শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ৬

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ৬
হালিমা চৌধুরী

ইকবাল খান সোফায় বসে বসে খবরের কাগজ পড়ছেন। তিনি নিধিকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“ফারিশ ডেকেছে, তাড়াতাড়ি যাও নয়তো আবারো রেগে যাবে।”
ইকবাল খান এর করে শুনে নিধি তার হাতের কাজ শেষ করে রুমে আসে। রুমে এসে নিধি পুরো অবাক হয়ে যায়, ফারিশ একদম রেডি হয়ে বসে আছে।

“অফিসে যাবেন?”
নিধির কথা শুনে ফারিশ ভ্রু উঁচিয়ে তার দিকে তাকায়।
“হ্যাঁ, আমি তো অফিসে পাঞ্জাবি পরে যাই! ষ্টুপিড কোথাকার!”
ফারিশের কথা শুনে চুপসে যায় নিধি। নিধি কন্ঠ শৃঙ্গে তুলে বলে,
“এভাবে বলার কি আছে?”
ফারিশ ছোট্ট শ্বাস ফেলল,
“খাবার টেবিলে বলেছি না শপিং এ যাবো? এখনো রেডি হওনি কেনো?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিধির মাথার উপর দিয়ে গত হচ্ছে সব, কিছুই বুঝতে না পেরে নিধি ফারিশের দিকে তাকিয়ে আছে। যে ছেলে বিয়ের দিনও মিটিং মিস দেয় না, সেই ছেলে নাকি অফিসে না গিয়ে তাকে নিয়ে শপিং এ যাবে! নিধির মনের অবস্থা বুঝতে পেরে ফারিশ বিস্তর শ্বাস ঝেড়ে বলল,
“অয়ন কে কোনো প্রকার সাইড দেওয়া যাবে না, ওর মনে কি চলছে সেটা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছি। ওকে যেহেতু বলে ফেলেছি আজকে তোমাকে নিয়ে বেরোবো, তাই আর দেরি কোরো না। রেডি হও।”
নিধি চুপ করে রইলো, নিধি কে চুপ করে থাকতে দেখে ফারিশ মিইয়ে গেলো ফের। গলায় গম্ভীরতা বজায় রেখে ফারিশ বলে,

“যা বলছি তাই করো মেয়ে, আমার আর সহ্য হচ্ছে না তোমার ঘাড়ত্যাড়ামি গুলো! আমি যেসব পছন্দ করি না তুমি সেসবই করছো। তুমি কেনো সকালে অয়ন কে খাবার দিতে গিয়েছো? আমাকে রাগিয়ে দিও না, পুরনো ভুলগুলো কিন্তু আমি ভুলিনি।”

ফারিশের কথার অন্তর্জাল থেকে বাঁচতে নিধি তাড়াতাড়ি রেডি হতে চলে যায়, ফারিশ আর দাঁড়িয়ে না থেকে গাড়িতে গিয়ে বসে। মিনিট পনেরোর মধ্যেই নিধি বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে আসছে। ফারিশ নিধির দিকে চোখ তুলে তাকায়, পার্পেল কালারের একটা কুর্তি পরেছে নিধি। চোখে কাজল, আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, চুলগুলো খোলা। এতেই মারাত্মক সুন্দর লাগছে নিধিকে। এই প্রথম ফারিশ নিধির দিকে তাকিয়ে তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। নিধিকে দেখে নিজের অজান্তেই ফারিশের ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।
“হাসছেন কেনো?”

নিধির কথা শুনে হুশ ফিরে ফারিশের, সে গাড়ি থেকে বের হয়ে এসে গাড়ির দরজা খুলে দেয়। নিধি আর কোনো কথা না বলে গাড়িতে গিয়ে বসে। নিধি গাড়িতে উঠতেই ফারিশ গাড়ি স্টার্ট দেয়৷

মাঝ রাস্তায় ফারিশকে হঠাৎ গাড়ি থামাতে দেখে নিধি তার দিকে অবাক চোখে তাকায়। নিধিকে কিছু না বলেই ফারিশ গাড়ি থেকে বের হয়ে একটা দোকানে ডুকে। নিধি অসহায় দৃষ্টিতে ফারিশের যাওয়ার পানে চেয়ে আছে। এই লোক কখন কি করে বুঝাই মুশকিল!
দুই মিনিটের মধ্যেই ফারিশ আবার গাড়িতে এসে বসে, নিধির দিকে ফারিশ একটা মাস্ক বাড়িয়ে দিয়ে বলে,

“মাস্কটা পরে নাও।”
নিধি ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
“কি দরকার মাস্ক পরার? মাস্ক পরলে আমার দমবন্ধ হয়ে আসে।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ চটে বলল,
“মাস্ক পরতে বলেছি মানে তুমি পরবে!”
নিধি গাল ফুলিয়ে ফারিশের হাত থেকে মাস্কটা নেয়। নিধিকে গাল ফুলিয়ে থাকতে দেখে ফারিশ খুব ধীরস্থির বলল,
“অয়নও যাচ্ছে আমাদের সাথে, তাছাড়া বাহিরে কত মানুষ থাকবে।”
ফারিশের কথা শুনে কিছু বলল না নিধি, সে নিরব দৃষ্টিতে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে৷

“অয়নের সাথে একদম কথা বলবে না তুমি।”
নিধি সন্তপর্ণে মাথা নাড়াল, সে মহাচিন্তিত কন্ঠে বলল,
“অয়ন কে সাথে নেওয়ার কি খুব দরকার ছিল?”
নিধির কথা শুনে বিরক্ত হয় ফারিশ।
“আমি কি করবো না করবো সেটা কি তোমার থেকে অনুমতি নিয়ে করতে হবে নাকি?”
ফারিশের কথা শুনে চুপসে যায় নিধি, তার আর কোনো কথা বলার সাহস হয় না। নিধিকে চুপ করে থাকতে দেখে ফারিশ রুষ্ট সুরে বলে,

“অয়ন আমার জানের দোস্ত, তাকে দেখাতে হবে না আমি আমার বউ কে কতটা ভালোবাসি, আমরা কতটা সুখে আছি সেটা দেখে অয়নের থেকে খুশি কেউ হবে না আমি শিওর।”
বলেই বাঁকা হাসে ফারিশ। নিধি ফারিশের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
“এসব করা কি খুব বেশি দরকার? পুরনো ক্ষতকে জাগিয়ে তুলতে চান আপনি?”
ফারিশ দৃঢ় কন্ঠে বললো,

“আমি তো শান্ত ভাবেই সবার সাথে চলতে চেয়েছি, অয়নই তো আমাকে রাগিয়ে দিয়েছে, আমি তো প্রথমে ওর সাথে এসব করতে চাইনি। অয়ন বুঝে গেছে, আমাদের সম্পর্ক টা আর দশটা সাধারণ দম্পত্তির মত না। তাই তো আমাদের পিছনে উঠে পড়ে লেগেছে সে। এখন তাকে বুঝাতে হবে তো আমাদের সম্পর্কটা একদম স্বাভাবিক আছে। তাছাড়া অয়ন নিজে থেকেই তো আমাদের সাথে যেতে চেয়েছিল।”
ফারিশের কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিধি, সে বিরস মুখে বলল,

“সবকিছু যখন এতোই বুঝেন, তাহলে নাটক না করে আমাদের সম্পর্কটাকে স্বাভাবিক করে নিলেই তো হয়।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ জোরে গাড়ি ব্রেক কষে, ফারিশ বিস্তর শ্বাস ঝেড়ে বলল,
“বুঝবে না তুমি।”
বলেই ফারিশ গাড়ি থেকে নেমে নিধিকেও নামতে বলে, নিধি বাধ্য মেয়ের মত গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অয়নের আগমন ঘটলো। নিধিকে দেখেই অয়ন হাত বাড়িয়ে বলল,
“হাই।”

নিধি হাত বাড়িয়ে দিতেই ফারিশ তার দিকে তাকায়, ফলে নিধি আবার হাত গুটিয়ে নেয়। নিধির কাজে অয়ন কিছুটা অপমানিত বোধ করে। তবুও সে মুখে হাসি বজায় রেখে বলল,
“কেমন আছেন ভাবি?”
নিধি একটু চুপ থেকে বলল,
“ভালো আছি।”
অয়নের ঢলে পড়া ভাব দেখে ফারিশের মেজাজ সপ্তম আকাশে পৌছে যায়। ফারিশ নিধির এক বাহু জড়িয়ে ধরে বলে,
“চলো যাই, তাড়াতাড়ি আবার বাড়ি ফিরতে হবে।”
ফারিশের কাজে মনে মনে অয়ন প্রচুর বিরক্ত হয়। তবুও সেটা প্রকাশ না করে ফারিশ আর নিধির সাথে তাল মিলিয়ে মলের ভিতরে যায়।

নিধি দাড়িয়ে দাড়িয়ে একটা থ্রিপিস কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। অয়ন নিধির থেকে একটু দূরে দাড়িয়ে আছে, তা দেখে ফারিশ নিধির পাশে এসে বলল,
“এখান থেকে চলো নিধি, তুমি বরং শাড়ি দেখো।”
অয়ন ফারিশকে বাঁধা দিয়ে বলল,
“আরে থাক না, ভাবি কে কিন্তু থ্রি-পিস এই দারুণ মানায়।”
অয়নের কথা শুনে ফারিশ তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়, পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অয়ন মিনমিন করে বলে,
“আমি বরং আমার জন্য কিছু দেখি।”
বলেই অয়ন চলে যায়, অয়ন যেতেই নিধি ফারিশের উপর রেগে গিয়ে বলে,

“আপনারা কি আমাকে খেলনা পেয়েছেন নাকি? মন থেকে তো কিছুই করছেন না, এই নাটক টা আর কতদূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন আপনি? আর কতক্ষণ আমাকে এসব নাটকে সায় মিলিয়ে চলতে হবে?”
নিধির কথা শুনে ফারিশ হেসে নিধির কপালে আলতো ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে বলে,
“আমার উপর রেগে আছো, তাই বলে এখানেই রাগারাগি করবে নাকি সুইটহার্ট?”
ফারিশের কর্মকান্ডে বিস্মিত হয়ে যায় নিধি, কিছু বুঝে উঠার আগেই কি থেকে কি হয়ে গেলো! নিধিকে আরেকটু অবাক করে দিয়ে ফারিশ তার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ৫

“গলা উঁচিয়ে কথা বলবে না আমার সাথে, পরিণাম ভালো হবে না বলে দিলাম।”
ফারিশের শান্ত গলায় দেওয়া ধমক খেয়ে নিধি চুপসে যায়। মনে মনে ফারিশ কে হাজারো বকাঝকা দিতে থাকে সে। এদিকে ফারিশ আর নিধিকে এতো কাছাকাছি দেখে রাগে দেয়ালে একটা ঘুষি মারে অয়ন, সে ফারিশ আর নিধির থেকে কিছুটা আড়ালে লুকিয়ে তাদের দেখছিলো।

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here