শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩
হালিমা চৌধুরী

“আমাকে ছাড়ুন।”
নিধির কথা কানে পৌছাতেই হুশ ফিরে ফারিশের। ফারিশ তাড়াতাড়ি নিধি কে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যায়। নিধি বেলকনিতে আর দাড়িয়ে না থেকে রুমে চলে যায়। অনেক রাত হয়েছে, নিধি আর সাত-পাঁচ না ভেবে ফারিশের বিছানায় শুয়ে পড়ে।

ক্লান্ত প্রকৃতি, চারদিক নীরব নিস্তব্ধ! ব্যালকনির গ্রিল ধরে দাড়িয়ে একদৃষ্টিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে ফারিশ। বাহিরের মৃদু আলোয় বুঝা যাচ্ছে আকাশে মেঘ জমেছে। যে কোনো সময় শহর জুড়ে মুশলধারা বৃষ্টি নামতে পারে। ফারিশ অধির আগ্রহে বেলকনিতে দাড়িয়ে বৃষ্টির অপেক্ষা করছে। একসময় ফারিশের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। তবুও বৃষ্টি এলো না। তাই ফারিশ আর বেলকনিতে দাড়িয়ে না থেকে রুমে চলে আসে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রুমে এসে নিজের বিছানায় নিধি কে শুয়ে থাকতে দেখে প্রচুর বিরক্ত হয় ফারিশ। একপ্রকার রাগ নিয়ে ফারিশ নিধিকে ঘুম থেকে টেনে তুলতে গিয়ে দমে যায়৷ একদম নিষ্পাপ বাচ্চার মত গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে নিধি। ফারিশের আর সাহস হলো না এই সুন্দর মুহূর্ত কে নষ্ট করে দেওয়ার। এদিকে ফারিশেরও প্রচুর ঘুম পাচ্ছে, সকালে উঠে আবার অফিস যেতে হবে। তাই একপ্রকার বিরক্ত হয়ে ফারিশ কাউচে গিয়ে শুয়ে পড়ে।

জানালার গ্রিল পেরিয়ে সকালের স্নিগ্ধ নরম আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায় নিধির। পাখির কিচিরমিচির ডাক শুনা যাচ্ছে বাহির থেকে। নিধি আর শুয়ে না থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়৷ বাহিরে বের হতেই ফারুল বেগমের দেখা মিলে। নিধি ফারুল বেগমকে সালাম দিয়ে বলে,
“আমাকে কি করতে হবে দাদীমা?”
নিধির কথা শুনে ফারুল বেগম আহাম্মকের মত তার দিকে ছেয়ে আছে৷ নিধির কথা বুঝতে পেরে ফারুল বেগম নিধিকে ধমক দিয়ে বলে,

“আমি কি তোমাকে কাজ করার জন্য আমার নাতবউ করে এনেছি নাকি?”
ফারুল বেগমের কথা শুনে নিধি সৌজন্যে মূলক হাসি হেসে বলে,
“আমার এসবে অভ্যাস আছে দাদীমা, আমি সব কাজই করতে পারি। আমাদের বাড়িতে থাকতেও তো আমিই সব কাজ করতাম। আর বাড়ির বউদের কাজই তো হলো রান্না বান্না করা, সবার যত্ন নেওয়া।”
নিধির কথা শুনে ফারুল বেগম মৃদু হেসে বলেন,
“বাড়ির বউদের দায়িত্ব যদি থাকে সবার যত্ন নেওয়ার, তাহলে তার যত্ন নিবে কে? তোমাকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না মেয়ে, আমিও তো বাড়ির বউ৷”
“সমস্যা নেই, আমি সবার জন্য নাস্তা বানাই।”
বলেই নিধি রান্নাঘরে চলে যায় নাস্তা তৈরি করার জন্য। ফারুল বেগমও হতাশ চোখে নিধির কাজ দেখছে।

সকাল সাড়ে আটটা বাজে, নিধি রান্নাঘর থেকে সব খাবার এক এক করে এনে ডাইনিং টেবিলের উপর রাখে। রাহাত শিকদার আর ফারুল বেগম ডাইনিং টেবিলে এসে বসেন। নিধির চোখ শুধু ফারিশকেই খুঁজছে। অতঃপর অপেক্ষার ইতি টেনে কিছুক্ষণের মধ্যেই নিচে নামল ফারিশ। একদম অফিসের জন্য তৈরি হয়েই নিচে নেমেছে ফারিশ। ফারিশ কে দেখে রাহাত শিকদার চোখ কপালে তুলে বলেন,
“এই আজকের দিনও তোমাকে অফিস যেতে হবে দাদাভাই? লোকে কি বলবে বলো তো!”
রাহাত শিকদারের কথা শুনে ফারিশ রুষ্ট হয়ে বলল,

“লোকে কি বলেছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না দাদু ভাই, লোকের দয়াতে থাকছি না আমি। নিজের যোগ্যতার বলে আমি এতদূর এসে পৌছেছি, মানুষের কথা শুনলে তো আর এতদূর আসতে পারতাম না আমি।”
“তাই বলে তুমি বিয়ের পরদিনই অফিস যাবে? মেয়েটা কি ভাববে বলো তো তুমি!”
রাহাত শিকদারের কথা শেষ হতেই নিধি আগ বাড়িয়ে শুধালো,
“সমস্যা নেই দাদু, উনার যেহেতু কাজ আছে সেহেতু উনার কাজে আমার হস্তক্ষেপ না করাই উচিত।”
রাহাত শিকদার বুঝতে পেরেছে এমন ভাবে মাথা দোলাল। তিনি আবারও বলেন,
“নাস্তা করে নাও দাদাভাই।”

রাহাত শিকদারের কথা শুনে ফারিশ খেতে বসে। নিধি সবাইকে খাবার দিয়ে এসে ফারিশের পাশে দাড়ায়। নিধি ফারিশের প্লেটে পরোটা দিতে যেতেই ফারিশ তাকে বাঁধা দিয়ে বলে,
“এসব তেলযুক্ত খাবার আমি খাই না তোমার জানা নেই! আর এসব খাবার কে বানিয়েছে?”
ফারিশের ধমক খেয়ে নিধি মিনমিন করে বলে,

“আমি তো কালকেই আপনার বাড়িতে এসেছি, জানবো কি করে! জানলে তো আপনার জন্য অন্য খাবার বানাতাম!”
ফারিশ হোঁচট খেলো, সে তো ভেবেছে এই খাবার কোনো হেল্পিং হ্যান্ড বানিয়েছে। তাই এতো চেঁচামেচি করেছে।
“এই খাবার তুমি বানিয়েছো?”
ফারিশের শান্ত গলায় বলা কথা শুনে নিধি সস্থির নিশ্বাস ফেলে।
“জি।”

নিধির কথা শুনে ফারিশ হাতঘড়ি দেখে, দেরি হয়ে যাচ্ছে এমন ভাব করে সে বলে,
“দেরি হয়ে যাচ্ছে, বানিয়ে যখন ফেলেছো তখন তাড়াতাড়ি খাবার দাও।”
ফারিশের কথা শুনে নিধির ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। সে পরম আবেশের সাথে ফারিশের প্লেটে খাবার বেড়ে দেয়। খাবার খাওয়া শেষ করে ফারিশ তার অফিসের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে।

সারাদিন কেটে যায়, কিন্তু নিধিদের বাড়ি থেকে কেউ আসে না তাকে নিতে। নিধি ভেবেছে হয়তো তার মা সব ব্যবধান ভুলে গিয়ে হলেও তার কাছে ছুটে আসবে৷ কিন্তু নিধিকে ভুল প্রমানিত করে তার বাড়ি থেকে কেউ আসে না আর। এতে নিধির একটু খারাপ লাগলেও পরক্ষণে সব খারাপ লাগাকে একপাশে রেখে ফারিশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে। অয়নের সাথে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরে নিধি তো ঠিক করে ফেলেছে আর বিয়েই করবে না। পুরো পুরষ মানুষের উপর থেকেই তার বিশ্বাস উঠে যায়।

যেখানে অয়ন নিধিকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না, সেখানে সেই অয়ন এসেই তার সাথে ব্রেকআপ করে ফেলে! এতে তো মন ভাঙ্গারই কথা! কিন্তু ফারিশের সাথে বিয়ে হয়েছে মাত্র ১ দিন হয়েছে, এই একদিনেই ফারিশের জন্য নিধির মনে আলাদা একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। একেই হয়তো বলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, যা না চাইতেও ভালবাসায় রুপান্তর হয়। হঠাৎ কলিং বেল এর আওয়াজ শুনে নিধি রুম থেকে বের হয়ে সদর দরজাটা খুলে দেয়৷ ফারিশ এসেছে, নিধি একবার ফারিশকে ভালো করে পরখ করে নেয়, মুখে রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে ফারিশের, মনে হচ্ছে কোনো কারণ নিয়ে অনেক রেগে আছে। নিধিকে দরজার সামনে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ফারিশের মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়৷

“দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকবে নাকি সরবে? আজাইরা সময় থাকলেই মানুষ বাহিরের ব্যাক্তিকে ঘরে ডুকতে না দিয়ে দরজার সামনেই দাড়িয়ে থাকে।”
ফারিশের ধমক খেয়ে নিধি দরজার সামনে থেকে সরে দাড়ায়। নিধি সরে যেতেই ফারিশ হনহন করে রুমে চলে যায়। নিধিও ফারিশের পিছন পিছন রুমে আসে। রুমে এসেই নিধি অবাক হয়ে যায়। পুরো রুম এলোমেলো হয়ে আছে। ফারিশের দেখা কোথাও মিলে না। তাই নিধি চুপচাপ রুম গোছানো শুরু করে। ফারিশ বেলকনি থেকে রুমে এসে আবার সব গোছগাছ দেখে নিধির দিকে তাকায়। নিধির দিকে তাকিয়ে মায়া হলেও ফারিশ নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারে না। ফারিশ নিধির কাছে গিয়ে তার হাত চেপে ধরে বলে,
“তুমি কি নাটক করছো আমাদের পরিবারের সাথে?”

ফারিশের কথা শুনে নিধি তো পুরো অবাক হয়ে যায়। নিধি রেগে আঙুল তুলল এবার,
“ কি বলছেন আপনি? বিয়ে হয়েছে ধরে আপনার অত্যাচার সহ্য করছি! আমাকে কি আপনি পুতুল পেয়েছেন নাকি যে, যখন তখন এসে রাগ ছাড়তে পারবেন? আমার কি মন বলতে কিছু নেই নাকি যে আমার খারাপ লাগবে না?”
ফারিশ নিস্পৃহ, নিধির হম্বিতম্বি তার গায়ে লাগেনি। ফারিশ চোখ বন্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে বলে,
“অয়ন তোমার পূর্ব পরিচিত না? ওর সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক?”

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ২

ফারিশেে কথা শুনে নিধি পুরো চুপসে যায়। মূহুর্তের মধ্যে স্বর পাল্টে এলো নিধির। যেটার ভয় কালকে থেকে পাচ্ছিলো, সেটাই ঘটেছে অবশেষে!

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here