সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ৮
Jannatul Firdaus Mithila
কেটে গেলো আরও ৫ টি দিন।এখন অরিন বেশ সুস্থ। আজ সে সকাল সকাল পড়তে বসেছে, আর মাত্র ১৫ দিন পর তার এডমিশন টেস্ট। বেশকিছুক্ষন পড়ার পর টেবিল ছাড়ে সে।দেওয়াল ঘড়িতে এখন ৯ টা বাজে। অরিন কোচিং-এর জন্য একেবারে রেডি হয়ে নিচে নামে।ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত হতেই তার চোখ যায় সামনে বসে থাকা রৌদ্রর ওপরে। রৌদ্র একেবারে ফুল গেটআপে আছে। হালকা অলিভ রংয়ের একটি ফুল হাতা শার্ট, বুকের সামনের দুটো বোতাম উম্মুক্ত করে রাখা, কালো ফর্মাল প্যান্ট, হাতে ব্রান্ডেড ওয়াচ,চোখে হালকা খয়েরী রঙের চিকন ফ্রেমের চশমা,উফফ একবার তার দিকে তাকালে যে চোখ ফেরানো দায়।আচ্ছা অরিনকি একবার এই গম্ভীরমুখোর এমন গেটআপের ওপর ক্রাশ খাবে? কিন্তু অরিন তো সেই কবে থেকেই তার রোদ ভাইয়ের ওপর ক্রাশ খেয়ে বসে আছে, এ আর নতুন কি।অরিনকে টেবিলের সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার সেজো মা বলে উঠে,
— কি রে অরি।দাড়িয়ে আছিস কেনো মা বস।তারাতাড়ি খেয়ে নে নাহলে আজকেও লেট করবি তো।
— হু,ও হ্যা বসছি।
বলেই বসে পড়ে অরিন।প্লেটে খাবার নিয়ে খেতে খেতে বারবার আড় চোখে রোদের দিকে তাকাচ্ছে সে।হঠাৎ করে রৌদ্রও অরিনের দিকে তাকায় এতে অরিন থতমত খেয়ে যায়,সাথে সাথেই চোখ সরিয়ে মাথা নিচু করে নিজের খাওয়ায় মনোযোগ দেয় অরিন।রৌদ্র হসপিটালে জয়েন করেছে আজ ৫ দিন হলো।রৌদ্র খাবার শেষ করে মাকে বলে বেরিয়ে পড়ে।এদিকে রৌদ্র কে চলে যেতে দেখে অরিনও যেনো হাফ ছেড়ে উঠে। অরিনও খাওয়া শেষ করে তার মা কে বলে বেরিয়ে পড়ে কোচিং-এর উদ্দেশ্যে।বাড়ির বাহিরে গিয়ে রাস্তায় দাড়ায় সে,কিন্তু ৫ মিনিট চলে যাওয়ার পরও কোন রিকশা না পাওয়ায় হাটতে থাকে অরিন উদ্দেশ্য যদি সামনে কোন রিকশা পাওয়া যায়।অরিনের হাটার মাঝেই হুট করে একটি গাড়ি তার সামনে ব্রেক করে।অরিন বেশ ভালো করেই চিনে গাড়িটিকে এবং গাড়ির মালিককে,কিন্তু কথা হচ্ছে সে তো আর-ও আগে বাসা থেকে বের হয়েছে তাহলে এখন তার সামনে কি করে এলো? অরিনের এসব ভাবনার মাঝেই রৌদ্র খেঁকিয়ে বলতে থাকে,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
— কি রে তোর ভাবনা চিন্তা কি এই জনমে শেষ হবে? যদি শেষ হয়ে থাকে তাহলে গাড়িতে ওঠ।
— না মানে,রোদ ভাই আপনি না অনেক আগেই বের হয়েছিলেন তাহলে এখন এখানে কিভাবে এলেন?
— তোকে এত কিছুর কৈফিয়ত দিতে হবে কেনো শুনি? গাড়িতে উঠতে বলছি চুপচাপ ওঠ।
— আসলে রোদ ভাই, আপনি চলে যান আমি রিকশা নিয়ে যেতে পারবো।আপনার হসপিটালে যেতে তো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
অরিনের এমন কথা শুনে রৌদ্র কটমট করে তার দিকে তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে আসে। এদিকে হঠাৎ করে রোদকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে গলা শুকিয়ে আসে অরিনের। “এই রে বেটা আবার রেগে গেলো নাকি? এই কয়দিন যে পরিমাণে ধমক দিয়েছে না জানি এখন তার কথা না শোনায় আবার তুলে আছাড় না মারে” মনে মনে বলতে থাকে অরিন।
— তুই তো দেখি প্রচুর ঘাড়ত্যাড়া হইছিস।একেবারে ঘাড়ের রগ কেটে দিবো বেয়াদব। না থাকবে ঘাড় না থাকবে ঘাড়ত্যাড়ামি।
বলেই এক হাতে অরিনের হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে অন্য হাতে গাড়ির দরজা খুলে রৌদ্র। গাড়িতে অরিনকে বসিয়ে নিজেও গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে। এদিকে অরিন ও ভয়ে ভয়ে সিটবেল্ট লাগিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
— নেক্সট টাইম যদি আমার তোকে এক কথা দ্বিতীয় বার বলা লাগে তাহলে মনে রাখিস কথা শোনার জন্য তোর কানদুটো আস্ত থাকবে না।ঠাটিয়ে দুটো লাগাবো যাতে আর কোনদিন শুধু আমার না কারোরই কথা তোর শুনতে না হয়।রিমেম্বার ইট।চোয়াল শক্ত করে বলে উঠে রৌদ্র।
অরিন চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রোদের দিকে। কি বললো লোকটা? ওর কান বয়রা করে দিবে? যদি সত্যি এমনটা করে তাহলে অরিনের কি হবে? ভাবতেই হালকা ঢোক গিলে অরিন।
পরো রাস্তা দুজনের মধ্যে কেউই কোন কথা বলেনি।প্রায় ২০ মিনিট পর অরিনের কোচিংএর সামনে গাড়ি থামায় রোদ। অরিনও গাড়ি থেকে নামতে যাবে এমন সময় রৌদ্র পেছন থেকে বলে উঠে,
— দুপুরে ক্লাস শেষে রিকশার জন্য দাড়িয়ে থাকবি না,গাড়ি আসবে সেটা দিয়েই চলে যাবি।
— না না, তার কোন…
— তোকে আমি জিজ্ঞেস করছি কিছু? বলেছি গাড়িতে যাবি ব্যস গাড়িতেই যাবি।যদি কথার নড়চড় হয় তো মনে রাখিস,তোর একদিন আর আমার যে কয়দিন লাগে।
কর্কশ গলায় কথাগুলো বলে থামে রৌদ্র। অরিন আর কি বলবে,এই হিটলারের কথা উপেক্ষা করে কি আর নিজের দূর্গতি ডেকে আনবে সে? তাই কিছু না বলে আস্তে করে আচ্ছা বলে ভিতরে চলে যায় অরিন।অরিনের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে রৌদ্র। পরক্ষণেই মনে মনে বলতে থাকে,
“সরি সানশাইন, কিন্তু তোর সাথে নরম হলে যে আমি নিজেকে সামলাতে পারবো না।এই মুহূর্তে নিজেকে না সামলালে যে সবটাই গড়মিল হয়ে যাবে।”
ভেবেই গাড়ি স্টার্ট করে চলে যায় নিজ গন্তব্যে। প্রায় ৩০ মিনিট পর হসপিটালে পৌঁছায় রৌদ্র। গাড়ি পার্ক করে এসে চলে যায় নিজের জন্য বরাদ্দকৃত কেবিনে।
প্রায় দু’ঘন্টা রোগী দেখে বড্ড ক্লান্ত রৌদ্র।এরই মাঝে রৌদ্রের রুমে হঠাৎ আগমন ঘটে মিস:মৌটুসী হায়দারের । রৌদ্রর কলিগ (গাইনি বিভাগের)। মৌটুসী হায়দার অত্যন্ত আধুনিকমনা মেয়ে।চুলগুলো ব্রাউন কালার করা,হাটুর কিছুটা নিচ অবধি স্কার্ট এবং একটি টপস পড়নে তার।রৌদ্রর জয়েনের প্রথম দিন থেকেই সময় পেলেই রৌদ্রর কাছে চলে আসে এটেনশন পেতে।আজও তার ব্যাতিক্রম নয়।রৌদ্র তার আগমনে চোয়াল শক্ত করে বসে আছে নিজ স্থানে। মৌটুসী রৌদ্রর সামনের চেয়ারে বসতে বসতে বলে উঠেন,
— হেই মিস্টার রৌদ্র। How are you doing?
— yeah,I’m fine miss.তা আপনি এখানে কি করছেন? Anything serious ?
— আরে না, তেমন কিছু না, আসলে একা একা বোর হচ্ছিলাম তাই আপনার কাছে চলে আসলাম। আব,if you don’t mind,Let’s have a cup of coffee.
— extremely sorry miss.Actually আমার এখন একটা সার্জারী আছে, so I’ve to go there,hope you don’t mind.umm,excuse me.
বলেই রৌদ্র সেখান থেকে চলে যায়।রৌদ্রের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে মৌটুসী বাঁকা হেসে বলে উঠে,
— যতই পালাই পালাই করেন না কেনো মিস্টার হ্যান্ডসাম,এই মৌটুসী যেটা একবার চায় সেটা যে কোন মূল্যে নিজের করেই ছাড়ে।
অরিনের কোচিং শেষ হয়েছে মাত্র। কোচিং শেষে নিজের বান্ধবীদের সাথে সে যেন রাজ্যের আলাপ জুড়ে বসেছে,এ আলাপ যেনো আজ ফুরাবার নয়।আলাপ করতে করতেই তিন বান্ধবী রাস্তা দিয়ে হাটতে থাকে।অরিনের জন্য এখনও গাড়ি এসে পৌঁছায়নি। হেসে হেসে তিনজন রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো এমন সময় পাশের টং দোকানে কিছু বখাটেদের বসে থাকতে দেখে, তারা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে নিজেদের মতো সোজা হাটতে থাকে।
—“চুমকি চলেছে একা পথে,সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে,কি সুন্দরী আমরা কি সাথে যাবো তোমার? ”
বখাটেদের মধ্যে থেকে একজন বিশ্রী ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে উঠে।পাশের জন ফের বলে ওঠে,
— আরে ভাই হলুদ জামা পড়নে মাইয়াডা তো হেব্বি। পুরাই আগুন।
অরিনকে দেখে তারা যেনো আর-ও বেশি করে বলতে থাকে। এদিকে তাদের এমন কথায় তিন বান্ধবীই ব্যাতিব্যস্ত হয়ে সামনে হাটতে থাকে।অরিনতো মনে মনে বলেই যাচ্ছে,
“আল্লাহ এই যাত্রায় বাচিয়ে দাও,আর এভাবে ভর দুপুরে খালি রাস্তায় হাটবো না” পাশ থেকে হেনা তো প্রায় কেদেই দিচ্ছে। ফারিয়াও চুপচাপ হেটে যাচ্ছে। এরই মাঝে তাদের সামনে অরিনের বাড়ি থেকে গাড়ি চলে আসে। গাড়ি চলে আসাতে তিনজনই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। অতঃপর তিনজনই গাড়িতে উঠে বাড়ির দিকে চলে যায়।বলাবাহুল্য অরিনের বাড়ির কিছুটা আগে হেনার বাসা।আর অরিনের বাড়ির থেকে কিছুটা সামনে ফারিয়ার বাসা।
অরিন বাড়ির সামনে নেমে ড্রাইভার কে বলে দেয়,
— চাচা,ফারিয়া কে সামনে নামিয়ে দিন,ও আপনাকে পথ দেখিয়ে দিবে ওর বাসার।
— আইচ্ছা মামুনি,আফনে চিন্তা কইরেন না আমি হেরে ঠিকমতো পৌছাইয়া দিয়ামু।
— আচ্ছা, বায় ফারি।গিয়ে কল দিস।
— ওকে।
বলেই বাড়িতে ঢুকে অরিন।বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই একজন দৌড়ে এসে অরিনের কােমর জড়িয়ে ধরে। অরিন কিছুটা হকচকিয়ে যায় কিন্তু পরক্ষণেই ড্রয়িং রুমে উপস্থিত মেহমানদের দেখে সেও যেন খুশিতে আত্মহারা। ড্রয়িং রুমেই বসে আছেন অরিনদের ফুপি মেহরিন এহসান তার পাশেই আছেন তার স্বামী জনাব:রাফিদ আয়মান।আর অরিনকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছে রিমি অরিনের ফুপাতো বোন।রিমিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে তার দুগালে চুমু খায় অরিন,মেয়েটা বেশ মিষ্টি দেখতে।
— কেমন আছে আমাদের রিমঝিম টা।
— খুউউউব ভালো,অরিপু তুমি কেমন আছো?
— আমিও খুউউব ভালো আছি সোনা।এতদিন আসলে না কেনো,আমি তোমায় খুব মিস করেছি।
— আমিও তোমায় মিস করেছি। কিন্তু স্কুল বন্ধ পায়নি তো।বলেই ঠোঁট উল্টে ফেলে রিমি।
বোনের এমন অবস্থা দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠে অরিন। অতপর কপালে চুমু একে দিয়ে বলে,
— থাক রিমঝিম মন খারাপ করো না,এখন তো এসে পড়েছো তাই না,এবার আমরা বেশ মজা করবো ওকে।
— ইয়েএএ। ওকে,ডান।
—- কি শুধু ওর সাথেই কথা বলবে আমার মা টা, আমার সাথে কি কথা বলার একটুও সময় হবে না?
সোফা ছেড়ে অরিনের সামনে এগিয়ে আসতে আসতে বলেন মেহরিন এহসান।
— যাও আমি রাগ করেছি তোমার সাথে। তুমি প্রায় কতদিন পরে এলে।একটুও কি মনে পড়েনি আমাদের কথা? আমি নাহয় কোচিংয়ের জন্য যেতে পারিনি তাই বলে তুমিও তো আসলে না,হু যাও কোন কথা নেই আমার।
মেকি রাগ দেখিয়ে গাল ফুলিয়ে বলে উঠে অরিন। অরিনের এমন গাল ফুলানো দেখে হেসে উঠে বাড়ির সকলে।
— সরি না আমার সোনামা টা,আসলে সব দোষ তোমার ফুপাজানের।তার জন্যই তো আসতে পারলাম না,তার ছুটি পাওয়াই যে দুষ্কর। এবার আর রাগ করেনা আমার লক্ষ্মী মা টা।
বলেই অরিনকে বুকে জড়িয়ে নেন তিনি। অরিনও আর রাগ করে থাকে না, সেও ঝাপিয়ে পড়ে তার কোলে।তাদের এমন দৃশ্য দেখে রাফিদ সাহেব বলে উঠেন,
— তা আমরাও তো এদিকে আছি নাকি? মেয়েটা কে একটু আমাদের ও দেখতে দাও, নাকি সব আদর নিজে একাই করবে?
— হু হু সব আদর শুধু বনুর জন্য আর আমিতো পানিতে ভেসে আসছি তাই না।
বাড়ির সদর দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থেকে বলতে থাকে অনিক।
— ওরে পাজি ছেলে,তুমি কি এতক্ষণ ছিলে নাকি যে তোমায় আদর করবো? কখন এলে তুমি আব্বু?
অনিককে বুকে নিয়ে বলে উঠেন মেহরিন এহসান।
— যখন তুমি বনুকে আদর করছিলে তখন।
— আচ্ছা আয় এখন ভেতরে ঢোক তোরা।বলেই তাদের নিয়ে ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হন মেহরিন বেগম।অরিনতো ফুপাকে সালাম দিয়ে পাশে বসে কুশলাদি বিনিময়ে ব্যস্ত। তার আবার রাফিদ সাহেব কে বেশ ভালো লাগে,কি সুন্দর ডিসিপ্লিন, ওয়েল বিহেভিয়ার অবশ্য এমনটাই বুঝি ডিফেন্সে চাকরিরত সকলেই হয়ে থাকে।কথা বলার মাঝেই রাতুল উপস্থিত হয়।সে এতক্ষণ পুতুলের সাথে ছিলো,দুজনেই সেম বয়সের হওয়ায় তাদের মাঝে মিলটা একটু বেশিই।রাতুল ও পুতুল সেম ক্লাসেই পড়ে।রাতুল এসেই বলে উঠে,
— গায়েস, তোমরা কি আমায় ভুলে গেলে?
— না গো মিস্টার হ্যান্ডসাম তোমায় আর কেউ ভুললেও আমি কি করে ভুলি বলোতো? বেশ আহ্লাদী স্বরে দুষ্টমি করে বলতে থাকে অরিন। এদিকে অরিনের কথা শোনে উপস্থিত সকলেই এক সঙ্গে হেসে উঠে। সকলের সাথেই বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে নিজের রুমে চলে যায় অরিন।
চোখ পিটপিট করে খোলার চেষ্টা করেও খুলতে পারছে না একজন। তার হাত,পা গুলো একটি চেয়ারের হাতলের সঙ্গে বাধা।মাথা থেকে চুইয়ে চুইয়ে তরল জাতীয় কিছু পড়ছে কিন্তু সে আন্দাজ করতে পারছে না এগুলো কি।চারিদিকটা কেমন ঘুটঘুটে অন্ধকারে নিমজ্জিত। ভ্যাপসা একটা গন্ধে পরিবেশ টা আবদ্ধ। লোকটি বেশ কয়েকবার নিজেকে ছোটানোর প্রানপন চেষ্টা করেও ছোটাতে পারেনি।আচ্ছা কি হয়েছিলো তখন তার সাথে, মনে করতে চেষ্টা করলো লোকটি এখানে আসার পূর্বের ঘটনা……..
“ঐ রফিক চা দে তো তারাতাড়ি। বাল একটা সুন্দরীরেও আইজকা একটুখানি ছুঁইতে পারলাম না।শালার দিনডাই কুফা।”
“হ ভাই একখান সত্যি কথা কইছেন,আইজকা কাওরেই তেমন দেখবার পারতাছি না,ঐ যে তহন যে তিনডা সুন্দরী দেখছিলাম এই শেষ এর পর তো আর একটারেও এইহানে আইবার দেখলাম না”
“হ রে শরীইফফা, কি মনে করাই দিলি,ঐ হলুদ মালডা না এক্কেবারে ঝাক্কাস আছিলোরে,ইশশ তহন যদি গাড়িডা সামনে না আইতো ঠিকি আইজকা হেরে তুইল্লা লইয়া যাইয়া রাইতে হগলে মিইল্লা পার্টি করতাম”
“তাই নাকি এত শখ তোর? ”
হঠাৎ করেই কথার মাঝে অচেনা আগন্তুকের কণ্ঠ শুনে পিছনে তাকায় বখাটেগুলো।বেশ দাম্ভিকতার সাথে জিজ্ঞেস করে ওঠে বখাটেদের লিডার,
— ঐ মিয়ারা কেডা আফনেরা, এনে কি? কি লাগবো?
— বেশি কিছু না তোদের লাগবে।বলেই আগন্তুক আর তার সাথে দাড়ানো কয়েকটি ছেলে মিলে একটি কালো মাইক্রো করে তাদের তুলে নিয়ে যায়।
ব্যস আর মনে নেই কিছু।আর বেশি কিছু মনে করতে গেলেই মাথায় কেমন এক ভোতা যন্ত্রণা শুরু হচ্ছে লোকটির। বেশকিছুক্ষন পর অন্ধকার ঘরটিতে একটু একটু করে আলো ফুটে ওঠে, লোকটি আলোর দিকে ঠিকমতো তাকাতে না পেরে চোখ পিটপিট করে সামনে তাকিয়ে দেখে, কেউ একজন হাতে কিছু একটা নিয়ে তার দিকেই আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে।লোকটি এখনও বুঝে উঠতে পারছে না কি হচ্ছে তার সাথে। অতঃপর আর ধৈর্য ধরতে না পেরে চেচিয়ে উঠে হাত-পা বাঁধা লোকটি,
— ঐ কেডা আফনে? আমারে এমনে বাইন্ধা রাখছেন কেন? আফনে জানেন আমি কে? কেন ধইরা আনছেন আমারে?
— শুনেছি তোর নাকি কলিজা বেশ বড় হয়ে গেছে, তাই সেটা কেটে ছোট করতে নিয়ে আসছি ।ইউ নো না, মানুষের কলিজা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বড় হয়ে গেলে তার বেচে থাকা মুশকিল।
বেশ ভাব নিয়ে কথাগুলো বলে উঠে সামনে দাড়িয়ে থাকা আগন্তুক টি।
— ক-ক-কি, কি ক-ক-কইতাছেন আফনে,আ-আমার কলিজ-জা ব-বড় মানে।
— বা-রে, ইফতেখার এহসান রৌদ্রর কলিজায় যে হাত দেওয়ার দুঃসাহস করে তার কলিজা কি আর ছোট হতে পারে বল? তাই তো As a doctor, আমার ডিউটি হচ্ছে মানুষের অর্গান যদি ডিস্টার্ব করে তাহলে সেটাকে সাড়িয়ে তোলা।কিন্তু এখানে তো তোর গোটা কলিজাটাই বড় তাই ভাবছি সেটা কেটে ছোটো করে দি, কি বলিস?
— ভাই ভাই,আমি সত্যিই বুঝবার পারতাছি না আফনে কিইয়ের কথা কইতাছেন। আফনে হয়তো ভুল বুঝছেন।
— আমার কলিজায় হাত দেস আর তুই কিনা আমাকে বলিস আমি ভুল করছি,বাস্টার্ড, তুই তোর নোংরা জিভ দিয়ে যেই সুন্দরী কে নিয়ে বাজে কথা বলছিস সেই মেয়েটাই None other then my sunshine. আর তার জন্যই তুই এখানে।
লোকটির চোয়াল শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠে রৌদ্র। তার শক্ত হাতের থাবায় লোকটির মাড়ি ইতোমধ্যেই কড়মড় আওয়াজ করছে যেন এই বুঝি মাড়িটা খসে পড়বে নিচে।এবার লোকটি বেশ বুঝতে পারছে কেনো তাকে এখানে ধরে আনা হয়েছে। লোকটি ব্যাথায় ছটফট করতে থাকে রৌদ্রর হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য কিন্তু রৌদ্রর বিড়াল চোখ যেন জলন্ত অগ্নিশিখার ন্যায় লাল টকটকে হয়ে উঠেছে।বেশকিছুক্ষন পর লোকটির মাড়ি ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছে মতো থাপ্পড়, ঘুষি মারতে থাকে রোদ। লোকটির মুখ দিয়ে ইতোমধ্যেই রক্ত ঝড়ছে।ঘরটিতে শুধু তারা দুজনেই নয় বরং বখাটেদের প্রতিটি সদস্য উপস্থিত তাদের সকলের হাত পা বাধা দড়ি দিয়ে আর মুখে টেপ লাগানো,তাদের থেকে কিছুটা দুরত্বে উপস্থিত আছে তাদের ধরে নিয়ে আসা লোকগুলো। একদম দরজার কাছাকাছি দাড়িয়ে আছে রেহান তার মুখো ভঙ্গী একদম স্বাভাবিক যেনো যা হচ্ছে এর সাথে সে বেশ আগে থেকেই পরিচিত এবং এটাই যেন এই মুহূর্তে স্বাভাবিক বিষয়। রৌদ্র এবার লোকটাকে হাতে থাকা রড দিয়ে বেধড়ক মারতে থাকে, লোকটি ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে ছটফট করতে থাকে।রৌদ্রর এমন আচরণে থরথর করে কাঁপতে থাকে বাকি বখাটেগুলো।তাদের ধরে আনা লোকগুলোরও প্রায় একই অবস্থা তাদেরও গলা শুকিয়ে আসছে বারবার। তারা শুধু ভাবছে,
“মেয়েটিকে নিয়ে সামান্য এটুকু কথা বলাতে এদের এই হাল করছে না জানি মেয়েটা কে যদি ভুলক্রমেও ওরা টাচ করে ফেলতো তখন জানি কি হতো”
এতদিন ধরে তো ওরাই অরিনকে রৌদ্রর কথায় চোখে চোখে রেখেছে। অরিন বাসা থেকে বের হওয়া মাত্রই তারা অরিনকে গার্ড দিতো দূর থেকে। যখনি অরিনকে কোন ছেলে প্রপোজ করতো বা তার পাশে ভিড়ারও চেষ্টা করতো তখনই তারা রৌদ্র কে জানাতো।রৌদ্রর আদেশেই তারা সেসব ছেলেদের প্রপোজ করার পরদিনই হাসপাতালে পাঠিয়ে দিতো।কিন্তু তারাতো শুধু মাত্র ছোটখাটো এক্সিডেন্ট করাতো,কিন্তু আজ রৌদ্র যেভাবে বেধড়ক মারধর করছে এটা দেখে তারাও বেশ অবাক।
রৌদ্র একে একে প্রত্যেকটাকে মারতে মারতে আধমরা করে তবেই ক্ষান্ত হয়েছে। হাতের রডটি ইতোমধ্যেই রক্তে লাল হয়ে গেছে, সেটা থেকে এখনও চুইয়ে চুইয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। রৌদ্র এক ঝটকায় রডটিকে দূরে ছুড়ে ফেলে।অতঃপর তার অনুগত লোকেদের মধ্যে একজনকে বেশ উচ্চশব্দে ডাক দেয়,
— শাহজাহান….
— জ-জি স-স্যার
— এক্ষুনি বাস্টার্ডগুলোকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দাও। খরচা যা লাগবে দিয়ে দিবে। যাও।
—ও-ওকে ব-বস।
বলেই লোকটি ছুটে বাকিদের কে নিয়ে মার খাওয়া লেকগুলো কে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায় হসপিটালের উদ্দেশ্যে। এদিকে রৌদ্র পড়নের শার্টটি টেনে খুলে ফেলে। রেহান রৌদ্রর সামনে এসে তার হাতে থাকা শপিং ব্যাগ টি বাড়িয়ে দেয় রৌদ্রর পানে।রৌদ্র ও চুপচাপ ব্যাগ থেকে সেম কালারের শার্টটি গায়ে জড়িয়ে নেয়।এরই মাঝে রেহান বলে উঠে,
— আর কত মারবি এভাবে, যদি ও প্রানে মারিস না বাট আধমরা তো করেই ফেলিস।
— সো হোয়াট।আমার সানশাইনের ওপর কারো নজর পড়লে সে নজর উপরে ফেলতে আমি দু’সেকেণ্ড ও ভাববো না।She is mine only mine.
— তুই কি জানিস তুই অরিনের জন্য সাইকো হয়ে যাচ্ছিস?
— hmm.I know that very well. ওর জন্য শুধু সাইকো না,আমি বদ্ধ উন্মাদ ও হতে রাজি।
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি পর্ব ৭
বলেই মুচকি হাসে রৌদ্র। এদিকে রৌদ্রর এমন খাপছাড়া উত্তরে রেহান বরাবরের মতোই ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে।ও তো বেশ ভালো করেই চেনে রৌদ্র কে।এই ছেলে যে অরিনের পাশে তার পরিবার ছাড়া একটা মাছিকেও সহ্য করতে পারে না।মাঝে মাঝে ভাবে একটা মানুষ কিকরে তাঁর ভালোবাসার মানুষের জন্য এতটা পজেসিভ হতে পারে ? কই সে তো রুহির জন্য এমনটা করে না,তাই বলে কি সে রুহিকে ভালোবাসে না? হ্যা অবশ্যই ভালোবাসে,খুব ভালোবাসে, কিন্তু সবার ভালোবাসার ধরন যে এক না।কেউ কেউ ভালোবাসে প্রেমিক হয়ে। আর কেউ কেউ ভালোবাসে উম্মাদ এবং ভয়ংকর প্রেমিক হয়ে।রেহানের মনে হয় রৌদ্র ভয়ংকর প্রেমিক।যে নিজের ভালোবাসার জন্য কারো জিবন নিতেও পারে আবার তার ভালোবাসার জন্য হাসতে হাসতে নিজের জিবনটা দিতেও পারে।