সে জন সোনা চিনে না পর্ব ১৮
সাইয়্যারা খান
গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাহজেব। তার মুখের শব্দ ক্ষীণ অথচ চোখের দৃষ্টিতে খেলা করছে এক গুচ্ছ শব্দ। দুপুর চুপ করে বসে আছে। ওর হাতটা শাহজেবে’র হাতের মাঝে। গভীর ভাবে সেই হাতটাই দেখছে এতক্ষণ যাবৎ। দুপুর এবার ক্ষুদ্র শ্বাস ছাড়লো। এভাবে কতক্ষণ বসে থাকা যায়? আবার ভাবলো শাহ থাকলে এভাবে থাকতেও ওর কষ্ট নেই কিন্তু শাহ এসেছে থেকে না খেয়ে এভাবে বসা। দুপুর এবার শাহজেবে’র দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলো। অন্য হাতটা দিলো শাহ’র হাঁটুতে। শাহ প্রতিক্রিয়াহীন বসা। দুপুর আস্তে ডাকলো,
— শাহ?
উত্তর আসে না। দুপুর ছোট্ট একটা দম নিয়ে বললো,
— এসেছেন থেকে এভাবে বসে আছেন শাহ। উঠুন এবার।
শাহ অনড়ভাবে বসেই আছে। দুপুর নিজের লাল হওয়া হাতটা এক পলক দেখে শাহ’র হাঁটু থেকে সরিয়ে হাতটা রাখলো গালে। দাঁড়ি ভর্তি গালে এক হাত রেখে আন্তরিক ভাবে বললো,
— একটু লাল হয়েছে শাহ৷ সামান্য একটু ব্যাপার। আপনি বিগত একটা ঘন্টা ধরে হাত ধরে বসে আছেন৷ খাচ্ছেনও না৷ ফ্রেশ হবেন তো শাহ। উঠুন৷
— সামান্য ব্যাপার?
— হ্যাঁ, শাহ। খুবই সামান্য এটা।
— কিভাবে হলো?
দুপুর বলতে লাগলো,
— ভাতের পানি ঝড়াতে গিয়ে হাতে লেগেছে কিছুটা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এটা নিয়ে দুইবার দুপুর জানালো কিভাবে হাতে লাল দাগ পড়েছে কিন্তু শাহ’কে বুঝানো যাচ্ছে না। সে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না৷ দুপুর হাতটা ছাড়ালো ধীরে ধীরে। শাহ একই ভঙ্গিতে বসা৷ দুপুর এবার দুই হাতে ওর মুখটা ধরলো৷ নিজের দিকে মুখটা ফিরিয়ে কপালে হাত বুলালো। হাসি মুখে বললো,
— আপনি বার্নাল লাগালেন তো শাহ৷ দেখুন এখন ঠিক আছে আগের থেকে।
— দাগটাতো যাচ্ছে না দুপুর।
— একদিনে চলে যাবে? থাকবে না একটু?
দুপুর হাসছে। শাহ সেটা দেখে ওকে টেনে নিজের কোলে তুললো। দুপুর তাকিয়ে আছে ওর দিকে। শাহ ওর পিঠ চেপে ধরে। দুপুর মৃদু স্বরে ডাকে,
— শাহ?
শাহ’র ঘর্মাক্ত বুকে তখন লেপ্টে নিলো দুপুরকে। দুপুর চুপ করে রইলো কিছু সময়৷ শাহ ওর সামান্য হাত পোড়া নিয়ে এতটা থমকে যাবে দুপুর ভাবে নি। শাহ কখনোই বউ অন্ত পা গ ল স্বামী না৷ সে সাধারণ পুরুষ যার ধ্যান জ্ঞানে দায়িত্ব, পরিবার আর কিছু না। এই যে মাঝেমধ্যে দুপুরের রাত বিরাতে ফোন গুলো সে সুন্দর মতো গ্রহণ করে দুপুরের তাতেই হয়। মাঝেমধ্যে ছোট তিব্বির সাথে যখন হিংসে করে তখন তাতে গভীর পা গ লা মো দেখে দুপুর। সব ছাপিয়ে তার আজকের গম্ভীর হওয়াটা যেন একটু ভিন্ন। দুপুর ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে। শাহ’র বুক থেকে সরে বললো,
— গোসল করবেন এবার শাহ। উঠুন৷
শাহ দুপুর’কে ধরেই উঠে দাঁড়ালো। তার মুখের ভাবসাব এখনও ঠিক হয় নি। দুপুর ঠেলে গোসলে পাঠালো ওকে। দুপুর ভেবেছিলো শাহ ওকে লজ্জা দিতে অন্তত হাতটা ধরে ভেতরে টানবে কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে এমন কিছুই হলো না। দুপুর গিয়ে টেবিলে খাবার সাজালো। নজরটা ঘুরে ফিরে বন্ধ রুমটায় যায়। দুপুরের ভেতর চাপা এক আগ্রহ প্রকাশ পেলেও ও কথা বলে না। শাহ আসতেই ভাত বেড়ে দেয়। শাহ ভাতের প্লেটটা নিয়ে সহজ ভাবেই বললো,
— বসে যাও।
— আপনাকে আগে….
— আগে পরে না দুপুর। দু’জন মানুষ আমরা একসাথে না খেলে ভালো লাগে বলো?
দুপুর মাথা নাড়ে। বসা মাত্রই শাহ ওর প্লেট সরায়৷ দুপুরকে অবাক করে দিয়ে ভর্তা দিয়ে মেখে আগে ওর মুখে তুলে। দুপুর খাচ্ছে, শাহ বলে,
— এত ভর্তা আজ?
— আপনার পছন্দ তাই।
মুখের খাবার গিলে উত্তর করে দুপুর। শাহ মুখে তুলে দুপুরের দিকে তাকালো। ইশারায় বললো, খুব ভালো হয়েছে। দুপুর হাসে। শাহ’র পছন্দ হয়েছে শুনেই তার সকল খাটাখাটুনি যেন স্বার্থক।
দুপুর গেলো শাহ’র পিছু পিছু। গায়ে শার্ট জড়াচ্ছে শাহ। দুপুর অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
— এখন কোথায় যাবেন শাহ?
শাহ সামান্য হাসে। সেই কালো মুখটায় হাসিটা বেশ মানালো। দুপুরকে কাছে টেনে কপালে ওষ্ঠ ছোঁয়ায় ও। লহু স্বরে বলে,
— আজ দুপুরটা নাহয় দুপুরচন্ডী না ফুটুক। এক দুপুর তো আপনাকে কষ্ট করতেই হবে দুপুর। সেই কষ্টের কারণটাও আপনি৷ আমি তো শুধুমাত্র ক্ষুদ্র এক মানুষ।
দুপুর প্রথম কথায় লজ্জা পেতে পেতে শেষ কথা গুলো না বুঝে তাকিয়ে রইলো। শাহ ওর গালে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
— আজ থেকে আপনার ভাত রান্না করা নিষেধ করা হলো দুপুর। সেটা আমি করব৷ আপনি একা, বুয়া রাখার সাহস করতে পারছি না৷
— আপনি শুধু শুধু….
ঠোঁটটা নিজের আঙুল দিয়ে চুপ করালো শাহ। তার চোখের গভীরতা দুপুর দেখলেও বুঝলো না৷ শাহ হাতটা টেনে নিজের চোখের সামনে নিয়ে গভীর ভাবে চুম্বন করলো। দুপুর মিহিয়ে গেলো তখন। শাহ ওর কোমল গালটায় আঙুল বুলাতে বুলাতে বললো,
— আজকের জন্য মাফ করে দিলাম দুপুর।
বলেই গায়ের শার্ট খুলতে লাগলো। দুপুর অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
— অফিস যাবেন না শাহ?
— যাব তো কিন্তু…
দুপুর মাথা নামিয়ে নিলো। নিজের কৃষ্ণ রঙা খালি দুধে আলতা দুপুরকে মিলিয়ে নেয় শাহ। বুকে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
— ঘুমাও। আজ এটাই তোমার শাস্তি দুপুর।
এতটা কাছে টেনে যখন শাহ ঘুমাতে বললো দুপুর তখন ভীষণ অবাক হলো তবে মুখে কিছু বললো না৷ ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলে উন্মুক্ত বুকটায় চোখ বুজলো।
হাসপাতালে প্রচন্ড গন্ডগোল করছে তামজিদ। কিছুতেই থাকবে না এখানে অগত্যা তার সকল চিকিৎসা বাসায় করাবে বলে রিলিজ করিয়ে বাসায় আনা হয়েছে। সবার ধ্যান তামজিদে থাকায় কেউ টের পায় নি এলাকা থেকে ততক্ষণে বিদায় নিয়েছে মিরাজ সাহেব। বৃদ্ধ মা এবং স্ত্রী নিয়ে তিনি বাড়ী ত্যাগ করেছেন। বাসায় এসেই গোসল করে তামজিদ। খালি গায়ে পানির নিচে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। দেয়াল জুড়ে সামনে আয়না। সেখানে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুব করে দেখলো ও। অসুস্থতার ছাপ কিছুটা মুখে অথচ রূপ তার কম না৷ পুরুষ ন্যায় সুঠাম দেহ, চোয়াল ভর্তি দাঁড়ি, হাটা, চলা সবটাই যেন ঈর্ষনীয় তবুও কেন দুপুর তাকে চাইলো না? কেন দুপুরের একটাবার মনে হলো না তামজিদ ওর যোগ্য? কোন দিক থেকে তামজিদ পিছিয়ে? সৌন্দর্য, টাকা পয়সা, ক্ষমতা, ভালোবাসা.. কি চাই আর তার? তামজিদকে শুধু একটাবার বলেই দেখতো। ওর সকল খায়েশ তামজিদ পূরণ করতো। এই যে মেয়েটার তেজে ভরপুর দুপুর পছন্দ তাই তো মালোশিয়ার বাড়ীটায় রুমের পাশে রুফ করেছে তামজিদ। রুফটা নিজ হাতে সাজিয়েছে অব্দি। কে থাকবে এখন সেখানে? দুপুর তো নেই। তামজিদের মস্তিষ্ক দপদপ করে। চিড়বিড় করে উঠে যেন। দুই হাতে মাথা চেপে ধপ করে বসে পরে ও। চোখ দুটোয় ফুটে উঠে হিংস্রতা। দুপুর চাই তার। এই ভরা দুপুরে তার সাথে দুপুরের থাকার কথা ছিলো।
নিজ হাতে সেভিং রেজার চেপে ধরে ও। বর্ণহীন পানিতে তখন ধীরে ধীরে লাল রঙটা ফুটে উঠে। সেদিকে এক ধ্যানে চেয়ে রইলো তামজিদ। বিরবির করে বললো,
— তুমি কোথায় জান? আমার কথা কি মনে পরে না? একটুও না? তুমি কি ভালো আছো? আমাকে ভুলে গিয়েছো?
নিজে নিজেই শরীর মুছে হাতে গজ পেঁচায় তামজিদ। ভেজা চুলটা তখনও শুকায় নি৷ ড্রয়ার খুলে পি স্ত ল টা কোমড়ে গুজে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। মা দেখেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলেন। বললেন,
— কোথায় যাও আব্বু?
— একটু বাইরে।
— তোমার শরীর ভালো না। খাবে এখন। বাবা আমার এখন না।
— শশুর আব্বুকে দেখতে যাচ্ছি মা। ওনাকে বাসায় আনার কথা এতদিনে।
— আচ্ছা যেও৷ খেয়ে নাও।
— আগে দেখে আসতে হবে মা। দুপুরকে যখন ফেরত আনব তখন কি উত্তর দিব? তার বাবার খেয়াল রাখি নি। রাগের মাথায় শ্যুট করেছি। এখন দেখাশোনা তো করতে হবে।
তামজিদ বেরিয়ে গেলো। জোরে জোরে পা ফেলে হাঁটছে ও। বাড়ীটায় পৌঁছাতে সময় লাগলো না। চাবি দিয়ে মেইন দরজা খুলে ভেতরে যেতেই কপাল কুঁচকে গেলো তার। জনমানবহীন একটা বাড়ী। কেউ নেই এখানে। প্রতিটা ঘর খুঁজলো। ডাকলো,
— দাদী? দাদী? তুমি কোথায়? দাদী?
বৃদ্ধার উত্তর আসে না। তামজিদ মিরাজ সাহেবের রুমে ঢুকে গলা উঁচিয়ে ডাকে,
— আম্মা? আম্মা আপনি কোথায় আম্মা?
কেউ নেই। চারপাশে কেউ নেই। তামজিদের অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। ও টলমল পায়ে দুপুরের রুমে গিয়ে ধপ করে বিছানায় পড়ে গেলো। বালিশটায় মুখ গুজে মৃদু গুঙিয়ে উঠলো। মুখ দিয়ে আসা লালায় বালিশ ভিজছে তখন। ঘন্টা খানিক ওভাবেই পড়ে রয় অসুস্থ এক তাগড়া যুবকের দেহ। সেই দেহের ভেতর থাকা ছোট্ট হৃদয়টায় তীব্র ব্যথা। প্রেম হারানোর ব্যথা। এই ব্যথা মানুষকে কতটা পীড়া দেয় তা তামজিদের হাড় গুলো সহ টের পাচ্ছে যেন।
বেশ খানিকটা সময় পর ও উঠে দাঁড়ালো। হাতে নিলো দুপুরের একটা বালিশ৷ বেরিয়ে এলো সেখান থেকে। এলোমেলো হাঁটছে রাস্তায়। আড় চোখে তাকিয়ে রইলো বেশ কিছু মানুষ। এতো চেয়ারম্যানের বড় ছেলে। কি দাম্ভিক একটা যুবক, সে কেন এভাবে রাস্তায় হাটছে? পা গ লে র বেশে থাকা তামজিদ’কে দেখে ছোট্ট বাচ্চারা বেশ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইলো। হাতে একটা গোলাপি বালিশ নিয়ে এদিক ওদিক ভটকাচ্ছে তামজিদ। আশ্চর্য! সে কেন বাড়ী খুঁজে পাচ্ছে না?
— ব্যাগ গোছানো হয়েছে য়রা?
সায়রা চুপচাপ খাটে বসা ছিলো। তাসরিফ একা একাই ব্যাগপত্র গোছাচ্ছে। ভাই হিসেবে তার দায়িত্ব ছিলো এতটুকু করা যে তামজিদ অন্তত বাসায় আসা পর্যন্ত এখানে থাকবে। এখন যেহেতু এসেছে তাই আর এখানে থাকবে না তাসরিফ। বেরিয়ে যাবে এখান থেকে। ভাই থাকা অবস্থায় সায়রা এখানে ভালো থাকবে না। এমনিতেও বিয়ের পর থেকে সায়রা’র মতিগতি ও বুঝে না। আগের তেজ নেই। বাসি ফুলের মতো কিছুটা যেন ছুঁলেই ঝড়বে। তাসরিফ তা হতে দিবে না৷ ও ওর আগের সায়রা চায় যে খুব করে রেগে থাকে, মাঝেমাঝে আদর করে শাসন করে, তেজে ভরপুর হয়ে থাকে।
আড় চোখে গালর দাগটাও দেখে নেয় ও। চাপা নিঃশ্বাস ফেলে আলগোছে। ব্যাগ রেখে এগিয়ে যায় সায়রা’র কাছে। পাশে বসে হাতটা ধরতেই সায়রা তাকালো ওর দিকে। তাসরিফ সেই দৃষ্টিতে ঘাবড়ে গেলেও বুঝতে দিলো না বরং বললো,
— বাসা ভাড়া নিয়েছি য়রা। আপনি আর আমি থাকব সেখানে। আপনি যেভাবে মন চাইবে থাকবেন৷ যা যা লাগবে শুধু আমাকে বলবেন য়রা৷ আমি সব এনে দিব।
— কিসের কাজ করো তুমি?
থতমত খায় তাসরিফ। উত্তরে বলে,
— বাবার ব্যবসা সামলাই আর…
— আর মানুষকে হুমকি ধমকি দেই।
— আপনি ভুল ভাবছেন।
— তোমাদের পাপের টাকা আর কত গিলব কে জানে? জান দেখেছো আমার? কই মাছের। ম রেও ম রি না৷
— য়রা!
তাসরিফ দাঁড়িয়ে গেলো। তার দেহটা কাঁপছে রাগে। সায়রা চাপা হাসে। বলে,
— য়রা য়রা ডেকে কি প্রমান করতে চাও?
— বোঝেন না আপনি?
সায়রা মাথা দুলায়। বলে,
— খু নী হাজার প্রেমিক হোক না কেন দিন শেষে সে খু নী ই থাকে।
— আমার বুকে ছুড়িঘাত করে খুব শান্তি পান আপনি?
— খুউব।
সায়রা উঠে বাইরে এলো। রুমে পানি নেই। টেবিল থেকে পানির জগটা নিতেই কানে এলো,
— আমার সংসার ভাঙতে এসেছো তুমি? আমার ছোট ছেলেকে কেড়ে নিবে? ওকে নিয়ে এখন আলাদা থাকবে।
সায়রা চেয়ারে বসে পানি পান করলো। তাকালো দাঁড়িয়ে থাকা শাশুড়ীর দিকে। সায়রা’র মুখে হাসি যা দেখে ভড়কালেন তিনি। আচমকা হাতের কাঁচের গ্লাসটা তার পায়ের কাছে ছুঁড়ে মা রে সায়রা। ভয়ে দুই পা পিছিয়ে গেলেন তিনি। সায়রা এগিয়ে এসে কাঁচের টুকরো নিজের হাতে নিলো। চিৎকার করে ডাকলো,
— তাসরিফ! তাসরিফ!
মহিলা এতে আরো ভড়কে গেলেন। তাসরিফ যেন দৌড়ে এলো একপ্রকার। হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— কি হয়েছে য়রা?
দাঁত মুখ খিঁচে সায়রা বলে,
— তোমার মায়ের সংসার ভাঙতে এসেছি এসেছি? তোমাকে নাকি আলাদা করছি? অ্যই, এক্ষণ তোমার মা’কে বলো তার কোন ** সংসার যে আমি ভাঙতে আসব?
তাসরিফ তাকালো মায়ের দিকে। সায়রা যে গালি দিলো তা যেন শুনলো না। সায়রা পুণরায় বলে উঠলো শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে,
— কি ভেবেছেন আপনার কথা শুনে আমি আবার ফাঁ সি দিব? সেদিন মহিলা দিয়ে কথা শুনিয়ে আমার মাথা আউট করে দিয়েছেন তাই বলে আজও বলবেন আমি বিষ খাব? পিছু টান নেই এখন আর। ম রা র প্রশ্ন উঠে না।
একটু থেমে আবার বললো,
— আমাকে কথা শোনানোর আগে নিজের দিকে তাকাবেন৷ শুধু পয়দা করেই বসে আছেন৷ শিক্ষা দিতে পারেন নি একটা ছেলেকেও।
সায়রা হাতের কাঁচ ফ্লোরে ছুঁড়ে চলে গেলো সেখান থেকে। তাসরিফ তাকিয়ে আছে ওর মায়ের দিকে। মা যেন মহা সমুদ্রে পড়লেন৷ ছেলেকে কি উত্তর দিবেন তিনি?
তখনই দরজায় দু’জন লোক সহ চেয়ারম্যান সাহেব বাড়ীতে ঢুকলেন৷ তামজিদ বাড়ী হারিয়ে রাস্তায় হাঁটছিলো। দু’জন তাকে নিয়ে চেয়ারম্যানের অফিসে গিয়েছিলো। তামজিদ বাড়ীতে এসেছে। বগলদাবা করা গোলাপি সেই বালিশ। মা’কে দেখেই বললো,
— মা, ওরা তো কেউ বাড়ীতে নেই। পালিয়ে গেলো বোধহয়। জিনিস পত্র কিছুই তো নেয় নি।
বেশ শান্ত কথা তার। তাসরিফ দাঁড়ালো না সেখানে। ও গেলো সায়রা’র কাছে। জীবনটা এত অগোছালো হলো কেন?
তামজিদকে ধরে মা কাঁদলেন কিছুক্ষণ। খেতে বসালে ও ডাকলো,
— তাসরিফ? তাসরিফ? সায়রা’কে নিয়ে খেতে আয়।
নিজ হাতে পাঁচ প্লেট ভাত বাড়লো ও। তখনও আসে নি তাসরিফ। তামজিদ বাবা’র দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে বললো,
— দুপুর এলে ছয় প্লেট ভাত বাড়তে হবে বাবা।
চেয়ারম্যান সাহেব কিছু বলার মতো পেলেন না৷ তামজিদ আবার ডাকলো,
— অ্যই তাসরিফ খেতে আয়….
ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো তাসরিফ বের হচ্ছে হাতে লাগেজ৷ পেছনে সায়রা। কপাল কুঁচকে ও জিজ্ঞেস করলো,
— কিরে কোথায় যাচ্ছিস?
তাসরিফ থামলো। আস্তে করে বললো,
— সায়রা’কে নিয়ে আলাদা থাকব ভাই৷
চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তামজিদ। ভাইয়ের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো,
— পা গ ল হলি? হানিমুনে যা তাহলে। ঘুরেফিরে চলে আসবি৷ আলাদা থাকব এটা কেমন কথা?
— এখানে একটু সমস্যা হচ্ছে।
— কি সমস্যা? আশ্চর্য! দুপুরের চিন্তায় বাঁচতে পারছি না আমি এরমধ্যে তুই নতুন কথা বলিস।
— এখানে প্রাইভেসি পাচ্ছি না আমি ভাই।
— ক..কি বলিস তুই? ওও হ্যাঁ, ঐ..ঐদিন তো আমি ইচ্ছে করে করি নি। আ..আমার মাথা ঠিক ছিলো না৷
তামজিদে’র কথা গুলো আটকে আটকে এলো। তাসরিফ পুণরায় বললো,
— এছাড়াও বাড়ীতে সায়রা থাকায় আম্মুর সমস্যা হচ্ছে ভাই। তাই আমিই আলাদা হয়ে যাচ্ছি।
— কি সমস্যা? কি বলছিস তুই?
চেয়ারম্যান সাহেবও উঠে দাঁড়ালেন। তামজিদের মা তখন ঘামছেন সমানে। তাসরিফ সায়রা’কে নিয়ে তখন পা বাড়ালো সামনে। দৌড়ে গিয়ে ছোট ভাইয়ের পা ঝাপটে ধরে তামজিদ। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠে,
— যাস নে তাসরিফ। ভাই না তুই আমার? দুপুর নেই ভাই, আমার বুক জ্বলে যাচ্ছে। তুই ও ছেড়ে গেলে ম রে যাব আমি৷ আমাকে মে রে যা তাসরিফ। একা রেখে যাস না।
সে জন সোনা চিনে না পর্ব ১৭
তাসরিফ তারাতাড়ি বসে ভাইকে জড়িয়ে ধরে। ছোট ভাইয়ের বুকে চোখ বুজে গেলো অবধ্য প্রেমিকটার। সায়রা গিয়ে টেবিল থেকে গ্লাস নিয়ে তামজিদের মুখে ছিটালো। মা কেঁদে উঠলেন। চেয়ারম্যান সাহেব হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তাসরিফ ভাইকে বুকে চেপে উঠতে চাইলো। সায়রা সাহায্য করলো। তামজিদে’র মুখ দিয়ে তখন সাদা সাদা ফ্যানা বের হচ্ছে।