সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ২২
বুশরা আহমেদ
এইদিকে দুরে একটা গাড়িতে বসে একজন রাহি আর বুশরাকে পরোখ করছিল তারপর অস্ফুট হেঁসে বলল,
Interesting
গাড়ি তে বসে থাকা ব্যক্তিটি আর কেউ না,, আনোয়ার হোসেন এর ছেলে আরিয়ান হোসেন।
কিছু দিন আগে কিছু গার্ডস এসে আরিয়ান হোসেন কে বলে যে রায়হান আহমেদ রাহি হচ্ছে হাফিজুর আহমেদ এর ছেলে। তখন থেকে আনোয়ার হোসেন তাদের কে এক নিমিষেই শেষ করে দিতে চায় ।
কিন্তু তার আগে তৌফিক কে মেরে ফেলতে চায় তারা । সেই জন্য গার্ড দের দিয়ে বিভিন্ন ভাবে তাদের খোঁজ রাখছে আরিয়ান হোসেন।
এইদিকে দুই দিন আগে যখন বুশরা আর এলিন যখন বাইক রাইড করছিল আরিয়ান হোসেন তখন গাড়ি থামিয়ে তাদের দেখছিল ,
তখন সে খেয়াল করে ২ জন রমনী,একজন এর পরনে জিন্স প্যান্ট সঙ্গে লেদার সুট ,আর একজন এর পরণে টপস্ আর জিন্স সঙ্গে, হিজাব, মাথায় হেলমেট।
আরিয়ান এর ভালো লেগে যায় সেই হিজাব পরিহিতা রমনী কে । চেহারায় নেই কোন মেকআপ এর ছোঁয়া,নেই কোন সাজ সোজ্জা তুবও সেই মেয়েকেই ভালো লাগে তার ।
খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে সে ভার্সিটিতে পরে বাংলাদেশী তাই আজ এই ভার্সিটির সামনে এসেছে সে । কিন্তু এসে দেখে রাহি কে ,,
তখন সে জানতে পারে মেয়েটি আর কেউ না রাহির কাজিন।
তাই সে বলে উঠল,,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
Interesting
কিন্তু রাহি যদি জানতে পারে আরিয়ান তার জানপাখির দিকে নজর দিছে এর ফল তার কল্পনার বাহিরে।
বুশরা রাহি কে জিজ্ঞেস করলো ,,
তুমি আদনান স্যার কে চিনো কিভাবে?
রাহি: আমার ব্যাচমেট ছিল।
বুশরা: তাহলে তো তোমারা ফ্রেন্ড।
রাহি : হুম।
বুশরা : তাহলে এই ভাবে কথা বললে কেন। আগে বলো নি কেন?? যে আদনান স্যার তোমার ফ্রেন্ড।
রাহি গাড়ি থামালো ,, বুশরার দিকে তাকিয়ে বললো,,
শোন একটা কথা বলে রাখি আমার ফ্রেন্ড না ব্যাচমেট ,আমি আদনান কে চিনি তাই বলে বেশি কথা বলবি না একদম। আমি একদম পছন্দ করি না। আর সব সময় দুরে থাকবি ।
বুশরা : কেন?
রাহি : আমি বলছি তাই ।
বুশরা : তুমি বললে শুনতে হবে কেন।
রাহি এই বার রাগী চোখে বুশরার দিকে তাকাতেই বুশরা চুপ হয়ে গেল,,
বললো আমি তো কিছুই বলি নি।
রাহি: বেশি কথা বলবি না।না হলে এক থাপ্পড় এ দাঁত ফেলে দিবো।
বুশরার ইচ্ছে হলো এইটা বলতে যে,,
যে আচ্ছা ফেলে দেখাও ,,
কিন্তু ভয়ে কিছু বললো না,যদি সত্যি সত্যি থাপ্পড় মেরে দেয়।
রাতে তৌফিক আর রাহি এক সঙ্গে ড্রয়িং রুমে এক সঙ্গে বসে আছে ।
বুশরা আজকে ডিনার তৈরি করতে চাইলো কিন্তু ভ্যাভেন কিছু তেই তা দিবে না।
বুশরা করবেই । তাই আর উপায় না পেয়ে তারা
চলে গেলো ।
রাহির সবচেয়ে পছন্দের খাবার হচ্ছে তার ছোট আম্মুর হাতের মটন বিরিয়ানি আর কাবাব।
বুশরা তাই দেরি না করে ঠিক করলো তাই বানাবে। তৌফিক আর রাহি নিজেদের অফিসিয়ালি কাজে ব্যাস্ত।
বুশরা দেরি না করে মটন ম্যারিনেট করে রেখে । কাবাব বানানোর জন্য মাংস প্রসেস করে নিলো ।
এইদিকে সে ক্যাভেন ও ভ্যাভেনকে কিচেন এ কিছুতেই ঢুকতে দিচ্ছে না।
বুশরা এই রান্না তার আম্মুর কাছ থেকেই শিখেছে । সে জানে রাহি এই বিরিয়ানি খেতে পছন্দ করে ।
বুশরা রান্না প্রায় শেষের দিকে।
তৌফিক আর রাহি বসে আছে ।
রাহি তৌফিক এর সঙ্গে কথা বলছিল হঠাৎ বিরিয়ানি এর গন্ধে সে অবাক হয়ে তৌফিক কে জিজ্ঞেস করল,,
রাহি: বিরিয়ানি এর গন্ধ না?
তৌফিক: হ্যাঁ কিন্তু ভ্যাভেন ক্যাভেন তো জানে না বিরিয়ানি কিভাবে রান্না করতে হয়।
রাহি: নুর কি রান্না করছে !
তৌফিক: জানি না তো ।
রাহি আর এক মুহূর্তও দেরি না করে কিচেন এর দিকে পা বাড়ালো,,
রাহি দেখলো বুশরা রান্না করছে । প্রচন্ড ঠান্ডা কিন্তু এর মধ্যেও বুশরার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
রাহি কিচেন এ ঢুকে বুশরার পিছনে দাঁড়ালো ,,
বুশরা পিছনে ঘুরবে তখনি রাহির সঙ্গে ধাক্কা খেয়েও খেলো না।
বুশরা ভ্রু কুঁচকে জিঙ্গেস করলো এখানে কি করছো ?
রাহি: কি করছিস নুর?
বুশরা : আমি যাই করি না কেন তুমি এখানে কেন?
রাহি: বিরিয়ানি দেখে রাহির খুব খেতে ইচ্ছে করলো বললো বিরিয়ানি করছিস তাই না তাড়াতাড়ি খেতে দে ।
বুশরা : আমি তোমার জন্য করি নি।
রাহি: কার জন্য করেছিস শুনতে চাই না। দেশ থেকে এসে ছোট আম্মু আর আম্মুর হাতের রান্না মিস করছি ।
বুশরা : তো আমি কি করবো ।
রাহি: রান্না করবি মাঝে মাঝে। আজকে যেমন করলি ।
বুশরা: তোমার জন্য না।আমি আমার জন্য আর আমার ভাইয়ার জন্য করেছি। তোমার জন্য আমি রান্না করবো কেন।
রাহি রাগ হলো খুব। কোন কথা না বলে রুমে চলে গেল।
বুশরা : কোথায় যাচ্ছো।
রাহি কোন উত্তর দিল না।
তৌফিক পাশ থেকে বুশরাকে জিঙ্গেস করলো,,
তৌফিক: আমি তো বিরিয়ানি এতো পছন্দ করি না।রান্না টা কার জন্য করেছিস?
বুশরা : নিশ্চুপ।
তৌফিক: যার জন্য করেছিস তাকেই বললি তার জন্য করিস নি ।
বুশরা : আমি তো যাস্ট মজা করেছি।
তৌফিক: তুই তো জানিস ভাইয়া বিরিয়ানি লাভার । ভাইয়া কতটা পছন্দ করে । ভাইয়ার রুমে নিয়ে যা।
বুশরা : তোমাকে খেতে দেই আগে ।
তৌফিক: আমার কেয়ার করতে হবে না আগে যার জন্য কষ্ট করে রান্না করেছিস তাকেই খাওয়া।
বুশরা একটা প্লেট এ খাবার নিয়ে উপরে গেলো ।
বুশরা রাহির রুমে এসে লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে দেখলো রাহি শুয়ে আছে।
বুশরা রাহির পাশে গিয়ে বসলো।রাহি ভাইয়া!!
রাহি নিশ্চুপ। বুশরা রাহির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাহি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ।
তোমার ফেবারিট খাবার । আমি অনেক কষ্ট করে বানিয়েছি খাবে না??
রাহি তাও নিশ্চুপ। বুশরা বললো ঠিক আছে খাইতে হবে না।
আমি নিয়ে চলে যাচ্ছি। বলেই উঠতে যাবে তখনি রাহি বুশরার হাত ধরে টেনে আবার বসালো । বুশরা কিছু বললো না। প্লেট টা হাতে নিয়ে রাহিকে খাইয়ে দিতে লাগলো রাহিও চুপ চাপ খেতে লাগলো ।
রাহি বললো তুই এতো ভালো রান্না কবে শিখলি । ছোট আম্মুর মতোই হয়েছে । এখন থেকে মাঝে মাঝেই বিরিয়ানি রান্না করবি।
বুশরা রাহির দিকে তাকিয়ে ভাবলো ,, তুমি সব সময় বলো যে ভালোবাসো না। অথচো তোমার ব্যবহার কাজ সব কিছু তেই আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা প্রকাশ পায়।
রাহি : তুই খেয়েছিস নুর!
বুশরা : নিশ্চুপ….
রাহি: কি হলো কথা বলছিস না কেন??
বুশরা : এতোক্ষণ তো তুমিও কিছু বলছিলে না।
রাহি বুশরার হাত থেকে প্লেট টা নিয়ে বুশরাকে খাইয়ে দিল।
তৌফিক দরজার বাইরে থেকে সব দেখলো ।
তৌফিক মনে মনে:তোমাদের ভালোবাসায় কারো নজর না লাগুক ।বনু তোমাকে ভুল বুঝলে আমি কি করে সামলাবো ভাইয়া।
পরের দিন সকালে রাহি ঘুম থেকে উঠে ওয়ার্ক আউট করছে ।
বুশরাও ঘুম থেকে উঠে এই দিকেই যাচ্ছিল তখনি সে রাহিকে দেখে ওয়ার্ক আউট করতে।
রাহি পরণে শুধু হাটু পর্যন্ত প্যান্ট। ওয়ার্ক আউট করার ফলে পিটে বুকে ঘাম জমে আছে।
বুশরা এক দৃষ্টিতে রাহির দিকে তাকিয়ে আছে ,,রাহির জিম করা বডি ,, পেশিবহুল হাত ,এডমস আপেল।বুশরা আবার নতুন করে রাহির প্রেমে পরে গেলো ।
মনে মনে বললো ,, মাশাআল্লাহ। বুশরা খুব ইচ্ছে হলো রাহির গালে কয়েকটা চুমু খেতে।
এই সব ভাবতে ভাবতে রাহি যে বুশরার সামনে কখন এসে দাঁড়িয়েছে তার খেয়াল নেই ।
রাহি : এই ভাবে আর কতক্ষন তাকিয়ে থাকবি।
বুশরা রাহির দিকে তাকিয়ে,, বললো,,
একটা কাজ করবো বকা দিবে না তো।
রাহি : না ,,বল।
বুশরা: না থাক ।
রাহি: বললাম তো।কিছু বলবো না।
বুশরা রাহিকে সামনে দেখে তাড়াতাড়ি করে রাহির গলা জড়িয়ে তাড়াতাড়ি কয়েকটা চুমু খেয়ে দৌড়ে রুমে চলে আসলো ।
সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ২১
রাহি কিছু বোঝার আগেই বুশরা চলে এসেছে।
বুশরা রুমে শুয়ে এসে বেডে শুয়ে পড়ল।
আর গাইতে গাগলো ,,
“”মনটা চুরি ,মারলি ছুঁড়ি আমার বুকে তুই,,
লাগছে শরম লাগছে গরম লুকই আমি কই। “”
বলেই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বেডে গড়াগড়ি করছে ।