শেষ বিকেলের প্রণয় শেষ পর্ব 

শেষ বিকেলের প্রণয় শেষ পর্ব 
হালিমা চৌধুরী

১ মাস পর,
ফারিশ দীর্ঘদিন বেড রেস্টে থাকার কারণে অফিসে আসতে পারেনি, তাই অফিসের কিছুটা দায়িত্ব অয়নের উপরই ছিল। রাহাত শিকদার অয়নের উপর দায়িত্ব টা দেয়। কয়েকদিন ধরেই অফিসের হিসাবে গড়মিল দেখা যায়। ফারিশ তা বুঝতে পেরে অয়নের উপর নজর রাখতে দেয় পিয়াশ আর সাকিফ কে। উপযুক্ত প্রমাণ তৈরি করতে সক্ষম হয় পিয়াশ আর সাকিফ, অয়ন ফারিশদের অফিসের টাকা লুটপাট করে তার পকেট মোটা করেছে। তাই অয়নকে পুলিশে দেওয়া হয়। ফারিশের টাকা লুটপাট হলেও সে অয়নকে জেলে ডুকাতে পেরে খুশি প্রচুর। সে অয়ন কে দু-চোখেও দেখতে পারে না, যখন সে নিধিকে উল্টাপাল্টা বুঝিয়েছে তখন থেকে।

রাত প্রায় দশটা বাজে, ফারিশ বাহিরে থেকে এসেই রুমে চলে যায়। এদিকে নিধি যে তারজন্য ড্রয়িং রুমে বসে অপেক্ষা করছে সেদিকে তার নজর নেই। তাকে দেখেও না দেখার অভিনয় করে ফারিশ চলে যাওয়াতে নিধি একটু কষ্ট পায়। সে কিছু না বলে মুখে হাসি বজায় রেখে রুমে যায়। ফারিশ দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফোনে কথা বলছে রুমের এককোনায়। নিধি কে দেখে কল কেটে দেয় ফারিশ, তা দেখে নিধি ভ্রু কুঁচকে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ডিস্টার্ব করলাম নাকি?”
নিধির কথা শুনে ফারিশ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“বুঝেছো যখন, তাহলে দাড়িয়ে আছো কেনো?”
ফারিশের এমন আচরণ দেখে নিধি চুপসে যায়। নিধি ফারিশের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“কি হয়েছে আপনার? এমন করে কথা বলছেন কেনো?”
নিধির কথার জবাব দেয় না ফারিশ, সে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে বসে। ফারিশ নিধি কে ইগ্নোর করছে বুঝতে পেরে সে আর ফারিশ কে বিরক্ত না করে বিছানা তৈরি করে শুয়ে পড়ে।

ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে ফারিশ, রাত প্রায় ১১ টা বাজে। নিধি রুমে ঘুমাচ্ছে, এই সুযোগে ফারিশ চুপিচুপি ছাদে চলে আসে। ছাদে একপাশে অনেকগুলো গোলাপ ফুল জড়ো করে রেখেছে ফারিশ, সে ফোন হাতে পায়চারি করছে। হঠাৎ ফারিশের ফোন বেজে উঠে, সে তড়িঘড়ি করে কল রিসিভ করে বাসার নিচে যায়। একজন লোক এসে তার হাতে মাঝারি সাইজের একটা বাক্স ধরিয়ে দেয়। ফারিশ তা নিয়ে তাড়াতাড়ি আবার ছাদে চলে যায়। তার মনটা চটপট করছে, সে জানে নিধি কষ্ট পেয়েছে তার ব্যবহারে, সে ইচ্ছে করেই নিধির সাথে এমন আচরণ করেছে।

ফারিশ ছাদে এসে তাড়াতাড়ি ছাদের একপাশে ফুল দিয়ে সাজায়। একটা ছোট টেবিলের উপর কেক বের করে রেখে তার চারপাশে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দেয়। গোলাপের পাপড়ির উপরে ছোট ছোট ক্যান্ডেল গুলো জ্বালিয়ে দেয় ফারিশ। অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই অন্ধকার জায়গাটা ক্যান্ডেলের আলোতে উজ্জ্বল হয়ে যায়। ছোট টেবিলের উপর ফুল আর ক্যান্ডেল দিয়ে সাজিয়ে মাঝখানে কেক রাখা। পুরো ছাদ অন্ধকার, শুধু টেবিলে ছোট ছোট ক্যান্ডেল গুলো জ্বলছে। এতে যেনো ছাদের সৌন্দর্য টা ফুটে উঠেছে।

ফারিশ ঘড়িতে সময় দেখে, ১১:৫৫ বাজে। সে আর দাড়িয়ে না থেকে রুমে যায়। রুমের সামনে এসে তো ফারিশ হতভম্ব হয়ে যায়। রুমে দরজা আটকানো! সে তো রুম থেকে বের হওয়ার সময় নিধি ঘুমেই ছিল। তাহলে কে দরজা আটকালো? এদিকে বারোটা বাজার আর মাত্র ৪ মিনিট বাকি আছে, সে যে এতোক্ষণ কষ্ট করে সবকিছু ডেকোরেশন করেছে সবকিছু কি বিফলে যাবে? এসব ভেবেই আঁতকে উঠল ফারিশ। সে দরজায় নক করে, কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ নেই। ফারিশ এবার গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

“নিধি, আমি জানি তুমি জেগে আছো। তাড়াতাড়ি দরজা খুলো।”
তবুও কোনো সাড়াশব্দ নেই, ফারিশ হতাশ চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। আজকে নিধির জন্মদিন, সেই ভেবেই ফারিশ তার জন্য সারপ্রাইজ হিসেবে ছাদে কেক এনে সাজিয়েছে ফুল দিয়ে। এদিকে নিধি কে ইগ্নোর করার জন্য যে সে এত রেগে যাবে সেটা কল্পনাও করতে পারেনি ফারিশ। সে আর কিছু ভাবতে পারলো না, বারোটা বাজতে আর মাত্র ২ মিনিট বাকি আছে। ফারিশ কিছু একটা ভাবলো, তারপর কঠিন গলায় বলল,
“তুমি কি চাও এত রাতে আমি বাহিরে রাত কাটাই? এত রাতে গাড়ি ড্রাইভ করে আবার কোনো দূর্ঘটনা ঘটাই এটাই তো চাও?”

ফারিশ বলতে দেরি, দরজা খুলতে দেরি হয় না নিধির। সে দরজা খুলে গুটিশুটি মেরে একপাশে দাড়িয়ে আছে। ফারিশ লক্ষ করলো নিধির চোখের কোনায় পানি। সে আর কিছু না ভেবেই নিধি কে কোলে তুলে নেয়। ফারিশের কাজে তো হতভম্ব হয়ে যায় নিধি। সে ফারিশ কে খামচে ধরে বলল,
“আরে কি করছেন আপনি? মাথা খারাপ হয়েছে নাকি?”
নিধির কথা শুনে ফারিশ তার দিকে গম্ভীর চোখে তাকায়। তা দেখেই নিধি চুপসে যায়, আর কিছু বলার সাহস হয় না তার। ফারিশ নিধিকে ছাদে নিয়ে এসে নামিয়ে দেয়। তারপর নিধির চোখ ধরে ফারিশ টেবিলের সামনে নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। তারপর ফারিশ একটা রিং নিয়ে হাটু গেয়ে বসে বলল,

“শুভ জন্মদিন প্রিয়তমা, একটা কোমলমতি নারী তার সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে আমার ভাঙ্গা হৃদয় টা কে জোড়া দিয়েছে, সেই নারীটি তুমি! তুমি জীবনে না আসলে জানতামই না কিভাবে সুখে থাকতে হয়! কিভাবে নিজের কষ্ট লুকিয়ে হাসি মুখে থাকো তুমি? তোমার মায়াবী চোখের মাঝেই ডু্বেছি আমি! আমার জীবন হয়তো পরিপূর্ণ ভাবে নিখুঁত নয়, কিন্তু আমার মাঝে তোমার জন্য ভালোবাসা পরিপূর্ণ আছে।

আমি তোমার হৃদয়ের একটি অংশ হতে চাই। তোমাকে না দেখার মুহূর্তগুলো আমি অতিক্রম করতে পারি না। তোমার মনের শুদ্ধতা আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। তোমার ভালোবাসা সেই অমূল্য উপলব্ধির নাম, যা আমাকে অতীতের সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়। অনেকবার চেষ্টা করেছি আমার বিষাক্ত জীবন থেকে তোমাকে দূরে রাখতে, কিন্তু আমি আর পারছি না দূরে থাকতে। আমার মত এলোমেলো একজন মানুষ কে গুছিয়ে তুলেছো তুমি, কখনো ছেড়ে যেও না আমাকে। সারাজীবন আমার ছায়া হয়েই পাশে থেকো তুমি। হবে কি আমার মনের রাজরানী?”

ফারিশের কথা শুনে নিধির চোখ ছলছল করে উঠে, মানুষটা তার জন্মদিন মনে রেখেছে! অথচ সে কোনোদিন ফারিশ কে এসব বলেনি। আদৌ তার কপালে এত সুখ সইবে? নিধি কে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
“হাটু ব্যথা করছে সুইটহার্ট, আর কতক্ষণ শাস্তি দিবে। এক্সেপ্ট করে নাও না প্লিজ!”
ফারিশের অসহায় গলায় বলা কথা শুনে হেসে ফেলে নিধি। সে তার হাত বাড়িয়ে দেয় ফারিশের দিকে। ফারিশ সযত্নে নিধির হাতে রিং পরিয়ে দিয়ে উঠে দাড়ায়। নিধিকে টেনে কেকের সামনে দাড় করিয়ে দেয় সে।
“কেক কাটুন ফারিশের রাজরানী।”

ফারিশের কথা শুনে হেসে ফেলে নিধি। সে কেক কেটে ফারিশ কে খাইয়ে দিয়ে বলে,
“মানুষের জীবনে যেমন সমস্যা পিছন ছাড়ে না, আপনিও তেমন ভাবেই কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না। সারাজীবন সমস্যার মতোই থেকে যেয়েন আমার পাশে। বড্ড বেশি ভালোবাসি আপনাকে!”
নিধির প্রথম কথা গুলো শুনে হেসে ফেলে ফারিশ। সে নিধি কে কাছে টেনে নিয়ে কপালে চু’মু খায়। ফারিশের কাজে নিধি তার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তা বুঝতে পেরে ফারিশ হেসে বলল,

শেষ বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৩

“মেহরাব ফারিশ শিকদার তার রাজরানী কে চু’মু দিয়েছে তাতে আপনার কি মিস নিধি?”
ফারিশের কথা শুনে জোরে হেসে ফেলল নিধি। সে আলতো হাতে ফারিশ কে জড়িয়ে ধরে।

সমাপ্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here