সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১১
neelarahman
বারোটা বাজতে 15 মিনিট বাকি আছে এখন নূরকে জাগাতে হবে কিন্তু নূরকে কিভাবে জাগাবে সাদাফের নিজেরই তো অবস্থা খারাপ।
সাদাফের কপাল ঘেমে চুইয়ে চুইয়ে ঘাম পড়ছে। হাত অস্বাভাবিক ভাবে কাঁপছে। সাদাফ বুঝলো আর এভাবে থাকা যাচ্ছে না ।তাই নূরকে হালকা করে একটু ডাকলো ,”নূর ঘুম থেকে ওঠ।নুর? নুর?”
পরেরবার ডাকটি একটু হালকা জোরে হয় নূরে চোখ খুলো ঘুম ভেঙে গেল ঘুম ভেঙ্গেই সাদাফকে এত কাছে দেখে প্রথমে ভয় পেয়ে গেল নুর তারপর খেয়াল করলো সাদা ফের হাত নুর জাপটে ধরে আছে।
সাথে সাথে হাতটি ছাড়িয়ে দিয়ে নিজে ঠিক হয়ে বসল। বসে বলল ,”আপনি এখানে এত রাতে?”
সাদাফ বলল ,”জরুরী কাজ আছে একটু ছাদে আয়।”
নূর বললো ,”কি কাজ ?”
সাদাফ বলল ,”জরুরী কাজ ।গেলে দেখতে পারবি তাড়াতাড়ি একটু আয় ।”
বলেই নূরের হাত ধরে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিল সাদাফ।
নুর বলল ,”ছাড়ুন যাচ্ছি তো ।”
সাদাফ বলল ,”না আমার সাথে আর দেরি করা যাবে না তাড়াতাড়ি।”
ছাদের কাছে কাছে গিয়ে দেখল নুর ঘুটঘুটে অন্ধকার । সাদাফের নুরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”এরকম অন্ধকার কেন ছাদ আর আমাকে এখানে কেন নিয়ে এসেছেন এত রাতে এখানে কি কাজ??
আপনি আবার দুপুরের জন্য আমাকে মারবেন না তো?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সাদাফ অবাক হয়ে তাকালো নুরের দিকে ।তারপর বললো,”হ্যাঁ মারবো ।আজকে মেরেই ফেলবো ছাদে নিয়ে।”
মনে মনে বললো হাঁদারাম একটা।
ছাদে পা রাখতেই হঠাৎ করে ছাদে সবগুলো লাইট জ্বলে উঠলো ।ফেইরিলাইটস গুলো অন হয়ে গেল ।পুরো ছাদ আলোকসজ্জায় সজ্জিত।
বেলুন ক্যান্ডেল লাইট ফেইরি লাইট ফুল দিয়ে পুরো ছাদ এত সুন্দর করে সাজানো হয়েছে নূর দেখে অবাক হয়ে গেল।
ওর এই ষোল বছরের জন্মদিনে কখনো এরকম হয়নি ১৭ তম জন্মদিন যেন আসলেই অদ্ভুত সারাদিন মন খারাপ করেছিল অথচ রাতে এসে দেখছে ওর জন্য কত আয়োজন যা কখনো দেখেনি নূর।
এ বছরে জন্মদিনটা আসলে অনেক স্পেশাল মনে হচ্ছে নূরের কাছে কারণটা কি সাদাফ ভাই ?হয়তো সাদাফ ভাই ।মনে মনে ভাবলো নূর । নীলা রহমান লেখিকা।আচ্ছা সাদাফ ভাই যে প্রশ্নটা করেছে তার উত্তর কি নূর এখনো জানে ?”নুর মনে মনে ভাবল।
নূরের ভাবনার মাঝে সবাই সারপ্রাইজ বলে একসাথে নূরের সামনে এসে নূরকে চমকে দিল ।নুর একে একে তাকিয়ে দেখল সবাই কত সুন্দর করে রেডি হয়ে ওকে উইশ করছে ।হঠাৎ করে নিজের দিকে তাকালো নুর। দেখল ঘরে রাতের শোয়ার পোষাকে রয়েছে এখনো।
সাথে দৃষ্টি ঘুরিয়ে সাদাফের দিকে তাকালো ।এক বুক রাগ জমা হলো সাদাফের উপর।আজকে ওর জন্মদিন সবাই কত সুন্দর করে সাজুগুজু করে ওকে উইশ করছে অথচ ওর জন্মদিন ওকে এইভাবে নিয়ে এসেছে সাদাফ জোর করে। নীলা রহমান অরিজিনাল লেখিকা।সাদাফ চোখ দিয়ে ইশারা করল ঠিক আছে কোন সমস্যা নেই ।নূর সাদাফের কথা চুপচাপ শুনে সামনে এগিয়ে গেল ।হুমায়ূর রহমান এগিয়ে এসে বলল ,”হ্যাপি বার্থডে মামুনি এই নাও তোমার বার্থডে গিফট।”
পরে ফজলুর রহমান সামিহা বেগম এবং নওরিন আফরোজ এসে তাদের গিফট নুরের হাতে ধরিয়ে দিলো ।নূর এত গিফট হাতে রাখতে পারছে না টেবিলের রাখল ।এরপর আসলো সাইমন এবং রিমা।নুর তাকিয়ে আছে সাদাফের দিকে ।কিন্তু সাদাফের হাতে কোন গিফট নেই।
সাদাফ এমন একটা ভাব যেন কিছুই। হয়নি ।নূরের মন খারাপ হয়ে গেল সবাই ওকে গিফট করল কিন্তু সাদাফ কোন গিফট করলো না ।সবাই বলল ,”আসো কেক কাটবো ।নুর এগিয়ে গেল কেকের দিকে ।কেক কেটে সবাইকে একটু একটু করে খাওয়ালো ।কিন্তু সাদাফ দূরে দাঁড়িয়ে রইলো কাছে আসলো না।”
কেক কাটা হয়ে গেলে সবাই একে একে নুরকে কেক খাইয়া উইশ করল ।কিছুক্ষণ পর সবাই নিচে নেমে এলো ঠিক হল কালকে সবাই বেড়াতে যাবে এবং দুপুরে লাঞ্চ বাইরে করবে ।নুর খুশি হলো। অনেকদিন হলো বাইরে বেড়াতে যায় না কিন্তু ভিতরে ভিতরে মন খারাপ সাদাফ ওর জন্য কোন উপহার নিয়ে আসেনি।
নুর নিজের রুমে চলে এসে দরজা চাপিয়ে দিল। ভিতরে ঢুকেই নূর অবাক হয়ে গেল অনেকগুলো বক্স সাথে ফুল কয়েক বক্স চকলেট টেডি বিয়ার কয়েকটি পুতুল আরো কত কি ।এগুলো কে রাখল এখানে ?এগুলো তো এখানে ছিল না ! নূর একে একে সবগুলো গিফট খুলে দেখতে লাগলো ।একটা জায়গায় দেখতে পেলেও ১৬ টি প্যাকেট।
প্রত্যেকটা প্যাকেট খুলে খুলে দেখল নূর। প্রত্যেকটি বার্থডেতে জন্মদিনের জন্য গিফট কেনা ছিল শুধু দেওয়া হয়নি ।সুন্দর করে কার্ড লেখা আছে প্রত্যেক জন্মদিনে সেই বয়স সেই অনুভূতি অনুযায়ী কিছু একটা লেখা ছিল নূরের জন্য।
প্রত্যেকটি কার্ডে নূরের জন্মদিন এবং বয়স উল্লেখ করে উইশ করা আছে তবে কোথাও এক ফোটা রোমান্টিক কিছু বলা নেই ।নূর হতাশ হলো ।মন খারাপ হলো।বান্ধবীদের দেখেছে ওদের বয়ফ্রেন্ডরা যখন জন্মদিনে উইশ করেছে কত সুন্দর রোমান্টিক কথা লিখে উইশ করেছে।
নুরের জন্মদিনের কার্ডগুলো শুধুমাত্র হ্যাপি বার্থডে পঞ্চদশী কন্যা হ্যাপি বার্থডে ষোড়শী কন্যা লেখা।এগুলো কোন উইশ করা হলো ?কোন রোমান্টিক কথাই নেই এতে ।
নুর চুপচাপ গিফট গুলো দেখতে লাগলো।
কোন জন্মদিনে দেওয়া চুরি কোন জন্মদিনে দেওয়া নূপুর কোন জন্মদিনে সোনার আংটি কোন জন্মদিনে মেকআপ নুরের যা যা পছন্দ সেই সব কিছুই যেন একটি একটি করে দিয়েছে।
১৬ তম জন্মদিনের প্যাকেট টির নুর খুললো ।দেখলো সেখানে সুন্দর একটি শাড়ি প্যাক করা।এবার বুঝতে পারল সাদাফ ভাই ওকে শাড়ি পড়া দেখতে চায়। নীলা রহমান।যার জন্য শুরু থেকেই চুরি গয়না মেকআপ নুপুর সবকিছু দিয়ে রেখেছিল ।আজকে যেন উপহারটি পূর্ণতা পেল ।নুর ঠিক করল আগামীকাল এই শাড়ি চুরি এই গয়না এই পড়ে বাহিরে বের হবে দেখবে সাদাফের রিএকশন।
নূর তাই করল যা সে ঠিক করেছিল ।সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে শাড়ি চুরি গয়না পায়েল টিপ পড়ে নুর রেডি হয়ে গেল ।নুরকে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল হুমায়ুন রহমান ও ফজলুর রহমান নূরকে দেখে বলল কিরে মা আজহারী শাড়ি কোথায় পেলি??
মামুনি তো আমাদের বড় হয়ে গেছে।
নওরিন আফরোজ ও সামিহা বেগম বললেন তাই তো দেখছি ভাবি এটা শাড়ি কোথায় পেলি রে এ শাড়ি তো আমার নয় কে দিয়েছে কোন ফ্রেন্ড গিফট করেছে??
নূরের কেন যেন মুখ দিয়ে বের হলো না এগুলো সাদাব ভাই গিফট করেছে তাই বলল ,”হ্যাঁ বান্ধবীরা গিফট করেছে।”
সবাই খুব খুশি হচ্ছে তবে এখনো দেখেনি সাদাফ।সাদাফ দেখলো কি করবে নুর শুধু সেটাই জানতে চাচ্ছে ।বারবার সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে সাদাফ ভাই নামছে না কেন?
নূরের আর তর সইছে না ।সাদাফ উপর থেকে নামছে না ।তাই নিজেই সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে একটু একটু করে উপরে উঠতে লাগলো ।সাদাফের রুমের আশেপাশে এসে উকি মারতেই সাদাফ বলল ,”দরজা খোলা আছে ভিতরে আয়।”
নুর মনে মনে ভাবলো কি করে বুঝলে লোকটা আমি এসেছি ।তারপরও মনে সাহস নিয়ে দরজা খুলে ভিতর প্রবেশ করলো নূর ।নূর ভিতরে প্রবেশ করেই দেখলো সাদাফ গোসল করে মাত্র বের হয়েছে।
ব্ল্যাক ট্রাউজার এবং অ্যাস কালারের টি-শার্ট পরা গলায় টাওয়েল ঝুলানো ।চুল বেয়ে বেয়ে পানি টুপটুপ করে পড়ছে ।নূর যেন সব কিছু ভুলে গেল ।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সাদাফের দিকে।
এদিকে সাদাফের অবস্থাও নাজেহাল।
নূরকে এই রূপে দেখে সাদাফের যেন ভিমরি খাওয়ার জোগাড় ।এরকম তো কখনো দেখেনি নূরকে ।ঠিক যেন বউ বউ লাগছে ।সাদাফ বারবার শুকনো ঢোক গিলছে ।কিন্তু মুখে কোন কথা বলতে পারছে না ।নীলা রহমান লেখিকা।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে ।নুরও সেরকম চুপচাপ সাদাফের দিকে তাকিয়ে আছে ।সাদাফ কে দেখতে আজ এত ভালো লাগছে কেন নূরের কাছে ?
অদ্ভুত কি লাগছে বা অজানা এমন কি আছে যা সাদাফের দিকে নূরকে বারবার টানছে ?
ভাবতে লাগলো নুর।
সাদাফ কে বারবার আকর্ষণ করছে নূরের এই নারীসুলভ কায়া।
সাদাফ ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো নূরের কাছে ।কিন্তু মুখ ফুটে একটি কথা বলেনি নূর।ঠিক সামনাসামনি এসে দাঁড়াতেই নূর এক পা দু পা করে পিছিয়ে যেতে লাগলো ।নূরের কেমন যেন ভয় ভয় লাগছে ।সাথে হচ্ছে সারা শরীরে শিহরণ।
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১০
যতই একটু একটু করে এগোচ্ছে সাদাফ নুর একটু একটু করে পিছাচ্ছে ।এভাবে গিয়ে একেবারে দেয়ালের সাথে চেপে গেল নুর ।আর যাওয়ার কোন জায়গা নেই সাদাফ দুই হাত নূরের দুই পাশে রেখে বললো ,”কেন এসেছিস এখানে??”
নুর আমতা আমতা করে বলল,”আমি আমি তো আপনাকে………… আর কিছু বলতে পারলো না নুর ।সাদাফ এক আঙুল রাখলো নূরের ঠোঁটে ।তারপর বলল ,”হুঁশ ! আরেকটি কথা বলবি না ।সাথে সাথে সাদাফ ঠোঁট ছোয়ালো নূরের কাঁধে ।নূর চোখ বন্ধ করে ফেলল।