সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৪৮ (২)
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
নূহার চোখে টলমলে নদী। একেকটি ঢেউয়ের তোড় যেন অক্ষিকূটে আছড়ে পড়ার ভাব।
হাত-পা আর বুকের ভূমিকম্প সমেত কিছুক্ষণ ঐ দুজনের দিকে হাঁ করে চেয়ে রইল সে। অথচ ছলছল চোখে জমা, ভরা কালো মেঘদের গড়িয়ে মেয়েটা বৃষ্টি নামতে দিলো না।
কার্নিশের ধার ছোঁয়ার আগেই উল্টোঘুরে জল মুছে নিলো। টেনেহিঁচড়ে হাসি টেনে মেঝে থেকে ফুলদানির ভাঙা টুকরো গুলো তুলল সে। অতটা সময় মিথিলা নিরন্তর বকবক করল। আনন্দে,উচ্ছ্বাসে একাকার হয়ে কত কী বলল নাহিদ কে! কিন্তু নাহিদ কি আদৌ ওসব শুনেছে? ছেলেটার নিষ্পলক,নিষ্প্রাণ চোখ আটকেছে নূহার ওই আলোহীন মুখে। নূহা ওর দিক চাইলও না। চিবুক গলায় রেখেই দুটি অন্তরঙ্গ মানুষের পাশ কাটাল চুপচাপ।
তরুণীর প্রস্থান দেখে দেখেও নাহিদ চোখ ফেরাতে পারল না। এই যে মিথিলা, তার প্রথম ভালোবাসা? বুকের মধ্যে এইভাবে বন্দী,পেলব হাত শক্ত করে পিঠ ধরেছে তার? এতে যেন বিন্দুমাত্র কিছু অনুভব হলো না, যতটা হলো নূহার অমন মুখ ঘুরিয়ে যাওয়ায়।
সেই নিভন্ত চাউনী আচমকা ভড়কে গেল, কেউ একজন বুক হতে মিথিলাকে খাবলে নেয়ার তোপে। তীব্র জোরে টান মেরে সরিয়েছে তাকে।
মেয়েটা নিজেও চমকাল। হতভম্ব গোল চোখ ঠিকড়ে পড়ল তীব্রর লালচে মুখের ওপর। ও ফেটে পড়ল রাগে,
“ অ্যাই গোল্ড ডিগার অ্যাই, তোর না বর আছে? তুই না বিবাহিত? তাহলে ওকে জড়িয়ে ধরলি কেন?”
এক চিৎকারে মিথিলার বক্ষঃস্থল ছ্যাত করে উঠল।
নূহার একটু আগের ওসব কথাই দপ করে শির তুলল মনে। তীব্র খুন করে,কিডন্যাপও করে!
সেই আতঙ্কে মিথিলা চোটপাট করতে পারল না। তুতলে উঠল উলটে,
“ ইয়ে মানে আমি তো…”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ চুউউউপ! টেনে এক চড় মারব। সরে দাঁড়া। তোকে যেন আমি ওর ধারে-কাছেও না দেখি!”
মিথিলা সরে দাঁড়ায়। এক ফাঁকে আহত চোখে চায় নাহিদের পানে। ওর সামনে ওরই বন্ধু তাকে এইভাবে বলছে,ও কি কিছুই বলবে না?
নাহিদ মুখ খুলল তখনই। কণ্ঠস্বর বড্ড নিষ্প্রভ,
“ থাক না, বাদ দে।”
তক্ষুনি ভয়ানক এক কাণ্ড ঘটাল তীব্র। দড় এক ঘুষি বসাল নাহিদের নাকের ডগায়।
প্রকোপে সিঁড়ির ওপরেই উলটে পড়ল ছেলেটা।
মিথিলা ত্রাসে পিছিয়ে যায়। হাত দিয়ে মুখ চেপে থরথর করে ওঠে।
নাহিদ হতবাক,হতচেতন।
তীব্র নিজেই গিয়ে ওকে তুলল। শার্টের কলার ঠিকঠাক করে দিয়ে বলল,
“ এই গোল্ড ডিগারটা তোকে ছুঁয়েছে না? তোর একটা লম্বা শাওয়ার দরকার। আয়!”
নাহিদ কথা বলতে ভুলে গেছে। নাকটা ব্যথায় বিবশ। তীব্র ওকে টেনেটুনে ঘরে ঢুকে গেল। মিথিলা চোখ বড়ো বড়ো করে চেয়ে থাকল কিয়ৎক্ষণ! গা-গতর এখনও কাঁপছে তার। এটা কী মাস্তান না আর কিছু? এমন তিরের মত হাত চলে! এই ঘুষিটা ওকে মারলে ওতো এতক্ষণে! মিথিলা ওখানে দাঁড়িয়ে থাকারও সাহস পেলো না। ভো দৌড়ে
চলে গেল ছাদে।
তীব্র সত্যি সত্যিই এই রাত দুপুরে নাহিদকে শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। আশ্চর্যের ব্যাপার,ছেলেটা একটুখানি গাঁইগুঁইও করছে না। বরং থম ধরে অমন খুঁটি বনে রইল।
তীব্র তখন দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে। চিবুকে পাথুরে ভাব। নাহিদের ভিজে চুপচুপে হওয়া যতক্ষণ না তার মন মতোন হবে,ততক্ষণ ওটাকে নড়তেও দেবে না। সেসময় এলো। হাত তুলে বলল,
“ হয়েছে,আয়।”
নাহিদ বাধ্য যেন। শাওয়ার বন্ধ করে ধীরে- সুস্থে এগিয়ে এলো। মুখের ওপর তোয়ালে ছুড়ে মারল তীব্র। তর্জন দিলো শক্ত গলায়,
“ আর যদি তোকে ওর আশেপাশেও দেখি, নাহিদ,
ভুলে যাবি না আমি বিট্টু! যার ভয়ে এক সময় গোটা বাড্ডা কাঁপত। মারের হাত এখনও টনটনে। উল্টোপাল্টা কিছু করলে তোর হাতপা ভেঙে কিন্তু চুরমার করে ফেলব।”
নাহিদ কথা বলল না। চুপ করে রইল। তীব্রর মেজাজের অবস্থা একশো! এত রাগ শেষ কবে উঠেছিল মনে নেই। একটা ভালো করার ছুঁতোয় কত বড়ো ব্লান্ডার হয়ে গেছে। এই মেয়ে দেশে আছে জানলে ও কিছুতেই ভীতু মেয়ের মণিকে ফোন করতে যেতো না। গোরুটাকে যেভাবে অজগরের মতো প্যাঁচিয়ে ধরেছিল,এত সহজে পিছু ছাড়বে
বলে মনে হচ্ছে না।
তীব্র যখন রুমে ফিরল,হঠাৎ মুঠোফোন ফোন বাজে। তিরিক্ষ রাগ চেপেই ফোন হাতে তুলল সে।
জামশেদ কল করেছেন। আবার এত দিন পর!
তীব্র ভাবল ধরবে না। এই লোক একদিন এখানে এসেই যে কাণ্ড ঘটিয়ে গেছে! আরেকটু হলেই ওর জান নিয়ে নিতো।
কেটে দেবে দেবে করেও কী মনে করে ধরল সে।
কানে গুঁজতেই ছুটে এলো জামশেদের নিম্নভার স্বর,
“ কোথায় তুমি?”
“ পৃথিবীর এক কোণায় পড়ে আছি। বলুন,কী বলবেন!”
ভদ্রলোক চ সূচক শব্দ করে বললেন,
“ আমি জিজ্ঞেস করেছি তুমি বাসায় না বাইরে?”
ওর থমথমে স্বর,
“ বাসায়।”
“ কাল একবার ঢাকায় এসো।”
তীব্র মানা করতে চাইল,পূর্বেই সতর্ক করলেন তিনি।
“ কোনো না,কিংবা কোনো বাহানা শুনতে চাই না।”
ছেলেটা মুখের ওপর বলল,
“ আপনার শোনা না শোনা দিয়ে আমার কিছু এসে-যায়? আমি যাব না।”
তারপর একটুখানি নীরবতা। বাতাবরণের সময়টাকে আরো ভারি করল জামশেদের ঐ একটা কথা,
“ আচ্ছা বেশ। কী যেন নাম মেয়েটার? পুষ্পিতা, তাই তো!”
তীব্র চমকে গেল। পালটা প্রশ্নের সময় জামশেদ দিলেন না।
বললেন,
“ বাকি কথা নাহয় কাল সামনা-সামনিই হবে মাই সন? আই’ল ওয়েট ফর ইউ। দেরি কোরো না,কেমন?”
খট করে লাইন কেটে দিলেন তিনি। তীব্রর বুক সমান বিভ্রমে ডুবছে। মন্ত্রীমশাই হঠাৎ পুষ্পিতার কথা তুলল কেন?
অনুষ্ঠান শেষ। অতিথিরা যে যার মতো গন্তব্যে ফিরে যাচ্ছেন। বেঁচে যাওয়া খাবার-দাবারের অর্ধেকটাই বাবুর্চিদের দিয়ে দিলেন আয়েশা। কিছু আনলেন বাসায়। রমরমে আয়োজনের এই গোটা
সময়ে মুখের হাসি বড়ো কষ্টে ধরে রাখল নূহা।
বুক ছিঁড়ে নেওয়া অদম্য ব্যথা সে কাউকে বোঝাতে চায় না। এমন অমোঘ সহ্যশক্তি দেখে পৃথিবীও বুঝি বিস্ময়ে দোলে। প্রশ্ন তোলে অবাক হয়ে,
“ নূহা, এত চমৎকার ক্ষমতা নিয়ে তুমি জন্মালে কী করে?”
কিন্তু মনের হদিস কজন জানে? বাইরে থেকে শক্ত মেয়েটার অন্তরের ক্ষরণ দেখবেই বা কে? চোখের পর্দায় একটু আগের দৃশ্যের ভেসে ওঠা আটকাবেই বা কে?
মিথিলা ছুটে গিয়ে নাহিদকে জড়িয়ে ধরেছে, ফের মনে পড়তেই চোখদুটো খিচে নিলো নূহা। সবাই তখন ছাদ পেরিয়ে নিচেই নামছিল।
নূহার হাতে প্লেট-বাটি। উদাসীনতার তোড়ে বাম পা-টা হড়কে গেল তখনই।
কোত্থেকে যেন হাওয়ার মতোন হাজির হলো নাহিদ। ধড়ফড় করেই মেয়েটাকে আকড়ে ধরল সাথে।
মুখ থুবড়ে পড়তে পড়তেও বেঁচে গেল নূহা। চাইল হকচকিয়ে। নাহিদকে দেখেই ভীতসন্ত্রস্ত চাউনীজোড়া চট করে নিভে এলো আবার। সে পুরুষ নিস্তেজ। যাতে কোনো মোহ নেই, প্রভা নেই।
শুধাল আস্তে,
“ আপনি ঠিক আছেন?”
নূহা নিশ্চুপ। উত্তর না পেয়ে নাহিদ নিজেই সরে এলো।
ওপরে আর গেল না। নূহার হাত থেকে প্লেট-বাটি নিয়েই আবার নেমে এলো নিচে।
মেয়েটার বুক তোলপাড় করে কান্না পেলো তখন। হৃদয় ক্ষয়ে যাওয়ার মতো ব্যথার টান পড়ল জোরে।
ঠোঁট কামড়ে ধরে শব্দহীন কাঁদলও নূহা। এই চমৎকার ছেলেটা কেন ওকে ভালোবাসে না? কেন মিথিলার আগে ওর সাথে নাহিদের দেখা হোলো না?
নূহা যেমন হুট করেই কাঁদল? অমন ঝট করেই চোখ মুছল আবার।
বেদনায় রাঙানো মুখখানায় হাসি এনে ঢুকে গেল বাড়িতে।
পেছনে এতক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল মিথিলা। পুরো ব্যাপারখানার সে সবটা দেখেছে। বুদ্ধির মারপ্যাঁচে নূহার কান্না বুঝতে বেশি সময় লাগেনি।
এর মনে কি নাহিদের জন্যে কিছু আছে না কি? নূহা কি নাহিদকে ভালোবাসে?
ভাবতেই সে চিবুক শক্ত করল। নাহিদ শুধু ওর। নূহার সাধ্য থাকলে কেড়ে নিয়ে দেখাক।
কিন্তু, একটাই ভয়। ওই মাস্তানটা। ওটার সামনে থেকে নাহিদের কাছাকাছি কী করে থাকবে মিথিলা? চেহারা দেখলেই তো আতঙ্কে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে।
না না, তাই বলে তো হার মানলে চলবে না। নাহিদকে না পেলে,এই ঝুলন্ত জীবনটাকে সে নতুন করে সাজাবে কী করে?
কী যে করবে! মিথিলা দিশাহীন ভঙ্গিতে এদিক-সেদিক পাতা ফেলল চোখের।
হুট করে এক ভাবনায় মুখখানা ঝলকে উঠল সবেগে।
বিট্টু মাস্তান নিশ্চয়ই সব সময় নাহিদকে পাহারা দেবে না! কলেজে পড়ায় শুনেছে। কাল সকালে নিশ্চিত বের হবে। নাহিদ যদি একা থাকে,মিথিলা তো ওখানে যেতেই পারে। একবার শুধু ওকে আলাদা করে বোঝাতে হবে।
ছেলেটার প্রথম প্রেম সে। পুরুষ জীবনে আসা প্রথম নারীর প্রতি দূর্বল হয়। সেখানে নাহিদ মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারবে কখনও? এখন ওর এই দূর্বলতাই হবে মিথিলার মোক্ষম অস্ত্র।
রাত প্রায় অনেক! সব কিছু থেকে হাঁপ ছাড়তেই সালমা বিদায়ের প্রস্তুতি নিলেন। পুষ্পিতার কাছে এসে বললেন,
“ কী বলি বলতো, এসেছিলাম তোকে একেবারে সাথে নিয়ে যেতে। এখানে পড়াশোনা করছিস, টিউশন নিয়েছিস, এখন কীভাবে নিয়ে যাব?”
পুষ্পিতা হাতটা ধরে বলল,
“ আমি এখানে খুব ভালো আছি, মণি! তুমি এত ভেবো না। আন্টি ঠিক তোমার মতই যত্ন করে আমাকে।”
আয়েশা হাসলেন। সালমা বললেন,
“ তোর খালুজান খুব অপরাধবোধে ভুগছেন রে, মা। খুব দেখতে চাইছিলেন তোকে!”
“ আচ্ছা। আমি বরং তাহলে একবার গিয়ে দেখা করে আসব। আর তুমিতো বললেই তুমি মাঝেমধ্যে আসবে। ক্লাস ছুটি থাকলে নাহয় আমিও সাথে যাব!”
সহসা ভেঙচি কাটল নূহা। হুহ! সারাজীবন মেয়েটাকে জ্বালিয়ে এখন অপরাধবোধে ভুগছে! আর এই মাদার তেরেসাও গলে জল!
“ আমি গিয়ে দেখা করে আসব,মণি!”
সত্যি বাবা! পুষ্পিতার এত ভালোমানুষি দেখে মাঝেমধ্যে নূহাই অতীষ্ঠ হয়ে যায়।
রাহাত মন খারাপ করে বলল,
“ এখন আমাদের সাথে যাবে না, ছোটাপু? আমি যে তোমাকে নিতে এলাম। ঘরও সাজিয়ে রেখে এসেছি। মিথিপু বলেছে তোমাকে আর নিচে শুতে হবে না। এখন থেকে আমাদের সাথে খাটে শোবে।”
মিথিলার ঠোঁটে অপ্রস্তুত হাসি।
কথাগুলো রাহাতের এখনই বলতে হলো?
পুষ্পিতা বলল,
“ আমার কদিন পর পরীক্ষা সোনা,তারপর একটা লম্বা ছুটি। তখন যাই?”
অনীচ্ছাতেও মেনে নিলো রাহাত।
“ আচ্ছা।”
আয়েশা বললেন,
“ আপা,আপনাদের তো আসল খুশির খবরটাই দেয়া হয়নি। আপনাদের মেয়ে কিন্তু লটারিতে একটা ফ্ল্যাট জিতেছে। জানেন সেটা?”
চটক কাটার মতোন চাইল মিথিলা। আর্তনাদ করে বলল,
“ কী,ফ্ল্যাট জিতেছে?”
সালমা তাজ্জব বনে বললেন,
“ ওমা সে কী! কবে?”
“ এইতো, কিছু দিন।”
মিথিলা ওপাশ হতে উড়ে এলো কাছে। চকচকে মুখায়বে হড়বড় করল,
“ তুই ফ্ল্যাট পেয়েছিস? কেমন ফ্ল্যাট? সুন্দর অনেক? এতক্ষণ বলিসনি কেন আমাকে? আর,আর ফ্ল্যাট রেখে এখানে আছিস কেন এখনও? যাবি না সেখানে?”
“ হ্যাঁ, এক তারিখ থেকেই উঠব।”
মিথিলার মনের ভেতর প্রজাপতি পাখা মেলে দিলো।
এক তারিখ আসতে মাত্র দুদিন। ও তো চাইলে পুষ্পিতার ফ্ল্যাটেই থাকতে পারে। অন্তত ঢাকা-গাজীপুরের মতোন দুরুত্বটা ঘুচবে।
সালমা তুষ্ট চিত্তে বললেন,
“ বাহ, আমার মেয়েটার তাহলে একটা পাকাপোক্ত মাথা গোঁজার ঠাঁই আছে এখন? তার নিজের ফ্ল্যাট?”
বলতে বলতে চোখ ছলছল করে উঠল তাঁর।
পুষ্পিতা কাঁধে হাত রাখল।
“ কাঁদছো কেন?”
সালমা আঁচল মুড়িয়ে চোখ মুছলেন।
“ ও কিছু না। শোন মা,
ফ্ল্যাটে ওঠার আগে আমাকে জানাস। আপা তো অফিস করে সময় পাবে না। আমি বরং এসে সব গুছিয়ে দিয়ে যাব।”
আয়েশা বললেন,
“ এটা খুব ভালো কথা বললেন,আপা। আসলে চাকরির চক্করে ঘরের কাজই করা হয় না। বাসা পালটানো তো বহু কসরতের ব্যাপার। আপনি থাকলে ভালোই হবে।”
“ ঠিক আছে। আজ তাহলে আমরা আসি?”
“ থেকে গেলে হোতো না?”
“ ওর বাবা একা তো! আবার অসুস্থ মানুষ। সামনে তো আসা হবেই।”
“ আচ্ছা, তাহলে আর আটকাব না। চলুন এগিয়ে দেই। এত রাতে গাড়ি পাওয়া যাবে তো?”
“ হ্যাঁ হ্যাঁ উবার ডেকে নেবো।”
মিথিলা গভীর ভাবনায় ডুবে ছিল এতকাল। সালমা যেই বের হতে পা বাড়াবেন,ধড়ফড় করে বলল,
“ আম্মু,আমি থাকি আজকে?”
ওনার আগেই আয়েশা বললেন,
“ হ্যাঁ হ্যাঁ থাকো না। এটা আবার বলতে হয়?”
সালমা অবাক হলেন।
“ থাকবি? মানে,হঠাৎ কেন?”
ও জ্বিভে ঠোঁট ভেজাল।
“ না, আসলে অনেকদিন পর পুষ্পিতাকে পেলাম। ওকে রেখে যেতে ইচ্ছে করছে না। আর ওতো দুদিন পরেই ওর ফ্ল্যাটে শিফট হচ্ছে। তুমিও তো আসবে বলবে। আমি আবার যাব,আসব? এত জার্নি আর ভালো লাগে না।”
আয়েশা ফের বললেন,
“ থাকুক না আপা। ভালোই হবে। দু বোন মিলেমিশে থাকবে আজ।”
পুষ্পিতাও তাই বলল। সালমা রাজি হলেন। সঙ্গে সঙ্গে একই বায়না করল রাহাত। সেও থাকবে। কিন্তু তার আবদার মেনে নেওয়া হোলো না। ইংলিশ ভার্সন স্কুল, একদম কামাই করা যাবে না।
শুধু নূহার শ্যামলা আনন গা মেলাল অন্ধকারের সাথে। মিথিলার এই আনন্দ নিয়ে থাকতে চাওয়ার ইচ্ছেটা নিশ্চয়ই নাহিদের জন্যে? দুজন পাশাপাশি থাকবে বলেই! কিন্তু
আপুর না বিয়ে হয়েছে? এত মাস স্বামীর সঙ্গে থেকেও পুরোনো প্রেমিক দেখেই প্রেম উথলে উঠল?
সন্দেহের রেশ কাটাতেই চট করে প্রশ্ন ছুড়ল সে,
“ মিথিলা আপু, আজকে যে এখানে থাকবে দুলভাইকে জানাবে না?”
মেয়েটার বিজয়ী হাসিমুখ বিলীন হলো অমনি। তড়িৎ মায়ের দিকে ফিরল। আয়েশা বললেন,
“ ও হ্যাঁ,তা আপা জামাই বাবা কেমন আছে? আসেনি দেশে? এখানেও নিয়ে আসতেন।”
সালমা কী বলবেন বুঝে উঠলেন না। চার মাসের মাথায় মেয়ে-জামাইয়ের তালাক হওয়ার কথা কি মুখ ফুটে বলা যায়? তার দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যেই রাহাত বলে বসল,
“ ভাইয়া তো আসেনি,আন্টি। আপু একাই এসছে। ভাইয়ার কাছে আপু আর যাবে না!”
মিথিলা চোখ বুজে চ সূচক শব্দ করল। রাহাতকে কষে একটা চড় মারার ইচ্ছে হলো সাথে। বাকিরা বিহ্বল বনে চাইল তার দিক। পুষ্পিতা বিস্মিত হয়ে বলল,
“ আর যাবে না!”
সালমা চোখ পাঁকালেন ছেলেকে,
“ তুমি বড়োদের মধ্যে কথা বলছো কেন? যাও, বাইরে গিয়ে দাঁড়াও।”
রাহাত ঠোঁট উলটে চুপচাপ চলে গেল।
মা-মেয়ের চেহারার বিব্রত ছাপটুকু স্পষ্ট দেখতে পেলেন আয়েশা। প্রসঙ্গ কাটাতে বললেন,
“ ইয়ে, আপা খোরশেদ ভাইয়ের জন্যে একটু খাবার দেই? দাঁড়ান।”
বলেই রান্নাঘরের পথ ধরলেন তিনি। কদমে কেমন তাড়াহুড়ো ভাব। কিন্তু নূহা শ্বাস ফেলতেও ভুলে গেল। মিথিলার ওভাবে নাহিদকে জড়িয়ে ধরা, এখানে থাকতে চাওয়া
সব হিসেব যেন এবার কড়ায়-গণ্ডায় মিলেছে।
আপু নিজের স্বামীর কাছে যাবে না। এর মানে, নাহিদের কাছে ফিরবে? আর তার ভালোবাসা? এভাবেই সবার অলক্ষ্যে মনের ভেতরই দাফন হবে তা!
নূহার দূর্বল পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেল। চোখের জোয়ারে দুনিয়া ভাসাতে পারল না বলে,বড্ড আফসোস হলো আজ।
মিথিলা সকাল থেকে তক্কে তক্কে ঘুরছে। পুষ্পিতার কাছে রাতেই শুনেছিল, তীব্র নয়টা নাগাদ বেরিয়ে যায়। ঘড়িতে দশটা ছাড়াতেই শিকারির মতোন ঘরের বাইরে এলো সে।
বাসায় শুধু নূহা। আয়েশা,পুষ্পিতা সবাই যার যার কাজে চলে গেছে।
এপাশের বাড়িতে ঘুমে কাদা নাহিদ।
সেই গভীর তন্দ্রা ছুটল কলিংবেলের শব্দে। চোখ কচলে বসে, বিছানা ছাড়ল সে।
বিট্টু তো কোন সকালে ঢাকার জন্যে রওনা করেছে। তাহলে আবার কে এলো? মিরাজরা?
মহাবিরক্তি নিয়ে দরজা খুলল নাহিদ। ওপাশের মেয়েলি বদন চমকে দিলো সহসা। নিস্তব্ধ আওড়াল,
“ তুমি?”
মিথিলা কোনওদিক দেখল না। কিছু বললও না। দুহাতে নাহিদকে ঠেলে দিয়েই ভেতরে ঢুকে গেল। ত্রস্ত হাতে দোর চাপিয়ে বলল,
“ মাস্তানটা বাসায় নেই তো?”
নাহিদ ভড়কে গেছিল খুব! এবার
ধাতস্থ হলো। কিন্তু তীব্রকে করা সম্বোধন তার পছন্দ হয়নি। শুধরে দিলো কোমল স্বরে,
“ ও আমার বন্ধু,মিথিলা। এভাবে না বললে খুশি হবো!”
মেয়েটা একটু থমকায়। নাহিদ এভাবে কখনও কথা বলেনি। সব সময় তো বিড়ালের মত মিউমিউ করত। নূহার সঙ্গ পেয়ে বদলে গেছে তাই না? মাথা নুইয়ে
ছোটো করল আওয়াজ,
“ সরি! আসলে কাল ওভাবে বলায়…”
নাহিদ পথিমধ্যেই শুধাল,
“ তুমি কি কিছু বলবে?”
“ কেন? কিছু বলা ছাড়া বুঝি আসতে পারি না?”
“ ঠিক তা নয়৷ খালি ফ্ল্যাট তো। বাসায় কেউ নেই। এই সময় দুটো ছেলেমেয়েকে একসাথে দেখলে মানুষ উল্টোপাল্টা ভাববে।”
মিথিলা বক্র জবাব দিলো,
“ সত্যিই কি মানুষের কথা ভাবছো? না নূহার!”
নাহিদ বিমুঢ় হয়ে বলল,
“ এখানে নূহার কথা আসছে কেন?”
“ না আসার কী আছে? আমি অন্য কাউকে বিয়ে করায় তুমি যে নূহার ওপর ঝুঁকেছো সে আমি বুঝি, নাহিদ। আমাকে ভুলতে ওর কাঁধে ভর করেছো, তাই না?”
ছেলেটা খুব আশ্চর্য হোলো। মিথিলার মাথা খারাপ? না ও ভুল শুনছে?
আচমকা ফুঁপিয়ে উঠল মিথিলা। চট করে ওর হাত ধরে বলল,
“ আম সরি নাহিদ! আমি ইচ্ছে করে তোমাকে ঠকাইনি, বিশ্বাস করো! বাবা জোর করে বিয়েটা দিয়েছিলেন। তুমি বিট্টু মাস্তানের বন্ধু জানার পর থেকেই আমাদের সম্পর্কটা কিছুতেই মেনে নেননি। আমি অনেক বুঝিয়েছিলাম,কিন্তু বাবা আমার কোনো কথাই শুনলেন না।”
নাহিদ যেন আকাশ থেকে পড়ল।
“ তোমাকে জোর করে বিয়ে দিয়েছিল? তাহলে তুমি যে ফোনে বলতে…”.
মিথিলার জবাব তৈরি। রাতভর ধরে গোছানো কী না।
বলল,
“ ওসব তো আমার মুখের কথা ছিল। বাবার ভয়ে তোমাকে দূরে সরাতে বলেছিলাম। কিন্তু মনে মনে আমি এখনও তোমাকেই ভালোবাসি,নাহিদ!”
নাহিদ তৎপর হাত ছাড়িয়ে আনল। ফোস করে শ্বাস ফেলে বলল,
“ এসব কথা থাক,মিথিলা। তুমি এখন অন্যের স্ত্রী!”
ও উদ্ব্বগ নিয়ে বলল,
“ কে বলেছে আমি অন্যের স্ত্রী? আই ডিভোর্সড হিম।”
নাহিদ স্তম্ভিত আওড়াল,
“ কী?”
মিথিলার কণ্ঠ তুলোর চেয়েও নরম। চোখের জল গালে ফেলে বলল,
“ হ্যাঁ। পলাশকে আমি বিয়ে করতেই চাইনি। সেখানে সংসার! মনের মধ্যে একজনকে রেখে আরেকজন নিয়ে আদৌ সংসার হয় বলো?
হাঁপিয়ে যাচ্ছিলাম। সেজন্য ওকে ছেড়ে তোমার কাছে চলে এসেছি,নাহিদ। সারা বাড্ডা খুঁজে বেড়িয়েছি তোমাকে। আর দ্যাখো,হয়ত আল্লাহও চান আমি তোমার কাছে আসি। সেজন্যেইতো এইভাবে আমাদের দেখা করালেন।”
নাহিদ বাকরুদ্ধ চেয়ে। মিথিলা আবার হাত ধরল। চোখে তেমন থইথই নদী। অনুনয় করল ভেজা স্বরে,
“ তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না, নাহিদ। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি,বিশ্বাস করো। তোমাকে ছেড়ে আর কোত্থাও যাব না আমি। একটা সুযোগ দাও আমাকে, প্লিজ!”
নাহিদ কিছু বলতে পারল না। হয়ত জ্বিভে কথা নেই। নাহলে শব্দ খুইয়েছে। চোখের সামনে সব কিছু এলোমেলো কেবল ।
মিথিলা আবার বুকে মাথা রাখল। কেঁদে কেঁদে বলল,
“ তুমি ছাড়া আমার কেউ নেই,নাহিদ। বাবা-মাও আমাকে বোঝা মনে করেন। এখন তুমিও যদি ফিরিয়ে দাও, আমি কোথায় যাব?”
মিথিলার হুহু কান্না থামছে না। নাহিদের ভীষণ মায়া হলো। নির্মল মনটায় পাপ নেই বিধায় ধরে নিলো সব কথাই সত্যি। সংকোচে ভরতি হাতটা তুলে কোনওরকম মেয়েটার মাথায় রাখল সে।
বলল,
“ আমি আছি,কেঁদো না।”
তীব্র অফিসে ঢুকতেই সিকিউরিটি গার্ড আটকালেন।
“ স্যার এখন লাঞ্চ করছেন। পরে যান।”
ছেলেটার মেজাজ এমনিতেই তুঙ্গে। সেই আগুনে ঘি পড়ল এবার। চোখের
চশমাটা খুলে বোতামের খাঁজে গুঁজল। বলল তপ্ত স্বরে,
“ তোর স্যারের বাপ এসছে। আর তুই আমার সাথে লাঞ্চ মা**চ্ছিস?”
লোকটি তাজ্জব হলেন কিছু। এইভাবে তো একজনই কথা বলে। গোল গোল চোখে কিছুক্ষণ দেখলেন ওকে। পরপরই তুতলে বললেন,
“ ছছোটো স্যার? সরি স্যার! আমি স্যার,আপনাকে স্যার, চিনতে পারিনি স্যার।”
তীব্র একটু দমল। দোষ এর নয়। দোষ তার বেশভূষার। মুখ না খুললে কেউ চিনতেই পারে না। পালটা কিছু বলল না তাই। চোখ দিয়ে একপাশে সরতে বোঝালে,ভদ্রলোক সহসা সাইডে চেপে গেলেন।
ও ঢুকল ভেতরে। জামশেদ খাবার খাচ্ছেন। আজ একা নেই। এপাশের চেয়ারটায় আবুল বসে। তার সামনেও এক থালা খাবার।
মসমসে জুতোর আওয়াজে দরজার পানে চোখ তুললেন জামশেদ। অমনি হইহই করে বললেন,
“ আরে এসো এসো। তোমার অপেক্ষাতেই ছিলাম।”
তীব্রকে দেখেই আবুল সটান দাঁড়িয়ে পড়লেন। ঠোঁটে লম্বা হাসি ঝুলিয়ে বললেন,
“ আসসালামু আলাইকুম স্যার! ভালো আছেন? লাঞ্চ করেছেন? খাবার আনাব?”
তীব্র ওকে পুরো এড়িয়ে গেল। সোজাসুজি বাবাকে বলল,
“ ডেকেছেন কেন?”
জামশেদ ছুরি দিয়ে চিকেনের পিসটা টুকরো টুকরো করছেন। বললেন,
“ হিন্টস তো কালই দিলাম। বিস্তারিতও বলব। দাঁড়াও।”
আবুল ভুগছেন দোটানায়। কথাটা কি তীব্র শুনেছে? ফের শুধালেন,
“ ইয়ে, স্যার আপনি কি লাঞ্চ করবেন?”
তীব্র বিরক্ত চোখে চাইল।
“ তুই খাচ্ছিস খা। আমাকে জ্বালাচ্ছিস কেন?”
আবুল কটমট করলেন মাথা নুইয়ে। ভালো কথা বললেও দোষ। অসভ্য ছেলে!
জামশেদ বললেন,
“ আহা আবুল! এত কথা বোলো না। চুপচাপ খাও।”
আবুল খেতে পারলেন না। তার ভেতরে দুরকম টানাপোড়েন চলছে। একটা আনন্দের,আরেকটা ভয়ের। এখন কোনটা জিতবে কে জানে!
জামশেদের ঠোঁটের কোণায় চতুর হাসি। জ্বলজ্বল করছে চোখমুখ। এই যে চোখের সামনে ছেলে আনচান করে দাঁড়িয়ে,ছটফফাচ্ছে তার বুলির আশায়? সব যেন ভীষণ উপভোগ্য!
বললেন,
“ লাঞ্চ না করো, বোসো অ্যাট লিস্ট!”
তীব্রর তীক্ষ্ণতা বাড়ল। গাঢ় হলো সন্দেহ।
তার বাবার মতিগতি সুবিধের নয়। ও বসল না। সরাসরি প্রসঙ্গ তুলল,
“ আপনি কি পুষ্পিতার ব্যাপারে কিছু বলবেন?”
শব্দ করে হেসে উঠলেন জামশেদ। স্বাস্থ্যবাণ,পরিপাটি শরীরটা দোল খেল সাথে।
“ ঠিক জায়গায় ঘা পড়েছে তাহলে?”
পরপরই কেমন ভোল পালটে নিলেন ভদ্রলোক। হাস্যমুখ বদলে ফেললেন কঠোর বাক্য উগড়াতে,
“ আমি অবাক হচ্ছি, তীব্র!
অত দাম দিয়ে একটা ফ্ল্যাট কিনে তুমি কী না অউনারের নামের জায়গায় অন্য একটা মেয়ের নাম বসিয়েছ?”
তীব্রর প্রশ্নোত্তর মিলল। কপাল টানটান করে বলল,
“ ও, তাহলে খবরটা ওখান থেকে পেয়েছেন। যাক, পরিশ্রম আমারই কিছুটা কমে গেল। পুষ্পিতা কোনো অন্য মেয়ে নয় ড্যাড! সে আমার নিজের কেউ।”
“ কী উল্টোপাল্টা বলছো? তোমার নিজের কেউ মানে! বাই এনি চান্স, তুমি কি এই মেয়ের জন্যেই গাজীপুরে হত্যে দিয়ে পড়ে আছো?”
তীব্র সদর্পে বলল,
“ হ্যাঁ!’’
জামশেদ হতবাক হয়ে বললেন,
“ এই জন্যে একটা দামি ফ্ল্যাট তুমি মেয়েটাকে দিয়ে দিলে? হাউ রিডিকিউলাস!
কেন? কী পেয়েছ মেয়েটাতে? আমি যদি ভুল না হই ও একটা রাস্তার মেয়ে। বাবা মা কিচ্ছু নেই। অন্যের বাড়ির আশ্রিতা। অমন চালচুলোহীন মেয়ের সাথে
কী সম্পর্ক তোমার?”
তীব্র টেবিল থাপড়ে বলল,
“ ব্যস! আমার সামনে ওকে নিয়ে আর একটাও বাজে কথা বলবেন না। ও রাস্তার মেয়ে নয়, ও আমার সব। আমি ওকে ভালোবাসি!”
সেই থাপ্পড়টায় কেঁপে উঠলেন আবুল। প্রৌঢ় ঠোঁটযুগল ঠকঠক করছে। অসভ্য ছেলেটা যদি বাপের রাগ ওনার ওপর ঝেড়ে দেয়? সহসা দু পা পিছিয়ে গেলেন তিনি। যাতে হাত বাড়ালেও তীব্র ছুঁতে না পারে ।
জামশেদ স্তব্ধ,বিমূর্ত।
“ ভালোবাসো? তোমার মাথা ঠিক আছে? তুমি একজন মন্ত্রীর ছেলে তীব্র,ভুলে গেছো সেটা?”
তীব্র দরজা গলায় বলল,
“ আই ডোন্ট কেয়ার! আপনার মন্ত্রীত্বের জোরে আমি চলিনি। চলবও না। রাস্তার কেন,
ভীতু মেয়ে যদি এই পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃস্থ,দূর্গত মেয়েও হয়,তাও আমি ওকেই ভালোবাসি,ভালোবাসব। আর বিয়েও ওকেই করব!”
ঘোষণা দিয়ে তীব্র বেরিয়ে গেল। জামশেদ নির্বাক চেয়ে রইলেন। আবুল ঢোক গিললেন। বাপ্রেহ, কী তেজ ছেলের! চশমাটা বাম হাতে ওপরে ঠেললেন একটু! জামশেদের স্তম্ভিত মুখখানা খেয়াল করেই ক্রুর হাসলেন পরপর।
দাউদাউ আগুনে আরেক ফোঁটা কেরোসিন ঢালতে বললেন,
“ ছোটো স্যারের সাহস দেখলেন স্যার? আপনার মুখের ওপর এভাবে কথা বলে গেল? আমি তো ভাবতেই পারছি না।”
সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৪৭
জামশেদ কিছুক্ষণ থম ধরে রইলেন। চোখ তুললেন হঠাৎ। বললেন,
“ গাজীপুরে কিছু লোক ঠিক করো, আবুল। এক্ষুনি।”
ভদ্রলোক প্রশ্ন নিয়ে চেয়ে। তিনি বললেন,
“ তীব্র পৌঁছানোর আগেই ঐ মেয়েকে সরিয়ে দাও। পৃথিবীর কোনও কোণায়ও যেন কোনও চিহ্ন না থাকে!”