সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ২৩

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ২৩
বুশরা আহমেদ

মনে মনে বললো ,, মাশাআল্লাহ। বুশরা খুব ইচ্ছে হলো রাহির গালে কয়েকটা চুমু খেতে।
এই সব ভাবতে ভাবতে রাহি যে বুশরার সামনে কখন এসে দাঁড়িয়েছে তার খেয়াল নেই ‌।
রাহি : এই ভাবে আর কতক্ষন তাকিয়ে থাকবি।
বুশরা রাহির দিকে তাকিয়ে,,
একটা কাজ করবো বকা দিবে না তো।
রাহি : না ,,বল।
বুশরা: না থাক ।
রাহি: বললাম তো।কিছু বলবো না।
বুশরা রহিকে সামনে দেখে তাড়াতাড়ি করে রাহির গলা জড়িয়ে তাড়াতাড়ি কয়েকটা চুমু খেয়ে দৌড়ে রুমে চলে আসলো ।

রাহি কিছু বোঝার আগেই বুশরা চলে এসেছে।
বুশরা রুমে শুয়ে এসে বেডে শুয়ে পড়ল।
আর গাইতে গাগলো ,,
মনটা চুরি ,মারলি ছুঁড়ি আমার বুকে তুই,,
লাগছে শরম লাগছে গরম লুকই আমি কই।
বলেই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে বেডে গড়াগড়ি করছে ।
বুশরা রাহির গালে এতো তাড়াতাড়ি চুমু খেয়ে দৌড়ে চলে গেছে যে রাহি যখন বুঝতে পেরেছে অবাক এর চরম সীমায় পৌঁছে গেছে।
তৌফিক এইদিকেই আসছিল , রাহি হাঁ হয়ে আছে দেখে তৌফিক রাহিকে বললো ,,
কি হয়েছে ভাইয়া এই ভাবে হাঁ হয়ে আছো কেন?
রাহি: তোর বোনের তো অনেক সাহস বেড়ে গিয়েছে?
তৌফিক: তা তো আগে থেকেই।বনু করেছে টা কি?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

রাহি: তোর বনের সাহস টা একটু বেশি বেড়ে গেছে এইটাকে আর বাড়তে দেওয়া যাবে না।
এরি মধ্যে বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেলো। আজকে তৌফিক বাংলাদেশ এ যাবে। বুশরা তৌফিক এর সঙ্গে জেদ করছে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রাহি নিষেধ করে দিয়েছে।
তৌফিক রেডি হয়ে অপেক্ষা করছে । বুশরা আর রাহির জন্য কারণ তারা তৌফিক কে ছাড়তে যাবে।
বুশরা আর রাহি নিচে আসতেই ,,, তৌফিক তাদের বললো,,
তোমাদের এতো দেরি হয় কেন ,, আমার ফ্লাইট এর টাইম হয়ে যাচ্ছে। তোমাদের আর যেতে হবে না।
রাহি: আরে চল ,,দেরি হলে প্রাইভেট জেট বুক করে দিবো।
তৌফিক: তার আর দরকার হবে না। চল ।
রাহি ড্রাইভিং সিটে বসলো ।

বুশরা পিছনের সিটে বসতে যাবে । তখনি রাহি বললো সামনে বস‌ । বুশরা কোন কথা না বলে সামনের সিটে বসলো।
তৌফিক পিছনে গিয়ে বসলো । কিছু ক্ষণের মধ্যেই তারা এয়ার পোর্টে পৌঁছে গেলো।
তৌফিক এয়ার পোর্টে ঢুকে যাওয়ার পর রাহি বুশরাকে নিয়ে চলে এলো ।
রাহি সামনে একটা ফুচকার দোকান দেখে থামালো ।
বুশরা : এখানে থামালে কেন?
রাহি : নেমে আয়…

বুশরার মন টা ভালো নেই তারো খুব ইচ্ছে করছে বাংলাদেশে যেতে । কিন্তু তা তো হলো না। রাহির সঙ্গেও বেশি ঝগড়া করলো না। বুশরা চুপচাপ নেমে এলো। রাহি বুশরার হাত ধরলো।বুশরা অবাক হলো। এর আগেও রাহি তার হাত ধরছে। কিন্তু আজকে তার মধ্যে অন্য রকম এক ভালোলাগা কাজ করছে।
বুশরা রাহির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো ,,
কোথায় নিয়ে যাচ্ছো ?
রাহি: সামনে তাকা,,
বুশরা সামনে দেখলো ফুচকার দোকান।।আমিরিকায় এই রকম দেখা যায় না।
বুশরার ফুচকা দেখে মনটা ভালো হয়ে গেছে।
রাহি এক প্লেট ফুচকা নিয়ে বুশরাকে দিলো।
বুশরা ফুচকার প্লেট টা হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলো। বুশরা একটা ফুচকা রাহির মুখের সামনে ধরলো রাহি খেলো।
বুশরা পরপর আরো দুই তিন টা ফুচকা রাহিকে খাইয়ে দিল। বুশরা বললো,,
আরো এক প্লেট ফুচকা দেন।

রাহি: আরো খাবি!!
বুশরা : হুম।অনেক দিন পর আমি আরো খাবো।
রাহি: না আর খেতে হবে না।
বুশরা জেদ ধরেছে আরো খাবে।
রাহি উপায় না পেয়ে আরো এক প্লেট ফুচকা নিয়ে দিলো ‌।
বুশরার ফুচকা খাওয়া হলে রাহি বুশরাকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে।
রাহি: নুর!!
বুশরা : হুম।রাহি: তুই ঔ টা কি করলি তখন।
বুশরা : কখন?

রাহি: কেন আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলি তোর কি একটুও ভয় হলো না।
বুশরা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
রাহি : আমি যদি এর থেকেও বেশি কিছু করি তখন আবার আমাকে দোষ দিবি না তো,,
বুশরা রাহির মুখ চেপে ধরলো ।বললো চুপ করুন আমি ভুল করে ফেলেছি।
রাহি বুশরার হাত সরিয়ে বললো আমিও যদি ভুল করি,,
বুশরা : আপনার মুখে কি কিছুই আটকায় না। চুপ করুন।
রাহি : তুই চুমু খেলি আর আমি বললেই দোষ।
বুশরা :: shameless !
রাহি : সারাক্ষণ shameless বলিস shameless এর মতো কাজ করলে তখন কিছু বলবি না তো।
বুশরা : আমি তোমাকে ভালোবাসি দেখেই চুমু খেয়েছি। হাজার বার জড়িয়ে ধরবো। কিন্তু তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না।

রাহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো আর কিছুই বললো না।
বুশরা মনে মনে বললো,, আমি জানি না আমাকে ভালোবাসি বলতে তোমার কিসে আটকায় । তবে তুমি যে আমাকে ভালোবাসো তা আমি জানি।যতদিন না তুমি তোমার মুখে আমাকে ভালোবাসার কথা শিকার করছো ,, আমিও তোমাকে এই ভাবেই ভালোবাসে যাবো।
রাহি বুশরার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,, ভালোবাসি জান পাখি বড্ডো বেশি ভালোবাসি তোকে। কিন্তু তোর অজানা অনেক কিছু রয়েছে ।যা জানার পর হয়তো তুই আমায় ভুল বুঝবি জানপাখি।
বাসায় এসে বুশরা আর রাহির মাঝে কোন কথা হলো না।
রাত প্রায় বারোটা বেজে যাচ্ছে রাহির কিছুতেই ঘুম আসছে না। বুশরা অনেক ক্ষণ আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে। রাহি বুশরার রুমে গিয়ে বুশরার পাশে বসলো।

বুশরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো,, এইদিকে বুশরা অনুভব করছে কেউ একজন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।তার ইচ্ছে হলো চোখ মেলে দেখতে কে সেই ব্যক্তি টা। কিন্তু তার ঘুম এতোটাই গভীর যে সে চোখ টাও খুলে দেখতে পারছে না।
রাহি বুশরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,,
আমাকে মাফ করে দে জানপাখি ,আমি জানি আমার মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শোনার জন্য তুই মরিয়া হয়ে উঠেছিস কিন্তু এখনো সময় আসে নি। আমিও যে কষ্ট পাচ্ছি তোকে ছাড়া। তুই আমার এতো কাছে কিন্তু আমি তোকে নিজের করে নিতে পারছি না। সরি জান পাখি।
বলেই বুশরা কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। এইদিকে বুশরা ঘুমের ঘোরেই নড়ে চড়ে উঠলো।রাহি বুশরার কাছ থেকে উঠে নিজের রুমে চলে এলো।

পরের দিন সকালে,,বুশরা ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা হলো । ভার্সিটিতে গিয়ে অরিন এর সঙ্গে তার দেখা।
অরিন: বুশরা ,,কি হয়েছে এই কয়েক দিন তুমি ভার্সিটিতে আসো নি কেন?
বুশরা : এমনতেই।
অরিন: জানো আমরা এইবার ভার্সিটি থেকে টুরে কানাডাতে যাচ্ছি।
বুশরা : ওহ্
অরিন: ওহ্ মানে তোমাকেও যেতে হবে। আর আমাদের সঙ্গে যাচ্ছে আদনান ভাইয়া। আর তার কয়েকজন ফ্রেন্ড।
বুশরা : আমি বলতে পারছি না ঠিক।
বুশরার এখন আদনান এর ক্লাস করতে একটু বিরক্ত লাগে। তার দিকে তাকিয়ে থাকে । তাকে হাজার টা প্রশ্ন করে । বুশরার ভালো লাগে না।
ক্লাস শেষে বুশরা আর অরিন ভার্সিটির মাঠে বসে গল্প করছিল। সেখানে চার থেকে পাঁচ জন ছেলে এসে তাদের কে বিভিন্ন কথা বলছিল এই সব কিছু আদনান দুর থেকে দেখছিল।
বুশরা অরিন কে বললো ,,

বুশরা : এখান থেকে চলো , অরিন এর হাত ধরে টেনে নিয়ে যাবে। তখনি একজন ছেলে এসে বুশরার সামনে দাঁড়ালো। বুশরা কি করবে বুঝতে পারছে না।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনান সেখানে এসে ছেলেটিকে বলল,,
আদনান : হচ্ছে টা কি এখানে,,??
ছেলেটি: sorry,,sir..
আদনান: don’t make noise,, are you bothering them??
ছেলেটি: no sir ,, just fun…।
আদনান: get lost..
ছেলেগুলো চলে গেল।
আদনান: তোমারা ঠিক আছো ‌। কোন প্রবলেম হলে আমাকে জানাবে ।
বুশরা : আমরা ঠিক আছি।

অরিন: ভাইয়া তুমি বুশরা কে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসো।
আদনান: চলো আমি তোমাকে পৌঁছে দেই।
বুশরা : তার কোন দরকার নেই আমি একা যেতে পারবো।
আদনান: তোমাকে পৌঁছে দিলে কি কোন প্রবলেম। রাহিকে নিয়ে ভয় পাচ্ছো।ও কিছু বলবে না।আমি আর রাহি একসঙ্গে পড়াশোনা করেছি এই ভার্সিটি থেকে।ও আমার খুব ভালো ফ্রেন্ড জানো তো।
অরিন: আরে সমস্যা নেই যাও ভাইয়া তোমাকে পৌঁছে দিবে।
বুশরা যেতে ইচ্ছে করলো না কিন্তু কি করার যেতে হলো।
এইদিকে রাহি বুশরার জন্য অপেক্ষা করছিল । কিন্তু যখন দেখলো বুশরা আদনান এর গাড়িতে বসে চলে গেলো তার প্রচন্ড রাগ হলো।
এইদিকে আদনান একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ২২

___আদনান হুট করেই বুশরাকে প্রশ্ন করে বসলো ,,
বুশরা তুমি কি কাউকে পছন্দ করো ??
বুশরা অবাক হলো কিন্তু কিছু বললো না,,
বুশরা : হঠাৎ এইরকম প্রশ্ন ।
আদনান: কেন করতে পারি না? তুমি কী আমাকে শুধু তোমার টিচার ভাবো?
তুমি চাইলে আমাকে তোমার ফ্রেন্ড ভাবতেই পারো।…..!

সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ২৪

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here