শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ৮

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ৮
হালিমা চৌধুরী

আকাশ থেকে ঘোলাটে মেঘের আবরণ সরে গিয়ে রোদের দেখা মিলে। নিধি ফারিশকে খাবার খাইয়ে দিয়ে রান্নাঘরে যায় প্লেট রাখতে। রান্নাঘর থেকে রুমে এসে নিধি তো পুরো অবাক হয়ে যায়।
“আপনি আসলে কি বলুন তো! এই অবস্থায় কেউ অফিস যায় নাকি?”
“কেউ যায় না, আমি যাবো।”
নিধি এবার আর চুপ করে থাকতে পারলো না, সে ফারিশ কে হুমকি দিয়ে বলল,
“আমি এখনই গিয়ে দাদু কে ডেকে আনবো। উনিই দেখবে আপনাকে।”

ফারিশ ভিষণ কঠিন ধাঁচের মানুষ, তাই নিধির কথাতে ফারিশের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। তাই নিধি বাধ্য হয়ে রাহাত শিকদার কে ডেকে নিয়ে আসে। রাহাত শিকদার ফারিশ কে আদেশ দিয়ে বলেন,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“দাদু ভাই, তুমি পুরোপুরি সুস্থ হওনি এখনো, তাই এই অবস্থাতে তোমাকে অফিস যেতে হবে না।”
রাহাত শিকদারের কথাকে কানে নিলো না ফারিশ। সে নিজের মত রেডি হতে ব্যাস্ত ভেনেটির সামনে দাড়িয়ে। রাহাত শিকদার অপেক্ষায় ছিল কখন ফারিশের দৃষ্টি তার দিকে পড়বে। কিন্তু ফারিশ ভুলেও তার দিকে তাকায় না। শেষে রাহাত শিকদার ব্যর্থ হয়ে বলেন,

“আমার অফিস তোমাকে আর সামলাতে হবে না দাদু ভাই, কালকে থেকে মেয়েটা অক্লান্ত পরিশ্রম করে তোমার সেবা যত্ন করেছে, তুমি তার বিন্দুমাত্র মূল্য না দিয়েই এই অসুস্থ শরীর নিয়ে এখন আবার অফিস যাচ্ছো! তুমি আবার অসুস্থ হয়ে গেলে তো তখন আবার বেশিদিন বিছানায় পড়ে থাকতে হবে, তারচেয়ে বরং এখন দুই একদিন রেস্ট নাও, যেনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাও।”

রাহাত শিকদার এর কথা শুনে কিছু বলে না ফারিশ। সে নিধির ঘন পাপড়ির চোখ দুটোর দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে, তা বুঝতে পেরে নিধি রাহাত শিকদারের পিছনে লুকিয়ে যায়। কিছুক্ষণ গম্ভীর থেকে ফারিশ একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“তোমার কথাই রইলো, এবার খুশি মনে দিন কাটাও তুমি।”

ফারিশের কথা শুনে হাসেন রাহাত শিকদার। তিনি আর রুমে না থেকে চলে যান, নিধিও রাহাত শিকদারের পিছন পিছন যেতে নিতেই ফারিশ নিধির হাত চেপে ধরে বলল,
“আমি না অসুস্থ, তা আমার সেবা না করে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?”
ফারিশের কথা শুনে চুপসে যায় নিধি, সে ফারিশের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যাস্ত, কিন্তু ফারিশের শক্ত বাহুবন্ধন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয় নিধি।

“অসুস্থ মানুষ কখনো এত পাগলামি করে না, আপনার গায়ে অনেক শক্তি, বাপ্রে!”
নিধির কথা শুনে ফারিশ হাসে, সে নিধিকে ছেড়ে দিয়ে বলে,
“নিয়মিত জিমে যাই, শক্তিশালী তো হবোই।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি মুখ ভেঙচিয়ে বলল,
“শক্তিশালী দেখেই তো সকালে পড়ে যেতে নিয়েছেন, রাতে আবার আমার সব শক্তি ব্যয় করে আপনাকে সামলাতে হয়েছে আমাকে।”

নিধির কথার জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না ফারিশ, সে সুন্দর করে বিছানায় ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে শুয়ে পড়ে। ফারিশ নিধিকে নিজের কাছে ডেকে বলে,
“দেখো তো জ্বর আছে কি না!”
নিধি ফারিশের কপালে হাত দিয়ে বলে,
“হ্যাঁ আছে, আপনার ডক্টর এর কাছে যাওয়া উচিত।”
“ঘরে আমার ব্যাক্তিগত ডক্টর থাকতে আমি কেনো বাহিরের ডক্টর এর কাছে যাবো?”
ফারিশের কথা শুনতে না পেয়ে নিধি তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়,

“কি বলেছেন আপনি?”
“বলেছি, এই সামান্য জ্বরের জন্য ডক্টর এর কাছে যাওয়া লাগবে না। একদিন রেস্ট নিলেই সুস্থ হয়ে যাবো।”
“আপনার ইচ্ছে, থাকেন আপনি।”
বলেই নিধি চলে যেতে নেয়, ফারিশ নিধির হাত চেপে ধরে তাকে আঁটকে বলে,
“আমি তো আজকের দিন অফিসেই কাটাতাম, কিন্তু আমি অসুস্থ বলে তুমি জোর করে বাড়িতে থাকতে বাধ্য করলে আমাকে। সো, আজকে সারাদিন তুমি আমার চোখের সামনে থেকেও নড়বে না, অসুস্থ স্বামীর সেবা করো।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি তার দিকে অবাক চোখে তাকায়! সে চট করেই বলে বসল,

“অসুস্থ হলে বউ প্রয়োজন, আর কোনো কাজে বউ কে পাত্তাও দেওয়া হয় না।”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে, এদিকে নিধি চট করে কি বলে বসল সেটা বুঝতে পেরে সে নিজের মুখ চেপে ধরে। ফারিশ তার দিকে বক্র চোখে তাকাতেই নিধি কিছুটা অপ্রস্তুত মুখে বলল,
“আমার হাত ছাড়ুন, পরে আসছি আমি। এখন কিছু কাজ আছে।”
নিধির কথা কে কানে না নিয়ে ফারিশ নিধি কে বিছানায় বসতে বলে। নিধি গুটিগুটি পায়ে হেটে এসে বিছানায় বসে। ফারিশ নিধির কোলে মাথা রেখে বলে,
“মাথা ব্যথা করছে।”
ফারিশ ঠিক কি বলতে চেয়েছে তা বুঝতে ফেরে নিধি ফারিশের মাথা টিপে দিতে থাকে আলতো হাতে।

তপ্ত দুপুরের অসহ্যকর গরমে ঘেমে একাকার হয়ে যায় ফারিশ। নিধি সযত্নে ফারিশের শরীর থেকে ব্লাঙ্কেটটা সরিয়ে দেয়। জ্বর কমে গেছে, যার ফলে এতো ঘাম দিচ্ছে ফারিশকে। হঠাৎ দরজা খুলে অয়ন প্রবেশ করল রুমে। অয়ন কে দেখে নিধি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়, দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে ফারিশের ও ঘুম ভেঙে যায়। ফারিশ নিধির কোল থেকে মাথা সরিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে বলে,
“কি রে ভাই, তোর কোনো কমনসেন্স নাই? একটা সদ্য বিবাহিত দম্পতির রুমে যে নক করে ডুকতে হয় সেটা তো একটা ছোট বাচ্চাও জানে।”
ফারিশের কথা শুনে অয়ন কিছুটা অপমানিত বোধ করে, কিন্তু সে-সব কে পাত্তা না দিয়ে সে গিয়ে বিছানায় বসে ব্যাস্ত গলায় বলল,

“অসুস্থ হলি কিভাবে? নিজের খেয়াল রাখবি তো!”
অয়নের কথা শুনে ফারিশ বিরক্ত গলায় বলল,
“২০২২ সালে টাইফয়েড হয়েছে, তখনও তো একবার দেখতে এলি না। ২৪ এ যখন সামান্য জ্বর হলো তখন পইপই করে চলে এলি! আসলে তোর মতলবটা কি রে বলতো? তছাড়া তোর ভাবি আছে তো আমার দেখাশুনা করার জন্য।”

ফারিশের ঠান্ডা মাথায় করা অপমান শুনে চুপসে যায় অয়ন। তবুও হাসি মুখে বলে,
“বন্ধুর বিপদে তো বন্ধুই এগিয়ে আসবে নাকি?”
অয়নের কথা শুনে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে ফারিশ।
“নিধি, দাদা ভাই কে ডেকে দাও, অয়ন গল্প করুক ওদের সাথে।”
ফারিশের কথা শুনে অয়ন চট করে বলে বসল,
“ওরা তো বাড়িতে নেই।”
অয়নের কথা শুনে ফারিশ তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
“কই গেছে?”
“জানি না।”

অয়নের প্রতি প্রচুর বিরক্ত ফারিশ, না জানি এখন আবার কোন কুবুদ্ধি নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেছে এই ছেলে, ছোট বেলা থেকেই অয়ন ছিল সুবিধাবাদী মানুষ। যেখানে নিজের লাভ হবে সেখানেই ওঁত পেতে থাকবে।
“নিধি, খাবার দাও তো। খুধা লেগছে, অয়ন চল ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসি।”
ফারিশের কথা শুনে বাধ্য মেয়ের মত নিধি সবাইকে খাবার দিতে যায়। সবাইকে খাবার বেড়ে দিয়ে নিধি একপাশে দাড়ায়। তা দেখে ফারিশ ভ্রু কুঁচকে বলল,

“দাড়িয়ে আছো কেনো? বসো, আমাকে খাইয়ে দিতে হবে সেটা কি ভুলে গেছো নাকি?”
ফারিশের ধমক খেয়ে নিধি অয়নের কথা আড়চোখে তাকিয়ে বলল,
“এখানে?”
নিধির কথা শুনে অয়ন চট করে বলে বসল,

“ভাবির যখন ভালো লাগছে না তখন নিজের হাতেই খেয়ে নে, নাহলে আমি তোকে খাবার খাইয়ে দিই?”
অয়নের কথা শুনে নিধি জোরে হেসে উঠে, তা দেখে ফারিশ নিধির দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলে,
“আমার বউ থাকতে আমি কেনো অন্য কারো হাতে খাবার খাবো? নিধি যা বলেছি তা কি তুমি করবে?”
ফারিশের কথা শেষ হতে না হতেই নিধি ফারিশের পাশের চেয়ারটা টেনে বসে পড়ে তাকর খাবার খাইয়ে দেওয়ার জন্য। খাবার খেতে খেতে ফারিশ বলল,

“আজকের রান্না টা অনেক মজা হয়েছে!”
ফারিশের কথা শুনে অয়ন বলল,
“কই অতো মজা তো হয়নি।”
অয়নের কথা শুনে ফারিশ তার দিকে বিরক্তি ভরা নয়নে তাকিয়ে বললো,

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ৭

“মজা লাগবে কিভাবে তোর কাছে? তুই তো আর তোর বউ এর হাতে খাবার খাচ্ছিস না। সারাদিন ক্লাবের মেয়েদের সাথে ডিনার করে করে তোর রুচিটাই নষ্ট হয়ে গেছে। তাই খাবারের ভালো টেস্ট পাচ্ছিস না। খাবারে ভালো টেস্ট পাওয়ার জন্য বিয়ে কর, তারপর বউয়ের হাতে খাবার খেয়ে দেখিস খাবারে কেমন আলাদা একটা টেস্ট আসে।”
ফারিশের কথা শুনে নিধি হতভম্ব হয়ে যায়, এই লোক কি আসলেই পাগল হয়ে গেছে কি না তাই ভাবছে সে!

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here