সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫
neelarahman
সাদাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে ।এখনো মনে পড়ে যেদিন নূরের প্রথম জন্ম হয়েছিল সাদাফের বয়স ছিল ১০ কি ১১ বছর।
হসপিটালে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় বসে আছে সবাই ।সামিহা বেগমের অবস্থা বেশি ভালো নয় ।মোটামুটি সময়ের আগেই লেবার পেইন উঠে গিয়েছিল ।সবাই হসপিটালে বসে আছে ।
সাদাফের তখনও বুঝতে কোন টেনশন নেই কি হবে কি হবে না শুধু এতোটুকু জানে একটি ছোট বাবু আসবে চাচির ঘরে।
ওটি রুমে ঢুকানোর ঠিক আধা ঘন্টা পরে ডক্টর এসে জানালেন সামিহা বেগম ভালো আছে বাবু ও ভালো আছে । নীলা রহমান
ফজলুর রহমান সাথে সাথে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ডক্টর আমার ছেলে হয়েছে নাকি মেয়ে হয়েছে ?
কারণ ফজলুর রহমানের একটি মেয়ের খুব সখ ছেলে তো তার আছেই।ফজলুর রহমান বলল ,”আপনার চাঁদের মত একটা রাজকন্যা হয়েছে।”
বলেই ডক্টর চলে গেল ।সাথে সাথেই ওটি রুমের ভিতরে থেকে বের হয়ে এলো দুজন নার্স ।একজনের কোলে ছোট্ট রাজকন্যা।
সবার আগে কোলে নিলেন ফজলুর রহমান ।কোলে নিয়ে দেখলেন আসলে চাঁদের মত একটা পরী এসেছে তার ঘরে ।যেন যেখানেই যাবে ঘর একদম আলোকিত করে ফেলবে ঠিক এতটাই মায়াবী ছোট্ট মুখখানি।
সাদাফ দৌড়ে এসে চাচ্চুর কাছে বায়না ধরল রাজকন্যাকে ওর কোলে দিতে ।ও আগে কোলে নেবে তারপর বাকি সবাই ।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সবাই বলল আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ।নও রিন আফরোজ বলল ,”ঠিক আছে বাবা তুই আগে কোলে নে ।তারপর আমরা নিচ্ছি ।কোন সমস্যা নেই ।”
পাশে দাঁড়িয়ে আছে সাইমন ।রিমা হুমায়ুন রহমানের কোলে।
কাউকে রাজকন্যাকে দেখতে দিবে না সাদাফ।ফজলুর রহমান ভাতিজাকে খুবই স্নেহ করেন ভালবাসেন তাই ওর কথা ফেললেন না ।সুন্দর সযত্নে তুলে দিলেন সাদাফের কোলে।
সাদাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নূরের দিকে।
তারপর বলল ,”এই রাজকন্যা কিন্তু আমার ছোট আব্বু ।এই রাজকন্যা আর কাউকে দিতে পারবে না ।এই রাজকন্যা শুধু আমার আমি ওর সাথে খেলব ।আমাকে ছাড়া অন্য কারো সাথে খেলতে পারবে না।
ও আমার ছোট্ট একটা পরী পুতুল ।আমাকে ছাড়া কিন্তু ওকে কাউকে দেবে না ।”
ফজলুর রহমান বলল ,”ঠিক আছে দিব না ।”
সাদাফ বললো,”না না ছোট আব্বু কথা দাও এ রাজকন্যাকে শুধু আমাকে দেবে আজকে থেকে কিন্তু এই রাজকন্যা আমার।”
ফজলুর রহমান সাদাফের মাথায় হাত রেখে বললেন ঠিক আছে আজ থেকে এ রাজকন্যা শুধু তোর ।কথা দিলাম এবার খুশি?”
সাদাফ খুশি হয়ে গেল ।সবার সামনে মুচকি হেসে সর্বপ্রথম নূরের কপালে একটি চুমু খেলো ।তারপর বলল ,”শুনলি তো আজকে থেকে কিন্তু তুই শুধু আমার ।ছোট আব্বু তোকে আমাকে লিখে দিয়েছে ।আজকে থেকে আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে তুই খেলতে পারবি না।”
নীলা রহমান
কথাটি মনে করেই মুচকি হাসলো সাদাফ।একদৃষ্টিতে হাঁটু ভেঙ্গে বসে এখনো তাকিয়ে আছে নূরের দিকে ।বাচ্চা মেয়েদের মত ঠোঁট ফুলিয়ে ঘুমাচ্ছে নুর ।
কত ভালোবাসে নূর কে কত ভালবাসা ওর জন্য ।নুর কি কখনো বুঝবে ?কবে বড় হবে পা*গলি মেয়েটা ?কেন বুঝেনা সাদাফ যা করে নূরের মনে ভালোবাসা সৃষ্টি করার জন্যই করে।
নুর যেন সাদাফ কে একটু আলাদা চোখে দেখে অন্যান্য সব কাজিনদের মত না দেখে সেজন্যই নূর এর উপরে জোর করে সব সময় ।নূরের সাথে এরকম করে কিন্তু নূরকেও প্রচন্ড ভালোবাসে ।এত ভালবাসে যে চিন্তা করতে পারবেনা।
নুর কি কখনো ওকে ভালবাসবে ?নিজের মনকে প্রশ্ন করল সাদাফ।তারপর উত্তর শুধু একটাই এলো ।নুর ভালোবাসুক আর না বাসুক নূরের প্রতি ওর ভালোবাসা এত একজনের ভালোবাসা দিয়ে এই একটি জীবন পার করে দেওয়া যাবে ।
নূরকে ও মাথায় তুলে রাখবে বুকে আগলে রাখবে কখনো কোনো কষ্ট পেতে দিবে না।
তারপর নূরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কানে কানে ফিসফিস করে বলল সাদাফ,”তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যা নূর প্লিজ।”
বলেই নূরের ফুলানো ঠোঁটে হালকা একটি আদরের পরশ এঁকে দিল সাদাফ।খুব ভালোবাসার সাথে যত্নের সাথে ।নূর যেন আরেকটু আরাম পেল ।ওম পেল ।দু হাত দিয়ে সাদাফের হাতটি জড়িয়ে ধরল নুর।
সাদাফ নুরের হাতে হাত রেখেই বসে রইল সারারাত নূরের শিয়রের পাশে ।বসে রইল নূর যখন হাত ছাড়বে তখন নূরের রুম থেকে বের হবে ।এভাবে নুরকে দেখতে দেখতে সাদাফ মাথা নুরের শিয়রের কাছে এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
কখন সকাল হলো সাদাফ বলতে পারেনা ।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ হতেই সাগাফ চোখ পিটপিট করে তাকালো ।দেখল বাবা হুমায়ুন রহমান সাদাফের সামনে দাঁড়িয়ে ।
সাদাফ চুপচাপ বাবার দিকে তাকিয়ে রইল ।এখনো নূর ওর হাত ধরে আছে ।
“রুমে যাও সারারাত ঠিকমতো ঘুমাতে পারোনি । যেয়ে একটু রেস্ট নাও সকালে অফিসে যেতে হবে।একটু পর উঠে যাবে নুর।”
বলেই হুমায়ূন রহমান নূরের রুম থেকে বের হয়ে গেলেন ।
নীলা রহমান
সাদাফ চুপচাপ নূরের হাতটি ছাড়িয়ে নিজেও রুমের দিকে পা বাড়ালো।
হুমায়ুন রহমান নিজের রুমে গিয়ে বসলেন ।চুপচাপ ভাবতে লাগলেন যেদিন ছেলেকে আমেরিকা পাঠাবে যেতে নারাজ ছিল সাদাফ।অনেকবার জিজ্ঞাসা করার পরও কারণ বলছিল না ।
পরে বাবার কাছে একদিন হঠাৎ করে আসলো এসে আবদার করলো ,”বাবা আমি আমেরিকা যাবো না ।আমার আমেরিকা যেতে ইচ্ছে করছে না ।”
হুমায়ূন রহমান বুঝতে পারলেন না কেন যাবেনা হায়ার এডুকেশনের জন্য সবকিছু ঠিক করে ফেলেছে কিন্তু ছেলে কেন যেতে চাইছে না ?
তাই জিজ্ঞেস করলেন,” কি হয়েছে আমাকে বল ।কোন সমস্যা থাকলে বল।”
সাদাফ সেদিন চুপ করে ছিল ।একটি কথাও বলেনি ।চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল ।হুমায়ুন রহমান ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল ,”যেয়ে লেখাপড়া শেষ করে আয় ।যার পিছুটান তোকে এখানে ধরে রেখেছে সে তোরই থাকবে।”
সাদাফ মাথা তুলে তাকালো বাবার দিকে ।হুমায়ুন রহমান আশ্বাস দিয়ে বললেন ,”যা তুই মুখ ফুটে বলতে পারছিস না ,আমি তোর বাবা আমি বুঝতে পারি ।যা তোর ছিল তোকে দেওয়া হয়েছে তোরই থাকবে।”
সাদাফ সেদিন প্রথম বাবার চোখে চোখ রেখে বলে ছিলো,” যাব তবে আমার একটি শর্ত আছে।”
হুমায়ুর রহমান হেসেছিলেন খুব ।পরে বললেন ,”ঠিক আছে সব শর্ত পূরণ করা হবে ।যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও ।”
সাদাফ উঠে চলে গিয়েছিল সেদিন ।হুমায়ূনুর রহমান চিন্তা করলেন সেদিনের কথা।
সেদিন যা করেছিল তা এখনো পর্যন্ত কেউ জানে না বা কেউ শুনেনি কিন্তু সবাইকে কিভাবে বলবে কিভাবে ফেস করবে ?কি কথা দিয়েছিল সাদাফ কে এটা নিয়ে চিন্তা করতে লাগলেন হুমায়ূন রহমান ।
যদিও ভাই ফজলুর রহমানের উপরে যথেষ্ট বিশ্বাস আছে তার মুখের উপর একটি কথাও বলবে না তারপরও মনে সংশয় কাজ করছে কারণ হুমায়ূন রহমান জানে সাদাফ কতটা ভালবাসে নূরকে ।
একটু এদিক সেদিক হলে যে ছেলেটা সহ্য করতে পারবে না পা*গল হয়ে যাবে তাই এত দুশ্চিন্তা কাজ করছে হুমায়ূন রহমানের মনে।
সাদাফ নিজের রুমে এসে আলমারি ড্রয়ার খুলে আবার সেই বক্সটি বের করল ।বক্সটি খুজে খুজে আরও একটি ছবি বের করল সাদাফ।
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪
ছবিটি দেখে সাদাফের মুখে আপনা আপনি একটি হাসি ফুটে উঠলো।
ছবিটি যে আর কারো নয় নুর এবং সাদাফের মুল্যবান একটি ছবি।
সাদাফ ছবিটিতে একটি চু*মু খেয়ে বুকে চেপে ধরে বলল ,”প্লিজ তাড়াতাড়ি বড় হ নুর। আমি এই দিনটির অপেক্ষায় কবে থেকে রয়েছি তাড়াতাড়ি বড় হ ।”