সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ৮
বুশরা আহমেদ
বুশরা বিরবির করে বললো,, আমিও দেখি কতদিন তুমি তোমার মনের কথা না বলে থাকতে পারো মি. তাজোয়ার আহমেদ রাহি।
রাহি বুশরার রুম থেকে বের হয়ে,রেজা আহমেদ এর রুমের সামনে এসে রাহি বললো ,,
ছোট আব্বু আসবো??
রেজা আহমেদ: জিঙ্গেস করার কি আছে রাহি ,আসো ।
রাহি : না ছোট আব্বু তুমিই তো আমাদের ছোট থেকে এই সব শিক্ষা দিয়েছো ।
রেজা আহমেদ সোফায় বসে আসে ।রাহি রেজা আহমেদ এর পাশে বসলো।রেবা আহমেদ ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি ও অন্য সোফায় বসে আসেন ।
রাহি : তুমি কি কোন কারণে আমার উপর রাগ করেছো ? ছোট আব্বু।
রেজা: কেন রাগ করবো ।
রাহি: এই যে তৌফিক হুট করেই সেইদিন বললো বুশরার আমিরিকায় যাওয়ার কথা । আমাদের তোমার কাছ থেকে আগে পারমিশন নেওয়া উচিত ছিল।
রেজা : আমি জানি রাহি । তুমি আর তৌফিক যেহেতু ডিসিশন নিয়েছো তাহলে ভেবে চিন্তে নিয়েছো। তৌফিক বুশরাকে ছোট বোনের মতোই ভালোবাসে তাই এই সব নিয়ে আমি বেশি কিছু ভাবছি না।আর তুমি ও তো আসো তাই আর কোন টেনশন নাই ।
রেবা আহমেদ: বুশরাকে তুমি আগলে রাখবে জানি রাহি ।তবুও তোমাকে বলছি ,, আমেরিকা তো বুশরার জন্য নতুন জায়গা তুমি ওকে দেখে রেখো আব্বু।
রাহি: তুমি এতো চিন্তা করো না ছোট আম্মু। আমি আছি ,বুশরাকে দেখে রাখবো । কিন্তু, ছোট আব্বু তোমার কাছে আমার কিছু চাওয়ার আছে ।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
তখনি তৌফিক এসে বললো,কী চাওয়ার আছে ভাইয়া ।বলেই চোখ টিপ দিল। রাহি চোখ রাঙাতেই চুপ হলো ।
রেজা আহমেদ: রাহি কী চাও বলো ।আমি তোমাকে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
রাহি : এখন চাইবো না ছোট আব্বু।আমি এর পরের বার যখন দেশে আসবো তখন চাইবো । তুমি কিন্তু না করতে পারবে না।
রেজা : ঠিক আছে বাবা । যা চাইবে তাই দিবো ।
রাহি : কথা দিচ্ছো তো !
রেজা : হুম দিলাম।
তৌফিক: তোমারা চিন্তা করো না মামনি আমি আছি তো ।বনুকে আমি দেখে রাখবো। তোমারা কি আমাকে বিশ্বাস করো না??
রেজা: তোমাকে আমরা আমাদের বড় ছেলে মনে করি তৌফিক।তোমাকে বিশ্বাস করি বলেই তোমার এক কথায় রাজি হয়ে গেছি।
তৌফিক: আমি জানি বাবা। কিন্তু আমি বুশরার ভালোর জন্যই বলেছি । বুশরার ইচ্ছে যে দেশের বাহিরে যাবে । সেই জন্যই আমি বলেছি ।আর ওখানে তো আমি আর রাহি ভাইয়া আছি বনুকে দেখে রাখার জন্য।
রেবা আহমেদ: তুমি আর রাহিও বাসাই ছিলে না এতো দিন। এখন বুশরাও থাকবে না। একটু তো চিন্তা হবেই।
তৌফিক: বুঝছি মামনি। বাবা !!
রেজা আহমেদ: বলো …
তৌফিক: I am extremely sorry বাবা আমার তোমার সঙ্গে ঐ ভাবে কথা বলা এমনকি বাসা থেকে রাগ করে চলে যাওয়া উচিত হয় নি। কিন্তু মাহিম যে কেমন ছেলে তা না জেনেই বনুকে ওর সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিলে । তুমি চিন্তা করো না সময় হলে বনুকে যোগ্য ছেলের হাতেই তুলে দেবো ।
রেজা আহমেদ মুচকি হেসে বলল,আমি জানি তৌফিক তুমি বুশরার ভালো চাও ।আর আমি জানি তুমি কোন অন্যায় করো নি।বড় ভাই হিসেবে তোমার দায়িত্ব পালন করছো ।
রেজা ও রেবা আহমেদ এর রুমে বসে তৌফিক আর রাহি তাদের সঙ্গে অনেক গল্প করছিল।তখনি বুশরা এসে কোন কিছু না বলেই রেবা আহমেদ এর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ুল ।
বুশরা: আম্মু মাথাটা একটু টিপে দিবে । কালকে থেকে আর বলবো না।
রেজা আহমেদ বুশরার মাথা টিপে দিতে দিতে বললো ,, তোমার কি মন খারাপ।
বুশরা: না আম্মু। তোমরা এতক্ষণ কী নিয়ে কথা বলছিলে ।
রেজা আহমেদ: তেমন কিছু না। এমনি গল্প করছিলাম।
বুশরা: ওহ্। তোমরা খুশি তো আম্মু।আমি চলে যাচ্ছি তোমাদের থেকে অনেক দূরে।আর বিরক্ত করবো না তোমাদের। তোমরা খুশি থাকবে ।
তৌফিক: বনু এসব কি কথা । মামনি কষ্ট পাবে ।
বুশরা : আমার কষ্ট টা তো কেউ কোন দিন দেখলোই না।
রেজা আহমেদ: তুমি যদি না যেতে চাও তাহলে যেও না আম্মু। কিন্তু এইসব কি কথা ।আমি আর তোমার আম্মু ও চাই না তুমি এতো দূরে যাও ।
বুশরা : না আব্বু আমি যেতে চাই ।আমি তো তোমাদের খারাব মেয়ে । আমার জন্য তোমাদের অনেক অসুবিধা হয়। তাই বললাম আর কি ।
রেবা আহমেদ ও রেজা আহমেদ মেয়ের কথায় কিছুটা কষ্ট পেলেন। কিন্তু এইটাও বুঝলেন মেয়ে অভিমান থেকে এই কথা গুলো বলছে ।
রাহি : নুর ছোট আম্মু ও ছোট আব্বু তোর ভালোর জন্যই বলে তুই যদি এখন অভিমান নিয়ে এই ভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলিস তাহলে তো তারা কষ্ট পাবে।এইটা ঠিক না।
বুশরা রাহির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে নিল।
রেজা আহমেদ মেয়ের পাশে এসে বসলেন। বললেন,, আমি জানি তোর খুব অভিমান হয়েছে। আমি তো তোকে কম ভালোবাসি নি মা। তুই তো সব বুঝিস ।বলে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
বুশরা বললো,, sorry আব্বু তোমাদের কষ্ট দিতে চাই নি।
রেজা আহমেদ মুচকি হেসে বললো,,কালকে চলে যাবি আমাদের রেখে । কবে আসবি ঠিক নেই। তৌফিক আর রাহি তোকে আগলে রাখবে জানি। কিন্তু তবুও চিন্তা হয়।
বুশরা রেজা আহমেদ কে জড়িয়ে ধরে বললো, তুমি চিন্তা করো না আব্বু আমি ভালো থাকবো ।
রেজা আহমেদ রেবা আহমেদ দুই জনেই বুশরাকে জড়িয়ে ধরলো। আফরিন আর আয়ান এসে ,,
আয়ান রাহির কোলে বসলো ।
আফরিন বললো , আপুকে একা একা আদর দিচ্ছো আমি কেউ না।
রেবা আহমেদ আফরিন এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,বুশরা তো কালকে চলে যাবে ।
আফরিন: আমি তো মজা করছিলাম আম্মু। তৌফিক ভাইয়া আবার কবে আসবে তোমার।
তৌফিক: ঠিক নাই আপু ।তবে আসবো তাড়াতাড়ি।
আফরিন: তোমাদের আমি তোমাদের অনেক মিস করবো ভাইয়া ।
তারপর রিফাত এসে বললো ,,
আর আপুকে মিস করবি না । তুই তো সারাক্ষণ ঝগড়া করিস আপুর সঙ্গে।
রিফাত বুশরার কাছে গিয়ে বলল,আপু আমি তোমাকে অনেক মিস করবো।
বুশরা,মুচকি হেসে বলল, আমিও মিস করবো তোমাদের।
তারপর অনেকক্ষণ সবাই গল্প করে ,,নিজ নিজ রুমে চলে গেল।
বুশরা রুমে ঢুকতে যাবে তখনি রাহি পিছন থেকে ডেকে উঠল,,
নুর,,…
বুশরা কোন কথা বললো না চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
রাহি: আমার রুমে একটু আয় । বলেই রাহি চলে গেল।
বুশরা কিছু বুঝলো না এই তো সেদিন রাহি নিজেই নিষেধ করছিল তাকে যে রাতে যেন তার রুমে না যায় আজ হঠাৎ!!
বুশরা কিছুক্ষণ পর রাহির রুমে আসলো ,, দেখলো রাহি রুমে নেই । ওয়াশ রুম থেকে পানির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। বুশরা বুঝলো রাহি ওয়াশ রুমে। বুশরা বেলকুনিতে গিয়ে দাঁড়ালো। একটু আগে ঝুম বৃষ্টি হয়েছে । কিন্তু এখন কি সুন্দর আকাশে চাঁদ উঠেছে । চারিদিকে শীতল হাওয়া। বুশরা আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে রইলো।
রাহি বাথরুম থেকে বের হয়ে আসতেই দেখতে পেল,বেলকুনিতে বুশরার উপস্থিত।
কোমর ছুই ছুই হালকা লালচে রঙের চুল গুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। আর বুশরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের ঐ চাঁদ এর দিকে ।
রাহি বুশরার দিকে তাকিয়ে বললো,,
“”তুই কবে বুঝবি জানপাখি, তুই ছাড়া আমি নিঃস্ব। তুই তো আমার হৃদয় হরণী,তাহলে দিন দিন কেন আমার হৃদয় বিণাষীনি হয়ে উঠছিস !! তোর এই ইগনোর করা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে,,তুই তো আমার অন্ধকারের আলো , ঝড়ের মাঝে শান্তি, বিশৃঙ্খলার মাঝে প্রশান্তি।””
তাহলে কেন এই ভাবে দিন দিন আমায় ইগনোর করছিস। কিন্তু আর না আমি তোকে আর আমাকে ইগনোর করার সুযোগ দিব না জানপাখি।
বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাহি ।
রাহি ওয়ারড্রোপ থেকে টিশার্ট বের করতে যাবে তখনি ওয়ারড্রোপ খোলার শব্দে বুশরা ঘুরে তাকালো। বুশরা দেখলো প্রায় ৬ ফুট লম্বা একটা,সুটাম দেহি মানুষ উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে।পরনে শুধু ট্রাউজার। উন্মুক্ত পিঠ,পেশি বহুল হাত ।দেখে বুজায় যাচ্ছে অতিরিক্ত জিম আর পরিশ্রমের ফল । কিন্তু বুশরার চোখ আটকে গেল রাহির ,, ঘাড়ের নিচে পিঠে থাকা কাটা দাগে ।মনে হচ্ছে ছুরির আঘাত। বুশরার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো,
কি করে হলো এ দাগ কিন্তু সে প্রশ্ন করলো না ।দেখে রইলো এক দৃষ্টিতে ঐ দাগটায় ।
রাহি টি শার্ট পরে এসে সেই কখন থেকে বুশরার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। বুশরার খেয়াল নেই ।
রাহি বুশরাকে ডাকলো ,,, নুর এই ভাবে কি দেখছিস।খেয়ে ফেলবি নাকি।
বুশরার রাহির কথায় ধ্যান ফিরলো ।
বুশরা আবার সেই উল্টো দিকে ঘুরে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল।
কিন্তু একটা প্রশ্ন বুশরার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে,রাহির পিঠে ছুরির আঘাত কি করে লাগলো । কিন্তু বুশরা রাহিকে কিছু বললো না।
রাহি রুমের লাইট টা অফ করে বুশরার পাশে এসে দাঁড়াল। রুমটা আগের মতই অন্ধকার হয়ে গেলেও এতোটা ভয়াবহ লাগছে না চাঁদের আলোর কারণে।চাঁদের আলোতে ঝাপসা দেখা যাচ্ছে দুজনকেই ।
রাহি: তোর কি হয়েছে নুর?
বুশরা: কিছু না তো ।
রাহি: তাহলে আমাকে ইগনোর করছিস কেন? কোন কারণে রেগে আছিস আমার উপর।
বুশরা : না ।এই কথা গুলো বলার জন্য ডেকে থাকলে আমি এখন আসি ।আর কিছু বলার আছে তোমার।
রাহি: নুর !!
বুশরা : হুম….
রাহি: কিছু না ঘুমিয়ে পর কালকে ১০ টাই ফ্লাইট।
বুশরা চলে গেল।
সকাল ৯ টা বুশরা ,রাহি , তৌফিক তাদের দাদু- দাদি আর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হয়েছে।
রেজা আহমেদ ও হাফিজুর আহমেদ তাদের এয়ার পোর্টে পৌঁছে দিতে চাইলেন কিন্তু রাহি তৌফিক নিষেধ করলো সে কারণে আর গেলেন না।
আসার সময়,বুশরা আয়ান কে জড়িয়ে কন্না করছে ।বুশরা আয়াকে খুব ভালোবাসে কি করে থাকবে তাকে ছাড়া।
আয়ান ও বার বার বলছিল আপুর সঙ্গে যাবো ।
রেবা আহমেদ ও রোকসানা আহমেদ ও খুব কান্না করছিল।
গাড়িতে সামনের সিটে ড্রাইভার আর তৌফিক, পিছনে সিটে বুশরা আর রাহি ।বুশরা বাহিরের দিকে মুখ করে আছে।রাহি বুশরাকে দেখছে বারবার। চোখ গুলো কিছুটা ফুলে গেছে কান্না করার জন্য।
ড্রাইভার এসে তাদের এয়ার পোর্টে নামিয়ে দিয়ে গেছেন ।
এয়ার পোর্টে ভিতরে প্রবেশ করেতেই কিছু গার্ড এসে তাদের কে প্লেনে উঠতে বললেন।
রাহি বুশরার হাত ধরে প্লেনে উঠলো ।বুশরা এর আগে প্লেনে উঠে নি ।এইটা ফাস্ট টাইম ।
তৌফিক আর কিছু গার্ড আলাদা কেবিনে আর রাহি আর বুশরা আলাদা কেবিনে। বুশরা একটা জিনিস লক্ষ্য করলো তারা তিন জন আর কিছু গার্ড ছাড়া প্লেনে কেউ নেই ।
সে আমার হৃদয় হরণী পর্ব ৭
বুশরা রাহিকে কিছু জিজ্ঞেস ও করলো না।রাহির উপর রাগ কমলেও অভিমান টা রয়ে গেছে।
রাহি বুশরার সিট বেল্ট বেঁধে দিলো । প্লেন যখন উপরে উঠে তখন বুশরা রাহির হাত আঁকড়ে ধরে।রাহিও বুঝতে পারলো বুশরা ভয় হচ্ছে।সেও এই পুরোটা সময় বুশরাকে আগলে রেখেছে ।
কিছুক্ষণ পর বুশরা ঘুমিয়ে পড়ে।রাহি বুশরার মাথাটা তার বুকে চেপে ধরে ।আর বুশরা নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে।
রাহি বুশরার কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে ,
“”,আর তোকে দুরে যেতে দিবো না জানপাখি আর না ।””