সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৭
neelarahman

অফিস থেকে বাসায় আসতে আসতে সাদাফের রাত দশটা বেজে গেল ।যেহেতু আজকে অনেক কাজ ছিল মাত্র দুদিন হলো জয়েন করেছে অফিসের সমস্ত কাজ বুঝি নিয়ে সমস্ত কিছু ঠিক করতে একটু সময় লাগবে ।
অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টে মিটিং ছিল আজ কিছু গরমিল ছিল সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেছে এবং সমাধান করেছে যার জন্য সব কাজে আজকে দেরি হয়ে গেছে ।

বাসায় এসে দেখলো সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ। নয়টার মধ্যে ডিনার শেষ করে ফেলে বাড়ির সবাই তাই ডিনার শেষে প্রত্যেকে যার যার রুমে চলে গিয়েছে ।আজকেও রাতে একসাথে ডিনার করতে পারল না নূরের সাথে মনে মনে ভাবছে সাদাফ। নীলা রহমান
অফিসে জয়েন করার পর থেকে সারাদিন আর নুরের সাথে কোন দেখা নেই ।সকালবেলা শুধু স্কুল যাওয়ার টাইমটা একটু দেখা হচ্ছে রাতে এসে দেখছে খাওয়া দাওয়া করে ও রুমে চলে গিয়েছে ।
কবে এমন হবে মেয়েটা ওর জন্য একটু অপেক্ষা করবে ।কখনো কি এরকম দিন আসবে ?
মনে মনে ভাবতে ভাবতে সিঁড়ি ভেঙে উঠতে লাগলো সাদাফ।
রুমের কাছে আসতেই দেখলো রুমের লাইট জালানো ।দরজাটা ভেড়ানো । নীলা রহমান
রুমের ভিতরে কে ভাবতে ভাবতে আস্তে আস্তে রুমে দরজা টা খুলেই অবাক হয়ে গেল সাদাফ।
রুমে আর কেউ না নুর ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিছু একটা খোঁজাখুঁজি করছিল রুমের ভিতর। নীলা রহমান
সাদাফ কে ভেতরে ঢুকতে দেখেই নূর দুই হাত পিছনে নিয়ে কিছু একটা লুকাবার চেষ্টা করল ।সাদাফ আড় চোখে এক নজরে দেখল তারপর নূরের চোখে চোখ রেখে বলল ,”আমার রুমে কি করছিস তাও এত রাতে?”
কাধের থেকে ব্যাগটা রাখতে রাখতে জিজ্ঞেস করল সাদাফ।
নূর আমতা আমতা করছে কিন্তু হাত দুটো পেছন থেকে সামনে আনতে পারছে না ।চুপচাপ এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ।

সাদাফ ব্যাগ রেখেই টেবিলের কাছে চেয়ারটা টেনে বসে জুতাটা খুলতে লাগলো।
জুতো খোলা হলেই দাঁড়িয়ে শার্টের দুইটা বোতাম খুলে শরীরটা একটু হালকা করে চেয়ারে শরীর ছেড়ে দিয়ে বসে বলল ,”হাতে কে দেখি এদিকে আয়?”
নূর এখনো চুপচাপ মাথা নিচু করে হাত পিছনে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।কিন্তু মুখে কোন কথা বলছে না ।
সাদাফ বললো ,”এদিকে আয় হাতে কি দেখি কিছু বলবো না সামনে আয়।”
নুর নিজের জায়গা থেকে দু কদম সামনে এসে দাঁড়ালো কিন্তু হাত এখনো পিছনে ।
সাদাফ নুরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তারপরে বলল ,”আরো কাছে আয়।”
নুর ভয় পেয়ে গেল ।ভয়ে ভয়ে আরও দু কদম সামনে এসে দাঁড়ালো হাত বাড়ালেই সাদাফকে ছোঁয়া যাবে এমন দূরত্বে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

সাদা এবার একটু ধীরে হাসকি টোনে বলল ,”আরেকটু কাছে আয়।”
নূর পড়ে গেল মুশকিলে ।এসেছিল একটা প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে জানতো এটা শুধু সাদাফ ভাইয়ের রুমে আছে ।
এভাবে ধরা ধরা খেয়ে যাবে জানতো না তাই মাথা তুলে আমতা আমতা করে বলল ,”আর হবেনা ভাইয়া আর আসবো না এই রুমে ।শুধু এইবার এই শেষ মাফ করে দাও প্লিজ।”
কাঁদো কাঁদো হয়ে কথাগুলো বলল নূর ।সাদাফ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নূরের দিকে ।মেয়েটার অ*পরাধ বেড়ে যাচ্ছে এক তো না বলে রুমে এসে কিছু একটা হাতিয়ে নিয়েছে নিশ্চয়ই মূল্যবান কিছু ।
তার উপর আবার বলছে এই রুমে আর আসবে না ।গা*ধিটা কি জানে এই রুমে মৃ*ত্যুর আগ পর্যন্ত জীবন পার করতে হবে ওর।

একটি ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”এদিকে আয় কিছু বলবো না তো ।লেট করলে কিন্তু এক্ষুনি একটা চ*ড় মেরে সামনে দাঁতগুলো সব ফেলে দেবো বে*য়াদব কাছে আয় বলছি।
ধম*কের সাথে সাথে সেকেন্ডের মধ্যে নুরের পা আপনা আপনি দু কদম সামনে এসে একদম সাদাফের কাছে এসে দাঁড়ালো। একদম সাদাফের পায়ের সাথে লেগে গেল নূরের পাক যেন আর এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা নেই ।সাদাফ ধীরে ধীরে নিজের দু পা একটু দুদিকে সরিয়ে নূরের হাতের কনুই ধরে নিজের দু পায়ে ঠিক মাঝখানে এনে দাঁড় করালো ।তারপর বলল ,”হাত সামনে আন দেখি হাতে কি?”

নুর হাত দুটো শক্ত করে রেখেছে কোনভাবেই হাত সামনে দিকে আনছে না ।সাদাফ বললো ,”আমি জোর করলে ব্য*থা পাবি চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মত হাত দুটো সামনে ধর কিছু বলবো না।”
নূর আস্তে আস্তে হাত দুটো সামনে এনে ধরলো।দেখলো হাতের মধ্যে অনেক গুলো ছোট্ট ছোট্ট মাথার ব্যান্ড।
সাদাফের মনে পড়ল লেখাপড়া শেষ করে যেদিন বাংলাদেশে আসলো ওর সবকিছু সবাইকে যখন বুঝিয়ে দিচ্ছিল তখন নূর আড় চোখে দেখেছিল ব্যাগের মধ্যে কিছু কিছু জিনিস কিন্তু এগুলো কার জন্য এনেছিল জানা ছিলো না নুরের।কিন্তু এত সুন্দর ছিল মাথার রাবার ব্যান্ড গুলো দেখে নূরের পছন্দ হয়ে গিয়েছিল। নীলা রহমান
সাদাফ একটি দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। মনে মনে হাসলো গা*ধা মেয়েটা কি জানে জিনিসগুলো শুধুমাত্র ওর জন্যই আনা হয়েছে । সেদিন বের করা হয়নি করলে রিমা ও ভাগ বসা তো তাই।সবই তো ওর ওকে কেন চু*রি করতে হবে ?এত পছন্দ হয়েছে যে না বলে কয়েকটা নিতে এসেছে।”

তারপর নূরের থেকে ছোট ছোট ব্যান্ড গুলি নিয়ে বলল ,”এসব কিছুই তোর জন্য নিয়ে এসেছিলাম ।ভেবেছিলাম পরে দিব ।তোকে চু*রি করে নিতে হবে কেন ?আমার রুমে যখন ইচ্ছা এসে তুই এগুলো নিয়ে যেতে পারতি কোন সমস্যা নেই।”
কথাটা বলেই সাদাক খেয়াল করলো নূরে হাত দুটো অস্বা*ভাবিকভাবে কাঁপছে সাদা চোখ তুলে তাকালো নুরের দিকে নুর এখনো কেমন ভ*য় পাচ্ছে।
ছোট্ট শরীরটা যেন একটু একটু করে কেঁপে উঠছে সাদাফের স্পর্শে।সাদাফ তাকিয়ে রইল মুগ্ধ হয়ে নূরের দিকে।
নুর সাদাফের হাত থেকে ছোটার জন্য যেন একটু একটু ছটফট করছে ।কিন্তু সাদাফ নুরের হাত ছাড়লো না ।হাতটি নিজের কাছে এনে নিজের গালে ঘষে নূরের দিকে তাকিয়ে বলল ,”এভাবে ছটফট করছিস কেন ?আর কাঁপাকাঁপি করছিস কেন ?আমি কিছু করেছি?”

বলেই নূরের ছোট্ট হাতে একটি চু*মু একে দিল সাদাফ।
নূর সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে ফেলল ।এই প্রথম সাদাফ জোর করে নয় ভালোবেসে আদর করে যত্ন করে নূরের হাতে ভালোবাসার স্পর্শ দিল। নীলা রহমান
সাদাফ নুরের দিকে তাকালো তারপর নূরের হাতটা একটু টেনে ধীরে ধীরে সাদাফের কোলে বসিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল ,”চোখ খোল নুর।”

নুর বরফের মত জমে রয়েছে এই প্রথম সাদাফের কোলে বসেছে নূর ।সরি এই প্রথম না ছোটবেলা অবশ্যই ছিল বড় হওয়ার পর এই প্রথম বসলো নূর কেমন যেন একটা ল*জ্জা ল*জ্জা আর অস্বস্তি অনুভব হচ্ছে নূরের।
সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হাসলো তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল ,”তোকে আমি ছোটবেলা থেকে এই কোলে করে বড় করেছি চোখ খোল আমাকে দেখ। প্লিজ চোখ খোল নুর।তাকা আমার দিকে।”

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৬

নূর চোখ বন্ধ রেখেই মাথা দু’পাশে নাড়ালো ।ভয়ে ভয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল ,”না আমি চোখ খুলবো না। সত্যি বলছি আমি আর এই রুমে আসবো না এবারের মত মাফ করে দিন ।ছেড়ে দেন প্লিজ।”
সাদাফ নুরের দিকে তাকিয়ে রইল ।তারপর নুরের গালে নাক ঘষ*তে ঘষ*তে বলল ,”এত ভয় পাচ্ছিস কেন ?চোখ খুলতে বলেছিনা?”

সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here