সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৭২
Jannatul Firdaus Mithila
ডাইনিং টেবিল জুড়ে নানানরকম খাবারের সমারোহ। বাড়ির ছোটো-বড় সকল সদস্য মিলে বসেছে একসাথে। আমরিন বেগম ও তার পুরো পরিবারও বসেছে সেই সাথে। রৌদ্র এবং অরিন মাত্রই এসে উপস্থিত হলো ডাইনিং এ। রৌদ্র এগিয়ে এসে একটা চেয়ার খানিকটা টেনে দিলো মেয়েটাকে বসতে। তা দেখে ওপর পাশ থেকে মেকি কাশির শব্দ করে ওঠে রেহান। অনিকটাও কেমন মিটমিটিয়ে হাসছে। বাড়ির বড়রা একপলক দু’জনার দিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই নিজেদের মাঝে মনোযোগ টানলেন। বাচ্চাদের বিষয়াদি নিয়ে তাদের অতো মাথা ঘামিয়ে কি লাভ?
এদিকে রৌদ্র অরিনকে ইশারায় বসতে বলে চেয়ারে।অরিনও মৃদু হেসে বসে পড়ে। রৌদ্র তার পাশের চেয়ারটায় বসে, টেবিলের নিচ দিয়েই মেয়েটার পায়ের ওপর হাত রাখে। এদিকে অরিন তার অন্যপাশে বসে থাকা রুহির সাথে কথা বলছিলো টুকটাক, এরইমধ্যে রৌদ্রের এহেন হুটহাট স্পর্শে তৎক্ষনাৎ বোবা বনে গেলো মেয়েটদ।তড়িৎ পাশ ফিরে শক্ত চোখে তাকালো রৌদ্রের দিকে। অথচ রৌদ্রকে দেখো! ছেলেটার ভাব এমন — এমুহূর্তে যেন তেমন কিছুই করেনি সে। উল্টো তার বাঁহাতের বেহাল স্পর্শ মেয়েটাকে বসে থাকতে দিচ্ছেনা শান্তিতে! অরিন একবার সর্তক দৃষ্টিতে তাকায় আশেপাশে। কাউকে তেমন তাকিয়ে থাকতে না দেখে, সে কটমট দৃষ্টিতে তাকায় রৌদ্রের পানে। ছেলেটার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
“ কি শুরু করলেন আপনি? এটা ডাইনিং টেবিল ভুলে যাবেন না।”
রৌদ্র ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে তাকায় মেয়েটার দিকে।অরিনের কথার প্রতিত্তোর না করে উল্টো গলা উঁচিয়ে বলে,
“ ও তোর প্লেটে এখনো খাবার দেয়নি? আচ্ছা একমিনিট! আমি দিচ্ছি!”
অরিন হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো। লোকটা যে তাকে ইচ্ছে করে লজ্জায় ফেলতে চাইছে, তা আর বুঝতে বাকি নেই তার। সে ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে নিজের পাতের দিকে তাকায়। রৌদ্র প্লেট ভর্তি করে খাবার দিয়েছে তাকে। অরিন আর কিছু না ভেবে চুপচাপ খাবার খেতে উদ্যোত হলো।টেবিলের নিচ থেকে হাত বের করতে চাইলেই রৌদ্র ঘটালো আরেক কান্ড! পাগল ছেলেটা তৎক্ষনাৎ খপ করে চেপে ধরে অরিনের ডান হাত।অরিন কটমট দৃষ্টিতে তাকায় আবারও।রৌদ্রের হাতের বাঁধনে সে কেমন হাত মুচড়ে যাচ্ছে অনবরত। অথচ রৌদ্র তার হাতটা ছাড়ছেই না। উল্টো একটা ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে খাবার খাচ্ছে নিজের মতো।এদিকে খাবার সামনে নিয়ে অরিনকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে ভ্রু গোটান রাফিয়া বেগম। গলা উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“ কিরে? খাবার খাচ্ছিস না কেনো? ভালো হয়নি রান্না?”
সহসাই কয়েকজোড়া দৃষ্টি এসে তৎক্ষনাৎ পড়লো অরিনের ওপর। মেয়েটা সামান্য ঢোক গিললো। টেবিলের নিচে আঁটকে রাখা হাতটা মোচড়াতে মোচড়াতে আড়চোখে তাকালো রৌদ্রের দিকে। রৌদ্র খাওয়ার মাঝেই একপলক তাকায়। পরক্ষণেই একটা সাধুভাব ধরে মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে বসে,
“ কি হলো? খাচ্ছিস না কেনো?”
অরিন কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শুধু। মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রৌদ্র কেমন সন্দিহান গলায় বলে ওঠে,
“ আমার হাতে খেতে চাচ্ছো বউজান?”
এহেন কথা শোনামাত্রই বুঝি আকাশ থেকে পড়লো অরিন। লোকটা কি সুন্দর অভিনয় করে! উনার তো উচিৎ ছিল অভিনেতা হওয়া, কেন যে তিনি ডাক্তার হতে গেলেন কে জানে! মিনিট খানেক পেরুতেই রৌদ্র নিজের প্লেটে খাবার মাখাতে মাখাতে বলে ওঠে,
“ তুমিও না বউজান! ইদানিং দেখছি ভিষণ অলস হয়ে গেছো! সে যাকগে… দেখি হা করো!”
বলেই এক লোকমা খাবার তুলে ধরে অরিনের মুখের সামনে। অরিন নাক ফুলিয়ে খাবারটা মুখে তুলে নিলো আলগোছে। এদিকে বাড়ির সকলকে নিজেদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রৌদ্র কেমন ভ্রু উঁচিয়ে বলে ওঠে,
“ ছোট মানুষ তো! তাই বরের হাত ছাড়া খাবার খেতে চায়না! তা তোমরা বসে আছো কেনো? খাও খাও… খাবার তো ঠান্ডা হয়ে গেলো!”
অগত্যা এমন কথায় সকলে একপ্রকার থতমত খেলেন যেন।পরক্ষণেই প্রত্যেকে মনোযোগ টানলেন নিজেদের পাতে। ওদিকে রৌদ্র বাঁকা হাসলো।মেয়েটাকে খাবার খাইয়ে দিতে দিতে ইশারায় চোখ মারলো একবার।পরক্ষণেই কানের সামনে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো,
“ বরের হাতে খাবার না খেলে কি আর পেট ভরে মেয়ে?”
“ কি করছেন এখানে?”
বিকেলের শেষ সময়! ছাঁদের কার্নিশ ঘেঁষে উদাসীন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আহিরা।তার উদাস দৃষ্টি আপাতত অদূরের মেঘলা আকাশপানে নিবদ্ধ! এরইমধ্যে হুট করে পেছন থেকে ভেসে আসা ইফতির কন্ঠে রয়েসয়ে পেছনে ফিরলো সে। তাকালো এলোমেলো চোখে। ইফতি খানিক অস্থির হয় তা দেখে। সে চটজলদি খানিকটা দুরত্ব ঘুচিয়ে এসে দাঁড়ালো আহিরার কাছাকাছি। কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,
“ আহিরা! আর ইউ ওকে?”
আহির দৃষ্টি নত।হয়তো নজর লুকানোর ব্যর্থ প্রয়াসে ব্যস্ত মেয়েটা। ইফতি কিছুটা সময় নিয়ে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো। শান্ত অথচ নিরেট কন্ঠে ফের জিজ্ঞেস করলো —
“ কথা বলবেন না আহিরা?”
আহিরার গলা ধরে আসছে। মুখ ফুটে বলতে চাইছে অনেক কিছু তবে কন্ঠ কেন যেন আকস্মিকভাবে বাকহারা হয়ে পড়েছে! সে এলেমেলো কদমে এদিক ওদিক পা বাড়ায়। গায়ের ওড়নাটার একাংশে আঙুল ঘোরায় অনবরত। ইফতি সরু চোখে পরোখ করছে মেয়েটার এহেন অদ্ভুত অস্থিরতা। কিয়তক্ষন বাদে সে পা বাড়িয়ে চলে আসে আহিরার নিকট।মেয়েটার বাঁহাতের কনুই চেপে তাকে এক ঝটকায় ঘুরিয়ে আনে নিজের দিকে। অতঃপর ভরাট কন্ঠে বলে ওঠে,
“ কি হয়েছে আপনার? এতো অস্থির দেখাচ্ছে কেনো আপনাকে?”
আহিরা নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলো শুধু। তার ছলছল চোখজোড়া যেন চিৎকার করে বলছে অনেক কিছু। কিন্তু গলাটা দিয়ে কেন আওয়াজ বেরুচ্ছে না কে জানে! ইফতি অবাক হয় মেয়েটার ছলছল দৃষ্টি দেখে।মনে মনে সে ধরেই নিয়েছে মেয়েটা বোধহয় তার স্পর্শে বিরক্ত কিংবা কষ্ট পেয়েছে! সে তৎক্ষনাৎ আহিরার কনুই থেকে হাত সরিয়ে অপরাধীর সুরে বলে,
“ আ’ম সরি.. আসলে আমি ইচ্ছে করে আপনাকে ছুঁতে চাইনি! আহি,আ’ম রিয়েলি সরি।”
আহিরা এখনো নির্বাক।নিজের ছলছল চোখজোড়া তৎক্ষনাৎ অন্যদিকে ঘুরিয়ে, বুকের কাছে দু’হাত বেঁধে দাঁড়ায় সে। তারপর ঠোঁট গোল করে নিশ্বাস ফেলে মোটা হয়ে আসা কন্ঠে বলে,
“ আপনার সাথে আমার কিছু কথা বলার আছে!”
ইফতি উদ্বিগ্ন হলো।চটপট সটান হয়ে দাঁড়িয়ে বেশ মনোযোগের সাথে বললো,
“ জ্বি বলুন! আমি শুনছি!”
আহিরা সময় নিলো খানিকটা। মনের কথাগুলো ঠিক কোন জায়গা থেকে বলা শুরু করবে এ নিয়ে যত দ্বিধা-দ্বন্ধ তার! সে সামান্য ঢোক গিলে মৃদু গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে। বলে,
“ আসলে আমি…”
মনোযোগী ইফতি তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে। তার বিচক্ষণ মস্তিষ্ক আগে থেকেই কিছু একটা আচঁ করে ফেলেছে। তবুও সে অপেক্ষায় আছে মেয়েটার মুখ থেকে কথাগুলো শুনতে। প্রায় মিনিট খানেক পেরুতেই ইফতি গম্ভীর মুখে বলে ওঠে,
“ কি হলো? বাকিটাও বলুন!”
আহিরা নিজের শুষ্ক অধরজোড়া জিভ দিয়ে খানিক ভিজিয়ে নিলো। তারপর আমতাআমতা করে ফের বললো,
“ আমি..বলতে চাইছিলাম! আমি.. ”
“ আপনি?”
“ আমি…”
নাহ! এতো চেষ্টার পরও মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না মেয়েটার।সে এবার নিজের প্রতিই ভারি বিরক্ত হলো। কপালে দু-তিনেক বিরক্তির ভাজ ফেলে ইফতির দিকে তাকালো। অতঃপর কর্কশ গলায় বলতে লাগলো,
“ আপনি কি অবুঝ নাকি? আপনি বুঝতে পারছেন না আমি কি বলতে চাইছি?”
ইফতি তৎক্ষনাৎ দু’ধারে মাথা নাড়ায়। তা দেখে মুহুর্তেই যেন ফুঁসে ওঠলো আহি। সে তৎক্ষনাৎ দাঁত কিড়মিড় করে বিরবিরিয়ে বলে ওঠে,
“ হাঁদা একটা!”
“ এ্যা? কি বললেন? সরি ঠিকমতো শুনতে পাইনি! কাইন্ডলি আরেকবার বলবেন?”
এপর্যায়ে চরম বিরক্ত আহি। পরক্ষণেই ভ্রু জোড়া শিথিল করে নিয়ে তাকালো গভীর চোখে চোখে।ঠোঁটের কোণে তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে বললো,
“ সত্যি বুঝতে পারছেন না কি বলতে চাইছি?”
ইফতি ঠোঁট উল্টে তাকায়।আহিরা ফের তাচ্ছিল্যের সুরে বলতে লাগলো,
“ যে বোঝেনা চোখের ভাষা…
সে থোড়াই বুঝবে মনের কথা!”
বলেই সে হাঁটা ধরলো গটগট পায়ে। তবে তক্ষুনি পেছন থেকে তার হাতের কব্জি টেনে ধরে ইফতি। মেয়েটার দিকে না তাকিয়েই বলে,
“ অবশেষে আমার প্রেমে পড়েছেন মিস আহি?”
আহি থমকায়। সর্বাঙ্গ জুড়ে বয়ে যাওয়া মৃদু কম্পনে এই বুঝি গুড়িয়ে পড়লো মেয়েটা। ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে নিজেকে সামলাচ্ছে বহুকষ্টে! ইফতি সময় নিয়ে পেছনে তাকায়। তারপর এক ঝটকায় মেয়েটার কব্জি টেনে তাকে এনে আছড়ে ফেললো নিজের বুক বরাবর। আহি হকচকিয়ে ওঠে এহেন কান্ডে। চোখদুটি তার এক্ষুণি বেরিয়ে আসার উপক্রম! সে হকচকিয়ে বলে,
“ কি করছেন? ছাড়ুন আমায়!”
ইফতি ঠোঁট কামড়ে হাসলো একটুখানি।একহাতে মেয়েটার কোমর আঁকড়ে গভীর কন্ঠে বললো,
“ ভালোবাসেন আমায়?”
আহিরা মুখ ঘুরিয়ে তাকায় অন্যদিকে। গালদুটোতে তার দেখা মিলেছে ঈষৎ লাল বর্ণের। বোধহয় লজ্জা পাচ্ছে মেয়েটা।ইফতি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। তার চোখদুটোও কেমন চকচকে হয়ে এসেছে আনমনে! সে ঠোঁটের কোণে চমৎকার হাসি টেনে পরক্ষণেই বললো,
“ ভালোবাসি আহি!”
আহি ফের থমকায়। নরম চোখে তাকায় ইফতির দিকে। ছেলেটার সেই চমৎকার হাসির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আনমনেই বলে ওঠে,
“ আমিও!”
বিছানার ওপর গম্ভীর মুখে মুখোমুখি হয়ে বসে আছেন সাব্বির সাহেব এবং কবির সাহেব। সাব্বির সাহেবের পাশে গম্ভীর মুখাবয়ব নিয়ে ভাবুক হয়ে বসে আছেন শাহানুর এবং তাশরিক সাহেব। অন্যদিকে কবির সাহেবের পাশে বসে আছে তায়েফ সাহেব। প্রত্যেকের মুখভঙ্গি যথেষ্ট গম্ভীর! সামনে বিছিয়ে রাখা দাবার কোর্ট। খেলা হচ্ছে সাব্বির সাহেব এবং কবির সাহেবের মাঝে। দু’জনার গুটিগুলো একদম মারাত্মক পর্যায়ে সাজিয়ে রাখা। যেকোনো একটা গুটি ভুলভাবে নাড়ালেই অপরজনের জিতে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে কয়েকগুণ! সাব্বির সাহেবের মসৃন কপালে ঘাম ছুটে গেলো ইতোমধ্যে। বড় ভাইজান তার গুটিগুলোকে যেভাবে আটকিয়েছে না! ওদিকে কবির সাহেব মিটমিটিয়ে হাসছেন। পরনের পাঞ্জাবিটার হাতা গুলো খানিক গোটাতে গোটাতে ভিষণ ভাব নিয়ে বললেন,
“ আমার চুলগুলো বাতাসে পাকে নাই বুঝলি! এক্সপেরিয়েন্স আছে রে! এক্সপেরিয়েন্স!”
সাব্বির সাহেব ফোঁস করে নিশ্বাস ফেললেন। দু’ধারে মাথা নাড়িয়ে হার স্বীকার করেই ফেলবেন ওমনি ঘরে এসে উপস্থিত হলো রৌদ্র। বাবা-চাচাদের এতো সিরিয়াস হয়ে বসে থাকতে দেখে ছেলেটা কেমন উৎসুক হয়ে উঁকি দিলো বিছানায়। পরক্ষণেই দেখলো দাবার কোর্ট সাজিয়ে রাখা। রৌদ্র মিনিট খানেক সময় নিয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে। এরপর হুট করেই হাত বাড়িয়ে দিলো একটা চাল। মুহুর্তেই সাব্বির সাহেবের অবশিষ্ট গুটিগুলো বেঁচে গেলো আর কবির সাহেব হেরে গেলেন দান! তা দেখামাত্রই ঘর কাপিয়ে বেশ জোরেশোরে হাততালি দিয়ে উঠেন বাকিরা।এদিকে কবির সাহেব তো রেগেমেগে বোম! তিনি কটমট দৃষ্টিতে তাকালেন ছেলের দিকে। কাঠকাঠ কন্ঠে বললেন,
“ খেলছি আমি আর সাব্বির, এরমধ্যে তুমি এসে দান দিলে কেনো?”
রৌদ্র গা-ছাড়া ভাব নিয়ে সটানভাবে দাঁড়ালো। সামান্য কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললো,
“ জামাই হয়ে শ্বশুর মশাইয়ের হেরে যাওয়াটা স্বচক্ষে দেখতে পারবোনা আব্বু!”
এহেন কথায় মুহুর্তেই আরেকদফা হাসির রোল পড়লো পুরো ঘরজুড়ে। কবির সাহেব কটমট করলেও তা দেখার সময় নেই কারো। প্রায় মিনিট পাঁচেক পর,রৌদ্র সকলের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
“ একটা জরুরি ব্যাপার নিয়ে আলাপ করতে এসেছি।”
সকলে নিজেদের মধ্যকার হাসি-ঠাট্টা থামালেন। পরমুহূর্তেই সিরিয়াস হয়ে পড়লেন রৌদ্রের কথাগুলো শোনার জন্য।রৌদ্র খানিকক্ষণ সময় নিয়ে অতঃপর বলতে লাগলো কথাগুলো।
ড্রয়িং রুমে একপ্রকার জরুরি তলবে হাজির হয়েছেন বাড়ির সকলে। বড় সোফাটায় গম্ভীর মুখে বসে আছেন কবির সাহেব। আপাতত অপেক্ষা করছেন অনিকের আসার। প্রায় বেশ কিছুক্ষণ পর অনিক এসে উপস্থিত হলো ড্রয়িং রুমে। সে আসতেই সকলের উৎসুক দৃষ্টি গিয়ে পড়লো ছেলেটার ওপর। অনিক ভড়কায়। নিজের দিকে ঠিকঠাক ভাবে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
“ কি হলো তোমাদের? এভাবে তাকিয়ে আছো যে?”
কবির সাহেব গম্ভীর মুখে উঠে দাঁড়ালেন।কোমরের পিঠে দু’হাত বেঁধে অনিকের নিকট এসে বললেন,
“ বলছি, তোমারও তো বিয়ের বয়স হয়েছে! তাই ভাবছি, আর দেরি করেই বা কি লাভ? আমরা তোমার জন্য একজনকে পছন্দ করেছি।তুমি তাকে… ”
বাকিটা শেষ করার আগেই বাঁধ সাধে অনিক। বেচারা তৎক্ষনাৎ গম্ভীর কন্ঠে এহেন প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলে,
“ সরি বড়আব্বু! তবে আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা। আমি একজনকে পছন্দ করি! বিয়ে করলে তাকেই করবো!”
এহেন কথায় চমকালেন না কবির সাহেব। যেন তিনি আগেই জানতেন অনিকের এরূপ উত্তর! তবুও তিনি মুখে কপট গাম্ভীর্যের ছাপ ফুটিয়ে বললেন,
“ আগে দেখে তো নাও কার কথা বলছি!”
অনিক বুঝি গো ধরেছে একপ্রকার। কিছুতেই অন্য কাউকে দেখবেনা! সে ভ্রু কুঁচকে ফের বলে ওঠে,
“ সরি বড় আব্বু! আমি অন্য কাউকে দেখার প্রতি মোটেও ইন্টারেস্টেড নই।”
“ ভেবে বলছো তো?”
“ হ্যা,হান্ড্রেড পার্সেন্ট!”
কথাটা বলেই অনিক উদ্যোত হলো ড্রয়িং থেকে চলে যেতে। তবে এক কদম বাড়াতেই পেছন থেকে ভেসে আসে কবির সাহেবের গম্ভীর এবং শান্ত কন্ঠ!
“ মেয়ের নাম ইকরা! শাহানুর বিনতে ইকরা।”
থমকায় অনিক।কানে ভুল শুনলো কিনা তা যাচাই করতে তৎক্ষনাৎ ছুটে এলো বড় আব্বুর কাছে। সন্দিহান গলায় থেমে থেমে জিজ্ঞেস করলো,
“ কি বললে বড় আব্বু?”
গম্ভীরমুখো কবির সাহেব বুঝি হাসলেন মুখ টিপে। পরক্ষণেই বললেন,
“ আর শুনে কি করবে? তুমি তো অন্য কাউকে পছন্দ করো।আমরা নাহয় ইকরাকে অন্য কোথাও… ”
“ একদম না! ওকে আমি ছাড়া অন্য কেউ বিয়ে করতে পারবেনা। আমি এটা হতে দিবো না কখনোই!”
ড্রয়িং জুড়ে উপস্থিত সকলেই হেসে ওঠেন এবার। কবির সাহেব চোখদুটো ছোট ছোট করে তাকালেন ছেলেটার দিকে। মুখ ফুটে বললেন,
“ আমি দ্বিমুখী স্বভাব পছন্দ করিনা অনিক।একটু আগে তুমিই বলেছো আমার পছন্দ করা মেয়ের প্রতি তুমি ইন্টারেস্টেড নও।এরইমধ্যে আবার নিজের মতামত পাল্টে ফেললে?”
বেচারা অনিক এবার পড়লো বিপাকে। সে তো আর জানতোনা তার বড়আব্বু ইকরার কথাই বলছে।জানলে থোড়াই না করতো! সে-তো উল্টো এক পায়ে দাঁড়িয়ে যেতো বিয়ের করতে। অনিক নিজের করা বোকামিতে এবার বড় আফসোস করতে লাগলো! মাথা চুলকিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখলো — রৌদ্র দুহাত পকেটে গুঁজে সিঁড়ি বেয়ে নামছে।অনিক একছুটে চলে গেলো ছেলেটার কাছে। বড্ড আফসোসের সুরে এতক্ষণের ঘটনা সবটা বিবৃতি করলো।তা শুনতেই ভ্রু কুঁচকে আসে রৌদ্রের।সে তৎক্ষনাৎ মুখ ঝামটি দিয়ে বললো,
“ আগে আগে এতো পাকনামি করতে বলেছে কে তোকে?”
অনিক মাথানিচু করে দাঁড়ায়।ভুল স্বীকার করে নত হয়েছে ছেলেটা। রৌদ্র একপলক সেদিকে তাকিয়ে পরক্ষণেই চলে এলো ড্রয়িং এ। গম্ভীর কন্ঠে বাবার উদ্দেশ্যে বললো,
“ ওকে শুধু শুধু এতোটা নাচাচ্ছো কেনো আব্বু? তোমরা তো আগে থেকেই রাজি রাইট? তাহলে এখন আর কথা না বাড়িয়ে বাগদানটা সেরে ফেলো!”
রৌদ্রের এরূপ কথায় আকাশ থেকে পড়লো অনিক।সবাই রাজি মানে? এই কুদরতি ঘটনা আবার ঘটলো কবে? তার প্রতি সবাই এতোটা সহায়ই বা হলো কবে থেকে! অনিক হতবিহ্বলের ন্যায় এগিয়ে আসে রৌদ্রের নিকট। রৌদ্রের কনুই টেনে ফিসফিস করে বলে,
“ ঘটনা কি ব্রো? কি থেকে কি হলো?”
রৌদ্র স্মিত হাসলো। অনিকের কাঁধে আলতো করে হাত রেখে বললো,
“ ইট’স আ স্মল সারপ্রাইজ ফ্রম মি টু ইউ সম্বন্ধিমশাই!তাছাড়া আর কতদিনই বা বউ ছাড়া এতিম থাকবেন বলেন? দুলাভাই হিসেবে আমারও তো একটা দায়িত্ব কর্তব্য আছে তাইনা? ”
অনিক এখনো অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে। তার মানে এ সবকিছু সর্ট-আউট তার রোদ ভাই করেছে? অনিক কৃতজ্ঞ হাসলো।তৎক্ষনাৎ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রৌদ্রকে।ঘটনার আকস্মিকতায় এক-কদম পিছিয়ে যায় রৌদ্র। পরক্ষণেই অনিকের পিঠে আলতো থাবা বসিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“ আমার আছে ইডিয়ট! জড়িয়ে ধরলে বউ ধরবে, তুই ধরতে গেলি কেন? ছাড় আমাকে!”
অনিক ছাড়লো না। উল্টো মুচকি হেসে আরেকটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রৌদ্রকে।
হালকা পাতলা কারুকার্যে খচিত লাল-খয়েরি রঙের শাড়ি পড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে ইকরা। তার পাশেই তাকে ধরে ধরে নামাচ্ছে অরিন,রুহি এবং আহি-মাহি। ড্রয়িং এ উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আপাতত মেয়েগুলোর দিকে। অনিকের বদ্ধ দৃষ্টি গিয়ে আঁটকে গেলো তার মায়াবিনীর দিকে। মেয়েটার লাজুক নতমুখটার দিকে তাকিয়ে থেকে বরাবরই মুগ্ধ হচ্ছে সে।অন্যদিকে, ইফতি তাকিয়ে আছে আহিরার পানে। আহিরা বারকয়েক আড়চোখে তাকাচ্ছে ছেলেটার দিকে। মাঝেমধ্যে দুয়েকবার চোখ রাঙালেও দমে যায়নি ইফতি। উল্টো আরও গভীরভাবে তাকাচ্ছে মেয়েটার দিকে। রেহান আসছে রুহির পিছুপিছু। মেয়েটার নীল রঙা শাড়িটার আঁচলখানা হাতে নিয়ে আস্তেধীরে নামছে ছেলেটা। এদিকে আরেক প্রেমিক পুরুষের নজর যে তার সানশাইনের ওপর অপলকভাবে পড়ে আছে তার খবর কি আর আছে অরিনের? উঁহু নেই তো! সে-তো ব্যস্ত তার ভাবিকে নিয়ে। একদম কালো কুচকুচে রঙের কাটওয়ার্কের শাড়ি পড়েছে অরিন।কোমর সমান চুলগুলো টেনে খোপা বেঁধে রাখা। খোঁপায় জড়ানো বেলিফুল।রৌদ্র এনে দিয়েছে বিকেলে। অরিনসহ বাকিরা ইকরাকে নিয়ে এনে বসালো বড় সোফার একপাশে। অন্যপাশে আগে থেকেই বসে আছে অনিক। অরিন ইকরাকে বসিয়ে দিয়ে খানিকটা পিছিয়ে দাঁড়ায়।ওমনি কারো বলিষ্ঠ হাত তার কোমর আঁকড়ে ধরতেই সটান হয়ে গেলো অরিন। পাশ ফিরে তাকালো রৌদ্রের পানে। রৌদ্র তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। অরিন মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,
“ কেমন লাগছে আমায়?”
রৌদ্র প্রতিত্তোর করলোনা। তা দেখে খানিক গাল ফোলালো অভিমানী অরিন। রৌদ্রের কোমরে আঙুল দিয়ে হালকা গুঁতো দিয়ে সে ফের জিজ্ঞেস করলো,
“ কি হলো? কিছু বলছেন না যে? আমাকে কেমন লাগছে? একটুতো কমপ্লিমেন্ট দিতে পারেন!”
রৌদ্র এবার হাসলো ঠোঁট কামড়ে। মেয়েটার দিকে তাকালো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। পরক্ষণেই কেমন হাস্কি স্বরে বললো,
“ তাহলে ঘরে চল সানশাইন! শুধু কমপ্লিমেন্ট না,আরও অনেক কিছু দিবো চল!”
ভড়কায় অরিন। থতমত খেয়ে নড়চড় করতে চাইলেই তাকে আরও খানিকটা চেপে ধরে রৌদ্র। আগের ন্যায় ঠোঁট কামড়ে হেসে মেয়েটার দিকে তাকালো মোহগ্রস্ত দৃষ্টিতে। পরক্ষণেই কেমন মোহগ্রস্ত কন্ঠে বললো,
“ ডোন্ট মেস উইথ মি মিসেস রৌদ্র! কেননা আমি একবার টার্ন অন হলে আপনাকে কিন্তু সারারাত কাঁদতে হবে! সো একটু সামলে!”
লজ্জায় পড়লো অরিন।নিকুচি করেছে তার কমপ্লিমেন্টের! কোন দুঃখে যে এই নির্লজ্জ লোকের কাছে কমপ্লিমেন্ট চাইতে এসেছিলো সে কে জানে! এখন নিজের কপালেই দু’চারটে চাপড় দিতে ইচ্ছে করছে তার।
ওদিকে আমরিন বেগম ছলছল চোখে তাকিয়ে আছেন অনিক আর ইকরার দিকে। মানুষটার মনে পড়ে যাচ্ছে ঘন্টা খানেক আগের কথা। যখন কি-না তার ভাইয়েরা এসেছিলো তার কাছে।
ঘন্টা খানেক আগের কথা —
কবির সাহেব এবং তার বাকি ভাইরা মিলে মাত্রই এসে উপস্থিত হলেন আমরিন বেগমের কামরায়। এদিকে ভাইদের হঠাৎ নিজের কামরায় দেখে বেশ চিন্তিত হলেন আমরিন বেগম। চিন্তিত মুখেই প্রশ্ন করলেন,
“ কি হয়েছে ভাইজান?”
এপর্যায়ে কবির সাহেব আলতো হেসে সাব্বির সাহেবকে এগিয়ে দিলেন কথা বলার জন্য। সাব্বির সাহেব খানিকটা ইতস্তত করে বোনের সামনে এলেন। কিভাবে কথাগুলো বলবেন তাই যেন ভাবছেন মানুষটা।আমরিন বেগমের বোধগম্য হলোনা ভাইয়ের এরূপ ভাবসাবের কারণ।তিনি আগের মতো চিন্তিত মুখে বললেন,
“ বলোনা ভাইজান!”
সাব্বির সাহেব এতক্ষণে সামান্য নড়েচড়ে দাঁড়ালেন। ঠোঁটের কোণে আলতো হাসির রেশ টেনে বললেন,
“ ইকরাকে দিবি আমার অনিকের জন্য?”
একমুহূর্তের জন্য থমকে গেলেন আমরিন বেগম। মাথাটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছে হুট করে! তিনি নিশ্চিত হতে আবারও জিজ্ঞেস করলেন,
“ কি?”
সাব্বির সাহেব স্মিত হেসে বোনের একহাত টেনে ধরলেন নিজের হাতের মুঠোয়। পরক্ষণেই শান্ত কন্ঠে বললেন,
“ বেয়াইন বানাবো তোকে! হবি তো? ভাই-বোন থেকে নাহয় বেয়াই-বেয়াইন হলাম।কি বলিস,ভালো হবে না ব্যাপারটা?”
আমরিন বেগম চকচকে দৃষ্টিতে তাকালেন। ফিক করে হেসে দিয়ে বললেন,
“ ঠিক আছে। হলাম নাহয়!”
বর্তমান —
দু’পক্ষের সম্মতিতে অবশেষে বাগদান সম্পন্ন হলো অনিক আর ইকরার। রাফিয়া বেগম ও জুবাইদা বেগম মিলে মিষ্টি দিয়ে যাচ্ছেন সকলকে। অরিন ছুটে এসে দুটো ছানা মিষ্টি তুলে নিলো হাতে। একটা টপাটপ মুখে পুরে অন্যটা নিয়ে গেলো রৌদ্রের কাছে। রৌদ্রের সামনে এসে হাত বাড়িয়ে মিষ্টিটা এগিয়ে দিতেই তার হাতটা খপ করে চেপে ধরে রৌদ্র। অরিন হতবুদ্ধির নয়ায় তাকায়।ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“ কি হলো?”
তবে রৌদ্র উত্তর দেয়না। উল্টো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো নেশালো চোখে। ক্ষনে ক্ষনে শুকনো ঢোক গিলে অরিনের হাত চেপে রেখেই পা বাড়ালো সিঁড়ির দিকে। এদিকে অরিনের এখনো বোধগম্য হচ্ছেনা রৌদ্রের কারবার। তবুও আর কি করার! উম্মাদ মানুষটার সাথে পায়ে পা বাড়িয়ে চলে গেলো সিঁড়ি বেয়ে।
রৌদ্র মেয়েটাকে একপ্রকার টেনেহিঁচড়ে নিয়ে আসে নিজের রুমে। পরক্ষণেই দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে ঘুরে তাকালো অরিনের দিকে। নেশালো চোখে মেয়েটাকে আগাগোড়া পরোখ করে হাস্কি স্বরে বলে,
“ মিষ্টি খাওয়াবেনা বউজান? কাম! গিভ মি দেট সুইট হানি!”
অরিন পরপর ঢোক গিললো কয়েকটা। হাতের তালুতে চেপে রাখা মিষ্টিটা বোকার মতো এগিয়ে দিতেই সে হাতটা টেনে ধরে রৌদ্র। অতঃপর এক ঝটকায় তাকে নিয়ে আসে নিজের বাহুডোরের মাঝে। অরিনের ক্ষুদ্র চোয়ালখানা একহাতে আলতো করে চেপে খানিকটা উঁচিয়ে তুলে বললো,
“ ড্যাম! আ’ম মিসিং দা সুইটনেস অফ ইউর লিপস হানি!”
ভড়াকায় অরিন।তৎক্ষনাৎ রৌদ্রের বাহুডোর থেকে সরে আসতে চাইলে তাকে আরও খানিকটা চেপে ধরে রৌদ্র। অতঃপর কোনরুপ কালবিলম্ব ছাড়া আঁকড়ে ধরে মেয়েটার নরম অধরযুগল। নিজ ওষ্ঠপুটের উন্মাদীয় স্পর্শে কাপিয়ে তুলে মেয়েটাকে। মাঝেমধ্যে বসিয়ে দেয় দাঁতের পরশ! মেয়েটার কাছে এলে তার কি তর সয়?
সময় বহমান! দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরও সাতটি দিন। দিনটা আজ শুক্রবার। সেই সকাল থেকে বৃষ্টি পড়ছে বাইরে। আমরিন বেগমকেও আসতে বলা হয়েছে বৃষ্টি মৌসুমে একসাথে ভোজনবিলাস করতে। বোধহয় এতক্ষণে বাড়ির কাছাকাছিও এসে পড়েছেন তারা। এদিকে সারাদিনে একটিবারের জন্যও অরিনের দেখা নেই। বোধহয় রুহির সাথেই সময় কাটাচ্ছে মেয়েটা।ইদানিং কেন যেন রৌদ্রের কাছ থেকে সময় পেলেই দূরে দূরে থাকে সে।এ নিয়ে অবশ্য বেজায় বিরক্ত রৌদ্র। কই তার বউটা সারাদিন আদুরে বেড়ালছানার মতো তার বুকে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে কিন্তু তা না! সে খালি দূর দূর থাকবে! ধ্যাত! এটাও কি হয় নাকি!
রৌদ্র অরিনকে খুজতে লাগলো পুরো বাড়ি জুড়ে। কিন্তু কোথাও অরিন তো দূর,তার টিকিটাও নেই! রৌদ্র এবার মেজাজ হারালো।গটগট পায়ে হেটে গেলো দোতলার করিডরে। প্রায় অনেক্ক্ষণ খোজাঁখুজির পর অবশেষে মেয়েটার দেখা মিললো রুহির রুমে।রৌদ্র ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। বুকের কাছে দু’হাত আড়াআড়ি ভাবে রেখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অরিনের পানে।মেয়েটা এখনও তাকে খেয়াল করেনি।কি সুন্দর করে হেসে হেসে কথা বলছে সবার সাথে। রৌদ্রের সব রাগ যেন মুহুর্তেই ফুড়ুৎ করে উড়ে গেলো অজানায়।সে মুচকি হেসে ডাকলো মেয়েটাকে,
“ অরি! রুমে আয়।”
ব্যস কথাটা কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্রই হাসি মুখটা নিমিষেই লজ্জায় লাল হয়ে আসলো মেয়েটার।সে তড়িৎ পেছনে তাকায়। রৌদ্রকে দেখে এক অজানা ভয়ে শুকনো ঢোক গিলে পরপর। আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে,
“ কেনো?”
রৌদ্র এবার বাঁকা হাসলো। ধীর পায়ে এগিয়ে এসে মেয়েটার কথার কোনরূপ প্রতিত্তোর না করে, উপস্থিত সকলের সামনেই তাকে পাঁজাকোলে তুলে নিলো।হঠাৎ এমন হওয়ায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো মেয়েটা।ওদিকে রৌদ্রের এহেন কান্ডে অনিক যেন নিজেই লজ্জা পেলো খানিকটা। শত হলেও আপন বোনতো! বেচারা কেমন লজ্জালু মুখটা লুকোতে এদিক-সেদিক এলোমেলো দৃষ্টি ফেলতে লাগলো। পাশ থেকে রেহান উঠে তৎক্ষনাৎ শিষ বাজায়।বাহবা দিয়ে বলে ওঠে,
“ বাহ! বাহ! সম্বন্ধি সাহেব! কেয়া বাত হে!”
রুহি মেয়েটা এহেন কান্ডে অন্যদিক ফিরে দাঁতে জিভ কাটে। ভারি পেটটা নিয়ে নড়াচড়া যা মুশকিল!এদিকে সবার এমন কথাবার্তায় আরেকধাপ লজ্জায় পড়লো বেচারি অরিন। সে মাথানিচু রেখে বারকয়েক হাত-পা ছুড়লো নিচে নামার জন্য। কিন্তু রৌদ্র তা হতে দিলে তো! মেয়েটা অবশেষে হার মানলো।খেঁকিয়ে ওঠে বললো,
“ কেনো নিচ্ছেন আমায়?”
সঙ্গীন হৃদয়ানুভুতি ২য় খন্ড পর্ব ৭১
রৌদ্র তৎক্ষনাৎ প্রতিত্তোর করলোনা। উল্টো গটগট পায়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে। নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ থামলো একমুহূর্তের জন্য।পরক্ষনেই অরিনের দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপে,মুখে চুমুর ভঙ্গি দেখিয়ে ফিসফিস করে বললো,
“ কজ আই বেডলি নিড ইউ নাউ হানি! ”