সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৪

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৪
neelarahman

নূর যাওয়ার সময় নওরিন আফরোজের হাত থেকে টিফিন বক্সটা নিলো ।নওরিন আফরোজ দেখলো রা*গে নূরের মুখ চোখ কেমন লাল হয়ে আছে ।স্কুলে যাওয়ার সময় দেরি করাতে চাইলো না তাই কিছু জিজ্ঞেস করল না ।বলল ,”যা গাড়িতে অপেক্ষা করছে সাদাফ।”
নুর টিফিন বক্সটা বড় আম্মুর হাত থেকে নিয়ে হনহনিয়ে দরজা দিয়ে হেঁটে বাইরে চলে গেল ।নওরিন আফরোজ নূরের দিকে এক নজরে তাকিয়ে রইল। লীলা রহমান
বড় হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা ।একদিন বিয়ে দিয়ে পরে বাড়িতে পাঠাতে হবে কিন্তু কেন যেন মেয়েগুলোকে আর বিয়ে দিয়ে পরে বাড়িতে পাঠাতে ইচ্ছা করে না ।

নিজেরাও তো এসেছিল অন্যের বাড়ি থেকে এসে তো এই এইবাড়ীর হয়ে গেছে ।একসময় তার মেয়েরাও চলে যাবে কিন্তু মন যে মানতে চায় না ।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার রান্না ঘরের দিকে গেল নওরিন আফরোজ।
গিয়েই চোখ পড়লো সামিহা বেগমের দিকে ।সামিহা বেগম সবজি কা*টছিলেন ।নওরিন আফরোজ পাশে গিয়ে বললেন ,”রিমা আর নুর দেখতে দেখতে বড় হয়ে যাচ্ছে একদিন বিয়ে দিবে ওরা শ্বশুর বাড়িতে চলে যাবে ।ভাবতে কেমন লাগে তাই নারে ?মেয়ে দুটোকে তো আমার বাইরে দিতে ইচ্ছা করে না।”
“হ্যাঁ ভাবি তুমি ভাবছো বাইরে যেতে ইচ্ছা করে না আমি তো ভাবছি নুর দিনকে দিন যেমন হচ্ছে বেয়ারা শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে না জানি কি হয় কথা শুনতে হবে ।মেয়েকে কিছুই শিখায়নি বলবে। অথচ বাপ চাচার জন্য কিছুই শিখাতে পারি না কিছু বলতে গেলেই দোষ হয়ে যায়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সব শ্বশুরবাড়ি তো আর আমাদের মত হবে না তাই না বল ?হাতে ধরে শিখিয়ে দিবে ভুল হলে মাফ করে দিবে ।সব সময় তো আর এমন হয় না ।খুব চিন্তা হয় জানো ?
ও যেরকম কথায় কথায় রাগ করে ছ্যান ছ্যান করে খেতে চায় না শ্বশুর বাড়িতে গিয়েও তো না খেয়ে বসে থাকবে ।কেউ কি আমাদের মত জোর করে খাওয়াবে ওকে?
রিমাটা তাও অনেক ম্যাচিউর নিজের কা*জগুলো নিজে করতে পারে সাইমনের কা*জগুলো দেখনা সব সুন্দর করে গুছিয়ে করে দেয় আমার তো কোন টেনশনই করতে হয় না।
এই যে সাইমনের কাপড়চোপড় এইটা সেটা সবকিছু তো গুছিয়ে রাখে রিমা। মেয়েটা খুব সংসারী মেয়ে ।খুব ভালো লাগে আমার এই রিমা কে দেখলে ওকে নিয়ে এট লিস্ট আর যাই হোক শ্বশুরবাড়ি থেকে কথা শুনতে হবে না ।
টেনশন তো হচ্ছে আমারে বু*দ্ধু মেয়েটাকে নিয়ে ।কথায় কথায় শুধু গাল ফুলিয়ে বসে থাকে না খেয়ে বসে থাকে।”
নওরিন আফরোজ সামিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল ,”আচ্ছা এমনও তো হতে পারে ওকে বাসায় রেখে দেওয়া যায়।”

সামিহা বেগম অবাক হয়ে গেলেন ।বললেন ,”কি করে বাসায় রাখবো ?মেয়ে হয়ে জন্মেছে বিয়ে তো দিতেই হবে। এমন একটা জামাই যদি পেতাম হয় আমার মেয়ের জন্য মেয়ের মত হয়ে যেত আর না হলে আমার মেয়ে জামাইয়ের ভয়ে জামাইয়ের মত হয়ে যেত।”
হলেই হেসে ফেললেন সামিহা বেগম।
নওরিন আফরোজ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো ।মনের কথা মনে রাখল মুখ ফুটে আর কিছু বলল না ।আগে নিজে ভাববে।তারপর কথা বলবে।সাদাফ তো বললো কাকে যেনো বিয়ে করতে চায়।ছেলের পছন্দ তো দেখতে হবে।
নওরিন আফরোজ নিজেদের কা*জে মনোযোগী হল ।এদিকে সাদাফ গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছে নূরের জন্য ।নূর এসে হনহনিয়ে গাড়ির পিছনের সিটের দরজা খুলে বসে পড়ল।

সাদাফ অবাক হয়ে গেল নূরের কান্ড দেখে ।সাথে সাথে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে বলল ,”কি হলো এটা ?তুই পিছনে বসলি কেন ?আমাকে কি তোর ড্রাইভার মনে হয় ?চুপচাপ সামনে আয় বলছি।”
নুর বলল ,”না আমি সামনে বসবো না ।আপনি তো কয়দিন পর বিয়ে করবেন সামনে আপনার বউকে বসান ।অন্যের জায়গা নেওয়ার আমার কোন ইচ্ছা নেই।”
সাদাফ সামনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ।আঙ্গুল দিয়ে কপাল একটু চুল*কাতে চুল*কাতে বলল ,”সেটা না হয় যখন হবে তখন দেখা যাবে এখন তুই সামনে আয়।কোম্পানি দে ।তাড়াতাড়ি আয় বলছি আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে অফিসে যেতে হবে।”

নুর বলল ,”আমি যাব না সামনে ।আমি পিছনে বসবো ।”
সাদাফ বললো,”তুই ভালোমতো সামনে আসবি নাকি আমার পিছনে আসতে হবে?”
নুর বলল ,”বলেছে তো একবার আমি সামনে যাবো না ।আমি পেছনেই বসব ।”
সাদাফ চুপচাপ গাড়ির দরজা খুলে বের হয়ে সাথে সাথে পিছনে দরজা খুলে যেই মাথা ঢুকিয়ে দিল নুর ভয়ে সিটের মধ্যেই আধশোয়া হয়ে পড়ে গেল।
সাদাফ নুরের উপরে ভর না দিয়েই দুহাত দুপাশে দিয়ে নূরের উপরে ঝুঁকে বলল ,”তুই কি এখন উঠে চুপচাপ সামনে যাবি নাকি আমার আরো কিছু করতে হবে?”
“আর কিছু মানে?”ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলো নুর।
“বুঝতে পারছিস না কি?” ঘোর লাগা কণ্ঠে বললো সাদাফ।
বলেই নুরের গালে হাত রাখলো।আঙুল দিয়ে গালে স্লাইড করত করতে বললো,” তোকে দেখলেই আমার এমন লাগে কেনো নুর?”

নুর বললো,” ক..কেমন লা.. লাগে?”
“এইযে তোকে বুকে নিয়ে আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছে। ঠোঁট দুটো ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।তোকে এলোমেলো করে দিতে ইচ্ছে করছে। তোকে একটু গভীরভাবে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে নূর।”বলেই নুরের ঠোটের দিকে হালকা ঝুঁকতেই নুর চোখ বন্ধ করে ফেললো।
সাদাফ মুচকি মুচকি হাসছে নুরের ভয় পাওয়া দেখে।
নূর ভয় পেয়ে গেল নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসলো ।নিজের চোখের সামনে এত সামনে সাদাব কে দেখে বারবার নিজের উপরে খেই হারিয়ে ফেলে নুর ।তারপর আমতা আমতা করে বলল ,”কিছু করতে হবে না আমি সামনে যাচ্ছি।আমার উপর থেকে সরুন।আমার কেমন যেনো লাগছে।”
“কেমন লাগছে?”জানতে চাইলো সাদাফ।
নুর চুপচাপ শুয়ে রইলো।সাদাফ ধীরে ধীরে নুরের উপর থেকে উঠে দরজা ঠিকমতো খুলে দিল বলল সামনে আয়।
নুর চুপচাপ উঠে বসলো।

অফিসে বসে আছেন হুমায়ূন রহমান কিছু একটা ভাবছেন ফজলুর রহমান একটি ফাইল দেখছিল। হঠাৎ হুমায়ূন রহমান বলল ,”শুনলি তো সাদাফ বিয়ে করতে চাইছে ।”ফজলুর রহমান মাথা তুলে তাকালেন ।তারপর বলেন ,”হ্যাঁ ছেলে বড় হয়েছে বিয়ে তো করতে চাইবেই।
আমাদেরই ভাবা উচিত ছিল তা না করে নিজেরা বসে রইলাম ছেলের মুখ ফুটে বলতে হল। নীলা রহমান
ভাইয়া একটা জিনিস খেয়াল করেছো ও বলল পাত্রী কে আমরা ছোটবেলা থেকে চিনি ।তখন কথাটা ধরিনি ।কে হতে পারে যাকে আমরা ছোটবেলা থেকে চিনি?”
হুমায়ূন রহমান ফজলুর রহমানের দিকে তাকালেন ।তারপর একটু আমতা আমতা করে বললেন ,”আচ্ছা পাত্রী যদি তোর খুব চেনা হয় তাহলে কেমন হবে?”

ফজলুর রহমান বললেন ,”ভালই হবে চেনাজানা মধ্যে হলে তো ভালো আর নতুন করে চেনা জানা করতে হবে না ।সবকিছু আগে থেকেই বোঝ পোরা হয়ে থাকবে।
আমি তো আমার আশেপাশে বিয়ের উপযুক্ত এরকম কোন মেয়েকে দেখি না ভাইয়া যাকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি।”

হুমায়ূন রহমান চুপ করে রইলেন আর আর কিছু বললেন না ।বললেন সেটা হয়তো সাদাফ জানে হয়তো আমাদের মাথায় এখন আসছে না মেয়েটা হয়তো আমাদের খুবই পরিচিত।
তারপর কি মনে করে যেন বলল ,”আচ্ছা আমাদের মেয়ে দুটো তো বড় হচ্ছে ওদের ওতো বিয়ে দিতে হবে ।নুরকে নিয়ে তোর কি চিন্তা ভাবনা ?”
ফজলুর রহমান চট করে তাকালেন ভাইয়ের দিকে তারপর বললেন ,”এখনো তো ও ছোট ভাইয়া ওকে নিয়ে আর কি চিন্তা করব ।তার আগে তো রিমা ।রিমা পড়াটা শেষ হলে বিয়ে দিব তারপর নুরকে নিয়ে চিন্তা।”
“রিমা তো লেখাপড়ার জন্য অনেক সিরিয়াস এজন্য ওর লেখাপড়া আরেকটু এগুনোর পর ভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ার বা সেকেন্ড ইয়ারে উঠলে বিয়ের কথা চিন্তা করব ।কিন্তু নূর তো আবার লেখাপড়া বেশি একটা করতে চায় না ।তাই জিজ্ঞেস করলাম নূরকে নিয়ে তোর কোন প্লান আছে কিনা।

আমি তো বড় বাবা হিসেবেই নূরকে বাহিরে দিতে রাজি না তুই তো ওর নিজের বাবা তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
ফজলুর রহমান হুমায়ুন রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”নিজের বাবা বলে কি ভাইয়া ?আমার চেয়ে বেশি অধিকার নূরের উপরে তোমার কারন নূর তোমাকে সবার আগে বাবা বলে ডেকেছিল মনে নেই তোমার?”
হুমায়ূন রহমান হাসলো ।বলল ,”হ্যাঁ সর্বপ্রথম ও আমাকে বাবা বলে ডেকেছিল ।”

তারপর ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল ,”আচ্ছা সাদাফ যে ছোটবেলা তোর কাছ থেকে নুর কে চেয়ে নিয়ে গিয়েছিল মনে আছে তোর?এখন বিয়ে দিতে গেলে যদি বলে না বিয়ে দিবে না ওর কাছে রেখে দিবে তখন?”
ফজলুর রহমান খুব হাসলেন মনে পড়ে গেল সেই ছোট্টবেলার কথা ।যেদিন সাদাফের কোলে দিয়ে বলেছিলেন প্রমিস করে হ্যাঁ এখন থেকে নূর তোর ।তাই বললে ,”হ্যাঁ ভাইয়া ছোটবেলা তো দিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু এখন তো বড় হয়ে গেছে এখন কি আর এসব মনে আছে আর তাছাড়া বিয়ে তো একদিন দিতেই হবে কি করবো বলো?”
হুমায়ূন রহমান আমতা আমতা করছে ।ফজলুর রহমান খেয়াল করল ।তারপর জিজ্ঞেস করল ,”ভাইয়া তুমি কি আসলে কিছু বলতে চাচ্ছ ?”

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৩

হুমায়ূন রহমান সাহস করে বলল ,”যদি সাদাফ এখনো তোর কাছে নূরকে চেয়ে বসে ?আজও কি নূরকে ওর হাতে দিয়ে প্রমিস করে বলবি এখন থেকে নূর সাদাফের?
ছোটবেলা যে পুতুলটাকে তোর কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছিল তোর কাছে প্রমিস করিয়েছিল বড় হওয়ার পর যদি তোকে বলে সে প্রমিস রক্ষা করতে এই পুতুলটাকে ওকে দিয়ে দিতে তখন কি করবি তুই?”
ফজলুর রহমান নির্বাক হয়ে গেলেন ।অবাক হতেও যেন ভুলে গেলেন ।চোখের পলক না ফেলেই তাকিয়ে রইলো হুমায়ূন রহমানের দিকে।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ২৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here