সিন্ধুতে সন্ধির খোঁজে পর্ব ৭

সিন্ধুতে সন্ধির খোঁজে পর্ব ৭
জাওয়াদ জামী

” কোকিলা, আমাদেরকে চা দে। আবার চা চেয়েছি বলে শুধু চা-ই দিসনা। চায়ের সাথে টা ও দিস। ” রাত তিনটায় কুহুকে হুকুম করল আনান।
” ভাইয়া, বাড়িতে পাঁপড় আর সেদ্ধ ছোলা আছে। চায়ের সাথে পাঁপড় ভেজে, ছোলা রান্না করে দেই? ” আনানকে কাছে ডেকে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল কুহু।
” যা আছে তাই দে। আমরা খেয়েদেয়ে আড্ডা দেব। ”
” খেয়েদেয়ে আড্ডা দেবে নাকি আড্ডা দিতে দিতে খাবে? ”
” ঐ একই হলো। দুই ক্ষেত্রেই তো খাওয়া হবে। যা তাড়াতাড়ি কর। ”
” পনের মিনিট সময় দাও আমাকে। ”

কুহুকে এত রাতে রান্নাঘরে যেতে দেখে আফরোজা নাজনীন, তাহমিনা আক্তার দু’জনেই ওকে সাহায্য করতে গেলেন। কুহুর নিষেধও তারা শুনলেননা। দুই জা একজন পাঁপড় ভাজলেন, একজন ছোলা রান্না করলেন। এই ফাঁকে কুহু ফ্লাস্ক ভর্তি চা করল। তাহমিনা আক্তার পাঁপড়, ছোলা নিয়ে গেলেন আনানদের কাছে। কুহু তার পেছনে ফ্লাস্ক আর চায়ের কাপ নিয়ে গেল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” ভাইয়া, এই যে নাও। দুইটা ফ্লাস্কে করে চা এনেছি। যত খুশি খেতে পারবে। ”
” খুব ভালো কাজ দেখিয়েছিস, কোকিলা। এখানে সবাই চা খোর সমিতির স্যাঙ্গাত। এবার তোরা গিয়ে ঘুম দে। ”
তাহমিদ রুম থেকে কুহুকে লক্ষ্য করছে। ওরা পাঁচজন এসেছে এখানে থাকতে। কুহু যে ওদের জন্য চা এনেছে সেটা পছন্দ হলোনা তাহমিদের। তাহমিদ ভেবেছিল মা, বড়মা মিলেই এগুলো নিয়ে আসবে।
” আনান, তোর কোকিলা দেখছি ভিষণ কাজের! এক কাজ কর ওকে এই রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে বল। সে তো তোর হুকুম পালন করতে তৎপর থাকে দেখছি। হঠাৎ দেখা গেল তুই মাথা ঘুরে পরে গেলি, তখন সর্বপ্রথম তোর আদরের কোকিলা ছুটে এসে তোর শরীরে পানি ঢেলে দিল। ” একটু রাগের সাথে বলল তাহমিদ।
তাহমিদের কথাটা আনান হেসে উড়িয়ে দিলেও কুহু সেটা করতে পারলনা। ও একটু লজ্জাই পেল। আনানের বন্ধুরা তাহমিদের কথা শুনে মিটমিটিয়ে হাসছিল দেখে লজ্জায় কুঁকড়ে গেল মেয়েটা।

” আহ্ তাহমিদ, এসব কি কথা? মেয়েটাকে অকারনে লজ্জা দিচ্ছিস কেন তুই? কুহু আনানের বোন। ও আনানের কাজ করে দিতেই পারে। এতে তোর অসুবিধা কোথায়? ” ছেলেকে ধমক দিলেন তাহমিনা আক্তার।
মায়ের ধমক খেয়ে থেমে গেল তাহমিদ। কুহুর হাত থেকে ফ্লাস্ক আর চায়ের কাপ নিয়ে রুমে গেল।

” এই তোমরা এত রাতে চেঁচামেচি করছ কেন? আচ্ছা, তুমিও আছো দেখছি! তাইতো বলি, সব গ্যাংয়েই একটা লিডার থাকে। এখানেও আছে। এই দলের লিডার তাহলে তুমি? বেয়াদব ছেলে, তোমাকে দেখে কে ভাববে তুমি একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। বস্তির খাঁটি টোকাই আর তোমার মধ্যে কোন পার্থক্য চোখে পরেনা আজকাল। ” চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সাদিক আহমেদ রাশেদিনের। তিনি শব্দের উৎস খুঁজতে খুঁজতে হাজির হলেন আনানরা যেই রুমে আছে সেখানে। রুমের দরজা ভেজানো ছিল। দরজায় ধাক্কা দিতেই তিনি দেখলেন পাঁচ-ছয় ছেলে বিছানা আর মেঝেতে গড়াগড়ি করছে। একজন আবার নাচছে। সাদিক আহমেদ রাশেদীনকে দেখে সকলেই ঠোঁটে আঙুল দিল। একমাত্র তাহমিদই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে বড় চাচার দিকে।

” আরে সিনিয়র রাশেদীন, তুমিও এখানে আছো? বিশ্বাস কর, আমি জানতামনা তুমি এই বাড়িতে আছো। এই তোরা এবার সাইলেন্ট মুডে চলে যা। আবার মহামান্য বড় চাচা এবার শয্যা গ্রহন করবেন। তাকে নির্বিঘ্নে ঘুমাতে দে তোরা। তুমি রুমে গিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুম দাও। এরা আর কোন আওয়াজ করবেনা। ” তাহমিদ জানে ওর বড় চাচার শরীর ঠিক নেই। এক রাত না ঘুমালেই তিনি অসুস্থ হয়ে যান। তাহমিদ সত্যিই জানতনা ভদ্রলোক এই বাড়িতে ঘুমাচ্ছে।

” সাধেই কি আর বললাম, লিডার ছাড়া কোন গ্যাংয়ই হয়না। এই যে ছেলেরা, এই টোকাইকে সঙ্গ দেওয়ার বিনিময়ে তোমাদেরকে কি বিরিয়ানি খাওয়ায় নাকি অন্য কিছু দেয়? ”
” ওরা যখন যা খেতে চায়, তাই দেই ওদেরকে। এবার তুমি যাও। ” তাহমিদ বড় চাচাকে ঠেলে একদিকে নিয়ে যেতে চাইল।
” এই এই, তুমি আমাকে এদিকে নিয়ে যাচ্ছ কেন? আমি দরজার পাশের রুমে আছি। ”
” ওহ সরি। চল তোমাকে তোমার রুমে দিয়ে আসি। ” তাহমিদ সাদিক আহমেদ রাশেদীনকে তার রুমে পৌঁছে দিয়ে নিজেদের রুমে আসল। তারা আর কোন শব্দ করলনা। চুপচাপ শুয়ে পরল। তখন ঘড়িতে বাজে ভোর চারটা।

উঠানে সকলে স্তব্ধ হয়ে বসে আছেন। রাখি আক্তার একটু পরপর ফুঁপিয়ে কাঁদছে। নিয়াজ মাহমুদ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন বারান্দার পৈঠায়। একমাত্র নিহানই স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে আছে। আনান সবেমাত্র ঘুম থেকে উঠে এসেছে। সবাইকে চিন্তিত বদনে বসে থাকতে দেখে ও মাথা চুলকায়। কিন্তু কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পায়না। তাহমিদ ঘুম থেকে উঠে এসে উঠানের কোনে আম গাছের নিচে চেয়ার পেতে হাত-পা ছড়িয়ে বসল।
” কি ব্যাপার তোমরা সবাই মুখগুলো প্যাঁচার মত করে বসে আছ কেন? কি হয়েছে বলবে নাকি এভাবেই স্ট্যাচু হয়ে বসে থাকবে? ” আড়মোড়া ভেঙে জিজ্ঞেস করল তাহমিদ।
” দাদু ভাই, এদিকে এস। আমার নিহান নানু ভাইয়ের সর্বনাশ হয়ে গেছে। ” দিদুনের কথা শুনে তার পাশে চেয়ার নিয়ে বসল তাহমিদ।

” কি হয়েছে, দিদুন? সবার মুখ এমন চোপসানো কেন? ”
” পৃথু পালিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ আগে ওর বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে আমাদেরকে কথাটা জানিয়েছে ওর বাবা। ”
নানিমার কথা শুনে মাথা ঘুরে উঠল আনানের। পাশের চেয়ারটা না ধরলে হয়তো পরেই যেত।
” আমি জানতাম এমন কিছুই ঘটবে। আমি ফুপিকে বারবার নিষেধ করেছিলাম পৃথুর সাথে নিহানের বিয়ে দিতে। পৃথুকে আমি বেশ কয়েকবছর ধরেই চিনি। সেজন্য ফুপিকে সাবধান করে দিয়েছি। কিন্তু ফুপি আমার কথা শোনেনি। ”
” আমি ভেবেছিলাম এখনকার মেয়েরা একটু বেয়ারা হয়ই। বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি অনেকবার পৃথুকে জিজ্ঞেস করেছি, ওর কোন পছন্দ আছে কিনা। কিন্তু ও প্রতিবারই আমাকে বলেছে, তেমন কিছুই নেই। ” রাখি আক্তার নিজের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করল।
” তুমি আমার কথা বিশ্বাস করোনি, কিন্তু পৃথুর কথা ঠিকই বিশ্বাস করেছ! তুমি ভেবেছিল, আমি তোমাকে ভুল ইনফরমেশন দিয়েছি? তুমি কেন ভুলে যাও, আমি তোমার ভাতিজা, আমরা দু’জন একই বংশের রক্ত ক্যারি করছি?

” আমিও বারবার রাখিকে বলেছি, এখানে নিহানের বিয়ে দিওনা। এই বিয়েতে নিহান সুখী হবেনা। কিন্তু কে শোনে কার কথা? রাখির কাছে কারও মতামতই গ্রহনযোগ্য নয়। সে সব সময় নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেয়। পৃথু মেয়েটাকে প্রথম থেকেই আমার উড়নচণ্ডী বলে মনে হয়েছে। এই যে বাড়ি ভর্তি আত্নীয় স্বজনরা আছে , গ্রামবাসীদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে, আশেপাশের দুই-তিন গ্রামের অনেক মানুষকেই দাওয়াত করা হয়েছে। আমি এখন সবাইকে কি বলব? আমার নিহানের কি হবে? ছেলেটাকে নিয়ে সবাই হাসাহাসি করবে। ও এই বিয়েটা করতে চায়নি। রাখিই ওকে জোর করে রাজি করিয়েছে। ” নিয়াজ মাহমুদ হায় হায় করে উঠলেন।

” কি আর হবে? ছেলেটা সবার হাসির পাত্র হবে। এর জন্য দায়ী শুধুমাত্র রাখি তুই। ছেলের অপমান কিভাবে সহ্য করবি? তুই কি বুঝতে পারছিস, নিহানের জীবনটা তোর কারনে নষ্ট হতে বসেছে? এত জিদ ভালোনা বুঝলি? তুই শুধুমাত্র পৃথুর বাবার টাকা দেখে ওর সাথে নিহানের বিয়ে দিতে চেয়েছিলি। যখন তাহমিদ তোকে সাবধান করেছিল, তখন আমাদের সাথে একবারও আলোচনা করিসনি তো? আমরা কি তোর খারাপ চাই? তাহমিদ কি ওর ফুপির খারাপ চায়? ” এবার রেগে গেলেন সাদিক আহমেদ রাশেদীন।
” তাহমিদ তোমার সাথে কবে পৃথুর বিষয়ে কথা বলেছিল, রাখি? তুমি আমাদেরকে সে কথা বলোনি কেন? ” আফরোজা নাজনীন জিজ্ঞেস করলেন।

” দুই মাস আগে তাহমিদ আমাকে বলেছিল। বিশ্বাস কর বড় ভাবী, আমি বুঝতে পারিনি এসন হবে। ”
” তোমার কোন কথাই এই মুহূর্তে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছেনা, রাখপ। তোমাকে স্বার্থপর ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছেনা আমার। তোমার জন্য আমার ছেলেকে সবার সামনে ছোট হতে হবে। ” রেগে উঠলেন নিয়াজ মাহমুদ।
” রাগ করোনা, অতীত বাদ দিয়ে এখন ভবিষ্যতের কথা চিন্তা কর। বিয়ের সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল বৌভাতের দাওয়াতে হাজারখানেকের বেশি মানুষ আসবে। তাদের সবাইকে ফোন করে দাওয়াত বাতিল করে দিতে হবে। এ-ও কি সম্ভব? কি করবে, নিয়াজ? ” সাদিক আহমেদ রাশেদীন জিজ্ঞেস করলেন।
” আমার মাথায় কিছুই আসছেনা, বড় ভাই। যেটা ভালো মনে হয় সেটাই আপনারা করেন। তবে আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমার ছেলেটা যেন সমাজের মানুষের কাছে অপমানিত না হয়, সেটা আপনারা দেখবেন। ”

” ফুপা, অপশন একটাই। নিহানের বিয়ে দিতে হবে। এবং সেটা আজকেই। ” আবারও কথা বলল তাহমিদ।
” তুমি কি পাগল হয়ে গেছ, তাহমিদ? আজকে যে নিহানকে বিয়ে দেবে পাত্রী পাবে কোথায়? পাত্রী কি গাছ থেকে টুপ করে পরবে? ” সাদিক আহমেদ রাশেদীন ব্যাঙ্গ করে বললেন।
” টুপ করে পরবে কেন? দেশে কি পাত্রীর অভাব পরেছে? আশেপাশে খুঁজলে অনেক পাত্রীই পাওয়া যাবে। তোমাদের দেখার চোখ নেই, তাই তোমরা দেখতে পাওনা। ”
” হেয়ালি করিসনা, তাহমিদ। কার কথা বলছিস তুই? মনে রাখিস, আমরা যার তার সাথে নিহানের বিয়ে দিতে পারিনা। ” তাহমিনা আক্তার ছেলেকে ধমক দিলেন।

” দৃষ্টিকে কি তোমাদের কারো চোখে পরেনা? মেয়েটার চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখেছ? ঐরকম মায়াবী চেহারার পুত্রবধূ তোমরা হাজার খুঁজলেও পাবে? পৃথুর থেকে একশো গুন বেশি সুন্দরী আমাদের দৃষ্টি। ” তাহমিদের কথা শুনে নিহানের কলিজা এক লাফে মুখের ভেতর চলে আসল। ও শ্বাস নিতে ভুলে গেছে।
এবার তাহমিদের কথা শুনে আনান উঠানে বসেই পরল। বিস্ময়ে ওর চোখমুখ হা হয়ে গেছে।
” এসব তুই কি বলছিস, তাহমিদ? দৃষ্টির সাথে আমার ছেলের বিয়ে দেব? কক্ষণো না। আমি বড় ঘরে নিহানের বিয়ে দেব। ” রাখি আক্তার প্রতিবাদ করল।

” দৃষ্টি কি বড় ঘরের মেয়ে নয়, রাখি? আব্বা কি তোমাকে ছোট ঘর দেখে বিয়ে দিয়েছিলেন? তুমি যদি এই বাড়ির বউ হতে পার, তবে দৃষ্টিকে কেন নিহানের বউ করতে পারবেনা? তোমার স্বামীও যেই বংশের, দৃষ্টিও সেই বংশেরই মেয়ে। কায়েস বেঁচে থাকতে তুমি তো ওকে হুজুর হুজুর করতে। আজ সে বেঁচে নেই তাই তার ছেলেমেয়েরা পঁচে গেছে? কায়েস বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই তুমি এই বিয়েতে আপত্তি করতেনা? তাহমিদের প্রস্তাব আমার কাছে মন্দ লাগেনি। ” আফরোজা নাজনীন রাখি আক্তারের কথার উচিত জবাব দিলেন।
” কিন্তু বড় মামী, দৃষ্টি এখনো ছোট। এছাড়াও কুহুর বিয়ে হয়নি। বড় বোনকে রেখে কি ছোট বোনের বিয়ে দেযা ঠিক? ” বোকার মত প্রশ্ন করে বসল আনান।
আনানের প্রশ্ন শুনে এক লাফে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়াল তাহমিদ। তেড়ে গেল আনানের দিকে।

” গর্ধভ, নিহানের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখ। ও ছোটবেলা থেকেই শান্তশিষ্ঠ, সুদর্শন যুবক। ওর সাথে তোর আদরের কোকিলা যায়? একবারও ভেবে দেখেছিস, তোর আদরের কোকিলাও কম কথা বলে, আবার নিহানও কম কথা বলে। ওদের ভবিষ্যৎ বংশধরেরা যে বোবা হবেনা, তার নিশ্চয়তা দিতে পারবি? নিহানও শান্তশিষ্ঠ, তোর কোকিলাও শান্তশিষ্ঠ। ওদের ছেলেমেয়েরাও এক কথায় শান্তশিষ্ঠ হবে। শান্ত, শান্ত মিলে ছেলেমেয়েরা শান্ত স্কয়ার হবে। কপাল খারাপ হলে দেখা যাবে, শান্তর ভার নিতে না পেরে বাচ্চারা হাঁটতেই পারলনা। আবার নিহান ফর্সা কিন্তু তোর আদরের কোকিলা শ্যামলা। আবার দৃষ্টি ফর্সা। ফর্সা জামাইয়ের সাথে ফর্সা বউকেই মানায়। এত ঝামেলা করে কি তুই চাইবি নিহানের সাথে কুহুর বিয়ে হোক? কোন বুদ্ধিমান মানুষ কি সেটা চাইবে? বড়মা, তুমি কিছু বল? ”
তাহমিদের উদ্ভট যুক্তি শুনে হাসলেন আফরোজা নাজনীন। তিনি নিয়াজ মাহমুদের দিকে তাকালেন।

” নিয়াজ, তোমার কি মতামত? আম্মা, তাহমিনা, সাবির, সাখাওয়াত তোমরা কি বল? ” আফরোজা নাজনীন একে একে সকলকেই জিজ্ঞেস করলেন।
” দৃষ্টিকে আমার আগে থেকেই ভিষন পছন্দ। তবে আনান একটা কথা ঠিক বলেছে, বড় বোনকে রেখে ছোট বোনকে বিয়ে দেয়া খুব ভালো দেখায়না। কিন্তু আমি এটাও ভাবছি, দৃষ্টির সাথে নিহানকে মানাবে। ” সাখাওয়াত হোসেন রাশেদীন নিজের মতামত জানালেন।
একে সবাই যে যার মতামত জানালেন। তবে আফরোজা নাজনীন তাহমিদের কথার খেই ধরেই সবাইকে বোঝাতে থাকলেন। এক ঘন্টারও বেশি সময় আলাপ-আলোচনা করার পর সবাই দৃষ্টির সাথে নিহানের বিয়ের ব্যাপারে রাজি হলেন৷

” শোন নিয়াজ, আমি চাই আপাতত বিয়েটা হয়ে যাক। বিয়ের পর দৃষ্টি মা আমাদের বাসায় গিয়ে থাকবে। নিহানের পড়াশোনা শেষ হলে , ওর একটা চাকরি হলে ওরা একসাথে থাকবে। কুহু মায়ের রেজাল্ট হলেই হয়তো ও কোন ভার্সিটিতে ভর্তি হবে। তখন দৃষ্টি, শিহাবের জন্য ওর চিন্তা করতে হবেনা। দৃষ্টির সাথে শিহাবও আমাদের বাসায় থাকবে। ” সাদিক আহমেদ রাশেদীন জিজ্ঞেস করলেন নিয়াজ মাহমুদকে।
” আমি আপনার কথার সাথে একমত, বড় ভাই। এবার আর আপনার বোনের কোন কথাই আমি শুনছিনা এটা নিশ্চিত থাকতে পারেন। ”
” কিন্তু বাবা, তোমরা আগেরবারের মতই এবারেও নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছ। একবারও ভাইয়ার মতামত জানতে চাইলে যে? ” আনান আবারও ভুল করে বসল।
” সাট-আপ স্টুপিড, তোকে বড়দের মধ্যে কথা বলতে বলেছে কে? নিহানের আবার কি মতামত থাকবে? আমাদের মতামতই ওদের মতামত। আমি কি ভুল কিছু বলেছি, নিহান? ” তাহমিদ আনানকে ধমক দিয়ে তাকাল নিহানের দিকে।

সিন্ধুতে সন্ধির খোঁজে পর্ব ৬

” ভাই, তোমরা যে সিদ্ধান্ত নিবে তার ওপর কোন কথাই বলবনা আমি। ” নিহানের আনন্দে নাচতে ইচ্ছে করছে। ওর মন চাচ্ছে ছুটে গিয়ে তাহমিদকে চুমু দিতে। অনেক কষ্টে নিজের ইচ্ছে সংবরণ করল সে।
” বড় ভাবী, আপনারা চার জা গিয়ে কুহুর সাথে কথা বলুন। দৃষ্টির মতামত নিন। আমি চাই আমার ভাতিজিকে আপনারা নিজে সাজিয়ে আমার পুত্রবধূ করে আনবেন। ” নিয়াজ মাহমুদ তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন।

সিন্ধুতে সন্ধির খোঁজে পর্ব ৮