সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৯

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৯
neelarahman

সকাল সকাল নাস্তার টেবিলে নাস্তা খেতে বসেছে দুই ভাই ।সাথে রিমা ও সায়মন ।সাইমন টেবিলের নিচ দিয়েই পায়ে খোঁচাচ্ছে রিমাকে ।রিমা কয়েক বার থামানোর চেষ্টা করেছে।সায়মন কোনোভাবেই থামছে না বাধ্য হয়ে রিমা জোরে একটি লাথি বসিয়ে দিল সায়মন কে।

সায়মন আহ করে চিৎকার করে উঠতেই হুমায়ূন রহমান সাথে সাথে বলল ,”কি হয়েছে পা*গল কতক্ষণ ধরে দেখছি কেমন নড়াচাড়া করছিস আর চিৎকার করলি কেন?
সাইমন পায়ে ডলতে ডলতে বলল ,”না বড় আব্বু চেয়ারে লেগে একটু পায়ে ব্যথা পেয়েছিলাম তো তাই ।”
ফজলুর রহমান বলল ,”ভদ্রভাবে বস বা*দর এমনি তো বা*দর হয়েছিস খাওয়ার সময় একটু সুস্থ থাকতে পারিস না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রিমা মুচকি হাসলো।সায়মন মনে মনে বললো,” তোকে একা পেয়ে নেই।তারপর দেখবো হাসি কই থাকে?”
ফজলুর রহমান গলার স্বর উঁচু করে চেঁচিয়ে বলল,” কই তোমাদের হল ?আজ নাস্তা এত দেরি হচ্ছে কেন ?নাকি বাড়িতে একটি লোক নেই দেখে তোমাদের রান্নাবান্নার কোন আয়োজন নেই?”
নওরিন আফরোজ বলল ,”একটু শান্ত হয়ে বসো না দিচ্ছি তো ।”

সামিহা বেগম বলল ,”দেখছেন পেটের মধ্যে নিশ্চয়ই ই*দুর দৌড়াচ্ছে ক্ষুধা পেলে এরকম করে ।সারারাত ঘুমাতে পারিনি এজন্য সকাল সকাল ক্ষুধা পেয়ে গেছে ।আমরা কিন্তু সময় মতোই কাজ করছি?”
নওরিন আফরোজ সামিহা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”কি নিয়ে টেনশন করছে ?কয়েকটা দিন ধরেই দেখি বসে থেকে ঝিমায় কিছু একটা ভাবে ।তোর সাথে কিছু শেয়ার করেছে বলে কিছু তোকে?”
সামিহা বেগম বলল ,”না ভাবি তিন দিন চার দিন আগে একটু কথা হয়েছিল এরপর তো আর কিছু শেয়ার করেনি ।তবে বুঝতে পারি রাত অব্দি শুধু এপাশ ওপাশ করে ঘুমায় না কিছু একটা ভাবে।
আমার মনে হয় অফিসের কোন ঝামেলা হতে পারে ।ভাইজান অবশ্যই জানে ভাইজানকে একটু জিজ্ঞেস করে দেখবে?”

“আচ্ছা এখন কথা বলা যাবে না ।সন্ধ্যায় বাড়িতে আসলে তবে কথা বলবো।এখন তাড়াতাড়ি নাস্তা দে না হলে আমার জন্য ও চিৎকার করে উঠবে।”
বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে ফজলুর রহমান । হুমায়ূন রহমান বিরক্ত হয়ে ফজলুরের দিকে তাকিয়ে বললেন ,”এমন করছিস কেন ?খুব তো দেরি হয়ে যায়নি ।দুই ভাই তো একসাথে অফিস যাব ।প্রতিদিন তো এরকম সময় নাস্তা দেয় ।”
ফজলুর রহমান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল ,”কিছু না ভাইজান এমনি।”নীলা রহমান
ফজলুর রহমানের আসলে অন্য চিন্তা হচ্ছে যার জন্য এভাবে নাস্তার জন্য তারা দিচ্ছে। বেশি টেনশন হলে সেই চাপ ফজলুর রহমান নিতে পারেনা।

হুমায়ূন রহমান ভালো করে জানে ফজলুরে এটা ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস ।কোন কিছু নিয়ে চিন্তা করলে আশেপাশের সবকিছু নিয়েই তোড়জোড় দেখায় আসলে ঘটনা থাকে অন্যরকম।
হুমায়ূন রহমান জানে গতকাল অফিসের ব্যাপার নিয়ে হয়তো কোনো না কোনোভাবে চিন্তিত রয়েছে কিন্তু এতক্ষণে তো উত্তর পেয়ে যাওয়ার কথা ।তবে কি অন্য কিছু ভাবছে ফজলুর রহমান ?”অবশ্যই ফজলুলের সাথে কথা বলতে হবে মনে মনে ভাবল হুমায়ন রহমান ।অফিসে যেয়ে আজকেই কথা বলবে।”
এদিকে সাদাফ নিজেই ফ্যাক্টরি ভিজিটে এসেছিল ।সেখানে এসে ছোট্ট একটি দুর্ঘটনার স্বীকার হয়েছে সকাল বেলা যা এখনও কারো সাথে শেয়ার করেনি সাদাফ।ব্যথা হাতে আবারো ব্যথা পেয়েছে। ফ্যাক্টরি মেশিন চলাকালীন অবস্থায় মেশিন থেকে ছোট্ট একটি লোহার টুকরা এসে ওর ব্যথা হাতে আবার এসে এমন ভাবে লেগেছে ব্যান্ডেজ করা অবস্থা ও পুরো হাত আবার র*ক্তে ভিজে গিয়েছে ।

ফ্যাক্টরির কর্মচারী কর্মকর্তারা সাদাফকে তাড়াহুড়া করে হসপিটালে নিয়ে এসেছে।এখন হসপিটালে ডক্টরের সামনে বসে আছে সাদাফ।হাত ড্রেসিং করে আবার ব্যান্ডেজ করাতে হবে ।ডক্টর ব্যান্ডেজ খুলে সাদাফের দিকে তাকালো ।বলল ,”আপনার হাত তো আগেও আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে সেটা তো এখনো শুকায়নি তার উপর আবার নতুন করে আঘাতপ্রাপ্ত হলেন ।সময় নিবে মিস্টার সাদাফ ভালো হতে।”
সাদাফের মুখ যেন ব্যথায় নীল হয়ে যাচ্ছে ।তারপরও মুখে মেকি হেসে রেখে বলল ,”সমস্যা নেই আমাকে কি কি করতে হবে বলুন?”

তেমন কিছুই নয় পর্যাপ্ত পরিমাণে রেস্ট নিবেন হাত ভেজানো যাবে না ।ব্যান্ডেজ ভেজা থাকলে বা স্যাতসেতে থাকলে হাত শুকাবে না ।ওষুধ নিয়মিত খেতে হবে এবং এই হাতে আবার আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া যাবে না ।একবার আঘাত পেয়েছেন এটা শুকাতে যতোটা সময় নিত দ্বিতীয়বার আঘাত পাওয়ার কারণে ঘা অন্যরকম হয়ে গিয়েছে।”

ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করা শেষ হয়ে গেলে সাদাফ উঠে দাঁড়ালেন । ডক্টরের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ক্যাবিন থেকে বের হয়ে গেলো সাদাফ।বাকি আনুষ্ঠানিকতা সব ফ্যাক্টরির কর্মকর্তা পালন করলেন।
অফিসের সাদাফের কেবিনে বসে আছে হুমায়ুন রহমান অফিসের দরজা ঠেলে ঢুকলো ফজলুর রহমান হুমান জানতো ফজলুর ঠিকই আসবে কিছু কথা বলার জন্য।
মান রহমান ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম জানতাম তুই আসবি কথা বলতে।
ফজলুর রহমান মুচকি হাসলেন বাবা তুল্য বড় ভাই আসলেই বড় ভাই বাবার মত হয় না হলে ভাই বুঝলো কি করে কথা বলতে আসবে ওর যেটা ছোটবেলা থেকেই স্বভাব অতিরিক্ত টেনশন হলে এরকম ছটফট করে সেটা নিশ্চয়ই বড় ভাই আগে টের পেয়েছেন তাই সামনে চেয়ার টেনে বসে বললেন,” বুঝতে তো পারবেই বাবা আর ছেলে মিলি তো আমাকে টেনশনে রেখেছো।”
হুমায়ূন রহমান জোরে জোরে হাসলেন ।তারপর বললেন ,”কি বলবি বল?”
সাদা ফের বিদেশ যাওয়ার আগে সবকিছু জানতে চাই ভাইজান ও তো বিদেশে যাওয়ার জন্য রাজি ছিল না কি এমন হয়ে গেল রাতারাতি হঠাৎ করে ও রাজি হয়ে গেল?
হুমায়ূন রহমান: তোর মনে আছে একদিন সাদাফ মারামারি করে বাসায় এসেছিল রক্তাক্ত অবস্থায়?
ফজলুর রহমান: হুম। আমেরিকা যাওয়ার এক দেড় মাস আগেই তো।
হুমায়ূন রহমান: কেন সেদিন মারামারি করেছিল জানিস?
ফজলুর রহমান: ওতো কিছু বলার ছেলে না ভাইজান বহুবার জিজ্ঞেস করেছি মুখ খুলেনি।
হুমায়ূন রহমান: নূরের জন্য ।নূরকে নিয়ে কলেজের লাস্ট দিনে গিয়েছিল এক অনুষ্ঠানে সেখানে কেউ একজন নূরের গালে একটা চু*মু খেয়েছিল।
ফজলুর রহমান:কি? তখন তো ও অনেক ছোট ছিল আদর করে যে কেউ কোলে তুলে চুমু খেতেই পারে তাই বলে এভাবে বন্ধুদের সাথে মা*রামারি করে র*ক্তাক্ত অবস্থায় বাসায় ফিরবে?
হুমায়ূন রহমান: তাই ওকে অ্যামেরিকা পাঠানো জরুরী ছিল আর বাবা হয়ে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ।তোর কাছ থেকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করিনি।

প্রায় এক ঘন্টা কেবিনে কথা হলো দুই ভাইয়ের মধ্যে ।কথা বলার এক পর্যায়ে ফজলুর রহমান দাঁড়িয়ে গেলেন ।বললেন ,”আপনি নূরকে মেয়ে মনে করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।আর যেহেতু বলেছেন সাদাফ আমার সন্তান আমার প্রথম সন্তানের মত তাহলে আজকে থেকে সাদাফের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যা নেয়ার আমি নিব ।আশা করি আপনি সেদিন সাদাফের বাবা হয়ে কথা বলবেন না।
যেহেতু সাদাফ কে আমার কোলে তুলে দিয়ে বলেছিলেন ও আমার প্রথম সন্তান তাহলে সাদাফের জন্য সিদ্ধান্ত এখন থেকে আমি নিব ।যদি আমার উপরে বিশ্বাস থাকে অবশ্যই আমার উপরে ছেড়ে দিবেন। আপনি এর মধ্যে আর কখনোই আসবেন না।

এটা তাহলে আমাদের বাবা আর ছেলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে ।আর এখন আপনার সাথে আমার কি কথা হয়েছে না হয়েছে এটা শুধু আপনি আর আমি জানি ।তবে এখন থেকে সাদাফের প্রত্যেকটি বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিব আমার সিদ্ধান্তকে আপনার সম্মান করতে হবে ।যদিও আমি আপনার ছোট ভাইজান কিন্তু সাদাফ এখন থেকে আমার সন্তান। তাই ওর ব্যাপারে ওর জীবনের ব্যাপারে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সবথেকে আগে অধিকার আমার ।যেমন আপনি নূরের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন আমাকে কখনো জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করেন না সেরকম আজকে থেকে সাদাফের ব্যাপারেও আমি সিদ্ধান্ত নিব।

হুমায়ূন রহমান চিন্তিত মুখে চেয়ে রইলেন ছোট ভাইয়ের দিকে ।
তারপর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ,”আচ্ছা ঠিক আছে এখন থেকে সাদাফের সব বিষয়ে তুই সিদ্ধান্ত নিবি আমি আর কখনো তোদের দুজনের মধ্যে ইন্টারফেয়ার করব না ।ভালো হলেও তোর খারাপ হলেও তোর আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব।”
কথাটি শুনে ফজলুর রহমান ক্যাবিন থেকে বের হয়ে যায়।

এদিকে সাদাফ আজ আর ফ্যাক্টরি বা অফিসিয়াল কোন কাজে যায়নি ।হাতের ব্যথা যেন পুরো শরীরে ছড়িয়ে গিয়েছে ।জ্বর জ্বর ভাব যে কোন মুহূর্তে শরীর কাপিয়ে জ্বর চলে আসবে। হোটেল রুমে শুয়ে শুয়ে ভাবল নূরের সাথে একটু কথা বলে নেওয়া যাক ।এরপর যদি জ্বর বেশি চলে আসে তখন তো নূরের সাথে কথা বলা যাবে না তাই নূরের নাম্বারে ফোন দিলো সাদাফ।

ফোন ধরেই সাদাব কিছু বলবে তার আগেই ওপাশ থেকে শুনলো সামিহা বেগমের কন্ঠ ।সামিহা বেগম হ্যালো হ্যালো করছে ।বুঝতে পারল নূর ফোনের আশেপাশে নেই। ছোট আম্মুর ফোনটাই তো নূরের কাছে থাকে তাই সাদাফ হালকা একটু কে সে বলল,” আম্মু আমি।”
সামিহা বেগম সাদাফের কন্ঠ শুনে বলল ,”সে তো বুঝতে পেরেছি তুই। নাম্বার তো সেভ করা ।তো তোর কি হয়েছে গলাটা এরকম ভারি ভারি লাগছে কেন বাপ?”
সাদাফ ভারি ভারি কন্ঠে বলল ,”কিছু না আম্মু এমনেই ভালো লাগছিল না ।তাই শুয়ে ছিলাম ।নুর কোথায়?”
সামিহা বেগম মুচকি হাসলেন ।তারপর বললেন ,”নূর তো গোসলে গিয়েছে আসলে আমি তোকে ফোন দিতে বলবো।”

সাদাফ বলল ,”ঠিক আছে আম্মু ।ফোন দিতে বল আর শোনো তোমরা ভালো আছো ?সবকিছু ঠিক আছে ওইখানে?”
সামিহা বেগম দুষ্টুমি করার ছলে বললেন ,”আজ বুঝি মনে হলো মায়েদের কথা ?কই দুই তিন দিন হয়ে গেল গিয়েছিস একটিবারও তো ফোন দিয়ে কাউকে কথা বললি না।
না ভাবিকে না আমাকে ।এই ছেলে বুঝি আমরা পেলে ছিলাম বড় করেছিলাম ।তিনদিন ধরে বাড়ির বাইরে অথচ এক মা কেউ ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিলি না।”

সাদাফ মুচকি হাসলো ।হেসে বলল ,”পর তো আমার মায়েরা করে দিয়েছে ।তিন দিন ধরে যে ছেলেটা বাইরে ঠিকমতো খেতে পারছে কিনা ঠিকমতো সবকিছু করতে পারছে কিনা কই ফোন দিয়ে তো খোঁজ নিলে না ?”
হঠাৎ করে সামিহা বেগম বলে উঠলেন,” আমরা খোঁজ না নিলে কি হয়েছে কেউ তো নিয়েছে।
পরে সাথে সাথে দাঁত দিয়ে জিভ কে*টে বললেন,” নিশ্চয়ই তোর বাপ চাচারা নিয়েছে। আর আমরা তো ফোনের আশেপাশে এত থাকি না জানিস ই তো সারাদিন বাড়ির কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকি যৌথ পরিবার তো।”
সাদাফ মুচকি হাসলো ।জানে ছোট আম্মু কি বলতে চেয়েছিল ?তাই বলল ,”আচ্ছা ঠিক আছে আম্মু ।নুর আসলে আমাকে একটু ফোন দিতে বল ।একটু দরকার ছিল।”

সাদাফ ফোন রাখার সাথে সাথে সামিহা বেগম ফোন রেখে দেখলেন ওয়াশরুমে এখনো গোসল করছে নূর ।তাই ভাবল একটু পরে এসে বলবে ।তাই ফোন রেখেই সামিহা বেগম রুম ছেড়ে বের হয়ে গেলেন।
সাদাফ শুয়ে শুয়ে অপেক্ষা করছে নূরের ফোনের জন্য এমন সময় ফোন বেজে উঠলো ।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সাইমনের নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।

সাদাফ সায়মনের ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলল ।সাইমন বলল ,” কি অবস্থা কেমন আছো ব্রো?”
সাদাফ সরল মনে বলল ,”শরীরটা ভালো নেই হাতে আবার একটু ব্যথা পেয়েছি। জ্বর জ্বর ভাব।মনে হচ্ছে জ্বর আসবে। কি বিষয়ে ফোন দিয়েছিস ?তুই তো ফোন দিস না জরুরি প্রয়োজন ছাড়া।”
সায়মন ধীরে ধীরে আমতা আমতা করে বলল ,”টাকা লাগবে ৩০০০ ।তোমার বাপ চাচার কাছে তো টাকা চাওয়া যায় না তারা মনে করে আমি একদম পুরাই ভাদাইমা যা দেয় তাই লস। তাদের চোখে আমি পুরো একটা লস প্রজেক্ট ছাড়া আর কিছু না। এখন বলছিলাম যে টাকাটা ভীষণ দরকার আজকে এই মুহূর্তে দাও তো।”
সাদাফ বলল ,”ঠিক আছে ফোন রাখ ।আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি তাহলে। আর আমার জ্বরের কথা কাউকে বলিস না ওষুধ খেয়েছি ঠিক হয়ে যাবে একটু ঘুমালেই।”

কথাটি বলেই সাথে সাথে ফোন রেখে টাকা সেন্ড করে ঘুমিয়ে পরল সাদাফ।শরীরে আর কুলাচ্ছে না ।শরীর ছাপিয়ে যেন জ্বর চলে আসছে ।তাই কখন ঘুমিয়ে গেল বলতেও পারে না সাদাফ।”
সাদাফ পিটপিট করে চোখ খুলল ।খুলে আবিষ্কার করল সামনে হুমায়ূন রহমান বসে আছে ।একটি হসপিটালের কেবিন মনে হল ।সাথে সাথে সাদাফ ঘুম কন্ঠে জিজ্ঞেস করল কোথায় আমি?
হুমায়ূন রহমান ছেলের দিকে তাকালেন। মলিন চেহারার দিকে তাকিয়ে বড্ড মায়া হল হুমায়ূন রহমানের। তারপর বললেন ,”হসপিটালে ঢাকা।”

সাদাফ আশেপাশে চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখল হসপিটালে ক্যাবিন ফাঁকা কেউ নেই ।রুমে শুধু হুমায়ুন রহমান ।সাদাফ সাথে সাথে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”নুর?”
হুমায়ূন রহমান ছেলের দিকে তাকালেন। তারপর নিস্প্রাণ চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন,” নিজের চিন্তা কর আগে নিজে বাচ।”

সাদাফ বলল ,”এটাই আমার চিন্তা ।”
হুমায়ূন রহমান সাথে সাথে বললেন ,”তোকে কি করে বুঝাবো এখন থেকে আর নূরের চিন্তা তোর ,,,,,,,,,,,আর কিছু বলতে পারলেন না ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে।”

প্রায় এক ঘন্টা কেবিনে কথা হলো দুই ভাইয়ের মধ্যে ।কথা বলার এক পর্যায়ে ফজলুর রহমান দাঁড়িয়ে গেলেন ।বললেন ,”আপনি নূরকে মেয়ে মনে করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ।আর যেহেতু বলেছেন সাদাফ আমার সন্তান আমার প্রথম সন্তানের মত তাহলে আজকে থেকে সাদাফের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত যা নেয়ার আমি নিব ।আশা করি আপনি সেদিন সাদাফের বাবা হয়ে কথা বলবেন না।
যেহেতু সাদাফ কে আমার কোলে তুলে দিয়ে বলেছিলেন ও আমার প্রথম সন্তান তাহলে সাদাফের জন্য সিদ্ধান্ত এখন থেকে আমি নিব ।যদি আমার উপরে বিশ্বাস থাকে অবশ্যই আমার উপরে ছেড়ে দিবেন। আপনি এর মধ্যে আর কখনোই আসবেন না।

এটা তাহলে আমাদের বাবা আর ছেলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে ।আর এখন আপনার সাথে আমার কি কথা হয়েছে না হয়েছে এটা শুধু আপনি আর আমি জানি ।তবে এখন থেকে সাদাফের প্রত্যেকটি বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিব আমার সিদ্ধান্তকে আপনার সম্মান করতে হবে ।যদিও আমি আপনার ছোট ভাইজান কিন্তু সাদাফ এখন থেকে আমার সন্তান। তাই ওর ব্যাপারে ওর জীবনের ব্যাপারে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সবথেকে আগে অধিকার আমার ।যেমন আপনি নূরের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন আমাকে কখনো জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করেন না সেরকম আজকে থেকে সাদাফের ব্যাপারেও আমি সিদ্ধান্ত নিব।

হুমায়ূন রহমান চিন্তিত মুখে চেয়ে রইলেন ছোট ভাইয়ের দিকে ।
তারপর একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ,”আচ্ছা ঠিক আছে এখন থেকে সাদাফের সব বিষয়ে তুই সিদ্ধান্ত নিবি আমি আর কখনো তোদের দুজনের মধ্যে ইন্টারফেয়ার করব না ।ভালো হলেও তোর খারাপ হলেও তোর আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখব।”
কথাটি শুনে ফজলুর রহমান ক্যাবিন থেকে বের হয়ে যায়।

এদিকে সাদাফ আজ আর ফ্যাক্টরি বা অফিসিয়াল কোন কাজে যায়নি ।হাতের ব্যথা যেন পুরো শরীরে ছড়িয়ে গিয়েছে ।জ্বর জ্বর ভাব যে কোন মুহূর্তে শরীর কাপিয়ে জ্বর চলে আসবে। হোটেল রুমে শুয়ে শুয়ে ভাবল নূরের সাথে একটু কথা বলে নেওয়া যাক ।এরপর যদি জ্বর বেশি চলে আসে তখন তো নূরের সাথে কথা বলা যাবে না তাই নূরের নাম্বারে ফোন দিলো সাদাফ।

ফোন ধরেই সাদাব কিছু বলবে তার আগেই ওপাশ থেকে শুনলো সামিহা বেগমের কন্ঠ ।সামিহা বেগম হ্যালো হ্যালো করছে ।বুঝতে পারল নূর ফোনের আশেপাশে নেই। ছোট আম্মুর ফোনটাই তো নূরের কাছে থাকে তাই সাদাফ হালকা একটু কে সে বলল,” আম্মু আমি।”
সামিহা বেগম সাদাফের কন্ঠ শুনে বলল ,”সে তো বুঝতে পেরেছি তুই। নাম্বার তো সেভ করা ।তো তোর কি হয়েছে গলাটা এরকম ভারি ভারি লাগছে কেন বাপ?”
সাদাফ ভারি ভারি কন্ঠে বলল ,”কিছু না আম্মু এমনেই ভালো লাগছিল না ।তাই শুয়ে ছিলাম ।নুর কোথায়?”
সামিহা বেগম মুচকি হাসলেন ।তারপর বললেন ,”নূর তো গোসলে গিয়েছে আসলে আমি তোকে ফোন দিতে বলবো।”

সাদাফ বলল ,”ঠিক আছে আম্মু ।ফোন দিতে বল আর শোনো তোমরা ভালো আছো ?সবকিছু ঠিক আছে ওইখানে?”
সামিহা বেগম দুষ্টুমি করার ছলে বললেন ,”আজ বুঝি মনে হলো মায়েদের কথা ?কই দুই তিন দিন হয়ে গেল গিয়েছিস একটিবারও তো ফোন দিয়ে কাউকে কথা বললি না।
না ভাবিকে না আমাকে ।এই ছেলে বুঝি আমরা পেলে ছিলাম বড় করেছিলাম ।তিনদিন ধরে বাড়ির বাইরে অথচ এক মা কেউ ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিলি না।”

সাদাফ মুচকি হাসলো ।হেসে বলল ,”পর তো আমার মায়েরা করে দিয়েছে ।তিন দিন ধরে যে ছেলেটা বাইরে ঠিকমতো খেতে পারছে কিনা ঠিকমতো সবকিছু করতে পারছে কিনা কই ফোন দিয়ে তো খোঁজ নিলে না ?”
হঠাৎ করে সামিহা বেগম বলে উঠলেন,” আমরা খোঁজ না নিলে কি হয়েছে কেউ তো নিয়েছে।
পরে সাথে সাথে দাঁত দিয়ে জিভ কে*টে বললেন,” নিশ্চয়ই তোর বাপ চাচারা নিয়েছে। আর আমরা তো ফোনের আশেপাশে এত থাকি না জানিস ই তো সারাদিন বাড়ির কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকি যৌথ পরিবার তো।”
সাদাফ মুচকি হাসলো ।জানে ছোট আম্মু কি বলতে চেয়েছিল ?তাই বলল ,”আচ্ছা ঠিক আছে আম্মু ।নুর আসলে আমাকে একটু ফোন দিতে বল ।একটু দরকার ছিল।”

সাদাফ ফোন রাখার সাথে সাথে সামিহা বেগম ফোন রেখে দেখলেন ওয়াশরুমে এখনো গোসল করছে নূর ।তাই ভাবল একটু পরে এসে বলবে ।তাই ফোন রেখেই সামিহা বেগম রুম ছেড়ে বের হয়ে গেলেন।
সাদাফ শুয়ে শুয়ে অপেক্ষা করছে নূরের ফোনের জন্য এমন সময় ফোন বেজে উঠলো ।ফোন হাতে নিয়ে দেখলো সাইমনের নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।

সাদাফ সায়মনের ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলল ।সাইমন বলল ,” কি অবস্থা কেমন আছো ব্রো?”
সাদাফ সরল মনে বলল ,”শরীরটা ভালো নেই হাতে আবার একটু ব্যথা পেয়েছি। জ্বর জ্বর ভাব।মনে হচ্ছে জ্বর আসবে। কি বিষয়ে ফোন দিয়েছিস ?তুই তো ফোন দিস না জরুরি প্রয়োজন ছাড়া।”
সায়মন ধীরে ধীরে আমতা আমতা করে বলল ,”টাকা লাগবে ৩০০০ ।তোমার বাপ চাচার কাছে তো টাকা চাওয়া যায় না তারা মনে করে আমি একদম পুরাই ভাদাইমা যা দেয় তাই লস। তাদের চোখে আমি পুরো একটা লস প্রজেক্ট ছাড়া আর কিছু না। এখন বলছিলাম যে টাকাটা ভীষণ দরকার আজকে এই মুহূর্তে দাও তো।”
সাদাফ বলল ,”ঠিক আছে ফোন রাখ ।আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি তাহলে। আর আমার জ্বরের কথা কাউকে বলিস না ওষুধ খেয়েছি ঠিক হয়ে যাবে একটু ঘুমালেই।”

কথাটি বলেই সাথে সাথে ফোন রেখে টাকা সেন্ড করে ঘুমিয়ে পরল সাদাফ।শরীরে আর কুলাচ্ছে না ।শরীর ছাপিয়ে যেন জ্বর চলে আসছে ।তাই কখন ঘুমিয়ে গেল বলতেও পারে না সাদাফ।”
সাদাফ পিটপিট করে চোখ খুলল ।খুলে আবিষ্কার করল সামনে হুমায়ূন রহমান বসে আছে ।একটি হসপিটালের কেবিন মনে হল ।সাথে সাথে সাদাফ ঘুম কন্ঠে জিজ্ঞেস করল কোথায় আমি?
হুমায়ূন রহমান ছেলের দিকে তাকালেন। মলিন চেহারার দিকে তাকিয়ে বড্ড মায়া হল হুমায়ূন রহমানের। তারপর বললেন ,”হসপিটালে ঢাকা।”

সাদাফ আশেপাশে চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখল হসপিটালে ক্যাবিন ফাঁকা কেউ নেই ।রুমে শুধু হুমায়ুন রহমান ।সাদাফ সাথে সাথে বাবার দিকে তাকিয়ে বলল ,”নুর?”
হুমায়ূন রহমান ছেলের দিকে তাকালেন। তারপর নিস্প্রাণ চোখে তাকিয়ে থেকে বললেন,” নিজের চিন্তা কর আগে নিজে বাচ।”

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৫৬+৫৭

সাদাফ বলল ,”এটাই আমার চিন্তা ।”
হুমায়ূন রহমান সাথে সাথে বললেন ,”তোকে কি করে বুঝাবো এখন থেকে আর নূরের চিন্তা তোর ,,,,,,,,,,,আর কিছু বলতে পারলেন না ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে।”

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here