সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৪২
Jannatul Firdaus Mithila
রৌদ্র দৌড়ে ছুটে আসে সিকিউরিটি রুমে। সেখানে আগে থেকেই বসে আছে অনিক। অনিক একপলক আড়চোখে তাকায় রৌদ্রের দিকে। ছেলেটার গায়ের শার্টটা কেমন কুঁচকে আছে কয়েক জায়গায়, মাথার চুলগুলোও কেমন অগোছালো হয়ে কপাল বরাবর লেপ্টে আছে। অনিক রৌদ্রের এহেন অবস্থা দেখে মৃদু কেশে, অন্যদিকে দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে। রৌদ্র কালবিলম্ব না করে এগিয়ে যায় কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা আজিজ মিয়ার কাছে।আজিজ মিয়া রৌদ্রকে এ মুহুর্তে এখানে দেখে সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ায়। বিনম্র শ্রদ্ধায় জিজ্ঞেস করেন,
“ স্যার! আপনি এখানে? কিছু বলবেন?”
রৌদ্র মাথা ঝাকায়। মুখে গাম্ভীর্যের ছাপ ফুটিয়ে মৃদু গলা খাঁকারি দিয়ে বলে ওঠে,
“ হুম, একটা ছোট্ট কাজ আছে আমার।”
“ জি স্যার বলুন, কি করতে হবে আমায়!”
রৌদ্র একবার অনিকের দিকে তাকায়। ইশারায় ছেলেটাকে অরিনের কাছে যেতে বলে।অনিকও বাধ্য ছেলের মতো মাথা নাড়িয়ে বেরিয়ে যায় রুম ছেড়ে। অনিক বেরোতেই রৌদ্র তাকায় আজিজ মিয়ার দিকে।হালকা হেসে আজিজ মিয়ার কাঁধে হাত রেখে বলে,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“ আমায় এক কাপ কফি এনে দিতে পারবেন? একচুয়েলি মাথাটায় ভিষণ পেইন হচ্ছে আমার!”
আজিজ মিয়া তড়িঘড়ি করে মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানিয়ে বললেন,
“ হ্যা, হ্যা স্যার! এক্ষুণি আনছি।আপনি একটু বসুন।”
বলেই তিনি একপ্রকার ছুটে গেলেন কফি আনতে। রৌদ্র তার চলে যাওয়ার পথে তাকিয়ে ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললো।যাক এবার অন্তত সে নিজের কাজটা স্মুথলি করতে পারবে। রৌদ্র আর কোনো সময় নষ্ট না করে নিজেই কম্পিউটারের সামনে বসে পড়ে। প্রথমেই সে নিজের রুমের সিসিটিভি ফুটেজের ফাইলটা অন করে। সেখান থেকে গত একঘন্টার সকল ফুটেজ মুছে দিয়ে হাঁফছেড়ে বাঁচে ছেলেটা। রৌদ্র নিজের কাজ শেষে কম্পিউটারের সামনে থেকে উঠে আসে।তারপর নিজের কোমরে দু’হাত রেখে ঘাড়টা সামান্য এদিক ওদিক খানিকটা ঘুরিয়ে বিরবির করে বলতে থাকে,
“ হাহ! যেটার জন্য এতো প্যারা নিতে হচ্ছে, সেটাই হাতে আসে না আমার! শালার… কপাল একটা!”
অনিক নিজের বনুর কাছে এসে আরেকদফা চমকালো। পুরো ঘরময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রৌদ্রের বিভিন্ন ফাইলের কাগজ। অনিক নিজের দৃষ্টি আনে অরিনের ওপর। মেয়েটা কেমন মুখ ভার করে বসে আছে কাউচে।অনিকের মনটা কেমন কু ডেকে ওঠলো।সে তড়িঘড়ি করে বোনের পাশে এসে বসলো।বোনের ছোট্ট মাথাটা নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরে আদুরে কন্ঠে বললো,
“ কি হয়েছে বনু? এভাবে মন খারাপ করে বসে আছিস কেনো বাচ্চা? আর… পুরো রুমটার এই অবস্থা কেনো?”
ভাইয়ের কথায় নিশ্চুপ রইলো অরিন।কি বলবে সে? কিভাবে বলবে তার ডাক্তার সাহেব ঠিক কতটা উম্মাদ হয়ে গিয়েছিলো কিছুক্ষণ আগে! অরিন ভাইয়ের বুকের দিকে আরেকটু চেপে বসে।বোনের এহেন কান্ডে কপালে কিছুটা চিন্তার ভাজ পড়ে অনিকের। সে অরিনের ছোট্ট ডানহাতটা নিজের বাম হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়।অন্যহাতে মেয়েটার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“ বনু! ও বনু! কি হয়েছে আমার মনিটার? কিসের জন্য মুখ ভার করে আছিস? আচ্ছা রোদ ভাই কি তোকে বকেছে?”
অরিন ভাইয়ের বুকে মাথা রেখেই ‘না’ বলে।অনিক তখন আরও কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই কেবিনে ঢুকে রৌদ্র। রৌদ্রকে দেখে অরিন ভাইয়ের বুকে মুখ লুকিয়ে ফেলে তৎক্ষনাৎ।রৌদ্র সরু চোখে তাকিয়ে দেখলো সবটা। কিছুক্ষণ একইভাবে তাকিয়ে থাকার পরে সে ধীর পায়ে এগিয়ে আসে অরিনের সামনে। গম্ভীর কন্ঠে বলে,
“ চল ওঠ!অনিক বাসায় যাবে। ওকে যেতে দে!”
অনিক চমকায়।ছেলেটা কেমন হা করে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের দিকে।কিছুক্ষণ পর নিজের সমস্ত অবাকের রেশ কাটিয়ে সে কোনোমতে বলে ওঠে,
“ মানে! আমি যাবো মানে? তোমরা যাবে না?”
অনিকের কথায় রৌদ্র খানিকটা অনিহা দেখিয়ে অরিনের পাশ ঘেঁষে বসে। অরিন খানিকটা নড়েচড়ে বসে এবার। সে ভাইয়ের দিকে আরেকটু চেপে বসতেই রৌদ্র আবারও এগিয়ে এসে মেয়েটার গা ঘেঁষে বসলো। এদের দু’জনের এহেন কান্ডে হতবুদ্ধির ন্যায় তাকিয়ে আছে অনিক।বেচারার কিছুই যে বোধগম্য হচ্ছে না তেমন। অরিন এবার ভাইয়ের বুক হতে মাথা উঠিয়ে বসে। নতমুখে ভাইয়ের দিকে আরেকটু চেপে বসতে নিলেই মৃদু ধমকে উঠলো রৌদ্র।
“ এই… সমস্যা কি তোর? আমি পাশে বসে থাকতেও ভাইয়ের বুকে থাকতে হবে কেন তোর? আমি না থাকলে সেটা অন্য ব্যাপার। কিন্তু এখনতো আমি আছি।তাই নাটক না করে, আমার দিকে আয়!”
অগত্যা এমন ধমকে চুপসে গেলো অরিন। মেয়েটা লজ্জালু মুখে মাথা নিচু করে বসে রইলো। ছিঃ ছিঃ ভাইয়ের সামনে এসব কি কথা শুনতে হচ্ছে তার! মেয়েটা পারছেনা লজ্জায় কুকরে যেতে।
রৌদ্র কাউচের ওপর দু’হাত ছড়িয়ে গা এলিয়ে বসে।অনিকের উদ্দেশ্যে ফের বলে ওঠে,
“ কিরে? এই ভেজা শরীরে আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবি? যা…দ্রুত বাসায় যা।”
অনিক মৃদু হেসে মাথা নাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়। একপা এগোতেই পেছন থেকে তার হাতের কব্জি চেপে ধরে অরিন।অনিকের পদযুগল থামলো।সঙ্গে সঙ্গে পেছনে তাকিয়ে বনুকে জিজ্ঞেস করলো,
“ কি হয়েছে বনু? কিছু বলবি?”
অরিন তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ায়। ভাইয়ের হাত ধরে বলতে থাকে,
“ আমিও তোমার সাথে যাবো ভাইয়া!”
এহেন কথায় অনিক বুঝি একটু অবাক হলো। সে অবাক নেত্রে রৌদ্রের দিকে তাকাতেই দেখতে পায়, রৌদ্র কেমন শান্ত দৃষ্টিতে অরিনের দিকে তাকিয়ে আছে। অনিক তখন অরিনকে বোঝানোর ন্যায় বললো,
“ বনু! তুই নাহয় ভাইয়ার সাথে আয়।আমি…. ”
“ না..না.. আমি তোমার সাথেই যাবো।প্লিজ নিয়ে চলো।”
অনিকের কথা শেষ হবার আগেই কথাটা বলে ওঠে অরিন। এবার যেন একপ্রকার দোলাচালে পড়ে গেলো বেচারা অনিক।একপাশে বনুর কথা তো অন্যপাশে রৌদ্র ভাইয়ের আদেশ। কোনটা ফেলে কোনটা রাখবে বেচারা! অনিক বোনকে আরও কিছু বলতে উদ্যত হয় কিন্তু বোনের মায়াবী মুখখানা দেখে আর বলা হলোনা তার।তাইতো ছেলেটা এবার শুকনো ঢোক গিলে রৌদ্রের দিকে তাকায়। মিনমিনে স্বরে বলে,
“ ভাইয়া… আমি নাহয় বনুকে…!”
তার কথা শেষ হবার আগেই হাতের ইশারায় তাকে চুপ করিয়ে দেয় রৌদ্র। অনিকও আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে দাড়িয়ে রইলো।রৌদ্র তখন গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
“তুই যা অনিক! আমি দেখছি ওকে।”
অনিক এবার অসহায় চোখে একবার বোনের দিকে তো আরেকবার ভাইয়ের দিকে তাকায়।পরক্ষণেই সে ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে বোনের হাতটা নিজের হাত থেকে ছাড়াতে নিলে বাঁধ সাধে অরিন। মেয়েটা আরেকটু চেপে ধরে ভাইয়ের হাত।অনিক বেচারা বুঝি গলে গেলো এমন কান্ডে।সে তৎক্ষনাৎ মেয়েটাকে নিজের বাহুডোরে আগলে নিয়ে রৌদ্রের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,
“ সরি ভাইয়া! বনু যেহেতু চাচ্ছে না এখানে থাকতে… তাই আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। প্লিজ তুমি রাগ করো না!”
অনিকের এরূপ কথাতেও মুখভঙ্গি আগের ন্যায় অপরিবর্তিত রৌদ্রের।ছেলেটার শান্ত এবং তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এখনো মেয়েটার নতমুখের ওপর নিবদ্ধ। অরিনটা যদি একবার চোখ তুলে চাইতো তার দিকে, তাহলে নিশ্চিত ছেলেটার এহেন দৃষ্টি উপেক্ষা করবার সামর্থ্য থাকতো না তার। কিছুক্ষণ বাদেই রৌদ্র বসা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। অনিক আর অরিনের দিকে না তাকিয়েই বলে ওঠে,
“ তোরা গাড়িতে গিয়ে বস। আমি আসছি।”
“ তুমিও আমাদের সঙ্গে যাবে?”
অনিকের কৌতূহলী প্রশ্নে একবার আড়চোখে তাকায় রৌদ্র। পরক্ষণেই ভরাট কন্ঠে জবাব দেয়,
“ না! তোকে যেটা বলেছি সেটাই কর!”
অনিক মাথা কাত করে। বোনের হাতটা ধরে বেরিয়ে আসে কেবিন থেকে।রৌদ্র একপলক তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে নিজের ডেস্কের সামনে আসে।তারপর সেখান থেকে একটা কাগজ, কলম নিয়ে কি যেন লিখলো একটা। লেখা শেষ হতেই পৃষ্ঠাটা ছিড়ে নিয়ে ভাজ করে পকেটে গুঁজলো সে। তারপর নিজেও বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।
প্রায় মিনিট দশেক হলো অনিক অপেক্ষা করছে রৌদ্রের জন্য। অথচ রৌদ্রের কোনরূপ দেখা নেই। এদিকে অরিনও কেন যেন হাসফাস করছে ।সে খানিকটা অস্বস্তি নিয়ে ভাইকে বললো,
“ ভাইয়া.. আর কতক্ষণ ওয়েট করবে? একটু তারাতাড়ি গেলে হয়না?”
অনিক বুঝলোনা বোনের এতো অস্থিরতার কারণ। ছেলেটা কেমন চিন্তিত গলায় বোনকে বলতে লাগলো,
“ বনু! তুই ঠিক আছিস তো? হঠাৎ করে এতো অস্থির লাগছে কেনো তোকে?”
অরিন ভাইয়ের কথার প্রতিত্তোর না করে চোখ বন্ধ করে মাথা এলিয়ে বসে রইলো।ঠিক তখনি রৌদ্র আসে গাড়ির কাছে। ছেলেটার হাতে দুটো শপিং ব্যাগ।রৌদ্র অরিনের পাশের দরজাটা খুলে দেয়।অরিন অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের দিকে। কিন্তু তার এমন অবাক দৃষ্টিকে কোনরূপ পাত্তা দিলো না রৌদ্র। সে অরিনের হাতটা ধরে তাকে গাড়ির ব্যাকসিটে এনে বসায়। তারপর মেয়েটার পিঠের দিকে দুটো কুশন বালিশ সেট করে দিলো সযত্নে। হাতে থাকা শপিং ব্যাগদুটো অরিনের পাশে রেখে, রৌদ্র অনিকের উদ্দেশ্যে খানিকটা জোরালো কন্ঠে বলে ওঠে,
“অনিক! লিভ আস এলোন ফর আ হোয়াইল!”
অনিক কথাটা শোনামাত্রই তারাতাড়ি করে বেরিয়ে গেলো গাড়ি থেকে। সে বেরোতেই রৌদ্র অরিনের ঘাড়টা আলতো করে চেপে ধরে মেয়েটার ওষ্ঠপুট দখল করে নিলো। চোখের পলকে এমন কিছু ঘটে যাওয়ায় হতবিহ্বল অরিন। সে নিজেকে ছাড়াতে নিলেই তার হাতদুটো একহাতে চেপে ধরে রৌদ্র। ছেলেটার অধরযুগলের উষ্ণ স্পর্শ বরাবরের মতো পাগল করছে অরিনকে।মেয়েটার হৃৎস্পন্দনের হার বুঝি বেড়ে গেলো কয়েকগুণ। সম্পূর্ণ শরীরে বইছে মৃদু ঝংকার। রৌদ্র গভীর আশ্লেষে নিজের ওষ্ঠপুটের মাঝে টেনে নিচ্ছে মেয়েটার নরম অধরযুগল।মাঝেমধ্যে বসাচ্ছে মৃদু কামড়। প্রায় বেশ কিছুক্ষণ পর রৌদ্র অরিনের ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দিয়ে মেয়েটাকে নিজের বুকে টেনে নেয়।গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে মেয়েটার ক্ষুদ্র দেহখানা। অরিন ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে।তার হাতদুটো অজান্তেই উঠে এসেছে রৌদ্রের পিঠে। কিয়তক্ষন বাদে রৌদ্র বুক থেকে অরিনের মাথাটা খানিকটা উঁচিয়ে তুলে , মেয়েটার চোখের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকায় ।অরিনের গালে আলতো করে হাত রেখে বলতে থাকে,
“ আমি কোনো কাপুরুষ নই অরি! যে কিনা নিজের বউয়ের অসুস্থতার সুযোগ নিতে যাবে। আমার খেয়ালে ছিলো আজ তোর মেন্সট্রুয়াল স্টারটিং ডে, কিন্তু এটা যে এখনি শুরু হয়ে যাবে তা জানতাম না অরি।জানলে নিশ্চয়ই তোকে এমন বিপাকে ফেলতাম না আমি! তাছাড়া তুই আমায় একটাবার বলেই দেখতি সানশাইন! আমি যদি তোকে খুব একটা খেয়াল না করতাম তাহলে হয়তো বুঝতেও পারতাম না বিষয়টা। তুই কি আমায় বিশ্বাস করতে পারছিস না জানবাচ্চা? তোর কি সত্যিই মনে হয়? — আমি তোর অসুস্থতা জেনেও তোকে কষ্ট দিতে চাইবো?”
অগত্যা এহেন বাক্যে তড়িৎ ডানে-বামে মাথা নাড়ায় অরিন।সাফাই দেওয়ার সুরে বলে ওঠে,
“ না আসলে… আমি…”
তার কথা শেষ হবার আগেই তার ঠোঁটের ওপর আঙুল চেপে ধরে রৌদ্র। বলে,
“ হুঁশ! আর কোনো কথা নয় সানশাইন! আমাকে এখনও নিজের ভাবতে পারলি না তুই! আমায়….”
কথাটা কেন যেন সম্পূর্ণ করতে পারলোনা রৌদ্র। হয়তো গলাটা কোনো কারণে ধরে এসেছে তার।ছেলেটার চোখদুটো আজ বড় অদ্ভুত শান্ত দেখাচ্ছে। সেথায় কেমন যেন একটা আহতভাব। রৌদ্র তৎক্ষনাৎ অরিনকে বুক হতে সরিয়ে ধীরে ধীরে সিটে বসায়।অরিন তখন অনুনয় করে বলতে লাগলো,
“ ডাক্তার সাহেব! আপনি ভুল ভাবছেন। আমি আসলে…”
তার কথার মাঝেই রৌদ্র তাচ্ছিল্যের হাসি টানে ঠোঁটের কোণে। হাত বাড়িয়ে মেয়েটার কোমরের পেছনে কুশন সেট করে দিয়ে,মেয়েটার দিকে আবারও গভীর চোখে তাকায়। বলে ওঠে,
“ আর কিছু বোঝাতে আসিস না সানশাইন! এবার বোঝাতে এলে হয়তো বুঝে যাবো সবটা! কিন্তু বিশ্বাস কর! এবার বুঝে গেলে হেরে যাবো নিজের কাছে। আর আমি একদমই চাচ্ছিনা হারতে।তাই প্লিজ… আর বোঝাতে আসিস না.. ”
অরিনের বুকটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে ওঠে রৌদ্রের এহেন বাক্যে। চোখজোড়ার কার্নিশে জমা হয় নোনাজল। বুকটায় কেমন একটা হাহাকার লেগে যায় ইতোমধ্যে। সে ছলছল চোখজোড়া নিয়ে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের দিকে। রৌদ্র পাশে থাকা শপিং ব্যাগ দুটো অরিনের হাতে দিয়ে বলে,
“ বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হবি।তারপর এখান থেকে একটা পেইন কিলার খেয়ে নিবি।”
এই বলে সে উদ্যত হয় বেরিয়ে যেতে। তখনি পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে অরিন।মেয়েটার হাতদুটো বুকের কাছে এসে ঠেকলো রৌদ্রের।রৌদ্র তৎক্ষনাৎ চোখদুটো বন্ধ করে নেয়। দীর্ঘ এক নিশ্বাস ফেলে ভরাট কন্ঠে বলে ওঠে,
“ খবরদার অরি! তোর চোখ থেকে যেন একফোঁটা পানিও নিচে না পড়ে। বাই এনি চান্স, একফোঁটা পানিও যদি গড়িয়ে পড়ে তাহলে আই সয়্যার — আমি নিজের ক্ষতি করতে দু’বারও ভাববোনা।”
অগত্যা এমন একটা কথায় হকচকিয়ে ওঠে অরিন। সে তড়িঘড়ি করে রৌদ্রকে ছেড়ে দিয়ে নিজের চোখদুটো মুছে নেয়। নাক টেনে কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে থাকে,
“ প্লিজ এমন কথা বলবেন না।আমি কথা দিচ্ছি, আমি কাঁদব না। তবুও দয়া করে আপনি নিজের কোনো ক্ষতি করবেন না।”
রৌদ্র শুনলো মেয়েটার কথা।অন্যসময় হলে হয়তো এতক্ষণে মেয়েটাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিতো কিন্তু আজ দেখো! আজ কেমন উদাস হয়ে আছে ছেলেটা।রৌদ্র আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো গাড়ি থেকে। এদিকে তার চলে যাওয়ার পথে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে অরিন।মেয়েটা একটু পরপর হাত দিয়ে চোখদুটো মুছে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য, চোখ বেয়ে যেন অশ্রু গড়িয়ে না পড়ে। একটু পরেই অনিক এসে বসে গাড়িতে। বোনের দিকে তাকিয়ে হকচকিয়ে ওঠে অনিক।তৎক্ষনাৎ চিন্তিত গলায় বলতে থাকে,
“ কি হলো বনু? কাঁদছিস কেন? ভাইয়া বকেছে?”
তড়িৎ মাথা নাড়িয়ে না জানায় অরিন।নাক টেনে টেনে বলে,
“ রোদ ভাই আমায় কখনো বকে না ভাইয়া।সে খুব ভালো। অথচ আমায় দেখো… আমি এই ভালো মানুষটাকেই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।”
বলেই মেয়েটা মুখ খুলে নিশ্বাস নিতে লাগলো।হয়তো কান্না আটকিয়ে রাখার দরুন নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। অনিক বোনের এহেন অবস্থা দেখে বিচলিত হলো। সে তক্ষুনি ছুটে এলো বোনের কাছে। মেয়েটাকে বুকে টেনে, মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।নরম গলায় বলতে লাগলো,
“ কাঁদে না বনু। ভুল তো মানুষেরই হয়! তুই নাহয় ভাইয়াকে সরি বলে দিস।আমি শিওর,তোর সরি শুনলে ভাইয়া আর কষ্ট পাবেনা। চুপ… এবার কান্না থামা বাচ্চা!”
অরিন কি বুঝলো কে জানে। সেও শক্ত হাতে জড়িয়ে ধরে ভাইকে।তখনি টুং করে শব্দ তুলে অনিকের ফোনে একটা মেসেজ আসে। অনিক অরিনকে বুকে চেপে রেখেই পকেট থেকে ফোনটা বের করে সামনে ধরে। আর সাথে সাথেই দৃশ্যমান হয় রৌদ্রের পাঠানো ম্যাসেজটা।
“ গাড়ি ধীরে ধীরে চালাবি। আর অরির খেয়াল রাখবি!”
অনিক মৃদু হাসলো ম্যাসেজটা দেখে।তার রোদ ভাই মেয়েটার সঙ্গে রাগ করলেও যত্ন নিতে ভুলছেনা। এই জন্যই হয়তো তার রোদ ভাই সবার থেকে আলাদা।
রাত সাড়ে দশটা!
নিজের রুমের বারান্দায় এসে একমনে দাঁড়িয়ে আছে অরিন। দৃষ্টি তার বাড়ির গেটের দিকেই নিবদ্ধ। মেয়েটা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে রৌদ্রের।অথচ এতো সময় পেরোনোর পরও রৌদ্র ফিরছেনা বাড়িতে। অরিনের ক্ষনে ক্ষনেই মনে হচ্ছে — রৌদ্র হয়তো তার ওপরে রেগে থাকার কারণেই ফিরছেনা। অরিনের কেমন যেন নিজের কাছে নিজেকেই বড় অপরাধী ঠেকছে এ মুহুর্তে। অরিন রৌদ্রের চিন্তায় অস্থির হচ্ছে ক্রমাগত। অস্থিরতায় পুরো বারান্দায় পায়চারি চালাচ্ছে সে।তবুও অস্থিরতা কমবার নাম নেই তার! খানিকক্ষণ বাদেই গেটের কাছ থেকে হর্ণের শব্দ ভেসে আসে। অরিন পায়চারি ছেড়ে রেলিঙের ধার ঘেঁষে দাঁড়ায়।
তার তৃষ্ণার্ত চক্ষুদ্বয় খুঁজে চলেছে পরিচিত মুখটা। কিয়তক্ষন বাদেই গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে রৌদ্র। একহাতে স্ট্যাথোস্কোপটা ধরে রাখা,তো অন্যহাতে এপ্রনটা ঝুলিয়ে রাখা। ছেলেটার সম্পূর্ণ মুখশ্রী জুড়ে লেপ্টে আছে একরাশ ক্লান্তির ছাপ। রৌদ্র ধীর পায়ে এগিয়ে যায় বাড়ির সম্মুখ দুয়ারের দিকে।কিন্তু আজ যেন কি হলো তার।ছেলেটা কেমন থমকে দাঁড়ালো একমুহূর্তের জন্য। তারপর চট করে মাথা উঠিয়ে তাকায় অরিনের বারান্দায়। আর তখনি তার চোখাচোখি হয় অরিনের সঙ্গে। মেয়েটা কেমন একদৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অন্য সময় হলে হয়তো লুকিয়ে পড়তো নয়তো খানিকটা লজ্জায় পড়তো,কিন্তু আজ!
আজ এমনটা কিছুই হলোনা। রৌদ্র কিছুক্ষণ নির্বিকার হয়ে তাকিয়ে রইলো অরিনের পানে।তারপর হুট করেই নিজের দৃষ্টি সরিয়ে এনে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে সে।
অরিন খানিকটা আহত হলো রোদ্রের এমন ভাবভঙ্গিতে।সচরাচর রৌদ্র তাকে দেখে এতোটাও ভাবলেশহীন থাকেনা। কিন্ত আজ তো থাকলো! অরিন গোমড়া মুখে বারান্দা ছেড়ে রুমে আসে। পেটটায় যা ব্যাথা হচ্ছে না তার! এখন যে সিড়ি বেয়ে একটু নিচে নামবে — এই শক্তিটুকুও শরীরে নেই বোধহয়! মেয়েটা পেটের নিচে বালিশ চেপে শুয়ে রইলো বিছানায়। চোখদুটোতে ভিষণ রকমের জ্বালা করছে তার,তবুও মন খুলে একটু কাঁদতেও পারছেনা সে।পারবেই বা কি করে ? রৌদ্র যে তাকে এতোবড় একটা কথা বলে দিয়েছে, তারপরও কি আর কাঁদার কোনো জো থাকে?
“ বলে গিয়েছিলি মাত্র সপ্তাহখানেক লাগবে, অথচ এলি ১৪ দিন পরে। আর শরীরের এ কি হাল বানিয়েছিস বাবা? মুখটা তো শুকিয়ে গেছে একদম!”
ছেলেকে কাছে পেয়ে একের পর এক মমতাময়ী কথা বলে যাচ্ছেন জুবাইদা বেগম।শত হলেও মা তিনি! ছেলেকে এতোদিন পর চোখের সামনে পেয়ে উদ্বিগ্ন হবেন এটাই স্বাভাবিক। জুবাইদা বেগম ছেলের হাতটা টেনে সোফায় বসিয়ে নিজেও তার পাশে বসলেন। শাড়ির আঁচলে ছেলের ঘর্মাক্ত মুখখানা মুছে দিতে দিতে বললেন,
“ খুব কষ্ট হয়েছে এ কয়দিন বাবা? তুই কি ঠিক মতো খাবার খাস নি? চেহারাটা এমন শুকিয়ে গেছে কেনো বাবা? কাজের চাপ কি খুব বেশি ছিলো?”
রৌদ্র মায়ের উদ্বেগ দেখে মুচকি হাসলো।তারপর হুট করেই মায়ের বুকে মাথা গুঁজে দিলো ছেলেটা। জুবাইদা বেগমের কথাগুলো আঁটকে গেলো গলায়।ছেলেটা ঠিক কতদিন পরে তার বুকে এভাবে মাথা গুঁজলো, হিসেব নেই তার। জুবাইদা বেগম ভেজা চোখে হাসলেন একটুখানি। ছেলের মাথাভর্তি চুলগুলোয় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিলেন তিনি।নরম গলায় বললেন,
“ ফিরতে কোনো অসুবিধে হয়নি তো বাবা?”
রৌদ্র সময় নিয়ে মায়ের বুক থেকে মাথা উঠায়। মায়ের ছলছল চোখজোড়া আলতো করে মুছে দিয়ে বলে,
“ নাহ! কোনো অসুবিধে হয়নি।”
“ তুই জানিস রোদ? তুই না থাকায় রোজ তোর ঘরে গিয়ে একা একা ঘন্টা খানেক বসে থাকতো জবা।আমি আসতে বললেও আসতোনা।”
সামনে থেকে রাফিয়া বেগমের কথায় সেদিকে ফিরলো রৌদ্র। তারপর আবারও মায়ের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে ওঠে,
“ কেনো এমন অবুঝের মতো করো মা? আমিতো বলেই গিয়েছিলাম — তারাতাড়ি ফিরবো।তাছাড়া রোজ তো নিয়ম করে তোমার সঙ্গে কথা বলেছি তাই-না? তারপরও কেনো এমনটা করো?
জুবাইদা বেগম ছেলের কথায় আলতো হাসলেন। হাত বাড়িয়ে ছেলের মাথার চুলগুলো গুছিয়ে দিয়ে বললেন,
“ ও তুই বুঝবি না বাবা! মায়ের মন যে বড্ড অবুঝ হয়।”
রৌদ্র মা’কে আলতো করে আগলে নিলো নিজের বাহুডোরে।মায়ের আধপাক ধরে যাওয়া চুলগুলো আলতো হাতে গুছিয়ে দিয়ে, ঠোঁট ছোঁয়ায় মায়ের মাথায়। নরম কন্ঠে বলে,
“ এ ক’দিন ঔষধ খেয়েছিলে ঠিকঠাক মতো?”
জুবাইদা বেগম মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলেন। একটু পরেই ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হলো বাড়ির কর্তারা।রৌদ্র সবাইকে দেখে সালাম দেয়।কবির সাহেব গম্ভীর মুখে সালাম নিলেন। অন্যপাশের বড় সোফার একপাশে গা এলিয়ে বসলেন আয়েশ করে। তার পাশেই বসলেন সাব্বির সাহেব আর তায়েফ সাহেব।তাশরিক সাহেব রৌদ্রের পাশে এসে বসলেন।রৌদ্র একফাঁকে বাবা-চাচাদের সঙ্গে কথা বলে নিলো টুকটাক বিষয়ে।
রাত পৌনে ১২ টা।
রাত বহু আগে নামলেও অরিনের চোখে ঘুমগুলো যেন আজ কোথাও লুকিয়ে আছে সন্তর্পণে। মেয়েটা ক্ষনে ক্ষনে এপাশ ওপাশ ফিরছে কিন্তু নাহ! ঘুম বাবাজী আজ বুঝি আর ধরা দেবার নয়! অরিন এবার বেজায় বিরক্ত হলো।সে একরাশ বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে শোয়া ছেড়ে উঠে বসে।একহাতে পেট চেপে, খানিকটা গোঙালো মৃদু শব্দে। মেয়েটা ব্যাথায় মুখ কুচকেঁ বসে রইলো জড়সড় হয়ে। তখনি তার ফোনে কল আসে। অরিন ফোনটা না দেখেই রিসিভ করে কানে ঠেকায়। কিয়তক্ষন বাদে ওপাশ থেকে ভেসে আসে তার চিরচেনা কন্ঠস্বর!
“ দরজা খোল!”
অরিন চমকায়।তৎক্ষনাত ফোনটা কান থেকে সরিয়ে চোখের সামনে আনে সে।দেখতে পায় — এটা সত্যি রৌদ্র! অরিন আর দেরি করলোনা একদমই। সে তড়িঘড়ি করে উঠে গিয়ে দরজাটা খুলে দেয়। সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় — দরজার সামনে সটান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রৌদ্র। ছেলেটার হাতে ছোট্ট একটা ট্রে ধরে রাখা। সেথায় কি যেন একটা ঢেকে রাখা। রৌদ্র একবার সর্তক চোখ বুলায় আশেপাশে। পরক্ষণেই কাওকে চোখে না পড়ায় সে ঢুকে পড়ে অরিনের রুমে।
রুমে ঢুকেই হাতের ট্রে টা টেবিলে রাখলো রৌদ্র। তারপর তারাতাড়ি করে ঘরের দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে মেয়েটার কাছে এসে দাঁড়ালো। অরিনটা কেমন হালকা ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। বোধহয় পেটের ব্যাথায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছেনা মেয়েটা। রৌদ্র তেমন কিছু না বলে মেয়েটাকে তৎক্ষনাৎ পাঁজা কোলে তুলে নেয়। অরিন হুটহাট ঘটনায় তাল সামলাতে না পেরে ছেলেটার ঘাড় চেপে ধরে। রৌদ্র সযত্নে অরিনকে বিছানায় শোয়ায়।তারপর নিজেও বসে পড়ে তার পাশে।হাত বাড়িয়ে বেডসাইডের টেবিলের ওপর রাখা ট্রে টা থেকে একটা বাটি নিয়ে নেয় হাতে। অরিন শুয়ে থেকেই খানিকটা উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে, বাটিটায় কি আছে দেখার জন্য। রৌদ্র নির্বিকার ভাবে আড়চোখে দেখছে মেয়েটার কৌতুহল।কিন্তু মুখে বুঝি আজকে তার কুলুপ এঁটেছে! কোনো কথাই বলছে না সে।
অরিন ধীরে ধীরে রৌদ্রের হাতের ওপর হাত রাখলো।রৌদ্র তার স্পর্শ পাওয়া মাত্রই শান্ত চোখে তাকালো তার দিকে। অরিন কিছুটা ধরে আসা গলায় বলতে লাগলো,
“ এবারের জন্য ক্ষমা করে দিন না ডাক্তার সাহেব! কথা দিচ্ছি এমন ভুল আর কোনদিন করবো না।”
রৌদ্র মেয়েটার এহেন কথার পিঠে মৌন রইলো।সে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে আনে অরিনের ওপর থেকে।হাতে থাকা বাটিটা বিছানার ওপর রেখে বলে,
“ উপুড় হয়ে শুয়ে পড় অরি!”
অরিন হতবিহ্বল হয়ে গেলো এমন কথায়। ভুল শুনলো কি-না এই অর্থে সে আবারও জিজ্ঞেস করলো,
“ হু? কি বললেন?”
রৌদ্র ফের শান্ত চোখে তাকায় অরিনের দিকে। আগের ন্যায় ভরাট কন্ঠে বলে ওঠে,
“ উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে বলেছি।”
অরিন বাধ্য মেয়ের মতো রৌদ্রের কথানুযায়ী উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। রৌদ্র তখন ধীরে ধীরে অরিনের কোমরের ওপর থেকে জামাটা আলতো করে খানিকটা উপরে তুলে দিলো।তখনি তার সামনে উম্মুক্ত হলো অরিনের ফর্সা কোমরের বাকঁ। রৌদ্র একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। তার নিশ্বাস বুঝি ক্রমশ ঘন হয়ে আসছে। বুকের মাঝে লুকিয়ে রাখা ইচ্ছেরা বুঝি ডানা ঝাপটাতে লাগলো সবেগে। রৌদ্র শুষ্ক ঢোক গিলে পরপর। ছেলেটার আবার এই এক জ্বালা! মেয়েটার কাছে আসলেই তার গলায় বুঝি খরার দেখা মিলে।এই যেমনটা এখন হচ্ছে! রৌদ্র জিভ দিয়ে নিজের শুষ্ক ঠোঁটজোড়া খানিকটা ভিজিয়ে নেয়।তারপর সামনে রাখা বাটিটা থেকে কুসুম গরম অলিভ অয়েলটা হাতে মেখে নেয় একটু।ভালো করে হাতের তালুতে নিয়ে পরোখ করে — তেলের উষ্ণতা আদৌও সহনীয় কি-না, এইটুকু গরম তার সানশাইনের শরীরে সইবে কি-না! যখন রৌদ্রের মনে হলো,তেলের এই মৃদু উষ্ণতা অরিনের গায়ে সইবে তখনি সে ধীরে ধীরে নিজের একহাত রাখে অরিনের কোমল কোমরে।তার হাতের উষ্ণ স্পর্শ পেতেই খানিকটা কেঁপে ওঠে অরিন। অস্থিরতায় তৎক্ষনাৎ বালিশে মুখ গুঁজে ফেলে মেয়েটা।রৌদ্র কিছুক্ষণ একই ভঙ্গিতে বসে রইলো। হয়তো মনে মনে নিজেকে শক্ত রাখার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে ছেলেটা।
কিছুক্ষণ পর রৌদ্র নিজের দু’হাত দিয়ে আলতো করে মালিশ করতে থাকে অরিনের কোমরে। মেয়েটা আরাম পেয়ে চুপচাপ শুয়ে রইলো উপুড় হয়ে। অথচ তার আরাম লাগলেও এদিকে ছেলেটার অবস্থা যে দেখার মতো! রৌদ্রের হাত যতবার অরিনের কোমরে লেপ্টে যাচ্ছে ঠিক ততবার ছেলেটার মনের সুপ্ত ইচ্ছেগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠছে।শত হলেও একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সে।মনের মাঝে এমন অনুভুতি জাগ্রত হওয়া নিতান্তই স্বাভাবিক!
রৌদ্র অরিনের কোমরের মালিশ শেষ করে বলে,
“ এইবার সোজা হো!”
আরাম পেয়ে অরিনের চোখ প্রায় নিভু নিভু। সে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,
“ না.. এভাবেই আরাম লাগছে!”
ব্যস! মেয়েটার এমন ঘুম জড়ানো কন্ঠস্বরই যথেষ্ট ছিলো ছেলেটাকে আরেকধাপ পাগল করতে। এমনিতেই মেয়েটার কোমরে মালিশ করে তার অবস্থা কাহিল, তারওপর এখন আবার এহেন কন্ঠস্বর! রৌদ্র চোখদুটো বন্ধ করে নেয়। পরপর কয়েকটা শুকনো ঢোকও গিলে নেয় ইতোমধ্যে। কিয়তক্ষন বাদে রৌদ্র বহুকষ্টে নিজেকে সামলিয়ে অরিনের দিকে চোখ মেলে তাকায়।হাত বাড়িয়ে অরিনের ঘাড়ের ওপর থেকে চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে সেখানটায় পরপর কয়েকটা চুমু খেয়ে বসে অধৈর্য্য ছেলেটা।অরিন মৃদু নড়েচড়ে উঠে।ঘাড়ের কাছে উষ্ণ নিঃশ্বাসের স্পর্শ পেতেই ঘুমঘুম চোখটা মুহুর্তেই খুলে যায় তার।সে তৎক্ষনাৎ হকচকিয়ে ওঠে পেছনে তাকায়।দেখতে পায় — রৌদ্র কেমন নেশালো চোখে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অরিন শুকনো ঢোক গিলে। মিনমিনে স্বরে বলে,
“ ডাক্তার সাহেব!”
রৌদ্র আলতো হাসে।মেয়েটার মুখের ওপর এসে আছড়ে পড়া চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে দিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দেয়। তারপর অরিনের ললাট বরাবর একটা দৃঢ় চুমু একেঁ দিয়ে বলে,
“ খারাপ লাগছে?”
অরিনটা বুঝি আর নিজেকে আঁটকে রাখতে পারলোনা। সে ঝট করে জড়িয়ে ধরে রৌদ্রকে।রৌদ্রের শার্টের পিঠের অংশ খামচে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বলতে লাগলো,
“ আমার সত্যি অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে ডাক্তার সাহেব! আমি সত্যি দুঃখীত।আসলে… আমি ভেবেছিলাম আপনি হুট করে বিষয়টা জানলে হয়তো কষ্ট পাবেন তাই আমি…. ”
বাকিটা আর বলতে পারলোনা অরিন।তার আগেই তার ঠোঁটজোড়া দখল করা নেয় রৌদ্র। রৌদ্রের ওষ্ঠপুটের উষ্ণ স্পর্শে নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে অরিনের। কখন যে তার হাতদুটো অজান্তেই রৌদ্রের ঘাড় বেয়ে পেছনের চুলগুলো চেপে ধরেছে সেদিকে আর খবর নেই মেয়েটার। শুধুই কি সে-ই এমন বেখবর হয়েছে? এদিকে রৌদ্রও তো বরাবরের মতো উন্মাদ হচ্ছে। তার অধরযুগলের কার্য ধীরে ধীরে যেমন জোরালো হচ্ছে, তেমনি তার হাতদুটো হচ্ছে বেপরোয়া। ছেলেটার হাতদুটো বেপরোয়াভাবে বিচরণ চালাচ্ছে অরিনের সর্বাঙ্গে। অরিন মৃদু কেঁপে ওঠে এহেন স্পর্শে।তার শরীরের ভেতর বয়ে যাওয়া কম্পন যে স্পষ্ট লক্ষনীয়!
রৌদ্র ধীরে ধীরে অরিনের ঠোঁটটা ছেড়ে দেয়।ছেলেটা হাঁপাচ্ছে, সেই সাথে মেয়েটাও হাঁপাচ্ছে ভিষণ। রৌদ্র এখন কেমন অধৈর্য্য হলো।সে অরিনের চোয়ালটা আলতো হাতে চেপে ধরে অস্থির গলায় বলে ওঠে,
“ জান, উড ইউ লাইক টু হেভ আ ফ্র্যাঞ্চ কিস?”
অরিন ঘাবড়ে গেলো খানিকটা। এই ছেলে হুটহাট তাকে এসব কি বলে? একবার বাইট কিস,এখন আবার ফ্র্যাঞ্চ কিস! মানে কিস করারও এতো প্রকারভেদ আছে? কই সে-তো আগে কখনো শুনেনি এসব! অরিন খানিকটা গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে। মিনমিনিয়ে বলতে থাকে,
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৪১
“ ইয়ে… মানে… এগুলো আবার কেমন চুমু?”
রৌদ্র হাসলো ঠোঁট কামড়ে। অরিনের গোলাপি অধরজোড়ার দিকে এগোতে এগোতে বলে,
“ এগুলো বউকে দেওয়ার মতো চুমু!”