সিক্ত সুভানুভব শেষ পর্ব 

সিক্ত সুভানুভব শেষ পর্ব 
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদ আর আলো গাড়িতে গিয়ে বসলো তারপর রোদ গাড়ি স্টার্ট দিলো।দুজনের মুখে প্রশান্তির হাসি,আর ছোট একটা প্রাণকে নিয়ে হাজারো সপ্ন বুনে চলেছে দুজন মিলে।রোদ তো, তার প্রিন্সেসকে নিয়ে কি করবে না করবে এসব ভেবে পাগলামি শুরু করে দিয়েছে।আলো রোদের এসব পাগলামি দেখে হাসছে। রোদ আর আলো এভাবে গল্প করতে করতে যাচ্ছিল, রাস্তাটাও নিরিবিলি এজন্য রোদও আস্তে আস্তে ড্রাইভ করছিল।

হঠাৎ করে ফুল স্পিডে একটা গাড়ি এগিয়ে আসে। আর ওদের গাড়িকে মেরে দেয়, যে গাড়িটি ওদের সাথে এক্সিডেন্ট হয় সেই গাড়িটি ব্রেক ফেল হয়ে গেছিল, যার কারণে গাড়ির ড্রাইভার ও কন্ট্রোলে আনতে পারেনি গাড়িটিকে। রোদ গাড়িটাতে এভাবে আসতে দেখে, সাথে সাথে আলোকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে, আর গাড়ির যত কাচ রোদের পিঠে আর মাথায় ঢুকে যায়, আর মাথাতে প্রচন্ড ভাবে আঘাত পায়, তারপর দুজন ছিটকে পড়ে,আর আলো পেটে প্রচন্ড ব্যথা পায় আর সাথে সাথে ওর ব্লিডিং শুরু হয়ে যায়। আলো আর রোদ দুজনে মাটিতে ছিটকে পড়ে আর কাতরাতে থাকে,,,,আর ওরা মারাত্মক ভাবে আঘাত পায়

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রোদ মাথাতে খুব আঘাত পাওয়ার পরেও,বারবার উঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় , আলো ওর পেটে হাত দিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে, রোদ না পারছো উঠতে না পারছে আলোএত কষ্ট সহ্য করতে। আলোর এভাবে কান্না করা দেখে অনেক কষ্ট করে,রোদ আলোর কাছে যায়,রোদ আলোর কাছে যেতেই,,,,দেখে আলোর জামা রক্তে ভিজে গেছে।রোদ আলোকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে,,,রোদের রক্ত আর আলোর রক্তে দুজনের শরীরে লেগে যায়, দুজনের রক্ত,,,

আলো:ও আম্মু! আম্মু গো!আর সহ্য করতে পারছি না।
আল্লাহ এ কোন পরিস্থিতিতে ফেললে, আমি আর সহ্য করতে পারছি না আল্লাহ, রোদ আমার প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে রোদ!আমি আমার মেয়েটাকে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারলাম না,তোমাকে একটা রাজকন্যা দিতে পারলাম না রোদ।আমি আর বাঁচবো না(চিৎকার করে কাদছে,আর পেট ধরে কাতরাতে আছে)
রোদঃআমি আছি তো তোমার কিছু হবে না রে পাগলী। তোকে বড্ড বেশি ভালবাসি!তোকে ছাড়া আমিও বাচার কথা চিন্তা করতে পারি না।আলোমনি এসব বলে না, দেখো আমার দিকে তাকাও, আমি আছি তো তোমার পাশে(কাঁদতে কাঁদতে)
আলোঃআমি তোমার সাথে বাঁচতে চাই রোদ,আমি তোমার হাত ধরে চলতে চাই বাকিটা পথ,আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রোদ!খুব কষ্ট হচ্ছে! আমিও তোমাকে বড্ড বেশি ভালবাসি রো,,,দ(রোদের টি- shirt খামচে ধরে, আর আলো চোখ বন্ধ করে নেয়)
রোদঃএই আলো!আলো আমার দিকে তাকাও না!আলো! এই আলো তাকাও আমার দিকে, এই মেয়ে আমাকে ছেড়ে যাস না, আমি বাচবো না রে, তোকে ছাড়া।আলো চোখ খুলো না রে।আল্লাহ একোন পাপের শাস্তি দিলে আমাদের।আলো! এই আলো দেখো আমার দিকে একটাবার তাকাও!(কাঁদতে কাঁদতে)

আলো চোখ বন্ধ করে ফেলে, চিরতরের জন্য ।রোদ আলোর মাথা ওর বুকের সাথে জড়িয়ে নেয় চিৎকার করে কাঁদছে একটা সময় রোদ আলোকে জড়িয়ে ধরা অবস্থাতেই মাটিতে পড়ে যায়।রোদ মাটিতে পড়ার পরেও আলোকে ছাড়েনি নিজের বাহুডোরে খুব যত্নে আগলে রেখেছে।এবার রোদেরও নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় চিরতরের জন্য ।হ্যা ওরা মারা যায়,ওরা না ফেরা দেশে পাড়ি জমায় একসাথে,,,

আর রোদ আর আলো আলাদা হয়ে যায় নি,বরং দুজন দুজনকে এতটা ভালবেসে ছিলো যে মৃত্যুও ওদের আলাদা করে নি।সত্যি সত্যি সবাইকে কাঁদিয়ে আলো আর রোদ দুর আকাশের তারা হয়ে যায়।কেউ কাউকে ছেড়ে নিষ্ঠুর হয়ে চলে যায় নি,বরং একই সাথে এক জায়গাতে আজ মৃত্যুটাকে সাদরে গ্রহন করেছে।

আমার জানা নেই, ঠিক কতটা ভাগ্যবান হলে এমন মৃত্যু হয়?রোদ আর আলোর ভালাবাসা জিতে গেছে।আল্লাহ ওদের জুটি বেঁধেছেই এমন করছে, আর একসাথেই ওদের মৃত্যু বরণ করার সৌভাগ্য করে দিসে।তিনটা জীবন একসাথে কয়েক মিনিটের মধ্যে শেষ হয়ে গেল।

আরওই গাড়ির ড্রাইভারও সাথে সাথে মারা গেছে।আলো প্রচুর ব্লাড যায়,রোদের পুরো শরীরের কাঁচ বিধে গেছে,আর মাথাতে ব্যাথা পেয়েছে আর আলো পেটে, মাথায়, বুকে ব্যাথা পেয়েছে মাটিতে ছিটতে পরাতে,,,,, ।গাড়িটাও ভেঙে চুরে একাকার অবস্থা। আর আজ ওদের এভাবে মৃত্যু লিখা ছিলো, এজন্য ভাগ্য ওদের এখানে এনেছে।

পুলিশের মাধ্যমে রোদের বাসায় এই খবর য়ায়, একথা শোনার পর যেন বাড়িটাও থমকে গেছে,সবাই হাউমাউ করে কাঁদছে,দুজনকে এভাবে হারিয়ে ওরাও পাগলপ্রায়।রোদের আম্মু, বাপি, আলোর আম্মু, রিদিতা,সজীব সবাই খুব কাদছে,আর মেঘ রোদ আর আলোর লাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এমন কিছু হওয়াতে মেঘ কেমন হয়ে গেছে,রোদের সব বন্ধুরাও কাঁদছে। হঠাৎ মেঘ সেন্স হারিয়ে ফেলে,আবির দৌড়ে মেঘকে তোলে আর ইমিডিয়েট ডাক্তাকে ফোন করে,ডাক্তার এসে মেঘকে ঘুমের ইনজেকশন দেয় আর ঘুমের মধ্যে থাকতে বলে।মেঘ এসব মেনে নিয়ে পারি নি, এজন্য ভয়ে সেন্স হারিয়ে ফেলছে।

মেঘকে ঘুমের মেডিসিন দেওয়ার ২ ঘন্টা পর, মেঘ হুট করে উঠে,দৌড়ে রোদের লাশের কাছে যায় চিৎকার করে কাঁদতে থাকে, ,,আবির,ফাহাদ সাগর কেউ মেঘকে ধরে রাখতে পারছে না।
মেঘঃও দাভাই!ও বউমনি! আমাকে এভাবে রেখে চলে গেলা কেন?ও দাভাই আমি এখন কার সাথে ঝগড়া করবো দাভাই!ও বউমনি দাভাইকে উঠতে বলো না বউমনি।আমার রিদু সোনাটাও আমাকে রেখে চলে গেলো, তোমরা সবাই কি আমার উপর রাগ করে চলে গেলা।আমার রিদু সোনাটা একবার কোলেও নিতে পারলাম না,বউমনি তোমার বার্থডেতে উপহার দিবো বলে,,একটা লকেট কিনছি বউমনি!সেটা দেওয়ার একটা সুযোগ দিলে না বউমনি!আম্মু! ও আম্মু ওদের বলো না উঠতে আম্মু,আমি ওদের ছাড়া থাকবো কি করে? আমি দাভাই বলে কাকে ডাকবো,কার কাছে আবদার করবো দাভাই?আমি কার বুকে ঘুমাতে যাবো,,ও দাভাই দেখ আমি কাঁদছি! তোর কি কষ্ট হচ্ছে না দাভাই!একবার মেঘ বলে ডাক না রে দাভাই!এভাবে রেখে যাস না দাভা,,ই
(চিৎকার করে এসব বলছে আর কাদছে)

(আমিও আর লিখতে পারছি না পাঠক/পাঠিকাগণ আমিও চোখের পানি আটকাতে পারি নি।আজ আমি এই পার্ট লিখতে গিয়ে নিজেও কেঁদেছি,,,,)

রোদের আম্মু রোদ আর আলোকে জড়িয়ে কাঁদছে,তার কলিজার টুকরো দুটো যে এভাবে ওদের ছেড়ে চলে যাবে কেউ তো ভাবে নি।সবাই হাউমাউ করে কাঁদছে,,,আর সবার এভাবে কান্না করাতে সবকিছু যেন থামকে গেছে,আলো আর রোদের শরীর রক্তে ভিজে আছে,আর ওরা মা হয়ে কি করেই বা এসব সহ্য করবে।
★বাবা মায়ের কাছে সব থেকে কষ্টের জিনিস হচ্ছে,
তার সন্তানের লাশ দেখা,,,,আর তাকে কাধে করে নিয়ে দাফন করা।যে বাবা মা এভাবে তাদের কলিজার টুকরোকে চিরতরে জন্য হারায়। এটা সে সব বাবা মায়েরাই জানে,যে নিজের বেঁচে থেকে সন্তানকে দাফন দেওয়াটা কতটা কষ্টকর,আর এই কষ্টকে পৃথিবীর সব কষ্টকে হারায় মানায়★

বিকালবেলা ওদের দাফন করা হলো। রোদদের বাড়ির বাগানেই ওদের দাফন করার কাজ সম্পন্ন করা হলো।
রোদের বামপাশে আলোকে কবর দেওয়া হয়েছে।দুজনেই কত শান্তির ঘুম ঘুমিয়ে আছে, সবাইকে কাঁদিয়ে।ভালবাসার মানুষকে ছেড়ে থাকা আর জীবন্ত লাশ হয়ে থাকা একই সমান,আজ ওদের নিঃস্বার্থ ভালবাসা জিতে গেছে,আর ওরা মরে গিয়েই জিতে গেছে।ভালো থাকুক ওরা, সেখানেই থাকুক অমর হয়ে থাকুক ওদের ভালবাসা।এমন হাজার হাজার আলো আর রোদের মত নিঃস্বার্থ ভালবাসা গুলোর জয় হোক।

আলো মারা যাওয়া তিনদিন পর ওর আম্মুও মারা যায়, উনিও আর এত মানসিক চাপ সহ্য করতে পারে নি।রোদের বাপির রোদ আর আলোর নামে একটা মসজিদ করে দিয়েছে,একটা এতিম খানা তৈরী করে দিয়েছে।মেঘ আগের মত দুষ্টুমি করে না,তবে রোদের মত নিজেকে তৈরী করার চেষ্টা করে,রোদের আম্মু সকাল, বিকাল নামাজ পড়ে ওদের জন্য দোয়া করে,প্রতি শুক্রবার মসজিদে ওদের নামে দোয়া করা হয়।মেঘও আস্তে আস্তে নিজের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার চেষ্টা করছে,মেঘ ওদের কবরের সামনে গিয়ে কবর জিয়ারত করে, একা একা কত গল্প করে,আর রুমে এসে নিজের কষ্ট করে জমানো টাকাতে কেনা লকেট দেখে খুব করে কাঁদে এই কান্না কেউ দেখে না।মেঘ মুখে যাই বলুক ও যে রোদের প্রাণ ছিলো।প্রতিরাতে আজ রোদের বুকে ঘুমানোর জন্য রোদের রুমে যায়,আর রুম ফাকা দেখে আবার কাঁদতে কাদতে ফিরে আসে।
মেঘ আর জেদ করে না,,,
মেঘ এখন ওর আম্মু সব কথা শোনে,,,

১ বছর পর
আলোর আর রোদের বিবাহ বাষিকীর দিনে মেঘ, রোদ আর আলোর কবরের সামনে গিয়ে,,,
মেঘঃআজ তোমাদের বিবাহ বাষিকী!আর তোমরাই নেই,তোমাদের জন্য রইলো অনেক অনেক ভালবাসা আর দোয়া।তোমাদের এই নিঃস্বার্থ ভালবাসাকে স্যালুট জানায় দাভাই!বউমনি! আল্লাহ তোমাদের জান্নাতবাসি করুন।বউমনি তুমি নিম্নবিত্ত বলে জীবনে অনেক কষ্ট করছো, বাট আজ তোমার মত লাকি কেউ নেই বউমনি!তুমি কত ভাগ্যবতী নিজের ভালবাসার মানুষের বুকে তুমি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছো,তোমরা দুজনই খুব লাকি এমন মৃত্যু লাখে দুইটা একটা ছাড়া দেখাও যায় না।আমি তোমাদের খুব মিস করি,তোমরা আমার সন্তান হয়ে হলেও আবার ফিরে এসো,তোমাদের কে আমি খুব ভালবাসি।
আমি তোমাদের ছাড়া ভালো নেই,যতদিন বাঁচবো তোমাদের কথা আমি ভুলবো না দাভাই,,বউমনি (কাঁদতে কাঁদতে)
রোদ আর আলো অনেক ভালো থেকো!বেঁচে থাকুক তোমাদের মত নিঃস্বার্থ ভালবাসা গুলো,ভাল থাকুক প্রতিটা রোদ আর আলোর মত ভালবাসার মানুষ গুলো।তোমাদের এমন ভালবাসার মত করে খনে খনে জন্ম নিক এমন হাজারো ভালবাসা,পবিএ সম্পর্ক গুলো সত্যি ছিন্ন হওয়ার নয়।রোদ আর আলোর মত পবিএ হোক এমন হাজারো ভালবাসা।আর ভালবাসা দিয়েই পরিপূর্ণ হোক সবার জীবন,,
-“আবার আসব আমরা ফিরে
গল্পের অভ্যন্তরে
তোমরা আমাদের ভালবেসো
মনের অন্তস্থল থেকে।”

সিক্ত সুভানুভব পর্ব ৩৪

(কেউ রাগারাগি করবেন না,গল্পটা একদম অন্যরকম ভাবে শেষ করার চেষ্টা করছি,জানিনা আপনাদের কাছে কতটা ভালো লাগবে।সব গল্প happy ending হয় না।অনেক গল্পতো happy ending পড়েন এবার না হয় একটা sad ending দিয়ে গল্প পড়ে শেষ করলেন।গল্পটার নাম দেখে অনেকে ইগনোর করছেন,তাদের বলছি বাইরের সৌন্দর্য দেখে সবকিছু বিচার করবেন না,আবার অনেকে সাপোর্টও পেয়েছি।এমন করে শেষ করলাম কেন?এমন না করলেও পারতাম এসব বলবেন না কারন আমার মনমত আমি লিখেছি।আর গল্পই যদি মেনে নিতে না পারেন,বাস্তবকে তাহলে মেনে নিবেন কি করে?বাস্তবতা তো আরো কঠিন আরো নিষ্ঠুর তাই না।সবার কপালে যে সুখ সহ্য হয় না,তাই আলো এমন নিষ্ঠুর পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে রোদকে নিয়ে চলে গেছে,,,না ফেরার দেশে।ওদের জন্য দোয়া করবেন।আর নতুন গল্প দিবো কয়েকদিন পর আশা করি পাশে থাকবেন।আর আজকে আপনাদের কষ্ট দেওয়া জন্য সরি,আর কেমন হয়েছে জানালে খুব খুশি হবো,,,, ধন্যবাদ)

( লেখাঃনূরজাহান আক্তার (আলো)) এই লেখিকার আরও লেখা গল্প পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন এই গল্পের সিজন ২ পড়তে চাইলেও এখানে ক্লিক করুন