সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩
neelarahman
শপিং শেষে বাসায় ফিরে আসলো চার জন। গাড়ি থেকে নেমেই কারো দিকে না তাকিয়ে চাবিটি সাইমনের দিকে দিয়ে বলল ,”কার লক করে ভিতরে চলে আসিস ।আমি টায়ার্ড আমি উপরে যাচ্ছি ।”
সায়মন বললো ঠিক আছে ভাইয়া।
রিমা বলল ,”কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন ?আয় আয় ভিতরে আয় ।সবকিছু নিয়ে তাড়াতাড়ি।”
নীলা রহমান
নুর মাথা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো ।কাউকে কিছু বলার বা বোঝানোর ভাষা নূরের কাছে নেই ।ওর সাথে কি হচ্ছে কেন এমন হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না নুর।
কেন সাদাফ ভাই এসব করছে কেন নূরকেই এসব সহ্য করতে হচ্ছে ভাবতে লাগলো নুর।
তারপরও সাদাফ ভাই কাছে আসলে কেন নূরের ভিতরে কোথাও কোনো একটা কম্পন শুরু হয়ে যায়। যা কাউকে বোঝাতে পারবেনা ।একদিকে ভয় একদিকে শিহরণ আরেক দিকে নিজের প্রতি ঘৃণা হয় নুরের।
এসব ভাবতে ভাবতেই নূর বাড়ির ভিতরে শপিং ব্যাগ গুলো নিয়ে প্রবেশ করল করে দেখল সাদাফ ভাই উপরে নিজের রুমে চলে গেল ।নুর ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে রইল ।চাচি নওরিন আফরোজ এসে বলল ,”কিরে তোকে কি আনতে বলেছিলাম ?এনেছিস ?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নূর হাসিমুখে বসে সবকিছু দেখাতে লাগলো।
সব দেখানো শেষে নুর উপরে নিজের রুমে চলে গেল ।গিয়েই শরীর এলিয়ে দিল বিছানায় ।তারপর আস্তে আস্তে ভাবতে লাগলো এই দিন গুলোতে সাদাফের ওর সাথে করা আচরণ। ভাবতে ভাবতে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে গেল নুর।
এদিকে সাদাফ নিজের রুমে এসে চুপচাপ দরজা লক করে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়ালো ।ছটফট করছে সাদাফের মন ।সাদাফের রুহু অব্দি পর্যন্ত ছটফট করছে ।সাদাফ দ্রুত পায়ে হেঁটে গিয়ে আলমারির একটি পাল্লা খুলে সেখান থেকে গোপন ড্রয়ার এর ভিতর থেকে একটি বক্স বের করল । নীলা রহমান
বক্সের ভিতরে কতগুলো ছবি ও কিছু জিনিস সযত্নে রাখা।ছোট একটি বাচ্চা মেয়ের ছবি দিয়ে পরিপূর্ণ বক্স টি।ধীরে ধীরে মেয়েটা বড় হচ্ছে এমন ছবি ।প্রথম হাঁটা শিখেছে সেই ছবি ।আরো কত স্মৃতি কত মাধুর্যমাখা কিছু স্মৃতি যেমন ক্লিপ চুরি লিপস্টিক নুপুর পুতুল আরো কত কি।
সাদাফ একটি একটি করে জিনিস বের করে হাতে নিল এবং চু*মু খেলো ।একটি ছবি বের করলো যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে ১৩ বছরের প্রথম কৈশরে পদার্পণ করা সালোয়ার কামিজ পরিহিত একটি মেয়ে ।সাদা শুভ্র কালারের সালোয়ার কামিজ পড়া একটি মেয়ের দিকে মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে রইলো সাদাফ।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে মাথাটা ঝুকিয়ে ছবিতে চু*মু খেলো সাদাফ।
তারপর মাথা তুলে ছবির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে ধীরে ধীরে পরম আদুরে নরম সুরে বলল ,”আই লাভ ইউ সোনা ।ভীষণ ভালোবাসি তোকে আমি ।তুই কবে বড় হবি ?কবে তুই বুঝতে পারবি আমি তোকে কত ভালবাসি?
আর কত অপেক্ষা করাবি এবার একটু বড় হ প্লিজ।কিছুই বুঝিস না কেন তুই?
চোখের ভাষা বুঝিস না ।মুখের ভাষা বুঝিস না ।আমার স্পর্শের ভাষাও কেন বুঝতে পারিস না তুই ?তোকে আমি কত ভালবাসি কি করে বোঝাবো বল?
কেন যখন আমি তোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি তুই আমার চোখের ভাষা পড়তে পারিস না ?কেন যখন তোকে আমি ভালোবাসার ছোট ছোট পরশ একে দেই তখন তুই আমার স্পর্শ বুঝতে পারিস না?
মেয়েরা নাকি কোন ছেলের চোখ দেখলে কথা শুনলে বা স্পর্শেই বুঝে ফেলতে পারে তার মনে কি চলছে ! তাহলে তুই আমার কোন কিছুই কেন বুঝতে পারিস না ?প্লিজ তাড়াতাড়ি বড় হো সোনা পাখি ।আমি যে আর তোকে ছাড়া থাকতে পারছি না।”
বলেই ছবিটি বুকে নিয়ে ঘন ঘন গরম নিঃশ্বাস ফেলছে সাদাফ।
পরের দিন সকাল নাস্তা টেবিলে বসে আছে সবাই ।নূর সিঁড়ি বেয়ে ধীরে ধীরে নামছে দেখল সবাই নাস্তা করছে শুধু সাদাফ ভাই।হাত লাগায়নি প্লেট নিয়ে বসে আছে ।
নূর বুঝতে পারল না এভাবে বসে থাকার কারণ ।তারপরও ধীরে ধীরে নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কোন চেয়ার খালি নেই সাদাফের পাশের চেয়ারটায় খালি তাই একটু চেয়ারটা সরিয়ে টেনে বসলো নূর।
নূর বসতেই নওরিন আফরোজ নুরকে নাস্তা দিয়ে বলল ,”আজকে সবটুকু শেষ করবি কোন রং তামাশা চলবে না ।যখনি খাবার দেই একটু একটু করে বিড়ালের মত ছিড়ে ছিড়ে খাস।”
“ওকে নিয়ে আমার সব জ্বালা ভাবি।ঠিকমতো খায়না।বাবার আদরের কিছু বলতেও পারিনা।”বলেই স্বামীর দিকে তাকালো সামিহা বেগম।
ফজলুর রহমান বলল ,”খবরদার বাজে কথা বলবে না ।আর আমার মেয়েকে একটি কথাও বলবে না ।অল্প খায় সমস্যা নেই যখন খাওয়ার রুচি হবে তখন বেশি করে খাবে ।মানুষের কি সব সময় রুচি এক রকম থাকে?”
নুরের দিকে তাকিয়ে বললো খাও বাবা।
নূর চুপচাপ বাবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো তারপর খাবারে মনোযোগ দিল ।সাথে সাথে সাদাফ খাওয়া শুরু করল ।
এদিকে সাদাফের বাবা হুমায়ুন রহমান বলল ,”আজকে থেকে সাদাফ অফিস জয়েন করছে সবাই নিশ্চয়ই জানো।
৯ টা থেকে ৫ টা অফিস যদিও তুমি অফিসের মালিকের ছেলে কিন্তু তাই বলে নিয়ম ভঙ্গ করলে চলবে না ।সবার আগে তুমি অফিস যাবে এবং সবার পরে অফিস থেকে বের হবে এটাই নিয়ম। নীলা রহমান
সবার মত ফ্রাইডে এবং স্যাটারডে তুমি ছুটি পাবে অন্য সময় লিভ লাগলে আগে থেকে আমাকে ইনফর্ম করতে হবে ।আমি তোমার ছুটি ব্যবস্থা করব কিন্তু মালিকের ছেলে বলে কোন অনিয়ম করা চলবে না।
যদিও তোমাকে আমার এসব বুঝিয়ে বলতে হবে না ।তুমি আমাদের চেয়েও পাংচুয়াল তারপরও বলার প্রয়োজন বাবা হিসেবে ছেলেকে উপদেশ দিলাম।”
ফজলুর রহমান সাথে সাথে বলল ,”কি বলেন ভাইজান !আমাদের সাদাফ কে বুঝি কিছু বুঝিয়ে দিতে হয় ?সেই ছোটবেলা থেকে সবার চেয়ে আলাদা ।সব কাজে ও একদম পারফেক্ট আমাদের সাদাফের মধ্যে কোন খুঁত নেই ।একদম নিখুঁত আমাদের ছেলে।”
সাদাফ ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল ,”ধন্যবাদ চাচ্চু।”
তারপর বাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”চিন্তা করবে না বাবা আমাকে তোমার কিছুই বুঝিয়ে দিতে হবে না ।আমি তোমার সন্তান তোমার নাম খারাপ হবে এমন কোন কিছুই আমি কখনো করবো না।”
হুমায়ূন রহমান ছেলের দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্ট চিত্তে হাসলেন ।তারপর সবাই খাওয়ায় মনোনিবেশ করলেন ।এদিকে নূর আড়ি পেতে সবগুলো কথাই শুনছিল কিন্তু মাথা তুলে তাকায়নি।
সায়মন ও রিমা চুপচাপ খাওয়া শেষ করে যার যার রুমে চলে গেল ।নুর যেহেতু পরে এসেছে নুরের খেতে একটু দেরি হলো ।
সাদাফ নুরের দিকে ফিরেও তাকালো না। হুমায়ুর রহমান ও ফজলুর রহমান খাওয়া শেষ করে উঠে গিয়েছেন।নুরের খাওয়ার আড় চোখে একটু তাকালো সাদাফ।তারপর ধীরে ধীরে খাওয়া শেষ করে উঠে হাত ধুতে গেল।
হাত ধুয়েই নূরের মা অর্থাৎ সামিহা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”ছোট আম্মু আমার জন্য এক কাপ কফি পাঠাবে ?নুর তুই একটু নিয়ে আসবি রুমে?
ছোট আম্মুর তো পায়ে ব্যথা আম্মু বানিয়ে দিবে তুই একটু রুমে নিয়ে আয় ।”
বলেই ভদ্র ছেলে উপরে চলে গেল ।সামিহা বেগম বলল ,”আর কত বি*ড়ালের মতো খুট খুট করে খাবি এবার ওঠ যা ছেলেটার জন্য কফি নিয়ে যা ।নূর কিছুই বলতে পারল না ।খাবারের হাতটা চুপচাপ থেমে গেল ।চুপচাপ বসে রইল ।না বলে লাভ নেই মার থেকে আরও দশটা কথা শুনবে।
তাদের ভদ্র যোগ্য সন্তান কফি চেয়েছে বলে কথা ।নূর যদি না বলে এই মুহূর্তে বাড়ির সবার ঠা*ডা একমাত্র নূরের মাথায় পড়বে।
মনে মনে ভাবলো নুর।
সামিহা বেগম কফি নিয়ে এসে নূরের হাতে দিলো দিয়ে বলল ,”যা কফি নিয়ে উপরে যা।”
নূর মনের মধ্যে অজানা ভয় এবং আ*তঙ্ক নিয়ে ধীরে ধীরে পা ফেলে সিঁড়ি ভেঙে উপরে গেল ।রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ ।এদিকে কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে ঠান্ডা হলে আবার না জানে কি করবে তাই হাত উঠালো নক করবে ঠিক এমন সময় দরজা খুলে দাড়ালো সাদাফ।
সাদাফ একবার চোখ ঘুরিয়ে এদিকে ওদিকে দেখল তারপর চুপচাপ নূরের হাত থেকে কফিটা নিয়েই সাথে সাথে নুরকে ভিতরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।
এরপর কফির মগটা পাশে এক টেবিলের উপরে রেখে নুরের হাত ধরে টেনে বিছানায় বসিয়ে বলল ,”এত দেরি হল কেন আসতে?”
নুর কোনমতে আমতা আমতা করে বলল ,”ভাইয়া আমি ……….আর কোন কথা বলতে পারলো না নুর ।সাদাফ এক আঙুল রাখলো নূরের ঠোঁ*টে ।বললো ,”হুশ আর একটা কথাও না।আমার কথা শুনিস না কেনো? শাস্তি পাবি আমার অ‘‘বাধ্য হওয়ার।
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২
বলেই নূরের ঠোঁ*টে ঠোঁ*ট মিলিয়ে দিল সাদাফ।গারো চু*ম্বনে স্পর্শে নূরের ভিতর শি*হরিত হতে থাকলো ।ভিতরে স্নায়ু যু*দ্ধ লেগে গেল নূরের ।এদিকে সাদাফ থেমে নেই । অপ্রতিরোধ্য।যেনো একাই যু*দ্ধ করছে একাই জয়ী হতে চাচ্ছে।ধীরে ধীরে চু*মুর মাত্রা বাড়াতে লাগলো সাদাফ।
নুরের ছোট্ট কোমল শরীর ভে*ঙে চু*রে অবাধ এক যু*দ্ধে নেমেছে সাদাফ।