সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬
neelarahman

সকাল সকাল রেডি হয়ে অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি হলো সাদাফ ।উপর থেকে দেখল নামছে নুর।
একেবারেই স্কুল যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নামছে ।দুই সাইডে দুই বেনি ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে নামছে নুর।সাদা স্কুল ড্রেস ক্রস বেল্ট স্কার্ফ সুন্দর করে বেধেছে কিনা আড় চোখে খেয়াল করল সাদাফ।
সাদাফ জুতা পরিষ্কার করার বাহানায় দরজায় বসেই আস্তে আস্তে জুতা মুছতে লাগলো কারণ জানে কেউ না কেউ এসেই বলবে নূরকে স্কুলে নিয়ে যেতে। নীলা রহমান
তাহলে আর সাদাফ কে নিজে থেকে বলতে হবে না তাই চুপচাপ জুতা পরিষ্কার করতে লাগলো ।

যা ভেবেছে ঠিক তাই হলো। নওরিন আফরোজ এসে বলল ,”সাদাফ অফিসে যাচ্ছিস যাওয়ার সময় নুরকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যা না বাবা।”
সাদাফ বলল ,”আমার তো দেরি হয়ে যাবে আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসতে বল নাস্তা প্যাক করে দাও ।গাড়িতে বসে বসে খাবে।”
তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”টিফিন বক্স নিয়ে তাড়াতাড়ি গাড়ির সামনে আয় আমি পার্কিংয়ে আছি।”
নুর বলল ,”থাক না আমি না হয় রিক্সা করেই চলে যাব বড় আমমু।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“খবরদার রিকশা করে যাওয়ার নাম নিবি না ।সাদাফ প্রতিদিন এই সময় অফিস যায় তাহলে তুই ওর সাথে এই সময় চলে যাবি ।প্রয়োজন পড়লে দশ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠবি ।যাতে একসাথে নাস্তা করে যেতে পারিস।
মেয়ে মানুষ এত ঘুমালে চলে ?সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠবে শরীর ভালো থাকবে ।ক্ষুধা লাগবে সকাল সকাল সুন্দর করে খাওয়া দাওয়া করবি ।দিনটি ভালো যাবে ।খেতেই চাস না ।দেখ তো কি হয়েছিস হা‘‘ড্ডি সার।”
টিফিন বক্স প্যাক করতে করতে কথাগুলো বলল নওরিন আফরোজ ।
নুর চুপ করে থাকাই ভালো মনে করলো ।এখন কথা বললে আরো না জানি কত খা‘রাপ খা‘রাপ গুণের কথা শুনতে হবে বড় আম্মুর কাছ থেকে ।সাথে যদি যোগ হয় মা তাহলে তার স্কুলে যাওয়া হবে না। নীলা রহমান লেখিকা। সাদাফ গাড়ি বের করে গাড়ির সামনে অপেক্ষা করছে ।দেখল টিফিন বক্স ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে নূর গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো ।সাদাফ বলল ,”গাড়িতে ওঠ।”

কেন যেন এখন আর সাদাফের দিকে চোখে চোখ রেখে তাকাতে পারে না নুর ।কেমন যেন ভিতরে অস্বস্তি হয় ।তাই নূর অন্য দিকে তাকিয়ে রইল ।গাড়িতে বসেও সাদাফের দিকে একবারও ঘুরে তাকালো না।
সাদাফ খেয়াল করছে সব ।নুর এখন আর ওর দিকে তাকায় না আগের মত ।অত ভয়ও পায়না তবে ওকে এভয়েড করে ।তাকায় না চোখের দিকে।সাদাফ জানে কি চলছে নূরের মনে ।
হয়তো কোন প্রশ্ন আছে নুরের মনে কিন্তু জিজ্ঞেস করতে পারেনা ।ছোটবেলা থেকে দেখে আসছে মনে কোন প্রশ্ন থাকলে এভাবে এদিক ওদিক তাকায়। নীলা রহমান
সাদাব কোনো ভুমিকা না করে বলল ,”কি জিজ্ঞেস করবি করে ফেল এভাবে চোখ দুটা বলের মতো এদিক ওদিক ঘুরিয়ে ।অল্পতেই কানা হয়ে যাবি।”

নূর চট করে তাকালো সাদাফের দিকে ।তারপর বলল ,”আপনি কিভাবে বুঝলেন আমার মনে কোন প্রশ্ন আছে?”
“ছোট থেকে কোলে করে নিয়ে বড় করেছি ।আমি বুঝবো না তো কে বুঝবে ?বলে ফেল মনে কি প্রশ্ন আছে।”বললো সাদাফ।
নুর চট করে জিজ্ঞেস করে ফেলল আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন ?
কথাটি শুনেই সাথে সাথে সাদাফ গাড়ি ব্রেক করলো ।ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো নূরের দিকে ।কিছুক্ষণ এভাবে তাকিয়ে রইল তারপর হালকা মুচকি এসে বলল ,”তুই ভালোবাসা কি বুঝিস?”
নূর বলল ,”বুঝি সব কিছু বুঝি ।আমার বান্ধবী প্রেম করে ।আর আমি টিভিতে নাটকে সিনেমায় ও দেখেছি ভালোবাসা কেমন হয় ।আমাকে তো একটা ছেলে ভালোবাসি ও বলেছে।”

সাদাফ অবাক হল ।এটাতে অবাক হলো না যে ওর বান্ধবী প্রেম করে বা টিভি সিনেমায় দেখে ।কারন এসব সাদাফ সব জানে।কিন্তু নূরকে কেউ ভালোবাসি বলেছে এটা এখনো পর্যন্ত সাদাফের কানে কি করে এলো না ?এত বড় একটা তথ্য কিভাবে সাদাফ না শুনে থাকলো।
মাথা ঠান্ডা রেখে চুপচাপ শান্ত দৃষ্টিতে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”তাই ?ভালোবাসি বলেছে ?কে বলেছে শুনি?”
নুর সরল মনে বলল ,”ক্লাস টেনের একটা বড় ভাইয়া বলেছে ।অনেক হ্যান্ডসাম অনেক সুন্দর ।সব মেয়েরা ওর জন্য পাগল কিন্তু ও আমাকে ভালোবাসে বলেছে।”
সাদাফের চোয়াল শক্ত হলো। ধীরে ধীরে সাদাফের চেহারার রং পাল্টাতে শুরু করলো। চেহারার কাঠিন্য ভাব বজায় রেখে জিজ্ঞেস করল ,”নাম কি সেই ছেলের ?আর খুব হ্যান্ডসাম?”
নূর সরল মনে বলল,” হ্যাঁ অনেক হ্যান্ডসাম ।নাম হচ্ছে আসিফ। আমাদের স্কুলেই পড়ে ক্লাস টেনে ।সাইন্সের স্টুডেন্ট।”

“আমি বেশি হ্যান্ডসাম নাকি আসিফ বেশি হ্যান্ডসাম ?ভালো করে দেখে বলতো ?”চেহারা কাঠিন্য ভাব বজায় রেখেই জানতে চাইলো সাদাফ। নীলা রহমান
“নুর ভালো করেই উত্তর জানে কিন্তু এখন এই উত্তর কিভাবে দিবে মুখের উপরে ?নূরের যে ল*জ্জাও করে ভয় লাগে কি করে বলবে যে আপনি সবচাইতে বেশি হ্যান্ডসাম !আসিফ আপনার কাছে কিছুই না !
কিন্তু এই কথাটি সাদাফের সামনে স্বীকার করতে রাজি নয় নুর ।কেন স্বীকার করবে ?নূরের কি ঠেকা লেগেছে ওনাকে হ্যান্ডসাম বলার ?উনি তো নুরকে পছন্দ করেনা কিছুই বলেনা!”মনে মনে ভাবলো নুর।
সাদাফ আর একবারও নুরের দিকে তাকালো না ।রা*গ হলো খুব সাদাফের ।গাড়ি স্টার্ট করলো ।তাড়াতাড়ি ওকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে অফিসে যেতে হবে ।পাঁচ মিনিটের মধ্যে স্কুলে পৌঁছে গেল সাদাফ।কোন কথা বলছে না ।নুর একবার আড় চোখে তাকালো সাদাফের দিকে ।তারপর নূর গাড়ির দরজা খুলে চুপচাপ নেমে গেল।

সাদাফ কোন কথা না বলেই গাড়ি স্টার্ট দিল ।পিছনে ফিরে তাকালো না ।নূর দাঁড়িয়ে সাদাফের যাওয়া দেখল ।নূর যদি দেখতে পেত গাড়ির ভিতরে লুকিং গ্লাসে পিছনের দিকেই দেখছে নুরকে দুটি চাতক পাখির মতো চোখ ।নূর কখনো সেই চোখের ভাষা বুঝলো না। নীলা রহমান লেখিকা।
অফিসে ঢুকেই সাদাফ পিএ কে ডাকলো।বললো,” একাউনটস ডিপার্টমেন্ট এ মিটিং কল করেন। শার্প ১০ টায়।আর আমাকে এক মগ কফি পাঠিয়ে দিন।” বলেই টেবিলের ড্রয়ার খুলে ফটো ফ্রেমটি বের করল সাদা তারপর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন।
তারপর মুচকি মুচকি হেসে বলল ,”পাখি আকাশে যতই উড়ো ঘুরে ফিরে তোমাকে আমার মনের খাচাতেই আর আবদ্ধ হতে হবে ।আমাকে ভালবাসতে হবে ।এত ভালবাসতে হবে যে নিজের অস্তিত্ব আর খুঁজে পাবে না ।আমাতেই বিলীন হয়ে যেতে হবে।”

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫

ছবিটি আবার বুকের সাথে চে*পে ধরে চোখ বন্ধ করে অতীতের কিছু সুখময় স্মৃতি ভাবতে লাগলো সাদাফ ।একদিন হঠাৎ যখন নুরের আট বছর বয়স পড়ে গিয়ে হাত পা ছু*লে গিয়েছিল নুরের।বাসায় দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল সাদাত সাদাত আমার চুলে গেছে। র*ত্ত।দেখে কতো র*ত্ত।”নীলা রহমান
সাদাফ সাথে সাথে নূর কে কোলে তুলে নিয়েছিল ।কোলে নিয়ে কোলে বসিয়ে সেদিন স্যাভলন দিয়ে ঘা পরিস্কার করে মলম লা*গিয়ে দিয়েছিল ।নূর সাদাফের গলা জড়িয়ে ধরে খুব কেঁদেছিল সেদিন। কাঁদতে কাঁদতে সাদাফের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছিল নুর।সাদাফ ওকে বুকে নিয়ে বসে ছিল যতক্ষণ ওর ঘুম না ভা*ঙ্গে।
হঠাৎ দরজার নক করা শব্দে চোখ খুলল সাদাফ।দেখলো তার পি এ কফির মগ নিয়ে এসে হাজির হয়েছে।
সাদাফ সযত্নে ফটো ফ্রেমটি আবার ভিতরে ঢুকিয়ে লক করে রাখল।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here