স্নিগ্ধবিষ পর্ব ৫
সানজিদা আক্তার মুন্নী
সন্ধ্যার সময়। এক কনভেনশন হলের তিন তলায় চলছে তুমুল আমেজের উৎসব। এই কনভেনশন সেন্টারটা তৌসিরের নিজের—দুই তলা বাড়ার জন্য আর উপরের তলা নিজের কাজের জন্য। আজ এখানে তৌসিরের সাথে রয়েছেন অনেক পলিটিশিয়ান, বিভিন্ন এমপি, মন্ত্রী, উকিল এমন টাইপ মানুষজন যাদের পদে পদে দুর্নীতি আছে আরকি। তারাই এখানে এই সম্মেলনে। দু-একজন ফরেনারও আছেন।
ফরেনারদের থাকার কারণ একটা বড় ডিল হবে।ডিলটা কী? ডিলটা হলো বডি পার্ট বিক্রির। গতদিন যে তৌসির একটি মেয়েকে গুলি করেছিলো তারই লিভার, হার্ট, কিডনি বিক্রি করতেই এখানে আসলে। তৌসিররা কোনো কিছুই বেনালে ফেলে না। কাউকে খুন করলে তার বডি পার্টগুলো সুন্দর করে আলাদা করে নেয় নিজেদের লেভেলের সায়েন্টিস্টদের দিয়ে। কিডনি, লিভার, হার্ট, ফুসফুস এগুলোকে আইস-বক্সের ভেতরে ৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হয়। এতে রক্ত জমাট বাঁধে না, টিস্যু নষ্ট হয় না। তারপর দ্রুত কালো বাজারে বিক্রি করে দেয়। আর আজও এমন কাজই করছে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
কথাবার্তা মিলিয়ে দাম হয়েছে সবকিছুর আশি লাখ টাকা। তৌসির টাকাগুলো নিয়ে বডি পার্টসগুলো সেই ফরেনারদের হাতে তুলে দেয়। তখনই একজন এমপি নাম যার কাসেম ফজলুল, সে বলে ওঠে,তৌসির এগুলো বাদ ভাই, দু-একটা কুমারী মেয়ে পাইলে দিস, তো অনেক দিন হয় এমন কিছুর স্বাদ নেওয়া হয় না।
তৌসির ওর কথায় বিরক্ত হয়ে বলে,“খা**নিকির পোলা, ভালো হ মাইয়া বিয়া দিয়া দিছত, তাও তোর শখ মিটলো না?”
এতে ফজলুল নাক-মুখ কুচকে বলে,শখ আর কই মিঠে বল তো, তোর দেওয়ার কাম দিয়া দিস।
নাযেম চাচা মদের গ্লাসটা টেবিলে ঠাস করে রাখতে রাখতে বলেন,আইচ্ছা আইচ্ছা পাইবি নে, আগে ক্যাশ দে আমার।
তখনই আরেকজন বলে,এগুলো বাদ দে, একটা মূল্যবান পাথরের দেখা পাইছি, তোরা কি যাইবি? আমি লোক লাগায়া দিছি!
তৌসির নাক-মুখ কুচকে বলে,তোরা যা আমি যাইতাম না, আমার বউরে লইয়া কাইল পরীক্ষা দিতে নিয়া যাইতে হইবো।”
বউ পাইয়া মুহূর্তেই পাল্টি খেলি নাকি?
আরে ও আমার বউ, আমি ওর জিম্মাদারি, ওর সব দায়িত্ব তো আমার। তাহলে এখন ওর পাশে থাকতে হইবো না? এমনিতেই ছোট বাচ্চা।
তৌসিরের কথা শুনে ফজলুল বলে,
বাহ, কচি বউ পাইয়া মুহূর্তেই পাল্টি খেলি!
তৌসির ওর কথা শুনে রক্তচোখে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,গরুর বাইচ্চা ল্যাওড়ামি বন্ধ কর আমার বউয়ের নাম মুখেও আনবি না। ও আমার বউ, ও আমার ইজ্জত। ওরে নিয়া একটাও বাজে কথা আমি সহ্য করমু না।
তৌসিরকে রেগে যেতে দেখে ফজলুল নিজের মুখ সামলে নেয়। কারণ ও জানে, বেশি উল্টো-পাল্টা বকলেই তৌসির ওর গর্দান আস্ত রাখতো না।
এদিকে স্থানীয় থানায় ঘটছে এক কেলেঙ্কারি। নাজহার আট নাম্বার চাচা তানভীর সাহেবকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে রাস্তার টং দোকানের পাশ থেকে। কোনো কথাবার্তা ছাড়াই নিয়ে এসেছে, এখনও বলছে না কেনো নিয়ে এসেছে। তবে কিছু সময় পার হতেই উনাকে ছাড়াতে উনার বড় বোন নওমি চলে আসেন, যিনি একজন ডিফেন্স লইয়ার। বয়স ছত্রিশ, কিন্তু এখনোও তিনি অবিবাহিত। তার অবশ্য কারণও আছে বটে, তবে তা নাহয় পরে জানতে পারবেন। উনি এসে পুলিশের সাথে আগে কথা না বলে সরাসরি উনার ভাইয়ের কাছে আসেন। হাবিলদারকে বলেন সেল খোলতে, কিন্তু হাবিলদার খোলেন না। এতে উনি দাঁত ধমক দিয়ে বলেন,
আমি উনার উকিল, আমার কথা বলার রাইট আছে!
তখন পিছন থেকে ওসি বলেন,যেতে দাও!
নওমি এক নজর পিছনে তাকিয়ে তারপর সেলের ভেতর ঢোকেন, তানভীরের সামনে গিয়ে দাঁড়ান আর জিজ্ঞেস করেন,কি জন্য এসেছিস এখানে?
তানভীর ইতস্তত গলায় বলেন, আমি জানি না, আমি দোকানে দাঁড়িয়েছিলাম, হঠাৎ ওসি গিয়া কয় আপনার আমাদের সাথে যাইতে হইবো, আর তাই চইলা আসছি!
এটা শুনে নওমির শরীর রাগে জ্বলে যায়। কি বেহায়ার মতো কথা! নওমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেন না। দাঁত চেপে টাশ টাশ করে তানভীরের গালে দুটো ঝাঁজালো থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে বলেন,কার বাল ছিড়ছো তুমি? ওরা তোমারে কইলো জেলে আসতে, আর চইলা আইলা? গরুর বাইচ্চা! যখন কারণ বলে নাই, তখন ওখানে ওগো কবর দিতে পারলি না?
তানভীর থাপ্পড় খেয়ে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। নওমি আর কিছু না বলে মারমুখো হয়ে বেরিয়ে আসেন ওসির ডেস্কে। ওসির দিকে রক্ত চক্ষে চেয়ে জিজ্ঞেস করেন,আমার ভাইকে কেনো এখানে নিয়ে এসেছিস রে?
ওসি উঠে দাঁড়িয়ে আমতা-আমতা করে বলেন,
জালিয়াতির কেস আছে, ম্যাডাম।
নওমি এটা শুনে হাত বাড়িয়ে এক টানে ওসির কলার ধরে ডেস্কের চেয়ার থেকে টেনে তুলে নিয়ে ওসির চোখে চোখ রেখে কঠিন গলায় বলেন,তুই জালিয়াতির মামলা শিখাস আমারে? সাওয়ার কেস আমারে শিখাস? তুই যে ঘুষ শোধ খাইয়া মেতে থাকিস, ঐসব এভিডেন্স পেস্ট করবো কোর্টে। করন বল খা***নিকির ছেলে বল!
ওসি এমন হুমকি শুনে হাঁপাতে হাঁপাতে বলেন,ম্যাডাম দেখুন, আমি ছেড়েই দিতাম, শুধু প্রুফ দেখাতেই নিয়ে আসা!
নওমি চিৎকার করে বলেন,যখন তুই এর জন্য নিয়ে এসেছিস, তাহলে আমার ভাইরে এসির নিচে ক্যান রাখিস নাই? আমার ভাইরে ক্যান কষ্ট পাইতে হলো?
ওসি আমতা-আমতা করে বলেন,
ও,,ও,,ও,, ওকে, আপনি নিয়ে যান উনাকে।
নওমি এটা শুনে ওসির কলার ছেড়ে দেন। এতে ওসি গিয়া দু কদম পিছনে পড়েন। নওমি ওসির দিকে তাকিয়ে বলেন,আর নেক্সটে যদি তালুকদার বাড়ির কেউ থানায় আসে, তাহলে তোর কবর এই থানায় আমি নওমি ছিদ্দিকি নিজ হাতে খুঁড়বো, জানুয়ারের বাইচ্চা!
নওমি বাইরে এসে তানভীরকে সেল থেকে হাত ধরে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। বিষাক্ত দৃষ্টিতে চারপাশে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বের হন। থানার সবাই মাথা নিচু করে তাকিয়ে রইলো। তালুকদারদের পাওয়ারি এমন যে আজ পর্যন্ত কেউ ওদের জেলের পিছনে বন্দী রাখা সম্ভব হয় না।
নওমি তানভীরকে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভারকে গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার কথা বলেন। আর তানভীরের দিকে তাকিয়ে বলেন,যদি আর শুনি বিনা কারণে, সামান্য কারণে তুই এখানে এসেছিস, তো খোদার কসম তোরে আমি নিজ হাতে কুপামু।”
তানভীর মাথা নিচু করে রাখেন। নওমি আবার বলেন,
যদি কেউ তোকে বিনা কারণে অ্যারেস্ট করতে আসে, কারণ না বলে, যেখানে দাঁড়িয়ে থাকবি সেখানে দাঁড়িয়েই ওর মাথা আলাদা করে নিবি, বাকি টা আমি দেখে নিবো।”
তানভীর মাথা নাড়ান।
এখন রাত হয়তো দশটার কোটায়। খাওয়া-দাওয়া শেষে সবাই নিজ নিজ রুমে নিদ্রায় ডুবিবার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। আজ তৌসিরও বাড়িতেই এমন সময়। নাজহা নিচে মাটিতে শুয়েছে আর তৌসির বিছানায়। নাজহার ঘুম নেই চোখে। কীভাবে থাকবে, আগামীকাল আইএলটিএস এক্সাম। বিয়ের দিন সকালেও ক্লাস করেছে আর যোহরের পর এসেই বিয়ে। আগামীকালের এক্সামের চিন্তায় মাথা ধরে যাচ্ছে। এসএসসি দেওয়ার পর থেকে মরতে মরতে পড়ছে, দু’বার কোর্স করে এইবার পরীক্ষায় বসছে। প্রথমবার বসেনি, কারণ ওর টার্গেট ডিরেক্টর নয় পয়েন্ট, নয়তো আট পয়েন্ট। ওর একটাই স্বপ্ন, আর তা হলো কুইন মেরি ইউনিভার্সিটিতে পড়া। এইচএসসিতেও জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। পড়াশোনার দিক দিয়ে খুব পজেসিভ নাজহা, দুনিয়া উল্টে গেলেও পড়াশোনা ঠিক থাকে ওর।
ভাবছেন, ১৮ বছর বয়সে কিভাবে এইচএসসি দিয়ে দিলো? আসলে মাদ্রাসায় পাঁচ বছর বয়স থেকে পড়া শুরু করেছিলো, থ্রি পর্যন্ত পড়ে। ওর পড়াশোনার স্কিল ভালো দেখে ওর বাবা তাড়াহুড়ো করে ওকে স্কুলে ডিরেক্ট ফাইভে ভর্তি করিয়েছিলেন। আর সে জন্য পিএসসির রেজাল্ট ওত ভালো হয়নি। তবে এসএসসি-এইচএসসি অনেক ভালোই হয়েছে।
নাজহা পরীক্ষার টেনশনে গলে যাচ্ছে, প্রায় হাত-পা এখন থেকেই কাঁপতে শুরু করেছে। ওর বাবা শিকদারদের বলেছেন যাতে ওকে পরীক্ষাটা দিতে দেওয়া হয়। এই পরীক্ষা ওর স্বপ্ন। তাই শিকদাররাও মানা করেননি। তৌসির আগামীকাল নিয়ে যাবে ওকে। বই-টই যা প্রয়োজন সবই এখানে এনেছে সাথে করে নাজহা। অনেক সময়ের নীরবতা ভেঙে তৌসির হঠাৎ আওয়াজ দিয়ে বলে,”নাজহা, উপরে বিছানায় আসো!”
হঠাৎ বিছানায় যাওয়ার কথা শুনে নাজহার কাঁপতে থাকা কলিজাটা আরো বেশি কেঁপে উঠে। তারপরও বলে,
“কেনো?”
“তোমারে জড়ায়া ধইরা ঘুমামু!”
তৌসিরের এমন আচমকা কথা শুনে নাজহা কেঁপে উঠে। দীর্ঘ শ্বাস নেয়। নিজেকে বোঝায় এতে ভয়ের কিছু নেই। তৌসিরের এমন কথা, এমন চাওয়া স্বাভাবিক। ওরা এখন স্বামী-স্ত্রী, একজন স্বামীর চাওয়া এমনি হয়। নাজহা ধীর গলায় বলে,আপনার প্রয়োজন হলে আপনি আসুন, আমি কেনো যাবো?
তৌসির নাজহার কথায় বিরক্ত হয়ে বলে,নিচে ঘুমাইলে শরীরে বেদনা করে, তুমি আসো।
তাহলে চুপচাপ ঘুমিয়ে যান।
তৌসির আর কিছু বলে না। কিছু সময় চুপ থেকে ধীরে ধীরে উঠে বসে, মনে হচ্ছে টা ঝেঁকে ধরেছে। নিচে শুয়ে থাকা নাজহার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠে,
ডাকাইতের বাইচ্চা শয়তান্নি!
এ বলে লুঙ্গি ঠিক করতে করতে বিছানা থেকে নামে। তৌসিরকে নামতে দেখে নাজহার ভেতরে হাতুড়ি পেটানো শুরু হয়। বুকখানা ফেটে যাচ্ছে ভয়ে। তৌসির উঠে নাজহার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে,”দেখি, ঐদিকে সরো!”
নাজহা এটা শুনে বিরক্ত হয়ে বলে,”আপনি ঐদিকে যান, আর বালিশ নিয়ে আসুন। আমি আপনার সাথে বালিশ শেয়ার করবো না।”
তৌসির নাজহার কথায় পাত্তা না দিয়ে ঘুরে গিয়ে নাজহার পাশে বসে পড়ে। নাজহার হাত-পা তিরতির করে কাঁপতে কাঁপতে নুয়ে যাচ্ছে। শরীরের লোমগুলো খাড়া হয়ে গেছে ভয়ে। গলা শুকিয়ে আসছে। তৌসির হাত বাড়িয়ে নাজহার মাথার নিচ থেকে বালিশটা নিয়ে নেয় ধীরে ধীরে। এটা দেখে নাজহা এক লাফে উঠে বসে, তৌসিরের দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে বলে,”রাত্তিরের বেলাও গরুগিরি করতে মন চায়?”
তৌসির নাজহার কথায় বিরক্তি নিয়ে নাক-মুখ কুঁচকে বলে,”এমন ফ্যাত-ফ্যাত কইরো নাতো!”
“আপনি বালিশ নিয়ে গেলেন, আমি কোথায় ঘুমাব?”
“আমার বাহুতে!”
এ বলে তৌসির বালিশটি নিজের মাথার নিচে রেখে নাজহাকে জোরে নিজের ডান হাতের বাহুতে শুইয়ে বলে,
“এবার ঘুমাও!”
নাজহা কটমট করে তৌসিরের দিকে তাকায় খানিক মুহূর্তে, তারপর কিছু না বলে অন্যদিকে ঘুরে তৌসিরের বাহুতেই মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। তৌসিরের বাহুতে মাথা রাখায় কেমন কেমন লাগছে ওর, কিন্তু কিছু করার নেই। তৌসির ধীরে ধীরে নাজহাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরার জন্য কোমরে নিজের বা হাতখানি আলতো করে রাখে। তৌসিরের হাতের স্পর্শে নাজহা আতঙ্কে একপ্রকার ফেটে পড়ে। ভয়ে এক লাফে উঠে বসে, তৌসিরের থেকে দুই হাত দূরে সরে যায়। এটি দেখে তৌসির ভ্রু কুঁচকে নাজহার দিকে তাকিয়ে বলে,”কি হইলো, এমনে লাফাও ক্যান?”
নাজহা তৌসির কথায় কিছু বলে না। জোরে জোরে বুক চেপে কিছু মুহূর্ত শ্বাস নেয়। তারপর নিজেকে ফের বোঝায়, যত যাই হোক, এটা তৌসিরের হক, নাজহার কোনো অধিকার নেই ছিটফুটি করার। নাজহা ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে আবারো তৌসিরের বাহুতে মাথা রাখে। ও মাথা রাখতেই তৌসির ওকে জড়িয়ে ধরে এক টানে নিজের বক্ষে নিয়ে নেয়। এতে তৌসিরের বক্ষস্থলের সাথে নাজহার পিঠ ঠেকে। শরীর জ্বলে যাচ্ছে নাজহার, যন্ত্রণায়, এক অসহ্য অনুভূতির যন্ত্রণায়, কিন্তু ওর কিছু করার নেই। এটাই বাস্তবতা। দাঁত চেপে সহ্য করে নাজহা শুয়ে রয়। তৌসির ওর ঘাড়ের কাছে নিজের মুখ নিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে,”কালকে কয়টার সময় বের হবা?”
তৌসিরের উষ্ণ শ্বাস নিজের ঘাড়ে পড়তেই নাজহা কেঁপে ওঠে বারকয়েক। নাজহা হাত দিয়ে তৌসিরকে কিছুটা পিছনে ঠেলে দিতে দিতে বলে,”এ এগারোটার দিকে। সাড়ে চারটা অবধি থাকবে।”
তৌসির নাজহার অসুস্থতা হচ্ছে দেখে নিজের মুখটা সরিয়ে নেয়। তৌসির নাজহাকে জিজ্ঞেস করে,”তা এখন এই ইংলিশ-টিংলিশ শিখা কি করবা আর?”
“করতে তো চেয়েছিলাম অনেক কিছু, কিন্তু এখন সবই বৃথা। আমার সব কষ্ট বৃথা।”
“কয় বছর ধরে পড়াতাছো?”
“এসএসসি দিয়েই শুরু করেছিলাম প্র্যাকটিস।”
“তা এই আইএলটিএস ক্যান এত কষ্ট কইরা করাতাছো, লন্ডন যাওয়ার লাইগা নাকি অস্ট্রেলিয়া চাচার কাছে?”
নাজহা তৌসির কথায় কিছু সময় চুপ থাকে। তারপর বলে,”নিজের স্বপ্নের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির আঙিনায় পা রাখতে। কিন্তু তা আর সম্ভব হলো না।”
তৌসির নাজহার কথায় বেশ কিছু সময় চুপ থাকে। তারপর বলে,”দেখো, তুমি চাইলে ভবিষ্যতে আমি তোমারে নিয়া যাইতে পারি ইংল্যান্ডে। তবে পড়াশোনার জন্য না, ভিজিটে।”
“থাক, প্রয়োজন নেই। আমি যাবো না আর কোথাও!”
নাজহার কথায় তৌসির আর কিছু বলে না। চুপচাপ একটু এগিয়ে এসে নাজহার ঘাড়ের থেকে ওর কুঁকড়ানো চুলগুলো ধীরে ধীরে সরিয়ে, ওর ঘাড়ে বারকয়েক নিজের নাক-মুখ ঘেঁষে নেয়। নাজহার এই যন্ত্রণা সহ্য হচ্ছে না। রাগে শরীর খা-খা করছে। নাজহা ভয়ে নিজের উপরে রাখা তৌসিরের হাতের আঙুল চেপে ধরে আমতা-আমতা করে বলে,”কি করছেন টা কি?”
তৌসির মৃদু হেসে বলে,”তোমার গন্ধে মাখছি!”
নাজহা তৌসিরের কথার প্রতিত্তোরে কঠিন গলায় বলে,
“তা এর আগে কত নারীর গন্ধে মেখেছেন?”
“যদি বলি, তুমিই প্রথম!”
“আমি মরে গিয়ে জীবিত হলেও এই কথা বিশ্বাস করব না!”
স্নিগ্ধবিষ পর্ব ৪
নাজহার কথায় তৌসির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আলতো গলায় বলে,”কারো উপর যদি তোমার বিশ্বাস না থাকে তবে সে যদি মহাসত্যবাদীও হয়, তারপরও তোমার তার সব কথা মিথ্যা মনে হবে।”
নাজহার কাছে তৌসিরের জ্ঞান দেওয়া মোটেও পছন্দ হয় না। তৌসিরের মতো মানুষের কাছ থেকে এত বড় বড় কথা নাজহার ঠিক হজম হয় না। নাজহা নিজেকে কিছুটা ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য সরে যেতে নেয়। নাজহাকে নড়তে দেখে তৌসির বিরক্তি গলায় বলে,”এত নইড়ো না, লুঙ্গির গিট খুইলা যাইবো।”
