শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ২

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ২
হালিমা চৌধুরী

ফারিশের কথা শুনে নিধি আর অয়ন দুজনেই নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়ন সাহস করে ফারিশ কে বলে,
“আসলে আমি… ”
ফারিশ অয়নের পুরো কথা না শুনে তার শার্টের কলার চেপে হুঙ্কার দিয়ে বলে,
“আসলে কি? তোর সাহস হয় কি করে ওর হাত ধরার?”
অয়ন ফারিশের হাত থেকে নিজেকে কোনো মতে ছাড়িয়ে নিয়ে হনহন করে সেই স্থান ত্যাগ করে। অয়ন চলে যেতেই ফারিশ নিধির দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলে,

“ভালো করে ৪ ঘন্টাও হয়নি তুমি এই বাড়িতে এসেছো, আর এখন থেকেই তুমি নাটক শুরু করে দিয়েছো? তোমাকে তো আমি ভদ্র ঘরের মেয়ে মনে করেছিলাম।”
“ভদ্র ঘরের মেয়ে দেখেই এসব ব্যবহার সহ্য করে যাচ্ছি।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,
“মুখে মুখে তর্ক করা আমার একদম পছন্দ না! আমার সাথে তর্ক করতে এসো না, এর পরিণাম ভালো হবে না বলে দিলাম মেয়ে!”
বলেই ফারিশ নিজের রুমে চলে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিধি আর ফারিশের বিয়ে ঘরোয়া ভাবেই হয়েছে, ফারিশের অনুষ্ঠান করার ইচ্ছে নেই সে বলে দিয়েছে। তাই ফারিশের দাদু রাহাত শিকদার একদম ঘরোয়া ভাবে নাতবউ কে তাদের বাড়িতে নিয়ে আসে।
রাত প্রায় সাড়ে ১১ টা বাজে। নিধি ফারিশের দাদি ফারুল বেগমের পাশে বসে আছেন। ফারুল বেগম নিধিকে ফারিশের রুমে দিয়ে আসেন। রুমে ডুকে ফারিশকে কোথাও দেখে না নিধি। তাই নিশ্চিন্তে বিছানার এককোনায় বসে সে। হঠাৎ করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে মাথা মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করে ফারিশ। নিধি কে বসে থাকতে দেখে ফারিশ ভ্রু কুঁচকে বলে,

“এত বড় বাড়ি! অথচ তোমাকে এই রুমেই নাকি থাকতে হবে, অসহ্য!”
হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠস্বর শুনে নিধি ফারিশের দিকে তাকায়। ফারিশের দিকে তাকিয়ে নিধি সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে যায়। নিধির করা কাজে ফারিশ নিধির সামনে গিয়ে বলে,
“এমন রিয়েক্ট করার কি আছে? যাও, কাবার্ড থেকে টি-শার্ট বের করে দাও।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি মুখ ভেঙচিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
“খাটাশ, শাওয়ার নিয়েছে ভালো কথা। এজন্য শুধু টাউজার পরে বের হবে কেনো? একেবারে টি-শার্ট পরে বের হওয়া যায় না? আবার বলে, এত রিয়েক্ট করার কি আছে!”

নিধি কে একা একা বিড়বিড় করতে দেখে ফারিশ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ভূতে ধরেছে নাকি? কি বলেছি কানে যায় নি তোমার?”
ফারিশের কথা শুনে নিধি উঠে গিয়ে কাবার্ড থেকে একটা গাঢ় লাল রঙের টি-শার্ট বের করে এনে ফারিশের সামনে ধরে। নিধির হাতে লাল রঙের টি-শার্টটা দেখে ফারিশ নাক ছিঁটকে বলে,
“দেখে শুনে আমার অপছন্দের টি-শার্টটাই বের করেছো! ষ্টুপিড কোথাকার!”
ফারিশের কথা শুনে নিধি জোর করে তার হাসি চেপে রাখে। সে ইচ্ছে করেই লাল রঙের টি-শার্ট টা বের করে দেয়। তাই সে আর কোনো কথা বলে না। ফারিশ নিধির দিকে একবার রক্তিম চোখে চেয়ে নিজেই কাবার্ড থেকে টি-শার্ট বের করে পরে নেয়।

ফারিশ ল্যাপটপ কোলের উপর নিয়ে বিছানায় বসে বসে কাজ করছে। রাত প্রায় ১ টা বাজতে চলেছে, এখনো ফারিশের কাজ শেষ হওয়ার কোনো নাম নেই। এদিকে নিধি ঘুমে হেলে পড়ছে। একসময় নিধি নিজের সব ভয় কে একপাশে জড়ো করে বলে,
“আপনি কি ঘুমাবেন না?”
নিধির কথা শুনে ফারিশ কান থেকে ব্লুটুথ খুলে ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কিছু বলেছো?”
ফারিশের কথা শুনে নিধি হতাশ হয়। নিধি কে চুপ করে থাকতে দেখে ফারিশ ল্যাপটপ বন্ধ করে নিধির সামনে বসে বলে,

“নাম কি তোমার?”
ফারিশের কথা শুনে নিধি অবাক হয় প্রচুর! যাকে বিয়ে করেছে তার নামটা পর্যন্ত জানে না ব্যাপারটা হাস্যকর না?
“কেনো আপনি জানেন না আমার নাম কি?”
“হুজুর বলেছিলো তোমার নাম। কিন্তু ভুলে গিয়েছি। এসব আজাইরা জিনিস মনে রাখার মত সময় মেহরাব ফারিশ শিকদারের নেই।”
“নিজের ইয়া লম্বা নাম মনে রাখার সময় ঠিকই আছে, আপনার যখন আমার নাম মনে রাখার সময় নাই, তাহলে আবার জিজ্ঞেস করছেন কেনো?”

নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,
“তর্ক কোরো না মেয়ে, শান্ত ভাবে কথা বলছি তো তাই আস্কারা পেয়ে যাচ্ছো! আমার নামটা লম্বা কে বলেছে তোমাকে? যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দাও সুন্দর করে।”
“মানহা ইসলাম নিধি।”
“কোন ক্লাসে পড়ো?”
“অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে।”
“অনেক ছোট তুমি।
ফারিশের কথা শুনে নিধি কিছুটা সাহস নিয়ে বলে,

“আপনার বয়স কত? মানুষ তো এখন বিয়ে করতে গেলে ১৬ বছরের বাচ্চা খুঁজে। সে হিসেবে আমি তো বুড়োই বলতে গেলে। সেখানে আপনি আমাকে ছোট বলছেন!”
“২৮ বছর আমার। সেই হিসেবে তুমি অনেক ছোট!”
ফারিশের কথা শুনে নিধি হতভম্ব হয়ে যায়। ফারিশ কে দেখতে ২৫ বছরের বেশি বয়সের মনে হবে না। কে বলবে এই লোকের ২৮ বছর!

“এতবড় একটা বাড়ি! অথচ আমার রুমেই নাকি তোমাকে থাকতে হবে, কি জ্বালায় পড়লাম!”
“এতই যখন সমস্যা তাহলে বিয়ে করেছেন কেনো? আপনি আমাকে বিয়ে না করলে আরো কয়েকদিন শান্তিতে থাকতে পারতাম।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তাকে ধমকের সুরে বলে,
“কেমন শান্তিতে থাকতে জানা ছিলো! বিয়ে করেছি কারণ আমার দাদা দাদির মতে, আমি নাকি বুড়ো হয়ে যাচ্ছি, আমার বিয়ে করার বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে। আমাকে নাকি সারাজীবন একাই কাটাতে হবে। তুমিই বলো, এসব অপমান কি মেনে নেওয়া যায়?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,
“আপনাদের কত সুখ, যা চান তাই পেয়ে যান সাথে সাথে। বিয়ে করতে চাইলেন, আর আমার পরিবার জোর করে আমাকে আপনার উপর চাপিয়ে দিলো। অথচ স্বামী তার স্ত্রীকে যে সম্মান টুকু করে তার একাংশ ও পাচ্ছি না আমি।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ কিছুটা অপমানিত বোধ করে। তাই আর রুমে দাড়িয়ে না থেকে বেলকনিতে চলে যায় সে। ফারিশ রুম থেকে চলে যেতেই নিধি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বিছানায় বসে। রুমে থেকেই নিধি জোরে বলে উঠে,

“আপনার যখন এতোই সমস্যা আমাকে নিয়ে, এখন আমি গিয়ে জঙ্গলে গিয়ে থাকবো নাকি? আপনি তো আমাকে সহ্য করতে পারছেন না!”
ফারিশ বেলকনি থেকে বলে,
“এখানে এসো।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি গুটিগুটি পায়ে হেটে বেলকনিতে আসে। নিধি আসতেই ফারিশ শান্ত সুরে বলে,
“মেয়েরা কি চায়? আমার কি না আছে? এতে করে তোমার জীবনটা আনন্দেই কেটে যাবে। তুমি চাইলে পড়াশোনা শুরু করতে পারো আবার, তোমার জন্য সব রকমই স্বাধীনতা আছে। তাহলে তুমি কেনো বললে আমি তোমাকে সম্মান করি না? আমার ধনসম্পদ কম নেই নিধি, মানুষের জীবনে এটাই সবচেয়ে মূল্যবান। তুমি শুধু আমাকে একটু একা থাকতে দাও।”

ফারিশের কথা শুনে নিধি হতাশ সুরে বলে,
“মেয়েরা চায়, তাদের স্বামী তাদের একটু কেয়ার করুক, সম্মান করুক, একটু সময় দিক। টাকার পিছনে ঘুরে ঘুরে মানুষের জীবন থেকে ভালোবাসা জিনিসটা হারিয়েই গেছে প্রায়।”

“তুমি যাই বলো, দিনশেষে সবাই চায় টাকাপয়সা, তুমি দেখো না নাকি যে, মেয়েরা টাকার জন্য আঙ্কেলের বয়সী লোকদের বিয়ে করতেও ছাড় দেয় না। এমন জেনারেশনে বাস করছি আমরা। তুমি পয়সা কামাও তো লোকে তোমাকে সম্মান দিবে, তোমার পয়সা আছে তো লোকে তোমার পায়ে জুতা পরিয়ে দিতেও রাজি হয়ে যাবে।”
“ভালোবাসা বলে যে একটা শব্দ আছে সেটা আপনি টাকার পিছনে ছুটে ভুলতে বসেছেন। আপনি টাকার পিছনে ছুটে মানুষ থেকে রোবটে পরিণত হচ্ছেন মিস্টার মেহরাব ফারিশ শিকদার।”

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ১

নিধির জোর গলায় বলা কথা শুনে ফারিশ রেগে নিধির দিকে এগিয়ে আসতে নিতেই নিধি পিছিয়ে যায়। পিছনে ঘুরে হাটতে গিয়ে নিধির পা মচকে পড়ে যেতে নিতেই ফারিশ তাড়াতাড়ি নিধিকে জড়িয়ে ধরে।

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here