সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ১৬
Jannatul Firdaus Mithila
হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হলো প্রায় আধঘন্টা হবে।সবাই যে যার মতো করে এটা সেটা করতে ব্যস্ত। অরিন বসেছিল বসার রুমে।তার পাশেই বসে আছে অনিক।বোনের সাথে খুনসুটিতে ব্যস্ত ছেলেটা।তখনি সেখানে উপস্থিত হয় বাড়ির বড়রা। কবির সাহেব গম্ভীর মুখে বসলেন সোফায়। একবার আড়চোখে তাকিয়ে দেখলেন অনিক আর অরিনকে।তারপর চোখ সরিয়ে মাটির দিকে নিবদ্ধ করলেন তিনি।একে একে সাব্বির সাহেব, তায়েফ, তাশরিক এবং জুবাইদা বেগম আর রাফিয়া বেগমও আসলেন সেথায়।জুবাইদা বেগম এসেই ব্যাক্ত করলেন,
“ আচ্ছা আমি বলছিলাম কি! রোদ আর শিশিরকে সামনে রেখে বিয়ের কথাটা জিজ্ঞেস করলে কেমন হয়?”
কথাটা শোনামাত্রই অরিনের বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। মেয়েটা তৎক্ষনাৎ মাথানিচু করে চোখ বন্ধ করে নেয়। আশ্চর্য! সে-তো ভুলেই বসেছিল রৌদ্র আর শিশিরের ব্যাপারটা। অরিনের বুকটায় আবারও কেমন জানি চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে। নাহ! এখানে বসে থেকে এ-সব শোনার বিলকুল ধৈর্য নেই তার। মেয়েটা ফট করে উঠে দাড়ায়। তাকে দাড়াতে দেখে সাব্বির সাহেব বলে ওঠেন,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“ কই যাও মা?”
অরিন কি শুনলো কে জানে? সে কেমন অন্যমনস্ক হয়ে জবাব দিলো,
“ কষ্ট হচ্ছে আব্বু! ”
মেয়ের কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যান সাব্বির সাহেবসহ উপস্থিত সকলে। অসংখ্য অবাক চোখ ইতোমধ্যেই নিবদ্ধ হয়েছে তার ওপর। কবির সাহেব গম্ভীর গলায় শুধালেন,
“ মানে?”
তৎক্ষনাৎ সম্বিৎ ফিরে পায় অরিন।মনে পড়ে যায় কিছুক্ষণ আগের বলা কথাটা।মেয়েটা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কথাটাকে ঘুরিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
“ ইয়ে মানে বড় আব্বু! শাড়ি পড়ে থাকতে কষ্ট হচ্ছে আমার।তাই চলে যাচ্ছি চেঞ্জ করতে।”
এরূপ কথায় সকলেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন মুহূর্তেই।অরিনও আর কিছু না বলে চলে যায় সেখান থেকে। এতক্ষণ পাশে বসে চুপচাপ সবটা পরোখ করছিলো অনিক।আর কেও না জানুক সে-তো বোঝে বোনের মনের অবস্থা। ছেলেটা মুখের সামনে হাত ঠেকিয়ে বসে ছিলো এতক্ষণ। কিন্তু এখন আর বসে থেকে এসব শুনতে ইচ্ছে করছে না তার।সে চট করে উঠে দাড়ায়। সবার উদ্দেশ্যে বলে,
“ ফ্রেশ হতে যাচ্ছি। ”
বলেই একপ্রকার হন্তদন্ত হয়ে সেখান থেকে চলে আসে ছেলেটা।মনে মনে ভাবতে থাকে,
“ কেন করলে এমনটা রোদ ভাই? যখন তুমি শিশিরকেই ভালোবাসতে তাহলে শুধু শুধু কেন আমার বোনের অনুভুতি নিয়ে খেলতে গেলে? এমন মারাত্মক জঘন্য কাজের জন্য তোমায় কিভাবে ক্ষমা করবো আমি? কিভাবে? ”
বাইরে তুমুল বর্ষা।গ্রামের গ্রীষ্মের সৌন্দর্যের এই এক প্রতীফলন।কখন যে কাল বৈশাখীর ঝড় নেমে আসবে তা বলা মুশকিল! এই যেমন আজকের ব্যাপারটাই ধরুন না। সারাদিনতো ভালোই গরম ছিলো কিন্তু এখন? হুট করেই মেঘেদের গর্জন তারওপর ভারি হাওয়া নিয়ে চলতে থাকা তুমুল বর্ষা। অন্য সবাই যেখানে এমন বৃষ্টিপাতে ঘরে খিল মেরে বসে আছে সেখানে অরিন মেয়েটা এমন বৃষ্টিতেও ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে।বৃষ্টির তোপে মেয়েটার ক্ষুদ্র দেহখানা বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে কেমন! হাত-পা, মুখ ইতোমধ্যেই হয়ে উঠেছে ফ্যাকাশে।মেয়েটার চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া অশ্রুকনাগুলো বেশ ভালো উপায়ই পেয়েছে নিজেদের ঝরতে দেবার।এই যে এখন! তারা আপনমনে ঝরছে।বৃষ্টির পানিতে মিশে যাচ্ছে একাকার হয়ে।
বোঝবার জো নেই কোনটা অশ্রু ফোটা, কোনটা বৃষ্টির ফোটা। তখনি আরেক বিকট শব্দ তুলে মেঘ গর্জন তুলে।অরিনও খানিকটা কেঁপে ওঠে ছাঁদের রেলিঙটা আঁকড়ে ধরে দাড়িয়ে থাকে।কেন জানি মনটা আজকে তার কিছুতেই বাঁধ মানছে না।কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না। বুকের খাঁচায় লুকায়িত হৃদয়টা আজ বেশ পুড়ছে মেয়েটার।সেই পোড়ার দহন এতটাই বেশি যে ঝড়ে পড়া বৃষ্টির শীতল স্পর্শ গুলোও তা শান্ত করতে বরাবরই ব্যার্থ হচ্ছে। অরিন চোখ বন্ধ করে ফুপাতে থাকে।ঠিক তখনি তার ডানহাতের কনুই ধরে কেও তাকে পেছনে ঘোরায়।অরিন হকচকিয়ে ওঠে। চোখ মেলে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় রৌদ্রের বৃষ্টি ভেজা মুখখানা। পরক্ষণেই কানে আসে রৌদ্রের খেঁকিয়ে ওঠা কন্ঠ!
“ এই! তুই এতো বৃষ্টির মধ্যে এখানে দাড়িয়ে আছিস কেন? তোর না বৃষ্টিতে ভিজলে সর্দি লাগে,জ্বর আসে তাহলে? এখানে দাড়িয়ে থেকে অসুস্থ হবার ইচ্ছা তোর?”
অরিন নিশ্চুপ। নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের পানে।রৌদ্র অরিনের এহেন হাবভাবে ভ্রুকুটি করে তাকায়।আবারও বলে ওঠে,
“ এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? কি বলছি শুনতে পাসনি?”
নাহ! এবারও জবাব দিলো না মেয়েটা। রৌদ্র এবার মেজাজ হারায়। নিজ থেকে অরিনের ঠান্ডা হাতের কব্জি চেপে ধরে তাকে নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে নিবে তার আগেই পেছন থেকে ভেসে আসে অরিনের শক্ত কন্ঠ!
“ হাত ছাড়ুন! ”
থমকায় রৌদ্র। কানে হয়তো ভুল শুনেছে বিধায় সন্দিগ্ধ কন্ঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে একরাশ অবাকের ছাপ,
“ কি বললি?
“ হাত ছাড়ুন ” —— অরিনের আগের ন্যায় শক্ত কন্ঠ। রৌদ্র অবাক হয়।পরক্ষণেই মুখের আদল শক্ত করে গম্ভীর গলায় বললো,
“ ছাড়বো না! ভেতরে চল আমার সাথে। ”
অরিন এবার নিজের সকল ধৈর্য্যর বাঁধ ভাঙলো যেন।এক ঝটকায় রৌদ্রের হাতটাকে নিজের হাত থেকে সরিয়ে দিয়ে এগিয়ে আসে মেয়েটা।রৌদ্রের বুকের ওপর হাত দিয়ে ঠেলে ঠেলে বলতে লাগলো,
“ কেন? কেন যাবো আপনার সাথে আমি? কেন শুনবো আপনার কথা? কেন প্রতিবার আমার ওপর এমন অধিকার খাটাতে আসেন আপনি? কেন আসেন উত্তর দিন আমায়!”
অরিনের এহেন কান্ডে যারপরনাই অবাক হলো রৌদ্র। মেয়েটার এমন রণচন্ডী ভাবখানা এই প্রথম দেখলো সে।অবাক কন্ঠ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে কথা!
“ অরি! তুই ঠিক আছিস?”
থামলো না অরিন।সে কন্ঠে আরেকধাপ ঝাঁঝ এনে বললো,
“ না ঠিক নেই । পাগল হয়ে গেছি আমি।একদম পাগল।তো? তাতে আপনার কি?”
“ অরিন!” – একপ্রকার চেচিয়ে উঠে কথাটা বললো রৌদ্র। কিন্তু তা শুনে দমলো না অরিন।মেয়েটা আবারও জোর গলায় বললো,
“ ডোন্ট শাউট অন মি মিস্টার রৌদ্র! পুট ইউর ভয়েস ডাউন।”
রৌদ্র বুঝি এবার আকাশ থেকে পড়লো। এ কোন অরিনকে দেখছে সে? মেয়েটার কন্ঠে আজ কেন কোনরূপ ভয়-ডর নেই? কেন সেই পরিচিত কোমলতা নেই? রৌদ্র অরিনের চোখদুটোর দিকে লক্ষ্য করলো।তৎক্ষনাৎ হতবাক হয়ে গেলো ছেলেটা।এ কি দেখছে সেই চোখে? এই চোখ কার? এটা কি সত্যি তার অরিন? যেই চোখে সবসময় তার জন্য মুগ্ধতা বৈকি আর কিছুই দেখা যেত না, আজকে কেন সেই চোখে একরাশ ঘৃণার দেখা মিলছে? কেন মুগ্ধতাকে ছাপিয়ে ঘৃণার উৎপত্তি হলো? কি অপরাধ তার? রৌদ্র বহুকষ্টে নিজেকে সামলায়।অরিনের দিকে এগিয়ে আসতে যাবে তার আগেই মেয়েটা তাকে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয়। রৌদ্রও সেখানে দাড়িয়ে পড়ে।ছেলেটা এবার আহত গলায় বললো,
“ কেন করছিস এমনটা জানবাচ্চা? কি করলাম আমি? ”
এমন মুহুর্তে না চাইতেও তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠলো অরিনের ঠোঁটে।মেয়েটা তার রক্তবর্ণ দৃষ্টি তাক করে রৌদ্রের ওপর। পরক্ষণেই শক্ত গলায় বললো,
“ বেশ ভালো অভিনেতা আপনি ডাক্তার সাহেব! কি সুন্দর করে মনের মাঝে একজনকে রেখে মুখে মুখে আমার নামে বুলি আওরান। বাহ! বেশ তো!”
থামলো অরিন।ভেজা, কম্পিত শরীরটা নিয়ে আরেকটু এগিয়ে আসে সে।রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে আবারও বললো,
“ নিঃসন্দেহে আপনি ভালো অভিনয় জানেন ডাক্তার সাহেব। কি সুন্দর করে আপনার চোখ দুটোকেও অভিনয় শিখিয়ে দিলেন।তারা কেন আমার জন্য মুগ্ধতা দেখাচ্ছে? আমি কেন তাদের মাঝে নিজের জন্য একরাশ মায়া দেখতে পাই ডাক্তার সাহেব? কেন পাই? আপনি তো বরাবরই বলেছেন আপনি আমায় ভালোবাসেন না।তবুও কেন আপনার চোখদুটো আমার জন্য এমন অনুভূতি প্রকাশ করে? কেন তারা আপনার মুখের বুলি মানতে নারাজ? নাকি আপনি তাদের শিখিয়ে -পড়িয়ে দিয়েছেন এমনটা করতে? ও ডাক্তার সাহেব! আপনার প্রতিটি স্পর্শে আমি কেন এক অচেনা টান অনুভব করি? কেন সেই স্পর্শে দায়িত্ব -কর্তব্য ছাপিয়ে এক অন্যরকম অনুভুতির টের পাই? কেন পাই বলুন না? আপনি তো আমায় ভালোবাসেন না ডাক্তার সাহেব! তাহলে? তাহলে আপনার প্রতিটি স্পর্শ, আপনার চোখের ভাষা আমায় কেন অন্য কথা বোঝায়? আপনি কি মনে করেন আমি অরিন এতটাই অবুঝ? আমার মধ্যে হৃদয় নেই? ”
অরিনের এমন ব্যক্ত করা অনুরক্তিতে মৌন রইলো রৌদ্র। কি বলবে সে? বলার কোন নতুন ভাষা কি আদৌও জানা আছে তার? ছেলেটার বুকটা কেমন কেঁপে উঠছে বারবার। গলাটাও ধরে আসছে হঠাৎ করে।চাইলেও পারছে না কিছু বলতে।ভাব এমন, কেও বুঝি তার গলাটা সজোরে চেপে ধরে রেখেছে। অরিন রৌদ্রের মৌনতা দেখে আবারও তাচ্ছিল্য ভরা হাসি দিলো।বললো,
“ আমি তো আপনাকে বলেই দিয়েছিলাম ডাক্তার সাহেব, আমি অরিন আর কোনদিনই নিজের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবো না আপনার সামনে।কখনোই ভালোবাসার দোহাই দিয়ে আটকাবো না আপনায়।তবুও আপনি কেন বারবার আমার সামনে আসেন? বারবার আমার মনে অনুভূতির জোয়ার তুলেন? আপনি কি জানেন? আপনার করা প্রতিটি কর্মকাণ্ড আমার ওপর ঠিক কেমন প্রভাব ফেলে? জানেন না তো! জানলে হয়তো আর কখনোই আমার সামনে আসতেন না।”
থামলো মেয়েটা।এপর্যায়ে গলাটা কেমন কাপছে তার। হয়তো বুকের মাঝে তোলা তোলপাড়ের সামান্যতম বহিঃপ্রকাশ ঘটছে কন্ঠে! মেয়েটার গলা কেমন ধরে আসছে।এ পর্যায়ে কন্ঠ হয়ে আসলো মোটা!
“ ও ডাক্তার সাহেব! আপনি না ডাক্তার? চিকিৎসা করবেন আমার? আমি না ভিষণ রকমের অসুস্থ! আমার এই বুকটা আছে না? ভিষণ যন্ত্রণা হয় এখানে! ও ডাক্তার সাহেব, আপনি না হৃৎরোগের ডাক্তার? তাহলে আমার হৃৎপিণ্ডটার চিকিৎসা করে দিন না।আমার হৃদয়টা না বড় বেঈমান জানেন! বেঈমানটা থাকে আমার দেহের খাঁচায় অথচ নাম জপে কেবল মাত্র আপনার! এমন হলে কিভাবে হয় বলুন? আমি যে আর পারছিনা এগুলো সহ্য করতে।দয়া করুন একটু আমার ওপর। এই প্রথম আপনার কাছ থেকে কিছু চাইছি।আমায় আবার ফিরিয়ে দেবেন না যেন! নাহলে একদম মরে যাবো ডাক্তার সাহেব। একদম মরে যাবো। ”
কথাটা শেষ হবার সাথে সাথেই হু হু করে কেঁদে ওঠে মেয়েটা।আজ বুঝি কান্নারা আর বাঁধ মানতে চাইছে না তার।মানবেই বা কিভাবে? প্রিয় মানুষটার পাশে অন্যকাওকে ভাবার ন্যায় কষ্ট কি আর কোথাও আছে? রৌদ্র নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে আছে। চোখ তার মেঝেতে নিবদ্ধ। হয়তো সেখান থেকেও গড়িয়ে পড়ছে কয়েক ফোঁটা নোনাজল। হয়তো তাদের ভিন্ন রং হয়না বিধায় বৃষ্টির পানিতে মিশে গিয়েও টের পাওয়া যাচ্ছে না তেমন।নাহলে যে কেলেঙ্কারি হতো! অরিন এবার এগিয়ে এসে রৌদ্রের শার্টের কলার চেপে ধরে। জুড়িয়ে আসা কন্ঠে বলতে থাকে,
“ কেন করলেন এমনটা আমার সাথে? কেন অন্য কাওকে ভালোবেসে আমার প্রতি সহমর্মিতা দেখাতে এসেছিলেন? এই ডাক্তার সাহেব! আমায় কেন একটু ভালোবাসলেন না আপনি? কেন বাসলেন না ভালো? প্লিজ! একটু সাহায্য করুন আমায়।হয় আমায় মেরে ফেলুন নাহয় প্লিজ আমার সামনে থেকে দূরে চলে যান।কেননা আপনাকে চোখের সামনে অন্যকারো হতে দেখার মতো ক্ষমতা যে আমার নেই।এরচেয়ে ভালো আমার মৃত্যু হোক।”
অরিন এবার সরে আসে। কাঁপা কাঁপা পায়ে চলে যেতে নিলে পেছন থেকে বাঁহাতের কব্জি চেপে ধরে রৌদ্র। অরিনের পাদু’টো থমকায়। ভেঙে আসা কন্ঠে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কর্ণগোচর হয় রৌদ্রের কন্ঠ!
“ আমায় ফেলে কোথায় যাবি তুই?”
তড়িৎ পেছনে ফিরে অরিন।সন্দিগ্ধ চোখে রৌদ্রের দিকে তাকাতেই হেঁচকা টানে তাকে নিজের বুক- পিঞ্জরে আটকে ফেলে রৌদ্র। অরিন হতবুদ্ধির ন্যায় তাকিয়ে রইলো শুধু। পরক্ষণেই কানে আসা রৌদ্রের অদ্ভুত মায়াভরা কন্ঠ!
“ তোর আগে আমার মৃত্যু হোক সানশাইন।তোর সকল দুঃখ আমার হোক।”
অরিন নিশ্চুপ! অবাক হয়ে সটান দাড়িয়ে আছে মেয়েটা।হয়তো ভাবছে এটা কোন স্বপ্ন নয়তো?রৌদ্র এবার অরিনের মাথাটা বুক হতে উঠায়।নিজের দু’হাতের আঁজলায় মেয়েটার ফ্যাকাশে হয়ে আসা মুখখানা নিয়ে বললো,
“ ভালোবাসি তোকে সানশাইন! ভিষণ ভালোবাসি। যেদিন থেকে বুঝতে শিখেছি ভালোবাসা কি,সেদিন থেকেই ভালোবাসি তোকে।আমার অতীত,বর্তমান সবটা জুড়ে বিচরণকারী একমাত্র মেয়েটাই তুই সানশাইন। আমার এই মনের মনিকোঠায় খোদাই করা নামটা কেবল তোর।তুই ছাড়া এই রৌদ্র আর কারোর না সানশাইন। বিশ্বাস কর! আমার ভালোবাসা, আমার অনুভুতি, আমার হৃদয় সবটা জুড়েই শুধু তুই সানশাইন। এই সানশাইন! বল না, আমার হবি তুই? ”
অরিন থমকায়।চোখের পলক ফেলতেও ভুলে যায় মেয়েটা।সে কেমন অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের চোখের দিকে।যেখানে নেই কোন ছলচাতুরী, নেই কোন মিথ্যার ছাপ।আছে শুধু একরাশ মায়া, অনুভুতি। অরিন ভেঙে আসা গলায় থেমে থেমে বললো,
“ আমি কোন স্বপ্ন দেখছি না তো ডাক্তার সাহেব? চোখ মেলে তাকালেই সবটা হারিয়ে ফেলবো না-তো? ”
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ১৫
মেয়েটার এহেন কথায় ভেজা চোখে হাসলো রৌদ্র। মেয়েটার মুখটা আরেকটু সামনে এনে কপাল বরাবর ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো ছেলেটা।অরিনও কেমন আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো।রৌদ্র বেশ খানিকটা সময় নিয়ে ঠোঁট সরালো সেখান থেকে। তারপর বলে ওঠে,
“ আর কিচ্ছুটি হারাবে না সানশাইন। একবার যেহেতু তুই পেয়েই গিয়েছিস সবটা তখন আর নতুন করে কিছুই হারাতে দিবো না তোর থেকে।কথা দিলাম। ”