শেষ থেকে শুরু পর্ব ২০
Sabihatul sabha
পুরো একদিন একরাত কেটে গেছে আয়ানের কোনো খোঁজ খবর নেই।
মোবাইল ও বন্ধ!
শায়েলা সিদ্দিকী সন্দিহান দৃষ্টিতে জবার দিকে কয়েকবার তাকালো।
অভ্র কে কুলসুম বেগম ড্রয়িং রুমে ডেকেছেন।আজ বিয়ের তৃতীয় দিন চলছে। সকল মেহমান চলে গেছে। আয়ানের বিয়ের পর মৌরির অবস্থা খুব খারাপ দেখা গেছে। সেই ছোট থেকে মনে প্রাণে আয়ান কে ভালোবেসে এসেছে মেয়েটা চোখের সামনে আয়ানকে অন্য কারো হয়ে যেতে দেখলো অথচ কিছুই করতে পারলো না। অসুস্থ হয়ে পড়েছে কান্না করতে করতে মৌরি তাই ওর আম্মু মাহা তালুকদার মৌরি কে সাথে করে নিয়ে গেলো।
অভ্র টাউজারে হাত ঢুকিয়ে আস্তে ধীরে নিচে নেমে আসলো।
কুলসুম বেগম হাতের ইশারায় পাশে বসতে বললেন।
অভ্র আস্তে করে বসলো, ওইরাতে গরম চা পড়ায় হাঁটুর উপরে অনেক পুড়ে ফসকা পরে গিয়ে ছিল ইচ্ছে করে অভ্র কোনো মলম বা ঔষধ দেয়নি। কিছু কিছু জিনিসের যন্ত্র করে ” দাগ” পরতে দেওয়া উচিত, কিছু কিছু যন্ত্রণা আনন্দ দেয়। আজও বসতে গিয়ে চিনচিন ব্যাথা করে উঠলো তবে অভ্র কাউকে বুঝতে না দিয়ে আড়চোখে চারপাশে তাকালো কোথাও জবা নেই। ওই রাতের পর আর এই মেয়েকে দেখা হয়নি কে জানে কি প্লান সাজাচ্ছে।
ড্রয়িং রুমে শায়েলা সিদ্দিকী, শফিক, রফিক সাহেব, শার্লিন বেগম উপস্থিত।
সবাই কুলসুম বেগম কি বলেন তার অপেক্ষা করছেন।
অভ্র ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে বললো,’ জলদি বলুন আম্মু আমার যেতে হবে।’
কুলসুম বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে।
শার্লিন বেগম কিছু বলার জন্য হাসফাস করছেন৷ এমন না যে আয়ান কে উনার পছন্দ না, আয়ান কেও উনার ভীষণ পছন্দ কিন্তু কখনো মেয়ের স্বামী হিসেবে কল্পনা করেননি।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কুলসুম বেগম নিরবতা ভেঙে জিজ্ঞেস করলেন,’ বিয়ের আগমুহূর্তে তুমি কোথায় চলে গিয়ে ছিলে.?’
‘ একটা কাজ পরে গিয়ে ছিল আম্মু’
কুলসুম বেগম রেগে হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন,’ এমন কি কাজ পরে গিয়ে ছিল যে তোমার আমাদের মানসম্মানের কথা একবার ও মনে আসেনি.? তোমার হবু বউ স্টেজে বসে ছিল তোমার একবার বেলীর কথাও মনে পরেনি.? তুমি ওকে অপমান করেছো অভ্র!’
অভ্র ওর আম্মুর থেকে চোখ সরিয়ে গম্ভীর মুখে সবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপনাদের আর কিছু বলার আছে.?’
সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো! সবাই জেনো অভ্রের কথা শুনে মুখে আশা কথা গুলো গিলে নিলো।
কুলসুম বেগম অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমার কথা এখনো শেষ হয়নি অভ্র! তুমিও আসিফের মতো অবাধ্য হয়ে গেছো!’
‘ এখন কি আমাকেও আসিফের মতো পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে.?’
অভ্রের মুখে এমন কথা শুনে পরিবেশ একদম থমথমে হয়ে গেলো।
অভ্র বসা থেকে দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরলো আর পেছনে রেখে গেলো হাজার খানেক প্রশ্ন!
নিজের রুম থেকে খিলখিল করে হেঁসে উঠলো এক কিশোরী সে ড্রোনের মাধ্যমে ওদের সব কথা শুনতে চেয়ে ছিল কিন্তু অভ্র এত শটকার্ট কথা শেষ করে দিবে ভাবতে পারেনি। ভেবে ছিল মেঝো আব্বু, ছোট আব্বু, কুলসুম বেগম তাদের থেকে প্রচুর বকা খাবে অভ্র অথচ সে বুঝতে পারলো তারা নিজেরাও অভ্র কে কিছু বলতে ভয় পায়!
সে বেশ মজা পাচ্ছে বাড়ির এক এক জনের করুন দশা দেখে। এখনো ত কিছুই না সামনে সবার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।
বেলী নিজের রুমে নিজেকে বন্দী করে রাখে সব সময়।
আজ রাতে শায়েলা সিদ্দিকী বেলীর রুমে আসলো। চারপাশ তাকিয়ে বললো, ‘ কি অবস্থা করে রেখেছো বেলী সোনা.?’
বেলী একবার চোখ তুলে শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে তাকিয়ে আবার দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বই সামনে ধরলো।
‘ এভাবে নিজেকে ঘর বন্দী করে নিলে চলে.! তুমি আমার একমাত্র ছেলের বউ। তোমার এই অবস্থা আমি মেনে নিতে পারছি না। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করো। সবকিছু মেনে মানিয়ে নাও। আয়ান খারাপ ছেলে নয় বেলী, আমার ছেলে বলে বলছি না এটা তুমিও জানো।’
বেলী তখনো বইয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
শায়েলা সিদ্দিকী বুঝলেন বেলী এখন কথা বলতে চাচ্ছে না৷
‘ বেলী আজ থেকে তুমি আয়ানের রুমে থাকবে এটা বড় ভাবির আদেশ ‘
বেলীর কথা বাড়াতে ইচ্ছে করলো না। তবে সে আয়ানের রুমে যাবে না।
শায়েলা সিদ্দিকী চলে গেলো।
বেলী অবাক হলো। শায়েলা সিদ্দিকী কয়েকদিন আগেও জবা কে বউ করার জন্য এত পাগল ছিল এতো সহজে বেলীকে মেনে নিল!
বেলী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে মনে মনপ বললো ‘ বড় আম্মুর আদেশ হয়তো সেই জন্যই, সবাই ত বড় আম্মুকে ভীষণ ভয় পায়!’
বেলী চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলো। রাতে না ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করতেই ঘুম চলে আসলো।
জবা কে একটা ছেলের সাথে দেখে অভ্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাকিয়ে রইলো।
জবা আলিফের পেছনে বাইকে বসে আছে।
আলিফ বলে উঠলো, ‘ নিরু আপু কোন দিকে যাব.?’
‘ সোজা বা দিকে চলো’
ওদের পিছু পিছু গেলো অভ্রের গাড়ি।
জবা বুঝতে পারলো ওদের কেউ ফলো করছে, এমনি এমনি তে ত সিআইডি অফিসার হয়নি!
জবা আলিফকে বললো রাস্তার সাইডে আমাকে নামিয়ে দাও আর তুমি চলে যাও।
আলিফ মনে মনে খুশি হলো ওর গার্লফ্রেন্ড ওকে বার বার মেসেজ দিচ্ছে দেখা করার জন্য । আলিফ কথা না বাড়িয়ে জবা কে নামিয়ে দিয়ে বললো,’ কোনো সমস্যা হলে আপু আমাকে কল দিবেন!’
আলিফ চলে যেতেই জবা মাস্ক পড়ে রিক্সা ডাকলো।
বাড়ির পেছনে রিক্সা থেকে নেমে জবা শাড়ি পড়ে পাইপ বেয়ে উপরে উঠে আসলো।
দূর থেকে সবকিছু খেয়াল করলো অভ্র সে অবাক হয়ে বলে উঠলো, ‘ এটা মেয়ে নাকি বাঁদর ছিল.?’
জবা রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বসতেই ওর রুমের দরজায় টোকা পরলো।
জবা দরজা খুলতেই দেখলো অভ্র বাঁকা হেঁসে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
জবা ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই অভ্র ওর রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।
জবা অভ্রের এমন আচরণে রেগে আঙ্গুল তুলে শাসিয়ে কিছু বলতে চাইলে অভ্র ওর হাত চেপে ধরে নিজের একদম কাছে নিয়ে আসে।
জবা রেগে ছটফট করে ছুটার চেষ্টা করে বললো,’ নির্লজ্জ ছেলে আমার থেকে দূরে থাকো! কতবার নিষেধ করেছি আমাকে ছুঁবে না অসভ্য ‘
অভ্র বাঁকা হেঁসে বললো,’ এখনো ত কিছুই করলাম না অথচ অসভ্য তকমা দিয়ে দিচ্ছ.? অথচ একই পাশে, একই বাইকে, ঘাড়ে হাত রেখে অন্য ছেলেদের সাথে ত ভালোই ঘুরে বেড়াতে পারো। আমি রুমের ভেতর হাত ধরলেই অসভ্য হয়ে গেলাম.?’
অভ্র আমি তোমার সাথে কোনো তর্কে যেতে চাই না আমাকে ছেড়ে দূরে দাঁড়াও। তোমার ছোঁয়াতেও আমার ঘৃণা লাগে। ‘
অভ্র রেগে গেলো জবার কথা শুনে। রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাত আরও শক্ত করে চেপে ধরে বললো,’ ছেলেটা কে ছিল.?’
জবা আরও তেজ দেখিয়ে বললো,’ বলবো না তোমাকে! ‘
‘ কেন বলবে না.?’
‘ আমার ইচ্ছে ‘
‘ এতে কিন্তু ছেলেটার সমস্যা হবে’
‘ ওকে তুমি কিছুই করবে না’
অভ্রের মুখের বাঁকা হাসি দেখে ভয় পেয়ে গেলো জবা।
‘ ওর কিছু হলে আমি তোমাকে ছাড়বো না বলে দিচ্ছি অভ্র! ‘
‘ ছেড়ো না প্লিজ দুই হাতে যত্ন করে আঁকড়ে গলায় জড়িয়ে থেকো’
জবা শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে অভ্র কে ছাড়িয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়।
‘ তোমার মতো ছেলেদের আমি ঘৃণা করি। যেই ঘৃণা আজ থেকে ছয় বছর আগে ছড়িয়ে ছিলে আজও তার বেড়েই চলছে।’
অভ্র দুই পা এগিয়ে এসে জবার দিকে ঝুঁকে গেলো।
জবা পিছিয়ে গেলো না ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো।
অভ্র ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,’ যেই মনে এতো ঘৃণা একদিন সেই মনে প্রেমের ফুল ফুটবে, একটু ভালোবাসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে তোমার হৃদয়। আমি প্রমাণ করে দিব অভ্র চৌধুরী এতোটাও কারেক্টারলেস নয়! তার রক্তজবার হাত ছাড়া সে কখনো দ্বিতীয় কারো হাতও স্পর্শ করেনি।’
জবা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ জানেন ত মিস্টার অভ্র চৌধুরী কয়লা ধুলে কখনো ময়লা যায়না!.?’
জবা কি ইঙ্গিত করেছে অভ্র খুব সহজে বুঝতে পারলো।
‘ আমি ভেবে ছিলাম তুমি অন্তত আমাকে বিশ্বাস করবে অথচ আমি সব সময় ভুল ছিলাম! ‘
অভ্র আর কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
জবা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আমার সত্যি জানার কোনো ইচ্ছে নেই, আমার উদ্দেশ্য তুমি না, তোমার পরিবার অপেক্ষা করো আগামীকাল তোমার পরিবারের জন্য সারপ্রাইজ আছে। আমি পেরেছি হ্যা আমি পেরেছি সব প্রমাণ জোগার করতে। ভালো মানুষের আড়ালে মুখোশ গুলো টেনে বের করার সময় এসেছে। যে মন কাঁটায় জর্জরিত সেই মনে কখনো প্রেমের ফুল ফুটবে না! আমি ফুটতে দিব না’
বেলী বিরক্ত হলো ঘুম থেকে উঠে দেখে সবকিছু ওর রুম থেকে লতিকার আম্মা আয়ানের রুমে নিয়ে এসেছে।
কুলসুম বেগম এসে ওকে আদেশ করলো ওর রুমে চলে যেতে।
বেলী কুলসুম বেগমের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারলো না। এই কিছু না বলতে পারার জন্য নিজের প্রতি নিজের ভীষণ রাগ হলো।
সে বাড়ির কোনো খবর জানেনা। অভ্র কি বাড়িতে বিয়ের পর আর ফিরেছে.? সে কি জানে বেলী আজ কার বউ.? বেলী এই তিনদিন রুমে নিজেকে বন্দি রেখেছে। কারো সাথে কোনো রকম কথা বলেনি, কেউ বলতে চাইলেও রুম থেকে বের করে দিয়েছে।
তখন হয়তো রাত দশ কি বারোটা বেলী ধীর পায়ে নিজের চিরচেনা রুম থেকে বের হয়ে একবার আশেপাশে তাকালো। অভ্রের রুমের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল কিছু সময়। দরজা দেখে বুঝতে পারলো অভ্র বাড়িতে।
সে অভ্রের দরজা দেখলে বুঝতে পারে সে বাড়িতে কিনা। সে যে ছোট থেকেই এই মানুষটাকে সব সময় বুঝতে চেয়েছে। কখনো কি প্রয়োজন বেলীর থেকে ভালো কে জানে.? শুধু অভ্রের মনের খবরটা বেলী আজীবন জানতে পারলো না। তবে সে মুখোমুখি হবে, জিজ্ঞেস করবে কেন সে এমনটা করলো.? কেন এতো এতো স্বপ্ন দেখিয়ে বিয়ের পিরিতে বসালো.? প্রথম নিষেধ করতে পারতো অন্তত বেলী অন্য কারো না হতো। আজ অভ্রের জন্য আয়ানকে বিয়ে করতে হয়েছে সে ক্ষমা করবে না অভ্র কে কখনো করবে না।
মধ্য রাতে বাড়িতে ফিরেছে আয়ান৷ লতিফা আয়ানকে দেখে খুশিতে বলে উঠলো, ‘ স্যার আপনার আম্মাকে ডাকমু.?’
আয়ান নিষেধ করে দিয়ে বললো’ ঘুমাতে যাও কাউকে ডাকতে হবে না’
আয়ান নিজের রুমের সামনে এসে পকেট থেকে চাবি বের করে রুমে ঢুকে পরলো।
রুম আবছা অন্ধকার, ড্রিম লাইট জ্বলছে। আয়ান আর লাইট জ্বাললো না।
সে এসেছে বারেকের বাসা থেকে, এতোদিন বারেকের বাসায় ছিল। সে সোজা এসে বিছানায় শুয়ে পরলো।
কোলবালিশ ভেবে হাত পা ছড়িয়ে রাখতেই বেলীর ঘুম ভেঙে গেলো।
শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৯
নিজের উপর এমন শক্ত হাত পা বুঝতে পেরে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসলো। হঠাৎ চিৎকার দিয়ে লাথি মারলো।
হঠাৎ শরীরে লাথি পরতেই তাল সামলাতে না পেরে আয়ান ধপাস করে বিছানা থেকে নিচে পরে গেলো। ব্যাথায় কোমর চেপে ধরলো।
বেলী ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আবার চিৎকার করার আগেই আয়ান দ্রুত উঠে এসে ওর মুখ চেপে ধরলো।