সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪৩+৪৪

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪৩+৪৪
neelarahman

নওরিন আফরোজ একটা শাড়ি দেখিয়ে সামিহা বেগম কে বললেন,”এটা আমার সাদাফের বউ কে দিবো।আমার ভিষন পছন্দের শাড়ী।”
সামিহা বেগম তাকিয়ে রইল শাড়ীর দিকে।তারপর হঠাৎ বলে বসলো,” নুর কে খুব মানাবে শাড়ী টায়।পরীর মত লাগবে।তাইনা ভাবি??”
নওরিন আফরোজ চট করে তাকালো সামিহা বেগমের দিকে।তারপর উচ্ছাসিত হয়ে বললো,”বলছিস? সত্যি বলছিস?মন থেকে বলছিস বল?”
সামিহা বেগম খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,”হ্যাঁ ভাবী।মন থেকে বলছি।তোমার সাদাফ কে আমাকে দিয়ে দাও।নুর তোমার আজ থেকে।”

নওরিন আফরোজ সামিহা বেগমকে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে বললেন ,”যা আমার ছেলে আজ থেকে তোর তোর মেয়ে আমার ।আমি আজকে ওকে শাড়িটি পরিয়ে দেখবে। এই শাড়িটি পড়ে নুর টুকটুক করে আমার সারা বাড়ি হেটে বেড়াবে আমার যে কি খুশি লাগছে?”
“আমার ও । আমার মেয়ের জামাইকে আমি সবসময় মনের মতো রেঁধে খাওয়াতে পারবো।উফ কি খুশি লাগছে!!” বললো সামিহা বেগম।
এদিকে নুরের ঠোঁট অস্বাভাবিক ফুলে গিয়েছে।রিমা বললো,” কি রে তোর ঠোটে কি হয়েছে? এতো ফুলে গেছে কেনো??”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নুর সাথে সাথেই হাত দিলে ঠোঁটে।
আমতা আমতা করে বললো,” পি*পড়া কা*মড়েছে?”
পিপড়া এতো জায়গা রেখে তোর ঠোঁটে কা*মড়েছে। ফা*জিল ম*শা।
সাদাফের সাথে সাথেই কাশি উঠে গেলো।সায়মন তারাতারি পানি এগিয়ে দিলো সাদাফ কে।
সাবা এসে বললো,”কি হয়েছে?? কাশছো কেনো এতো?”
সাদাফ বললো,” কই নাতো ? এমনি।”

নুর ফোলা ঠোঁট নিয়ে তাকালো সাদাফের দিকে।সাদাফ জানে নুর এখন রাগ করবে।ফুলে থাকবে।মনে মনে ভাবলো আর কয়টা দিন নুর।সাহস করে একবার আমাকে চেয়ে দেখ আমি সব দিয়ে দিবো তোকে।
বাসায় পৌছাতে পৌঁছাতে রাত ১১ টা বেজে গেল অনেক চারজনের।
সবাই ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছিলো আর গল্প করছিল।
ওদের দেখে সামিহা বেগম বললো,” কি রে কেমন মজা করলি??”
রিমা বললো,” খুব ভালো লেগেছে ছোট আম্মু।এখন ভিষন টায়ার্ড।ঘুমাবো।” বলেই উপরে চলে গেলো রিমা।নুরকে দেখে নওরিন আফরোজ বললো,” কি রে ঠোঁটে কি হয়েছে?”নীলা রহমান
সায়মন বললো,” পি*পড়া কা*মড় দিয়েছে বড় আম্মু।”

সাদাফ বুঝতে পারছে কি ভুলটা ই না করেছে।ওই মুহুর্তে এসব ভাবে নি সাদাফ।
হুমায়ূন রহমান সাদাফের দিকে তাকালো।তাকিয়ে বললো,” সাদাফ একটু উপরে আসো।কথা আছে।”
সাদাফ জানে কি বলবে হুমায়ূন রহমান। দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো সাদাফ।তারপর বললো,” চলো।” বলেই সাদাফ উপরে নিজের রুমের দিকে গেলো।

সাদাফ রুমের দরজা লাগিয়ে বাবার সাথে মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো ।হুমায়ুন রহমান বলল ,”তুই করেছিস এটা না?”
সাদাফ বাবার দিকে তাকিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলল ,”কি করেছি আমি?”
“দেখ নুর কিন্তু অনেক ছোট ও কিন্তু এসব কিছুই বুঝেনা ।শুধু শুধু তুই ওর সাথে এখন এরকম করবি না ওকে সময় দিবি। প্রমিজ করেছিলি আমাকে মনে নেই?”বললো হুমায়ূন রহমান
সাদাফ হুমায়ন রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল ,”প্রমিস করেছি প্রমিস রক্ষা করেছি ।বছরে পর বছর বিদেশে ছিলাম এখন বাংলাদেশে এসেছি। আর তুমি যা বলছ সেগুলো আমি কিছুই করি না
তোমার ছোট্ট মেয়ে যা করার আমার সাথে করে ।আমি তো নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি বিশ্বাস না হলে প্রমাণ দেখো ।”

বলেই সাথে সাথে এই শার্টের কলারটা একটু সরিয়ে হুমায়ূন রহমানের সামনে ধরলো ।হুমায়ন রহমান থতমত খেয়ে গেলেন খা*মচির দাগ গুলো দেখে।”
তারপর হালকা কেশে কোনমতে বলল ,”কতটুক ট*র্চার করেছিস তুই মেয়েটাকে ?মেয়েটা তোর হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য এরকম এলোপা*তাড়ি তোকে খা*মচেছে?”
“আ*হত হলাম আমি আর দো*ষ টাও আমার।তোমার ছোট ভাতিজি অন্য ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলে তাই ওকে শা*স্তি দেওয়া দরকার ছিল।”বললো সাদাফ।
“কি বললি ?ও ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলে ?তো মানুষের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে না তো কি কেঁদে কেঁদে কথা বলবে?”বললো হুমায়ূন রহমান।

“তোমার ভাতিজিকে বড় হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে ।কিন্তু বড় হয়ে অন্য ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলবে এটা আমার মোটেও বরদাস্ত না এটা আমি মোটেও সহ্য করবো না।”বললো সাদাফ।
“কি বড় হয়েছে মাত্রই তো ষোল শেষ হলো মেয়েটার তোর ছোট বোনের থেকেও এক বছরে ছোট কি এমন বড় হয়ে গিয়েছে? স্বামী সংসার এগুলো কিছু বুঝে ওর মাথায় এগুলো কিছু আছে?”বললো হুমায়ূন রহমান।
সাদাফ বলল ,”কোন মেয়েই বিয়ের আগে বিয়ে সংসার স্বামী এগুলো কিছু বুঝে না ।আমার মাকে যখন বিয়ে করেছিলে কে শিখিয়ে পরিয়ে দিয়েছিলো আমার মা কে।তোমার কাছে বিয়ে হয়েছে সবকিছু শিখেছে তখন তো ছাড় দাওনি এক ফোঁটাও।

নাকি বলেছিলে ছোট তাই কিছু করবো না ।যদি ছাড় দিতে তাহলে তো ১৮ বছর পুর্ন হওয়ার আগে আমি মায়ের কোলে আসতাম না।”
“বে*য়াদব ছেলে বাবা হই তোমার ।নিজের বাবা-মায়ের সম্পর্কে এরকম কথা বলতে ল*জ্জা করে না ?আর তাছাড়া সেই সময় যুগ আলাদা ছিল সেই সময় আর এই সময় এক না।”বললো হুমায়ূন রহমান।
“ও আমার মা ছোট থাকলে সব কিছু করা যায় আর তোমার মেয়ে ছোট বলে তাকে ফুলের টোকাও দেওয়া যাবে না? ভুলে যেওনা এ বয়সে আমি আমার মায়ের পেটে ছিলাম।”বললো সাদাফ।

হুমায়ুন রহমান অবাক হয়ে গেল ছেলের কথা শুনে ।তারপর বলল ,”তুই আসলে চাচ্ছিস কি বলতো আমাকে?”
“আমার মায়ের বয়সের হিসেব করলে নুর যথেষ্ট বড় হয়েছে।সে হিসাবে তোমার ভাতিজিকে একটু আকটু টোকা দাওয়াই যায়। অনেক ছাড় পেয়েছে তোমার ভাতিজি আর না।এক মাস সময় দিয়েছি তার মধ্যে প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গিয়েছে বাকি ২৩ দিন।২৩ দিনের মধ্যে তোমার ভাতিজি এসে তোমাদেরকে বলবে আমাকে বিয়ে করতে চায় আর ঠিক তখনই সাথে সাথে বিয়ে ফাইনাল করে ফেলবে।”বললো সাদাফ।
“নূর ছোট এই মুহূর্তে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে সম্ভব নয় তুই বুঝতে পারছিস না কেন ?অ্যাট লিস্ট ১৮ বছর পূর্ণ হোক।তোর ছোট আব্বু যদি বিয়েতে রাজি না হয় তখন? আমি ওর সাথে কথা বলছি ওকে বুঝাবো সময় দে এর মধ্যে নূর বড় হতে থাকুক।”বললো হুমায়ূন রহমান।

সাদাফ মুচকি হাসলো ।হেসে বলল ,”দিলাম তো সময় ২৩ দিন পাবে এখনো বিয়ের কথাবার্তা ফাইনাল করার জন্য ।আর ঠিক নয় মাস পর তোমার কোলে ছোট্ট একটা নাতি আসবে সেটার জন্য ।এটাই আমার ফাইনাল কথা ।ফাইনাল দেয়া সময় এখন
তুমি ডিসাইড করো বিয়ের আগে নাতি কোলে নিবা নাকি বিয়ের পরে। যেভাবে তোমার ছোট ভাতিজি আমাকে বারবার উ*স্কানি দেয় কবে আমি নিজের নি*য়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবো আমি নিজেও বলতে পারি না।”
হুমায়ূন রহমান বোকা হয়ে গেল ছেলের কথা শুনে ।কি উত্তর দেবে এই ছেলেকে ?ছেলেটা দিন দিন যা হচ্ছে !
পরে দাঁত কি*ড়মিরিয়ে বললো এই তোর ল*জ্জা করেনা কি এমন বয়স হয়েছে তোর বিয়ের জন্য এখন এরকম করছিস?

“লজ্জা তো তোমার হওয়া উচিত বাবা ।ছেলে বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে বারবার বিয়ের কথা বলছে অথচ তুমি এদিকে কোন খেয়ালই করছো না। কেমন পুরুষ মানুষ তুমি একজন পুরুষ মানুষের চা*হিদা তুমি বুঝনা? নিজে তো এই বয়সেও বউ নিয়ে ঘুমাও।ছেলের যে বউ লাগবে বারবার বলতেছে সেই খেয়াল আছে?ছেলে যে রাতে এদিক ওদিক গো*ত্তা মারে দেখেও চোখ বন্ধ করে থাকো দোষটা তো তোমার হচ্ছে।
আর তোমার ছোট ভাতিজি আমাকে বারবার উস*কায় বারবার আমার রুমে আসে। এটাতো কপাল ভালো আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখি কিন্তু ২৩ দিন সময় দিয়েছি ২৩ দিন পড়ে আর নিজেকে নিয়*ন্ত্রণ করে রাখবো না।”
বলল সাদাফ।
হুমায়ূন রহমান ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”তুই কি নিজের বাবাকে ব্ল্যা*কমেইল করছিস ?”
সাদাফ বলল ,”ব্ল্যা*কমেইলের কিছু নেই যা সত্যি তাই বললাম ।না হলে নয় মাস পর রেডি থেকো নাতি কেলে নিয়ে ঘুরবে ঠিকই হয় বিয়ের আগে না হলে বিয়ের পরে।”
হুমায়ূন রহমান তাজ্জব বনে গেলেন ।মনে মনে ভ*য় পেলেন জানেন এই ছেলে যা বলছে ঠিকই তা প্রমাণ করেই ছাড়বে কা*জে-কর্মে ।এখন কি করবে ভাইয়ের সাথে কিভাবে কথা বলবে এটা নিয়েই উনি মনে মনে দ্বিধায় পড়ে গেলেন।

এদিকে নূর রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ঠোটে আঙ্গুল দিয়ে দেখতে লাগলেন ঠোঁটের ক্ষ*তটা।
সাথে সাথে মনে পড়ে গেল পার্টির সে দৃশ্যটা ।যখন সাদাফ ওকে চু*মু খাচ্ছিল।
এতো ব্যথা এত য*ন্ত্রণার মধ্যেও নূরের মনে সুখ সুখ লাগছিল কেন নূর ঠোঁটে হাত দিয়েই আয়নার দিকে তাকিয়ে ভাবতে লাগলো।
সাথে সাথে ল*জ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল নুর ।চোখ বন্ধ করে যেন দৃশ্যটি আরো স্পষ্টভাবে নূরের চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪২

সাথে সাথে ভেসে উঠলো নুর সাদাফের শার্টের কলার খামচে ধরতে গিয়ে সাদাফের গলাতে ও আঁচড় কে*টেছিল ।সাদাফের গলা জলছিল র*ক্ত বের হয়েছিল বোধ হয়।
নুর সাথে সাথে আলমারির কাছে দৌড়ে গিয়ে আলমারি খুলে মলমটা বের করল ।এটা সাদাফের রুম থেকে নিয়েছিল ।গতবার সাদাফ বলেছিল ব্যথা হলে মলমটা নিয়ে লা*গাতে ।নূর তখন ওর রুমে নিয়ে এসেছিল মলমটা।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৪৫

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here