শেষ বিকেলের প্রণয় গল্পের লিংক || হালিমা চৌধুরী

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ১
হালিমা চৌধুরী

সদ্য বিয়ে করা বরের পাশে নিজের প্রাক্তন প্রেমিক কে দেখে হতভম্ব হয়ে যায় নিধি। নিধিকে এভাবে অপ্রস্তুত চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে বাঁকা হাসে অয়ন। নিধিকে আরো অবাক করে দিয়ে অয়ন নিধির দিকে তাকিয়ে ফারিশকে বলে,

“দোস্ত, ভাবি তো হেব্বি কিউট!”
অয়নের কথা শুনে ফারিশের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। এতে অবশ্য নিধি অবাক হয়নি, কারণ নিধিকে যখন ফারিশের দাদা, দাদি দেখতে গিয়েছিল তখনই সে বুঝতে পেরেছে এই ছেলেটা কতটা অহংকারী স্বভাবের। সবাইকে আরো অবাক করে দিয়ে ফারিশ সবার মাঝখান থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে,
“আমার একটা মিটিং আছে, যা করার তাড়াতাড়ি করো তোমরা।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বলেই ফারিশ নিধিদের বাসা থেকে বের হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে। ফারিশের এমন কান্ডে উপস্থিত সবাই কানাঘুষা শুরু করে দেয়। নিধির ফুপি নিধির মা কে খোঁচা দিয়ে বলে,
“কি ছেলের সাথে মেয়ে বিয়ে দিয়েছো তুমি, বিয়ের দিন নাকি ছেলের মিটিং আছে! ভাবা যায় এসব, এই ছেলে কিভাবে আমাদের নিধিকে সুখে রাখবে?”

নিধির ফুপির কথা শুনে নিধির মা বেশ রাগান্বিত গলায় বলেন,
“আমার দায়িত্ব ছিলো তোমার ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে দেওয়া, সেই দায়িত্ব আমি পালন করেছি। আর শুনো ছেলেটার কোনো কিছুর অভাব নেই, আশা করি তোমার ভাইয়ের মেয়ের কোনো অসুবিধা হবে না ওদের বাড়িতে।”
বলেই নিধির মা রুমে চলে যান, নিধির মায়ের কথা শুনে তার চোখ বেড়ে নোনাজল গড়িয়ে পড়ে। নিধির ফুপি এসে তার ঘাড়ে হাত রেখে বলে,

“সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে মা, ফারিশের দাদা দাদি অনেক ভালো মনের মানুষ, তোকে তারা তোর মায়ের থেকেও ভালো রাখবে আমার বিশ্বাস আছে।”
নিধি তার ফুপির কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বিরবির করে বলে,
“যার সাথে সারাজীবন থাকবো সেই যদি আমাকে মেনে না নেয়, সেখানে সুখে থাকা তো বিলাসিতা!”
নিধির অসমাপ্ত কথা কারো কানে পৌছায়নি, ফারিশের দাদি নিধির কাছে এগিয়ে এসে বলে,
“ফারিশের কথায় কিছু মনে কোরো না, ও একটু এমনই। এখন চলো, বাড়ি যেতে হবে। দেরি হয়ে যাচ্ছে!”

ফারিশের দাদির কথা শুনে নিধি একবার ভালো করে নিজের বাড়িটার দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকায়। অদ্ভুত হলেও সত্য নিধির মা তাকে শেষ বার বিদায় দিতেও রুম থেকে বের হয়নি। আসবেই বা কেনো, নিধি যে তার মায়ের জন্য একটা আপদ ছিলো, তবুও নিধি তার মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞ, নিজের মেয়ে না হয়েও যে তার জন্য এতোকিছু করেছেন তিনি। ফারিশের দাদু নিধি কে ফারিশের গাড়ির সামনে নিয়ে গিয়ে বলে,

“তুমি আর ফারিশ এই গাড়িতে করে আসো, অয়ন আমি আর তোমার দাদি অন্য গাড়িতে করে আসছি।”
বলেই ফারিশের দাদু গাড়ির দরজা খুলে দেয়, নিধি গাড়িতে উঠে চুপ করে বসে আছে। ফারিশ সেদিকে না তাকিয়ে নিধিকে কিছুটা ধমকের সুরে বলে,
“সিটবেল্ট বাঁধার কথাও বলে দিতে হবে? উফস কারো কোনো সময়ের প্রতি সচেতনতা নেই।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তাড়াহুড়ো করে সিটবেল্ট বাঁধতে গিয়ে ব্যর্থ হয়৷ ফারিশ বেশ বিরক্ত নিয়ে নিধির কাছে এসে সিট বেল্ট বেঁধে দেয়। গাড়ি তার আপন গতিতে চলছে, নিধি আর ফারিশের মধ্যে নিরবতা বিরাজ করছে। নিধি একদৃষ্টিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। তার প্রচুর মাথা ব্যথা করছে। নিধি ভয়ে ফারিশ কে বলতেও পারছে না যে, সে জার্নি করতে অতোটা অভ্যস্থ না। নিধিদের বাসা থেকে ফারিশদের বাসায় যেতে ২ ঘন্টার মত লাগবে। মাত্র ৩০ মিনিট হলো গাড়িতে আছে তারা, এর মধ্যেই নিধি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তীব্র মাথাব্যথার কারণে মনের অজান্তেই নিধি ফারিশের ঘাড়ে মাথা রাখে। হুট করে ফারিশের ঘাড়ে নিধি মাথা রাখায় ফারিশ জোরে গাড়ি ব্রেক করে। ফারিশের করা কাজে নিধি নিজেই লজ্জা পায়, সাথে কিছুটা ভয় পায় সে, এখন আবার ফারিশের ধমক খেতে হবে তাকে।

“সমস্যা কি তোমার! শান্তিতে কোনো কাজও আমাকে করতে দিবে না? আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে, সেখানে আমাকে পৌঁছাতে হবে তাড়াতাড়ি। জানো না তুমি?”
ফারিশের কথা শুনে নিধি কিছুটা কেঁপে ওঠে। তীব্র ভয় নিয়ে সে ফারিশকে মিনমিন করে বলে,
“আমার জার্নি করার অভ্যাস নেই, তাই মাথা ব্যথা করছে!”
“তোমার মাথা ব্যথা করছো তো আমি কি করবো? তোমার সমস্যা হচ্ছে তাহলে গাড়ি থেকে নেমে যাও, বসে আছো কেনো?”

ফারিশের কথা শুনে নিধির চোখ বেড়ে পানি পড়তে থাকে, সে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। নিধিকে কাঁদতে দেখে ফারিশ চোখ থেকে সানগ্লাস খুলতে খুলতে বলে,
“মেয়েদের প্রতিটি শিরা ন্যাকামিতে ভর্তি!”
বলেই ফারিশ গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। ফারিশ গাড়ি থেকে নামার পরেও নিধি গাড়ি থেকে নামে না। এটা দেখে ফারিশ গাড়ির সামনে এসে নিধিকে বলে,

“আমি কি গাড়িতে বসে থাকার জন্য গাড়ি থামিয়েছি? নাকি বসে বসে প্রেম করার জন্য? গাড়ি থেকে নামবে নাকি এভাবেই সারারাস্তা আমার ঘাড়ে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে?”
ফারিশের কথা শুনে নিধি চোখের পানি মুছে বলে,
“আমি ঠিক আছি, আপনার দেরি হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি আসুন।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তবুও নিধির কোনো হেলদোল না দেখে ফারিশ বেশ বিরক্ত হয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে। কিছুক্ষণের মধ্যে ফারিশ একটা ঠান্ডা পানির বোতল আর কিছু আচার এনে নিধির পাশে রেখে গাড়ি স্টার্ট দেয় আবার। নিধি সেদিকে না তাকিয়েই সিটে হেলান দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

হঠাৎ করে গাড়ি ব্রেক করায় নিধির ঘুম ভেঙে যায়, ফারিশ গাড়ি থেকে নেমে গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলে,
“নামো, আমি অফিসে যাবো। বাসায় যাও তুমি।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি গাড়ি থেকে নেমে যায়। নিধি নেমে যেতেই ফারিশ গাড়িতে উঠে অফিসের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। ফারিশদের বাড়ির সামনেই দাড়িয়ে আছে নিধি,
“দাড়িয়ে আছো কেনো? বাড়ির ভিতরে আসো।”
ফারিশের দাদুর কথা শুনে নিধি তার দিকে তাকায়, নিধির মলিন মুখখানা দেখে ফারিশের দাদু তাকে স্বান্তনা দিয়ে বলে,

“জন্মের সময় মা কে হারিয়েছে, তার কয়েক বছর পর বাবাও চলে গিয়েছিলো আমার অবুঝ ফারিশকে রেখে। বাবা মায়ের শাসন না পেয়ে বড় হয়েছে তো, তাই একটু খিটখিটে মেজাজের হয়েছে। তুমি চিন্তা কোরো না নিধি, ও ঠিক হয়ে যাবে। তুমি শুধু ওকে ভালোবেসে একটু আগলে রেখো। আমার ফারিশটা ভালোবাসার পাগল, ছোটবেলা থেকে কারো ভালোবাসা পায়নি তো তাই।”
ফারিশের দাদুর কথা শুনে নিধি তার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,

“আমি আমার সব দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করবো।”
নিধির কথা শুনে হাসে ফারিশের দাদু। তিনি নিধিকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। বাড়ির ভিতরে আসতেই ফারিশের দাদি নিধিকে নিয়ে নিজের রুমে এসে বসেন। আলমারি থেকে একটা গহনার বাক্স এনে নিধির হাতে দিয়ে বলে,

“এটা খুলে দেখো তো কেমন লাগছে!”
নিধি বাক্সটা খুলে দেখে তার ভিতরে একজোড়া হাতের চুড়ি রয়েছে। ফারিশের দাদি চুড়ি জোড়া নিধির হাতে পরিয়ে দিয়ে বলে,
“দারুণ লাগছে তোমাকে।”
ফারিশের দাদির কথা শুনে সৌজন্যমূলক হাসে নিধি।

সালটা যখন ২০১৯, তখন অয়নের সাথে পরিচয় হয় নিধির। নিধি তখন দশম শ্রেণিতে পড়তো। তখন থেকেই নিধি আর অয়নের প্রণয়ের সূত্রপাত ঘটে। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল ২ বছর। একদিন হুট করে অয়ন এসে বলে, ❝তোমার মত এত নিচ ফ্যামিলির মেয়ের সাথে আমার পরিবার কখনো এই সম্পর্ক মেনে নিবে না। তাই আমাকে ভুলে যাও।❞ বলেই অয়ন সেদিন নিধিকে রেখে চলে যায়। এতে নিধি প্রচুর কেঁদেছিল, একসময় মনটাকে পাথরে পরিণত করে পরিবারের চাপে বিয়েতে রাজি হয় নিধি। কিন্তু আজ হঠাৎ ৩ বছর পর প্রাক্তন প্রেমিক কে দেখে অবাক না হয়ে পারলো না নিধি।

রুমের এককোনায় দাড়িয়ে আনমনেই এসব ভাবছিল নিধি, হঠাৎ করে হাতে হেঁচকা টান পড়ায় নিধি সামনে তাকায়। নিধি তার সামনে অয়নকে দেখে কিছুটা রেগে যায়।
“হাত ছাড়ুন বলছি, এখানে কেউ দেখে ফেললে ব্যাপারটা কিন্তু খারাপ হবে বলে দিলাম।”
নিধির কথা শুনে পৈশাচিক হাসি হাসে অয়ন।

“এখানে কি হচ্ছে এসব!”
হঠাৎ ক্ষিপ্ত সুরে বলা কথাটা শুনে নিধি আর অয়ন দুজনেই ভয় পেয়ে যায়। ফারিশ নিধি আর অয়নের দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে।

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here