স্নিগ্ধবিষ পর্ব ১৮
সানজিদা আক্তার মুন্নী
রুদ্রকে এভাবে জোরে চেঁচাতে দেখে নাজহা বিরক্ত হয়। এ আর নতুন কী? তৌসির তো কথায় কথায় এসব বলে। কিন্তু তাও কথায় কথায় বললেও, এভাবে সবার সামনে বলা আদৌ উচিত? আজ একবার একা পাক এই হাড়কিপ্টে বজ্জাত লোকটাকে, তখন বুঝাবে বিদ্রোহ কী জিনিস।
নাজহা ফোনটা ধরিয়ে তৌসিরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“এই নিন, আব্বা কথা বলবে।”
তৌসির নাজহার দিকে একনজর তাকিয়ে চুপচাপ হাতে ফোন নেয়।নাজহা ফোন ওর হাতে দিয়ে নিঃশব্দে ছাঁদ থেকে চলে আসে। সবাই এ দেখে বলে ওঠেন,’ আজ তৌসির তোমার কপালে দুঃখ আছে!
তৌসির ফোন শেষ করে ঘরে আসে নাজহার ফোন নিয়ে। এসে দেখে ঘর ফাঁকা, বুঝে নেয় নাজহা বারান্দায়। তাই ফোনটা বিছানায় আলগোছে রেখে বারান্দার দিকে আগায়। বারান্দার দরজায় গিয়ে দাঁড়াতেই দেখে, নাজহা আকাশ পানে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আর কি যেনো ভাবতেছে। তৌসিরের উপস্থিতি নাজহা টের পায়, তথাপি টের পেয়েও নাজহা চুপটি করে দাঁড়িয়ে রয়। তৌসিরের কখনোই নাজহার নীরবতা পছন্দ হয়নি, তাই আজও হয় না। হেলেদুলে এসে নাজহার পাশে দাঁড়ায়। গ্রীবা কাত করে নাজহার মুখপানে আড়চোখে চায়, ভাবসাব বুঝার চেষ্টা করে। ভাবসাব ভালো না, তাই সাবধানে কথা বলতে হবে এ ভেবে তৌসির গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে,“তুমি ছাদের কথা শুনে রাগ করছো?”
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
নাজহা তৌসিরের করা প্রশ্নে চমকায় না, কারণ সে জানতো যে, এমনি প্রশ্ন তৌসির ঘরে এসে করবে। নাজহা আগের ন্যায় দৃষ্টি আসমানের ন্যায় নিবদ্ধ রেখে কাঠ-কাঠ গলায় শোধায়,”আমার যার-তার কথায় রাগ মানায় না।”
তৌসির নাজহার কথায় মিটি হেসে ওঠে। ভাবে, ‘যারতার সাথে রাগ মানায় না? বাহ, কি সুন্দর কথা! অথচ সাউয়ার মাইয়া সারাটাদিন আমার লগে মাইর করে, সাপের মতো ফ্যাত-ফ্যাত করে। ভেত্তমিজের ঘরে ভেত্তমিজ।’ তৌসির নাজহারকে ম্নান গলায় বলে,“আমি তোমার উপস্থিতি টের পাইয়াই মজা করছি। এসবে মন কষিয়ো না, যদিও তুমি নোবেলপ্রাপ্ত বদমাশ, তারপরও আমি এগুলো নিজের মধ্যেই চাপা রাখছি, কাউকে বলিনি।”
নাজহা এবার তীব্র রাগ নিয়ে ঠান্ডা চোখে তৌসিরের দিকে কটমট করে তাকায়, আর দাঁত চেপে বুনে,“আপনার বকবকানিটা বন্ধ রাখুন। আমি আপনার সাথে তর্কে জড়াতে চাই না।”
তৌসির নাজহার কথায় চকমকানোর ভান করে বলে ওঠে,“বাহ! আমার ইচ্ছাধারী নাগিন, তোমার এই সুন্দর রূপটা তো মারাত্মক সুন্দর।”
নাজহা তৌসিরের দিকে ক্রোধ নিয়ে তাকায়, তথাচ কিছু বলে না। কারণ সে পণ করেছে তৌসিরের সাথে তর্ক করবে না। তাই একটাও টু শব্দ মুখ থেকে নিঃসৃত করে না। বিষ খেয়ে বিষ হজম করে সহ্য করে নেয়। নাজহার কালচে সবুজ চোখের রাগ দেখে তৌসির মনে মনে বলে ওঠে,“সরের বাচ্চার সাপের মতো সবুজ চোখ দুইটা মারাত্মক সুন্দর রেহহহ।”
কিছু সময় নীরবে কেটে যায়। তৌসির এবার নাজহার ডান হাতের বাহু টেনে ওকে সোফায় বসায়। হঠাৎ এমন আচরণে নাজহা ক্ষুব্ধ হতে না চেয়েও হয়, আর এমন আচরণে হওয়ারই তো কথা। নাজহা উঠতে গিয়ে বলে ওঠে,“কি সমস্যা টা কি আপনার?”
তৌসির নাজহাকে আবারো জোর করে বসিয়ে দিয়ে তার হাঁটু ঘিরে বসে পড়ে। তৌসিরকে এভাবে বসতে দেখে নাজহা ভুরু কোঁচকায় কি হলো, তৌসির এভাবে ওর বসলো কেন? কি কারণে বসলো? উত্তর বের করার আগেই তৌসির নাজহার দুই হাত আলতো হাতে ধরে নাজহার হাঁটুর উপর রাখতে বলে,“তোমার জন্য আমি কিছু এনেছি।”
নাজহা এ শুনে মনে মনে ভাবে, নিশ্চয়ই এবার কলা গাছের ডাল নিয়ে এসেছে, আগেরবার নিমের ডাল দিয়েছিল। তাও ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় তৌসিরকে,
“কি এনেছেন?”
তৌসির নিজের শার্টের বুকপকেট থেকে একখানা সূরু চিকন পাতলা রুপোর পায়েল বের করে নাজহার সামনে ধরে। পায়েলখানা সূরু হলেও দেখতে বড্ড সুন্দর। নাজহা তৌসিরের হাতে পায়েল দেখে ভ্রু টেনে এনে তীক্ষ্ণ স্বরে জিজ্ঞেস করে,“এটা কোথায় পেলেন?”
তৌসির আলতো হেসে অবদমিত কণ্ঠে উচ্চারণ করে,
“সেদিন তোমার যে নূপুর বিবিজান পড়াইয়া দিছিলো, আর তুমি ছিইড়া নিছিলা না? ঐ নূপুর আমি তুলে রাখছিলাম। পরে চেক করাইয়া দেখি যে এগুলো রুপোর। তাই সে নূপুরের মধ্যে একখানা বাঁঙাই তোমার লাগি পায়েল বানাইছি। আর আরেকখান রাখছি আমাদের যদি মাইয়া হয় তাহলে তারে পায়েল বানাইয়া দিমু, আর পোলা হইলে গলার চেইন।”
তৌসিরের কথায় নাজহা স্তব্ধ নয়নে তৌসিরের মুখপানে তাকায়। তার এই তাকানোর দুইটি কারণ প্রথমত, তৌসিরের মতো কিপ্টে মানুষ পায়েল বানাইছে? যদিও তা বিবিজানের দেওয়া রুপোর নূপুর দিয়েই বানিয়েছে। আর দ্বিতীয়ত, নাজহা এমনি একটা সুন্দর মুহূর্তের স্বপ্ন প্রতিনিয়ত তালহা ভাইকে নিয়ে দেখতো তালহা ভাই অল্প কিছুই ওকে দিবেন, অল্পতেই সন্তুষ্ট থেকে সে সংসার গড়বে। স্বপ্নটা একটু হলেও পূরণ হলো, কিন্তু পার্থক্যটা শুধু, আজ তালহা ভাইয়ের বদলে তৌসির বসা। নাজহা নিরন্তর চেয়ে রয়, কোনো নড়াচড়া ছাড়া শুধু চেয়ে রয় তৌসিরের পানে। নাজহার এই চাহনি দেখে তৌসির ওকে জিজ্ঞেস করে,“পছন্দ হইলো?”
তৌসিরের জিজ্ঞেস করাতে নাজহার ধ্যান ভাঙন ধরে। সে বাস্তবে ফিরে এসে বলে ওঠে,“হয়েছে তো! বেশ পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা, আপনার টাকা খরচ হয়নি?”
তৌসির না-বোধক মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়,
“না, লাগেনি। দোকানটা রুদ্রের।”
নাজহা ছোট্ট করে উত্তর দেয়,
“ওহহ।”
তৌসির নাজহার চোখপানে তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করে,“আমি পড়িয়ে দেই?”
নাজহা বিপত্তি জানালো,“না না, আমি নিজেই পড়ে নেই। আপনি কেন পা ছুঁতে যাবেন?”
তৌসির এতে আলতো তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে বলে ওঠে,
“সেদিন তো আমার হাঁটুর উপর পা রেখে খুলিয়েছিলে, তাহলে আজ এত সম্মান দেখাইতাছো যে?”
নাজহা নরম গলায় বলে,“সেদিন তো রেগে ছিলাম। আজ প্রয়োজন নেই, আমি নিজেই পড়ে নিব।”
তৌসির নাজহার কথায় তোয়াক্কা বোধ না করে নিজের বুকের বা পাশটায় ইশারা করে বলে,“তোমার পা টা রাখো তো আমার বুকের এখানে!”
নাজহা তৌসিরের কথায় কোনোকিছুরই কূলকিনারা খুঁজে পায় না। এ লোক পাগল হয়ে গেলো নাকি? ও কেন তার বুকে পা রাখতে যাবে কত বড় বেয়াদবি হবে এটা!
নাজহা তড়িৎ গলায় শোধায়,“পাগল হয়ে গেছেন আপনি? আমি কেন আপনার বুকে পা রাখতে যাবো? সুরুন এখানে থেকে!”
তৌসির এতে বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,”ইসস! তোমায় রাখতে বললাম না? রাখো না, একটা জিনিস দেখাবো।”
“না, আমি পারব না।”
“রাখো না কৈতরি!”
“না, সম্ভব না।”
এবার তৌসির হালকা ধমক দিয়ে বলে,
“এ ব্যাটি সাউয়া! তাড়াতাড়ি রাখ, তোরে তেল মাখানোর সময় নাই আমার।”
ধমকে নাজহা ভুরু কোঁচকায়। তারপর সংকোচ কাটিয়ে ধীরে ধীরে কাঁপা-কাঁপা পায়ে তৌসিরের বুকের পাশে নিজের নরম ডান পাখানিটা ঠেকায়। পা টা রেখেছে মনে হচ্ছে পা রাখেনি কলিজা হাতে নিয়ে ঘুরেছে। নাজহার শরীরের প্রতিটি কোষ, প্রতিটি স্নায়ু তড়তড় করে কাঁপতেছে। কেন এই সংকোচে? কি জন্য এত সংকোচ? নাজহা নিজের এই ভয় আর সংকোচে বাকরুদ্ধ। এক আলাদা প্রকাণ্ড অনুভবে নাজহার ঠোঁট অবধি তিরতির করে কাপতে লেগেছে। না পারতে দুই হাতে সোফার কভার খামচে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বসে রয়।
তৌসির নিজের বুকে রাখা নাজহার চরণের ন্যায় তাকায়। তৌসির ভালোভাবেই আচ করতে পেরেছে, নাজহা কাঁপছে ওর পায়ের আঙুলগুলো মৃদু কাপছে, তৌসিরের বুকে ভালোভাবে পাটাও টেকছে না। তৌসির এ দেখে দুই হাতে নাজহার পা টা নিজের বুকে চেপে ধরে। নাজহার আতঙ্কে, শিহরণে থরথরে প্রমত্ত দেহে যখন তৌসিরের ছোঁয়া পায় এই স্পর্শের ঝাঁজে থমকে যায় নাজহার সময়। আজ কেন জানি তৌসির আঙুলের ডগায় লুকিয়ে থাকা আগুনে শিউরে উঠে নাজহা। শিউরে হালকা চিৎকার করে বলে ওঠে “ছুবেন না আমায়! কেমন লাগছে!”
তৌসির নাজহার এই অনুভূতির কথা জানতে পেরে মুচকি হাসে শুধুই হাসে। তৌসির ভালোবাসা, প্রেম এসব সম্পর্কে ওত বেশি জানে না, তবে এতটুকু সে বুঝতে পারে যে, স্পর্শে মানুষ কাঁপে, আলাদা কিছু অনুভব করে। সে স্পর্শকে মানুষ আর যাইহোক ঘৃণা করতে পারে না। অর্থাৎ তৌসিরের এই স্পর্শ নাজহা প্রতিদিনের ন্যায় ঘৃণা করেনি, বরং অন্য কিছু অনুভব করেছে এই অন্য কিছু হয়তো ভালো লাগা, নয়তো ভালো লাগার প্রথম মুহূর্ত।
তৌসির এবার ধীরে ধীরে আলতো হাতে নাজহার টাখনুর উপর থেকে নাজহার সেলোয়ারের মুড়িটা একটু উপরে তুলে নিয়ে অতি যত্নে পড়িয়ে দেয় পায়েলটা তার পায়ে। তারপর মুগ্ধবর্ধক দৃষ্টিতে চোখের পলক না ফেলে চেয়ে রয়। নাজহার ধবধবে ফর্সা পায়ে রুপোর পায়েলখানা চাঁদের চন্দনিতে চকচক করছে। তৌসির বিমোহিত হয়ে চঞ্চল কিন্তু মুগ্ধ চক্ষু চেয়ে রয়। তাকাতে তাকাতে নিজের অজান্তেই মাথা ঝুঁকিয়ে নাজহার টাখনুতে ঠোঁট ডুবিয়ে বারবার কয়েকবার চুমু খায়।
নাজহা এ দেখে স্থবির। তৌসির তার পায়ে চুমু খেলো! এ বাস্তব? এ কি সত্যি বাস্তব? নাজহা এবার চিল্লিয়ে বলে ওঠে,“আআআ! কি করছেন টা কি? পাগল হয়ে গেছেন?”
তৌসির নাজহার চিৎকারের জবাবে শুধুই একটা মৃদু হাসি তার পানে ছুড়ে দিয়ে তার পা ছেড়ে সোফায় তার পাশে ওঠে বসে। নাজহা নিজের পায়ের দিকে তাকায় বাহ! বেশ তো মানিয়েছে পায়েলটা। নাজহা তৌসিরের দিকে হাসিমুখে চেয়ে শোধায়,“খুব সুন্দর মানিয়েছে, তাই না?”
তৌসির সন্তুষ্ট হয়, ভারী সন্তুষ্ট হয়। প্রথমে ভেবেছিল, আমার বউ যে লেভেলের খন্নাস, নিশ্চয়ই পছন্দ করবে না। কিন্তু এই প্রথম নাজহার প্রতি ধারণা তৌসিরের ভুল হলো। যতই খন্নাস হোক, অল্পতে খুশি রয়। এ জন্য সন্তুষ্ট হয় তৌসির। সন্তুষ্টি গলায় বুনে বলে,“তোমার পছন্দ হইছে তো?”
নাজহা মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়,“হুম, বড্ড।”
নাজহার কথায় তৌসির মুচকি হাসতে হাসতে গা এলিয়ে নাজহার উরুতে নিজের মাথা রাখতে রাখতে বলে,
“থাকবা এই মন্দ লোকের নিন্দার সংসারে?”
নাজহা তৌসিরের কথায় নিরুত্তর থাকে। কি উত্তর দিবে, কিছু খুঁজে পায় না। অন্যমনস্ক হয়ে তৌসিরের চুলের ফাঁকে আঙুল আলতোভাবে চালাতে থাকে। তৌসির আবারো বলে,
“তুমি আমার লগে আর যাই করিও, খালি আমারে ঠকাইয়ো না। কারণ তোমারে আমি আপন কেউ ভাবি।”
নাজহা তৌসিরের কথায় দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে মাথা নিচু করে তৌসিরের চোখপানে খানিক মুহূর্ত অলকাভরা নয়নে আপন কালচে সবুজ নয়নায় চেয়ে রয়। অতঃপর জিজ্ঞেস করে,
“আমায় আপন ভাবেন?”
তৌসির জবাবে মোলায়েম স্বরে ধারণ করে,
“হুম, ভীষণ। এটা জানার পরও যে তুমি গাদ্দার।”
“যখন বিশ্বাসঘাতকি ভাবেন, তাহলে কেন আপন ভাবেন?”
তৌসির মর্মের ভার বুক চিরে নামিয়ে আলতো হেসে শোধায়,
“তুমি যে যুদ্ধের মাঠে ছুটে এসে আচমকা মগজে ঢুকে যাওয়া বুলেটের মতো, যার আগমন আকস্মিক হলেও অবস্থান অনিবার্যভাবে আপন।”
নাজহা তৌসিরের কথায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, তথাচ আর কিছু না বলে চুপ রয়। তৌসির এবার সাহসের কাজ করে, যাকে বলে মহা সাহসী হাত বাড়িয়ে ধীরে ধীরে নাজহার ড্রেসটা তার পেটের উপর থেকে সরিয়ে নাজহার উন্মুক্ত পেটে নিজের মুখ গুঁজে নেয়। নাজহা কল্পনাও করেনি তৌসির এমন কিছু করবে, সারা শরীর আতঙ্কে কেঁপে ওঠে নাজহার। তৌসিরের খুঁচা খুঁচা দাড়ির স্পর্শে চিহ্ন বিহৃ করে দেয় নাজহার চামড়াকে। তৌসিরের উষ্ণ শ্বাস মরিয়া করে তোলে নাজহাকে। তার হাত-পা তড়তড় করে কাঁপতে শুরু করে, পায়ের গোড়ালি অবধি মাটিতে ঠেকে না। তৌসির এলোপাতাড়ি চুমু খেতে থাকে নাজহার উদরে। নাজহা দাঁতে দাঁত চেপে তৌসিরের বাহু খাবলে ধরে চেঁচিয়ে ওঠে,
“তৌসির, সরুন! তৌসির, তাড়াতাড়ি সরুন!”
নাজহার এই বিপত্তি দেখে তৌসির আর নাজহার সাথে জড়িয়ে রয় না মাথা সরিয়ে আনে নাজহার কাছ থেকে। তৌসির সরে যেতেই নাজহা ড্রেসটা ঠিক করতে করতে রাগি গলায় বলে ওঠে,“আপনার সাহস অতিরিক্ত বেড়ে গেছে! কোন সাহসে আপনি এটা করলেন? আমার অনুমতি নিয়েছেন?”
তৌসির নাজহার রাগ ঝাড়া দেখে ওর চোখে চোখ রেখে বলে,
“কোন সাহসে আবার? স্বামীর সাহসে!”
“সরুন বলছি আমার কোল থেকে!”
“না, এখানে থাকি!”
বেলা একটা! তৌসির উপস্থিত আছে একটা মিডিয়া কনফারেন্সে, যেটা সরাসরি লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে। পরিধানে সাদা পাঞ্জাবি আর পাজামা, পাঞ্জাবির ওপর কালো মুজিব কোট। অবশ্য সে মুজিব-ভক্ত না হলেও মুজিব কোট কিন্তু তার বেশ প্রিয় একটা পোশাক। তৌসিরের অপজিটে বসে আছে গুলজার, মুখে জয়ের হাসি কিলবিল করছে তার। তৌসিরকে একের পর এক প্রশ্ন করা হচ্ছে। একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, “আপনার মতো একজন নেতার কাছ থেকে এমনটা আশা করা সত্যিই হতাশাজনক, স্যার।”
তৌসির তার করা প্রশ্নে এবার মুচকি হেসে মাইক টেনে নিজের মুখের সামনে নিয়ে আসে আর বলতে শুরু করে, “সত্যি! সত্যিই হতাশাজনক। আমিও খুবই হতাশ হয়েছিলাম যখন নিজের মুখ থেকে না বলা কথা নিজের মুখ দ্বারা শুনেছি। ভারী আশ্চর্য হয়েছি।”
তৌসিরের এই কথায় গুলজার থতমত খেয়ে যায়, কিন্তু পরক্ষণেই মুচকি হেসে ওঠে, কারণ তৌসির সত্যটা জানলেও প্রমাণ করতে পারবে না এ ভেবে। তৌসিরকে এবার একজন সাংবাদিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন, “তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন এগুলো মিথ্যা?”
তৌসির হ্যাঁ-বোধক মাথা নেড়ে উত্তর দেয়, “ব্রেন ভালো আছে আপনার, সাংবাদিক সাহেব, ধরতে পারলেন কথার মানে।”
এ শুনে গুলজার বলে ওঠে, “মিথ্যা বলবেন না, তৌসির সাহেব! এমনিতেও আপনার বলা এসবে আমি অত কষ্ট পাইনি, ভেবেছি ভাই-ব্রাদার হিসেবে বলে দিয়েছেন।”
তৌসির গুলজারের কথায় হাসে, মৃদু হাসে আর শান্ত স্বরে বলে , “না না, মিথ্যা আমি বলি না। আমি খাঁটি কথার মানুষ। এগুলো সবই আধুনিক ভয়েস এডিটের খেলা।”
এ শুনে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন ছোড়েন, “কোনো প্রমাণ?”
তৌসির চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে মাথা নেড়ে উত্তর দেয়, “অবশ্যই।”
বলেই স্টেজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রুদ্রকে ইশারা করে। রুদ্র ব্যাকগ্রাউন্ডে আসল ভিডিওটা প্লে করে, যেখানে তৌসির বলেছিল
” এগুলো আসলে বাজে জিনিস। একজন মহিলাকে এভাবে হেনস্তা করা উচিত হয়নি। আজকালকার মিডিয়ার অবস্থা তো কুকুরদের মতো হয়ে গেছে। এগুলো কেমন নীতি? মানুষ কি করে এমন সিরিয়াস কিছু নিয়েও ইস্যু ক্রিয়েট করতে পারে, জানা ছিল না। এইসব মিডিয়া বয়কট করা উচিত।”
আর কেরামত রেকর্ড করেছিল। এটা দেখে সবাই স্তব্ধ। এবার তৌসির মাইকে বলে ওঠে, “এটা হলো আসল ক্লিপ। আপনারা আগের ক্লিপটি লক্ষ্য করলে শুনবেন, ওখানে কোনো নয়েজ নেই, কিন্তু এখানে আছে! এবার বুঝুন কেন আছে, কারণ এটি রিয়্যাল, এর জন্য আছে। এবার প্রশ্ন করতে পারেন, এই রিয়েল ভিডিওটি কোথা থেকে এলো? আমি কোথায় পেলাম? ভাবতেও পারেন, আমি অপবাদ থেকে বাঁচতে নিজে পরে রেকর্ড করেছি, কিন্তু তেমন কিছুই না। ভালো করে দেখলে বুঝবেন। ভাইরাল হওয়া ক্লিপের আর আমার প্লে করা এই ক্লিপের সম্পূর্ণ মিল আছে শুধু কথাগুলো ছাড়া। আর এগুলো রেকর্ড করেছিল আমারই দলের একজন যার নাম তৈমুর।”
এ বলে তৈমুর বলে ডাক দেয় স্টেজে তৌসির।
তৈমুর হলো তৌসিরের দলের একজন যাকে তৌসিররা পড়িয়ে এনেছে সে যেনো মিডিয়ার সামনে এসে বলে এই রেকর্ড টা সে নিজে করেছে যখন দেখেছে তৌসির গুলজারের পক্ষে কথা বলছে তখন এ ভেবে এই রেকর্ড টা লুকিয়ে করে কারণ তার সাথে গুলজারের ম্যানেজারের সম্পর্ক ভালো তাই এই রেকর্ড সে ম্যানেজারের দ্বারা গুলজার কে দেখাবে আর বলবে তৌসির প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও তার খারাপ সময় তারি পক্ষে নিয়েছে। অথচ সত্য টা হলো রেকর্ড টা তৌসির নিজেই করিয়েছে আর গুলজারের ম্যানেজারও তৌসিরদের সাথে জড়িত। তৈমুর স্টেজে মাইক্রোফোনের সামনে এসে, সুন্দর করে সত্যি বলার মতো শক্ত গলায় বলতে শুরু করে ” আসসালামু আলাইকুম! আমি তৈমুর। আমি আজ এখানে এসেছি একটা বিশেষ কথা বলতে।
যখন গুলজার সাহেবের নামে বিতর্ক খবর ছড়ানো হচ্ছিল, তখন ঐ সময় আড্ডাখানায় বসে তৌসির সাহেব গুলজার সাহেবের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন। সেই সময় আমি নিজে, আমার মনে হলো যে, তৌসির সাহেব এত ভালো একজন মানুষ। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েও এই কঠিন সময়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁর পক্ষে কথা বলছেন তাই আমি এই পুরো ঘটনাটা রেকর্ড করি তারি অজান্তে। রেকর্ডটা নিয়ে আমি গুলজার সাহেবের ম্যানেজার, আহাদ সাহেবের কাছে যাই। তাকে বলি, ‘দেখুন, তৌসির সাহেব কতোটা স্পষ্ট মনের অধিকারি! এই রেকর্ডটা আপনি গুলজার সাহেবকে দেখান।’ আমি চেয়েছিলাম গুলজার সাহেব জানুন, তৌসির সাহেবের মন কতোটা স্পষ্ট। আমি চেয়েছিলাম রেসারেসি না থাকুক।”
তৈমুরের এই কথাগুলো শুনে উপস্থিত সবাই থমকে যান। ফিসফিসানি শুরু হয়। দর্শক সারি থেকে বিভ্রান্তির গুঞ্জন ওঠে।
তৌসির হাসে। ওর চোখে এক বিশেষ চতুরতা। এবার তৌসির মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলে ওঠে “ধন্যবাদ তৈমুর। তোমার কথা শুনে সবাই নিশ্চয়ই কিছুটা চমকে গেছে। এবার, আমি এমন একজনকে ডাকতে চাই যিনি এই পুরো ঘটনার পেছনের ‘পরিকল্পক’। প্লিজ ওয়েলকাম, গুলজার সাহেবের ম্যানেজার, মিস্টার আহাদ!”
তৌসিরের আহ্বানে গুলজারের ম্যানেজার আহাদ মঞ্চে আসে। তার মুখে অনুতপ্ত হওয়ার একটা নিখুঁত ভান করা ভাব, চোখ ছলছল, মনে হচ্ছে এখনই ধরা পড়ে গেছেন। যদিও সে এই পুরো নাটকের একজন অংশীদার ছিল। তৌসির মোটা অংকের টাকা দিয়ে আগেই তাকে কিনে রেখেছে। আহাদ স্টেজের মাঝখানে এসে দাঁড়ায়।
গলা ধরে আসা, অনুতপ্তের ভান করে মাইক্রোফোনে বলতে থাকে,” “আমি অত্যন্ত দুঃখিত। এই জঘন্য কাজ করার জন্য আমি সবার কাছে ক্ষমা চাইছি। যা করেছি, তা কেবল আমাদের দলের আপাত স্বার্থ রক্ষার ভাবনা থেকেই। তৈমুর সাহেব আমাকে তৌসির সাহেবের যে ভিডিওটি পাঠিয়েছিলেন যেখানে সত্যি তিনি গুলজার সাহেবের পক্ষেই কথা বলছিলেন আর তা হলো “এগুলো আসলে বাজে জিনিস। একজন মহিলাকে এভাবে হেনস্তা করা উচিত হয়নি। আজকালকার মিডিয়ার অবস্থা তো কুকুরদের মতো হয়ে গেছে। এগুলো কেমন নীতি? মানুষ কি করে এমন সিরিয়াস কিছু নিয়েও ইস্যু ক্রিয়েট করতে পারে, জানা ছিল না। এইসব মিডিয়া বয়কট করা উচিত।”আমি সেই ক্লিপটি গুলজার সাহেবকে দেখাই। তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দেন, ভিডিওটি বিকৃত করে এমনভাবে প্রকাশ করতে, যাতে তৌসির সাহেবের ভাবমূর্তি ধূলিসাৎ হয়। তার কথামতোই আমি থাইল্যান্ডের একজন এক্সপার্ট এডিটরকে দিয়ে এই ভালো কথাগুলোকে সম্পূর্ণ বিপরীত ও মিথ্যা মন্তব্যে পরিণত করাই।”
গুলজার এমন অপ্রত্যাশিত আঘাতে পাথরের মতো জমে যায়। অপমান আর ক্রোধে স্তব্ধতা ভেঙে সে গর্জন করে উঠ, “সব মিথ্যা! এগুলো সব মিথ্যা! এটা আমার বিরুদ্ধে সাজানো ষড়যন্ত্র!”
গুলজারের এই অসহায় আর্তনাদ পুরো সম্মেলন কক্ষে এক তীব্র গুঞ্জন সৃষ্টি করে। আহাদ কালক্ষেপণ না করে তখনই মোবাইলে একটি মেসেজ দেখায় গুলজারের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে সেই এডিটরকে অর্থ প্রেরণের স্পষ্ট প্রমাণ। এরপরেই আহাদ সরাসরি সেই বিদেশী এডিটরকে ভিডিও কলের মাধ্যমে যুক্ত করে, যিনি নিশ্চিত করেম যে এই জঘন্য কাজটি গুলজারের সরাসরি আদেশেই সম্পন্ন হয়েছিল।
এবার সাংবাদিকরা ক্ষুধার্ত হায়নার মতো গুলজারের দিকে ধেয়ে যান। প্রশ্নবাণ ছুটতে লাগলো তার দিকে একের পর এক “কেন এই হীন মিথ্যাচার? কিসের লোভে এত নিচে নামলেন? কীভাবে একজন জনপ্রতিনিধি এমন ঘৃণ্য কাজ করতে পারেন?”
লজ্জা আর অপমানে গুলজারের মাথা নত হয়ে আসে। সে দ্রুত মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতে চাইলো ঠিক তখনই তৌসির মাইক টেনে ধরে বলে ওঠে, “গুলজার সাব, এখনো আপনার মুখোশ পুরোপুরি খোলেনি। আরো কিছু সত্য এখানকার মানুষের জানা বাকি।”
মিডিয়ার সবাই বিস্ময়ে হতবাক। আর কী বাকি? তৌসির এবার সেই রিপোর্টারকে ডাকে যে গুলজারের নির্দেশে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা রটিয়ে ছড়িয়ে তাকে সহানুভূতি আদায়ের সুযোগ করে দিয়েছে। তৌসির কৌশলে এই ব্যক্তিকে তার জালে নিয়ে এসেছে। সেই রিপোর্টার এবার সবার সামনে এসে স্বীকার করে নেয়, “সেই দিন গুলজার সাহেবই আমাকে মোটা অঙ্কের কমিশন দিয়েছিলেন। তিনি নিজের স্ত্রী এবং নিজের নামে বিতর্ক তৈরি করিয়েছিলেন, যাতে সমাজের চোখে তিনি ভুক্তভোগী সেজে লোকজনের করুণা ও সমবেদনা অর্জন করতে পারেন।”
এতক্ষণ ধরে গুলজারের মুখে যে বিজয়ের হাসি কিলবিল করছিল, তা নিমিষেই বাষ্পীভূত হয়ে গেছে। লজ্জায়, অপমানে তার মাথা আপনিই নিচু হয়ে গেলো।এত বছরের তিলে তিলে গড়া খ্যাতি, শ্রদ্ধা, সম্মান সবকিছু এক লহমায় তৌসিরের বিষাক্ত ছোবলে চুরমার হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে সুউচ্চ প্রাসাদ থেকে সটান মাটিতে আছড়ে পড়েছে সে, আর এখন শুধু ভাঙা ইটের স্তূপ আর ধুলোবালি। তার রাজনৈতিক জীবনের ভিত্তিমূল কেঁপে উঠেছে। এখন আর কারও সামনে মুখ দেখানোর ক্ষমতা তার রইলো না।
তার কানে শুধু বাজছে মিডিয়ার তীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বরগুলো। “লজ্জা করে না আপনার?” “জনতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলেন কেন?” প্রতিটি প্রশ্ন সপ্রায় তপ্ত শলাকার মতো গুলজারের আত্মাকে বিদ্ধ করছে। তার মনে হচ্ছে, এই শহরের প্রতিটা মানুষ তাকে ঘৃণা করছে, আর সে মনে হয় সবার দৃষ্টিতে এক ঘৃণ্য কীট।
সে জানত, তৌসির কড়া খেলোয়াড়, কিন্তু তার বিষ যে এতটা গভীর, গুলজারের তা জানা ছিল না। এখন এই মুহুর্তে কট খেয়ে গুলজারের অনুভব হচ্ছে। তৌসির এক দক্ষ শিকারী, যে ধৈর্য ধরে তার শিকারের জন্য জাল পেতেছে। আর গুলজার, নিজে? সে তো এক বোকা হরিণ, সামান্য লোভে সেই ফাঁদে পা দিয়েছে। এখন সে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সেই ফাঁদের বাঁধন, যা তার জীবন থেকে আলো কেড়ে নিয়েছে। সেদিন তৌসিরের পাঠানোটা ভিডিও টা কোনো সাধারণ ভুল ছিল না, ছিল তৌসিরের সাজানো মায়া-মৃগ। সেই মৃগের পিছনে ছুটতে গিয়েই গুলজার আজ সর্বস্বান্ত। প্রতিটি মুহূর্ত মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে চলছে এই অসহনীয় যন্ত্রণা। আত্মসমর্পণের মতো মাথা নিচু করে গুলজার বসে থাকে, কারণ তার এখন আর কোথাও মুখ লুকানোর জায়গা নেই। সম্মানের রাজত্ব থেকে বিতাড়িত হয়ে সে এখন শুধু এক পরাজিত, অভিশাপগ্রস্ত মানুষ, যার সামনে কেবলই অনিশ্চিত এক অন্ধকার ভবিষ্যৎ। গুলজারের মনে হচ্ছে, এই অপমানের ভার নিয়ে আর বেঁচে থাকার কোনো মানে হয় না। এই পরাজয়, এই লাঞ্ছনা মৃত্যুর চেয়েও কঠিন।
তৌসির এবার শান্তির সাথে মাইক টেনে নিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলে, “ভাইসাব-রা, আমি তো আপনাদেরই লোক, মাটির মানুষ। এসব প্যাঁচ-ঘোঁচ আমার মাথায় নেই। মেয়র হয়ে আছি মোটে চার বছর হলো। এই চার বছরে আমার কোনো ভুল বা খারাপ কাজ কি আপনারা পেয়েছেন? আমি রাজনীতিতে এসেছি নিজের এই জেলা আর এখানকার মানুষের ভালো করার জন্য। কোনো ধান্দাবাজি বা ছলচাতুরি করার জন্য আসিনি।আমি কোনোদিনও এসব নোংরা খেলা খেলিনি, আর এভাবে কাউকে জোর করে নিজের পক্ষে টানতেও চাইনি। অথচ দেখুন, উল্টো আমাকেই এই খেলার শিকার হতে হলো। ভাগ্য ভালো, আমি আর আমার সঙ্গীরা সব কথা আপনাদের সামনে খুলে বলতে পেরেছি।
আমি এক কথার মানুষ। গতবার আপনাদের কাছে যা যা উন্নয়নের কথা দিয়েছিলাম, যতটুকু পেরেছি, এক্কেবারে হিসাব মিলিয়ে পূরণ করেছি। আমার অঙ্গীকার পাথরে খোদাই করা। গত মেয়াদে আপনাদের কাছে উন্নয়নের যে প্রতিজ্ঞাগুলো রেখেছিলাম, তার প্রতিটি বিন্দু বিন্দু করে পূরণ করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। আপনারা যদি এবারও আমার ওপর আস্থা রাখেন এবং সুযোগ দেন, তবে অবশিষ্ট স্বপ্নগুলো বাস্তবে রূপ দিতে আমি বদ্ধপরিকর। আপনাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তই আমার পাথেয়।
স্নিগ্ধবিষ পর্ব ১৭
আমার আন্তরিক সালাম গ্রহণ করবেন। বিনীত নিবেদন, কারো বিষয়ে সামান্য কিছু শুনেই যাচাই না করে তিলকে তাল বানাবেন না। আবেগ বা পছন্দের ঊর্ধ্বে উঠে ন্যায়ের পক্ষ নিন। সত্যের আলোকবর্তিকা অনুসরণ করুন।”
এই ঘোষণা দিয়ে তৌসির নিজের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের ইতি টেনে বিজয়ীর বেশে বিদায় নেয়।
তৌসিরের এমন বুদ্ধিমত্তাপূর্ণ এবং ভয়ঙ্কর মাইন্ড গেম দেখে রুদ্র বাকরুদ্ধ। গুলজারের এই চূড়ান্ত অপদস্থতা দেখে তার মনে হলো, এখনই লুঙ্গি কাঁন্ধে তুলে নেচে উল্লাস প্রকাশ করতে।
