সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৩০ (২)

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৩০ (২)
Jannatul Firdaus Mithila

“হয়েছে?”
হিজাব বেধে পরিপাটি হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো অরিন।রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে রইলো জিজ্ঞাসু চোখে। হয়তো অপেক্ষা করছে রৌদ্রের জবাবের।রৌদ্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার দিকে। কিয়তকাল বাদে ধীর পায়ে এগিয়ে আসে অরিনের কাছে। মেয়েটার আদুরে মুখখানা চিবুকে আঙুল ঠেকিয়ে খানিকটা উঁচু করে বলে ওঠে,
“ এতোটা সুন্দর হলে কিভাবে হবে বউজান? আমিতো কন্ট্রোললেস হচ্ছি!”
লজ্জা পেলো অরিন।মুখটা তৎক্ষনাৎ নামিয়ে নিলো সে।ঠোঁটের কোনে দেখা মিললো লজ্জালু হাসির। রৌদ্র মৃদু হাসলো। অরিনের হাতের কব্জি চেপে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে। কিন্তু মাঝপথেই অরিন থেমে গেলো।হুট করে ওমন দাড়িয়ে পড়ায় ভ্রুকুটি করে রৌদ্র। অরিনের দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করে,

“ কি হলো?”
অরিন কোনরূপ ভনিতা না করে রৌদ্রের কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। নিজ থেকে হাত বাড়িয়ে আলতো স্বরে বললো,
“ আমায় খানিকটা উঁচু করে তুলুন তো!”
এহেন কথায় বেশ অবাক হয় রৌদ্র। এটা কি সে সত্যি শুনলো? মেয়েটা কি-না নিজ থেকে এমন কথা বলছে তাকে? রৌদ্র কোনরূপ কালবিলম্ব না করে, একহাতে অরিনের কোমর জড়িয়ে তাকে খানিকটা উঁচু করে তোলে।অরিনের আজ কি হলো কে জানে! এ মুহুর্তে মেয়েটার চোখেমুখে নেই বিন্দুমাত্র লজ্জার ছাপ।রৌদ্র অবশ্য এতে অবাক হওয়ার পাশাপাশি কৌতুহলীও হলো বটে।সে চুপ করে অপেক্ষা করলো মেয়েটার পরবর্তী কর্মকান্ড দেখে যাবার। অরিন হাত বাড়িয়ে রৌদ্রের পড়নের পাঞ্জাবিটার গলার কাছে খুলে রাখা বোতামগুলো একে একে আঁটকে দিলো।তারপর রৌদ্রের মাথার এলোমেলো চুলগুলো নিজের চিকন আঙুলের সাহায্যে গুছিয়ে দিলো কিছুটা। রৌদ্র আবিভূত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেয়েটার পানে।পরক্ষণেই তার কানে এলো অরিনের নিখাঁদ অধিকারমাখা বাক্য!

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ নিয়ম শুধু আমার জন্যই বরাদ্দ হবে কেন? আমার সবটা সৌন্দর্য যদি আপনার জন্য তোলা থাকে,তাহলে আপনার সকল সৌন্দর্যও তো আমার জন্য তোলা থাকা প্রয়োজন! তাই-না?”
রৌদ্র মুগ্ধ হাসলো।অরিনের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে রাখলো বেশকিছুক্ষন।অরিন আবেশে চোখ বন্ধ করে রাখে।তার একহাত রৌদ্রের বুকের ওপর অন্যহাত রৌদ্রের ঘাড়ের পেছনে রাখা।রৌদ্র সময় নিয়ে নিজের ঠোঁট সরায় অরিনের ললাট হতে। তারপর নরম সুরে বলে,
“ হাহ! নাউ আ’ম ফাইনালি গেটিং দেট ‘ জাস্ট মেরিড’ ফিলিং।”
অরিন মুচকি হাসলো। তৎক্ষনাৎ তার গালদুটোতে দেখা মিললো চিরচেনা টোল দু’টোর। রৌদ্র একবার সেদিকে তাকিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় মেয়েটার গালদুটোতে। তারপর আর্তনাদ করে বলে ওঠে,
“ এভাবে হাসবেনা বউজান।বুকে ব্যাথা লাগে!”

এহেন কথায় হাসি থামাতো দূর,মেয়েটা আরও শব্দ করে হেসে ওঠে। হাসতে হাসতে কপাল ঠেকায় রৌদ্রের বুকের কাছে। রৌদ্র হাসলো ঠোঁট পিষে। অরিনকে আরেকটু গভীরভাবে বুকে জড়িয়ে রেখে নমনীয় কন্ঠে বলে,
“ হয়েছে বউজান? এবার নাহয় বাইরে যাই কেমন?”
অরিন ধীরেসুস্থে হাসি থামায়।রৌদ্রের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে স্বাভাবিকভাবে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আশেপাশে একবার সর্তক নজর বুলালো এরইমধ্যে। এদিকটায় কাওকে তেমন দেখতে না পেয়ে ফোঁস করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো মেয়েটা।পেছনে ঘুরে রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে হাত নাড়িয়ে বায় জানালো।রৌদ্র এতক্ষণ ঘরের দরজায় হেলান দিয়ে, বুকের কাছে দুহাত ভাজ করে দাড়িয়ে দেখছিল মেয়েটাকে। অরিনের এহেন বিদায় দেওয়া দেখে স্মিত হাসলো সে।তারপর নিজের একহাত দিয়ে ইশারায় মেয়েটাকে নিচে নেমে যেতে বললো রৌদ্র। অরিনও মাথা নাড়িয়ে চলে যায় সিড়ি ভেঙে। অরিন চলে যেতেই রৌদ্র হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে। পড়নের পাঞ্জাবিটার কলার ঠিক করতে করতে জোর গলায় বলে,

“ বেরিয়ে আয়! ও চলে গেছে।”
কথাটা শেষ হবার পরমুহূর্তে সামনের করিডর সংলগ্ন একটি দেয়ালের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে অনিক।চোখেমুখে তার রাজ্যের লজ্জার আভাস। সে কেমন ছুটে এসে বললো,
“ এতক্ষণ ধরে ভেতরে ছিলে! হুট করে কেও যদি এসে পড়তো তখন?”
রৌদ্র বাঁকা হাসলো। অনিকের কাঁধ চাপড়ে বললো,
“ তুই থাকতে অন্যকেও কেনো আসতো? তোকে কিসের জন্য পাহারা দিতে রেখেছিলাম তাহলে?”
অনিক দৃষ্টি সরায়। অন্যদিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বিরবিরিয়ে বলে,
“ অবশেষে পাহারাদার অবধি বনে গেলাম!”
রৌদ্র কান খাঁড়া করে শুনলো কথাটা। পরক্ষণেই ঠোঁট কামড়ে হাসে সে।অনিকের নাদুসনুদুস গালদুটোর একটা টেনে দিয়ে বলে,
“ বোন আর ভগ্নিপতির জন্য এটুকুতো করাই যায় সম্বন্ধীসাহেব!”

“ এতক্ষণ কোথায় ছিলে তোমরা?”
কবির সাহেবের কথায় থমকে দাঁড়ায় রৌদ্র আর অনিক। এরুপ কথায় দু’জন একে-অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো কিয়তক্ষন। পরক্ষণেই রৌদ্র আগ বাড়িয়ে বললো,
“ রেহানের সঙ্গে ছিলাম। ওর একটা জরুরি বিষয়ে ডিসকাস করার কথা ছিলো তাই গিয়েছিলাম।”
কবির সাহেব গম্ভীর মুখে তাকিয়ে রইলেন ছেলের দিকে। কপালে ইতোমধ্যেই দু-তিনেক ভাজঁ পড়েছে তার। মুখাবয়বে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে অবিশ্বাসের ঝলক।হয়তো ছেলের বলা কথাগুলো মোটেও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি তার। কিন্তু এ মুহুর্তে তিনি খুব একটা কথা বাড়ালেন না এ বিষয়ে। মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে এসে থোড়াই না সিন ক্রিয়েট করবেন তিনি।কবির সাহেব গম্ভীর মুখ করে চলে গেলেন অন্যদিকে। এদিকে তার চলে যাবার পথে ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অনিক।রৌদ্রের হাতের কনুই চেপে ফিসফিস করে বললো,
“ ভাইয়া! বড় আব্বু কি কিছু টের পেলো? ”
রৌদ্রও এমনটাই ভাবছিলো মনে মনে। কেনো যেন তারও এখন বাবার ভাবভঙ্গি খুব একটা সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না। সে অনিকের কথার প্রতিত্তোর না করে অন্য প্রসঙ্গ টানলো।বললো,
“ ওসব নিয়ে তোর ভাবতে হবে না। চল!”

“ আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন জনাব?”
কথা বলার একপর্যায়ে পেছন থেকে ভেসে আসা এহেন সম্বোধনে কথা থামালেন ওসমান সিকদার (রেহানের বাবা)।তিনি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালেন। পরক্ষণেই সম্মুখে দাড়ানো ব্যাক্তিকে দেখে আপ্লূত কন্ঠে বললেন,
“ তুই! এতক্ষণে আসার সময় হলো তোর? বিয়েতেও এলিনা,ইভেন আজকেও এসেছিস কতটা লেট করে। বলি হায়, আমার ছেলেটা কি তোর এতোটাই পর হয়ে গেলো?”
বন্ধুর মুখে এমন কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে মাথা নাড়িয়ে নাকচ করলেন শাহানুর। বন্ধুকে শুধরিয়ে দিয়ে বললেন,

“ আরে না না, কি বলছিস এসব! তুই ভুল ভাবছিস।রেহানকে আমি আগেও নিজের ছেলের মতোন না,বরং নিজের ছেলেই ভাবতাম। এবং এখনো তাই ভাবি।আসলে তুই তো জানিস,কিছুদিন আগেই কতোবড় একটা এক্সিডেন্ট থেকে উঠলাম। এরইমধ্যে আবার একটা জরুরি কাজের সূত্রে ঢাকার বাইরে ছিলাম এতোদিন। এইতো কালকেই ফিরলাম ঢাকায়। তাছাড়া তুই ভাবলি কিভাবে? আমার রেহানের বিয়ে হচ্ছে আর আমি এমনি এমনি কোনো কারণ ছাড়া বিয়েটা মিস করবো! আমাকে কি এতোটাই পর মনে করিস তুই?”
“ এই এই খবরদার ইডিয়ট! আমার কথা আমাকেই রিটার্ন করবিনা বলে দিলাম।”
বন্ধুর কথায় গালভর্তি হাসি দিলেন শাহানুর।এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলেন ওসমানকে।পিঠ চাপড়ে ফিসফিস করে বললেন,

“ ওজনটা মনে হয় বেড়েছে কিছুটা! কি ব্যাপারটা কি? ”
ওসমান সিকদার দীর্ঘ হাসলেন। শাহানুরের সঙ্গে কোলাকুলি শেষে তার কাঁধে হাত রেখে আপ্লূত কন্ঠে বললেন,
“ আর বলিস না! ছেলের বিয়ে উপলক্ষে খেতে খেতে এই অবস্থা! আচ্ছা টসব নিয়ে পরে আলোচনা করবো,আগে বল ভাবি কোথায়? আর বাচ্চারা? ওরাই বা কই?”
শাহানুর এদিক ওদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে পরিবারকে খুঁজলেন।কিয়তক্ষন বাদে অদূরেই তাদেরকে সায়মা খাতুনের সঙ্গে কথা বলতে দেখে ওসমান সাহেবকে সেদিকে হাতের ইশারা তাক করে দেখালেন,
“ ঐ যে! ভাবির সাথে কথা বলছে দাঁড়িয়ে।”
ওসমান সিকদার দেখলেন তাদের। পরক্ষণেই নিজ থেকে এগিয়ে এলেন তাদের কাছে। এসেই মুখে একটা চমৎকার হাসি টেনে বলেন,

“ আসসালামু আলাইকুম! কেমন আছেন আপনি?”
আমরিন বেগম মুখ তুলে চাইলেন। পরক্ষণেই মুখে মুচকি হাসি টেনে বললেন,
“ ওয়ালাইকুমুসসালাম ভাইয়া! আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি,আপনি কেমন আছেন?”
ওসমান সিকদার মাথা নাড়িয়ে বললেন,
“ বেশ ভালো! আচ্ছা এদিকে কথাবলা শেষ হয়েছে আপনাদের? তাহলে চলুন,আমার বেয়াই বাড়ির লোকেদের সঙ্গে কথা বলবেন, পরিচয় হবেন এখন।”
এহেন কথায় সহসা হাসি মুখটা থমথমে হয়ে আসে আমরিন এবং শাহানুরের।ওসমান সিকদার না জানলেও তারা তো জানে, এ মুহুর্তে এহসান বাড়ির সদস্যদের সামনে গেলে ব্যাপারটা ঠিক কতোটা ভয়ংকর হবে। এজন্যই তো তারা ইচ্ছে করেই রেহানের বিয়েতে এলোনা।কিন্তু আজ! আজ কিভাবে না এসে থাকবেন তারা? শতো হলেও রেহানের বাবার সঙ্গে শাহানুরের বন্ধুত্বটা যে বেশ পুরনো। সেই বাল্যকালের বন্ধু তারা।আমরিন আর শাহানুর যখন নতুন জায়গায় এসে সংসার পাতলো তখন তো পরিবারের কেউই তাদের পাশে ছিলোনা। ছিলো শুধু শাহানুরের প্রিয় এবং কাছের বন্ধু ওসমান সিকদার।
আমরিন বেগমকে এমনভাবে নিজের ভাবনায় মশগুল থাকতে দেখে ওসমান সাহেব ফের তাড়া দিলেন,

“ কি হলো? আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? চলুন যাওয়া যাক!”
আমরিন বেগম অসহায় দৃষ্টি ফেললেন স্বামীর পানে।হয়তো এরূপ দৃষ্টি দিয়েই বোঝাতে চান অনেক কিছু। শাহানুর বুঝলেন স্ত্রীর মনের ব্যাকুলতা।তিনি নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে বললেন,
“ ওসমান! বলছি এখন নাহয় থাক।এখন তো তারা খাবার খাচ্ছে মেবি,পরে নাহয় দেখা করে নেবো কোনো একসময়!”
ওসমান সিকদার মাথা নাড়িয়ে একপ্রকার গো ধরে বললেন,

“ পাগল তুই? আর কবে দেখা করবি? আমার প্রিয় বন্ধু হওয়া স্বত্বেও এখনো আমার বেয়াই বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দেখা করিসনি তুই,যেখানে তোর সবার আগে থাকার কথা ছিলো!”
এহেন কথার পিঠে আর কিছু বলার মতো খুঁজে পেলেন না শাহানুর। তিনি ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে অবশেষে সায় জানালেন বন্ধুর কথায়।তা দেখে অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলেন আমরিন।ওসমান সিকদার হেসে ওঠে বলেন,
“ চল তাহলে!”
বলেই তিনি শাহানুরের হাতটা ধরে এগিয়ে গেলেন কবির সাহেবদের নিকট।
*****কবির সাহেব কথা বলছিলেন কারো সাথে। তখনি পেছন থেকে ওসমান সিকদার তাকে ডেকে বললেন,
“ ভাই সাহেব! এই দেখুন কাকে নিয়ে এসেছি।”

কবির সাহেব কথা থামিয়ে বেয়াইয়ের দিকে ঘুরে তাকালেন। পরক্ষণেই তার হাসি মুখটা পরিবর্তন হয়ে আসে। সেথায় নেমে আসে রাগান্বিতভাব।ওসমান সাহেবের পাশে শাহানুরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিনিসহ পুরো এহসান বাড়ির সকলেই বেশ অবাক হলো।কিন্তু একেবারেই স্বাভাবিক রইলো রৌদ্র আর তাশরিক সাহেব। তারা দুজনে আগে থেকেই জানতো সবটা।তাশরিক সাহেব ভিড়ের মাঝে আড়চোখে তাকালেন রৌদ্রের দিকে।পরক্ষণেই ইশারায় কি যেন একটা বললেন, তা দেখে রৌদ্র মৃদু মাথা ঝাকায়। অদূরে দাঁড়িয়ে থেকে সবটাই পরোখ করলো অনিক।সে তৎক্ষনাৎ রৌদ্রের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বললো,

“ রোদ ভাই! বাই এনি চান্স, এমনটা যে হবে এটা কি তুমি আগে থেকেই জানতে?”
রৌদ্র সরু চোখে তাকায় অনিকের দিকে। তারপর অনিকের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“ এখন কিছু জানতে চাস না।চুপচাপ দেখে যা সবটা!”
অগত্যা এমন কথায় চুপ করে গেলো অনিক।মাথায় তার ইতোমধ্যেই হাজারো প্রশ্ন কিলবিল করছে।যতক্ষণ না এই প্রশ্নের উত্তর পাবে, ততক্ষণ বোধহয় কিছুতেই শান্তি মিলবে না ছেলেটার।
অন্যদিকে কয়েক জোড়া হতভম্ব দৃষ্টি ইতোমধ্যেই এসে জড়ো হয়েছে শাহানুর এবং আমরিন বেগমের ওপর। কবির সাহেবের পেছনে দাঁড়ানো বাড়ির বধূরা চকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তাদের দিকে।প্রত্যেকের চোখই কেমন ছলছল করছে।হয়তো এতোগুলাে দিন পরে চোখের সামনে এমন হুট করে মানুষগুলোর দেখা মিলবে,এমনটা হয়তো কল্পনাও করেনি কেও। সকলেই যখন নিজ ভাবনায় বিভোর, তখনি মুখ খুললেন ওসমান সিকদার,

“ ভাই সাহেব! আপনাকে সেদিন বলেছিলাম না আমার খুব কাছের একজন বন্ধুর কথা? এই সে! শাহানুর, মোঃ শাহানুর। প্রফেসর অফ ডুয়েট। তারপর আমরিন বেগমের দিকে ইশারা করে বললেন,
“আর উনি হচ্ছেন ওর মিসেস।জনাবা আমরিন শাহানুর।”
ওসমান সিকদারের এমন কথায় বুঝি বেশ অবাক হলেন সকলে। আমরিন এবং শাহানুরের সাথেও যে সিকদার পরিবারের এতেটা ঘনিষ্ঠতা থাকতে পারে তা হয়তো ঘুনাক্ষরেও টের পাননি তারা। কবির সাহেব গম্ভীর মুখে তাদের দিকপ চেয়ে থেকে বললেন,
“ আসসালামু আলাইকুম! আপনাদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে খুশি হলাম।”

আমরিন বেগম মনে মনে আহত হলেন।মুখে ফুটে উঠেছে তাচ্ছিল্যের হাসি। ভাবলেন, — কি সুন্দর অপরিচিতদের মতো কথা বলছে তার বড় ভাইজান।হয়তো বেয়াইয়ের সামনে মুখ রাখতেই বাধ্য হয়ে কথা বলছেন, নাহলে হয়তো কোনদিন ফিরেও তাকাতেন না তিনি। এমন ভাবনা শুধু যে তার মনেই উত্থাপিত হয়েছে এমনটা কিন্তু নয়, শাহানুরও মনে মনে এটাই ভেবে বসেছেন। খানিকক্ষণ বাদে শাহানুরের কনুই চেপে ধরে হালকা গলায় ওসমান সিকদার বিরবির করে বললেন,
“ তোকে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করেছে, আর তুই এমন হা করে দাড়িয়ে আছিস কেন? কথা বল!”
তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়িয়ে সায় জানায় শাহানুর। হতবিহ্বলতায় ভুলেই বসেছিল সৌজন্য রক্ষার কথা।সে মৃদু গলা খাঁকারি দিয়ে চোখে থাকা চিকন চশমাটা আঙুলের ডগার সাহায্যে আরেকটু উপরে তোলে। পরক্ষণেই মুখে মেকি হাসিভাব টেনে বলে,

“ ওয়ালাইকুমুসসালাম ভাই।আমিও বেশ আপ্লূত আপনার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে।”
কবির সাহেব মৃদু মাথা নাড়ায়।গম্ভীর মুখে চুপ করে রইলেন তিনি।ওসমান সিকদার তাদের সঙ্গে আরও কিছু কথা চালালেন।তখনি কেও একজন তার উদ্দেশ্যে হাঁক ছুড়ে। ওসমান সিকদার মৃদু হেসে জবাব দেয়,
“ আসছি ভাই!”
তারপর শাহানুরের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“ তুই কথা বল!আমি আসছি।”

অতঃপর শাহানুরকে রেখে চলে গেলেন তিনি। এদিকে তার চলে যাবার পর আমতা আমতা করতে লাগলো শাহানুর। কিছু একটা বলবে তার আগেই সামনে থেকে ভেসে আসে কবির সাহেবের গম্ভীর কণ্ঠ!
“ আত্মীয়তার খাতিরে নয়, আমার মেয়ের শ্বশুরের কথায় কথা বলেছি।এটা যেন সবসময় মাথায় থাকে।”
কথাটা শেষ করে আর একমুহূর্ত দাঁড়ালেন না তিনি।গটগট পায়ে জায়গা ত্যাগ করলেন। এদিকে মনঃক্ষুণ্ন হলেন বাকিরা।জুবাইদা বেগম তো সেই কখন থেকে ছলছল চোখজোড়া দিয়ে তাকিয়ে আছেন ননদের দিকে।হয়তো এতোসব ঝুট-ঝামেলা না থাকলে এক্ষুনি বুকে জড়িয়ে নিতেন মেয়েটাকে। কিন্তু তা আর পারলেন কই? স্বামীর কথার পিঠে নাকচ করার ক্ষমতা আদৌও কি আছে তার?

“ হেলো? হেলো শুনতে পাচ্ছিস?…”
আশেপাশে হওয়া কোলাহলের শব্দে ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে আসা কোনো কথাই ঠিকভাবে শুনতে পাচ্ছেনা ইফতি।সে ফোন কানে রেখেই চলে যায় খানিকটা দূরে। অতঃপর ফের কলে থাকা ব্যাক্তির উদ্দেশ্যে বলতে থাকে,
“ হেলো? এখন শুনতে পাচ্ছিস?”
কথা বলতে বলতে বাড়ির বা-দিকে থাকা বড় সুইমিংপুলের পাশে এসে দাঁড়ায় ইফতি।পকেটে একহাত গুঁজে, অন্যহাতে ফোন ঠেকিয়ে রেখেছে কানের পাশে। কিয়তক্ষন বাদে সেখানে ছুটে আসে এক ছটফটে স্বভাবের বাচ্চা মেয়ে, রিমি।তার পেছন পেছনই ছুটে আসে আহিরা। রিমির হাতে আহিরার ফোন। রিমি দৌড়ে যাচ্ছে প্রাণপনে। তাকে ধরার জন্য তার পিছুপিছু ছুটছে আহিরা।কিছুক্ষণ দৌড়ানোর পর হাঁপিয়ে ওঠে আহিরা।সে রিমির উদ্দেশ্যে হাঁক ছুড়ে বলে,

“ আর পারছিনা রিমঝিম, প্লিজ এবার অন্তত দিয়ে দে।”
রিমি মোটেও শুনলোনা সে কথা। সে খিলখিল করে হেসে ওঠে বলে,
“ কেনো? কেনো? এতো তারাতাড়ি হার মেনে গেলে হবে? তুমি আমায় না ধরতে পারলে ফোন পাবেনা কিন্তু।”
আহিরা হাত নাড়িয়ে না জানায়।হাঁপিয়ে আসা কন্ঠে বলে,
“ তুই জিতেছিস বাচ্চা! প্লিজ এবার দিয়ে দে।”
দুষ্ট রিমি আরেকটা দুষ্ট ফন্দি আঁটে। সে হাতে থাকা ফোনটা আহিরাকে দেখিয়ে ছুড়ে ফেলে উপরের দিকে। আহিরা হকচকিয়ে ওঠে। ছুটে এসে ফোনটা ক্যাচ করে ঠিকই কিন্তু পা পিছলে যাওয়ায় পড়ে যেতে নেয় পুলে।মেয়েটা ভয়ে চোখমুখ কুচকে ফেলে মুহুর্তে। কিন্তু কিছু মুহূর্ত পেরিয়ে যাবার পরও নিজেকে কেমন ভাসমান টের পেয়ে পিটপিট করে চোখ মেলে সে।পরক্ষণেই নিজেকে ইফতির বাহুডোরে আগলে থাকতে দেখে চক্ষু ছানাবড়া হয়ে আসে তার। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ছেলেটার দিকে। হুট করে কি জানি তার কি হলো! সে হাত বাড়িয়ে আলতো করে গাল ছুঁয়ে দিলো ইফতির।এহেন কান্ডে ইফতি সরু চোখে তাকিয়ে রয় আহিরার পানে।হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে মেয়েটার মাথার সমস্যাটা! আহিরা অবাক হয়ে বলে ওঠে,

“ এটা সত্যিই আপনি?”
ইফতি এবার ভ্রু কুচকায়। মেয়েটাকে নিজের বাহুডোরে রেখেই মৃদু ঝাকিয়ে ওঠে সে।বলে ওঠে,
“ মিস কি পাগল-টাগল হয়ে গেলেন না-কি? নাকি আবার আগে থেকেই মাথায় এমন দুয়েকটা তার ছেঁড়া ছিলো?”
এতক্ষণের হতবিহ্বলতা মুহূর্তেই কেটে যায় আহিরার।সে খেঁকিয়ে ওঠে তৎক্ষনাৎ,
“ এই.. কি বললেন আপনি? আমার মাথার তার ছেড়া মানে? আপনি কোন সাহসে আমায় পাগল বললেন?”
ইফতি নিজের কানে আঙুল চেপে ধরে। মুখ কুচকে বলে,
“ মেয়ে মানুষ নিজের যায় যায় অবস্থাতেও এতো ঝগড়া করতে পারে! আপনাকে না দেখলে হয়তো জানতামই না ব্যাপারটা!”

“ কিহ! আপনি আমায় ঝগড়ুটে বললেন? এতো বড় কথা।আপনাকে তো আমি…”
“ কি করবেন মিস? আদর করবেন? অবশ্য করতেই পারেন।কেননা আমার মতো এমন হ্যান্ডসাম একজনকে দেখলে যে কারোরই এমন ফিলিংস আসতে পারে। সো আই ওন্ট মাইন্ড!”
ক্ষেপে যায় আহিরা।রনচন্ডী ভাব নিয়ে আবারও মুখ খুলবে তার আগেই ইফতি নিজের হাতের বাঁধনটা কিছুটা ঢিলে করে।আর সঙ্গে সঙ্গেই মৃদু চেচিয়ে উঠে তার কলার চেপে ধরে আহিরা।হকচকিয়ে উঠে ছেলেটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ভুলে। এহেন কান্ডে বুঝি নিজেই বোকা বনে গেলো ইফতি।কই সে চেয়েছিলো মেয়েটাকে একটুখানি ভয় দেখাবে সেখানে এখন তো নিজের অবস্থাই করুণ হচ্ছে তার। মেয়েটার তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখা,মেয়েটার গায়ের উষ্ণতা সবটাই যেন নতুন ঠেকলো তার কাছে।বুকের ভেতরটা হুট করে কেমন কেমন যেন করছে।এ আবার কি হচ্ছে তার সাথে? ইফতির এখন নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। সে বহুকষ্টে মেয়েটার পিঠ আঁকড়ে ধরে হিসহিসিয়ে বলে,

“ মিস প্লিজ থামুন! আপনার এহেন স্পর্শ আমায় পেইন দিচ্ছে!”
থমকে যায় আহিরা।হতবুদ্ধির ন্যায় থেমে গেলো সে।পরক্ষণেই নিজের অবস্থান যাচাই করে ছিটকে দূরে সরে আসতে গেলে আবারও তাকে নিজের সঙ্গে চেপে ধরে ইফতি।আহিরা ভড়কে যায়। ইফতির ঘোলাটে চোখে দৃষ্টি রেখে লজ্জিত হয়ে বলে,
“ সরি! প্লিজ নামিয়ে দিন আমায়।আমি আসলে….”
ইফতি ক্ষুদ্র নিশ্বাস ফেলে নামিয়ে দেয় আহিরাকে।আহিরাও চটপট পায়ে চলে যেতে নেয় সেখান থেকে। কিন্তু তক্ষুনি পেছন থেকে ভেসে আসে ইফতির অদ্ভুত শান্ত কন্ঠ!
“ মিস আহিরা!”
আহি চমকায়।পাদু’টো থেমেছে প্রথম ডাকেই।সে দুরুদুরু বুকে পেছনে না তাকিয়েই সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ে,
“ আপনি কিভাবে জানলেন আমি আহিরা?”
ইফতি অজান্তেই হেসে দেয় নিঃশব্দে। চোখদুটো আকাশের দিকে তাক করে ঠোঁট গোল করে নিশ্বাস ফেলে সে।পরক্ষণেই আহিরার উদ্দেশ্যে বলে,
“ কি যেন কিভাবে জেনে নিলাম। মন থেকে এমনটাই মনে হলো তাই বলে ফেললাম।”
আহিরা মৃদু হাসলো। সামনে এগোতে নিলেই পেছন থেকে আবারও বাঁধ সাধলো ইফতি।বলে,

“ মিস আহিরা! এই ভুলটা আর কোনদিন করবেন না যেন।আমি কিন্তু এতোটাও ভালো মানুষ নই!”
থমকায় আহিরা।বুকটা কেমন হঠাৎ করেই ছলাৎ করে ওঠলো তার।সে কাঁপা কাঁপা গলায় কোনমতে বললো,
“ মানে? ”
ইফতি এবার ধীর পায়ে এগিয়ে আসে। আহিরার ঠিক পেছনে দাড়িয়ে নিরেট কন্ঠে বলে,
“ বুদ্ধিমানকে ইশারাই যথেষ্ট মিস আহিরা।আশা করি আপনি ওতোটাও নির্বোধ নন।”
তারপর কি মনে করে যেন নিজে থেকেই আহিরার কানের কাছে মুখ নিয়ে আসে সে।ফিসফিস করে বলে,
“ আই হোপ,আমাদের আবারও দেখা হবে মিস!”

কেঁপে ওঠে আহিরা।কাঁপা কাঁপা হাতে খপ করে চেপে ধরে জামার একাংশ। আর কালবিলম্ব না করে সে তৎক্ষনাৎ ছুটে পালায় সেখান থেকে। তার ওমন ছুটে পালানো দেখে মুচকি হাসলো ইফতি।নিজের করা এহেন কান্ডে নিজেই বড্ড অবাক হলো সে।কই সে-তো এমন ছেলে না, তাহলে আজ কেনো মেয়েটাকে এমন লজ্জা দিলো সে? কেনো মেয়েটার লজ্জা রাঙা নতমুখ দেখে এতোটা ভালো লাগলো তার? আচ্ছা সে-কি এই ঝগড়ুটে মেয়েটার মায়ায় পড়ছে ধীরে ধীরে? তবে কি আরেকটা নতুন আগুন লাগতে চলেছে এহসান বাড়িতে?

“ এই যে মেডাম! আপনি কি এভাবেই ভবঘুরের মতো ঘুরে যাবেন? না-কি খাবারও খাবেন?”
পেছন থেকে ভেসে আসা রৌদ্রের ভারিক্কি গলায় সেদিকে ফিরে অরিন।এতক্ষণ সমবয়সী কতগুলো মেয়েদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে, বেশ ভালোই একটা আড্ডা জমিয়েছে অরিন।এই আড্ডায় বিভোর হয়ে সে তো ভুলেই বসেছিল খাওয়ার কথা। অবশ্য এরইমধ্যে অনিক তাকে বেশ কয়েকবার এসে জোর করে গিয়েছে খাবারের জন্য কিন্তু মেয়েটা বুঝি ভাইয়ের সঙ্গে বড্ড আহ্লাদী। তাইতো প্রতিবার ভাইকে নয়-ছয় বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে সে।এবার হয়তো অনিকই পাঠিয়েছে রৌদ্রকে।বেচারা হয়তো বুঝে গিয়েছে, তার বনুকে ঠিক কিভাবে নিতে হবে।
অরিন বসা ছেড়ে উঠে দাড়ায়। রৌদ্রকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রৌদ্র গম্ভীর গলায় শুধায়,
“ আমি আপনার আহ্লাদী কথায় গলছি না মেডাম।বেলা বাজে কয়টা সে খেয়াল কি আছে আপনার? কথা বললে,কিংবা আড্ডায় বসলেই কি পেট ভরে যাবে আপনার? নিশ্চয়ই না! তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে চলুন আমার সাথে।”

অরিন মেকি অভিমানে গাল ফুলায়। রৌদ্রের দিকে ঠোঁট উল্টিয়ে তাকায় সে।তা দেখে রৌদ্র সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে দৃষ্টি ঘোরায়। নাহ! এ মেয়ে বুঝে গিয়েছে তার দূর্বলতা।আর কয়েক সেকেন্ড এই অভিমানিনীর দিকে তাকিয়ে থাকলে সেও নিশ্চয়ই অনিকের মতো আহ্লাদে ভেসে যাবে। নাহ!এসব তো আর হতে দেওয়া যায়না।রৌদ্র অন্যদিকে তাকিয়ে থেকে খেঁকিয়ে ওঠে মৃদু ধমকে,
“ এই তুই যাবি? না-কি কান ধরে নিয়ে যাবো তোকে?”
হঠাৎ এহেন ধমকে খানিকটা কেঁপে ওঠে অরিন।মনে জমে থাকা মৃদু অভিমান এবার হয়ে ওঠে বেশ তীব্র।মনে মনে বেশ অবাক লাগলো তার এটা ভেবে — কিছুক্ষণ আগেই এই মানুষটা কি সুন্দর মধুর কন্ঠে কথা বলেছে আর এখন? ঘন্টা পেরোতেই ভালোবাসা ফুড়ুৎ? অরিন গাল ফুলিয়ে গটগট পায়ে রৌদ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় বাইরের প্যান্ডেলের দিকে।তার চলে যাওয়ার পথে আড়চোখে তাকিয়ে রইলো রৌদ্র। পরক্ষণেই আঙুলের ডগায় কপাল চুলকে বিরবিরিয়ে বলে,

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৩০

“ খাইসে আজকে! এবার তোর কি হবে রে রৌদ্র! বউজান তো নিশ্চিত রেগেমেগে বোম হয়ে গেছে। না জানি কখন, কিভাবে ফেটে পড়ে আল্লাহ মালুম! ওহ খোদা, এ যাত্রায় বাচিয়ে দাও!”

সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৩১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here