সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪০

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪০
neelarahman

চারজন ওরা ভিতরে ঢুকতেই দেখল অনেক লোকজন। রিমা আর নুর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে ।সাইমন সাদাফ একটু এগিয়ে গেলো।নূরের চোখ বারবার খুঁজে ফিরছে সাবা আপুকে ।একটু সামনে যেতে দেখতে পেল সাবা আপু দাঁড়িয়ে আছে।
অনেক সুন্দর করে সেজেছে আজ সাবা আপু ।এমনিও সুন্দর নূরের যেন এখন আজ মনে মনে একটু হিংসা হচ্ছে ।নূরের থেকে বেশি সুন্দর যেন লাগতে না পারে তাই রিমার দিকে ফিসফিস করে বলল ,”আপু দেখতো আমাকে কেমন লাগছে সুন্দর লাগছে কিনা?”
রিমা অবাক হয়ে গেলো।দেখলো নুরকে ।বলল ,”তুই তো কখনো জিজ্ঞেস করিস না সুন্দর লাগে কিনা ?তুই তো এমনি সুন্দর আর কত সুন্দর লাগাতে চাস?”
নুর বলল ,”এমনি সুন্দর আর আজকের সুন্দরের পার্থক্য আছে ।দেখো আজকে আমাকে আলাদা সুন্দর লাগছে কিনা?”

রিমা বলল ,”আলাদা আবার কিভাবে সুন্দর লাগে ?সুন্দরকে সুন্দরী লাগছে আলাদা কিভাবে সুন্দর লাগে আবার?”
বলতে বলতে এগিয়ে গেল সাবা আপুর কাছে। নূর ও রিমা এগিয়ে এলো ।সাবা ওদের দেখে সাথে সাথেই নুরকে দেখে বলল ,”হাই প্রিটি কেমন আছো ?আর রিমা তোমার কি অবস্থা কেমন আছো?”
নুর একটু মুচকি হেসে বললে ,”ভালো আছি ।আপনি ভালো আছেন ?”
সাথে সাথে রিমা বলল ,”হ্যাঁ আপু ভালো আছি তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে।”
নূর চট করে তাকালো রিমার দিকে ।নূরের যেন মনটা ভেঙে গেল কই নূরকে তো সেঁধে সেধে বলল না তোকে ভীষণ সুন্দর লাগছে ?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু সাবা আপুকে বলল ।তার মানে সাবা আপুকে বেশি সুন্দর লাগছে ।নুর সাথে সাথে রিমার হাত ছেড়ে দিল।
রিমার হাত ছাড়তে নুর দেখলো সাবা আপু ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে সাইমন আর সাদাফ এর কাছে ।তাই নূর সাথে সাথে বড় বড় পা ফেলে গিয়ে সাদাফের হাত ধরে বসলো।
সাদাফ অবাক হয়ে গেল ।এভাবে সবার সামনে এমনকি বাড়িতে কোনদিনও হাত ধরেনি আজ সবার সামনে এসে সাদাফের হাত ধরল ।সাদাফ অবাক হয়ে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”কি হয়েছে হঠাৎ হাত ধরলি এসে কিছু লাগবে?”
সায়মন অবাক হয়ে গেল ।সাইমন ও আপন ভাই এখানে দাঁড়িয়ে আছে অথচ হাত ধরে ফেলল যেয়ে সাদাফের।
পরে ভাবলো সাদাফ ভাই তো ছোটবেলা থেকে ওকে সবসময় কোলে করে রাখত তাই সাদাফ ভাইয়ের নেওটা বেশি।

এটা ভাবতে ভাবতেই চোখ পড়ল রিমার দিকে দেখলো রিমার দিকে একটা ছেলে তাকিয়ে আছে বিপদ সংকেতের পেয়ে ওর সাথে সাথে রিমার দিকে হেঁটে গেল।
সাবা কাছে এসে দেখল নুর সাদাফের হাত ধরে আছে ।সাবা সাদাফের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কিছু একটা বুঝলো ।তারপর বলল ,”সাদাফ চলো ওইখানে সবার সাথে যেয়ে পরিচিত হই ।”
সাদাফ বললো ,”কোথায়?”
সাদাফ বলল ,”চলো ।”
যেই পা বাড়াবে হাতে টান অনুভব করলো ।দেখলো নূর হাত ধরে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সাদাফ বলল ,”কিছু বলবি ?কিছু লাগবে ?”
নুর বলল ,”আমি একা এখানে ভয় পাই ।”

সাদাফ বুঝতে পারছি কি ভয় পায় তার মহারানী।কিন্তু না বুঝার ভান করে বলল ,”তাহলে ঠিক আছে চল আমার সাথে চল ।আর হাত ছেড়ে হাট আমি তোর সাথেই আছি।”
নূর মনে মনে ভাবল আমি হাত ছেড়ে দেই আর অমনি সাবা ডাই*নীটা তোমার হাত ধরুক তাইনা ?কক্ষনো না ।
কিন্তু মুখে বলল ,”না না আমি হাত ছেড়ে হাঁটলে পড়ে যাব।”
সাদাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নূরের চোখের দিকে ।নূর তাকাল সাদাফের দিকে ।যেন আরেকটু তাকিয়ে থাকলে চো*র ধরা পড়ে যাবে তাই নূর চোখ ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
সাদাফ যা চাচ্ছে মনে মনে তাই হলো কিন্তু এমন মুখে একটি ভাব যেন কিছুই বুঝতে পারছে না সাদা নুর সাদাফের হাত ধরে রয়েছে সাদাব এইভাবেই বন্ধুদের সামনে এগিয়ে গেল বন্ধুরা সাদাসকে দেখেই একে অপরকে ইশারা করতে লাগলো দেখ বাচ্চা প্রেমিকাকে নিয়ে এসেছে সাদা।
শাহিন নামে এক বন্ধু বলে বসল ,”ইস এরকম পরি একটা বাচ্চা যদি আমার থাকতো কোলে পিঠে আমিও বড় করে মানুষ করে পরে বিয়ে করতাম।”

নয়ন বলল ,”সেই ভাগ্য আমাদের কোথায় বন্ধু ?আমাদের গার্লফ্রেন্ডরা তো মনে কর আমাদের বয়সী ।বউ হবে আমাদের থেকে ২-৩ বছরের ছোট এরকম ।এই ভাগ্য তো শুধু সাদাফের বাচ্চাটাকে কোলে করে বড় করে তারপর বিয়ে করছে চিন্তা কর।”
বলতেই সাদাফ নুর ও সাবা এগিয়ে এলো বন্ধুদের কাছে ।আসতেই বলল ,”কিরে বন্ধু কি অবস্থা ?কেমন আছিস ? এটা কে তোর সাথে ?পুরো পরীর মত লাগতাছে।”
নুর লজ্জা পেয়ে গেল পরী বলায় ।সাদাফের হাত আর একটু খা*মচে ধরে সাদাফের কাছাকাছি দাঁড়ালো ।সাদাফের হাত গিয়ে ঠেকলো নূরের বুকের কাছাকাছি যেভাবে হাতটাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।
বন্ধুরা চোখ দিয়ে ইশারা করছে ।সাদাফ ঘাড় চুলকে বললো ,”এটা হচ্ছে আমার চাচাতো বোন নাম নুর।”
নয়ন ও শাহিন বলে বসলো ,”ওওওও চাচাতো বোন ?নাম নূর ?নামের সাথে পুরাই জাস্টিস হয়েছে পুরাই নুরের মতো দেখতে নুরানি চেহারা।”

শাহিন বলল ,”তোমার বয়স কত এখন খুকি ?”
নূর সাথে সাথে বলল ,”আমি মোটেও খুকি না আর আমার বয়স ১৬ শেষ হয়ে যাবে সামনের বছর।”
নয়ন অবাক হয়ে তাকালো সাদাফের দিকে ।ওর কাশি উঠে গেল কাশতে কাশতে বলল ,”তার মানে তোমার এখন ১৬ হয়েছে তাই তো ?”
নূর হালকা করে মাথা ঝাঁকিয়ে বুঝালো হ্যাঁ।
নয়ন সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলল ,”মামা আমাকে একটু তাড়াতাড়ি পানি খাওয়া ।পানি দরকার ।আমার মনে হচ্ছে গলাটা শুকিয়ে গেছে।”
সাবা ওদের কান্ড দেখে হাসছে ।সাদাফ আর নুর ওরা আসার আগে ওদের নিয়ে কথা হচ্ছিল সবাই জানে মেয়েটা ছোট কিন্তু ১৬ বছর এটা কেউ জানে না ।সবাই এখন মনে মনে ভাবছে এই মেয়ের সাথে বিয়ের দিন বিড়াল মারবে কেমনে।

শাহিন নূরের দিকে তাকিয়ে বলে বসলো,” আচ্ছা নুর তুমি কি বিড়াল মারা বোঝ?”
“বুঝবো না কেন ?কিন্তু বিড়াল আমার খুব প্রিয় ।বিড়ালকে মারা আমার একদম পছন্দ নয় ।”উত্তর দিলো নুর।
সাথে সাথে সবাই নুরের উত্তর শুনে হেসে দিল। সাবা বলল ,”কি শুরু করেছিস তোরা ?থামবি ?”
সাদাফ বলল ,”এজন্যই আসতে চাইনি আর ওদেরও নিয়ে আসতে চাইনি ।তোরা জোর করে ছিলি বলে আসলাম।এখন থাম।”
“ওকে আমরা এখন থামবো কোন সমস্যা নেই ।কিন্তু মামা তুই বিড়াল মা*রবি কেমনে ?বিড়াল মা*রা তো পছন্দ করে না তোর ছোট্ট খুকি।” বললো নয়ন।
সাদাফ বুঝল এখানে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না ।নুরকে বলল ,”সাবার সাথে দুই মিনিট দাঁড়া আমি একটু আসছি ।”
নুর সাদাফের হাত আরো জোরে কষে জড়িয়ে ধরল ।সাদাফ বললো,”কি হলো ওয়াশরুমে যাব ওয়াশরুমে যাবি তুই ?”

নুর বলল ,”ওয়াশরুমে না যাই দরজা পর্যন্ত যাব আমার একা একা ভয় করে।”
সাদাফ বলল ,”তুই কি ছোট বাচ্চা ?এখানে দুই মিনিট দাড়া আমি যাব আর আসব।”
নুর বলল ,”আমি তো বাচ্চাই আর আমার এখানে একা একা ভয় করে আমি আপনাকে ছাড়া কোথাও থাকবো না।”
নুরের মনে মনে চিন্তা যদি সাদাফের হাত ছেড়ে দেয় আর সাবা আপুর সাথে যেয়ে কোন জায়গায় কথা বলে চুপচুপ করে সেজন্য নূর সাদাফকে ছাড়বে না
প্রয়োজনে ওয়াশরুমে দরজা পর্যন্ত নিয়ে যাব।
সাদাফ বলল ,”ও আচ্ছা আচ্ছা তুই তাহলে বাচ্চা না?তাহলে চল আজকে তোকে যেয়ে ফিডার খাওয়াবো।”
নয়ন বলল ,”এমন করছিস কেন ? যা না ওয়াশরুম পর্যন্ত নিয়ে যা।একটু ভালো করে ফিডার খাইয়ে আনিস বাবুটাকে।”

এদিকে সায়মন এসে দেখল রিমা একা দাঁড়িয়ে আছে ।রিমার সামনে এসে বলল ,”ছেলেটা কে ছিল ?”
রিমা এদিক ওদিক তাকালো। তাকিয়ে বলল ,”কোন ছেলেটা ?”
সাইমন বলল ,”আমাকে বোকা পেয়েছিস ?একটা ছেলে তোকে দেখে হাসছিল।”
রিমা বলল ,”আমাকে দেখে হাসছিল ।আমি তো হাসছিলাম না ।আর কেউ আমাকে থেকে হাসলে এটা আমার কি দোষ?”
সাইমন আর একটু কাছে এসে বলল ,”দেখ রিমা তোর সাথে কিন্তু আমার শান্তি চুক্তি হয়েছে ।তুই কিন্তু কারো সাথে হেসে হেসে কথা বলতে পারবি না ।না হলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
রিমা অবাক হয়ে তাকালো সাইমনের দিকে ।কোন কথা কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে আর কোন ছেলে ওকে দেখে হাসলো ? কিছুই জানে না রিমা।

এদিকে এত কিছুর পরও নূর হাত ধরে রয়েছে সাদাফের ।নুর আজ ঠিক করে রেখেছে সাদাবকে এক মুহূর্তের জন্য একা ছাড়বে না ।সাদাফ তাকালো বন্ধু দের দিকে।
নয়ন সাদাফের কানে কানে বলে বসল ,” যা না বাবুটাকে কোলে করে নিয়ে ওয়াশরুমে যা।ফিডার খাবে তোর বাবু। ভালো করে খাওয়া।নাহলে বাসর রাতে বিড়াল মা*রতে পারবি না।আর তুই খেলাধুলা না করতে পারলে আমি যে তোর বউকে গিফট করবো ভেবে রাখছি সেই প্লান এর উপর এক বালতি পানি পড়ে যাবে।”

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৩৯

সাদাফ বিরক্ত হয়ে তাকালো নয়নের দিকে ।তারপর বললো ,”থামবি তুই ?আমি আছি আমার জ্বালায় ।”
মনে মনে ভাবতে লাগলো ,”হ্যাঁ তুই ওসব গিফট কর আর এই পা*গলিটা যেয়ে বাড়ি শুদ্ধ মানুষকে দেখিয়ে বেড়াক দেখো দেখো আমাকে বিয়ের উপহার দিয়েছে সাদাফ ভাইয়ের বন্ধুরা।”

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here