সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ২১
Jannatul Firdaus Mithila
~ কি হয়েছে তোর? হাতে ওয়ান স্ট্রিপ লাগানো কেন? কোথায় ব্যাথা পেয়েছিস আবার?
বিচলিত কন্ঠে কথাগুলো বলে অরিনকে কাছে টেনে নেন রাফিয়া বেগম আর মাইমুনা বেগম।রাইসা বেগম পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় অরিনকে।জুবাইদা বেগম অরিনের এ-অবস্থা দেখে রান্না ঘরে ছুটেছেন শরবত বানিয়ে আনতে। রুহি,আহি,মাহি সকলেই চিন্তিত ভঙ্গিতে দাড়িয়ে আছে ড্রয়িং রুমে। ড্রয়িং রুমে এই মুহূর্তে ছোট খাটো একটা ভুমিকম্প বয়ে যাচ্ছে অনিকের ওপর দিয়ে।
অনিক অরিনকে নিয়ে বাসায় ফিরতেই সকলে একসাথে ঘিরে ধরে তাদের। অরিনের হাতে ব্যান্ডেজ লাগানো দেখে শুরু হয় সকলের হাজারো প্রশ্নের ঝুড়ি! কিভাবে ব্যাথা পেলো? কোথায় ছিলো এতক্ষণ? কোন বিপদ হয়েছিল কিনা? ইত্যাদি আরও নানান প্রশ্ন শুনতে শুনতে একপ্রকার হাঁপিয়ে ওঠেছে অনিক।তবুও মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বলতে পারছে না ও।পাছে না আবার মা সবার সামনেই গালে দু-এক ঘা বসিয়ে দেয়! এই বয়সে বড়দের হাতে মার খেয়ে ইজ্জতের দফারফা করবার কোন ইচ্ছে নেই তার। তাইতো মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রয়। সাব্বির সাহেবতো ইতোমধ্যেই অনিকের উদ্দেশ্যে দু-একটা হুংকার দিয়ে বলেছেন,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“তুমি সাথে থাকা স্বত্তেও আমার মেয়েটা এতো ব্যাথা পেলো কিভাবে? ”
অনিক জবাবে বরাবরই মৌনতা বজায় রেখেছে। মনে মনে বারংবার সাজাচ্ছে রোদ ভাইয়ের শিখিয়ে দেওয়া কথাগুলো! সাব্বির সাহেব দুয়েকটা ধমকি-ধামকি দিয়ে চুপ করে গেলেন। এতোকিছুর মধ্যে কবির সাহেব এখনো গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে আছেন অনিকের সম্মুখে। ভ্রুকুঞ্চন করে তাকিয়ে আছে তার দিকে।হয়তো মনে মনে কোন উত্তর খুঁজছেন! কবির সাহেব এবার মুখ খুললেন। গলায় কাঠিন্যতা বজায় রেখে বললেন,
~অনিক! আমার রুমে এসো।
বলেই তিনি চলে গেলেন নিজের রুমে। অনিক তার বড়আব্বুর কথায় শুষ্ক ঢোক গিলে। পরে মাথানিচু রেখেই হাঁটা ধরে বড় আব্বুর রুমের দিকে। রুমের দরজার সামনে এসে আর ভেতরে ঢুকবার সাহস পায়না অনিক।কেনো যেন সে তার বড়-আব্বুকে একটু বেশিই ভয় পায়।হয়তো এই ভয় তার প্রতি অগাধ সম্মানের ফলস্বরূপ ! অনিককে নিজের ভাবনায় মশগুল থাকতে দেখে কবির সাহেব হালকা গলা খাঁকারি দিলেন।গম্ভীর সুরে শুধালেন,
~ভেতরে এসো!
অনিক হকচকায়।পরে মাথা ঝাকিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। মাথানিচু করে এসে দাড়ায় রকিং চেয়ারের সামনে, যেখানে আপাতত কবির সাহেব গম্ভীর মুখে বসে তার দিকেই তাকিয়ে আছেন।অনিকের বুকটা দুরুদুরু করে কেঁপে ওঠে। কপালে এসে ভিড় জমায় কয়েক ফোটা ঘামের বিন্দুকনা। কবির সাহেব নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে অনিকের সামনে এগিয়ে দেয়, বলে,
~কপালের ঘামগুলো মুছে নেও।
অনিক কিংকর্তব্যবিমূড় হয়ে দাড়িয়ে রয় কিয়ৎকাল। পরক্ষণেই নিজেকে স্বাভাবিক করে কাঁপা হাতে নিয়ে নেয় রুমালটি।অনিক রুমালটি দিয়ে কপালের ঘাম মুছবার সময় আবারও তার কানে আসে কবির সাহেবের গম্ভীর কণ্ঠ,
~রুমে এসি চলা সত্ত্বেও এতো ঘামছো যে! তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
অনিক মুহুর্তেই ঘাবড়ে যায়। কপালের ওপর রুমাল দিয়ে চেপে রাখা হাতটি থমকে যায়। অনিক বহুকষ্টে আমতা আমতা করে বলে,
~ইয়ে না মানে তেমন কিছু না বড় আব্বু। এমনিতেই গরম লাগছিলো একটু।
কবির সাহেব নিরেট দৃষ্টিতে এখনো অনিকের দিকে তাকিয়ে। শ্লেষাত্মক হাসি দিয়ে বললেন,
~মনে রেখো আমি তোমার বড়-আব্বু।এই হাত দুটো দিয়ে তোমাদের লালন-পালন করেছি। সেই আমিই কিনা এতটুকু বুঝবো না যে কোনটা সত্যি অথবা মিথ্যা! এখন সবটা ঠিকঠাক বলে দাও তো! কি হয়েছিল অরি মামনির সাথে।
অনিক বুঝি এক অদ্ভুত দোলাচালে ফেসে গেছে।একদিকে রোদ ভাইয়ের কড়া নিষেধ তো অন্যদিকে তার বড়-আব্বুর হুকুম।কি করবে এখন ও? অনিক কিছু একটা ভেবে উওর দেয়,
~বড় আব্বু আমি আর অরিন আইসক্রিম খেতে গিয়েছিলাম।সেখানে হঠাৎ দুজন ছেলে বাইক এক্সিডেন্ট করে।আর তুমিতো জানোই বনু রক্ত সহ্য করতে পারেনা।তাই ও স্পটেই জ্ঞান হারায়।তখন আমি রোদ ভাইকে সবটা জানাই।তিনি এসেই অরিনের ট্রিটমেন্ট চালায়।তাইতো ফিরতে কিছুটা লেট হয়। আমি বাসায় কাওকে বলিনি কারণ তোমরা সবাই চিন্তা করবে তাই।
কবির সাহেব অনিকের কথায় এখনো আগের ন্যায় মুখভঙ্গি রেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কবির সাহেবের মুখভঙ্গি দেখে বুঝবার জো নেই যে তিনি আদৌও অনিকের কথা বিশ্বাস করলেন কি না! অনিক মাথানিচু রেখেই বললো,
~বড় আব্বু আর কিছু জিজ্ঞেস করবে?
কবির সাহেব তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ালেন। কোমরের পিঠে দুহাত বেঁধে গম্ভীর গলায় শুধালেন,
~আশা করি তুমি আমার সাথে সত্যিটাই বলেছো! কেননা আমি মিথ্যা কিংবা মিথ্যাবাদী দুটোকেই ঘৃণা করি।
বলেই তিনি অন্যপাশে ফিরলেন। আবারও একই ভঙিমায় বললেন,
~এবার তুমি আসতে পারো!
অনিক যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে। সঙ্গে সঙ্গে প্রস্থান ঘটায় সেখান থেকে। মনে মনে বলেই বসে,
“খোদা এই দুই বাবা -ছেলের মাঝে আমার মতো এক অবলা নিরীহ মানুষকে কোন দুঃখে যে ফেলতে গেলে! ”
অনিক আবারও ফিরে আসে ড্রয়িং রুমে। অরিনকে আশেপাশে কোথাও না দেখে মাকে জিজ্ঞেস করে,
~মা,বনু কই?
রাফিয়া বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালেন ছেলের দিকে।চটে যাওয়া মেজাজে বললেন,
~সে খবর নিয়ে কি লাভ তোমার? একটাবারও বলেছো মেয়েটা যে সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিল। একাই সবটা সামাল দিতে চলে গেলে, ইদানীং খুব বড় হয়ে গিয়েছো তাই না!
মায়ের কথায় মুখটা চুপসে যায় অনিকের।মনে মনে ভাবে,
“মা আমি জানি তুমিসহ সকলেই কষ্ট পেয়েছো কিন্তু এও জানি পুরো ঘটনা যদি তোমাদের জানাই তাহলে তোমরা আরো কষ্ট পাবে।এরচেয়ে বরং আমি-ই নাহয় সবার দুয়েকটা কথা হজম করলাম!”
অনিকের নিরবতা দেখে রাফিয়া বেগম আবারও তেজ নিয়ে বললেন,
~ হ্যা হ্যা এখনতো মায়ের কথা ইগনোর করে চুপ থাকবেই।বাহ বেশ! এ জন্যই বুঝি ছেলে-মেয়েদের এত বড় করেছি।প্রত্যেকে নিজেদের মত করে চলে।মেয়েও যেমন ছেলেটাও তেমন।
অনিক এবার মৃদু হাসে।বাচ্চাদের মতো ধীর গতিতে এগিয়ে আসে সোফায় বসে থাকা মায়ের দিকে। পাশেই জুবাইদা বেগম ইশারায় কিছু একটা শিখিয়ে দিলেন যেন।অনিকও ইশারায় সম্মতি জানায়। অতপর কোন কালবিলম্ব না করে মায়ের কোলে মাথা রেখে মায়ের কোমড় জড়িয়ে ধরে। আহ্লাদী হয়ে বলতে থাকে,
~ও মা মা,আ’ম সরি না! এবারের মতো মাফ করে দাও কথা দিচ্ছি নেক্সট টাইম আর এমটা করবো না!
মায়েদের মনতো মোমের মত নরম! সেখানে সন্তান যদি এমন আহ্লাদীপনা করে তাহলে কি আর শক্ত থাকা যায়? রাফিয়া বেগমও নিমিষেই গলে গেলেন।তবুও মেকি রাগ দেখিয়ে বললেন,
~হয়েছে হয়েছে, এবার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল বন্ধ করো।তোমরা দু-ভাইবোনতো আবার এসবে সেরা।সরো এখন।
অনিক মায়ের কোলে মাথা রেখে চুপটি করে পড়ে থাকে।ঠোঁট কামড়ে নিঃশব্দে হাসে।আহ্লাদী স্বরে টেনে টেনে বলে,
~ও মাগো! এবারের মতো মাফ করে দাও গো।কথা দিচ্ছি এক লাল টুকটুকে বউমা এনে দেবো তোমায়!
রাফিয়া বেগম বিষম খেলেন।পাশ থেকে জুবাইদা বেগম এ কথা শুনে হো হো করে হেসে ওঠেন।মাইমুনা বেগম আর রাইসা বেগম মিটমিট করে হেসেই যাচ্ছেন। রাফিয়া বেগম ছেলের কান মলে দিলেন। অনিক হাল্কা ব্যাথায় ককিয়ে উঠে।রাফিয়া বেগম বললেন,
~ অসভ্য ছেলে দিনদিন নির্লজ্জ হচ্ছো দেখছি! মুখে কিচ্ছু আটকায় না তাইনা?
অনিক জোর করে কান ছাড়িয়ে নেয়। মায়ের হাতের নাগাল হতে হালকা সরে এসে আবারও ভাব নিয়ে বলল,
~বারে! কাল যেটা করতেই হবে সেটা আজ বললে সমস্যা কোথায়? আর তাছাড়া তোমারও তো ইচ্ছে করে নিজের ছেলের বউ দেখার, নাতি-নাতনীদের সঙ্গে খেলা করার।কি ভুল বললাম নাকি?
রাফিয়া বেগম হতবুদ্ধির ন্যায় দাড়িয়ে রইলেন।কি বললো তার ছেলে এগুলো? ছেলেটা তার এতটা নির্লজ্জ হলো কবে থেকে। কই এই পরিবারেতো এমন ঠোটকাটা স্বভাবের কেও নেই।তাহলে এ ছেলে এমন স্বভাব কোত্থেকে পেলো?
পাশ থেকে জুবাইদা বেগম সহ বাকিদের হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার মতো অবস্থা। মাইমুনা বেগম বহুকষ্টে হাসি থামিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
~তা অনিক! বাবা তোর কি কাওকে পছন্দ? থাকলে বল আমরা আজই বাড়িতে এ নিয়ে তোড়জোড় চালাবো।শত হলেও মেজো বুর দাদি হবার এত শখ! আগে জানলেতো বছর খানেক আগেই এই শুভ কাজ সম্পন্ন করে দিতাম রে!
বলেই আবারও অট্টহাসিতে মেতে পড়েন তিনি।পাশ থেকে জুবাইদা বেগম সহমত জানিয়ে বলতে লাগলেন,
~তা যা বলেছিস সেজো! ছেলে আমার এত বড় হলো আগে যদি জানতাম তাহলে রুহির আগে ওর বিয়েটাই ফাইনাল করতাম।
অনিক বুঝও এবার কিছুটা লজ্জা পেলো।মায়ের সঙ্গে কিছুটা দুষ্টুমি করতে গিয়ে এভাবে ফাসবে জানা থাকলে হয়তো কভু এ ভুল করতো না ও।অনিক লজ্জারাঙা মুখ নিয়ে বললো,
~ইয়ে বড়মা।থাকনা এখন এসব…
অনিকের কথা শেষ হবার আগে রাইসা বেগম তার কাছে এলেন।অনিকের থুতনিতে ধরে বললেন,
~কি ব্যাপার অনিক! নিজেই বিয়ের কথা তুলে নিজেই এমন লজ্জা পাচ্ছো? বাব্বাহ! কি সুন্দর নতুন বরের মতো লাগছে দেখতে।
অনিক এবার অপ্রস্তুত হয়। মাথার চুলগুলো হালকা চুলকিয়ে বলে,
~কি যে বলোনা ছোট মা! আমি কোথায় লজ্জা পাচ্ছি!
রাইসা বেগমের এ কথা শুনে হেসে কুটো কুটি খাওয়ার মতো অবস্থা। তিনি রাফিয়া বেগমকে কিছু বলতে যাবে ওমনি রাফিয়া বেগম দাত কিড়মিড়িয়ে বলেন,
~ নির্লজ্জ ছেলে একটা।
অনিক ক্যাবলাকান্ত হাসি দিয়ে মুহুর্তেই কেটে পড়ে সেখান থেকে। এদিকে তার চলে যাওয়ায় আরেক দফা হাসির রোল পড়ে গেলো বাড়ির বউদের মাঝে।
“উহুম,উহু মমম” হালকা ব্যাথাতুর গোঙানির শব্দ ছাড়া বদ্ধ রুমটাতে আর কোন আওয়াজ নেই।মনে হচ্ছে, নিশ্বাস নিলেও যেন তা স্পষ্ট কর্ণগোচর হবে। চোখের ব্যাথায় চোখ মেলে তাকানো যেন দায় এ মুহুর্তে। সিহাব বহু কষ্টে চোখ দুটো খোলার চেষ্টা করে কিন্তু বরাবরই তার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। একটা হাত ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া অন্য হাতটিও যেন রাজ্যের ভার বহন করে আছে। এমন লাগছে কেন ওর? কি হয়েছে ওর হাতদুটোতে। সিহাব আবারও চেষ্টা চালায় চোখ দুটি মেলে তাকাতে।প্রায় মিনিট খানেক চেষ্টা চালাবার পর সিহাব উপলব্ধি করে তার একচোখে অসম্ভব ব্যাথা হচ্ছে এবং সেই চোখ দিয়ে আপাতত অন্ধকার বৈ কিছুই দেখছে না। সিহাবের বুকটা সঙ্গে সঙ্গে ধ্বক করে ওঠে। সে তৎক্ষনাৎ হাত উঁচিয়ে চোখ ধরতে চায় কিন্তু একি! ও হাতটা টের পাচ্ছে না কেন? সিহাব আবারও চেষ্টা করে কিন্তু নাহ! ও সত্যি বাম-হাতটা টের পাচ্ছে না। অবশ লাগছে একদম।সিহাব একচোখ দিয়েই অবশ হওয়া হাতটার দিকে তাকায়। মুহুর্তেই এক বিকট চিৎকার দিয়ে পুরো ঘর কাপিয়ে তুলে ও। চিৎকার দিতে দিতে পাগলের মতো বলতে থাকে,
~আমার হাত! আমার হাত কেটে দিসে। আহ! আমার হাত।
সিহাবের আত্মচিৎকার এক বিকট ধ্বনিতে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে পুরো ঘরময়। সে গলাকাটা প্রাণীর ন্যায় ছটফট করছে একাধারে। সে পাগলের মতো বিলাপ করে যাচ্ছে। তখনই তার কানে আসে কারো শীষ বাজানোর আওয়াজ,
~টুটুটুটু টুঠুটু
সিহাবের কান্নাগুলো মুহুর্তে দলা পাকিয়ে যায়।ভয়ে ভয়ে এক চোখ দিয়ে আওয়াজের উৎসের দিকে তাকায়। সঙ্গে সঙ্গে শরীরে কাটা দিয়ে ওঠে ওর।সামনেই একটা চেয়ারে দু-হাটুর ওপর ভর দিয়ে বসে আছে রৌদ্র। তার দু’হাতে দুটি ধারালো ছুরি যা ইতোমধ্যে একে অপরের সাথে কর্কশ শব্দ তুলে ঘর্ষণ খাচ্ছে। রৌদ্রের সারা শরীর রক্তে রঞ্জিত। শুভ্র মুখশ্রী রক্তে লেপ্টে গিয়ে এক পৈশাচিক আকার ধারণ করেছে। ঠোঁটে বাজছে কান লাগিয়ে দেওয়ার মতো শীষের সূর। সিহাব ভয়ে কেঁপে ওঠে। কাঁপা কন্ঠে বলে,
~তু-তুমি রৌদ্র না?
রৌদ্রের হাতদুটো থেমে যায়। সরু চোখে তাকায় সিহাবের দিকে।মুখে শয়তানি হাসি টেনে বলে ওঠে,
~উহুম রৌদ্র না,বল তোর যম!
বলেই চেয়ার ছেড়ে এগিয়ে আসে সিহাবের দিকে।সিহাব রৌদ্রের এগিয়ে আসা দেখে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
~ছ্-ছেড়ে দাও আমায়।আমি ভুল করেছি আমায় ক্ষমা করে দাও।আমি আর কোন দিন অরিনের…
বাকি কথা শেষ করবার আগেই রৌদ্র সিহাবের মুখ বরাবর সজোরে লাথি দেয়।সিহাব ব্যাথায় ককিয়ে উঠে। তার নাক বেয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত বাহিত হতে শুরু করে। রৌদ্র তার চুলগুলোকে মুষ্টির ভেতর নিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো,
~হুশশ! আমার সানশাইনের নামও যদি তোর ঐ মুখে ওঠে তাহলে এবার তুই নিজের জিভটাও হারাবি।
সিহাব আতকে ওঠে। নিজের সকল ব্যাথা ভুলে কান্না জড়ানো কন্ঠে বলতে থাকে,
~মাফ করে দাও আমায়।প্লিজ ছেড়ে দাও।মেরো না আমায় প্লিজ।
রৌদ্র সিহাবের চুলগুলো ছেড়ে দেয়। ওর দিকে চোয়াল শক্ত রেখে জবাব দেয়,
~উহুম।নাহ তোকে আমি প্রানে মারবো না।কারন আমি রৌদ্র কাওকে প্রানে মারি না কেননা আমি চাইনা কোন নর্দমার কীটকে মেরে নিজের হাত দূষিত করতে।
বলেই সে আবারও সিহাবের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। সিহাবের সামনে একটি আয়না ধরে বলে,
~দেখ তো তোর চেহারাটা এখন কেমন লাগছে!
সিহাব সাথে সাথে তাকায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে।মুহুর্তে আরেক বিকট চিৎকার বের হয়ে আসে তার মুখ থেকে। পিছনের দেওয়ালের সঙ্গে মাথা বারি দিতে দিতে কাঁদতে থাকে।কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে ওঠে,
~এতটা ভয়ানক করে দিলে আমার চেহারাটা! এরচেয়ে ভালো ছিলো তুমি আমায় মেরে ফেলতে।
রৌদ্র তার কথায় বাকা হাসে।তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
~তোর ভাগ্য ভালো এই রৌদ্রের জিবনে এক মায়াবীনি আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। যার সাথে সারাজিবন বাঁচার বড্ড লোভ আমার।তাইতো কাওকে মেরে তার কাছ থেকে চিরতরে দূরে সরতে চাই না। বিশ্বাস কর,আমার যদি কাওকে মেরে ফেলার অনুমতি থাকতো তাহলে আমি সবার আগে তোকে শেষ করতাম কিন্তু আফসোস! ইট’স মাই বেড! তোকে আমি মারতে পারবো না।
সিহাব কান্না ভুলে অবাক চোখে তাকিয়ে রয় রৌদ্রের দিকে।অতপর ভেঙে আসা গলায় বলে,
~তুই একটা উম্মাদ,সাইকো! অরি যদি জানতে পারে তুই এমন তাহলে ও কোনদিনও তোকে ভালোবাসবে না।
রৌদ্র আবারও বাঁকা হাসে। হিসহিসিয়ে বলে ওঠে,
~আগে জানলে তো! এ পৃথিবীতে এমন কেও নেই যে কিনা রৌদ্রের থেকে তার সানশাইনকে আলাদা করবে। ও শুধু আমার, শুধুই আমার। ওর জন্য আমি কেবল সাইকো না বড্ড উম্মাদও।
বলেই হুংকার দিয়ে ওঠে রৌদ্র। অতপর আবারও সিহাবের চুল মুঠোয় নিয়ে কটমট করে বললো,
~তোর কতো বড় সাহস কু****চ্চা আমার সানশাইনের গায়ে টাচ করতে যাস।দেখ তাকিয়ে যে হাত ওকে টাচ করেছে সে হাত আমি কেটে কুকুরকে খাইয়েছি।যেই চোখ আমার সানশাইনকে দেখেছে সে চোখ আমি উপড়ে ফেলেছি। তোর কলিজা কত বড় রে এই ইফতেখার এহসান রৌদ্রের কলিজায় হাত দেয়ার কথা ভাবে।শালা বাস্টার্ড, তোর কলিজা টুকরো টুকরো করে রাস্তার কুকুরকে খাওয়াবো।
রৌদ্র সিহাবকে ছেড়ে দেয়। দুহাতের ওপর নিজের ভর পেছনে ঠেলে দিয়ে বিরাট কন্ঠে ডেকে ওঠে,
~শাহজাহান!
সেকেন্ডের ব্যাবধানে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে আসে লোকটি।সিহাবের দিকে তাকানোর সাহস হয় না তার।কি ভয়ংকর চেহারা হয়েছে সুশ্রী সুদর্শন পুরুষটির।শাহজাহান বিনীত কন্ঠে বললো,
~জি স্যার!
রৌদ্রের কন্ঠে গাম্ভীর্যের আভাস।
~ঐ রুম থেকে ঐ তিন বাস্টার্ডকে নিয়ে আয়।
শাহজাহান তৎক্ষনাৎ মাথা নাড়িয়ে ছুটে যায় অন্য রুমে।অতপর মিনিট পাঁচেক পর তিনজন লোককে ধরে বেধে নিয়ে আসে কয়েকজন মিলে। এই তিনজন আর কেও না, ঐ লোকগুলো যারা কিনা সিহাবের কথায় অরিনকে তুলে এনেছিলো।তিনজনের অবস্থাই বেহাল,করুন! একজনের হাত কেটে দেয়া হয়েছে, তো অন্যজনের পা,আর আরেকজনের এক চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। রক্তে রঞ্জিত সকলের পা থেকে মাথা পর্যন্ত। রৌদ্র লোকগুলোর দিকে না তাকিয়ে একটা ছুরি হাতে নেয়।পরে ছুরিটা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে বলে ওঠে,
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ২০
~আমার সানশাইনকে কি যেন বলেছিলি তোরা? আরেকটু বলতো!
লোকগুলো ঘাবড়ে যায়। শরীরের ব্যাথায় চোখ-মুখ কুচকে আসছে তাদের। নিরব ভূমিকা পালন করে তারা।রৌদ্র তাদের চুপটি দেখে হুংকার ছেড়ে বলে ওঠে,
~শালা কু******চ্চা। কথা বলবি নাকি এক্ষুনি জবাই করবো সব-কয়টাকে।একদম জবাই করে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসবো।