সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ১০
neelarahman
নুর ঘুম থেকে উঠলো সন্ধ্যা ছটায় ।উঠে দেখল নিচে ড্রয়িং রুমে সবাই চা নাস্তা করছে ।নুরু হেলতে দুলতে এসে সোফায় বসল কিন্তু সাদাফের দিকে তাকালো না ।সাদাফ আড় চোখে খেয়াল করছে নুরের সমস্ত গতিবিধি কিন্তু কিছু বলছে না।
চা খেতে খেতে সবার সাথে গল্পে ব্যস্ত রইলো সাদাফ।নূরের অভিমানের পাল্লা ভারী হচ্ছে ।নুর না হয় খেয়াল করছে না কিন্তু সাদাফ কেন ওর দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না ।খেয়াল করছে না ।তাহলে কি গতকালকে সব কিছু ভুলে গিয়েছে সাদাফ ভাই !এই ভালো এই খারাপ।নুরের যেনো কোন অনুভূতি নেই।
যখন নুর অনেক ভয় পেত তখন তো ঠিকই পিছনে ঘুরঘুর করতে হাত ধরে বসে থাকতো কত কিছু করত ।আর এখন যখন নূর একটু একটু সাদাফ কে পছন্দ করে তখন ওনার ভাব বেড়ে গেছে ।
মনে মনে ভাবতে লাগলো নুর।
হঠাৎ সবার সাথে এসে যুক্ত হলো সাইমন ও রিমা ।সাইমন রিমা কে বলল ,”কিরে রিমা আগামী কালকে তোর প্লান কি ?”
রিমা বলল ,”তেমন কিছু না ।বাইরে যাব একটু ঘুরবো ফিরব ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নূর চট করে তাকালো রিমা ও সাইমনের দিকে ।একি ওরাও ভুলে গিয়েছে ওর জন্মদিনের কথা।
নুরের অনেক অভিমান হচ্ছে ।কেউ জন্মদিনের কথা তুলছে না ।কেউ কিছু বলছে না কেউ মনেই রাখেনি নুরের কথা।
গত বছর সবাই মনে রেখেছিল কত ভালোবাসা দিয়েছিলো উইশ করেছিলো।কত গিফট করেছিল কিন্তু এবছর কারো মনে নেই ।সাদাফ ভাইয়ের ও মনে নেই ।নূরের খুব অভিমান হচ্ছে । গল্পের লেখিকা নীলা রহমান। গল্প ঘর চুরি করে দীপা রহমান নামে চালাচ্ছেন।চোখ দুটো ছলছল করছে ।না এখানে আর বসে থাকবে না চুপচাপ উঠে নিজের রুমে চলে যাবে ।তাই নূর উঠলো চুপচাপ নিজের রুমে যাওয়ার জন্য এমন সময় নওরিন আফরোজ বলল ,”দুপুরে খাসনি বস আমি খাইয়ে দিব তার পরে যাবি ।না খেয়ে না খেয়ে একদম হ্যাংলা পাতলা হয়ে যাচ্ছে।”
নুর বলল ,”না বড় আম্মু ।আমি এখন খাব না ।”
সামিহা বেগম বললো ,”একবারে থা*প্পড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিব ।মুখে মুখে তর্ক ?বস চুপচাপ দুপুরে খেয়েছিস তুই ?এখন খাবিনা সারাদিন না খেয়ে থাকবি?”
“আহা, মেয়েটাকে বকছো কেন সামিহা ?”বলল হুমায়ূন রহমান ।তারপরে বলল ,”চুপচাপ সুন্দর করে বুঝিয়ে খাওয়াও ।এত বকাঝকা করো কেন মেয়েটা কে ?তোমাদের জন্য মেয়েটা খাওয়ার রুচি কম যেভাবে জোর করো এ জন্য ওর আরও খেতে ইচ্ছা করে না।”
সামিহা বেগম বললেন ,”ভাইজান আপনার জন্য আর ওনার জন্য কিছু বলতে পারি না ।কিছু বলতে গেলেই আপনারা আমাদেরকে আরো তেড়ে আসেন যার জন্য আরও বেয়াদব হচ্ছে মেয়েগুলো।
শুধু নূর কেন রিমার ও খাওয়া দাওয়া মনোযোগ কম ।তারপরও রিমা একটু যা খায় নূর তো খাওয়া দাওয়া জোর করে না খাওয়ালে খাবেই না আর আপনি বলছেন জোর করতে না।”
“আমাকে টানছো কেনো ছোট আম্মু?? আমি কিন্ত খাই।” বললো রিমা। নীলা রহমান
“হুম খাস তো চড়ুই পাখির আধার খাস।”বললো সায়মন।
সাদাফ সবার কথা নিচের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে শুনছে একটি কথাও বলছে না ।চুপচাপ বসে আড় চোখে শুধু নুরকে দেখছে।
নুরের অভিমান হল খুব অভিমান হল ।আগামীকাল ওর জন্মদিন জন্মদিনের কথা কারো মনে নেই অথচ সবাই পড়ে আছে খাওয়া নিয়ে ।নুর উঠে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল খাবে না কথাও বলবে না কারো সাথে।
সাদাফ একটি বড় দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো খুব কষ্ট হচ্ছিল নুরকে এভাবে বোঝানো যে জন্মদিনের কথা কারো মনে নেই ।তারপর সোফায় গায়ে এলিয়ে দিয়ে সাইমন ও রিমা কে বলল ,”তোরা প্রস্তুত তো যা যা বলেছি করেছিস।”
সাইমন বলল ,”হ্যাঁ ভাইয়া আমার তরফ থেকে ডান ।রিমা তোর কি খবর ?”
রিমা বললো ,”হ্যাঁ ভাইয়া আমিও ডান ।এখন শুধু আমাদের ডেকোরেশন বাকি যার জন্য নুরকে একটু রুমে থাকা দরকার ছিল ।এখনো রুম আটকে বসে থাকবে এটা আমাদের সুবিধা হবে।”
সাদাফ বলল ,”কিন্তু না খেয়ে বসে থাকলে তো হবে না খাওয়াতে হবে।”
তারপর নওরিন আফরোজের দিকে তাকিয়ে বলল ,”মা আমি কি নুরকে খাবারটা দিয়ে আসব আমাকে না করতে পারবে না ।আমাকে একটু ভয় পায়।”
সামিহা বেগম সাথে সাথে বললেন ,”হ্যাঁ ভাবি ওর কাছে দেন ।একমাত্র ও গেলেই ভয় এবং লজ্জায় খাবে আমরা গেলে তো ভাব ধরে বসে থাকবে।”
নওরিন আফরোজ খাবারের ট্রে এনে সাদাফের হাতে দিয়ে বলল ,”যা সবটুকু খাবার শেষ করিয়ে তারপর আসবি ।আমরা এখানে সবকিছু করছি চিন্তা করতে হবে না ।যেয়ে সুন্দর করে যেন খায় বসে থেকে খাইয়ে তারপর আসবি।”
সাদাফ খাবারের ট্রে নিয়ে ধীরে ধীরে উঠে গেল নূরের রুমের দিকে ।নুরের রুমে দরজা আজকে লাগানো তাই চাইলে ও সাদাফ রুমে ঢুকতে পারছে না তাই সাদাফ রুমের দরজা নক করল । নীলা রহমান লেখিকা।নূর ভিতর থেকে কোন সাড়াশব্দ করছে না তাই সাদাফ আবার দরজা নক করলো ।
নুর এবারও চুপ ।এবার সাদাফ বললো ,”নূর দরজা খোল এখন দরজা খোল বলছি।”
নুর উঠে এসে দরজা খুলেই আবার একটি কথা না বলেই বিছানায় গিয়ে চুপচাপ বসে পড়ল ।সাদাফ খাবার নিয়ে ভিতরে ঢুকেই দরজা লক করে দিল ।
নুর তাকিয়ে দেখলো না সাদাফের দিকে ।সাদাফ বিছানায় বসে খাবারের ট্রে দুজনে মাঝখানে রাখল ।তারপর বলল ,”যা হাত ধুয়ে আমার সামনে বসে বসে খেয়ে শেষ করবি সব।”
নুর বলল ,”খাব না ।”
সাদাফ বললো,” থা*প্পর খাওয়ার আগে চুপচাপ খাবার শেষ কর না হলে আমি কিন্তু থা*প্পর ও মারতে জানি।”
কেন যেন নূর ভয় পেয়ে গেল ।তাকালো দরজার দিকে ।দেখল দরজা লাগানো ।এই লোক যে কোন মুহূর্তে থা*প্পড় মেরে বসতে পারে তাই চুপচাপ উঠে গিয়ে জি‘দ দেখিয়ে হাত ধুয়ে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে চুপচাপ খেতে লাগলো।
কিছুটা খেয়ে রেখে দিতে চাইলেই সাদাফ আবার বলল ,”চুপচাপ বাকি খাবারটুকু শেষ কর।”
নুর বলল ,”আমি সত্যি আর খেতে পারছি না ।আর খাব না ।”
সাদাফ বললো আর একটু খা।
নূর এবার বিরক্ত হলো ভীষণ বিরক্ত হলো ।বিরক্তি নিয়ে খাবারটুকু শেষ করল।
সাদাফ তাকিয়ে আছে নুরের দিকে।নুর হাত ধুয়ে এসে বললো,” হয়েছে।”
“কি হয়েছে? এমন করছিস কেনো??”বললো সাদাফ।
নুর বললো কি করেছি??
সাদাফ বললো,” জানিস না কি করছিস??এতো রা*গ এতো অভিমান কার জন্য?”
নুর বলল ,”কই না তো ।আমি তো কারো উপরে রা‘গ অভিমান করিনি ।আর আপনার উপরে রা‘গ কেন করব?”
সাদাফ নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো ।তারপর একটু কাছে এসে কানে কানে বলল ,”সেটাই তোকে জিজ্ঞেস করেছি। আমার উপরে এত রা*গ এত অভিমান আসে কোত্থেকে তোর ?কি এমন অধিকার আছে তোর আমার উপরে যে এত রা‘গ আসে আমার উপরে ?তুই উত্তর দে আমাকে?”
নুর চুপ করে রইল ।”আসলেই তো কি অধিকার আছে ?নুর তো জানে না আর এত রা‘গ অভিমান বা কোত্থেকে আসে সাদাফ ভাই তো কখনো নূরকে বলে ও নি ভালোবাসে।
শুধুমাত্র চাচাতো ভাই এর জন্য যদি অভিমান আসে তাহলে সাইমনের উপর আসলো না কেন বা রিমার উপর আসলো না কেন ?বা বাকি সবার উপরে এত রা‘গ অভিমান কেন হলো না ?শুধু সাদাফের উপরে কেন এত রা‘গ কেন এত অভিমান?”
সাদাফ ধীরে ধীরে কিন্তু স্পষ্ট স্বরে বলল ,”নিজেকে প্রশ্ন কর নুর। শুধুমাত্র আমার উপরে কেন তোর এত অভিমান জমে ?অন্য কারো উপরে জমে না কেনো?প্রশ্ন করে উত্তরটা আমাকে দিবি ।”
বলেই খাবারের ট্রে নিয়ে বাইরে বের হয়ে গেল সাদাফ।
নূর তাকিয়ে রইল সাদাফের যাওয়ার পানে ।নিজেকে প্রশ্ন করল নুর ।আসলেই সাদাফ এর উপরে কিসের এত অধিকার বা কিসের এত অভিমান জমে সব সময় ?কেন সাদাফের উপর নূর প্রত্যাশা বেশি করে? নীলা রহমান ছাড়া আমার আর কোন পেইজ নেই।নুর কি অবচেতন মনে সাদাফকে নিজের মনে করে? নুর কি নিজের অজান্তে ভালোবেসে ফেলেছে সাদাফ কে যার কারনে সাদাফ থেকে প্রত্যাশা বেশি করে ?”
নিজেকে নিজে প্রশ্ন করছে নূর কিন্তু কোন উত্তর পাচ্ছে না।
সন্ধ্যা থেকে রুমে বসে রইল নূর ।আর নিচে গেল না ।রাত বাজে দশটা ।নূরের খুব ঘুম পাচ্ছে তবে সাদাফের করা প্রশ্ন ভাবতে ভাবতে নূর কখন ঘুমিয়ে গেল বলতেই পারেনা।
এদিকে সাদাফ সবাইকে বলে দিয়েছে বারোটার সবাই ছাদে চলে যাবে সব প্রিপারেশন করবে।ঠিক বারোটার দিকে সাদাফ নুর কে নিয়ে ছাদে আসবে।
তাই সবাই সেই প্রিপারেশনের জন্য আগে থেকেই ছাদে গিয়ে বাকি কা*জগুলো করে ফেলছে ।যাতে নুর টের না পায় ।খুব ধীরে সুস্থে সবাই কা*জ করছে এদিকে সাদাফ নূরের রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো ।নূরের রুমের দরজাটা হালকা খোলা।
দরজা একটু ফাঁ*ক করে দেখল নূর ঘুমাচ্ছে। নুরকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখার ভীষণ লোভ জাগলো সাদাফের ।তাই রুমে ঢুকে দরজা লক করে নূরের সামনে এসে দাঁড়ালো ।সাদাফ জানে সবাই এই মুহূর্তে ছাদে কা*জ করছে তাই কোন সমস্যা হবে না।
সাদাফ নুরের শিয়রের পাশে এসে হাঁটু ভে*ঙ্গে বসে নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ।মনে মনে ভাবল ,”এত তো ছোট নস নুর তুই আমার অনুভূতি বুঝতে পারিস না কেন ?ছোট্ট একটা প্রশ্ন করেছি তার উত্তরও তুই নিশ্চয়ই খুঁজে পাসনি এখনো?”
হঠাৎ নুর নড়ে চড়ে উঠলো ।সাথে সাথে সাদাফের হাত ধরে বুকের মধ্যে নিয়ে নিলো।সাদাফ এর হাত ঠিক নুরের বু*কে স্পর্শ করে আছে।সাদাফের অস্বস্থি হচ্ছে।হাত সরাতে চাইলে নুর আরো জোরে চে*পে রাখলো নিজের স্পর্শ*কাতর স্থানে।সাদাফ ঘামছে। শরীর শিহ‘‘রিত হচ্ছে। হঠাৎ টের পেলো নুর বলছে,”আপনি আমার সাথে আজকে সারাদিন অনেক খারাপ ব্যবহার করেছেন সাদাফ ভাই। নীলা রহমান লেখিকা।আপনার জন্য আমি একটু সেজেছিলাম আপনি আমার দিকে ফিরেও তাকাননি বরং আমাকে আর উল্টাপাল্টা কত কথা বললেন ।ঘুমন্ত অবস্থায় কথাগুলো ধীরে ধীরে বলছে নূর।”
সাদাফ একটু ঝুঁকে এসে কথা গুলো শোনার চেষ্টা করলো।নুর আবার বলতে শুরু করল।
সাদাফ মুচকি হেসে কথাগুলো শুনতে লাগলো কান খা*ড়া করে । নূর আমতা আমতা করে আবার বলল ,”আপনি আমার কে হন সাদাফ ভাই ?আপনি আমার কি হন?আপনি আমার কাছে আসলে আমার এমন লাগে কেনো?”
সাদাফ দুস্টুমি করে জানতে চাইলো,” কেমন লাগে নুর?”
নুর সাদাফের হাত আরো জোড়ে নিজের বুকের সাথে চে*পে ধরে বললো ,” সুরসুরি লাগে।”
সুখময় যন্ত্রণা তুমি পর্ব ৯
বলেই সাদাফের হাত নিয়েই নুর ওপাশ ফিরলো।হাত টান দিলে সময়ের আগে নুরের ঘুম ভেং*গে যাবে তাই সাদাফ বিছানায় উঠে আধশোয়া হয়ে বসে রইলো নুরের পাশে।সাদাফেরও কেমন সুরসুর অনুভূতি হচ্ছে।নুর হাত ছাড়ছে না। নীলা রহমান লেখিকা।এভাবে সাদাফ নুরের সাথে শুয়ে রইলো।নুরের নিঃশ্বাস এর বু*কের উঠানামা সাদাফ স্পস্ট অনুভব করছে।সাদাফের হাত কাঁপতে লাগলো ধীরে ধীরে।
এমন সময় একটি মেয়ের স্পর্শ*কাতর স্থানে হাত থাকা অবস্থায় একটি পুরুষ মানুষের পক্ষে কতটুকু অস্বস্তিকর এবং যন্ত্র*ণাদায়ক তা কেবল টের পাচ্ছে সাদাফ।