ত তিনি। জার্নি করার অভ্যাস থাকলেও গরমের কারণে তার শরীর খারাপ লাগছে। গাড়ি থেকে ব্যাগপত্র, লাগেজ নামিয়ে ড্রাইভার দিয়ে গিয়েছেন। আগুন সেগুলো ডাইনিং রুমে রেখে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হলো। রুমে গিয়ে ফ্রেস না হয়েই বিছানায় শুয়ে পড়লো।

মোম রুমে যায়নি। চারদিকে নজর বুলাচ্ছে। ফ্ল্যাটে বড় বড় দুইটা রুম। বুঝাই যাচ্ছে, একটাতে আগুন অন্যটাতে আয়মান থাকতো। আর একটা ড্রয়িংরুম। ড্রয়িংরুমে, ডাইনিং রুম এক সাথে এডজাস্ট করা। হেঁটে হেঁটে রান্না ঘরে চলে আসলে সে। রান্না ঘরটাও বেশ বড়সর। ড্রয়িংরুমে বড় করে ফ্রেমে বাঁধা আয়মান আর আগুনের এক সাথে তোলা ছবি ঝুলানো। আগুন যে কতটা গোছালো মানুষ সেটা তার ফ্ল্যাটের হাবভাব দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ডাইনিং টেবিল থেকে কিঞ্চিৎ দূরে একটা সু-ক্যাবিনেট। ক্যাবিনেটের দরজা খোলা। সেটাতে পরপর কয়েক জোড়া জুতা সাজানো। সু-ক্যাবিনেটের উপরে কাঁচের তৈরী ঘরের মতো একটা অ্যাকুরিয়াম। সেটাতে পানি ভরা। ভেতরে ছোট ছোট কিছু সংখ্যক মাছ আর নারিকেল গাছ রয়েছে। মাছ গুলো লাল, সোনালী রঙের। খুব সুন্দর লাগছে দেখতে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

অ্যাকুয়ারিয়াম বা অ্যাকুরিয়াম হলো যেকোনো আকারের একটি ভিভারিয়াম। যার অন্তত একটি স্বচ্ছ দিক থাকে। যেখানে জলজ উদ্ভিদ বা প্রাণী রাখা হয় এবং প্রদর্শিত হয় । মৎস্য পালনকারীরা মাছ, অমেরুদণ্ডী প্রাণী, উভচর, জলজ সরীসৃপ, যেমন: কচ্ছপ এবং জলজ উদ্ভিদ রাখার জন্য অ্যাকুরিয়াম ব্যবহার করে থাকে। অ্যাকুয়ারিয়াম শুধুই ঘর সাজানোর শোপিস নয়, কারণ এর মধ্যে থাকে জীবন্ত মাছ। তাই শখের এই জিনিসটিরও প্রয়োজন সঠিক যত্ন। ঘরের এক কোণে একটি বড় বা ছোট অ্যাকুয়ারিয়ামে রঙিন মাছের ছোটাছুটি দেখতে মন্দ লাগে না।

মোম সেদিকে এগিয়ে যায়। কাঁচের অ্যাকুরিয়াম ঘরটার এক সাইডে হাত রাখে, যেখানে লাল রঙের একটা মাছ এসে চুপটি করে রয়েছে। আচ্ছা, মাছটা কি ঘুমাচ্ছে? নাকি পানি খাচ্ছে? মাছটার কি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে? মোম নিজের মাথায় গাট্টি মা’রে। নিজের বোকা বোকা ভাবনায় হেসে ফেলে। মাছ তো পানিতেই থাকে। বরং পানি না পেলেই নিঃশ্বাস আটকে মা’রা যাবে। এরকম মাছ মোম জীবনে প্রথম দেখছে। গ্রামে এমন মাছ দেখেনি। মোম মাছ দেখায় ব্যস্ত। এদিকে রুমে থেকে আগুন খেয়াল করল মোম এখনো রুমে আসেনি। মেজাজ খারাপ হলো ওর। এই মেয়েটাকে কি সবকিছু বলে দিতে হবে? এত গরমের মধ্যে নিশ্চই ঘেমে গিয়েছে। পড়ে যদি ঠান্ডা লেগে যায়? দ্রুত চেইঞ্জ করা দরকার। মাথা উঠিয়ে দরজার দিকে চেয়ে হাক ছেড়ে ডেকে উঠলো,

” মোম, কোথায় তুমি? জলদি রুমে আসো। ”
আগুনের ডাকে চমকে উঠে মোম। চঞ্চল পায়ে এগিয়ে যায় রুমের দিকে। একেবারে আগুনের মাথার কাছে এসে দাঁড়ায়। বার কয়েক পলক ঝাপটে জিজ্ঞাসা করে,
” জ্বি বলুন। কোনো দরকার? ”
” দরকার আছে। তবে আমার না তোমার। ”
” আমার আবার কি দরকার? ”
আগুন ওয়াশরুমের দিকে ইশারা করে চোখ বুঝে ক্লান্ত ভঙ্গিমায় বলল,
” বাইরে থেকে এসেছো অল্প হলেও গায়ে ধুলাবালী লেগে আছে। ঘেমেও তো গিয়েছ। ওইদিকে ওয়াশরুম। যাও কাপড় চেইঞ্জ করে হাত, মুখ ধুয়ে আসো। ”

” জ্বি, যাচ্ছি। আপনি ফ্রেস হয়েছেন? ”
” না। তুমি আগে যাও। তুমি বের হলে আমি যাবো। ”
” না। আপনি আগে যান। ”
” বললাম না, আগে তুমি যাও। ”
” আপনি আগ…..”
মোম কথা শেষ করতে পারে না। আগুন ধমকে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” বেশি কথা বলা আমি পছন্দ করি না। ”
ভ্রু কুঁচকে কিছু মনে পড়তেই ঠোঁটে দুষ্টু ভাব টেনে ফের বলল,

” বাই এনি চান্স! তুমি আবার এক সাথে ফ্রেস হতে চাচ্ছো না তো? চাইতেই পারো। দোষের কিছু না। হাসবেন্ড আমি তোমার। এমনিতেও মা বলেছে, আমি যেখানেই যাই তোমাকে যেন সাথে করে নিয়ে যাই। ”
আগুনের কথায় মোম ভড়কে গেল। ঘন পাপড়ি যুক্ত চোখ দুটো বড় বড় করে তাকায় তার দিকে। কোন কথার প্রেক্ষিতে এই কথা বলছে বুঝতে না পারলেও মোম এতটুকু বুঝতে পেরেছে, আগুন ওকে এখানে নিয়ে আসতে অনিচ্ছুক ছিল। শ্বাশুরী মা’র কথায় ওকে নিয়ে এসেছে। মোম আর কথা বাড়ালো না। দ্রুত ফ্রেস হতে চলে গেল। ফ্রেস হয়ে আগুনকে ডেকে দিলো। আগুনও ফ্রেস হতে চলে যায়। মোম শ্বাশুরীর রুমের দিকে পা বাড়াল। মিনার পাশে বসে আলতো স্বরে ডেকে উঠে,

” মা, আপনার কি শরীর বেশি খারাপ লাগছে? ওনাকে বলবো কি? ”
” আরে না। আমি ঠিক আছি। আসলে গরমে মাথাটা ধরেছে খুব। ”
” গোসল করবেন? গোসল করলে ভালো লাগবে। ”
মিনা হেসে বললেন,
” রাতের বেলা গোসল করা কি ঠিক হবে? ”
” গরমে রাতে গোসল করলে কিছু হবে না। ”
” আগুন শুনলে রেগে যাবে। আগুন কোথায়? ”
” উনি ফ্রেস হচ্ছেন। ”
” আমিও যাই তাহলে ফ্রেস হয়ে আসি। এসেই শুয়ে পড়েছি। কাপড় ভিজিয়ে গা’টা মুছে নিবো। শরীর ম্যাজ ম্যাজ করছে। তুমি এই রুমেই থাকো। ”
” জ্বি। ”

মিনা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখেন, মোম তার রুমটা মাথা এদিক ওদিক নেড়ে চোখ দিয়ে অবলোকন করছে। এই রুমের সাথে ছোট্ট একটি বারান্দা। অযত্নে কি বেহাল দশা তার। মোম মুখ কুঁচকায়। আগুনের রুমের বারান্দাটা কত সুন্দর, পরিপার্টি। কয়েকদিন এই বাসায় কেউ থাকেনি বোঝাই যায়নি। শুধু কিছুটা ধুলোবালি জমেছে। আর আয়মান ভাইয়ার রুমটা মোটামুটি চললেও বারান্দার অবস্থা খুবই জঘন্য। মিনা কাছে এসে বললেন,
” এসো তোমাকে পুরো বাসাটা ঘুরে দেখাই। কোথায় কি আছে সেটাও দেখিয়ে দিচ্ছি। ”
মোম উচ্ছাসিৎ কন্ঠে বলল,

” আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমি দেখেছি। এসেই পুরো বাসাটা চক্কর কা’টা শেষ। বাসায় তিনটা রুম। দুইটা শোয়ার রুম। একটি ড্রয়িংরুম সাথে ডাইনিং রুম এডজাস্ট করা। তার সইসই রান্নাঘর। ”
এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে লম্বা দম নিলো মোম। মিনা অবাক হয়ে মোমের থুতনিতে হাত রেখে বললেন,
” আরে বাহ! তুমি তো দেখছি অনেক দায়িত্বশীল মেয়ে। ভালো হয়েছে নিজেরটা নিজে বুঝে নিচ্ছ। আমি আরও কিছু কাজ ভালো মতো দেখিয়ে দিয়ে কালকেই বাড়িতে চলে যাবো। ”
” সেকি! কেন? না না আপনি কালকে যাবেন না।”
” সেটা পরে দেখা যাবে। এখন চলো আমার সাথে। ”

মোম শ্বাশুরীর পিছু পিছু চললো। মিনা রান্না ঘরে এসে থামেন। এদিক ওদিক তাকিয়ে কি যেন খুঁজছেন। মোম জিজ্ঞেস করলো,
” কি খুঁজছেন, মা? ”
” রান্না করবো। আগুন বাইরের খাবার খেতে পছন্দ করে না। কিন্তু এখানে তো ডাল ছাড়া কাঁচা বাজার কিছুই নেই। ”
” ফ্রিজে চেক করে দেখতে পারেন, মা। ”
” ভালো কথা মনে করিয়েছ তো। ফ্রিজের কথা মাথাতেই ছিল না। ”
মিনা ফ্রিজে চেক করে দেখেন ডিম ছাড়া কিছুই নেই। না থাকাটাই স্বাভাবিক। মাস শেষের পথে বাজার তো শেষ হবেই। এমনিতেও আগুন বিয়ের তিনদিন আগে থেকেই ওই বাড়িতে ছিল। বাজার থাকলে নিশ্চই সব ফ্রিজে রেখে দিত? এখন কি করবেন তিনি? রাতে কি খাবে?

” মোম গিয়ে দেখোতো আগুন কি করছে। ”
মোম এসে দেখে আগুন উপড় হয়ে বালিশে মুখ গুজে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে পড়েছে কি? ডাকার সাহস পাচ্ছে। ডাকলে যদি রেগে যায়? মোম, মুখ গোমড়া করে শ্বাশুরীর নিকট ফিরে যায়। মিনা একটা পাতলা কাপড় ভিজিয়ে চুলা মুছ’ছেন। মোম গিয়ে বলল,
” মা, আপনার ছেলে ঘুমাচ্ছে। ”
” ডেকে তুলো। কি রান্না করবো জিজ্ঞেস করো। ”
” আ….আমি পারবো না। আপনি জিজ্ঞেস করুন। ”
মিনা চুলা মুছা শেষ করে কাপড়টা রান্না ঘরের ছোট্ট জানালার আড়াআড়ি ভাবে গাঁথা শিকের মধ্যে মেলে দিলেন। মোমের দিকে চেয়ে বললেন,

” কেন? তুমি বললে কি সমস্যা? ”
মোম কিছু বললো না। মিনা তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে আগুনের রুমের দিকে হাঁটা ধরলেন। মোম রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে পড়লো। মিনা, আগুনের কাঁধে হাত রেখে বললেন,
” আগুন ঘুমিয়ে গিয়েছিস নাকি? ওঠ। ”
আগুন মুখ কুঁচকে ঢুলুঢুলু চোখে তাকায়। রাশভারী কন্ঠে বলে উঠলো,
” কি হয়েছে? ডাকছ কেন? ”
” রাতের জন্য কি রান্না করবো? ঘরে তো ডাল, ডিম ছাড়া অন্য কিছু নেই। ”
” কোনো রান্না করতে হবে না। ”
মিনা অবাক হয়ে বললেন,
” রান্না না হলে খাবো কি? রাতে কি না খেয়ে থাকবো নাকি? মোম ছোট মানুষ। ওরতো ক্ষুধা লাগবে। আগে বললে, আসার সময় বক্সে করে বাড়ির রান্না করা খাবার নিয়ে আসতাম। ”
আগুন বিরক্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। কপাল কুঁচকে বলল,
” পুরো কথা না শুনেই কেন কথা বলো? আমি হোটেল থেকে খাবার অর্ডার করে দিয়েছি। তোমাকে আর রাতে কষ্ট করে রান্না করতে হবে না। ”

” কি ভাবে অর্ডার করলি? তুইতো বাইরের খাবার খেতে পারিস না। ”
” অনলাইনে। একেবারেই খেতে পারি না এমনটা নয়। জাস্ট বাইরের খাবার পছন্দ করি না। একদিনে কিছু হবে না। আমি ম্যানেজ করে নিবো। ”
এমন সময় ডোরবেল বেজে উঠল। আগুন বলল,
” হয়তো ডেলিভারি ম্যান এসেছে। যাও খাবার গুলো নিয়ে এসো। ”
মিনা দরজা খোলে দেখেন, গায়ে লাল টি শার্ট মাথায় লাল টুপি পড়া একজন ছেলে হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটি সালাম দিয়ে হাতে খাবারের ব্যাগটি মিনার হাতে ধরিয়ে দেয়। মিনা খাবার নিয়ে দরজা আটকাতে চাইলে ছেলেটি বাঁধা দেয়। মিনা ভ্রু কুঁচকে তাকায়। গম্ভীর কন্ঠে বললেন,

” দাঁড়িয়ে আছো কেন? কি চাই? ”
” ম্যাম আমার টাকা না দিয়েই দরজা আটকে দিচ্ছেন? ”
” আগুন টাকা দেয়নি? ”
” জ্বি, না। ”
” তুমি একটু অপেক্ষা করো। আমি এক্ষুনি আসছি। ”
মিনা, আগুনকে কথাটা জানান। আগুন মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দেয়। মিনা গিয়ে ড্যালিভারি ম্যানের হাতে টাকা দিয়ে দরজা লাগিয়ে দেন। খাবার গুলো গরমই আছে। তাই আর গরম করেন নি। তিনজনই খেতে বসে পড়েছে। আগুন আসতেই খাওয়া শুরু করেছেন। খাবার শেষ করে মিনা চলে যান রান্নাঘরে। এঁটো প্লেট গুলো ধুতে হবে। মোম শ্বাশুরীর সাথে যেতে নিতেই আগুন পেছন থেকে মোমের হাত টেনে ধরল। রান্নাঘরে দিকে একবার তাকিয়ে একটু নিচু হয়ে ফিসফিস করে বলল,

” হাত ধুয়ে সোজা রুমে আসবে। মনে থাকে যেন। কথার নড়চড় হলে খবর আছে। ”
নিরব ধমকিতে মোম শুকনো ঢোক গিললো। মুখটা কাচুমাচু করে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। প্লেট ধুয়ে থালা-বাসন রাখার রেকের মধ্যে সেগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখছেন, মিনা। শাড়ির আচলে হাত মুছে রুমে চলে আসতেই দেখেন, মোম তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলেন,
” এঁটো হাতে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ”
” জ্বি, হাত ধুবো। ”
” ধোও। আমি আসছি। ঘুম পাচ্ছে খুব। ”
মিনা চলে গেলেন নিজের রুমে। মোম হাত ধুয়ে ডাইনিং টেবিলে এসে হাফ গ্লাস পানি খেল। হঠাৎ করে গলাটা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। গুটিগুটি পায়ে রুমে গেল সে। আগুন ওয়ার্ড-ড্রপে তাদের কাপড় গুলো গুছিয়ে রাখছে। মোম গিয়ে বলল,

” আপনি কেন করতে গেলেন? আমাকে বললে আমি করে দিতাম। ”
” কাপড় গুলো তো ভাঁজ করাই ছিল। আমিতো শুধু গুছিয়ে রাখছি। বাকি গুলো তুমি গুছিয়ে রাখো। যেগুলো পড়বে সেগুলো ওয়ার্ড-ড্রপে রাখো। আর বাকি গুলো কাপড় রাখার আলমারিতে আমার কাপড়’সহ তুলে রাখো। ”
মোম লাগেজ থেকে একে একে সব কাপড় বের করে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখলো। আগুন ল্যাপটপ নিয়ে বিছায় বসলো। মোম গিয়ে আগুন থেকে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে বসলো। আগুন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে মোমের এক হাত টেনে একদম কাছে নিয়ে আসে। একদম আগুনের শরীর ঘেঁষে বসিয়ে দিয়েছে। মোম চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল। মোমের নিঃশ্বাস দ্রুত গতিতে হচ্ছে। আগুন নিজের মুখটা মোমের মুখের কাছাকাছি নিয়ে নিরেট স্বরে বলল,
” তুমি কি আমাকে ভয় পাও? নয়তো, আমার সাথে এত দূরত্ব কেন তৈরী করছো? তুমি কি জানো? সম্পর্কের মধ্যে বিচ্ছেদের আরেক নাম দূরত্ব! ”
মোম কিছু বলছে না। সে এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। আগুন শীতল কন্ঠে বলল,
” চোখ খোলো মোম। তাকাও আমার দিকে। স্বাভাবিক হও আমার সাথে। চুপ থেকে আমাকে রাগিয়ে দিও না। কথা বলো। ”

মোম চোখ খুললো। তবে আগুনের দিকে না তাকিয়ে নজর রাখলো বিছানার উপর। মোম চুপ করে আছে। কোনো জবাব দিলো না। এবার আগুন ধমকে বলল,
” সমস্যা কি? কথা বলছো না কেন? আমি কি বলেছি কথা কানে যায়নি? ”
মোম তার ডাগড় ডাগড় চোখ তুলে আগুনের দিকে কিঞ্চিৎ তাকিয়ে আবার মাথাটা নিচু করে নিল। আগুন একটা আঙুল দিয়ে মোমের থুতনিতে হালকা ভাবে স্পর্শ করে মুখটা উপরে তুললো। আগুনের স্পর্শে মোম মৃদু কেঁপে উঠল।
” সেদিন না বলেছিলাম, আমার সামনে এভাবে মাথা নিচু করে থাকবে না। ”
মোম চোখ বুঝে পুনরায় মাথাটা নিচু করে নিল। আগুন হাত সরিয়ে নিল। শান্ত কন্ঠে বলল,

” আমার সাথে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো, মোম। একটা সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হলে কারোর একার প্রোচেষ্টায় হয় না। দুজনকেই পুরোপুরি ভাবে এফোর্ট দিতে হয়। তুমি আমার তুলনায় খুবই ছোট। বাচ্চা একটা মেয়ে। আমি যতটুকু জানি, শহুরে মেয়েদের তুলনায় গ্রামের মেয়েরা অনেক বেশি ম্যাচিউর হয়। আমি কি বলছি, কি বলার চেষ্টা করছি আশা করি বুঝতে পেরেছ? ”

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৭

মোম এবার চোখ খোলে সরাসরি তাকায় আগুনের দিকে। তার চোখে কোনো রাগ বা গাম্ভীর্যতা নেই। আজ মানুষটার চোখে ভিন্ন কিছু দেখতে পাচ্ছে ও। চোখে, মুখে ফুটে রয়েছে একরাশ মুগ্ধতা। আর সেই মুগ্ধতার সবটা জুড়েই আছে শুধু, মোম।

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৯