সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৩

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৩
neelarahman

নুর রুমে গিয়ে শুধু পাইচারি করছে আর রাগে ফুসফুস করছে ।এমন সময় নিচ থেকে ডাক দিল নওরিন আফরোজ ।বলল ,”নূর দেরি হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি স্কুলের জন্য রেডি হয়ে যা ।সাদাফ কিন্তু বেশিক্ষণ অপেক্ষা করবে না।”
নূর বলে বসলো ,”চলে যেতে বল তোমার ছেলেকে ।আমি আজকে স্কুলে যাব না ।আমার ভালো লাগছে না ।”
নওরিন আফরোজ অবাক হয়ে গেলেন ।নুর তো কখনো এইভাবে কথা বলে না ।”তোমার ছেলে তোমার ছেলে ” বলেনা।সবসময় সাদাফ ভাইয়া বলে ।

সাদাফ অবশ্য নওরিন আফরোজ এর পাশে ছিল ।শুনলো কথাগুলো ।তারপর বলল ,”ঠিক আছে মা তুমি যাও আমি দেখছি ওর কি হয়েছে।”
নওরিন আফরোজ সাদাফের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কিছুক্ষণ ।তারপর বলল ,”ঠিক আছে দেখ কি হয়েছে ।মেয়েটা তো কখনো এরকম করে না।
আমি ওর টিফিন রেডি করছি ।যাতে দেরি না হয় গাড়িতে খেয়ে নিবে।”
নওরিন আফরোজ চলে যেতেই সাদাফ নূরের দরজার নক করল ।
নূর ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে ।নূর বলল ,”বড় মা আমি আজকে স্কুল যাব না বলে দাও তোমার ছেলেকে আমার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাদাফ বলল ,”সাহস থাকে দরজা খুলে বড় মার ছেলেকে নিজে বল ।দেখি তোর সাহস কতটুকু ?থা*পরে দাঁত ফেলে দিব বেয়াদব ।স্কুলে যাবে না ! এক্ষুনি বের হ রেডি হয়ে।”
নুর রাগে গজ গজ করতে করতে দরজা খুলে দিল ।যেন দেখিয়ে দিতে চাইলো সাহস কতটুকু আছে ।সাদাফ দেখলো রাগে নূর এর গাল দুটো লাল টমেটোর মত হয়ে গেছে ভিতরে ভিতরে খুব হাসি পাচ্ছে সাদাফের ।কিন্তু বাহিরে প্রকাশ করল না ।কাঠিন্যতা বজায় রেখে বলল ৫ মিনিট সময় দিলাম তাড়াতাড়ি রেডি হ আমি এখানে বসলাম।”
নুর বলল ,”আপনি এখানে থাকলে আমি রেডি হবো কিভাবে ?”

সাদাফ বললো,” সেটা তো আমার হেডেক না তোর মাথা ব্যথা ।সময় দিয়েছিলাম আগে তুই রেডি হোসনি এখন আমি এখানে বসলাম তুই ওয়াশরুমে যা গিয়ে রেডি হয়ে আয়।
আর এমন কিছু নাই তোর যা আমি ছোটবেলা থেকে দেখিনি জন্ম থেকে দেখতেছি।”
সাদাফের গা ছাড়া নি*র্লজ্জ ছিঃ মার্কা কথা শুনে নূরের চোখ দুটো আপনা আপনি বন্ধ হয়ে গেল ।ভিতরে ভিতরে বলল ,”ঠিক কেন যে দরজা খুলতে গেল একবার রেডি হয়ে দরজা খুলে দিলেই ভালো হতো ।জিদ করে বড় বড় পা ফেলে আলমারি থেকে স্কুলের ইউনিফর্ম বের করে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেল নুর।
ওয়াশরুমের দরজা এমন জোরে লাগালো যেন সাদাফের কানে খিল লেগে গেল।
সাথে সাথে সাদাফ আঙুল দিয়ে কান আটকালো এমন জোরে লাগিয়েছে বুঝতে পারছে নূরের মনের অবস্থা ।সাদাফকে যেন না পারছে কাঁচা চি*বিয়ে গি*লে ফেলতে চাচ্ছে মেয়েটা।

সামিহা বেগম সবজি টিফিন বক্সে ঢুকাচ্ছে ও রুটি ঢুকাচ্ছে ।নওরিন আফরোজ এসে কফি মগে ঢালতে ঢালতে বলল ,”নুর আজকে এমন করল কেন রে ?ওকে তো কখনো এরকম করতে দেখি না ।সব সময় চুপচাপ শান্তশিষ্ট থাকে মেয়েটি যে যাই বলুক কোন কথার উত্তর দেয় না আজ কেমন করে উঠেছে দেখেছিস।”
সামিহা বেগম বলল ,”হ্যাঁ ভাবি দেখেছি বড় হচ্ছে হয়তো কোনো কারণে মেজাজ গরম তাই এমন করতে পারে ।আমাকে তো আর কিছু বলে না ।বাবাদের আদরের মেয়ে বাবারাই জানে কি অবস্থা।”

নওরিন আফরোজ এর মাথায় চলছে অন্য কিছু ।নূরের একটি কথা ভীষণ ভাবাচ্ছে নওরিন আফরোজকে ।তোমার ছেলে তোমার ছেলে যেভাবে রাগের বশে হলেও অধিকার নিয়ে বলেছে নুর কেমন যেন কানে ঠেকলো ওনার কাছে ।
নরমালি মেয়েরা তার উপরে এভাবে অভিমান করে যার উপরে কোন অধিকার থাকে।
কিন্তু ও যে সাদাফের অনেক ছোট সাদাফ ওকে কোলে নিয়ে ঘুরেছে ।মানুষ করেছে তাই এই বিষয়টা ভাবতেই পারেনা নওরিন আফরোজ ।কিন্তু নূর যে নওরিন আফরোজ এর অনেক প্রিয় অনেক আদরের যদি কখনো এরকম হতো সাদাফের সঙ্গে …….তারপর আবার দাঁত দিয়ে জিভ কে*টে মনে মনে ভাবল ছিঃ ছেলের স্বার্থের জন্য কি ভাবছে !

যেখানে সাদাফ এখন বিয়ে করতে চাইছে সেখানে নূরের তো এখনো বিয়ের বয়স হয়নি।
তাই এই চিন্তা ভাবনা করাও যে একদম অবান্তর। তাই সামিহা বেগমকে বললেন ,”তাড়াতাড়ি টিফিন বক্স তৈরি কর ওরা নামলো বলে ।আজকে এমনি দেরি হয়ে গিয়েছে।”
নূর ওয়াশ রুম থেকে স্কুলে ইউনিফর্ম পড়ে বের হলো। এখনো হিজাব বাধিনি ।হিজাব বাধতে আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে তাই হনহনিয়ে হেঁটে এসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালো নূর।
সাদাফ দেখতে লাগল নূরের পা*গলামি ।নুরের বেল্ট পিছনে এখনো খোলা হুক লাগানো হয়নি।
সাদাফ হেটে এসে নূরের পেছনে দাঁড়িয়ে সামনে হাত নিয়ে বেলটি সুন্দর করে লাগিয়ে দিল ।নুর কেপে উঠল।তারপর ধীরে ধীরে ক্রস বেল ঠিক করে দিবে ঠিক এমন সময় নূর সরে গেল ।বলল ,”কি করছেন?”
সাদাফ অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল ,”কি করছি ?”

নুর আমতা আমতা করে বুকে হিজাবটা রেখে বলল ,”কি করছিলেন কোথায় হাত দিচ্ছেন আপনি ?”
সাদাফ বললো,” কোথায় হাত দিচ্ছি ?”
নুর রাগের বসে বলে ফেললো,”কাল ও আপনি আমাকে এভাবে স্পর্শ……..আর কিছু বলে শেষ করতে পারলো না নুর।সাদাফ আর একটু কাছে এসে কানের কাছে ঝুঁকে বললো ,”কাল কি আমি? কোথায় স্পর্শ করেছি? আর তুই হয়তো ভুলে যাচ্ছিস তুই ভুল সময় আমার রুমে ঢুকে ছিলি ।তাই সম্পূর্ণ দোষ আমার একার না দোষটা তোর তুই আগে আমাকে স্পর্শ করছিলি।
এভাবে রাতে নির্জনে কি কোন পুরুষকে ছুঁয়ে দিতে আছে নুর?”

নুর কাঁপতে লাগল সাদাফ হঠাৎ করে আবার এত কাছে চলে আসায় ।যখনই সাদাফ নুরের এইভাবে কাছে আসে নূর কেন যেন মোমের মত গ‘‘লে যায় ।মনে হয় শরীরের প্রত্যেকটি অ*ঙ্গ-প্র*ত্যঙ্গ গ*লে গ*লে এভাবে মাটির সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে ।নূর মাথানু নুইয়ে ফেলল।
সাদাফ কানে কানে ফিসফিস করে বলল ,”এমন কিছু করে নি আমি যা আমার অধিকার নেই এমন কোথাও স্পর্শ করিনি আমি যা আমার জন্য নির্ধারিত না।”
নূরের এবার রাগ হলো ভীষণ রাগ হল ।চোখ তুলে বলল ,”আপনি না সামনে বিয়ে করছেন তাহলে কেন এসেছেন এখানে?”

সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”তোকেও তো বলেছি তুই কেন চাচ্ছিস না আমার বিয়ে হোক ?একটা কারণ দেখা আমি বিয়ে করবো না।”
নুর রাগে ফুঁসতে লাগলো ।মনে মনে খুব ঝাড়তে লাগলো সাদাফ কে। বারবার মনে মনে বলতে লাগলো ,”কেন আপনি আমার মনে কথা বুঝে নিচ্ছেন না ,কেন সবকিছু আমাকে মুখ ফুটে বলতে হবে ?আপনিও তো কখনো মুখ ফুটে আমাকে কিছু বলেন না কিন্তু ঠিকই আমার কাছে আসেন আমাকে স্পর্শ করেন ।আমাকে এইভাবে পা*গল পা*গল করে দেন ।কিন্তু নিজে মুখ ফুটে কিছু বলেন না।”

নুরের ভাবনার মাঝেই সাদাফ নুরকে আবার নিজের কাছে এনে সোজা করে দাঁড় করিয়ে বুকের দিকে ক্রস বেল্ট ঠিক করে দিল ।তারপর ধীরে ধীরে বলল ,”যা আমার তা শুধু দেখার অধিকার আমার ।নিজেকে সাবধানে রাখবি যত্নে রাখবি ঢেকে রাখবি ।অন্য কারো চোখ যেন তোর উপরে না পড়ে।”
বলেই একটু দূরে সরে বলল ,”আমি নিচে গাড়ি বের করছি তাড়াতাড়ি নিচে আয় ।আমার যেনো আর উপরে আসতে না হয়।”

সাদাফ বেরিয়ে যেতেই নূর বড় একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ।”এইমাত্র কি বলে গেল লোকটা ?উনার জিনিস মানে ?আর ঢেকে রাখবো মানে ?আমি কি বাজে ভাবে চলাফেরা করি ?উনি এসব কথা বলতে কি বুঝাতে চাইলেন ?আর শুধু উনি দেখবেন মানে ?”হাজারো প্রশ্ন নূরের মাথার ভিতরে ঘুরপাক খেতে থাকল।
এদিকে সায়মন প্রেজেন্টেশনের জন্য রেডি হয়ে নিচে নামছে ।নিচে নেমে কোথাও রিমাকে দেখতে পেল না ।নওরিন আফরোজের দিকে তাকিয়ে বলল ,”বড় আম্মু রিমা কোথায়?”
নওরিন আফরোজ বলল ,”তুই যখন উপরে গেলি তখনই তো বের হয়ে গেল ।বলল নাকি খুব তাড়া আছে ।তাই চলে গেল আজকে তোর সাথে যেতে পারবেনা ।”

সাইমনের মেজাজ গর*ম হলো কিন্তু বড় আম্মুর সামনে তার প্রকাশ করতে পারল না ।চুপচাপ বলল ,”ঠিক আছে আমি আসছি প্রেজেন্টেশন আছে আজকে আসতে একটু লেট হবে আমার।”
রান্না ঘরের দিকে তাকিয়ে সায়মন বললো ,”মা আমি আসছি ।প্রেজেন্টেশন আছে দেরি হবে আমার ।বারবার ফোন দিও না ক্লাসে থাকা অবস্থায়।”

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২২

একরাশ বিরক্তি নিয়ে বের হয়ে গেল সাইমন ।মনে মনে ভাবল ,”আজকে খালি বাসায় আসুক বেশি উড়ছে পাখা দুটো কা*টতে হবে দেখাবো মজা আজকে।”

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here