সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৮

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৮
লেখিকাঃ আসরিফা সুলতানা জেবা

‘ স্যার আপনি এখানে?’
শ্রেয়া বিস্ময় লুকিয়ে ধীরস্থির ভঙ্গিতে, নম্র গলায় প্রশ্নটা করলো। তূর্যর মুখভঙ্গি ঠিক ঠাহর করতে পারছে না সে। দুই নেত্র ঢেকে আছে কালো সানগ্লাসে। কিন্তু বুঝতে চাইছে। কারণ কারো দৃষ্টি না বুঝে সামনে আহাম্মকের ন্যায় দাঁড়িয়ে থাকাটা ওকে ভীষণ অস্বস্তিতে ভোগায়। ভিতরে ভিতরে নিদারুণ যন্ত্রণার সৃষ্ট করে। এখনও ঠিক এমন হচ্ছে। হাত-পা কাঁপছে। হাঁটু মুড়ে সড়কে বসে যেতে ইচ্ছে করছে। বড় বড় শ্বাস মুক্ত হচ্ছে প্রকৃতিতে নাসারন্ধ্র গলিয়ে। এসবের জন্য দায়ী একমাত্র গাড়িতে বসে থাকা সুদর্শন পুরুষ তূর্য স্যার। কেমন নিরবতা পালন করছে লোকটা! শ্রেয়া একবার ভাবল আবারও প্রশ্ন করবে কি-না। কিন্তু ওকে আর কষ্ট করতে হয় নি। চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে তূর্য নিজের অপর পাশের দরজা মেলে দিল। গম্ভীর স্বরে বললো,

‘ কাম ইনসাইড শ্রেয়সী। ‘
তব্দা খেয়ে গেল শ্রেয়া। প্রথম প্রশ্নের জবাব নেই, অন্য কিছুও বললো না, একদম সোজা গাড়ির মধ্যে ঢুকে যেতে বলছে!স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এক পাও এদিক সেদিক করলো না। ওর সেই নির্লিপ্ততা দেখে তূর্য রেগেমেগে বললো,
‘ তুমি কি বয়রা?কানে শুনো না?গাড়িতে আসো। প্রিয়ুদের বাসায় যাবে। একসাথে যাই?’
শ্রেয়া তড়িৎ গতিতে নত মস্তক তুলে চাইল। চমকিত কন্ঠস্বর তার,
‘ আপনাকে কে বললো আমি প্রিয়ুর বাসায় যাবো?’
তূর্য বিস্তর হাসলো। সাবলীল কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ গাধা তুমি হতে পারো আমি নই। ‘

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

কথাটা শ্রবণ নালিতে পৌঁছানোর সাথে সাথেই শ্রেয়া ক্ষিপ্র দৃষ্টিতে তাকালো। ‘ গাধা?’ গাধা বলে সংজ্ঞায়িত করলো ওকে?এই ছেলে ওকে ব্যাঙ্গ না করলে কি শান্তি পায় না?কোনো স্যার নিজের স্টুডেন্টের সাথে এমন করে?শ্রেয়ার মানসপটে মুহুর্তেই উদয় হলো স্যার ছাত্রীকে গাধা বলতেই পারে। তবুও মানতে নারাজ সে। কিন্তু স্বভাবতই চুপচাপ, নিরব চরিত্রের অধিকারীণি সে।

ছোট থেকেই শিখেছে কেউ কেটে ফেললেও নিজের নিশ্চুপ চরিত্র দিয়ে মানুষটাকে বুঝিয়ে দিতে হবে আমি আপনার মতোন উগ্র নই। আট বছর বয়সে এতিমখানায় এসে একা একা এতগুলো বছর পার করা সহজ ছিল না। বরঞ্চ কঠিনসাধ্য ছিল। প্রতিনিয়ত মধ্যরাত্রিতে ফুপিয়ে উঠা অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। চক্ষু আয়নায় ভেসে উঠত মা’য়ের বিভৎস রক্তাক্ত লা’শ টা,বাবার নিজ থেকে করা সেই আত্ম/হত্যা। খালা,ফুপি কারো বাড়িতে ঠাঁই না পেয়ে পুরো এক রজনী ছোটোখাটো এক ভাঙ্গাচোরা চায়ের দোকানে প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে বানানো ছাউনির নিচে কাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। সেই রাত টা কি সুন্দর ছিল?উঁহু! মোটেও না। এক দানব খুব’লে খাওয়ার জন্য উদ্যত হয়েছিল। ক্রমশ এগিয়ে এসে স্পর্শ করতে চেয়েছিল রাতের গুটগুটে আঁধারে। আট বছর বয়সী সেই বাচ্চা মেয়েটা নিজের পবিত্র অঙ্গে কারো লো*লুপ দৃষ্টি আটকাতে ব্যর্থ হলেও ছোঁয়া হতে নিজেকে রক্ষা করেছে। মদ*খোর মাতাল ব্যক্তির হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে ছুটতে ছুটতে এসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল আজকের চেনা এই এতিমখানার দুয়ারে। হাত পা কেটে রক্ত ঝরছিল,ছোট ছোট চুল বেয়ে গড়িয়ে যাচ্ছিল জল। গায়ের সাদা জামাটা কর্দমাক্ত হয়ে এলোমেলো, বি’শ্রী অবস্থা। সারাদিন না খেয়ে শরীর হেলে পড়ে সড়কে,উঠতে চেয়েও আর পারে নি।

একটা বয়স্ক লোককে দৌড়ে আসতে দেখে ও হাত বাড়ায়। পরক্ষণেই ছোট্ট মস্তিষ্কে হানা দেয় ওই লোকটার মত করে এই লোকও ওর দেহে বাজে স্পর্শ মাখিয়ে দিবে হয়ত। শেষ রক্ষা পাবে না ভেবে কাঁপা কাঁপা কন্ঠস্বরে অস্ফুট ডেকে উঠে মা বলে। দু চোখের পাতা এক হয়। নতুন এক ভোরে আবিষ্কার করে নিজেকে এতিমখানার কোনো এক কক্ষের চার দেয়ালের মাঝে।

গাড়ির হর্ণের তীব্র আওয়াজে শ্রেয়া নড়েচড়ে উঠলো। দৃষ্টি মেলে তাকালো তূর্যর দিক। মনে পড়লো তূর্য তো আয়ুশের ভাই। আজ তো ওদের প্রিয়ুদের বাড়িতে যাওয়ার কথা। শ্রেয়ার তৎক্ষনাৎ মনে পড়লো রাশেদা বলেছিল প্রিয়ুর শশুর বাড়ির কে নাকি সরষে ইলিশ ভীষণ পছন্দ করে,এতিমখানা থেকে ফিরে যেন সে রেঁধে দেয়। কারণ প্রিয়ু মা’য়ের কাছে ওর সরষে ইলিশ রান্নার এতই প্রশংসা করেছে সবাই চায় শ্রেয়সী আজকের মতোন বিশেষ একটা দিনে এটা রান্না করুক। মেহমান সব এসে গিয়েছে হয়ত। শ্রেয়া ভাবলো এখন দ্রুত যেতে হবে,তূর্য যখন সাধছে সুযোগ টা কাজে লাগানো উচিত। কিন্তু আবার কেমন যেন অনুভব হচ্ছে। তূর্যর সান্নিধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতি জাগ্রত হয় মন মাঝারে। অনুভূতিরা হৃদয়স্থলের পুরো পথ ধরে ছোটাছুটি আরম্ভ করে। মনে পড়ে, পরপুরুষের সন্নিকট তার নিষিদ্ধ। আনতস্বরে বললো,

‘ আমি অটোরিকশা ধরে চলে যাবো স্যার। আপনি যান। ‘
তূর্যর রাগে চোয়াল ফুলে উঠে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
‘ আর একটা কথা বললে গাড়ি দিয়ে ধাক্কা মে’রে হসপিটালাইজড
করবো। ‘
শ্রেয়া ভড়কে গেল। চক্ষুদ্বয়ের আকার বড় হয়ে এলো। হুট করেই গলায় শুষ্ক অনুভব করে তূর্যর এহেন ক্রোধান্বিত স্বরে। মনে হলো এই দাঁতে দাঁত চেপে বলা স্বর পরিচিত। অতীব পরিচিত। কিন্তু সঠিক মনে করতে পারলো না শ্রেয়া। কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠে চুপচাপ ভঙ্গিমা বজায় রেখে। পাশের সিটে বসা পুরুষকে ভয়মিশ্রিত স্বরে ডাকে,

‘ স্যার। ‘
‘ বলো শ্রেয়সী। ‘
আবারও শ্রেয়সী ডাক?শ্রেয়ার অন্তঃস্থলে কম্পন ছড়িয়ে পড়ে। কেন তূর্য ওকে এই নামে ডাকে?সবাই শ্রেয়া ডাকে তাহলে স্যারও কেন ছোট করে ডাকে না?শ্রেয়সীই কেন ডাকতে হবে তার?তাও আজ মিস অর মিসেস বিহীন?শ্রেয়া যখন চিন্তাভাবনার অতল সাগরে নিমজ্জিত তখনই তূর্য ওকে ডাঙায় টেনে তুলল। বললো,
‘ মিস অর মিসেস ডাকতে ডাকতে মুখ ব্যাথা গয়ে গিয়েছে। ভাবলাম সম্পর্কে তুমি আমার ছাত্রী। ছাত্রীর জন্য মিস অর মিসেস সম্বোধনের প্রয়োজন বোধ করছি না আর। এখানে কি করছিলে?’
গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে তূর্য প্রশ্ন করে। শ্রেয়া সূক্ষ্ম নিঃশ্বাস ছাড়লো। ভেজা কন্ঠে প্রতি উত্তর করলো,

‘ এতিমখানায় এসেছিলাম স্যার। ‘
তাৎক্ষণিক তূর্য ঘাড় বাঁকিয়ে এতিমখানার মরিচা আক্রমণ করা লোহার গেইট টার দিক নজর নিক্ষেপ করলো। ভ্রুঁ যুগল কিঞ্চিৎ ললাট ছুঁয়ে গেল নিমেষে। শ্রেয়ার উদ্দেশ্যে লহু স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
‘ তুমি এখানে থাকতে?’
শ্রেয়া বাহিরের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে স্মিত হাসে। বলে,
‘ জ্বী স্যার। ‘
‘ তুমি জানো এটা কার মালিকানাধীন? ‘
মাথা নাড়ায় শ্রেয়া। মোলায়েম কন্ঠে বললো,
‘ চৌধুরী বাড়ির। ফাতেমা চৌধুরীর নামে এটা। ‘

তূর্যর অধর কার্নিশ জুড়ে সুপ্ত হাসি। এটা যে ওদের এবং ফাতেমা চৌধুরী ওর দাদি সেটা শ্রেয়া জানেনা সেটা বুঝতে পারলো। কথা না বাড়িয়ে গাড়ি চালানোতে মন দিল সে। শ্রেয়া জানালার দিকে মুখ করে ভাবনায় মগ্ন। ওকে তূর্যর সঙ্গে দেখলে মানুষ তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে, মিথ্যে রটাবে। তাই বাড়ি থেকে কিছু দূরত্বে নেমে পড়তে হবে। তাছাড়া সামনে দিয়ে যাওয়া যাবে না,এতে ঘরভর্তি মেহমানের মুখোমুখি হতে হবে নিশ্চিত। যাদের কখনও দেখে নি,চিনে না তাদের সাথে অকস্মাৎ একদম সম্মুখে পড়ে যাওয়ার ব্যাপার টা বড্ড বেশি পীড়া দেয়। এক্ষেত্রে শ্রেয়া ঠিক করলো ও প্রিয়ুদের বাড়ির পিছন দরজা দিয়ে ঢুকবে।

পুরো রাস্তা কারো সাথে কারো কথা বার্তা বিনিময় হয় নি। শ্রেয়া নিস্তব্ধ থাকলেও ইচ্ছে ছিল অঢেল, স্যারের সাথে পড়া সম্পর্কিত কথা বলার। চুপ করে থাকা টা স্যারকে অসম্মান করা ঠেকছিল ওর নিকট। কিন্তু তূর্যর গাম্ভীর্য,কঠিন মুখোভঙ্গি চক্ষে বিঁধতেই যা বলবে ভেবেছিল তা যেন খোলা গগণপথে পাড়ি জমিয়েছে। অবশেষে প্রায় মিনিট বিশেক পেরিয়ে এলো প্রিয়ুদের বাড়ির নিকটস্থে। শ্রেয়া মাথায় ঘোমটা টেনে দ্রুত গতিতে বলে উঠলো,

‘ স্যার গাড়ি থামান। ‘
গাড়ি থেমে যায়। শ্রেয়ার দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকায় তূর্য। দৃষ্টি প্রশ্নসূচক। তা চোখে পড়তেই শ্রেয়া আমতা আমতা করে বলে,
‘ আসলে আমি পিছন গেইট দিয়ে যাবো। ধন্যবাদ আপনাকে স্যার। আল্লাহ হাফেজ। ‘
বাক্যগুলো উচ্চারণ করে এক মিনিটও স্থির থাকল না শ্রেয়া,গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল অবিলম্বে। একটি বার ফিরে পর্যন্ত তাকালো না মেয়েটা,কিছু বলার সময় কিংবা সুযোগ কোনোটাই দিল না অপর মানুষটাকে। তূর্যর কপালের শিরা উপশিরা ভেসে উঠলো। চোখ দুটো জ্বলে উঠলো দপদপ করে। হাত মুঠো করে বুঁজে ফেলল নেত্রদ্বয়। ক্রোধে আওড়ালো,
‘ বেয়া/দব মেয়ে। ‘

প্রিয়ুদের বাড়ির কাঠামো ঠিক জমিদার বাড়ির মতোন। লম্বা করিডোর পেরিয়ে প্রিয়ুর রুমে যেতে হবে। দুই দিকে দু’টো সিঁড়ি। বসার ঘর এক তলার এক কর্ণারে। বেশ বড় বসার ঘরটা। ওইখান হতে বাহিরে কেউ চলাচল করলে অথবা রান্নাঘরে গেলে দেখা যায় না। কারণ লম্বা, প্রশস্ত দেয়াল আর দরজা একদম কর্ণারে। দরজায় না দাঁড়ালে এদিকটার দেখা মিলে না।
শ্রেয়া পিছন দরজা দিয়ে ঢুকে সোজা রান্নাঘরের দিকে অগ্রসর হলো। ওকে দেখে নতুন জামদানি শাড়ি পরিহিতা রাশেদা এগিয়ে এলেন। প্লেটে হরেক রকমের নাস্তা সাজাচ্ছিলেন তিনি ব্যস্ত হাতে। সাথে কাজের মহিলা ও প্রিয়ুর মামী। শ্রেয়াকে দেখে রাশেদা মুখ গোমড়া করে বললেন,

‘ এত দেরি করে এলি?এই বুঝি বান্ধবীর প্রতি ভালোবাসা? ও তোর জন্য এখনও রেডি না হয়ে বসে আছে। বলছে তোর সাথে তৈরি হবে। এর আগে তুফান হয়ে গেলেও নিচে নামবে না। অথচ ওর শশুর বাড়ির সবাই বসে আছে বসার ঘরে। তাড়াতাড়ি যা মা। ‘
‘ সরষে ইলিশ রাঁধব না আন্টি?’
‘ ওটা রাতে করিস। তোর কাকা বলেছে আজ জোর করে হলেও সবাইকে রেখে দিবে। প্রায় এক বছর পরে এসেছেন ওনারা। এখন যা।’
‘ আচ্ছা। ‘

শ্রেয়া রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো। তারই পাশে উপরে যাওয়ার সিঁড়ি। আবার বসার ঘরের পাশ দিয়েও ধাপে ধাপে সিঁড়ি উপরের দিকে গিয়েছে। ওই পাশের সিঁড়ি বাছাই না করে রান্না ঘরের পাশের টা যাওয়ার জন্য বাছাই করলো শ্রেয়া। প্রথম সিঁড়িতে পা রাখতেই ক’দিনের মুখস্থ স্বর কর্ণভেদ করলো। চক্ষু ফিরিয়ে তাকালো সেদিকে। তূর্য কানে মোবাইল ধরে গম্ভীর কন্ঠে কথা বলে চলেছে। শ্রেয়া নজর সরিয়ে নিল। চলে যেতে নিয়ে নিজের অজান্তেই আবারও দৃষ্টি গেল সেদিক টায়। নিমিষেই স্থবির হয়ে পড়ে,কারণ অপরপাশের ব্যক্তিও চেয়ে তার দিকে তীর্যক নেত্রে। কয়েক সেকেন্ডে থমকে গেলেও শ্রেয়া নিজেকে সামলে দ্রুতপদে ছুটে আসে প্রিয়ুর রুমে। এসেই মাথায় হাত। মেয়েটা গায়ে কালো একটা শাড়ি জড়িয়ে মুখে আঁধার নামিয়ে বসে আছে নিশ্চিন্তে। বুঝতে বাকি নেই, তীব্র রাগের ফল। শ্রেয়া ব্যাগ থেকে আকাশী রঙের এমব্রয়ডারি কাজ করা একটা থ্রি পিস বের করে ছুট লাগালো ওয়াশরুমে। গোসল সেড়ে বেরিয়ে আসতেই প্রিয়ু উঠে দাঁড়াল। শাড়ি ঠিক করে ওর কাজিনদের বললো জলদি মেকআপ করে দিতে। এতে হতবাক, হতভম্ব একেকজন। এই তো কিছুক্ষণ আগেও মেয়েটা রেডি হতে নারাজ অথচ এখন শ্রেয়া সেজেগুজে তৈরি হতেই কি ফুড় ফুড়ে মেজাজে সাজছে। এত ভালোবাসা বান্ধবীর জন্য!

রাশেদা তড়িঘড়ি করে এলেন। জানালেন– এখনই প্রিয়ুকে নিয়ে নিচে যেতে। আয়ুশ নিষেধ করে দিয়েছে শ্রেয়াকে যেন এখন মেহরিমা চৌধুরীর মুখোমুখি না করে,তাহলে লঙ্কাকাণ্ড বাঁধতে মিনিট খানেক সময়ও ব্যয় হবে না। কথামতো নিল না নিচে ওকে। অন্যান্য কাজিনদের সঙ্গে নিচে গেল৷ ত্রিহা ওকে নিজের পাশে বসিয়ে কপালে চুমু খেলো। অত্যন্ত পছন্দ তার প্রিয়ুকে। ছেলের বউকে আদরে ভরিয়ে রাখবে নিজের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে। কিছুসময় প্রিয়ুকে বড়দের মাঝে রেখে একটা সময় ত্রিহা বললো আয়ুশ,তূর্য, আয়ুশী তোরা বাহিরে গিয়ে ঘুরে দেখ।

এতক্ষণ বড়দের মাঝখানে থেকে হাসফাস অবস্থা ছিল আয়ুশীর। মায়ের আদেশ পেয়ে চটজলদি প্রিয়ুর আঁচল ধরে বেরিয়ে আসল। আয়ুশ ও তূর্য গেল ছাঁদে। তন্মধ্যে প্রিয়ুর কাছ থেকে আয়ুশী চলে গেল ওর এক কাজিনের সাথে বাহিরে বাগানের দিকে। এটাই মুখ্য সুযোগ। “যতই কাছে যাবে ততই তো দূরত্ব ঘুচবে।” নিজের এই কথাটাই আমল থেকে শ্রেয়াকে এক প্রকার জোর করে নিয়ে এলো ছাঁদে। আয়ুশ ও তূর্য ভার্সিটি বিষয়ক কথায় মশগুল ছিল,হুট করে ওদের হুড়মুড়িয়ে ছাঁদে প্রবেশ করায় চক্ষুদ্বয় চলে গেল ওদের দিক। তূর্য ঠোঁট বাঁকিয়ে বললো,

‘ যা বউ নিয়ে ছাঁদের অপর পাশে কেটে পড়। ‘
আয়ুশ মাথা চুলকে হাসার চেষ্টা করলো। প্রিয়ুর কাছাকাছি যেয়ে উপস্থিত দু’জনের অলক্ষ্যে চোখ রাঙিয়ে হাত টেনে নিয়ে গেল ওকে ছাদের আরেকদিকে। এদিক হতে ওইপাশ দেখা যায় না। আয়ুশ রাগান্বিত স্বরে বলে উঠলো,
‘ শ্রেয়াকে এনেছ কেন লেট লতিফ? ‘
প্রিয়ু ফুঁসে ওঠে,
‘ আমি লেট লতিফ? আনবো হাজার বার আনবো। তাতে তোমার কি?কি একটু সময়ের দাম দেওয়া শিখেছে অমনি আমাকে লেট লতিফ ডাকে। এখানে কেউ আছে?ওরা যদি কাছাকাছি না আসে তাহলে তূর্য ভাই আমার শ্রেয়ুর মায়াময়ী রূপ কেমনে দেখবে?’

‘ কিন্তু! ‘
‘ কোনো কিন্তু না। আয়ুশীকে আমার এক কাজিন নিয়ে গিয়েছে। আর ছাঁদে কি মুরুব্বীরা আসবে?চিল চার চোখ লেকচারার। চিল।’
প্রিয়ুর কথায় ফিক করে হেসে দিল আয়ুশ। শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলো ওর নরম দেহখানি। এই মেয়েটার মাঝে শান্তি খুঁজে পায় আয়ুশ। তার অশান্ত মন শান্ত করার একমাত্র উপায় হিসেবে কাজ করে মেয়েটা।
তূর্য নিষ্পলক চোখে দূরের রাস্তার দিকে চেয়ে আছে। প্রিয়ু এখানে এনে এমন পরিস্থিতিতে ফেলে দিবে টের পেলে ভুলেও পা বাড়াত না শ্রেয়া। পা দু’টো ফ্লোরে আঁকড়ে ধরে রোবট হয়ে যেত। তবুও আসত না৷ চলে যাওয়ার নিমিত্তে পা ফেলতেই কর্ণগোচর হয় তীক্ষ্ণ স্বরের প্রশ্ন,

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৭

‘ পাগলের মা’র খেয়েছেন কখনও?’
মুহুর্তেই থরথর করে কেঁপে উঠলো শ্রেয়া। সেই কাঁপুনি তীব্র গতিতে ছড়িয়ে পড়ে শিরায় শিরায়, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে। গ্রীষ্মকালেও বিনা বার্তায় শীতের আগমন ঘটলো যেন।

সন্ধি হৃদয়ে হৃদয়ে পর্ব ৯