সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ১৩
Jannatul Firdaus Mithila
পরের দিন সকালবেলা। আজ শুক্রবার। এই দিনটি অবশ্য এহসান বাড়ির মানুষজনের জন্য একটা ছোট খাটো ঈদের দিনের সমতুল্য। সপ্তাহের এই একটি দিনেই বাড়ির সকলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করেন(অনিক বাদে)।এছাড়া বাকি দিনগুলোতে একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করাটা কিছুটা দুষ্কর বৈকি। কবির সাহেব তার বাকি ভাইদের নিয়ে মাত্রই মর্নিং ওয়াক শেষ করে বাড়িতে ফিরলেন।ফ্রেশ হয়ে এসে সোফায় বসে এটা সেটা নিয়ে আলোচনা করছেন তারা। জুবাইদা বেগম আর মাইমুনা বেগম তাদেরকে চা এগিয়ে দেন।তারাও খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে একটু একটু করে চা পান করছেন। এরই মাঝে সাব্বির সাহেব বললেন,
-ভাইজান, রেহানের ফেমিলিকে তো আমরা বলেছিলাম অরির পরিক্ষা শেষে রুহি-রেহানের বিয়ের কথা ফাইনাল করবো! তাছাড়া তারা এবিষয়ে আলাপ করতে চাচ্ছেন।এখন তুমি কি বলো!
-হুম আমিও তাই ভাবছি। আসছে শুক্রবার তাহলে তাদের সাথে বসে বিয়ের দিন তারিখ ফাইনাল করে ফেলি কি বলিস তোরা!
-আপনি যেমনটা ভালো মনে করেন ভাইজান। সমস্বরে বললো সকলে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
সকাল ৯ টা।অন্য দিনগুলোতে বাড়ির কর্তাদের ব্রেকফাস্ট ৮ টার মধ্যে হয়ে গেলেও আজকের দিনটিতে তা বরাবরই লেট করে।কবির সাহেব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে নিজের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ারে বেশ আরাম করে বসেন।তার ডানপাশে সাব্বির সাহেব, বামপাশে তায়েফ সাহেব, তার পাশে তাশরিক সাহেব। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয় রৌদ্র। ব্ল্যাক টি শার্ট এন্ড হোয়াইট ট্রাউজার পড়নে তার।চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো। ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত হয়ে সকলকে গুড মর্নিং বলে সাব্বির সাহেবের পাশের চেয়ার টেনে বসে পড়ে। বাড়ির বেগমেরা সকলকেই নাস্তা সার্ভ করে দিচ্ছেন। এমন না যে তাদের বাড়িতে এরূপ কোন রীতি আছে যে বউয়েরাই সার্ভ করবে আর বাকিরা শুধু খাবে।আসলে তাদের নাকি বাড়ির সকলকে সার্ভ করে খাওয়াতে ভালো লাগে তাইতো সকলের এতো না করা স্বত্বেও তারা এমনটা বাদ দেয় না।
মিনিট পাঁচেক পর সেখানে চোখ ডলতে ডলতে উপস্থিত হয় অরিন।তার মোটেও ইচ্ছে ছিলো না এতো সকালে ওঠবার। ফজরের নামাজ পড়ে আবারও একটা ঘুম দিয়েছিলো সে কিন্তু ঘুম আর হলো কই! হঠাৎই তার মনে পড়ে আজ যে শুক্রবার! এই দিনে সকলের একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করার কথা।তাইতো শতো অনিচ্ছা স্বত্তেও উপস্থিত হতে হলো তাকে।অরিন গিয়ে বসে পড়ে তাশরিক সাহেবের পাশের চেয়ারে। ইতোমধ্যেই সেখানে রুহি,আহি,মাহি পুতুলও এসে পড়ে।পুতুল গিয়ে আগে ভাগে অরিনের পাশের চেয়ার দখল করে বসে।পুতুলকে এমন নিজের পাশে ধপ করে বসতে দেখে মুচকি হাসে অরিন।এই পুতুলটা তাকে একটু বেশিই ভালোবাসে।যতক্ষণ স্কুলে থাকবে ততক্ষণ বাদে সারাটাদিনই অরিনের আগে পিছে ঘুরে। অরিনকে এটা সেটা বলে জ্বালাবে, খুনসুটি করবে ইত্যাদি যেনো তার রোজকার রুটিন। অরিন নিজে পুতুলের প্লেটে নাস্তা তুলে দেয়।পুতুল প্লেটের দিকে চেয়ে নির্বিঘ্নে খাবার মুখে পুড়ে দিয়ে বলে “থ্যাংকস অরিপু”
অরিনও ছেলেটার ফোলা গালগুলোকে হালকা টিপে দিয়ে বলতে থাকে
-মাই প্লেজার সোনা!
তাদের খুনসুটির মাঝেই সেখানে উপস্থিত হয় অনিক।অনিককে দেখে সকলেই কিছুটা অবাক হয় (রৌদ্র বাদে) কেননা এই ছেলেকে শুক্রবার আসলে বেলা না গড়ালে কিছুতেই উঠানো যায় না।সকলকে এভাবে নিজের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনিক কিছুটা থতমত খায়। বলে
– কি ব্যাপার সবাই এভাবে কি দেখছো?
– তুই আজ এত তাড়াতাড়ি? রাফিয়া বেগম প্রশ্ন করলেন।
– ওহ আসলে ইচ্ছে করলো সকলের সাথে নাস্তা করতে তাই চলে এলাম।বলেই রুহির পাশের চেয়ারে বসে পড়ে।প্লেটে নাস্তা নিতে নিতে রুহির কানে ফিসফিস করে বলে
– কিরে বুড়ি! ইদানীং দেখছি একটু বেশিই রেস্টুরেন্টে যাস।
অনিকের কথা শোনামাত্র প্লেটে থাকা ভাজিতে ডুবানো হাতটা সহসা থমকে যায় রুহির। মুখে দেওয়া পরোটার টুকরো টুকু বুঝি চিবুতে ভুলে গেলো সে।আড়চোখে একবার আশপাশ লক্ষ করে মুখে থাকা খাবারটুকু কোনরকম গিলে আমতা আমতা করে অনিকের মতই ফিসফিসিয়ে বলে
-ক-কি ব-বলছো?
-কেন শুনিসনি? তা বলছিলাম কি একদিন নাহয় আমাদেরও ট্রিট দিতে বল তোর হবু বরকে।শুধু বউকে খাওয়ালেই চলবে নাকি আমরা শ্যালকরা কি দোষ করেছি!
-সেটা নাহয় তুমি গিয়েই বলো।
-কেনো তুই বললে কি সমস্যা।
-আছে বহু সমস্যা। আমি পারবোনা তাকে এসব বলতে।
-বাব্বাহ! এখনই বরের পকেট যাতে খালি নাহয় সেই চিন্তা করছিস।আহাহা! এই দিনও দেখতে হলো আমার? ইসসে পেহলে মে আন্ধা কিও নেহি হুয়া!
বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে কথাগুলো টেনে টেনে বললো অনিক।এদিকে অনিকের কথা বলার ভঙ্গিতে বহুকষ্টে ওড়নার আচলে মুখ গুজে হাসতে থাকে রুহি।পাছে না কেও দেখে ফেলে! দেখে ফেললে যদি হাসির কারন জিজ্ঞেস করে তাহলে কি জবাব দিবে সে? আর কেও বিষয়টি তেমন খেয়াল না করলেও অরিনের চোখে ঠিকই পড়ে বিষয়টি।অরিন রুহির দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে। রুহি মাথা নাড়িয়ে “কিছু না” বলে।
-“অরি! এখন সামনে থেকে যা।আমার দুহাত এখন একেবারেই জোড়া বাচ্চা। প্রচুর কাজ পড়ে আছে! ”
-আম্মু প্লিজ তুমি অন্তত এমন করোনা! কতগুলো দিন হয়ে গেলো আমি কোত্থাও যাইনি।এতদিন না-হয় এক্সাম ছিলো বাট নাও আ’ম টোটালি ফ্রী। তুমি একটু বাবাই কে বুঝিয়ে বলো না প্লিজজজ।
-দেখ অরি! তোর বাবাকে আমি গতকালই বলেছি তোকে তোর নানাবাড়িতে যেতে দেওয়ার কথা কিন্তু তোর বাবা মুখের ওপর বলে দিলো,” না আমার অরিন আম্মুক ছাড়া আমার ভালো লাগে না ” এমন একটা ভাব নিলো যেন মেয়ে তার একারই হুহ! কদিন পর যখন মেয়েকে বিয়ে দিবে তখন কিভাবে থাকবে এই মহাশয়!
অরিন মায়ের এতকথা শোনার পরও হাল ছাড়লো না। সেই কখন থেকে সে রাফিয়া বেগমের পেছন পেছন ঘুরছে নানাবাড়ি কয়েকদিন বেড়াতে যাওয়ার জন্য। অথচ রাফিয়া বেগম যেন পাত্তাই দিচ্ছেন না এসবে। অরিন এবার ছুটে যায় জুবাইদা বেগমের কাছে। পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদোকাঁদো কন্ঠে বলে
-ও বড় মা! আম্মুকে একটু বোঝাও না প্লিজ।আমি কতদিন হয়ে গেলো কোথাও বেড়াতে যাই না।এটলিস্ট কিছুদিনের জন্য হলেও তো যেতে দিতে বলো।
জুবাইদা বেগমের যেনো বেশ মায়া হলো।পেছনে ঘুরে অরিনের মুখটি দু’হাতের তালুতে নিয়ে মায়াভরা কন্ঠে বললেন
-আচ্ছা বলবো তোর আম্মু কে।হেপি?
-না না বলবো না এখনই বলো।
-এখনি?
-হু
বলেই অরিন গাল ফুলিয়ে দাড়ায়।জুবাইদা বেগম রাফিয়া বেগমের দিকে তাকাতেই রাফিয়া বেগম খেঁকিয়ে বলেন
-একদম না জবা! আমায় কিছু বলতে আসবি না।মনে নেই ও এর আগেরবার বাড়িতে গিয়ে কি কাহিনি করেছিলো? তখন নাহয় পানিতে পড়ার পর মাসুদ ভাই ওকে বাঁচিয়েছেন বলে।কিন্তু এখন ও একাই যেতে চাচ্ছে। তুই ভাবতে পারছিস ও ঠিক কি কি করবে!
-আম্মু তখন তো আমি ছোট ছিলাম তাই পানিতে পড়ে গিয়েছিলাম কিন্তু এখনতো আমি বড় হয়েছি।
মাথানিচু করে মিনমিনে কন্ঠে বললো অরিন।
-রাখেন আপনার বড় হওয়া! যে মেয়ে এখনো নিজের মাছটা কাটা বেছে খেতে পারেনা সে নাকি বড় হয়েছে। বলি শুধু হাতে পায়ে লম্বা হলেই বড় হয়ে যায় না বুদ্ধিটাও বড় করতে হয়।
মায়ের এতো কথা শুনে ঠোঁট উল্টে সেখান থেকে চলে আসে অরিন। এক দৌড়ে চলে যায় নিজের রুমে।
অরিনের এভাবে চলে যাওয়া দেখে জুবাইদা বেগম আশাহত কন্ঠে বললেন
-এভাবে মেয়েটাকে না বললেও পারতিস রাফু।
-কিভাবে নিজেকে সামলাই বলতো জবা! ও যখন গতবছর বাড়িতে গিয়ে পানিতে পড়ে গিয়েছিলো বিশ্বাস কর সেই দমবন্ধকর মুহুর্তটা আমি এখনো ভুলতে পারিনা।ও শত বলুক নিজের খেয়াল রাখবে।কিন্তু আদৌও কি রাখবে তুইই বল?
রাফিয়া বেগমের এমন মাতৃসূলভ চিন্তা যে স্বাভাবিক। তাই জুবাইদা বেগম কিছু না বলে ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেললেন।
অরি! এই অরি! কি হইছে আমার পরিটার। এমন মন খারাপ করে আছিস কেনো?
মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে রুহি।
অরিন শোয়া ছেড়ে উঠে বসে।নাক টেনে বলতে থাকে,
-কেও একটুও ভালোবাসে না আমায়।কেও না!
-কিহ! তোকে আমরা ভালোবাসি না! আল্লাহ! এই কথা তুই বলতে পারলি?
-বলবো নাতো কি করবো বলো? আমি কত করে আম্মুকে বললাম আমায় কোথাও ঘুরতে যেতে দিতে কিন্তু আম্মু কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। বারবার বলে আমি ছোটো। হুহ!
রুহির এমন ঠোঁট ফুলানো দেখে হো হো করে হেসে ওঠে রুহি।হাসতে হাসতে বেচারির চোখে পানি জমতে শুরু করেছে। এদিকে রুহিকে এমন হাসতে দেখে মেজাজ বিগড়ে ওঠে অরিনের। অভিমানী সুরে বলে,
-হ্যা হ্যা হাসবেই তো।আমিতো তোমাদের কাছে একটা জোকারের মতো।কেওই একটু সিরিয়াসলি নেয় না আমায়।
অগত্যা রুহির হাসি থেমে যায়।রুহি হালকা জিভে কামড় দিয়ে বললো,
-এ্যাই এ্যাই সরি সোনা।আমি অন্নেক সরি।আর কে বলেছে আমি তোকে সিরিয়াসলি নেইনি? আমি তোকে সিরিয়াসলি নিয়েছিতো।
-তাহলে ওমন হাসছিলে কেনো?
-আম,আসলে ঐ একটা পুরোনো জোকস মনে পড়ে গিয়েছিলাে। সে যাকগে। তুই কোথাও ঘুরতে যেতে চাস তাইতো? চল তোকে আজ ঘুরতে নিয়ে যাবো।
-সত্যি!
-হুম।তুই বিকেলে রেডি থাকিস।
-ওক্কে। বলেই রুহিকে জাপ্টে ধরে অরিন।রুহিও অরিনকে আগলে নেয়।মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করে,
-এবার খুশিতো?
-হু অন্নেক।
-ভাইয়া আসবো?
ল্যাপটপে বেশ মনোযোগ দিয়ে কিছু কাজ করছিলো রৌদ্র। রুহির ডাকে ল্যাপটপের দিকে চোখ রেখেই বলে,
-আয়।
-ভাইয়া তোমার কি বিকেলে তেমন কোনো প্ল্যান আছে?
এবার ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে রুহির দিকে তাকায় রৌদ্র। আবারও জিজ্ঞেস করে,
-মানে?
-বলছি যে বিকেলে কি তুমি ফ্রী আছো?
-হুম।কেনো?
-ওহ তাহলে কি তুমি আজ আমাদের একটু ঘুরতে নিয়ে যেতে পারবে? আসলে অরিনটার মনটা খুব খারাপ। পরে রুহি অরিনের সকল ঘটনা একে একে বর্ননা করে রৌদ্রর কাছে।রৌদ্র সবটা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
-বিকেলে সবাই রেডি থাকিস।
-সত্যি!
-হুম।
-থ্যাংক ইউ ভাইয়া।
-হুম।ছোট করে উত্তর দেয় রৌদ্র।
রুহিও বেশ খুশি হয়ে সেখান থেকে চলে যায়। এদিকে রৌদ্র এখনও ভাবছে অরিনের কথা। ভাবা যায়! মেয়েটার ঠিক কতবড় সাহস হয়ে গেছে যে সে রৌদ্রর থেকে দূরে থাকতে চায়।রৌদ্র ল্যাপটপটা কোল থেকে নামিয়ে বারান্দায় চলে যায়। অতপর আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বাঁকা হাসলো। বললো,
-আমার দৃষ্টির আড়াল হতে চাইলেও আমার থেকে কি করে আড়াল হবি সানশাইন? রোদ থেকে কি কখনো তার আলোকে দূর করা সম্ভব! তাহলে তুই কিভাবে দূর হবি বলতো!
আকাশ থেকে কি কোনো জবাব আসলো? আসলো বোধহয়! আসলেও যে তা আর কারোরই বুঝবার জো নেই।এ যে এক প্রেমিক আর আকাশের মধ্যকার কথোপকথন। আমরা থোড়াই না বুঝবো!
-কিরে তুই এখনো রেডি হোসনি?
রুহি একেবারে তৈরি হয়ে অরিনের রুমে আসে অরিনকে নিয়ে নিচে যেতে।কিন্তু এসেই দেখতে পায় অরিন খাটের ওপর জামাকাপড়ের স্তুপ বানিয়ে একটার পর একটা নিজের গায়ের ওপর ধরে আয়নায় দেখছে।রুহি কিছুটা তেতে উঠে বলে,
– কি করেছিস এগুলো? মেজো মা দেখলে একটা বকাও মাটিতে পড়বে না দেখে নিস।সঙ্গে আবার দুএক ঘা ফ্রীতেও পড়তে পারে।
রুহির কথায় যেনো কোন ধ্যান নেই অরিনের। সে ঠোঁট কামড়ে এখনো তাকিয়ে আছে জামাগুলোর দিকে।হতাশ কন্ঠে রুহিকে বলে,
-রুহিপু একটা জামাও সিলেক্ট করতে পারছিনা।একটু হেল্প করো না প্লিজ।
-আচ্ছা তুই সরে দাড়া আমি দেখছি। বলেই নিজে থেকে একটা জামা পছন্দ করলো রুহি।বেবি পিংক কালারের একটি চুড়িদার ড্রেস।রুহি অরিনের হাতে ড্রেসটি দিয়ে বললো,
-যান মেডাম কুইকলি পড়ে আসুন।
অরিনও ড্রেসটি হাতে নিয়ে ছুটে যায় ওয়াশরুমে।অরিন যেতেই রুহি অরিনের কাপড়গুলো একে একে গুছিয়ে আলমারিতে রাখে। মিনিট সাতেক পরেই অরিন চেন্জ করে বের হয়।রুহি একপলক তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে এগিয়ে আসে। বলে,
-তুই হিজাব পড়ে নে।আমি তোকে হালকা একটু সাজিয়ে দি?
-না না।আমি সাজবো না।আমার ভালো লাগে না।
-হুম।পরির মত সুন্দর হলে কারই বা সাজতে ইচ্ছে করে শুনি?
-রুহিপু!
-ওপস সরি শোনা। আচ্ছা বাদ দে।আমি নিচে যাচ্ছি। তুই ফটাফট রেডি হয়ে নিচে নামবি কেমন! একদম লেট করিস না কিন্তু। ভাইয়া প্রচুর রাগ করবে তাহলে।
-আচ্ছা যাও। আমি জাস্ট ১০ মিনিটের মধ্যে আসছি।
-ওকে। বলেই চলে যায় রুহি।
অরিনও নিজের মত করে তৈরি হতে থাকে। ড্রেসটির ওড়নার সাথে মেচিং করে ধূসর রংয়ের হিজাব পড়ে,চোখে হালকা চিকন করে কাজল দিয়েছে, আর ঠোঁটে লিপগ্লস।ব্যস পুরো তৈরি অরিন।মোবাইলটা হাতে নিয়ে পার্সে ঢোকাতে ঢোকাতে সিড়ি বেয়ে নামতে থাকে সে।এদিকে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত একজোড়া চোখ যে গভীরভাবে তাকে পরোখ করছে সে খবর কি আর অরির আছে? নাহ নেই! থাকলে হয়তো অষ্টাদশী ছুটে পালাতো এই চক্ষুগোচর হতে। অরিন তড়িঘড়ি করে নিচে নামতে গিয়ে হঠাৎই তার পাদু’টো থমকে দাড়ায়। তার সামনে উপস্থিত মানুষটাকে আজকে কি একটু বেশিই সুন্দর লাগছে তার চোখে? মানুষটাকে সবসময় তার চোখেই এতটা মারাত্মক লাগে কেনো? এই যে পড়নের হাতা গুটানো কালো পাঞ্জাবিতে এই মুহূর্তে অরিন তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ বলে নির্দ্বিধায় আখ্যায়িত করতে পারবে।
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ১২
অরিনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো রৌদ্র।সামান্য গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
-তোর দেখা শেষ হলে এবার কি বেরোবি? নাকি আরও দেখা বাকি আছে?
রৌদ্রর কথায় থতমত খায় অরিন। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে আমতা আমতা করে বলে,
-ইয়ে মানে,..
-হয়েছে আপনার ইয়ে মানে।এবার চলেন।বলেই দ্রুতপায়ে বেরিয়ে পরে রৌদ্র।অরিনও তার পিছুপিছু বেরিয়ে আসে।