সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ১৫
Jannatul Firdaus Mithila
রৌদ্র, অনিক বাকিদের নিয়ে মেলার উদ্দেশ্যে পার্ক থেকে বের হয়ে সরু রাস্তা ধরে হাটতে থাকে।তারা কিছুটা পেছনে আর আহি,মাহি,অরিন সামনের দিকে কথা বলতে বলতে এগিয়ে যাচ্ছে।অনিকও একনাগাড়ে এটা-সেটা বলে যাচ্ছে কিন্তু রৌদ্রর যেনো সেখানে কোন ধ্যান নেই।সে মুগ্ধদৃষ্টিতে সামনে হেটে যাওয়া অষ্টাদশীর পানে তাকিয়ে আছে।অষ্টাদশী কি জানে? তাকে এই মুহূর্তে কতটা আবেদনময়ী লাগছে রৌদ্রর কাছে! এই মুহুর্তে রৌদ্রর ইচ্ছে করছে অরিনকে নিজের বুক পীন্জরে লুকিয়ে ফেলতে।তাকে ভিষণ কাছে টানতে ইচ্ছে করছে তার।ইচ্ছে করছে তাকে ভিষন রকমের এক লজ্জা দিয়ে তার লজ্জালু রক্তাভ আভায় ছেয়ে যাওয়া মুখশ্রীটি দেখতে! কেনো পারছে না সে অরিনকে কাছে টেনে নিতে? কেনো পরিস্থিতি তার সহায় হলো না! কেনো তাদের প্রনয়ের পরিনয়ে এত বাধা! আদৌও সকল পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে অরিনকে সে নিজের করতে পারবে তো? নাকি ভাগ্য আর পরিস্থিতির মত বাঁধার কাছে হেরে যাবে তার হৃদয়ানুভুতি?
অনিক কথাবলার একপর্যায়ে থমকায়।পাশ ফিরে তাকায় রৌদ্রর পানে।ধীমি কন্ঠে ডাকে রৌদ্রকে।কিন্তু নাহ তার রোদ ভাইয়ের তার দিকে কোন ধ্যান নেই।অনিক এবার রৌদ্রর দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকায়।পরক্ষণেই আবারও তার মনে থাকা সন্দেহরা আরো একধাপ আগায়।আচ্ছা অনিক যা ভাবছে তাই কি সত্যি? রোদ ভাই কি তাহলে বনুকে পছন্দ করে! কিন্তু কোন সঠিক প্রমাণ আর স্বীকারোক্তি ছাড়া এ বিষয়ে রোদ ভাইকে কিভাবে প্রশ্ন করবে ও! অনিক তার সকল ভাবনা ঝেড়ে আপাতত চুপ থাকে আর সঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকে। হালকা করে রৌদ্রর কাঁধে হাত রেখে শুধায়,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
— ‘রোদ ভাই? ‘
হঠাৎ ডাকে ধ্যান ফিরে রৌদ্রর। কিছুটা ভড়কে যায় সে।পাশে তাকিয়ে অনিকের দিকে তাকিয়ে দেখে অনিক কেমন ভ্রু উঁচিয়ে তাকে দেখছে।রৌদ্র নিজেকে স্বাভাবিক করতে হালকা গলা খাঁকারি দেয়।বলে,
— হুম। বল!
অনিক রৌদ্রর হাবভাবে মনে মনে ব্যাপক মজা নেয় কিন্তু বাহিরে একদম স্বাভাবিক ভঙ্গিমায় বলে,
— বল মানে? এতক্ষণ কি কোন কথাই শোনোনি তাহলে! ধ্যান কোথায় ছিলো তোমার?
রৌদ্রর একবার ইচ্ছে করলো বলতে,” তোর বোনের কাছে ছিলো।দেখছিস না সারাক্ষণ আমায় কেমন নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরায়।” কিন্তু মুখে এমন কিছুই বললো না সে।বিষয়টাকে কিছুটা ধামাচাপা দেয়ার ন্যায় বললো,
— শুনিনি এমন না! আসলে একটা জরুরি কাজের কথা মনে পড়েছিলো তাই তোর দিকে খেয়াল করতে পারিনি।
রৌদ্র হাতের ঘরিটায় সময় চেক করে আবারও শুধালো,
— আচ্ছা সন্ধ্যা প্রায় হলো বলে! ওদের নিয়ে তারাতাড়ি মেলা থেকে ফেরা উচিৎ।
অনিকও রৌদ্রের কথায় সম্মতি জানিয়ে বললো,
— হু চলো।
তারা দু’জনেই পায়ের গতি বাড়িয়ে অরিনদের কাছে ছোটে।কিন্তু হঠাৎই তাদের পা জোড়া থমকে দাড়ায় একটি কথায়~
” কিগো সুন্দরীরা একা নাকি! থাক মন খারাপ কইরো না আমরা আছিনা! তোমগো তিনজনের লাইগা আমরা ছয়জন আছি।একজনের লাইগা দুইজন কইরা।” — বলেই বিশ্রী ভঙ্গিতে হেসে ওঠে রাস্তার পাশে বাইকে হেলান দেওয়া বখাটেগুলো।
অরিন আহি,মাহি কিছুটা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পেছনে তাকায়। দেখতে পায় তাদের থেকে মাত্র দুহাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে রৌদ্র আর অনিক। তাদেরকে দেখে তারা তিনজনেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
এদিকে অনিক দাঁতে দাঁত চেপে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে। ঘাড় বাকিয়ে রৌদ্রর দিকে তাকাতেই তার মুষ্টিবদ্ধ হাত স্বাভাবিক করে নেয়।অনিক খেয়াল করে রৌদ্রর পানে যার চোখ ইতোমধ্যেই রক্তলাল আভা ধারণ করেছে। চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দাড়িয়ে থাকার দরুন ঘাড় এবং পেশিবহুল হাতের রগগুলো ফুলে ফেপে উঠেছে। অনিক হালকা ঢোক গিলে। রৌদ্রকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রৌদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— অনিক! তুই অরিনদের নিয়ে মেলায় যা। রেহানকেও ফোন দিয়ে বল মেলার বাহিরে থেকে তোদের নিয়ে যেতে। আরেকটা কথা, আগামী আধঘন্টা এদিকটায় একবারের জন্যও ফিরবি না। গট ইট!
অনিক কিছু একটা আচ করতে পেরে বিচলিত কন্ঠে বললো,
— কিন্তু রোদ ভাই তুমি যাবে না?
অনিকের কথা শেষ হতেই রৌদ্র দাত কটমট করে অনিকের দিকে তাকায়।ঝাঝালো কন্ঠে আবারও বলে,
— ডু এজ আই সে! নো মোর ওয়ার্ডস! জাস্ট লিভ।
অনিকও আর কিছু না বলে চলে যায় অরিনদের নিয়ে। ঠিক তার পরপর অনিক রেহানকে ফোন দিয়ে আসতে বলে মেলার সামনে। রেহানও চলে আসে প্রায় মিনিট পাঁচেক পরেই হয়তো আশেপাশেই ছিলো।রেহান এসেই এদিক ওদিক পর্যবেক্ষন করে অনিককে জিজ্ঞেস করে,
— রোদ কোথায় অনিক?
অনিক যেন এই প্রশ্নটারই অপেক্ষায় ছিলো।সে রেহানের হাত ধরে অরিনদের সামনে থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে এনে বলে দিলো তখনকার ঘটনা। রেহান কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে অস্ফুট স্বরে বললো,
— ইন্না-লিল্লাহ
অনিক কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় রেহানের কথায়।সে হতবিহ্বল হয়ে বোঝার চেষ্টা করে সে কি আদৌও সঠিক শুনলো? রেহান ভাই কি বললো এটা! অনিক মনের কথা মুখে নিয়ে আসলো।বললো,
— রেহান ভাই তুমি কি ইন্না-লিল্লাহ বললে?
রেহান একেবারেই শান্তিভঙ্গীমায় মাথা নাড়ে।বলতে থাকে,
— রোদ যেহেতু আজ ওদেরকে ধরেছে তাহলে মনে রাখিস আজকের পর থেকে কেওই হয়ত নিজের হাতে ঠিক মতো খেতে পারবে না অথবা নিজের পায়ে সোজা হয়ে দাড়াতে পারবে না।
অনিক এবার হতভম্ব হয়ে যায়। হতভম্ব হয়ে বলে উঠে,
— কি বলছো এসব রেহান ভাই?
রেহান অনিকের কথা শুনে তার দিকে ঘাড় কাত করে তাকায়।অতপর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে অনিকের কাঁধে একহাত ভর দিয়ে কৌতুকের স্বরে বললো,
— আরে সোনামণি বোঝোনা নতুন নতুন!
অনিকের মাথায় রেহানের কথার আগাগোড়া কিছুই ঢুকছে না।সে শুধু অবাক চোখে রেহানের দিকে তাকিয়ে। রেহানও অনিকের মুখভঙ্গিতে মুচকি হাসে।পরে নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে কাওকে কল লাগায়।দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হয়।রেহান ফোন কানে নিয়ে বলতে থাকে,
— রোদ কি এখন ওখানে?
~জি স্যার
— কয়জন?
~জি ৬ জন।
— আচ্ছা শোনো।তুমি শুরু থেকে সবটা রেকর্ড করে আমাকে পাঠাবে ওকে!
~ ওকে স্যার।
— হুম। বলেই কট করে ফোন কেটে দেয় রেহান।
এদিকে অনিক এখনো ভ্যাবলার মতো তাকিয়েই আছে।বুঝতে চেষ্টা করছে আসলে বিষয়টা কি হচ্ছে।
একটি আবদ্ধ রুমে একনাগাড়ে শরীরের সর্বস্ব দিয়ে আত্মচিৎকার করে যাচ্ছে কয়েকজন। তারা তাদের সামনে থাকা যমের মতো ব্যাক্তিটিকে বারংবার আকুতি -মিনতি করে যাচ্ছে যেন সে আর তাদের না মারে।কিন্তু ব্যাক্তিটির কানে কি আদৌও তা পৌঁছাতে পেরেছে! ব্যাক্তিটির হাতে থাকা লাঠির গতিতো তা বলছে না।সে তো ব্যাস্ত সকলকে শাস্তি দিতে।এই মুহুর্তে ব্যাক্তিটির মারের চাইতেও তার মুখভঙ্গি বেশ ভয়াবহ ঠেকছে বদ্ধ ঘরটির দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা কালো পোষাকধারী লোকেদের কাছে। গোপনে ক্যামেরা অন করে ভিডিও করে যাচ্ছে রেহানের আদেশে। মনে মনে ভাবছে তারা,
” না জানি মার খেতে থাকা লোকগুলো কোন পাপে পড়ে তাদের বসের কলিজায় হাত দিতে গেলো! ইশ! আজকের পর আর কোনদিন হয়তো মার খেতে থাকা ছেলেগুলোর মাঝে কেও কেও নিজের হাতে ঠিকমতো খেতে পারবে না আবার হয়তো কেও নিজের পায়ে দাড়াতে পারবে না।” ভেবেই একরাশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে সকলে।
এদিকে রৌদ্র নিজের সর্বস্ব দিয়ে ছেলেগুলোকে পিটিয়ে মাত্র ক্ষ্যান্ত হলো। হাত থেকে লাঠিটাকে দূরে ছুড়ে দিয়ে সামনে থাকা ছেলেটার চুলের মুঠি টেনে ধরে। ছেলেটি ব্যাথায় ককিয়ে ওঠে।রৌদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
— এতো বড় কলিজা তোর? আমার বাড়ির মেয়েদের নিয়ে বাজে কথা বলিস। তোর তো খুব শখ তাই না, মেয়েদের কম্পানি দেওয়ার! তাহলে আজকের পর থেকে কিভাবে কি করিস আমিও দেখি!
বলেই আবারও ছেলেটির নাক-মুখ বরাবর ঘুষি মারতে থাকে। ছেলেটির নাক-মুখ বেয়ে রক্ত ঝড়ছে অবলীলায়। ছেলেটা ব্যাথায় প্রায় জ্ঞানশূন্য অবস্থা। বহুকষ্টে নিভুনিভু চোখে রৌদ্রর পায়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। অস্পষ্ট স্বরে থেমে থেমে বলতে থাকে,
— আমারে মাফ কইরা দেন ভাই।এই জীবনে বাইচ্চা থাকলে আর কোন মাইয়া মাইনষের দিকে চোখ তুইলা দেখমু না।এবারের মতো ছাইড়া দেন।
রৌদ্র ছেলেটির কথা শেষ হবার আগেই সজোরে তার বুক বরাবর লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দেয়। আবারও ছেলেটির চুলগুলো মুষ্টি বদ্ধ করে হিসহিসিয়ে বলে,
— বিশ্বাস কর তুই যদি আজকে শুধুমাত্র আমার বাড়ির মেয়েদেরকে বাজে কথা বলতি তাহলে তোকে শুধু একটু শাস্তি দিয়ে ছেড়ে দিতাম।কিন্তু তুই শুধু আমার বাড়ির মেয়েদের না সেখানে থাকা আমার সানশাইনকেও বাজে কথা বলেছিস।জানিস তো এটাই তোর বেড লাক।আর যার লাক খারাপ তাকে আর কি করা যাবে বল!
বলেই রৌদ্র আবারও ছেলেটিকে বেধড়ক মারধর করতে থাকে।ছেলেটি একপর্যায়ে জ্ঞান হারায়।
রৌদ্র কিছুক্ষণ পর তার একজন গার্ডকে ডাক দিয়ে বলে,
— এদের এক্ষুনি হসপিটালে ভর্তি করাও।
~ জি বস।
বলেই তারা ছেলেগুলোকে কোনরকম তুলে চলে যায় সেখান থেকে।
রৌদ্র সকলের চলে যেতেই রুমে থাকা ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। মিনিট দশেক পরে ফিরে এসে ওয়্যারড্রোব থেকে একটি শার্ট বের করে পড়ে নেয়।একেবারে ফিটফাট হয়ে ঘরে থাকা আয়নাটিতে নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকায় সে। পরক্ষণেই এক বাঁকা হাসি খেলে যায় তার মুখে, বিড়বিড়িয়ে বলতে থাকে,
— তোকে যে বাজে কথা বলবে আমি তার জিভ কেটে ফেলবো, যে তোর দিকে চোখ তুলে তাকাবে আমি তার চোখটাই উপড়ে ফেলবো।তুই শুধু আমার, শুধুই আমার সানশাইন।
রেহান রুহিদের মেলায় নিয়ে এটা সেটা কিনে দিচ্ছে। এমন সময় তার ফোনে টুং করে মেসেজের শুব্দ হয়।সে রুহিদের থেকে কিছুটা দূরে এসে ফোন চেক করে।পরক্ষণেই তার চেহারায় একটা বাঁকা হাসি খেলে যায়।সে অনিককে চোখ দিয়ে ইশারায় নিজের কাছে ডেকে আনে।নিজের ফোনটি অনিকের হাতে দিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে যায়,
— মনা বেশি ভয় পেয়ো না কিন্তু! এটাতো জাস্ট ট্রেইলার।আস্তে আস্তে আরো কাহিনি দেখতে পারবে।
কথা শেষ করেই চোখ মেরে সেখান থেকে চলে আসে রেহান।অনিকও ভ্রুজোড়া কুচকে ফোনে ভিডিওটি অন করে।সময় গড়ানোর সাথে সাথে ভিডিওটিও এগিয়ে চলে।ভিডিওটি যত এগুচ্ছে ততই যেন অনিকের হার্টবিট বেড়ে চলছে।সে বারবার শুকনো ঢোক গিলে একহাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে থাকে। ভিডিওটি আর শেষ পর্যন্ত দেখার ধৈর্য পেলো না অনিক।তড়িঘড়ি করে ফোনটি অফ করে আকাশের দিকে মুখ করে বড় বড় নিশ্বাস ফেলতে থাকে সে। ভাবতে থাকে,
— এ আমি কোন রোদ ভাইকে দেখছি! রোদ ভাই যে এতোটা রাগী হতে পারে এটাতো আমি কল্পনাও করিনি।আর রোদ ভাই এখানে কি বললো? তার সানশাইন! মানে তিনি কি সত্যিই বনুকে ভালোবাসে? বনুর জন্যই কি ছেলেগুলোকে এভাবে মারলো সে? নাহ রোদ ভাইয়ের সাথে আমার সরাসরি কথা বলতেই হবে।তিনি যেই সম্পর্কের সূত্রপাত ঘটাতে যাচ্ছে তা যে অসম্ভব। এখনতো শুধু রোদ ভাই অরিনকে ভালোবাসে কিন্তু যদি অরিনও রোদ ভাইকে ভালোবেসে ফেলে তাহলে যে এহসান পরিবারে আবারও দ্বিতীয় প্রলয় ঘটবে।আর এই প্রলয়ের প্রলয়ঙ্কর পরিনতির জন্য আমি আমার ভাই অথবা বোন কাওকেই হারাতে পারবো না। দরকার হয় ওদের দুজনের ভালোর জন্য হলেও ওদের আলাদা করতেই হবে।
ভাবনা শেষ হতেই অনিক অদূরে দাড়িয়ে থাকা নিজের বোনের হাসিমাখা স্নিগ্ধ মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আবারও মনে মনে বলে উঠে,
— বনুরে! আমি মন থেকে দোয়া করি তুই সারাজীবন এমন হাসিখুশি থাক।আল্লাহ যেন আমার ভাগ্যের সুখটুকুও তোকে দান করে।কিন্তু আমি চাইবো তোর মনে যাতে কোনদিন রোদ ভাইয়ের জন্য ভালোবাসা না জন্মে। এই নিষিদ্ধ অনুভুতির জন্য যে ইতোমধ্যেই আমরা আমাদের একজন প্রিয় মানুষকে হারিয়েছি।কিন্তু এবার আমি তোকেও হারাতে পারবো না বনু।কিছুতেই পারবো না। পরক্ষণেই অনিকের মনে ভয় সঞ্চার ঘটে। ভেবে ওঠে,
— মাত্র রোদ ভাইয়ের যে কর্মকাণ্ড দেখলাম তাতে আমার বুঝতে এক চিলতে বাকি নেই যে তিনি বনুর প্রতি ঠিক কতটা অবসেসড।কিন্তু তার এই অবসেশন যে তার এবং পুরো পরিবারের জন্য অশনি সংকেত বয়ে আনছে। আল্লাহ কি হবে এই অবসেশনের পরিনাম!
রৌদ্র প্রায় ৪০ মিনিট পরে আবারও মেলায় ফিরে আসে।বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করবার পর সকলকে খুজে পায় সে।স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হেটে তাদের সামনে উপস্থিত হয় রৌদ্র। রুহি তার ভাইকে দেখে জিজ্ঞেস করে,
— কোথায় চলে গিয়েছিলে ভাইয়া।অনিক ভাইয়াকেও জিজ্ঞেস করলাম তোমার কথা কিন্তু সে বললো তাকেও নাকি বলে যাও নি।
রৌদ্র রুহির কথা শুনে মোটেও বিচলিত হয়না বরং একেবারে শান্ত কন্ঠে বলে,
— একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ চলে এসেছিলো তাই যেতে হয়েছে। আচ্ছা ওসব বাদদে।তোদের আর কিছু কেনাকাটা বাকি থাকলে চল আমি কিনে দিচ্ছি।
রৌদ্রের কথা শুনে সকলেই খুশি হয়ে যায়।আহি মাহিতো রৌদ্রের হাত টেনে তাকে একটি জুয়েলারি স্টলে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়েই এটা সেটা কিনতে থাকে তারা। আসলে মেয়ে মানুষ তো! এসব জিনিস হাজার থাকলেও চোখের সামনে পেলে লোভ সামলানো দায়! রৌদ্রও তেমন প্রতিত্তোরে না করে তাদের সকলের চাহিদা অনুযায়ী এটা সেটা কিনে দেয়।রৌদ্র খেয়াল করলো সকলের এতো এতো চাহিদার মাঝেও অরিন কেমন নিশ্চুপ হয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে কাচের চুড়ি হাতিয়ে দেখছে। রৌদ্র আড়চোখে কিছুক্ষণ খেয়াল করে সেটা।সকলের কেনাকাটা যখন শেষের পথে তখন তারা মেলা ছেড়ে বের হতে শুরু করে। অনিক আশেপাশে রৌদ্রকে কোথাও খুজে না পেয়ে ভ্রুকুচকায়। তার পরপরই রৌদ্র চলে আসে কিন্তু তার হাতে একটা বড় ঝুড়িভর্তি চুড়ি দেখে সকলেই কিছুটা চমকে তাকায় রৌদ্রের পানে। রেহান অবশ্য চমকায় না। সে ব্যাপারটা ধরতে পেরেছে। তখনকার অরিনের চুড়ি হাতিয়ে দেখার বিষয়টা তারও চোখে পড়েছে।রেহান সকলের অলক্ষ্যে একহাত ভাজ করে অন্যহাত ঠোটের ওপর ঠেকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে। মনে মনে বলে,
— বড্ড পাগল প্রেমিক তুই ভাই! বড্ড পাগল।
রৌদ্র সামনে এসে ঝুড়িটা অনিকের হাতে দেয়।অনিক এতগুলো চুড়ি দেখে রৌদ্রের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।রৌদ্র তার চিরচেনা গম্ভীর হয়েই জবাব দেয়,
— আসলে ঐ চুড়ির দোকানীর কোন বেচাকেনা হচ্ছিলো না।আর বেচারা খুব বৃদ্ধও। তাই এগুলো কিনে নিয়ে আসছি।
রৌদ্রের কথাগুলো কেমন যেন বিশ্বাস হচ্ছিলো না অনিকের।সে এক ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্ন করে,
— তাই বলে পুরো ঝুড়িই নিয়ে এসেছো!
রৌদ্রের এবার মেজাজ বিগড়ে যায়। কিছুটা খেঁকিয়ে বলে,
— হুম এনেছি।বাড়িতে তো মেয়েদের কমতি নেই সবাই একসঙ্গে ব্যাবহার করতে পারবে। এখানে তোর এতো জিজ্ঞাসাবাদের কি রয়েছে?
অনিক আর কিছু বলে না।আপাতত চুপ থাকাটাই শ্রেয়। সে হাতভর্তি ঝুড়ি নিয়ে এগিয়ে চলে সামনে। এদিকে এতো চুড়ি দেখেতো অরিন সহ বাকি মেয়েদের চক্ষু চড়কগাছ। একদিকে যেমন অবাক হয়েছে অন্যদিকে তেমনই খুশি হয়েছে। আহি আর মাহি ঝুড়ি থেকে দু-মুঠ চুড়ি নিয়ে হাত ভর্তি করে ফেলে। রুহিও এমনটা করে ফেলে। কিন্তু অরিন তার জামার সাথে মেচিং চুড়িটি পাচ্ছেনা।হয়তো ভিতরের দিকে আছে। এখন নাহয় থাক বাড়ি গিয়ে পড়বে নাহয়– এসব ভেবেই মুখটা কালো করে হাটতে থাকে অরিন। এরই মাঝে সন্ধ্যা নেমে আসে ধরণীতে। রৌদ্র একটি ক্যাব বুক করে।ক্যাবে সর্বোচ্চ চারজন বসতে পারবে।তাই রৌদ্রই এবার আগ বাড়িয়ে বলে,
— অনিক তুই ওদের সবাইকে নিয়ে যা।আমি অরিনকে নিয়ে আসছি।
অনিক একবার চাইলো রৌদ্রকে না বলবে।কিন্তু পরমুহূর্তেই ভাবলো — এভাবে না বললে যদি ভাইয়া খারাপ কিছু মনে করে। তাই অনিক রৌদ্রের কথায় সম্মতি জানিয়ে রুহি,আহি,মাহিকে নিয়ে রওনা হয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। রেহানও সকলকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। থেকে যায় অরিন আর রৌদ্র। সবার চলে যেতেই রৌদ্র অরিনকে নিয়ে সামনে হাটা ধরে। অরিন অবশ্য এমন একটা মুহুর্তই খুজছিলো রৌদ্রের সাথে। সন্ধ্যার সময়টাতে হুড খোলা রিকশায় ঢাকা শহরের ব্যাস্ত রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোটা যেন এক নৈসর্গিক মুহুর্ত। সবাই এমনটা বুঝে কই? রৌদ্র একটা রিকশা থামিয়ে উঠে পড়ে এবং স্বভাব বশত একহাত বাড়িয়ে দেয় অরিনের দিকে। অরিনও এবার কোনরকম সংকোচ ছাড়াই হাতটি চেপে ধরে উঠে পড়ে রিকশায়।রিকশা চলতে শুরু করলে আবারও রৌদ্র অরিনের হাঁটুর পাশ আলতো হাতে ধরে আগলে নেয় অরিনকে।অরিন এবার মুচকি হাসলো। মনের মনিকোঠায় এক সূক্ষ্ম ভালোলাগায় ছেয়ে যাচ্ছে চারিপাশ। দোলা খাচ্ছে বসন্তের ন্যায় প্রেমে পড়ার প্রথম মুহুর্তের স্নিগ্ধ আভাস! অরিন চোখ বন্ধ করে অনুভব করে মুহুর্তটা।সে খুব করে চাইছে ~~ থেমে যাক না এই মুহূর্তটা এখানেই। থাকুক না এই ভালোলাগার মুহুর্তটা আরো কিছুটা সময়।তার পাশে থাকা মানুষটা একবার বলুক না তাকে ” অরিন, তোকে আমি বড্ড ভালোবাসিরে”। নিক না তাকে একটু আপন করে। কিন্তু সব আশা কি আর ওতো সহজে পূরণ হবার ন্যায়।হয়তো অষ্টাদশী জানেও না তার এই অনুভুতি একটা সময় কি রং নিয়ে আসবে তাদের জিবনে।
প্রায় ২০ মিনিট পর রৌদ্র একটি জুয়েলারি শপের সামনে রিকশা থামাতে বলে।অরিন কিছুটা অবাক হয়।এই মুহুর্তে এখানে আসার কারনটা কিছুতেই উপলব্ধি করতে পারছে না সে।রৌদ্র রিকশা থেকে নেমে ভাড়ার পাঠ চুকিয়ে দাড়ায় কিন্তু অরিনের দিকে তাকিয়ে দেখে সে এখনো রিকশায় বসে।রৌদ্র তার উদ্দেশ্যে কৌতুকের স্বরে বলে ওঠে,
— কি ম্যাডাম! আপনি কি রিকশাতেই থাকবেন?
রৌদ্রের কথায় ধ্যান ফিরে অরিনের। মাথা নাড়িয়ে তড়িঘড়ি করে নামতে গিয়ে হঠাৎই জামার সাথে পা আটকে হোঁচট খেয়ে সামনে পড়তে গেলে রৌদ্র এসে তাকে বাহুতে নিয়ে আগলে ধরে। ঘটনার আকস্মিকতায় অরিন হকচকিয়ে যায়। পরমুহূর্তে নিজেকে ধাতস্থ করে নিজের দিকে তাকায় অরিন।দেখতে পায় আপাতত সে রৌদ্রের বাহুতে পড়ে আছে।অরিন সহসা জিভ কেটে সোজা হয়ে দাড়ায়।দাড়িয়ে হাত কচলাতে থাকে সে। রৌদ্র অরিনের সংকোচবোধ কমাতে বলে উঠে,
— একটু দেখে শুনে নামতে পারিস না তাইনা? ব্যাথা পেয়েছিস কোথাও?
অরিন রৌদ্রের দিকে না তাকিয়েই মাথা ডানে বামে নাড়ে।রৌদ্রও কিছুটা হাফছেড়ে বাঁচে। অরিনকে নিয়ে চলে যায় জুয়েলারি শপের ভিতর। অরিন এবার নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে প্রশ্ন করে,
— রোদ ভাই আমরা এখানে কেনো এসেছি?
রৌদ্র ঘাড় বাকিয়ে ভ্রুকুঞ্চন করে তাকায় যেন সে এই প্রশ্নে বড্ড নাখোশ।
— মানুষ জুয়েলারি শপে কি করতে আসে? নিশ্চয়ই হাডুডু খেলতে আসে না।
রৌদ্রের এমন ত্যাড়া উত্তরে সহসা চুপ করে যায় অরিন।মনে মনে ভেংচি কেটে বলে,
“সামান্য একটা কথার সোজা উওর দিলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হতো শুনি”
কিন্তু মুখে কিছুই বললো না সে।
এদিকে অরিনের মুখভঙ্গি দেখে হালকা মুচকি হাসে রৌদ্র। পরক্ষণেই তা মিলিয়ে যায় ভোরের কুয়াশার মতো। কিছুক্ষণ পর তাদের সামনে একজন এসে রৌদ্রের সাথে কুশলাদি বিনিময় করতে লাগলো।যেন তিনি রৌদ্রের সাথে পূর্বপরিচিত। রৌদ্র কথার মাঝে একফাকে জিজ্ঞেস করে,
— আমার অর্ডার টা কি ডান মি:?
লোকটি যেন এই কথারই অপেক্ষায় ছিলো।তিনি তৎক্ষনাৎ একজনকে ইশারায় বললেন রৌদ্রের অর্ডার দেওয়া জিনিসটি নিয়ে আসতে। তার মিনিট দুয়েক পরেই একজন এসে রৌদ্রের সামনে একটি লম্বা বক্স রাখেন।রৌদ্র স্বাভাবিকভাবে বক্সটি খুলতেই সেখানে দেখা মিলে একজোড়া সুন্দর ডিজাইনার পায়েল। যেটি সম্পূর্ণই সোনালী রংয়ের। অরিন পায়েলটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অস্ফুটস্বরে বললো,
— বাহ্।খুব সুন্দর ডিজাইন তো!
অরিন কথাটা অস্ফুটস্বরে বললেও রৌদ্রের কানে ঠিকই কথাটি পৌঁছায়। রৌদ্র অরিনকে কিছু না তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে।অরিন রৌদ্রের এমন কান্ডে যারপরনাই অবাক হয়ে বসার টুল ছেড়ে একপ্রকার লাফিয়ে ওঠে। উত্তেজিত কন্ঠে বলতে থাকে,
— একি রোদ ভাই! আপনি আমার সামনে এমন হাঁটু গেড়ে বসলেন কেন? উঠুন প্লিজ।সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
রৌদ্র এবার কিছুটা বিরক্ত হয় যেটা তার চেহারার এক্সপ্রেশনে ফুটে উঠেছে। রৌদ্র মেকি ধমকের সুরে বললো,
— দেখলে দেখুক তাতে আমাদের কি? তাদের চোখ আছে তারাতো দেখবেই।আর তোকে পা আগাতে বলেছি প্রশ্ন করতে নয়।
অরিন রৌদ্রের কথায় কিছুটা থতমত খেয়ে বলে,
— ইয়ে মানে কেনো?
রৌদ্র আবারও দাত কিড়মিড়িয়ে বলে,
— অরি আরেকটা কথা বললে কিন্তু তোর খবর আছে। আর রাগাস না আমায়।যা বলেছি শুধু তাই কর।
অগত্যা অরিন আর কিছু না বলে পা এগিয়ে দেয়।রৌদ্র অরিনের পা ধরে তার হাঁটুতে রাখে।হঠাৎ করে এমন করায় অরিন নিজের ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে রৌদ্রের কাঁধে চেপে ধরে। রৌদ্র মাথানিচু করে ঠোটঁ কামড়ে হাসে।অরিনের পা-টাকে কিছুক্ষণ পরোক্ষ করে একটি পায়েল পড়িয়ে দেয় তাতে।এরূপভাবে অপর পা-টিতেও পড়িয়ে দেয় অন্য পায়েলটি।পায়েল পড়ানো শেষ হতেই রৌদ্র মাথানিচু রেখেই বলে উঠে,
— তোর পা দুটো কি সুন্দররে অরি!
ব্যস এই কথাই যথেষ্ট ছিলো অরিনের শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিতে।রৌদ্র কথায় আবারও অরিনের শীড়দাড়া বেয়ে এক শীতল স্রোত নেমে যায়।হাত-পায়ে যেন এক অসম্ভব কাঁপনের সৃষ্টি হয়েছে তার।দাড়াতে গিয়ে মনে হচ্ছে এক্ষুনি পাদু’টো ভেঙে পড়বে তার এতটা দূর্বল লাগছে নিজেকে।অরিনের এমন অস্বাভাবিক কাঁপা-কাঁপি দেখে রৌদ্র কিছুটা ভ্রু কুচকায়।ভাবতে থাকে এর কারন।পরক্ষণেই তার মনে পড়ে সে ঘোরের বসে ভুল জায়গায় ভুল কথা বলে ফেলেছে। রৌদ্র তৎক্ষনাৎ উঠে দাড়ায়। অরিনকে স্বাভাবিক করতে বললো,
— পায়েল গুলো কেমন হয়েছে দেখতো!
অরিন পরপর মাথা ঝাকিয়ে আমতা আমতা করে নিচু স্বরে জবাব দিলো,
— জি সুন্দর।
এদিকে পাগল ছেলেটা একদৃষ্টিতে অরিনের মসৃণ পাদু’টোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
“ এবার থেকে তোর প্রতিটা হাটার শব্দে আমার ভালোবাসার অস্তিত্ব ফুটে উঠবে সানশাইন! তোর প্রতিটি কদম এবার চিৎকার দিয়ে বলবে— তুই শুধুমাত্র আমার!”
রৌদ্র মাথা ঝাকিয়ে বিল পেয়ে করে সেখান থেকে চলে আসে। আরেকটা রিকশা ঠিক করে উঠে পড়ে দুজনে।রিকশা চলতে শুরু করার কিছুক্ষণ পর রৌদ্র তার হাতে থাকা একটি শপিং ব্যাগ থেকে একমুঠো কাচের চুড়ি বের করে তাকায় অরিনের দিকে।এদিকে অরিন পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে রাতের শহর দেখায় ব্যস্ত। রৌদ্র কিছুক্ষণ অরিনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
— অরি তোর হাতটা দে তো!
অরিন চমকে পাশে তাকায়।দেখতে পায় রৌদ্রের হাতে তার ড্রেসের সাথে মেচিং করা কাচের চুড়ি। অরিন কিছুক্ষণ অবাক চোখে একবার রৌদ্রের মুখের দিকে তো একবার রৌদ্রের হাতের দিকে দৃষ্টি ঘোরায়।আবারও তার ধ্যান ভাঙে রৌদ্রের কথায়,
— কিরে, কি বললাম। দে!
রৌদ্র অরিনের অপেক্ষা না করে নিজেই ধরে নেয় অরিনের হাত।সাথে সাথে চমকে উঠে রৌদ্র। মনে মনে বলেই ফেললো,
— এতো নরম হাত! এটা আমার সানশাইনই তো? নাকি কোন তুলা!
কিন্তু মুখভঙ্গি একদম স্বাভাবিক রেখে চুড়ি গুলো যত্নের সহিত পড়িয়ে দিতে থাকে অরিনের হাতে।রৌদ্র প্রতিটি চুড়ি এমনভাবে পড়াচ্ছে যাতে তার সানশাইন বিন্দুমাত্র ব্যাথা না পায়।
এদিকে অরিনের ভেতরে যেন এক অনিয়ন্ত্রিত কম্পন বয়ে চলছে।হাত পা কেমন অবশ হয়ে আসছে তার।বারবার মনে হচ্ছে এটা সত্যিই তার রোদ ভাই! এতটা কেয়ারিং সে। রোদ ভাই তাহলে কি সত্যিই আমায় ভালোবাসেন? ভাবতে ভাবতে অজান্তেই তার ঠোঁটে মুচকি হাসির দেখা মিলে।
রৌদ্র আর অরিন বাড়ির সামনে নেমে পড়ে।রিকশা বিদায় করে তারা দু’জনেই পাশাপাশি হাটা ধরে বাড়ির মেইন ডোরের দিকে।দুজনেই নিশ্চুপ অথচ মনে হচ্ছে এই নিশ্চুপতাই অনেক কিছু বলে দিচ্ছে এই যুগলের মাঝে।বাড়ির ভিতর ঢোকার ঠিক আগ মুহুর্তে রৌদ্র হঠাৎ ডেকে উঠে অরিনকে,
— অরি!
অরিনও সহসা থমকে দাড়ায়। পিছনে ঘুরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় রৌদ্রের দিকে। রৌদ্র একদম শান্ত অথচ নিরেট দৃষ্টিতে তাকিয়ে অরিনের পানে।কালবিলম্ব না করে আবারও বলে উঠে রৌদ্র,
— কেমন কাটলো দিনটা তোর! মন ভালো করার মতো হয়েছে কিছুটা!
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ১৪
অরিন কিছু না বলে আবারও বাড়ির সদর দরজার দিকে ঘুরে দাড়ায়।রৌদ্র এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে সেখানটায়।চাতক পাখির ন্যায় অপেক্ষায় আছে অরিনের থেকে উত্তর শোনার।অরিন এক কদম সামনে এগিয়ে আবারও সেখানে থমকে দাড়ায়। পেছনে না ঘুরেই বলে দেয়,
–I wish, এমন দিন যেন আমার প্রতিদিন কাটে!
বলেই আর একমুহূর্তও সেখানে দাড়ায় না অরিন। চলে যায় বাড়ির ভিতরে। অথচ পিছনে যে কেও একজন যুদ্ধ জয়ের ন্যায় বিজয়ী হাসছে নিঃশব্দে সে খবর কি আর পেলো অষ্টাদশী? নাহ পেলো না তো!