সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৫১
Jannatul Firdaus Mithila
রাফিয়া বেগম সোফায় বসে ইচ্ছেমতো গালমন্দ করছেন মেয়েকে। ইতোমধ্যেই ড্রয়িং রুমে হওয়া শোরগোলে ছুটে এসেছেন বাড়ির সকলে। রাইসা বেগম আর মাইমুনা বেগম এসেই অরিনকে আগলে নিলো নিজেদের সঙ্গে। তায়েফ সাহেব গম্ভীর মুখে রাফিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ এমন একটা পরিস্থিতে মেয়েটার গায়ে হাত না তুললেই হতোনা বউমনি?”
রাফিয়া বেগম শক্ত মুখে আগের ন্যায় বসে আছেন। তার চেহারার অভিভ্যাক্তিতে নেই কোনো অনুশোচনা কিংবা পরিতাপ! ভাব এমন — তিনি বুঝি ঠিকই করেছেন মেয়েকে মেরে! প্রায় মিনিট দুয়েক পেরোনোর পরও রাফিয়া বেগমকে এমন মৌন থাকতে দেখে ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললেন তায়েফ সাহেব। তিনি আর কিছু না বলে চলে গেলেন ড্রয়িং রুম ছেড়ে। গতকাল থেকে একের পর এক ধাক্কায় যেন একপ্রকার অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তিনি। ছোটো হওয়ায় বাড়ির বড়রা বুঝি তাদের কোনো কথার দামই দিচ্ছে না!
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
এদিকে, সাব্বির সাহেব নিজের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। কোমরের পেছনে দু’হাত বেঁধে থমথমে মুখে চেয়ে আছেন ড্রয়িং রুমের সোফায় বসা নিজ স্ত্রীর দিকে। কিয়তক্ষন বাদেই তিনি ধীর পায়ে এগিয়ে এলেন মেয়ের দিকে। অরিন এখনো হেঁচকি তুলে কাঁদছে।মেয়েটার গৌড় মুখটা মা’রের তোপে লাল হয়ে গেছে যেন! সাব্বির সাহেব ছেলের বাহুডোর হতে মেয়েকে আলগোছে নিজের কাছে টেনে নিলেন। অরিনও মাথা নিচু রেখে বাবার কাছে চলে আসে।সাব্বির সাহেব আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ মেয়েটাকে নিজের সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন রুমের দিকে। দুটো সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই
অসাবধানতাবশত অরিন খানিকটা হোঁচট খেয়ে পড়তে নিলে সাব্বির সাহেব মেয়েকে শক্ত করে নিজের দৃঢ় হাতের বাঁধনে আগলে নিলেন। পড়ে যাওয়ার ভয়ে অরিন চোখমুখ কুঁচকে ফেলে তৎক্ষনাৎ! পরক্ষণেই নিজেকে স্বাভাবিক পেয়ে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় মেয়েটা।সাব্বির সাহেব এবারেও কিছু বললেন না।তিনি চুপচাপ মেয়েটাকে সাথে নিয়ে হাঁটা ধরেন।
সাব্বির সাহেব মেয়েকে নিয়ে রুমে ঢুকলেন। ধীরে ধীরে অরিনকে এনে বসালেন বিছানার পাশ ঘেঁষে। তারপর হেঁটে চলে গেলেন আলমারির দিকে।সেখান থেকে ফার্স্ট এইড বক্স আনতে গিয়েই তার চোখ আটকে গেলো আলমারি ভর্তি বিভিন্ন কোয়ালিটির চকলেটগুলোর দিকে। সাব্বির সাহেব কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রইলেন সেদিকে। কিয়তক্ষন গম্ভীর মুখে কিছু একটা ভাবলেন তিনি।তারপরই হাতে একটা তোয়ালে নিয়ে চলে গেলেন ওয়াশরুমের দিকে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলেন
তোয়ালেটা ভিজিয়ে। সাব্বির সাহেব একহাতে ভেজা তোয়ালে, অন্যহাতে ফার্স্ট এইড বক্সটা নিয়ে চলে এলেন মেয়ের কাছে। অরিনের কাছ হতে দু’হাত দুরত্ব নিয়ে বসলেন তিনি।অরিন ধীরে ধীরে মাথা তুলে বাবার গম্ভীর হয়ে থাকা মুখটার পানে চাইলো। আজ কেনো যেন তার খানিকটা ভয় হচ্ছে বাবার সামনে বসতে! হয়তো ভাবছে, তার বাবাও যদি তার মায়ের মতো রাগারাগি করে তার সঙ্গে! অরিন ভয়ে ভয়ে ঢোক গিললো কয়েকটা। অস্থিরতায় মেয়েটা কেমন হাত কচলে যাচ্ছে বারংবার।
সাব্বির সাহেব আড়চোখে দেখলেন সবটা।পরক্ষণেই খানিকটা এগিয়ে এসে মেয়ের মুখটা আলতো করে মুছিয়ে দিতে লাগলেন ভেজা তোয়ালেটা দিয়ে। অরিন চোখ বন্ধ রেখে ভালো মেয়েদের মতো বসে রইলো। সাব্বির সাহেব বেশ নাজুকভাবে মেয়ের মুখ মুছিয়ে দিচ্ছেন। মেয়েটার নাক থেকে গড়িয়ে পড়ছে কয়েক ফোঁটা লহু! সেদিকে তাকাতেই যেন কলিজাটা ছ্যাৎ করে উঠলো মানুষটার! শত হলেও মেয়েটা তার বড্ড আদুরে কি-না! সাব্বির সাহেব ছলছল চোখে নিজের হাতের কাজ শেষ করলেন। তারপর ফার্স্ট এইড বক্স হাতড়ে Hirudoid cream বের করে মেয়ের গালে পড়ে যাওয়া কালসিটে দাগগুলোর ওপর আলতো করে লাগিয়ে দিলেন। এতকিছুর মাঝে অরিন ছিলো একেবারেই নির্বিকার। মেয়েটা শুধু থেকে থেকে দুয়েকটা ফোপাঁনোর সুর দিচ্ছে!
সবশেষে সাব্বির সাহেব আলতো করে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন —
“ এখনো ব্যাথা করছে?”
অরিন ডানে-বামে মাথা নাড়ায়। তা দেখে সাব্বির সাহেব এবার বুঝি খানিকটা নড়েচড়ে বসলেন।তিনি মেয়ের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন,
“ একটা গল্প শুনবে মামনি?”
অরিন চোখ তুলে বাবার দিকে। অবুঝের ন্যায় বলে ওঠে,
“ হুম শুনবো!”
সাব্বির সাহেব আলতো হাসলেন। বিছানার ওপর পা তুলে বসলেন আয়েশ করে। তারপর নিজের কোলের ওপর একটা বালিশ চেপে মেয়েকে বললেন,
“ তুমি আমার কোলে শোও আম্মা, আমি তোমার মাথায় বিলি কেটে দিতে দিতে বলি!”
অরিন বুঝি তৎক্ষনাৎ নিজের সকল দুঃখ ভুলে গেলো।সে গালভর্তি হাসি টেনে একপ্রকার ঝাপিয়ে পড়লো বাবার কোলে।বেশ আয়েশ করে বাবার কোলে মাথা রেখে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো,
“ হুম এবার বলো!”
সাব্বির সাহেব মেয়ের এহেন বাচ্চামো দেখে ভেজা চোখে হাসলেন একটুখানি। তারপর মেয়ের মাথায় বিলি কেটে বলতে লাগলেন,
“ এক দেশে এক রাজকুমার ছিলেন, যিনি ছিলেন যথেষ্ট শক্তিশালী এবং তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যাক্তি। তার ব্যাক্তি জীবন ছিলো ভিষণ ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন। সেই রাজকুমার পৃথিবীর সকলের জন্য ছিলো একজন কঠোর, ন্যায়পরায়ন এবং বিচক্ষণ মানুষ কিন্তু শুধুমাত্র একজনের কাছে তিনি ছিলেন একেবারেই অসহায় একজন! যার সামনে রাজকুমারের কোনো রাগ,অভিমান, বিচক্ষনতা,কঠোরতা কিছুই টিকতোনা বেশিক্ষণ!কেনো জানো?”
অরিন জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে বাবার দিকে। মেয়েটার চোখেমুখে স্পষ্ট লেপ্টে আছে একরাশ কৌতুহলতা! সাব্বির সাহেব আলতো হেসে ফের বলতে লাগলেন,
“ কারণ, রাজকুমার সেই মানুষটাকে ভিষণ ভালোবাসতো। বলতে গেলে নিজের চাইতেও কয়েকগুণ বেশি ভালোবাসতো। তাই রাজকুমার পৃথিবীর সকলের কাছে কঠোর হলেও একমাত্র তার প্রিয় মানুষটার কাছে তিনি ছিলেন একেবারেই নরম।সেই মানুষটা আর কেও না সে ছিলো এক সুন্দরী রাজকন্যা! রাজকন্যাও কিন্তু রাজাকে ভিষণ ভালোবাসতো। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিলো। রাজকুমার আর রাজকন্যা একে-অপরকে ভিষণ ভালোবাসতো। রাজকন্যা হুটহাট রাগ করলেও কুমার ভিষণ আদুরে ভাবে তার রাগ ভাঙাতো।রাজকন্যা যখন যা চাইতো তাই চোখের পলকে এনে হাজির করতো রাজকুমার।রাজকন্যার সামান্যতম কষ্ট হলেও অস্থির হতো সে।কিন্তু দু’জনার এতো এতো ভালোবাসার পরও হঠাৎ একদিন ঘটলো এক ভয়াবহ ঘটনা!”
বাবাকে হঠাৎ থামতে দেখে অরিন কেমন অস্থির হয়ে উঠে বসে। সে বাবার দিকে তাকিয়ে অস্থির গলায় বলতে থাকে,
“ থামলে কেনো আব্বু? বাকিটা বলোনা প্লিজ!”
সাব্বির সাহেব মেয়ের দিকে তাকালেন। ঠোঁটের কোণে আহত হাসি টেনে বলতে লাগলেন,
“একদিন রাজকুমার পুরো রাজবাড়ীর প্রতিটি মানুষের সামনে নিজের মনের কথা বলে।বলে সে না-কি রাজকন্যাকে বিয়ে করতে চায়। এ-ও বলে রাজকুমার আর রাজকন্যা না-কি একে-অপরকে ভিষণ ভালোবাসে। তখন রাজা রাজকন্যাকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলো — রাজকুমার যা বলেছে তা সত্যি কি-না! তখন প্রতিত্তোরে রাজকন্যা কি বলেছে জানো?”
“ কি বলেছে?” — কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো অরিন।
সাব্বির সাহেব মৃদু ঢোক গিললেন। ইশশ্ এইটুকু কথা বলতে গিয়েই গলাটা কেমন ধরে এসেছে তার! তিনি খানিকক্ষণ সময় নিয়ে নিজেকে সামলালেন। তারপর মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“ বলেছে সে না-কি রাজকুমারকে ভলোইবাসেনা! রাজকুমার যা যা বলেছে সবটাই না-কি মিথ্যে!”
“ কিন্তু এটা তো মিথ্যে কথা।তাছাড়া বিরাট মাপের অপরাধ! একটা মানুষকে ভালোবেসে তার ভালোবাসাকে অস্বীকার করলো কেনো? ”
“ তাহলে তুমি কেনো অস্বীকার করলে আমার রোদকে?”
থমকায় অরিন।বাবার শেষ কথাটা বুঝি একেবারে বুকে এসে বিঁধেছে তার। মেয়েটার চোখদুটো বুঝি ভরে আসলো নিমিষেই। অরিন তৎক্ষনাৎ এদিক ওদিক এলোমেলো দৃষ্টি ফেলে নিজের ছলছল চোখজোড়া লুকাতে তৎপর হলো। সাব্বির সাহেব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন মেয়ের পানে।খানিকক্ষণ বাদে নিজ থেকেই বলে ওঠেন,
“ জানো আম্মু? তুমি কিন্তু বরাবরই অপটু কথা লুকাতে!”
অরিন তৎক্ষনাৎ নিজের চোখদুটো বন্ধ করে নেয়। ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলানোর প্রয়াস চালায়। সাব্বির সাহেব এগিয়ে আসেন খানিকটা। হাত বাড়িয়ে মেয়ের মাথাটা নিজের কাঁধের ওপর নিয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন,
“ আমি জানি মা,তুমি কিছু না কিছু লুকাচ্ছো।বাবা হয়ে তোমার কাছে জানতে চাইবো না সেবিষয়ে। শুধু একটা কথাই বলবো — ভালো না বাসলে এক কথা, কিন্তু ভালোবেসেও সেই ভালোবাসাকে অস্বীকার করা কোনো ভুল নয়, এ যে রীতিমতো পাপ! আর জানোই তো, ভুলের ক্ষমা হলেও পাপের কিন্তু কোনো ক্ষমা নেই!”
কথাটা ব’লে আপাতত চুপ করে রইলেন দু’জনে।অরিন হয়তো কাঁদছে নিঃশব্দে! সাব্বির সাহেবের কাঁধটা কেমন যেন স্যাতস্যাতে হয়ে এসেছে মনে হচ্ছে! তিনি আর কিছু না বলে মেয়েকে রেখে ধীরে ধীরে বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে। আর অরিন? সে বসে রইলো আহত মনে। তার বাবার বলা কথাগুলো যে ভিষণ রকমের ভাবাচ্ছে তাকে। মেয়েটা ওসব ভাবতে ভাবতেই মাথা চেপে ধরে নিজের। নাহ, আর পারছেনা সে।আর পারছেনা ভাবতে।কিয়তক্ষন বাদে অরিন এবার চোখমুখ শক্ত করে নিলো।হাত দিয়ে চোখদুটো মুছে নিয়ে বেরিয়ে গেলো ঘর ছেড়ে।
রাইসা বেগম অন্যমনস্ক হয়ে চুলোর ধারে দাঁড়িয়ে আছেন।ওদিকে চুলোর ওপর ভাত যে উপচে পড়ছে সেদিকে কোনো খবর নেই মানুষটার! হঠাৎই নাকে কেমন পোড়া পোড়া গন্ধ পেতেই সম্বিৎ ফিরে পান তিনি।পরক্ষণেই সামনে তাকাতেই আঁতকে ওঠেন একপ্রকার। তিনি তড়িঘড়ি করে ভাতের ওপর থেকে গরম ঢাকনাটা হাতা ছাড়াই ধরতে নিলেন। আর সঙ্গে সঙ্গেই হাতে গরম ছ্যাক লাগায় ব্যাথাতুর শব্দ করে ওঠেন। ইশশ্! মানুষটা কেমন ভুলোমনা হয়ে গেলো হঠাৎ করেই। গরম ঢাকনাটা কিভাবে পারলেন হাতা ছাড়া ধরতে? রাইসা বেগম নিজের এমন অদ্ভুত কান্ডে নিজেই বেশ খানিকটা তিতিবিরক্ত হলেন।মুখে একরাশ বিরক্তি ভাব নিয়ে ফ্রিজ থেকে তড়িঘড়ি করে দুটো বরফের টুকরো বের করে হাতে ঘষতে লাগলেন। এরইমধ্যে সেথায় গুটিগুটি পায়ে হাজির হয় অরিন। কিচেনের দুয়ারে দাঁড়িয়ে একবার আড়চোখে আশেপাশে তাকালো মেয়েটা।পরক্ষণেই ধীরে ধীরে কিচেনে ঢুকলো সে। অদূরেই রাইসা বেগমকে ওমন গোমড়া মুখে হাতে বরফ লাগাতে দেখে চিন্তিত গলায় বলতে লাগলো,
“ কি হয়েছে হাতে ছোটো মা?”
রাইসা বেগম বিষন্ন মুখে অরিনের দিকে চাইলেন। আহত গলায় বললেন,
“ আর বলিস নারে মা! অন্যমনস্ক থাকায় গরম ঢাকনাটা হাতা ছাড়াই ধরে ফেলেছিলাম। তাই দেখনা, হাতটায় কেমন ফোসকা পড়ে গেছে ইতোমধ্যে! ”
বলেই তিনি হাতটা বাড়িয়ে দিলেন অরিনের দিকে। অরিন চিন্তিত হয়ে ছোটো মা’র হাতটা উল্টেপাল্টে দেখলো।পরক্ষণেই কেমন আহত গলায় বললো,
“ বেশ খানিকটা জায়গায় ফোসকা পড়ে গেছে ছোটো মা! তুমি এখনি ঘরে যাও।হাতে ঔষধ লাগাও।অন্তত জ্বলুনিটা নাহয় কমুক!”
রাইসা বেগম নিজের হাতের দিকে দৃষ্টি রেখে মাথা নাড়লেন। তারপর চলে যেতে লাগলেন কিচেন থেকে।কিন্তু কি একটা মনে করে আবারও পেছনে তাকালেন তিনি।অরিনকে জিজ্ঞেস করলেন,
“ তোর কি কিছু লাগবে মা?”
অরিন মাথা ঝাকায়। বলে,
“ আমারটা আমি নিয়ে নিতে পারবো ছোটমা। তুমি আগে ঘরে গিয়ে ঔষধ লাগাও।”
রাইসা বেগম আলতো করে হেসে চলে গেলেন নিজের রুমের দিকে। আর অরিন নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো রাইসা বেগমের সম্পূর্ণ চলে যাওয়ার। যখনই দেখলো রাইসা বেগমকে আর দেখা যাচ্ছে না তখনি সে আশেপাশে খুঁজে মাঝারি সাইজের ছুড়িটা হাতে তুলে নেয়। ছলছল চোখে কিয়তক্ষন ছুড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলো মেয়েটা।তারপর সেটি লুকিয়ে নিলো নিজের ওড়নার আড়ালে।
অনিক মাত্র বেরিয়ে এলো গোসল সেরে। সারারাত জেগে থাকার দরুন শরীরটা কেমন মেজমেজ করছে তার।ছেলেটা ভেজা চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে চোখ রাখে সামনের দেয়ালে সগৌরবে ঝুলে থাকা ঘড়িটার দিকে। সকাল ১০ টা বেজে ৪০ মিনিট! আজকে তার আর অফিস যাওয়া হলোনা। আর যাবেই বা কিভাবে? বাড়ির প্রতিটি সদস্যের যা নাজুক অবস্থা! তারওপর তার বোনটারও যে খেয়াল রাখতে হবে তার।অনিক শরীর মুছে গায়ে একটা টিশার্ট জড়িয়ে নিলো।তারপর গটগট পায়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।তার রুমটা করিডরের একেবারে শেষ কিনারে হওয়ায় সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে খুব একটা সময় লাগে না অবশ্য! কিন্তু আজ অনিকের কি হলো কে জানে! ছেলেটা নিজের রুমের কাছে দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বোনের ঘরের বন্ধ দরজার দিকে। হঠাৎ করেই মনটা কেমন খচখচ করছে তার! সকালে বোনটার গায়ে বেশ কয়টা মা’র পড়েছে! এরপর তো একটাবারও বোনের খোঁজ নিলো না সে। আহারে! এতো আদুরে বোনটার সাথেও এতো কঠোর হচ্ছে অনিক? অনিকের মনটা বিষিয়ে এলো ক্ষনিকেই! সে চটপট সবকিছু ভুলে এগিয়ে গেলো বোনের ঘরের দিকে।বন্ধ দরজার গায়ে পরপর দুটো করাঘাত করে ডাকতে থাকে বোনকে,
“ বনু! ও বনু! গেটটা খোল!”
ওপাশ নিরব! অনিক ভাবে — হয়তো বোন তার সঙ্গে রাগ করে আছে বিধায় সাড়াশব্দ দিচ্ছে না।অনিক হালকা হেসে আবারও করাঘাত চালায়। কিন্তু নাহ, এবারেও সাড়াশব্দ নেই কোনো। এবার যেন খানিকটা খটকা লাগলো অনিকের মনে।ছেলেটা তৎক্ষনাৎ গলা উঁচিয়ে ডাক পারে বোনকে,
“ অরি! এই অরি গেট খোল তো!”
নাহ! কোনো রা-শব্দ নেই মেয়েটার। অনিক বুঝি বেশ ঘাবড়ে গেলো এবার। সে কেমন উদভ্রান্তের ন্যায় চিৎকার দিয়ে ডাকতে থাকে বোনকে,
“ বনু! বনু প্লিজ গেট খোল! ভাইয়া ভয় পাচ্ছি বাচ্চা! ”
এদিকে, অনিকের এহেন চিৎকারে বাড়ির সকলে একপ্রকার হুড়মুড় করে ছুটে আসে অরিনের রুমের দিকে। তায়েফ সাহেব তো এঁটো হাতেই ছুটে এসেছেন অনিকের চিৎকার পেয়ে। বেচারা বুঝি খাবার খাচ্ছিলো! সাব্বির সাহেব দূর্বল দেহটা নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে মেয়ের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালেন।বহুকষ্টে থেমে থেমে মেয়েকে ডাকলেন,
“ মা? ও মা? গেটটা খোলো মা!”
নাহ! অরিন হয়তো শুনলোনা বাবার এহেন কাতর গলার ডাক! সাব্বির সাহেব ঢোক গিলছেন পরপর। মনটা কেমন অজানা আতঙ্কে বিষিয়ে যাচ্ছে। বারেবারে মনে এসে বারি খাচ্ছে — মেয়েটার কিছু হলো নাতো? ওদিকে,রাফিয়া বেগম পাথর বনে গেছেন যেন। মানুষটা হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন বন্ধ দরজার দিকে। অনিক আবারও জোর গলায় ডাকলো বোনকে,
“অরি! বোন আমার, আল্লাহর দোহাই লাগে দরজাটা খোল।ভাইয়া কথা দিচ্ছি… আর কোনোদিন তোর সাথে শক্ত গলায় কথা বলবো না। বনু!প্লিজ একটাবার দরজাটা খোল!”
দেখতে দেখতে অনিক প্রায় মিনিট দশেক যাবত একাধারে করাঘাত করে যাচ্ছে বন্ধ দরজার গায়ে, অথচ ভেতর থেকে কোনোপ্রকার রা-শব্দটিও আসছে না। সময় যত ঘনিয়ে যাচ্ছে ততই যেন ভয় বাড়ছে সকলের! সাব্বির সাহেব একপাশে দাড়িয়ে ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলছেন।লোকটার সম্পূর্ণ শরীর কাপছে অনবরত! হয়তো কোনো অজানা আতঙ্কে কিংবা কোনো অশনি সংকেতের আগমনে!
তায়েফ সাহেব এঁটো হাতেই কড়া নেড়ে একাধারে ডেকে যাচ্ছেন অরিনকে।ওদিকে, রাফিয়া বেগম শুকনো চোখেমুখে দাঁড়িয়ে আছেন পাশের দেয়াল ঘেঁষে। ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে তার! মেয়েকে সকাল সকাল কতগুলো মা’রই না দিলেন তিনি! মেয়েটা কি তবে সেই অভিমানেই…. নাহ, আর ভাবতে পারছেন না তিনি।ভেতরটা তার শুকিয়ে আসছে অজানা আতঙ্কে।তিনি কাঁপা কাঁপা শরীরটা নিয়ে এগিয়ে এলেন দরজার কাছে। হাতদুটো দিয়ে দরজায় করাঘাত করতে করতে কাঁপা কন্ঠে বললেন,
“ মা’রে! তোর কাছে মাফ চাইছি মা! আর কোনোদিন তোর গায়ে হাত তুলবো না ! শুধু এবারের মতো মাফ করে দে! তোর যা ইচ্ছা তাই করিস মা! তোর যেখানে ইচ্ছে সেখানেই যাস… অন্তত এবার গেটটা খোল মা!”
নাহ! ওপাশ থেকে তখনো ভেসে আসেনি তেমন কোনো শব্দ! বাড়ির সবাই আরেক চোট ভয় পেলেন। অনিক ক্রমাগত কাঁদতে কাঁদতে দরজা ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছে।কিন্তু কাজের কাজ তো হচ্ছেই না!
ঠিক এমনন সময় ক্লান্ত দেহটা নিয়ে কোনরকমে দুলতে দুলতে বাড়িতে ঢুকলো রৌদ্র। ছেলেটার চোখেমুখে স্পষ্ট লেপ্টে আছে ক্লান্তির ছাপ! এইতো বেশিক্ষণ না,শুধুমাত্র ঘন্টাখানেকের জন্য এসেছে বাড়িতে। কোনোরকমে গোসলটা সেড়ে দুটো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আবারও যেতে হবে হসপিটালে। যদিওবা হসপিটালে আপাতত তাশরিক সাহেব আছেন। তার ভরসাতেই তো রৌদ্র বাড়িতে এলো!
রৌদ্রের পাদু’টো বাড়িতে প্রবেশ করতেই থমকে গেলো ওপর থেকে ভেসে আসা কান্নার শব্দে! রৌদ্রের চোখমুখ থেকে তৎক্ষনাৎ সরে গেলো সকল ক্লান্তি! ছেলেটা হাতের এপ্রনটা একপ্রকার ছুড়ে ফেলে দৌড়ে গেলো সিড়ি বেয়ে। করিডরে পা রাখতেই থমকে গেলো ছেলেটা! অরিনের ঘরের দরজার সামনে সবাইকে এভাবে একযোগে কাঁদতে দেখে ভয়ে কলিজাটা শুকিয়ে আসলো তার! রৌদ্র পরপর শুকনো ঢোক গিললো কয়েকটা। ছুটে এলো দরজার সামনে। দরজাটার নব বারবার ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,
“ দরজা কখন আটকিয়েছে ও?”
অনিক ফুপিয়ে কাঁদছে। ভাইয়ের কথার প্রতিত্তোরে থেমে থেমে বলে,
“ ঠিক জানি না… আসলে আমি..”
তার কথা শেষ হবার আগেই তার দিকে আগুন চোখে তাকায় রৌদ্র। হুট করেই কোনরূপ আগাম সংকেত ছাড়াই অনিকের ওপর এক হিংস্র বাঘের ন্যায় ঝাপিয়ে পড়লো সে। অনিকের শার্টের কলার আঁকড়ে গর্জন তুলে বলতে লাগলো,
“ তোকে বলে দিছিলাম না ওর খেয়াল রাখতে? তুই থাকতে আমার বউ নিজেকে ঘরের মধ্যে আটকায় কিভাবে? তোকে কি বলে দিছিলাম আসার সময়? কই ছিলি তুই? কি এমন জরুরি কাজ ছিলো তোর — যার জন্য আমার বউয়ের দিকে খেয়াল রাখতে পারিসনি?
কসম খোদার অনিক, আমার বউয়ের কিছু হইলে আমি তোরে মাইরা ফেলবো, একদম খুন করে ফেলবো তোরে!”
রৌদ্রের এহেন কথায় যেন মুহুর্তেই বাজ পড়লো সকলের মাথায়। সকলের অবাক দৃষ্টি যেন চিৎকার দিয়ে বলতে চাইছে — এই ছেলে হুট করে অরিনকে এমন বউ বউ বলছে কেনো?
অনিক নিজের অবহেলার ওপর ভিষণ লজ্জিত! ছেলেটা মাথা নুইয়ে রেখে অপরাধীর ন্যায় বলতে লাগলো,
“ যা করার কইরো ভাইয়া,এখন বনুকে বের করো প্লিজ! আমার… ভিষণ ভয় লাগছে।”
রৌদ্র তৎক্ষনাৎ ছেড়ে দিলো অনিকের শার্টের কলার! তারপর দু-কদম পিছিয়ে গিয়ে সজোরে লাথি বসায় দরজার গায়ে। প্রথম,, দ্বিতীয়,, তৃতীয় লাথিতে দরজাটা খুলে যায় বিকট শব্দে! রৌদ্র সহ বাকিরা হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে।আর ঢুকতেই যেন থমকে গেলো সকলে।সারা ঘরের ফ্লোরে ছিটিয়ে আছে তাজা র*ক্ত! অদূরেই নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে অরিনের নিথর দেহটা।মেয়েটার ডান এবং বাম দু’হাতের কব্জি থেকে এখনো চুইয়ে পড়ছে লহু! পাশেই অবহেলিত আকারে পড়ে আছে একটি মাঝারি সাইজের ছুড়ি! সাব্বির সাহেব মেয়ের এহেন অবস্থা দেখে চিৎকার দিয়ে সেখানেই জ্ঞান হারালেন। তায়েফ সাহেব এবার পড়লেন বিপাকে। এমুহূর্তে তার ঠিক কাকে ধরা উচিৎ তাই হয়তো ভাবছেন তিনি,একদিকে রক্তাক্ত ভাতিজি, অন্যদিকে অচেতন হয়ে পড়ে থাকা ভাই। তিনি একবার তাকালেন ভাইয়ের দিকে, আরেকবার তাকালেন ভাতিজীর পানে।অবশেষে মনকে শক্ত করে তিনি ছুটে আসেন ভাইয়ের দিকে।ভাইয়ের মাথাটা কোলে তুলে আলতো হাতে ভাইয়ের গাল চাপড়ে ডাকতে লাগলেন,
“ ভাইজান, ভাইজান, চোখ খুলো ভাইজান!”
নাহ! চোখ মেলছেন না সাব্বির সাহেব। মানুষটা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে রইলেন অসাড় দেহে! তার চোখদুটোর কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো দুফোঁটা অশ্রু! তায়েফ সাহেব কাঁপা কাঁপা হাতে ভাইয়ের চোখদুটো মুছে দিলেন। স্ত্রীর উদ্দেশ্যে হাঁক ছেড়ে বলতে লাগলেন,
“ মাইমুনা! তারাতাড়ি একগ্লাস পানি নিয়ে আসো!”
মাইমুনা বেগম ছুটে গেলেন নিচে। এদিকে, রাফিয়া বেগম কাঁপতে কাঁপতে দরজার সামনেই স্তব্ধ হয়ে বসে পড়লেন।মানুষটা বুঝি শোকে পাথর হয়ে গেছে! একদিকে মেয়ের রক্তাক্ত দেহ,অন্যদিকে অচেতন স্বামী! রাফিয়া বেগম স্তব্ধ চোখে চেয়ে রইলেন মেয়ের দিকে। অন্যদিকে, অনিক তো বোনের এই অবস্থা দেখে বাচ্চাদের মতো হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করে। বোনের কাছে এসে নিজের গালে নিজেই চড় মেরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“ আমার ভুল হয়ে গেছে বনু! আমি খারাপ.. আমি ভিষণ খারাপ ভাই! আমি আমার বনুকে আগলে রাখতে পারিনি! আমি…”
আর বলতে পারলোনা ছেলেটা।হয়তো কথাগুলো গলাতেই আটকে গেছে কোথাও!অন্যদিকে — রৌদ্র কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। ছেলেটার মুখভঙ্গি দেখে বোঝবার জো নেই, এ মুহুর্তে তার ভেতরে ঠিক কি চলছো! রৌদ্র ঘন ঘন নিশ্বাস ফেলে এক পা এক পা করে এগিয়ে আসে। কিছুটা এগোতেই ছেলেটা হঠাৎই কেমন অস্থির হতে লাগলো।কপালে তার স্পষ্ট ফুটে ওঠলো ঘামের উপস্থিতি! রৌদ্র ধপ করে বসে পড়ে অরিনের কাছে। কাঁপা কাঁপা হাতে মেয়েটার মাথাটা নিজের কোলের ওপর তুলে নিলো।তারপর ধীরে ধীরে অরিনের মুখের ওপর ঘামে ভিজে লেপ্টে থাকা চুলগুলো আলতো করে সরিয়ে,ফ্যাকাশে হয়ে আসা মুখটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিয়তক্ষন। পরক্ষণেই কেমন অস্থির হয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলতে লাগলো,
“ এই.. বউজান! এই… তু-ই এটা কি করলি বউ? আমি… আমি এখন কি করবো বউজান? আমায় এতোবড় শাস্তি কেনো দিতে গেলি বউ? আমায়… ”
বাকিটা বলতে গিয়েই থেমে গেলো বেচারা! নাহ এমনি এমনি থামেনি, গলাটা ব্যাথা হয়ে গেছে তার! ভাব এমন — কেও বুঝি সজোরে চেপে ধরেছে ছেলেটার গলা! রৌদ্র ঢোক গিলে কোনমতে। তারপর নিজের সকল ধৈর্য্যের অবসান ঘটিয়ে চিৎকার দিয়ে মেয়েটার নিথর দেহটা নিজের বুকে চেপে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“ আমার বউ! আমার সানশাইন… ওঠ না… এই বউজান ওঠনা প্লিজ! আমার কষ্ট হচ্ছে… দেখ নিশ্বাসটাও কেমন আঁটকে আসছে..ও বউজান প্লিজ তুই ওঠ! তুই…তুই যা বলবি তাই হবে জানবাচ্চা! আমি..আমি চলে যাবো এখান থেকে, অনেক দূরে চলে যাবো।কখনো তোর সামনে আসবোনা! কক্ষনো বলবো না আমায় ভালোবাসতে! তবুও তুই একবার তাকা আমার দিকে! আমার…আমার…ভিষন কষ্ট হচ্ছে জানবাচ্চা!আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে বউজান! ”
কথাগুলো বলতে বলতে বেশ কয়েকবার থেমেছে ছেলেটা।কন্ঠস্বরের সঙ্গে সঙ্গে বুকটাও ভিষণ জোরালোভাবে কাঁপছে তার। সে কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটার মুখের দিকে তাকায়। পরক্ষণেই তার দৃষ্টি কেমন সরু হয়ে আসে। কেননা অরিনের ফর্সা সুশ্রী গালদুটোতে স্পষ্ট ফুটে আছে পাঁচ আঙুলের ছাপ! নাকের নিচে জমে আছে মৃদু রক্তের ছাপ! রৌদ্রের আর বুঝতে বাকি রইলো না — মেয়েটাকে হয়তো মেরেছে কেও।রৌদ্রের মুখটা তৎক্ষনাৎ শক্ত হয়ে আসে।সে অরিনকে বুকে নিয়েই গর্জন তুলে আবার। আগুন চোখে সবার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
“ আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলছে কে?”
উপস্থিত সকলেই যেন কেঁপে ওঠলো খানিকটা। রাইসা বেগম অদূরে দাঁড়িয়ে ঢোক গিলছেন পরপর। অনিক কান্না থামিয়ে মায়ের দিকে তাকায় একপলক। রাফিয়া বেগম আগের ন্যায় স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন। রৌদ্র ফের হিংস্র কন্ঠে বলে ওঠে,
“ কথার উত্তর আসে না কেন? আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলছে কে? কার কি এমন ক্ষতি করছে আমার বউ যার জন্য ওর গায়ে এভাবে হাত তুলতে হইছে?”
এবারেও সবাই নিশ্চুপ। তায়েফ সাহেব মাথা নিচু করে বসে আছেন।কি উত্তর দিবেন তিনি? রৌদ্র এবার চোয়াল শক্ত করে বলে,
“আল্লাহ না করুক, আমার বউয়ের খালি কিছু হোক, আমি কাউকে ছেড়ে কথা বলবো না বলে দিলাম! তখন আমি রৌদ্র একেবারেই ভুলে যাবো আপনারা আমার পরিবারের লোকজন!”
কথাটা বলেই রৌদ্র এবার অরিনের দিকে তাকায়। এ মুহূর্তে মেয়েটার চিকিৎসা দরকার। সে তড়িঘড়ি করে মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। ছুট লাগায় আলমারির দিকে।সেখান থেকে অরিনের দুটো হিজাব নিয়ে, আবারও দৌড়ে আসে অরিনের কাছে। ব্যস্ত হাতে অরিনের হাতদুটোর কাটা স্থানে হিজাবদুটো আলতো করে বেঁধে দেয়। তারপর আর কোনোদিক না তাকিয়ে মেয়েটাকে কোলে তুলে নেয় সে। অনিকও উঠে দাঁড়ায়। ভাইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কান্না থামিয়ে বলে,
“ ভাইয়া আমি গাড়ি চালাচ্ছি!”
তার কথা শেষ হওয়া মাত্রই খেঁকিয়ে ওঠে রৌদ্র। ঝাঁঝ নিয়ে বলে,
“ এই তুই সর আমার সামনে থেকে! আমার বউয়ের জন্য আমিই যথেষ্ট!”
বলেই সে অনিককে একপ্রকার উপেক্ষা করে মেয়েটাকে কোলে নিয়ে হাঁটা ধরে। যাওয়ার পথে তায়েফ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
“ সেজো আব্বু! তুমি অনিকের সাহায্যে মেজো আব্বুকে হসপিটালে নিয়ে আসো।”
কথাটা ব’লেই সে ছুট লাগায় অরিনকে কোলে নিয়ে।
মিনিট খানেক পর বাড়ির বাইরে এসেই ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে হাঁক ছেড়ে বলে,
“ মজিদ ভাই! গাড়ি বের করেন!”
মজিদ মশাই দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলছিলেন কোনো এক বিষয়ে।এরইমধ্যে রৌদ্রের ডাক কানে আসায় একপ্রকার ছুটে গেলেন তিনি।কিয়তক্ষন বাদেই গাড়ি নিয়ে হাজির হলেন রৌদ্রের সামনে। রৌদ্র আর দেরি না করে অরিনকে নিজের কোলে নিয়েই গাড়িতে ওঠে।ড্রাইভারকে বলে,
“ আমার হসপিটালে চলুন! ”
ড্রাইভার মশাই মাথা নাড়িয়ে বাধ্যদের মতো গাড়ি স্টার্ট দিলেন। রৌদ্র তখন মেয়েটার নিস্তেজ মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কিয়তক্ষন বাদে মেয়েটার সম্পূর্ণ মুখ জুড়ে আলতো করে ভালোবাসার পরশ একে দিলো রৌদ্র।মেয়েটার নিস্তব্ধ মুখখানায় তাকিয়ে থাকতে থাকতে চোখ বেয়ে নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়লো দুফোঁটা নোনাজল। রৌদ্র মুছলো না সেগুলো। ঝড়ে পড়তে দিলো তাদের! ছেলেটা মোটা হয়ে আসা কন্ঠে বিরবির করে বলে,
“ আমায় কেনো এতো জ্বালাস সানশাইন? আমায় পোড়াতে এতো সুখ কেনো তোর?”
নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকা মেয়েটা কি আর শুনলো তার বদ্ধ প্রেমিকের কথা? নাহ! শুনলো না তো! রৌদ্র এবার মেয়েটার ক্ষত হাতদুটোর দিকে তাকায়। পরক্ষণেই ভ্রু কুঁচকে আসে তার! অরিনের বাঁহাতের মুঠোয় কিছু একটা চেপে রাখা মনে হচ্ছে! রৌদ্র মেয়েটার হাতের মুঠটা খুলে দেয়। আর তখনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসে চিরকুটের মতো কিছু একটা। রৌদ্র ফটাফট চিরকুটটা হাতে নিয়ে নেয়।হলদেটে কাগজটার গায়ে বিভিন্ন অংশে রক্তের ছিটেফোঁটা জমে আছে। রৌদ্র ওসবে আর পাত্তা না দিয়ে পড়া শুরু করে,
“ আমার এক আকাশসম আফসোস ডাক্তার সাহেব! আমি আপনাকে আপনার মতো করে ভালোবাসতে পারিনি! এই ডাক্তার সাহেব! এতোটা ভালোবাসলেন কেনো আমায়? আপনি কি জানেন — আপনার এই অসীম ভালোবাসার কাছে আমার ভালোবাসাগুলো নিতান্তই ফিকে মনে হয় আমার কাছে! কি পাগল করলেন আমায়? কেনো আপনাকে ভুলতে চাওয়ার চাইতে মরনটাকে বেশি সহজ মনে হলো আমার কাছে! কেনো আপনার চোখে নিজের জন্য সামান্যতম ঘৃণাটুকুও দেখতে পারলাম না আমি? কেনো আপনাকে ভালোবাসার ভিষণ রকমের ইচ্ছে জাগে এই মনে? আচ্ছা! এভাবেও কি কেও ভালোবাসে ডাক্তার সাহেব? জানেন! আপনাকে দূর থেকে সারাজীবন ভালোবাসার ক্ষমতা রাখি আমি কিন্তু আমার জন্য আপনার কোনো ক্ষতি হোক সেটা কস্মিনকালেও ভাবতে পারবোনা! তাই চলে যাচ্ছি! আর হ্যা,খবরদার আমার জন্য পাগলামি করবেন না কিন্তু! আপনার পাগলামি গুলো যে বড় ভয়ানক হয়… আর সেই ভয়ানক পাগলামি গুলোতেই ভিষণ প্রেম প্রেম পায় আমার।তাই একদম পাগলামি করবেন না কেমন?
ওহ আরেকটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি…
এই যে ডাক্তার সাহেব শুনুন!❝ ভালোবাসি ❞ ”
চিরকুটটা পড়েই থমকে গেলো রৌদ্র। বুকটা কেমন ফেটে যাচ্ছে ছেলেটার।চোখগুলো বুঝি আজ আর শুকোবে না। তারা তো সুযোগ পেয়ে মন ইচ্ছেমতো ঝড়িয়ে যাচ্ছে অশ্রু। রৌদ্র চিরকুটটা বুকে চেপে ধরে। মুখ হা করে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে থাকে। হয়তো নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে ছেলেটার! ছেলেটা কেমন অদ্ভুত শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে,
“ আল্লাহ! আর কতো সহ্য করবো আমি? আর কতটুকু ধৈর্য্য ধরা বাকি আছে আমার? কেনো আমার প্রিয় মানুষগুলোকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো তুমি? এদের কষ্ট না দিয়ে আমায় নিয়ে যাও মাবুদ! আমার আর এদের কষ্ট সহ্য হচ্ছে না!”
রৌদ্র অরিনকে কোলে নিয়েই হসপিটালে ঢুকে।হসপিটালের রিসেপশনিস্ট মেয়েটি তাকে এহেন অবস্থায় দেখে আলগোছে মুচকি হাসে। পাশ থেকে অন্য রিসেপশনিস্ট একজন, মেয়েটিকে হাতের কনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো — কি হয়েছে?
রিসেপশনিস্ট মেয়েটি তখন তার পাশের জনের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলে,
“ ইফতেখার স্যারকে কালকে থেকে দেখছি, একজনের পর একজনকে তিনি কোলে তুলেই যাচ্ছেন!যদিও তারা সবাই স্যারের বাড়ির মানুষজন তবুও, আমার কেমন জানি মায়া হচ্ছে মানুষটার জন্য।”
মেয়েটির এহেন কথায় পাশেরজন খিলখিল করে হেসে ওঠে। তারপর কেমন ঠোঁট কামড়ে বলতে থাকে,
“ জিম করা বডির এই একগুণ মনা… যারে তারে যখন-তখন কোলে তুলতে পারে। আমিতো জাস্ট স্যারের উড-বির লাক নিয়ে ভাবছি! মাই গড…. শি উড বি সো লাকি!”
রিসেপশনিস্ট মেয়েটিও তখন হেসে ওঠে এমন কথায়।সেও হাসিমুখে বলে ওঠে,
“ ইনডিড!”
অরিনকে একটি কেবিনে নিয়ে আসে রৌদ্র। তার পেছন পেছন হাতে একটি মাঝারি সাইজের ট্রে নিয়ে কেবিনে ঢুকে দু’জন নার্স! একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে। তারা এসে পেছনে দাঁড়ায় রৌদ্রের। রৌদ্র তখন ব্যস্ত হাতে অরিনের হাতদুটো থেকে হিজাব দুটো খুলছে তাও আবার ভিষণ যত্নের সাথে। কাজ শেষে রৌদ্র পেছনে ফিরতেই ভ্রু দ্বয়ের মাঝে ভাজ পড়ে তার।সে ছেলে নার্সের দিকে তাকিয়ে কেমন গম্ভীর মুখে বলে ওঠে,
“ আপনি এখানে কি করছেন? আমিতো আসার সময় দুজন মহিলা নার্সকে আসতে বলেছিলাম!”
ছেলে নার্সটি ভড়কালো এহেন কথায়। সে কেমন মিনমিনে স্বরে বলতে লাগলো,
“ আসলে স্যার, রোকেয়া আপার অন্য একটা ওয়ার্ডে ডাক পড়ায় আমাকে পাঠিয়েছেন তিনি। আপনি আমায় বলুন না কি কি করতে হবে! আমি সবটা ঠিক মতো করে দিচ্ছি।”
ছেলেটার কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে রৌদ্র গম্ভীর মুখে জবাব দেয়,
“ তার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি এখন আসতে পারেন!”
এমন কথায় ছেলেটি বুঝি হতবিহ্বল হয়ে গেলো। সে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রৌদ্রের দিকে। রৌদ্র তখন মহিলা নার্সকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“ ওর হাতটা ড্রেসিং করুন তারাতাড়ি!”
মহিলা নার্সটি মাথা নেড়ে কাজে লেগে পড়লো। এদিকে ছেলে নার্সকে এখনো আগের মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এবার খানিকটা খেঁকিয়ে ওঠে রৌদ্র! বলে,
“ আপনাকে যেতে বলেছি না?”
ছেলেটা হঠাৎ ডাকে একপ্রকার হকচকিয়ে ওঠে। সে তড়িঘড়ি করে প্রস্থান ঘটায় রুম থেকে। রৌদ্র এবার অরিনের দিকে তাকায়। তারপর নার্সের করা কাজের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় সর্তক বানী ছুড়ে বলে,
“ আস্তেধীরে করুন! ওর ব্যাথা যেন না লাগে!”
নার্সটি অরিনের একহাত উঁচু করে রক্তগুলো পরিষ্কার করছিলো।এরইমধ্যে রৌদ্রের এহেন কথায় যেন হতবুদ্ধির ন্যায় তাকিয়ে রইলেন তিনি! তার স্যার কি বললো এটা? একজন আনকন্সাস রোগীর আবার ব্যাথা লাগবে কিভাবে? নার্স এতোটাই অবাক হলো যে তার হাত থেকে অরিনের হাতটা খানিকটা নড়েচড়ে উঠে। নার্স পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিলেও রৌদ্র দিলো এক ধমক!
“ এই কি করলেন আপনি এটা? একটা কাজও কি ঠিক মতো করতে পারেন না আপনি? যান সরুন আমার বউয়ের সামনে থেকে। আমার বউয়েরটা আমিই করছি সরেন!”
বলেই সে নার্সকে একপ্রকার উপেক্ষা করে নিজেই অরিনের চিকিৎসায় তৎপর হয়ে পড়লো।আর নার্স? বেচারি অবাকের পর অবাক হয়ে এখন কেমন স্তব্ধ হয়ে গেছে। রৌদ্র অরিনের হাতদুটো আলতো করে পরিষ্কার করে নিলো।তারপর ভালো করে চেক করলো ক্ষতটা ঠিক কতোটা গভীর। নাহ..খুব একটা গভীর নয় ক্ষতটা।
কিন্তু অতিরিক্ত রক্ত পড়ায় মেয়েটার শরীরে হয়তো রক্তের ঘাটতি দেখা দিয়েছে খানিকটা। রৌদ্র তড়িৎ পেছনে থাকা নার্সের উদ্দেশ্যে বলে,
“ ইমার্জেন্সি এক ব্যাগ A+ রক্তের ব্যাবস্থা করুন।”
নার্স কথাটা শোনামাত্রই দৌড়ে গেলো বাইরে।এদিকে,রৌদ্র সময় নষ্ট না করে মেয়েটার হাতদুটো ভালো করে ড্রেসিং করে দিলো।তারপর পাশের টেবিলের ওপর রাখা ট্রে- থেকে একটা টিটেনাস ইনজেকশন নিয়ে আলগোছে পুশ করে দিলো মেয়েটার শরীরে। এরইমাঝে নার্স রক্ত নিয়ে হাজির।যেহেতু হসপিটালে নিজস্ব ব্লাড ব্যাংক আছে তাই খুব একটা দেরি হয়নি রক্ত যোগাড় করতে। রৌদ্র রক্তের ব্যাগটা স্ট্যান্ডে ঝুলিয়ে মেয়েটার হাতে কাছে ঝুকে আসে।পাশ থেকে নার্স রৌদ্রের হাতে একটা ছোট্ট তুলোতে স্যানিটাইজার লাগিয়ে এগিয়ে দিলো।রৌদ্র সেটি নিয়ে মেয়েটার ডানহাতের পিঠে ভালো করে ঘষে দিলো। তারপর উপযুক্ত শিরাটি খুঁজে নিয়ে সেথায় সুইঁসহ ক্যানোলা ঢুকিয়ে সুইঁটা বের করে নিলো।
একটা ক্যানোলা পড়িয়ে দিলো।তারপর স্ট্যান্ডে ঝুলিয়ে রাখা রক্তের ব্যাগের নিচে ঝুলিয়ে রাখা নলটা ক্যানোলার সাথে IV লাইন দিয়ে সংযুক্ত করে দিলো।তারপর ফ্লো লাইনটা মাঝামাঝিতে রাখলো।
প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষে রৌদ্র উঠে দাঁড়ায়। পেছনে যে একজন নার্স আছে সে খবর মাথায় না রেখেই ছেলেটা আলগোছে ঠোঁট ছোঁয়ায় অরিনের কপাল বরাবর। এহেন দৃশ্য দেখে পেছন থেকে নার্স কেমন খুকখুক করে কেশে উঠে। রৌদ্র ভড়কায়। যাহ…সে-তো ভুলেই গিয়েছিল এখানে একজন নার্স আছে! ছেলেটা বুঝি খানিকটা লজ্জায় পড়লো।সে কেমন থমথমে মুখে নার্সের দিকে না তাকিয়েই বললো,
“ ওর দিকে খেয়াল রাখবেন।”
বলেই সে একপ্রকার ছুটে পালালো কেবিন থেকে। আর পেছন থেকে নার্সটা কেমন মুখ টিপে টিপে হেসে যাচ্ছে…
“ আমার মেয়ে কই তায়েফ? ও সুস্থ আছে তো? আমাকে আমার মেয়ের কাছে নিয়ে চল!”
সাব্বির সাহেবের জ্ঞান ফিরেছে এইতো মিনিট পাঁচেক আগে। জ্ঞান ফেরার পর থেকেই লোকটা কেমন বিলাপ জুড়ে বসেছেন মেয়ের জন্য। তায়েফ সাহেব ভাইকে বোঝাতে গিয়েও বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। অরিনের তো এখনো জ্ঞান ফিরেনি। এ মুহুর্তে কি আর মেয়েটার কাছে যাওয়া উচিৎ? তায়েফ সাহেব এবার শেষ প্রয়াস চালালেন ভাইকে বোঝানোর!
“ ভাইজান! অরিনের এখনো জ্ঞান ফেরেনি।তুমি…”
“ এখানে এতো চেচামেচি কিসের?”
তায়েফ সাহেবের কথার মাঝেই ঘরে ঢুকে রৌদ্র। এসেই সে গম্ভীর কন্ঠে কথাটা বলে ওঠে। সাব্বির সাহেব এবার রৌদ্রের দিকে তাকালেন। বললেন,
“ রোদ! মেয়েটার কি অবস্থা বাবা? ও সুস্থ আছে তো?”
“ হুম! সুস্থ আছে। টেনশনের কোনো ব্যাপার না।”
সাব্বির সাহেবের চিন্তাটা খানিকটা কমলেও পুরোপুরি কমলোনা যেন।তিনি কেমন চিন্তিত সুরে বলতে লাগলেন,
“ খুব রক্ত গিয়েছে না ওর?”
রৌদ্র গলায় ঝুলানো স্ট্যাথোস্কোপটা হাতে নিয়ে সাব্বির সাহেবের পায়ের কাছে বসলো।ঘাড়ে আলতো করে হাত ম্যাসাজ করে বলতে লাগলো,
“ হুম! এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া লেগেছে।”
সাব্বির সাহেবের বুকটা বুঝি হু হু করে উঠলো এহেন কথায়। তিনি খানিকটা জোরে নিশ্বাস ফেলে ফোপাঁতে লাগলেন। আর তক্ষুনি তাকে দেখে খানিকটা খেঁকিয়ে ওঠে রৌদ্র। বলে,
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৫০
“ হু হু, কাঁদো.. কেঁদে কেঁদে আবারও বিছানায় পড়ো।তোমরা তো আবার একে একে অসুস্থ হয়ে হসপিটালের বেড ধরেছো। বলি, এভাবে এক এক করে না এসে সবাই মিলে একসাথে হসপিটালের বেডগুলো বুক করে নাও না! সমস্যা তো নাই, আমি এক অবলা প্রাণী আছি না? তোমরা একেক জন বেডে পড়বা আর আমি তোমাদের সুস্থ করে তুলবো। এটাই তো এখন আমার গুরুদায়িত্ব!”