শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ১১

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ১১
হালিমা চৌধুরী

দরজার বাহিরে ফারিশ আর পিয়াশ দাড়িয়ে আছে, ফারিশকে দেখে নিধি কিছুটা রেগে যায়। নিধি রেগে গিয়েই দরজার সামনে থেকে সরে যায়। নিধি সরে যেতেই পিয়াশ আর ফারিশ বাসায় প্রবেশ করে। নিধি কিছুটা ক্ষিপ্ত সুরে পিয়াশ কে বলল,

“এসব কি ভাইয়া? উনি কিভাবে জানলেন আমি এই বাসায় থাকি? আর উনি আপনার সাথেই বা কেনো?”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে শান্ত চোখে তাকায়, পিয়াশ ইশারায় নিধিকে চুপ করতে বলে। ড্রয়িং রুম থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনে ইকরা রান্নাঘর থেকে বের হয়ে ড্রয়িং রুমে আসে। ইকরা ফারিশ কে দেখে ইশারায় পিয়াশ কে জিজ্ঞেস করে কে এই ব্যাক্তি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমার বস।”
পিয়াশের কথা শুনে ফারিশ নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,
“নিধির জামাই আমি।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি বিষম খায়, আর ইকরা উৎফুল্ল হয়ে বলল,
“আরে বসুন ভাইয়া, আমি কফি বানিয়ে আনছি।”
বলেই ইকরা রান্নাঘরে চলে যায়। নিধিও দাঁড়িয়ে না থেকে ইকরার পিছন পিছন যায়। ফারিশ নিধি কে বাঁধা দিয়ে বলল,

“তোমার সাথে কিছু কথা ছিল আমার। আশা করি তুমি কিছুটা সময় দিবে আমাকে।”
ফারিশের কথা শুনে পিয়াশ নিধি কে বলল,
“স্যারকে রুমে নিয়ে যাও, আর তোমাদের ভুল বুঝাবুঝি মিটিয়ে নাও।”
নিধি সবার সামনে সিনক্রিয়েট করতে চাচ্ছে না, তাই সে বলল,
“আচ্ছা।”

নিধির কথা শুনে চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে উঠল ফারিশের। নিধি গুটিগুটি পায়ে হেটে রুমে চলে যায়, ফারিশও তার পিছন পিছন যায়। রুমে এসেই নিধি ফারিশের দিকে রেগে বলল,
“আমাকে কি শান্তিতে বাঁচতে দিবেন না আপনি? আপনার জন্য কি আমি মরেও শান্তি পাবো না?”
“চেঁচিয়ে কথা বলো না আমার সাথে।”

“কি হবে চেঁচিয়ে কথা বললে? বড় জোর একটা চ’ড় মারবেন, আর কি করবেন? খু’ন করবেন? করুন তাহলে, অন্তত এই বিষাদময় জীবন থেকে রেহাই পাবো আমি।”
নিধির কথা শুনে ফারিশের মুখে তিমির নেমে এলো, সে মুখটা থমথমে করে বলল,
“যতটুকু বলা উচিত, ঠিক ততটুকুই বলবা। আমি আমার কথা বলতে তোমার থেকে সময় চেয়েছি, তোমার জোর গলায় কথা শোনার জন্য না।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে বিরক্তি ভরা নয়নে তাকায়।
“কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন, আমার সময় নেই এতো, আজাইরা আলাপ করার জন্য।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“সামান্য ছোট একটা ব্যপার নিয়ে তোমার উচিত হয়নি এভাবে বাড়ি থেকে চলে আসা। অবন্তী আমার এক্স গার্লফ্রেন্ড, ওর সাথে আমার ৪ বছরের প্রেম। আমাদের বিয়েও ঠিক হয়েছে। কিন্তু বিয়েরদিন অবন্তী ওর বেস্টফ্রেন্ড সাদিফের সাথে পালিয়ে যায়।

রিলেশন চলাকালীন সাদিফ কে নিয়ে প্রায় আমাদের মধ্যে ঝগড়া হতো, কিন্তু অবন্তী সবসময় বলতো, সাদিফ শুধু ওর বেস্টফ্রেন্ডই। অন্য কোনো সম্পর্ক নেই। ওর সব কথা মেনে নিয়েই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি। এতে প্রথমে অবন্তী রাজি না হলেও পরে রাজি হয়। তারপর শুরু হয় আমাদের বিয়ের তোড়জোড়, এরমধ্যে বিয়ের দিন অবন্তীর মনে হলো, সে আমাকে ভালোবাসে না। সাদিফ কে ভালোবাসে। তাই সাদিফ আর অবন্তী পালিয়ে বিয়ে করে নেয়। আমার সাথে তো অবন্তী খুব নিখুঁত ভাবে টাইমপাস করে গেছে।

এখন বর্তমানে অবন্তী কানাডায় থাকে, সাদিফের সাথে তার ডিবোর্স হয়ে যায় বিয়ের ১ বছর পরেই। অবন্তীর করা বিশ্বাসঘাতকতা আমি ঠিক ভাবে নিতে পারিনি, সেই নিয়েই ডিপ্রেশনে চলে যাই আমি। এই ডিপ্রেশন থেকে বের হতে আমার বেশ সময় লেগেছে। ডিপ্রেশন থেকে বের হলেও আগের সেই চঞ্চল মেহরাব ফারিশ শিকদার হয়ে উঠতে পারিনি আমি। নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি মানুষের কাছ থেকে। একা থাকতে থাকতে একদম খিটখিটে মেজাজের হয়ে গিয়েছি। এই শক্ত মানুষটার মনটা যে কতটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে তা তুমি বুঝতে পারবে না নিধি। কেউ অবন্তীর কথা বললেই পুরনো কথা গুলো আমার মনে পড়ে যায়। আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না তখন। আর তুমি অয়নের বানোয়াট কথা শুনে আমাকে বিচার করেছো!”

ফারিশের কথা শুনে নিধি কিছু বলল না, তার কাছে ফারিশের কথা গুলো সম্পূর্ণ বানিয়ে বলা মনে হচ্ছে। তাই সে এ ব্যপারে আর কোনো কথা বলতে চায় না।
“আপনার কথা শেষ হলে এবার আসতে পারেন।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
“তোমার কিছুই বলার নেই?”

“কি বলার থাকবে? এই কথা গুলো এখন না বলে কালকে বললে কি হতো? তাহলে তো এতো কিছু হতো না। তাছাড়া যা হয়েছে ভালোই হয়েছে, এ কারণে আপনার আসল চেহারা টা তো দেখতে পেলাম। আমার প্রতি আপনার কেমন বিশ্বাস তাও দেখলাম। জীবনে ভুল করলে একটাই করেছি, সেটা হলো গরিব ঘরে জন্ম নিয়ে। বিয়ের আগে বাবার বাড়িতে শুধু অবহেলা পেয়েছি, ভেবেছি বিয়ের পর হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে স্বামীর বাড়ি থেকেও শুধু অবহেলায় পেয়েছি।

শুনুন মিস্টার মেহরাব ফারিশ শিকদার, আমি এতোটাও অবহেলিত না, যা আপনারা ভাবছেন। এখন আর আমি পিছনে ঘুরে দাড়াতে চাই না, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। একা সংগ্রাম করে হয়তো সুখে বাঁচবো নয়তো মরবো। তবুও আর কারো কাছে বোঝা হয়ে থাকতে চাই না। একদিন হয়তো আমি হারিয়ে যাবো, তখন সবাই ঠিকই আমাকে খুঁজবে। আমার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু পাবে না, আপনি দয়া করে এখান থেকে চলে যান।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
“আজ অনেকদিন হলো দাদা ভাই আর দাদি বাড়িতে নেই, তারা যখন ফিরে আসবে আমি তাদেরকে কি জবাব দিবো?”
ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,

“আমি তো জানতাম আপনি তাদের জন্যই আমাকে ফিরিয়ে নিতে এসেছেন। আমার জন্য না আপনার মনে বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসাও জন্মায়নি। আমি ভেবেছি, আমার ভালোবাসা দিয়ে আপনার সব কঠোরতা ভেঙে চুরমার করে দিবো। কিন্তু আমি ব্যর্থ হয়েছি। দাদা দাদি কে বলে দিয়েন, কোনো এক ব্যাক্তি কে ভালো রাখতে নিধি হারিয়ে গেছে, নয়তো বলবেন যে, নিধি একটু সুখে থাকার জন্য স্বার্থপরের মত তাদের ছেড়ে চলে গেছে।”
“আমি নিজেকে কি বলবো নিধি?”
“আমি জানি না ফারিশ, প্লিজ আমাকে একটু ভালো থাকতে দিন আপনি। আমি আপনাকে ছাড়া অনেক সুখে থাকবো।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ কিছু বলল না, তার চোখ দিয়ে নিরবে নোনাপানি গড়িয়ে পড়ে। নিধি দেখার আগেই ফারিশ চোখের পানি মুছে নিষ্পলক চোখে নিধির দিকে চেয়ে আছে। ফারিশ এটা ভেবেই অবাক হয়, সে নিধির জন্য কাঁদছে! অবন্তী চলে যাওয়ার পরও ফারিশের চোখ থেকে এক ফোটা পানি পড়েনি। সাথে নিধির মত শান্তশিষ্ট মেয়েকে এত কঠোর হতে দেখে তো ফারিশ আরো অবাক হয়। সে আর কিছু না বলে এলোমেলো পায়ে হেটে রুম থেকে বের হয়ে যায়। রুম থেকে বের হতেই পিয়াশ আর ইকরার সামনে পড়ে ফারিশ। পিয়াশ তার বিস্ময় আর দমিয়ে রাখতে না পেরে বলল,

“কি হয়েছে স্যার?”
“কিছু হয়নি, আমি বরং আজ যাই।”
ফারিশের কথা শুনে ইকরা বলল,
“আরে স্যার, আমি কফি বানিয়েছি। খেয়ে যান প্লিজ!”
“অন্য একদিন আসবো আমি, একটা কাজ আছে আমার।”

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ১০

ফারিশের কথা শুনে ইকরা আর পিয়াশ দুজনেরই মন খারাপ হয়ে যায়। ফারিশ সেসব পাত্তা না দিয়ে পিয়াশ কে বলল,
“অফিসে এসো, জরুরি কথা আছে আমার। আর ম্যাম, আপনি কয়েকটা দিন নিধির একটু খেয়াল রাখবেন।”
বলেই ফারিশ বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ১২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here