শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৩

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৩
হালিমা চৌধুরী

নিধি আর ফারিশ দুজনেই মুখোমুখি বসে আছে, কারো মুখে কোনো কথা নেই। ফারিশ নিধিকে দেখে অভিমানে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিধি ছলছল চোখে ফারিশের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারিশ ডানহাতে প্রচুর ব্যথা পেয়েছে, তার হাত পুরো ব্যান্ডেজ করা। সাথে পায়েও ব্যথা পেয়েছে ফারিশ, এতে ফারিশের হাটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে। এছাড়া তেমন বড় কোনো ক্ষতি হয়নি ফারিশের। ডক্টর বলেছে নিয়মিত ঔষধ খেলে ১৫ দিনের মধ্যেই সে আবার সুন্দর করে হাটতে পারবে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই ফারিশকে রিলিজ দেওয়া হবে। পিয়াশ আর ইকরাও এসেছে ফারিশ কে দেখতে। ফারিশ যেহেতু পায়ের ব্যথার জন্য হাটতে পারছে না তাই সাকিফ আর পিয়াশ ওকে ধরে গাড়িতে নিয়ে বসিয়ে দেয়। পিয়াশ গাড়ি ড্রাইভ করছে, তার পাশে ইকরা। নিধি আর ফারিশ পিছনে বসেছে, সাকিফ অন্য গাড়িতে আসছে। নিধি আর ফারিশ কারো মধ্যে কোনো কথা নেই, দুজনেই নিরবতা পালন করছে যেনো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি এসে ফারিশদের বাড়ির সামনে থামে। পিয়াশ আর নিধি নেমে ফারিশ কে ধরে বাড়িতে নিয়ে আসে। সাকিফও এসে পোঁছায় বাড়িতে। নিধি সবাই কে গল্প করতে বলে রান্নাঘরে সবার জন্য চা বানাতে যায়। চা বানিয়ে এনে সবাই কে দিয়ে নিধিও বসে তাদের পাশে। গল্পের মেইন টপিক হচ্ছে নিধি। সাকিফ ফারিশের দিকে অভিমানের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

“বিয়ে করেছিস দাওয়াত পর্যন্ত দিলি না। তুই নাকি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড! উফস স্যরি ভুলেই তো গিয়েছি, আপনার বেস্টফ্রেন্ড তো অয়ন! সে দাওয়াত পেয়েছে, অথচ আমরা দাওয়াত পেলাম না!”
সাকিফের কথা শুনে ফারিশ হেসে বলল,
“বিয়েটা হুট করেই হয়েছে, আর অয়ন কে আমি ইনভাইট করিনি৷ দাদু ভাই বলেছে।”
“সবাই না জানিয়ে বিয়ে করার পর এই কথাই বলে! যাক সেসব, ট্রিট তো অন্তত দিতে পারিস!”
“ভাই রে, তোকে আমি ভাঙা হাত পা নিয়ে বাহিরে ট্রিট দিতে যাবো নাকি?”
ফারিশের কথা শুনে সাকিফ হতাশ চোখে তাকিয়ে বলল,

“বাহিরে কই যেতে বললাম? তুই যাকে এত্তো ভালোবাসিস, যাকে দেখার জন্য মাঝরাতে অসুস্থ শরীর নিয়ে বেরিয়ে গেলি, তার হাতের স্পেশাল বিরিয়ানি খেতে চাই!”
সাকিফের কথা শুনে ফারিশ নিধির দিকে তাকাল, পরক্ষণে আবার মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলল,
“ আমি জানি না ও বিরিয়ানি রান্না করতে পারে নাকি! তোদের ভাবি, তোরাই বল!”
ফারিশের কথা শুনে সাকিফ নিধির দিকে হতাশ চোখে তাকিয়ে আছে। নিধি তা বুঝতে পেরে বলল,
“আমি রান্না করতে পারি, আপনারা বসুন। আমি রান্না করছি!”

বলেই নিধি রান্নাঘরে চলে যায়, বিরিয়ানি রান্না করার জন্য সবকিছু রেডি করে নেয় সে। মোটামুটি বিরিয়ানি রান্না করার জন্য সবকিছুই আছে, শুধু টক দই টা নেই। তাই নিধি ড্রয়িং রুমে এসে বলল,
“আমাকে টক দই এনে দিতে পারবেন কেউ ভাইয়া? উনি তো যেতে পারবে না!”
নিধির কথা শুনে সবাই তার দিকে তাকায়।

“রাত অনেক হয়েছে, কোনো দোকান মনে হয় না খোলা থাকবে এখন। বাসায় দুধ আর লেবু আছে, সেটা দিয়ে টকদই বানিয়ে নিতে বল সাকিফ!”
ফারিশের কথা শুনে অবাক হয় নিধি! ছেলেরা এসব বিষয়ে খেয়ালও রাখে! নিধি আর কথা না বাড়িয়ে রান্নাঘরে চলে আসে।

রান্না শেষ করে নিধি ডাইনিং টেবিলে খাবার নিয়ে এসে সবাইকে সার্ভ করে দেয়। সবাই খাবার খাচ্ছে, ফারিশকে বসে থাকতে দেখে পিয়াশ বলল,
“খাচ্ছেন না কেনো স্যার?”
ফারিশ নিজের ডান হাত পিয়াশের দিকে ধরে বলে,
“হাত নাড়াতে পারছি না, তার উপর আবার ব্যান্ডেজ করা! খাবো কিভাবে?”
“আমি খাইয়ে দি…”

পিয়াশের কথা শেষ হওয়ার আগেই সাকিফ পিয়াশের পায়ে খোঁচা দিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“আরে ভাবি থাকতে তুই এতো চিন্তা করছিস কেনো?”
সাকিফের কথা শুনে নিধি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে সবার দিকে তাকায়, সবার সামনে নাকি তাকে খাইয়ে দিতে হবে! নিধির দিকে তাকিয়ে ফারিশ বলল,
“থাক, তার সমস্যা হলে খাইয়ে দিতে হবে না। আমি খাবো না!”
ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে বিরক্তি ভরা নয়নে তাকিয়ে বলল,
“অসুস্থ, তারপরেও ন্যাকামি গেলো না!”
বলেই নিধি ফারিশের সামনে থেকে খাবারের প্লেট টেনে নিয়ে তাকে খাইয়ে দেয়। নিধির করা কাজে সবাই হাসছে!

পিয়াশ-ইকরা নিজেদের বাড়ি চলে যায় খাবার খেয়ে, সাকিফ ওদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসে। ফারিশদের বাড়ি এখন পুরো ফাঁকা, কিছুক্ষণ আগেও সবার হইচই এ বাড়ি মেতে ছিল। সবাই চলে যাওয়াতে নিধির মনটা একটু খারাপ, সে বেলকনিতে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। ফারিশ রুমে শুয়ে আছে। হঠাৎ কাচ ভাঙার আওয়াজ শুনে নিধি তাড়াতাড়ি রুমে আসে।
“সমস্যা কি আপনার? বলেছি তো একা একা কোনো কাজ না করতে, তারপরেও কেনো একা একা গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়েছেন? আমার সাথে কথা বলতে আপনার লজ্জা লাগছে? এতো ইগো কিসের আপনার?”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়,

“শাট-আপ!”
“একটুও পরিবর্তন হননি আপনি! আগের মতোই আছেন!”
বলে নিধি কাচের টুকরোগুলো একজায়গায় জড়ো করে ডাস্টবিনে নিয়ে রাখে। রান্নাঘর থেকে গ্লাস নিয়ে এসে নিধি ফারিশকে পানি দেয়।
“এখন থেকে আমার সাথে রাগারাগি করলে ঘরে রান্না বন্ধ করে দিবো।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ হেসে ফেলল।
“অনলাইনে খাবার অর্ডার করলে পুরো হোটেলের খাবার বাড়িতে এনে দিয়ে যাবে, আর তুমি আমাকে রান্না বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছো!”

ফারিশের কথা শুনে নিধি চুপসে যায়। পরক্ষণে হেসে বলল,
“চুল টেনে দৌড় দিবো, কি করতে পারবেন তখন আপনি? দৌড়ে ধরতে যাবেন আমাকে? কিন্তু কিভাবে?”
নিধির কথা শুনে ফারিশের মন খারাপ হয়ে যায়।
“অসহায়ত্বের সুযোগ নিও না মেয়ে, একদিন আমার পা ঠিক হয়ে যাবে। তখন কি করতে পারবে তুমি?”
“তখনকার ব্যাপার তখন দেখা যাবে। এখন তো আমার দিন!”
বলেই হেসে ফেলল নিধি।

“একটা কথা বলবে নিধি?”
“হুঁ বলুন।”
“তুমি কি নিজের ইচ্ছে তে এসেছো বাড়ি?”
“হঠাৎ একথা কেনো?”
“বলো তুমি, তোমাকে জোর করে কিছুই করতে হবে না। তুমি যদি আমার কালো অতীত জেনে চলে যেতে চাও তাহলে চলে যাও। আমি তোমাকে আটকাবো না। ওইদিন অবন্তীর কথা বলাতে আমার মাথা ঠিক ছিল না, তোমার সাথে অনেক বাজে ব্যবহার করে ফেলেছি আমি, তুমি আমাকে ক্ষমা কোরো।”

“অতীত তো আমারও ছিল, আপনি তো মেনে নিয়েছেন। আপনি যদি স্বাভাবিক ভাবে আমাকে সবকিছু বলতেন তাহলে হয়তো আমি বাড়ি ছেড়ে যেতাম না।”
“মাথা ঠিক ছিল না আমার।”
“ছেলেদের মাথা সবসময় নষ্টই থাকে!”
“এরিই, অপমান করছো কিন্তু!”
“অপমান করছি না, যা সত্যি তাই বলেছি!”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে মুখ গোমড়া করে তাকিয়ে আছে।
“বৃষ্টি হচ্ছে বাহিরে।”
“তো? অসুস্থ শরীর নিয়ে ভেজার ইচ্ছে আছে নাকি?”
“না, বৃষ্টিবিলাস করতে ইচ্ছে করছে প্রিয় মানুষটার সাথে।”
“প্রিয় মানুষ কে? তাকে ডেকে নিয়ে আসুন, তারপর গল্প করুন, আমি নাহয় নিরব শ্রোতা হয়ে আপনাদের চা-কফি বানিয়ে দিবো।”

“মজা করছো?”
“কি মনে হয়?”
“জানি না, চলো বেলকনিতে যাই।”
“অসুস্থ শরীর নিয়ে আপনাকে কোথাও যেতে হবে না। রুমেই থাকুন।”
“না।”
বলেই ফারিশ বিছানা থেকে নামতে যায়, কিন্তু পায়ের ব্যথার জন্য হাটতে পারে না। নিধি ফারিশকে ধরে ফেলে বলল,

“এতো বেখেয়ালি কেনো আপনি?”
“বেখেয়ালি দেখেই তো তোমাকে আবার ফিরে ফেলাম, এক্সিডেন্ট হয়েছে দেখেই তো তুমি ফিরে এসেছো!”
“ধুর কি সব বলছেন! আমাকে ধরুন, আমি নিয়ে যাচ্ছি বেলকনিতে।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তাকে ধরে হেটে হেটে বেলকনিতে আসে। ফারিশ বাহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভালো লাগছে না।”
“কেনো?”

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ১২

“জানি না, জড়িয়ে ধরো, তাহলে ভালো লাগবে।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,
“আজাইরা আবদার!”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

শেষ বিকেলের প্রণয় শেষ পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here