সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৯

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৯
neelarahman

রাত বাজে ১২ টা।নূর ঘুমাতে পারছে না ।বারবার ঘুরে ফিরে সাদাফ ও সাবার ঘনিষ্ঠ মুহূর্তগুলোর কথা মনে পড়ছে ।আচ্ছা তাদের মধ্যে যদি সম্পর্ক থাকে এতো ভালোবাসা থাকে তাহলে সাদাব ভাই কেন বারবার নূরের কাছে আসে ।
আর ওয়াশরুমে ওইখানে কেন বলছিল নূরের কাছে ওর সব শান্তি ।এ কথার মানে কি ?একথা উত্তর নূরের জানতেই হবে না হলে ঘুম যে চোখে ধরা দিবে না।সাথে সাথে মায়ের ফোন দিয়ে ফোন লাগালো সাদাফের
নাম্বারে । নীলা রহমান।

সাদাফ বসে ছিল ফোন নিয়ে জানতো নূর আজকে ফোন দিবে।পা*গলি টা ঘুমাতে পারবে না।
প্রথমবার ফোন ধরল না সাদাফ।দ্বিতীয়বার ফোন এলে ২-৩ রিং হওয়ার পর ফোন ধরে ঘুম ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল ,”হ্যালো এত রাতে ফোন দিয়েছিস কেন?”
নুর কিছু বলছে না ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাসে শব্দ শুনতে পাচ্ছে সাদাফ।সাদাফের যেন নেশা ধরে যাচ্ছে নূরের শ্বাস প্রশ্বাসে শব্দ শুনে ।তারপরও নীরবতা ভেঙে সাদাফ বলল ,”কিছু বলবি নাকি এমনি রাতের বেলা ফোন দিয়েছিস আমাকে বিরক্ত করতে?”বললো সাদাফ।
নূর সাথে সাথে বলল ,”আমার ফোন আপনার কাছে বিরক্ত মনে হচ্ছে?”
“না মনে হচ্ছে কোকিল রাত বারোটার দিকে ফোন করে আমাকে গান শোনাচ্ছে ।কি বলবি বল ঘুমাবো আমি।”বললো সাদাফ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নুর একটু থেমে সাদাফের কাছে জানতে চাইল,”আপনি কি সত্যি সত্যি সাবা আপুকে ভালো বাসেনা??”
সাদাফ মুচকি হাসল। জানতো এরকম প্রশ্ন করবে পা*গলীটা ।উত্তর না পেয়ে ঘুমাতে পারবে না ।সাদাফ চায় নুর জেগে জেগে চিন্তা করুক সাদাফের কথা ভাবুক।
সাদাফ বলল ,”বাসলে তোর কি ?তোর কি সমস্যা?”
নুর বুকের ভিতর খুব সাহস সঞ্চয় করে বলল ,”হ্যাঁ অনেক সমস্যা ।আপনি কাউকে ভালবাসতে পারবেন না।”
সাদাব মুচকি হেসে বলল ,”কেন পারব না ?আর আমি কাউকে ভালবাসলে কি তোকে জিজ্ঞেস করে বাসতে হবে ?”
নুর বলল ,”হ্যাঁ জিজ্ঞেস করে বাঁচতে হবে।
সাদাফ জানতে চাইলো,” কেন জিজ্ঞেস করতে হবে ?”

নুর আমতা আমতা করে বলল ,”আপনি তো গতকাল বলেছিলেন আমার পছন্দ হলে তবেই বিয়ে হবে ।ধরে নিন আমার পছন্দ হয়নি ।আমি এই বিয়েতে রাজি না ।তাই আপনি বিয়ে করতে পারবেন না।
তারপরেও যদি আপনি বাড়াবাড়ি করেন আমি বড় বাবা আর আব্বুর কাছে আপনার নামে নালিশ করব।”
সাদাফ তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বসলো ।অবাক হয়ে গেল কি বলছে এই পা*গলি মেয়েটা !নালিশ করবে মানে ?
তারপর জিজ্ঞেস করল ,”নালিশ করবি ?কি নালিশ করবি তোর বাবাদের কাছে শুনি?
আর সাবার মধ্যে অপছন্দের কি আছে বল শুনি।”

নূর আমতা আমতা করে বলল ,”জানি না তবে আপনার সাথে একটুও মানায় নি।বেশি লম্বা।এতো লম্বা মেয়ে রা কিউট হয়না।আর আমি নালিশ করব আপনি প্রেম করেন। গার্লফ্রেন্ড আছে তারপরও আপনি আমার সাথে …………….বলেই নূর চুপ হয়ে গেল ।আরেকটি কথা বলতে পারল না ।সাদাফ মুচকি হাসলো ।
ঘোর লাগা কন্ঠে বললো,” লম্বা হলে তো কতো সুবিধা।ছেলে মেয়ে লম্বা হবে। রোমান্স করতে সুবিধা হবে।সবাই বলবে বাহ কি লম্বা বউ।তোর মতো লিলিপুট তা বুঝবে না।”
“কি বললেন আমি লিলিপুট?? আপনার কাধ বরাবর আছি।মেয়েরা এই হাইটেই সুন্দর।মেয়ে মেয়ে লাগে।”বললো নুর।

সাদাফ আবার বললো,”থেমে গেলি কেন বল কি করেছি তোর সাথে ?আর কি বলে আমার বিয়ে আটকাবি ?আমার বিয়ের বয়স হচ্ছে আমি বিয়ে করবো তুই কিভাবে আমার বিয়ে আটকাবি।
আর শোন তুই বাবা দের কাছে গিয়ে বিচার দিলে আমিও মায়েদের কাছে বলব ,”আমার বউ দরকার ।তাদের কাজে হেল্প করার জন্য একটা লোক দরকার ।
তুই তো দিন রাত পড়ে পড়ে থাকিস আমার আম্মুদের কোন হেল্প বা কাজে আছি আসিস না ।তাই তাদের জন্য একটা ছোট্ট রাজকন্যা পরীর মত বউ এনে দিব ।যাতে তাদের হেল্প হবে তাদের সাথে গল্প করবে ।”
নূর সাথে সাথে বলল ,”হেল্প হবে মানে ?গল্প তো আমিও করি ।আমিও তো চাইলে হেল্প করতে পারব ।কেন আপনার বাহিরে থেকে লোক আনতে হবে?”
সাদাফ ধীরে ধীরে একটু ঘোর লাগা কণ্ঠে বলল ,”না হয় তুই তাদের সাথে গল্প করবি হেল্প করবি কিন্তু আমার যে প্রয়োজন গুলো আছে সেগুলো কি তুই করবি??
“কি প্রয়োজন আছে আপনার ?”জানতে চাইলে নুর সরল কন্ঠে ।

সাদাফ বলল ,”এই যে এত রাতে ঘুম আসছে না তোর সাথে ফোনে কথা বলছি এখন যদি একটা বউ থাকতো আমার রুমে আমার পাশে আমার চুলগুলো টেনে দিত ।মাথায় বিলি কে*টে দিত ।কত ভাবে সেবা যত্ন করতো ।আমিও আরামে ঘুমিয়ে যেতাম। কিন্ত কেও এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে যাবে না।মাথা ব্যাথা নিয়েই ঘুমাতে হবে।তাই একটা বউ দরকার।
তুই কি আমার শিয়রের পাশে বসে আমার মাথায় বিলি কে*টে দিবি ?চুলগুলো টেনে দিবি ?মাথা ব্যথা হলে বসে বসে মাথা টিপে দিবি ?তুই তো কিছুই করবি না।”
একটু থেমে সাদাফ আবার বললো,”তুই তো আমার চাচাতো বোন যখন তখন এগুলো করতে পারবি।কিন্তু আমি তো শুধু তোর চাচাতো ভাই না ।একজন পুরুষ মানুষ ।একজন পুরুষ মানুষের আরো অনেক কিছু লাগে সেটা কি তুই করতে পারবি?

বউ তার স্বামীর চোখ দেখে বলে দিতে পারে তার কি প্রয়োজন তুই তো কখনো আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখিস না ?তুই তো কিছুই বুঝতে পারিস না নুর?
একটা সিম্পল প্রশ্ন তোর নিজের মনকে করতে বলেছিলাম করেছিলি ?তুই উত্তর পেয়েছিস সেই প্রশ্নের??কখনো সে উত্তরটা আমাকে দিয়েছিস ? নীলা রহমান লেখিকা।আমি কেন সবার থেকে আলাদা ?কেন তুই তোর ভাইয়ের বিয়ে আটকানোর কথা চিন্তা করিস না আমারটার কথা চিন্তা করিস?”
এদিকে রুমের ভিতর ছটফট করছে সাইমন ।আজ ৩-৪ দিন হয়ে গেল রিমা ওর সাথে যেচে গায়ে পড়ে কোন কথা বলছে না ।ও কি পড়বে না পড়বে কিছু বলছে না ।
যা ইচ্ছা তাই খাচ্ছে কিছু বলছে না ।সি*গারেট খেতে গেলেও কিছু বলছে না ।আর নেওয়া যাচ্ছে না ।সহ্য হচ্ছে না সাইমনের ।সাথে সাথে ফোন ঢুকালো রিমার নাম্বারে।

দুইবার রিং হতেই রিমা ফোন ধরল ।ফোন ধরে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে সাইমন উত্তেজিত হয়ে বলল ,”সমস্যা কি তোর রিমা ?কি হয়েছে ?সা*পের পাঁচ পা দেখেছিস ?তুই ঠিকমত কথা বলছিস না কি পড়বো না পড়বো কাপড় চোপড় ঠিক করে দিয়ে যাসনি।
কাল যে আমার প্রেজেন্টেশন শার্ট আয়রন করেছিস?? এখন বলিস না যে তুই জানিস না।পুরো সিডিউল তোর মুখস্ত।তোর জন্য বন্ধু দের সাথে আড্ডা দিতে পারিনা ক্লাসের রুটিনটা পর্যন্ত তোর মুখস্ত।”
রিমা কোন কথা না বলে সাথে সাথে ফোন রেখে দিল কথা বলবে না এ বে*য়াদব লোকটার সাথে।
এদিকে সাদাফ বারবার জানতে চাচ্ছে ,”কেন নূর প্রশ্নের উত্তর দে ?”

নূর কি বলবে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না ।এতোটুকু বুঝতে পারে নুর না চাচাতো ভাই হিসেবে না ওকে শুধু মাত্র একজন পুরুষের রূপেই দেখে নূর তাই ওর ছোঁয়ায় ওর কথায় নূরের এমন অনুভূতি হয় যা অন্য কারো জন্য হয় না।
নূর তারপর চোখ বন্ধ করে খিচে উত্তর দিল ,”জানিনা কিচ্ছু জানি না ।শুধু এতটুকু জানি আপনি কাউকে বিয়ে করতে পারবেন না ।কক্ষনো না ।আপনার ঘরে অন্য কোন মেয়ে আসতে পারবে না ।
যদি আসে তাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে সাদাফ ভাই আমি খুব খারাপ কিছু করে ফেলব।পরে আমার দোষ দিতে পারবেন না। আর ভালো করে শুনে রাখুন সাবা আপুর সাথে আপনার বিয়ে হবে না আপনি করতে পারবেন না ।”বলেই সাথে সাথে ফোন রেখে দিল নুর।

সাদাফ ফোনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। জানে নুরের এখন খুব জ্ব*লছে ।ভীষণ য*ন্ত্রণা হচ্ছে নূরের ভিতরে কিন্তু এই যন্ত্রণা যে সুখময় যন্ত্রনা সেটা বুঝতে নূরের আর বেশি সময় লাগবে না ।সেদিন দূরে নেই যেদিন নূর নিজে থেকে এসে বলবে ,”ভালবাসি সাদাফ ভাই।”
সাদাফ ফোনটা পাশে রেখে মাথাব্যথা নিয়েই বিছানায় শুয়ে রইল ।সত্যি মাথা ব্যথা করছে ভীষণ ।ঘুমাতে পারছে না তাই নিজের হাত দিয়ে নিজের চুল টানতে লাগলো সাদাফ।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১৮

লাইট অফ করে ঘুমিয়ে ছিল সাদাফ। ঠিক দশ মিনিট পর হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হলো ।সাদাফ মুচকি মুচকি হাসছে জানে এটা আর কেউ না পা*গলি নূর এসেছে ।ঠিকই এখন শিওর এর পাশে বসে বসে মাথা টিপে দিবে বিলি কে*টে দিবে ।তাই চোখ বন্ধ করে রইল সাদাফ।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here