সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৫

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৫
neelarahman

বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সবার রাত দশটা বেজে গেল ।খাবার অর্ডার দিয়েছে একটু পরে খাবার পার্সেল চলে আসবে বাইরে খাওয়া দাওয়া করলে আরো সময় নষ্ট হবে তাই খাওয়া দাওয়া করেনি ।
এদিকে রিমা এবং নূর দুজনেরই মন খারাপ ।কারন জানাই।কিন্তু নওরিন আফরোজ ও পুরো গাড়িতে চুপচাপ রয়েছে ।তেলে বেগুনে জ্বলে আছে হুমায়ুন রহমান ভয়ে ও কিছু বলতে পারছে না । নীলা রহমান লেখিকা।পোল আসলেই খুলে গিয়েছে ।ভার্সিটি লাইফে কোন কোন মেয়ের সাথে একটু টাং*কি মা*রতে চেয়েছিল সবকিছু বলে দিয়েছে বন্ধু করিম মোল্লা।

এগুলো শোনার পর থেকেই চোখে চোখে বুঝাচ্ছে বাড়িতে চলো খবর আছে ।হুমায়ুর রহমান আসলেই ভয় পাচ্ছে বিবাহিত জীবনের এত বছর পার হয়ে গেল বউকে এভাবে রাগ করতে দেখেনি ।আজ কিনা কি শুনল সেই ভার্সিটি লাইফের কথা সেগুলো শুনে বউ তেলে বেগুনে জ্বলে আছে।
ফজলুর রহমান মনে মনে হাসছে চাইছিলো না ভাইয়ের পোল খুলতে কিন্তু ভাবি জোর করায় কিছু কথা বলতে গিয়েই করিম মোল্লা যে শুরু হলো তাকে আর থামানো গেল না।
সামিহা বেগম রাগ করে রয়েছে স্বামী ফজলুর রহমানের উপর ।কেন বলতে গেল শুধু শুধু ভাবি মন খারাপ হলো। রা*গ করে রয়েছে আল্লাহ জানে বাসায় গেলে কি হবে।
রাত দশটা ডিনারে টেবিলে সবাই একত্রে বসেছে ।পরিবেশ থমথমে ।সবাই কেমন চুপচাপ ।কেউ কিছু বুঝতে পারছে না ।ভয়ে জিগ্গেস ও করছে না।নওরিন আফরোজ জোরে জোরে সব প্লেট গ্লাস রাখতে লাগলো। হুমায়ূন রহমানে শুকনো ঢোক গিলছে বারবার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাদাফ একবার তাকালো নুরের দিকে ।দেখল নূর চুপচাপ মাথা নিচু করে খাচ্ছে ।বুঝলো কাজ হয়েছে ভিতরে ভিতরে খুব জ্ব*লছে মেয়েটা। নীলা রহমান
এদিকে সাইমন রিমার দিকে তাকিয়ে বলল ,”তরকারিটা একটু দে তো রিমা !”
রিমা চুপচাপ কোন কথা নেই ।চুপচাপ তরকারির বাড়িটা এগিয়ে দিল সাইমন কে।সায়মন তো অবাক হয়ে গেল ।এখানে দুটো কথা ওকে শোনানো উচিত ছিল কিন্তু মুখে কোন কথাই বলল না রিমা চুপচাপ রইলো।
মনে মনে ভাবলো রিমা তো এমন নয় একটা কথা বিনিময়ে দুইটা খোঁচা না মা*রলে কোন কাজ করে না।কি এমন হলো আজ রিমা এতো চুপ।

সবাই একরকম চুপচাপ খাওয়া-দাওয়া করে যার যার রুমে চলে গেল ।সাদাফ গেল নিজের রুমে যাওয়ার সময় দেখল নূর কোন কথাই বলল না ।পেছনে ফিরে একবার তাকালো না ।চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দিয়ে শুয়ে পড়ল ।তাই সাদাফ ও নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো ।
জানে নূর কষ্ট পাচ্ছে সাদাফের বিয়ের কথা শুনে কিন্তু মেয়েটা যে বড্ড অবুঝ ।কিন্তু এই বয়সে ওর এটলিস্ট এটা বোঝা উচিত সাদাফ নুরের কাছে কি চায় কেন চায় ওর প্রতি সাদাফের অনুভূতি কি ?এটা তো বুঝতে পারছে না এমনকি ও নিজে সাদাফের প্রতি কি অনুভব করে সেটাও বুঝতে চায় না।
কিন্তু অনেক সময় হয়েছে এখন বুঝতে হবে সাদাফ ওর কি ?যদি এতে ওর মন খারাপ করিয়েই ওকে বোঝাতে হয় তবে তাই সই । নীলা রহমান লেখিকা।কিন্তু সাদাফ চায় নূর যেন বুঝতে পারে সাদাফের প্রতি ওর ফিলিংস কি অনুভূতি ঠিক কি ধরনের।

রাত বাজে একটা ।নূরের কোনভাবে ঘুম আসছে না বারবার বিছানায় এদিক ওদিক করছে ।কোনভাবেই মানতে পারছে না সাদাফ ভাইয়ের বিয়ে হবে পাশের রুমে সাদাফ ভাইয়ের সাথে অন্য কোন একটা মেয়ে থাকবে ।
অন্য একটা মেয়ের সাথে সাদাফ ভাই সবসময় ঘুরতে যাবে অন্য একটা মেয়ের সাথে সাদাফ ভাই এক বিছানায় ঘুমাবে সব সময় থাকবে নূর থাকবে পেছনে পেছনে কোনভাবে এটা মানতে পারছে না নূর।
অন্য কোন মেয়েকে সাদাত ভাই মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখবে সব সময় সুন্দর বলবে শাড়ি চুড়ি গয়না অন্য একটি মেয়ের জন্য কিনে আনবে এটা কোনভাবেই সহ্য করতে পারছে না নুর ।চুপচাপ বিছানায় উঠে বসলো নুর।
চোখ বন্ধ করে কল্পনা করলো সাদাফ ভাই অন্য কোন মেয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায়।যা যা নুরের সাথে করেছে তা এখন অন্য কারো সাথে করছে।চু*মু খাচ্ছে ।নুর সাথে সাথেই চোখ খুলে ফেললো।

ছটফট করছে নুর। ভিতরে জ্ব*লছে ভিষন।কেনো এতো অস্থির লাগছে বুঝতে পারছে না নুর।রুমের এদিক ওদিক পাইচারি করতে লাগলো ।তারপর হঠাৎ মনে পড়ল ওর রুমে ওর মায়ের ফোন আছে ।
পড়ালেখার জন্য বান্ধবীদের সাথে কথা বলতে মাঝেমধ্যে ফোন এনে রাখে ।এখানে নিশ্চয়ই সাদাফ ভাইয়ের নাম্বার আছে ।তাই কি যেন মনে করে সাদাফ ভাইয়ের নাম্বারে ফোন লা*গালো।
দুই তিন রিং হওয়ার সাথে সাথেই সাদাফ ফোন ধরল ।ফোন স্কিনে তাকিয়ে দেখল ছোট আম্মুর নাম্বার কিন্তু সাদাফ জানে ছোট আম্মু এত রাতে ফোন দেয় নি দিয়েছে তার ছোট্ট রাজকুমারী।
সাদাফ ফোন রিসিভ করে কানে নিয়ে বলল ,”হ্যালো এত রাতে জেগে আছিস কেন ?ঘুমাস নি কেন ?আর এই ফোন তোর কাছে কেন?”

নূর ভয় পেয়ে গেল । ফোন ধরে বাঘের মত তর্জন গর্জন শুরু করে দিয়েছে লোকটা।এতগুলো প্রশ্ন করেছে কোন প্রশ্নের উত্তর দিবে নুর?
নুর আমতা আমতা করে বলল ,”আম্মুর ফোন মাঝেমধ্যে আমার কাছে থাকে তাই আর ঘুম আসছিল না তাই এমনি ভাবলাম আপনাকে একটা ফোন দেই।”
সাদাফ মুচকি হাসলো ।কিন্তু হাসির কোন শব্দ হলো না ।কপালে এক আঙুল দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে বলল ,”তা কি মনে করে ফোন দিয়েছিস ?কিছু বলবি?”
নুর কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না ।চুপ করে রয়েছে । নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনতে পারছে না সাদাফ।সাদাফ ও অপরপ্রান্তে চুপ করে রইল ।কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভেঙ্গে সাদাফ প্রশ্ন করল ,”আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছিস নূর ?বলতে চাইলে বল সমস্যা নেই।”
নূর যেন এই কথাটির অপেক্ষায় ছিল ।সাথে সাথে কাল বিলম্ব না করে জিজ্ঞেস করে বসল ,”আপনি কাকে বিয়ে করবেন এক মাস পর??”

সাদাফ এবার যেন আরেকটু বেশি হাসলো ।কিন্তু হাসির কোন শব্দ হলো না ।কিছুক্ষণ পর বলল ,”যাকেই বিয়ে করি তাতে তোর সমস্যা কি? আর আমার বিয়ের কথা নিয়ে রাত একটার পর তুই আমাকে ফোন দিয়েছিস ?এই কথা তো কালকেও জিজ্ঞেস করতে পারতি ।আমার বিয়ে নিয়ে তোর এত মাথা ব্যথা কেন?”
নূরের রাগ হচ্ছে ।অভিমান হচ্ছে ভীষণ ।জ্বা*লাপোড়া হচ্ছে মনের ভিতরে ।কোনমতে ফোস ফোস করতে করতে বলল ,” আপনি বিয়ে করতে পারবেন না। কেন বিয়ে করবেন ?আপনার কি এমন বয়স হয়েছে আপনার বিয়ে করতে হবে ?পাশের বাড়িতে একটা লোকের তো 30 বছর চলে কই সে তো এখনো বিয়ে করল না।”
নূরের অভিমানী কন্ঠে কথাগুলো শুনে ভিতরে ভিতরে অনেক মজা পাচ্ছে সাদাফ কিন্তু বাহিরে কড়া কন্ঠে বলল ,”সেই লোক বিয়ে করছে না কারণ সেই লোকের চা‘‘হিদা নেই আমি বিয়ে করবো কারন আমার চা‘‘হিদা আছে ।এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।”

নূরের যেন এবার কান্না পাচ্ছে ।কান্না আটকাতে পারছে না ।নাক টেনে টেনে প্রশ্ন করল ,”তারপরও আপনাকে বিয়ে করতেই হবে?”
সাদাফ এবার একটু সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞেস করল ,”আমি বিয়ে করলে তোর সমস্যা কি নুর ?এসব কথা বলে তুই কি প্রমাণ করতে চাইছিস ?কে বিয়ে করল না কে বিয়ে করেছে তা দিয়ে তো আমাদের মাথা ব্যথা নেই ।আমার বিয়ের সাথে তো সম্পর্ক কি ?তুই কেন চাচ্ছিস না আমি বিয়ে করি সেটা বল।”
নূরের এবার রা‘গ হলো ভীষণ রা‘‘গ হলো ।বিয়ে যখন করবে অন্য কাউকে তাহলে নূরের সাথে এতদিন এগুলো কি করেছে ?তাই নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে না পেরে বলে বসলো ,”এমনি আমি চাইনা আপনি বিয়ে করেন ।এটা আমার সহ্য হবে না ।

আপনার রুমে অন্য একটা মেয়ে থাকবে। আপনি অন্য একটা মেয়ের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন আপনি অন্য কাউকে সুন্দর বলবেন অন্য কাউকে নিয়ে আইসক্রিম খাওয়াবেন চটপটি খাওয়াবেন অন্য কাউকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন শাড়ি কিনে দিবেন চুড়ি কিনে দিবেন আমি এসব রংঢং দেখতে পারবো না এই বাড়িতে।
আপনার রুমে অন্য কোন মেয়ে ঢুকতে পারবে না ব্যাস এটাই শেষ কথা।”

নূরের কান্না মাখা কথাগুলো শুনে সাদাফ ভীষণ মজা পেল ।সাদাফ চাইছে নুর নিজে থেকে বুঝতে পারুক সাদাফ ওর জন্য কি ?বোকা মেয়েটা জেলাস তো হচ্ছে কিন্তু জেলাসির কারণটা এখনো বুঝতে পারছে না ?শুধু চাইছেনা সাদাফের রুমে কেউ থাকুক ।কিন্তু সাদাফের মনে যে নূর আছে সেটা কি কখনো বুঝতে পারবে মেয়েটা?
সাদাফ আর একটু খেপানোর জন্য বলল ,” ঠিক আছে শাড়ি চুরি আমি তোর জন্য কিনে দিবো ।সুন্দর আমি তোকে এ বলব ।আইসক্রিম ফুচকা খাওয়ানোর সময় আমি তোকে ও নিয়ে যাব এখন খুশি ?মাঝেমধ্যে তুই আমার রুমে আসতে পারবি আমি আমার বউকে বলে দিব তোকে যেন না না করে রুমে ঢুকতে।”
নূর এবার ভীষণ রাগের মাথায় বলে বসল ,”তারপর আপনি বিয়ে করবেন ?”

সাদাফ বললো ,”হ্যাঁ বিয়ে শুধু সুন্দর বলার জন্য আর আইসক্রিম ফুচকা খাওয়ানোর জন্য করে না ।বিয়ে করার আরো অনেক কারণ থাকে ।সেই সব কারণের জন্য বিয়ে করতে হবে কারণ তোর সাথে তো আর এইসব করতে পারবো না তুই তো আমার রুমে রাতে থাকতে পারবি না ।
হয়তো আসবি যাবি ঘুরে ফিরে চলে যাবি কিন্তু আমার রুমে সারাক্ষণ থাকতে পারবি না।বিয়ে করলে বউ আমার সাথে রাতে ঘুমাবে ।আমার সাথে ঘুম থেকে উঠবে ।আমার সাথে সাথে থাকবে এজন্য বউ দরকার ।বুঝতে পেরেছিস এবার ?এবার ঘুমা।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৪

আর হ্যাঁ সামনের মাসে বিয়ে করবো এটা ফাইনাল ।এটা মাথায় ঢুকিয়ে রাখিস ।আর এই কয়দিনের মধ্যে উত্তর খুঁজে বের কর আমার বিয়ে নিয়ে তুই এত জেলাস কেন ।উত্তর খুঁজে তারপর আমাকে বলিস।
কিন্তু সামনের মাসে যে বিয়ে হবে এটা ফাইনাল। বউ ছাড়া আমি আর এক রাতে ঘুমাবো না।রাতভর আদ*র করার জন্য বউ দরকার। তুই তো সামনে গেলেই ছাড়ুন ছাড়ুন বলে চলে যাস এ জন্য বউ দরকার।”
কথাটা বলেই সাথে সাথে সাদাফ ফোন কেটে দিল ।আর খুব হাসলো মনে মনে ।এই মেয়েটাকে এভাবেই শা*য়েস্তা করতে হবে এ ছাড়া আর কোন পথ নেই।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here