সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১০

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১০
বুশরা আহমেদ

কিছু ক্ষণের মধ্যেই করিডর রুমে প্রবেশ করলো এক লম্বা, চওড়া পেশীবহুল সুপুরুষ।পরনে লং কোর্ট,প্যান্ট, চুল গুলো জেল দিয়ে পিছনে ঠেলে দেওয়া। মুখে মুখোশ।বাদামি রঙের মনি বিশিষ্ট চোখ জোড়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে হবে কোন এক সুদর্শন পুরুষ।
লোকটি করিডর রুমে প্রবেশ করতেই সবাই চুপ হয়ে গেল। নিষিদ্ধ রুম , প্রত্যেকের চোখে আতঙ্ক। লোকটা এসে সামনে থাকা চেয়ারে বসলো । সবাইকে ইশারা করলো বসতে । সবাই নিজ নিজ চেয়ারে বসে পরলো।তিক্ষ চোখের দৃষ্টিতে চারিদিকে সব কিছু এক বার প্রয়োগ করে নিলো।
সবাই নিশ্চুপ,,

মুখোশ পরা লোকটি বলে উঠলো ” সবার এতো ভয় পাওয়ার কারণ কি ?? ”
তৌফিক: বস ,, আরিয়ান ও তার বাবা আনোয়ার খুব তাড়াতাড়ি কানাডা থেকে আমিরিকায় আসবে । আমাদের আরো বেশি সিকিউরিটি গার্ডস বাড়ানো উচিত।
লোকটা: হ্যাঁ ঠিক বলেছো ,,তৌফিক যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমারা সিকিউরিটি গার্ডস বাড়াও । সম্ভব হলে সব সময় নিজেদের প্রস্তুত রাখো।তারা চেষ্টা করবে আমাদের আর,এ কম্পানি এর ক্ষতি করার ‌। আর তৌফিক তুমি সাবধানে সব সময় রেডি থাকো।
তোমার বাবা মা এর উপর যে হামলা টা হয়েছে সেইটা তোমার উপর ও হতে পারে।
তৌফিক: আপনি চিন্তা করবেন না বস ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মুখোশ পরা লোকটা: আর হ্যা আমাদের সব অস্ত্র গুলো সব কিছু। পুলিশ এর কাছে যেন পৌছে যায়।
তৌফিক: চিন্তা করিয়েন না বস ।আর কালকে একটা কনফারেন্স আছে । আপনাকে ওখানে উপস্থিত থাকতে বলছে । ওখানে সব পুলিশ অফিসার, ইনচার্জ, এসআই,এমন কি প্রেসিডেন্ট ও উপস্থিত থাকবে।
লোকটা : ওকে ঠিক আছে।বলেই চলে গেল করিডোর রুম থেকে।
গার্ড এসে গাড়ির দরজা খুলতেই মুখোশ পরা লোকটা গাড়িতে উঠে বসলো।
তৌফিক এসে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো।
লোকটা মুখের মুখোশ খুলতেই ফুটিয়ে উঠলো সেই চিরচেনা মুখ টা।সেই ফর্সা মুখটা,গাল ভর্তি চাপ দাঁড়ি, চোখের নিচে গালে থাকা সেই কাঁটা দাগ । ব্রাউন রঙের চোখের মনি বিশিষ্ট,জোড়া ভ্রু বিশিষ্ট সেই নজর কাড়া পাপড়ি যুক্ত মুখমণ্ডলটা ।সে আর কেউ না গ্যাংস্টার লিডার তাজোয়ার আহমেদ রাহি।
দ্যা গ্ৰেট বিজনেস ম্যান রায়হান আহমেদ রাহি আর. এ ।

তৌফিক: বস আমাদের কি করা উচিত এখন!?
রাহি: ভাইয়া বলতে পারিস।
তৌফিক মুচকি হেসে বলল,,
তৌফিক: ভাইয়া আমাদের মনে হয় আনোয়ার খান ও তার ছেলে আমাদের উপর আটাক করতে পারে। আমাদের বনুকে এখান থেকে অন্য জায়গায় সিফট করানো উচিত।
রাহি: আমার উপর কি তোর কোন বিশ্বাস নেই। নুর এখানেই বেশি সেফ আছে । চিন্তা কোন কারণ নেই আমি বেঁচে থাকতে নুরের কিছু হবে না।
তৌফিক আর কোন কিছু বললো না কারণ তার পাশে বসা মানুষ টি যে সে কোন মানুষ না ।
সে হলো গ্যাংস্টার লিডার তাজোয়ার আহমেদ রাহি যার কথায় ,যার নাম শুনলেই সবাই আতঙ্কে থাকে ।
এই দিকে বুশরা সেই কখন থেকে রুমে শুয়ে আছে । তার খেয়াল নেই। রাহি আর তৌফিক বাসায় আসতেই রাহি দেখলো হেভেন ও কেভেন নিচে গার্ড দের এলার্ট করছে ।
রাহি হেভেন কে জিজ্ঞেস করল,,

বুশরা কোথায় হেভেন ??
হেভেন: উপরে গেছে এখন নিতে আসে নি..!!
রাহি দেরি না করে বুশরার রুমের দিকে গেল।
দরজা নক না করেই বুশরার রুমে ঢুকে পরলো ,, রাহি দেখলো বুশরা চুপ চাপ ঘুমাচ্ছে।রাহি বুশরার পাশে গিয়ে বসলো, বুশরার মুখের দিকে তাকাতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো । বুশরার চোখে পানি চিকচিক করছে।গাল বেয়ে পরা পানি গুলো শুকে গেছে।
বুশরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।বুশরা চোখ খুলে রাহি কে দেখে উঠে বসলো ।
এরি মধ্যে তৌফিক রুমে আসলো ।
তৌফিক: বনু কি হয়েছে এই সময় শুয়ে আছিস ?
বুশরা : কিছু না ভাইয়া। তোমরা কখন আসলে??
তৌফিক:এইতো কিছুক্ষণ আগে ‌। তোকে নিয়ে একটু ঘুরে আসি।
বুশরা : না ভাইয়া আজকে না । আমি পারবো না.।
তৌফিক: কেন কি হয়েছে?

বুশরা : কিছু না। তোমারা এখন যাও।আমি যাচ্ছি।
তৌফিক চলে গেল কিন্তু রাহি বুঝলো বুশরার কিছু একটা হয়েছে।
তৌফিক চলে যেতেই বুশরা আবার শুয়ে পরলো।
রাহি: কি হয়েছে শুয়ে পড়লি যে? কালকে তোকে ভার্সিটি তে ভর্তি করাবো । কালকে সকালে বের হবো ।
রাহি উঠে চলে যাবে তখনি কিছু একটা দেখে । আবার বুশরার দিকে তাকিয়ে রইল।
বুশরা আজকে পিরিয়ড হয়েছে ।আর পিরিয়ড হলেই একটা মেয়ের শরীরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়। বুশরার ও ঠিক তাই , বুশরার হাত,পা পেট ব্যাথার কারণে শুয়ে আছে। কিন্তু কাওকে বুঝতে দিতে চায় নি।
কিন্তু রাহির চোখে পরেই গেল টেবিলে থাকা প্যাড এর প্যাকেট টা তে ।
রাহি বুশরার কিছে এসে বললো,, তোর কি কিছু হয়েছে নুর?

বুশরা : না তো,, কেন?
রাহি: তোর পিরিয়ড হয়েছে বললেই পারতি।
বুশরা কি বলবে বুঝলো না। চুপ করে শুয়ে রইলো। বুশরার একটু লজ্জা লাগলেও পরে সে স্বাভাবিক হলো ।
রাহি নিচে চলে আসলো ।এসে হালকা কুসুম গরম পানি, নুডুলস বানিয়ে বুশরার রুমে নিয়ে গেল।বুশরার হাতে নুডুলস এর বাটি টা দিয়ে।
রাহি একটা হটপট ব্যাগ এ গরম পানি ভরে সেটিতে তোয়ালে পেঁচিয়ে বুশরার পেটে রাখলো ।
বুশরা : তুমি এতো কিছু কি করে জানলে?
রাহি: জানতে হয় । তারাতাড়ি নুডুলস টা খেয়ে নে।
বুশরা নুডুলস টা খেয়ে নিল। কোন কথা বললো না।
রাহি বুশরাকে শুয়ে দিয়ে সে নিচে চলে গেল।
নিচে আসতেই কেভেন বললো

” স্যার , আনোয়ার খান ও তার ছেলে আমিরিকায় এসেছে । তারা তৌফিক স্যারকে কে খুঁজছে ”
রাহি: সামান্য হাসি দিয়ে বলল” খুজতে দেও আমাদের খুঁজে পাওয়া এতো সহজ না। তোমারা সব সময় রেডি থাকো। সন্দেহ জনক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে জানাবে।
অন্যদিকে,, আনোয়ার খান যে খুব ভালো একজন পার্টনার ছিল আহমেদ গ্ৰুপ অফ ইন্ড্রাস্ট্রির। কিন্তু একটা সময় প্রায় অনেক টাকা আত্মসাৎ করে পারি জমায় বিদেশে।তারপর থেকে একের পর এক ক্ষতি করেই চলেছে।
এমনকি তৌফিক এর বাবা মা কেও মেরে ফেলেছে ।

আনোয়ার: ঔ আহমেদ গ্ৰুপ অফ ইন্ড্রাস্ট্রির কে আবার ধ্বংস করার আগে । আমাদের জানতে হবে কে এই আর .এ কম্পানি এর মালিক ।তার সঙ্গে দেখা করে এক সঙ্গে হাত মিলাতে পারলে । অনেক টাকা আত্মসাৎ করা যাবে ।
আরিয়ান: শুনেছি আহমেদ পরিবারের তিন জন এই আমিরিকায় আছে । তাদের কে খুঁজে বের করতে পারলেই হবে।
আনোয়ার: তিন জন ? কিন্তু আমি তো শুনেছি । শুধু একজন আহমেদ বাড়ির বড় ছেলে আর ঐ তৌফিক।যে প্রাণে বেঁচে গেছিলো আমার থেকে ।
এর মধ্যে একজন লোক এসে বললো,, স্যার আমাদের গাড়ি গুলো পুলিশ আটকায়ে দিছে । আর সবকিছু চেকিং করছে ।

আরিয়ান: পুলিশের সাহস হয় কি করে। গাড়ি আটকানোর ।আর গাড়ি এখন পার হয় নি কেন? রাতের মধ্যেই তো সব গাড়ি গন্তব্য পৌঁছে যাওয়ার কথা।
লোকটা : সরি স্যার আসলে ??
আরিয়ান হুংকার দিয়ে উঠলো। পকেট থেকে বন্দুক বের করতেই লোকটা ভয়ে কেঁপে উঠল।আর পায়ে ধরে বললো আমাকে মারবেন না স্যার।

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ৯

আরিয়ান না শুনেই ,বুক বরাবর দুই টা গুলি করলো ।
লোকটা সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে পড়ে গেল।
আনোয়ার: এই ভাবে গুলি করা তোমার ঠিক হয় নি।
আরিয়ান: আমার মাথা গরম হয়ে গেল সব করতে পারি।

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ১১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here