সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৪+৭৫

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৪+৭৫
neelarahman

সায়মন রিমার ঠোঁট ছেড়ে রিমা থেকে সরে গিয়ে বলল ,”তাহলে এখন থেকে আমার রুমের অফিসিয়াল ভাবে কাজকর্ম কে করবে?”
রিমা বললো,” আমি।”
“বাড়ির সবাই আমার বিরুদ্ধে কথা বললে ডিফেন্ড করবে কে ? ”
জানতে চাইলো সায়মন।
রিমা বললো ,”আমি।”
তাহলে আজকে তোকে মাফ করা হলো ।আজকে যেয়ে আমি একা আমি করব আগামী কালকে থেকে যেন কোন কিছু বলতে না হয় ।আর বাড়ির কেউ যদি আমার বিরুদ্ধে কিছু বলে সাথে সাথে জবাব তুই দিবি আমি মুখ খুলবো না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে এখন রুম থেকে যাও অনেক রাত হয়েছে ।যে কেউ এসে দেখে ফেলবে ।”বললো রিমা ।”যেতে ইচ্ছা করছে না।আরেকটু থাকি?”বললো সায়মন।
রিমা সাথে সাথে সাইমন কে রুম থেকে বের করে দিয়ে বললো ,” চুপ যাও এখন।আর একটি কথাও না।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বর্তমান
রিমা গত কালকের কথা মনে করেই মুচকি মুচকি হাসছে আর একটু পরপর নিজের হাত দিয়ে নিজের মুখ ঢেকে ফেলছে ।এখন থেকে অফিসিয়ালি ডেট করছে সায়মনের সাথে ।কেমন যেন ফিল হচ্ছে রিমার।
এদিকে সাদাফ এখনো জড়িয়ে ধরে ধীরে ধীরে সফ্টলি চু*মু খাচ্ছে নূর কে ।কাঁধে ব্যাথায় নূরের চোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পরল।সাদাফ টের পাচ্ছে হাতের তালু ভিজে গেছে নূরের চোখের পানিতে।
সাদাফ ধীরে ধীরে নূরের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে হাতের আঙুল দিয়ে চোখের পানি গুলো মুছে দিতে লাগলো ।তারপর বলল ,”কাঁদছিস কেন ?এইটুকু ব্যাথায় কাঁদতে হয় ?এর থেকে আরো কত ব্যথা অপেক্ষা করছে তোর জন্য?”
নুর সাদাফের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো,” আপনি আমাকে আবার ও কা*মড় দিবেন?”

সাদাফ নূরের কানে কানে ঘোর লাগা কন্ঠে ফিসফিস করে বলল ,”শুধু কা*মড় কেন অনেক আদর করবো ।কিন্তু আমার প্রত্যেকটা আদরেও তুই ব্যথা পাবি। যন্ত্রনা হবে। কিন্তু এই যন্ত্রনা তুই রোজ পাবি।আমি একদিন ও ছাড় দিবো না তোকে।”
“লাগবেনা আমার এমন আদর যে আদর এত কষ্ট পেতে হয় ।আপনি আপনার প্রেমিকার কাছে যান সাবা আপুর কাছে যান।” অভিমানী কন্ঠে বললো নুর।
সাদাফ ধীরে ধীরে আবারো কানের কাছে ফিসফিস করে বলল ,”প্রেমিকা নাই কোন বললামই তো বউ আছে ।কিন্তু বউ কাছে যেতে দেয়না কাছে গেলে কান্নাকাটি করে ।তাইতো তোর কাছে আসি।”
“আমার কাছে কেন ?”অবাক হয়ে জানতে চাইলো নুর ।

সাদাফ নুরের চোখে চোখ রেখে বলল ,”পরকীয়া করবো তোর সাথে ।বউতো কাছে যেতে দেয় না তাই চিন্তা করলাম তোর সাথে পরক্রিয়া করব। সব আদর এখন থেকে তোকে দিব সব যন্ত্রণা তোকে দিব।”
নুর সাদাফ কে একটু ধাক্কা দিয়ে বলল ,”সরুন এখান থেকে ।ছাড়ুন আমাকে বলছি ।করব না আমি পরকীয়া ।ছি এত নোংরা লোক আপনি ।”
সাদাফ নুর কে সাথে সাথে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল ,”তোর করতে হবে না আমি করছি তাহলেই হবে। এখন একদম চুপ একটা কথা বলবি না ।আমার শান্তি চাই বুকে থাক একটু শান্তি দে আমাকে প্লিজ।
নুর চুপচাপ সাদাফের বুকে কান পেতে শুয়ে রইল ।সাদাফ হাত দিয়ে একটু একটু করে নুরের এলোমেলো চুল গুলো গুছিয়ে দিতে লাগলো আর হাত বোলাতে লাগলো।

একটু পর নুর ঘুমিয়ে গেলো সাদাফের বুকে।সাদাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নুরের দিকে।বার বার ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।মাথায় চড়ে বসছে বার বার নিষিদ্ধ ইচ্ছে গুলো।সাদাফ নিজেকে সংযত করলো।
নুর কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
পরদিন ব্রেকফাস্ট টেবিলে সবাই নাস্তা করছে হঠাৎ বোমা ফাটালো সাদাফ ।বললো,”আব্বু আমার বিয়ের কথা নিয়ে কি ভাবলে?”

হুমায়ূ রহমান অবাক হয়ে তাকালেন সাদাফের দিকে বিয়ে নিয়ে কি ভাববে মানে ও তো আগে থেকে বিবাহিত হ্যাঁ কিভাবে এটাকে মানিয়ে নেওয়া যায় সেটাই এখন চিন্তার বিষয় আবার তাকালেন ফজলুর রহমানের দিকে ফজলুর রহমান নিশ্চুপ কোন কথা নেই চুপচাপ খাচ্ছে।
মনে মনে ভাবছে হুমায়ন রহমান কি এক ঝামেলা পড়ে গেছে ভাই ও ছেলের মধ্যে। সাদাফ আড় চোখে তাকালো ফজলুর রহমানের দিকে ।তারপর বলল ,”তুমি কিছু বলছো না যে ?”
ফজলুর রহমান বললো,” আমি কি বলবো?”

“ওমা আমি তোমাদের ছেলে না ?বলছি বিয়ে করব এই মাসে শেষের দিকে আর ১৫ দিন আছে ।১৫ দিনের মধ্যে বিয়ে তাই প্রিপারেশন সব শুরু করে দাও। ১৫ দিন মানে ১৫ তম বিয়ে হবে।তাই সময় খুব কম।”বললো সাদাফ।
“কার সাথে বিয়ে কোথায় বিয়ে মেয়ে বাড়ির লোক কেউ আসলো না মেয়ে প্রস্তাব নিয়ে আসলো না আমরা শুধু শুধু রেডি হয়ে কি করব ?”খোঁচা মেরে কথাটি বলল ফজলুর রহমান।
“নুর অবাক হয়ে বাবা এবং সাদাফের কথা শুনছে ।নুর বুঝতে পারছে না কি করবে ?সাদাফ বলে দিয়েছে নূর যেন বিয়ের কথা বলে কিন্তু নূর কিভাবে বিয়ের কথা বলবে?

এদিকে এটাও বলেছেন ও যদি বিয়ের কথা না বলে ১৫ তম দিন সাবা আপুকে বিয়ে করে ফেলবে সাদা ভাই।
এদিকে রিমা ও সাইমন একে অপরের দিকে চোখ চাওয়াচাওয়ি করছে ।কিছুই বুঝতে পারছে না বাপ চাচা ও সাদাফ ভাই এর মধ্যে আসলে কি চলছে ?
সামিহা বেগম ও নওরিন আফরোজ একে অপরের দিকে চাইল ।মনে মনে ভাবল ,”এদের দুজনের মধ্যে আসলে কে যে জিতবে আল্লাহই জানে।”
সাদাফ খাওয়া শেষ করে টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ালো ।তারপর চাচা ফজলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলল ,”ঠিক ২৭ তারিখে বিয়ে হবে ।সবকিছু final। মেয়েও ফাইনাল ।মেয়ে নিজে এসে তোমাদেরকে বলবে বিয়ে করবে ।আর আশা করি বলার সাথে সাথে তোমাদের আর কোন অমত থাকবে না।”

সাদাফ টেবিল ছেড়ে উঠে যেতে যেতে নুরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”একটা কফি নিয়ে উপরে আয় আর তাড়াতাড়ি রেডি হ স্কুলে নামিয়ে দিয়ে যাব।”
ফজলুর রহমান অবাক হয়ে তাকলেন সাদাফের দিকে। এই ছেলে তো এখন থেকেই নূরকে বউ হিসেবে ট্রিট করা শুরু করে দিয়েছে ।আর ফজলুর রহমান এখন আটকাতে ও পারবেনা কফি দিতে যেতেই পারে।
স্কুলেও সব সময় সাদাফ নুর কে দিয়ে আসে তাই এখন না করার কোন কারণও নেই।
রিমার কলেজের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সাইমন। রিমা কলেজ থেকে বের হলেই সাইমন বলল চল পার্কে যাই ঘুরতে।
রিমা বলল ,”এত জায়গা থাকতে পার্কে কেন ঘুরতে যাব ?অন্য কোথাও যাই ?”
সায়মন বললো,”না আমার পকেটে টাকা কম বিশ টাকার বাদাম কিনে দিবো তুই বাদাম খাবি আর পার্কে বসে থাকবি।”

“টাকা কম মানে ?তুই ভেবেছিস আমি কিছু জানি না ?কয়েকদিন আগে তুই আমার ভাইয়ের কাছ থেকে ৩০০০ টাকা নিয়েছিস ?টাকা কি করেছিস ?কোথায় খরচ করেছিস বল?”বললো রিমা।
“কি ?তোর ভাইয়ের কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নিয়েছে বলে তুই খোটা দিলি ?আজকে আমাদের সম্পর্কে প্রথম দিন আমরা ডেটিংয়ে বের হয়েছি আর তুই তোর ভাইয়ের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার খোটা দিলি ভুলে যাস না তোর ভাই আমারও ভাই।”

রিমা বলল ,”আমি এত কথা শুনতে চাই না এ রোদের মধ্যে আমি পার্কে যেতে পারবো না ।চল বসুন্ধরা সিটিতে ওইখানে গিয়ে দুপুরে লাঞ্চ করব তারপর মুভি দেখব।”
সাথে সাথে সাইমনের কাশি উঠে গেল ।বলল ,”বসুন্ধরা সিটিতে যেয়ে মুভি দেখবি ?আবার লাঞ্চ করবি ?মিনিমাম ৩০০০ টাকা ।তোর ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়েছিলাম তার থেকে ৫০০ টাকা অলরেডি শেষ আর মাত্র ২৫০০ টাকা আছে এটা আমার কয়েক দিন চলতে হবে।”

রিমা রাগ করে বলল ,”দেখ আজকে আমরা প্রথম ঘুরতে বের হয়েছি আজকে একটু সুন্দর করে ঘুরবো ।ভুলে যাস না টাকাটা আমার ভাইয়ের তাই ভাইয়ের টাকা দিয়ে বোনকে ঘুরাতে এত কিপটামি কিসের ?আমরা বসুন্ধরা যাচ্ছি মানে বসুন্ধরায় যাচ্ছি।”
“ভুল হয়ে গেছে আমার প্রথম দিন তোকে নিয়ে ঘুরতে বেরোবো ডেটিংয়ে যাবে এই কথাটা বলার জন্য।তোর সাথে আমার বাসায় ডেটিং করা উচিত ছিল ছাদে নিয়ে যেতাম দুই টাকার মোয়া খাওয়াইতাম বাস সুন্দর ডেটিং।”বললো সায়মন।

“হয়েছে এবার চলো ।আর এত কিপটামি করতে হবে না ।লাগলে ভাইয়ের কাছ থেকে আরো কিছু টাকা নিও। আর এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমার কাছেও কিছু আছে ।আজকে যখন বের হয়েছি আজকে সুন্দর মত ঘুরবো চলো।”বললো রিমা।
এদিকে সাদাফ নুরকে নিয়ে বের হয়ে গেল স্কুলে নামিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ।স্কুলের রোডের দিকে না যেয়ে নূর বলল ভাইয়া তো স্কুল না স্কুল তো রোড দিয়ে সাদা বলে চুপচাপ গাড়িতে বসে থাক আজকে তুই স্কুল যাচ্ছিস না আজকে সারাদিন তুই আমার সাথে থাকবি আমার সাথে ঘুরবি।
নূর মনে মনে খুশি হয়ে গেল জীবনে এই প্রথম সাদা ভাই ওকে একা কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাচ্ছে তাও নিজে থেকেই সাথে সাথে নূর সাদাসি দিকে তাকে বলল আমরা কোথায় যাচ্ছি সাদা বললো যাচ্ছি অনেক দূরে যাচ্ছি যেখানে ইচ্ছা হয় সেখানে যাচ্ছি গেলেই দেখতে পারবি।

নুর আবার প্রশ্ন করল আচ্ছা আমরা কেন যাচ্ছি সাদা বিরক্ত হলো নূরের ওপর তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বলল পরক্রিয়া করতে যাচ্ছি বললাম না তোর সাথে এখন থেকে আমি পরকীয়া করব ভৌত কাছে যেতে দেয় না তাই বউ যতদিন আমাকে কাছে টেনে না নিবে ততদিন তোর সাথে পরকীয়া করব।
সাথে সাথে নূরের হাসি মুখটা চুপচাপ হয়ে গেল মনে মনে ভাবতে লাগলো সাদা ভাই বিয়ে তো করেনি তাই বউ নেই কিন্তু বউ কাকে বলে সাবাবাপুকে?
কিন্তু সাদা কত দিন ভরা সাদা ভাইয়ের হাত ধরে চিপতে থাকে তাহলে এটা কেন বলে বউ কাছে যেতে দেয় না?
নুর সরল মনে সাদাফের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ,”আচ্ছা আপনার বউকে ?আর আপনার বউ আপনাকে কাছে যেতে দেয় না কেন? ”

সাদাফ মুচকি মুচকি হাসলো ।তারপর নূরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”কি জানি বউটা কাছে গেলে খালি ছাড়ুন ছাড়ুন বলে।বউটা একটু ছোট তো কাছে গেলে ভয় পায় কান্না করে।পোড়া কপাল বুঝলি? কে জানে বউ কবে ছাড়ুন ছাড়ুন না বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরবে।”
সাদাফের কথা শুনে নুর লজ্জা পেয়ে গেল ।সাথে সাথে মাথা অন্যদিকে ঘুরিয়ে গাড়ির বাইরে তাকিয়ে রইল ।সাদাফ মুচকি হেসে গাড়ি চালানো তে মনোযোগ দিল। ঠিক আধা ঘন্টা ড্রাইভ করার পর গাড়ি এসে থামলো একটি হসপিটালের বাইরে ।নূর জিজ্ঞেস করল ,”আমরা এখানে কেন এসেছি ?হসপিটালে কেন?”
সাদাফ সাথে সাথে গাড়ি থেকে নেমে নূরের সাইডে এসে দরজা খুলে বলল,” আগে নাম ভিতরে গেলে দেখতে পারবি কেন এসেছি।”

নুর গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো ।তারপর সাদাফ নুরের এক হাত ধরে ধীরে ধীরে হসপিটালে ভিতর এগিয়ে গেল।
ধীরে ধীরে সাদাফ নুর কে নিয়ে একটি ক্যাবিনের সামনে আসলো ।ক্যাবিনে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই নূর দেখতে পেল সাবা ক্যাবিনের ভিতরে বসে ফল খাটছে।বেডে শুয়ে আছে একজন বৃদ্ধ মহিলা।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭২+৭৩

নুর অবাক হলো সাথে অবাক হলো সাবা ।সাদাফ বলে আসে নি তাই সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল সাবা।নুর অবাক হলো সাথে সাথে অভিমান হল একটু। তাহলে সত্যি সত্যি উনি সাবা আপুর সাথে দেখা করতে এসেছে ।তাহলে আমাকে কেন সাথে নিয়ে এসেছে মনে মনে ভাবতে লাগলো নূর।
মনে মনে বললো আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।আপনি সাবা আপু কে ভালোবাসেন।

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭৬+৭৭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here